#রইলো_তোমার_নিমন্ত্রণ।
[১৪]
আরাভ ক্লাসে এসে থেকেই দেখছে ভূমির ক্লাসে মন নেই। কখনো গম্ভীর হয়ে মাথা নিচু করে বসে আছে আবার কখনো রাগী চোখে তাকিয়ে আছে আরাভের দিকে।আরাভ মাখে মাঝেই লক্ষ করছে। ভূমির সাথে তার দৃষ্টি সংযোগ হওয়ার পরেও দৃষ্টি নামিয়ে নেয়নি। হয়তো কাল রাতের কথার জন্যে রেগে আছে ভূমি ওর উপর। তাই আর কিছু না বলে পড়ানোতে মন দেয়। আড় চোখে মাঝে মাঝে ভূমিকে দেখছিলো সে। ভূমি তখন মাথা নিচু করে বসে ছিলো। ক্লাস শেষে আরাভ ভূমির দিকে একপলক তাকিয়ে বের হয়ে যায়। অফিসরুমে যাওয়ার সময় ভূমিকে একটা মেসেজ করে,
” রেগে আছো?”
মিনিট পাচেক অপেক্ষা করার পরেও ওপাশ থেকে কোন উত্তর এলো না। আরাভ ধরেই নিয়েছে আর কোন উত্তর আসবেও না। তাই মোবাইল পকেটে পুরে অফিসরুমে যায়। পরপর কয়েকটা ক্লাস শেষে আবারও মোবাইল চেক করে। না ভূমির থেকে কোন রিপ্লাই আসে নি। মোবাইল রেখে লম্বাশ্বাস নেয়। বিড়বিড়ায়, ” ডেঞ্জারাস মেয়ে একটা। কি সব চিন্তাভাবনা মাথায় নিয়ে ঘুরে। তুমি যতই রাগ দেখাও তোমার এই ইচ্ছে আমি কোনদিনও পূরণ করতে দিবো না। সরি নিলাদ্রিতা। তোমার জিবন নিয়ে খেলা, সেতো কোনদিনও পারবো না।”
ছুটির শেষে আরাভ নিজের কাজ গুছিয়ে তাড়াতাড়ি গাড়ি নিয়ে বের হয়। ও জানে ভূমি আজ ওর জন্যে অপেক্ষা করবে না। হলোও তাই, ভূমি রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে রিক্সার জন্যে। অনেকক্ষন দাঁড়িয়ে থাকার পরেও যখন কোন রিক্সা পেলো না তখন ক্যাব বুক করলো। আর রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ক্যাব আসার অপেক্ষা করতে লাগলো। তখনি ওর সামনে গাড়ি নিয়ে এসে দাঁড়ায় আরাভ। আরাভ গাড়ির কাচ নামিয়ে বলল,
” চলে এসো। আকাশের অবস্থা ভালো নয় মনে হয় বৃষ্টি নামবে।”
ভূমি যেন আরাভকে দেখলোই না। অন্যদিকে মুখ ঘুড়িয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। আরাভ মৃদু হেসে গাড়ি থেকে নেমে আসলো ভূমির সামনে।
” আমার কথা শুনতে পাচ্ছো না?”
” আমি যাব না আপনার সাথে। ক্যাব বুক করেছি।”
” আমার সাথেই যাবে তুমি। কোন ক্যাবট্যাবে নয় ওকে।”
আরাভ ভূমির হাত ধরে ওকে গাড়িতে নিয়ে বসাতে চাইলে ভূমি নিজের হাত ছাড়িয়ে নেয়। আর তখনি শুরু হয় ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি। দুজনেই বৃষ্টিতে ভিজে চলেছে।একজন সামনে তাকিয়ে অপরজন দেখছে বৃষ্টি ভেজা প্রিয়সীকে। কতক্ষণ দেখেছে জানা নেই। হর্নের শব্দে হুশ ফেরে আরাভের। ভূমির ক্যাব এসেগেছে। ভূমি ক্যাবে উঠবে এমন সময় আরাভ ভূমির হাত ধরে ওর কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে,
” এই শরীর নিয়ে তুমি ক্যাবে যাবে।”
আরাভের চোখ মুখে দুষ্ট হাসি। ভূমির আরাভের হাসির দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুচকালো তারপর নিজের দিকে তাকাতেই লজ্জায় কুঁকড়ে গেলো। বৃষ্টি ভিজে জামা লেপ্টে আছে শরীরের সাথে যার কারনে শরীরের প্রতিটা ভাজ নিখুঁত ভাবে দেখা যাচ্ছে। দু-হাত সামনে দিয়ে উল্টো দিয়ে ঘুরে দাঁড়ালো ভূমি। আরাভ স্মিত হেসে দুই আঙ্গুল দিয়ে নিজের মুখের পানি সড়ানোর বৃথা চেষ্টা করতে কারতে ক্যাবের কাছে গিয়ে ভাড়া মিটিয়ে দেয়। তারপর ভূমির কাছে এসে ওকে পাজা কোলে তুলে নেয়। আকস্মিক এমন হওয়ার ভূমি ভয় পেয়ে আরাভের গলা জড়িয়ে ধরে। আরাভ মৃদু হেসে বলে,
” ভয় নেয়। এই দেহে একবিন্দু পরিমান রক্ত থাকতে তোমার কোন ক্ষতি-ই আমি হতে দিবো না।”
ভূমি মুগ্ধ দৃষ্টি আরাভের দিকে চেয়ে রইলো। মুখে কিছু বলল না। তবে ওর মনে ভালোবাসার প্রজাপ্রতি হাওয়ায় দুল খাচ্ছে সেটা ওর মুখ দেখেই বুঝা যাচ্চে।লজ্জায় রক্তিম বর্ণ ধারন করছে ভূমির গালদুটো। আরাভ ভূমিকে গাড়িতে বসিয়ে দিয়ে নিজে গিয়ে অপর পাশে বসলো। ভূমি এখনো নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। উড়নাটা ভালো করে গায়ে জড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা। আরাভ হাসলো। গাড়ির পিছনের সিট থেকে নিজের অতি পছন্দের কোটটা এনে ভূমির গায়ে জড়িয়ে দিলো। ভূমি তাকালো আরাভের চোখের দিকে। আর আরাভ ভূমির চোখের দিকে। কোমড়ে শীতল হাতের স্পর্শ পেয়ে কেপে উঠলো ভূমি। লাজ্জারাঙা চোখ নিয়ে আরাভের দিকে তাকাতেই দেখলো আরাভের চোখমুখে সেই দুষ্ট হাসি। ভূমি কিছু বলার জন্যে মুখ খুলতেই আরাভ ভূমির অধরো নিজের তর্জনী ঠেকায়। তারপর ভূমির অধোরে নিজের বৃদ্ধা আঙ্গুল দিয়ে আঁকিবুঁকি করতে করতে বলল,
” কোন কথা শুনতে চাই না।”
” আরাভ, কি করছো তুমি ছাড়ো কেউ দেখে ফেলবে।”
আরাভ ভূমির কথার কোন জবাব না দিয়ে ভূমিকে টান দিয়ে নিজের কোলে বসিয়ে ঘাড়ে মুখ ঠেকিয়ে কোমড়ে স্লাইড করতে করতে বলে,
” আদর কারতে জানো নাকি শিখাতে হবে?”
চোখমুখে দুষ্ট হাসি নিয়ে তাকিয়ে থাকে ভূমির দিকে। লজ্জায় ভূমি মাথা নিচু করে ফেলে। নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে থাকে। আরাভ আবার বলে,
” আগে বলো জানো নাকি শেখাতে হবে।”
ভূমি মাথা নিচু করে জবাব দেয়,
” এসব কাউকে শেখাতে হয় নাকি। এগুলো তো মানুষ এমনি শিখে যায়।”
আরাভ নিজের মুখটা বাড়িয়ে বলে,
” ঠিক আছে তাহলে এখন আদর করো আমায়।”
ভূমি আশ্চর্য হয়ে আরাভের দিকে তাকায়। তারপর বলে,
” আমি জানিনা। শিখতে হবে।”
“তাহলে শিখিয়ে দিচ্ছি।” এই বলে আরাভ ভূমির দিকে মুখটা আরেকটু এগিয়ে দিতেই ভূমি বলে,
” আরাভ ছাড়ো আমায়। বিয়ে আগে এসব করতে নেই। আমরা বিয়ের পর,,
” শাট আপ ভূমি। আমি জানি আমার লিমিট কতটুকু।”
আরাভ ভূমির কপালে গালে নাকে চোখে চুমু খায়। তারপর ভূমির গলার তিলের দিকে তাকিয়ে শুকনো ডুক গিলে। বিড়বিড়িয়ে বলে,
” তোমার তিলটা বড্ড নেশাতুর, আমি চাইলেও নিজেকে আটকে রাখতে পারছি না। সরি নিলাদ্রিতা।”
ভূমির গলায় থাকা তিলের উপর গভীর ভাবে চুমু দেয় আরাভ। তারপর ভূমিকে ওর সিটে বসিয়ে দিয়ে সিল্টবেল বেধে দেয় অতঃপর নিজের সিল্টবেল ও বেধে নেয়। আরাভ ড্রাইভ করছে আর ভূমি জানালার দিকে তাকিয়ে বাহিরের বৃষ্টি দেখছে। কিছুক্ষণ আগের কথা মনে পরতেই ব্লাশ করছে বারংবার। আরাভ ভূমির অবস্থা দেখে না হেসে পারে না। ড্রাইভ করতে করতে বলে,
” মাথা থেকে ডেথ এর ভূত নেমেছে নাকি আরো আদর করতে হবে।”
চোখ ছোট ছোট করে আরাভের দিকে তাকায় ভূমি। কপালে কিঞ্চিৎ ভাজ ফেলে বলে,
” এইজন্যে তুমি,,,,,
” ইয়েস ডার্লিং। সকাল থেকে আমার সাথে কোন কথা বলছো না। কল দিলে রিসিভ করছো না। মেসেজের রিপ্লাই করছো না। শাস্তি তো পেতেই হতো।”
“এটা শাস্তি!”
” না ভালোবাসা বলে এটাকে। বুঝতে পারোনি। আবার করে বুঝাবো।”
ভূমি এবার সিরিয়াস হয়ে বসে। তারপর বলে,
” আমি তোমাদের সাথে থাকলে কি এমন হবে। প্লিজ আমাকে নাও না তোমাদের সাথে। আমিও তোমাদের সাহায্য করতে চাই।”
” কি হবে? দিয়ার অবস্থা দেখে বুঝতে পারোনি কি হতে পারে। এসব মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দাও। আর আমাকে আমার কাজে মন দিতে দাও। তুমি এসবে জড়ালে আমি মন দিয়ে নিজের কাজ করতে পারবো না। মনটা সারাক্ষণ তোমার কাছে পরে থাকবে। আচ্ছা তুমি কি চাওনা আমি এই কাজে সফল হই।”
” এসব তুমি কি বলছো। আমি চাই তুমি সফল হও। আর ওই ডেথকে তার শাস্তি দাও। অনেক মানুষের জিবন নিয়ে খেলেছে আর নয়।”
” তাহলে তুমি এসবে জড়াবে না। পাগলামি করো না। প্লিজ ভূমি আমার এই কথাটা রাখো।”
ভূমি কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলে,
” ঠিক আছে। আমি আর পাগলামি করবো না। তুমি তোমার কাজে সফলতা অর্জন করো।
আকস্মিক ব্রেক করতেই সামনের দিকে ঝুকে পরে ভূমি। ভূমির বাড়ি এসেগেছে। আরাভ ভূমির দিকে তাকিয়ে বলল,
” এই তোমার বাড়িটা আরেকটু দূরে হলে কি ক্ষতি হতো বলতো।”
” কেন?
“না কিছু না। নামবে তো নাকি?”
” বৃষ্টিতে ভিজে যাব।”
” এমনিতেই অনেকটা ভিজেছো। আর এইটুকু রাস্তায় কিছু হবে। বাসায় গিয়ে তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নিবে।”
ভূমি আরাভের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে গলা জড়িয়ে ধরলো। তারপর আরাভের অধোরে নিজের অধোর গভীরভাবে স্পর্শ করে বলল,
” তখন এটা বাকি ছিলো।”
আরাভ অবাক চোখে দেখছে তার নিলাদ্রিতাকে। আর ভূমি হাসি মুখে আসছি বলে গাড়ি থেকে বেড়িয়ে যায়। আরাভ ওর যাওয়ার পানে তাকিয়ে নিজের ওষ্ঠে হাত বুলায় মনে মনে বলে,
” এটা সত্যি ছিলো।”
রুমে গিয়ে ভূমি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। লজ্জা লাগছে তার ভীষন লজ্জা লাগছে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের লাজ্জারাঙা মুখ দেখে নিজের মনেই হেসে ফেলল। দু-হাতে মুখ চেপে ধরে বিছানায় শুয়ে পড়লো। চোখ বন্ধকরতেই চোখের সামনে ভেসে উঠে আরাভের দুষ্টুমি মাখা হাসি
______________________
মনিরুল স্যারের সাথে দেখা করে মাঠের দিকে হাটতে থাকে দিগন্ত। মূলত ডেথকে নিয়েই কথা হয়েছে তার সাথে। যেহেতু মনিরুল স্যার একজন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার তাই তার কাছ থেকে ডাক নেট সম্পর্কে আরো অনেক কিছু জেনেছে দিগন্ত। আর মনিরুল স্যার বলেছে সে এই কেইসে সব রকমভাবে সাহায্য করবে। আগামিকাল মনিরুল স্যারকে নিয়ে নিজের অফিসে যাবে দিগন্ত। রফিক মির্জা নিজে তার সাথে কথা বলবে। এসব ভাবতে ভাবতে যখন মাঠের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল দিগন্ত তখন দেখতে পেল মাঠের পাশে একটা ছেলে অপর একটা ছেলেকে পার্সেল দিচ্ছে। দিগন্তের দৃষ্টি আরো তীক্ষ্ণ হলো। পকেট থেকে রিভালবার বের করে ছেলেদুটোর দিকে তাক করে এগিয়ে আসতে গেলে একজন কলেজের ভিতরের দিকে চলে যায় আর অপরজন রাস্তার দিকে। দিগন্ত রাস্তার দিকে ছুটে চলা ছেলের পিছনে ছুটতে ছুটতে বলে,
” দাঁড়াও বলছি না হলে স্যুট করে দিবো।”
ছেলেটা দাঁড়ায় না। সামনের দিকে ছুটতে থাকে। শেষে দিগন্ত ছেলেটার পা বরাবর স্যুট করে। গুলিবিদ্ধ পা নিয়ে ছুটতে থাকে ছেলেটা। দিগন্তও ছেলেটার পিছনে। রাস্তার পাশে আসতেই একটা বড় কালো গাড়ি এসে ছেলেটাকে তুলে নিয়ে চলে যায়। আর দিগন্ত সেখানেই হাটুতে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে পরে। সামনের দিকে তাকিয়ে বিড়বিড়ায়, “শিট, একটুর জন্যে মিছ করলাম। তবে মানতেই হবে এই ডেথের ক্ষমতা প্রখর।”
চলবে,,,,,,,
#মাহফুজা আফরিন শিখা।
#রইলো_তোমার_নিমন্ত্রণ।
[১৫]
অন্ধকারময় ঘরে বসে আছে মনিরুল ইসলাম। হাতে কফির মগ মাথায় নানা চিন্তা। এই রুমের মতো অন্ধকার তার জিবন। তিক্তময় অতীত থেকে বাচতে অন্ধকারে নিমজ্জিত করেছে তার জীবন। একা এই ফ্ল্যাটে থাকেন তিনি। তার এই একাকিত্ব জিবনে না আছে কোন পছন্দের মানুষ না আছে কোন বন্ধু বান্দব। এমনকি বাসায় একটা কাজের লোকও নেই। সারাদিন কলেজ আর রাতে নিজেই নিজের কাজ করেন তিনি। কফির মগ শব্দকরে টেবিলের উপর রেখে উঠে দাঁড়ালেন মনিরুল ইসলাম। অন্ধকার হাতরে কাবার্ড থেকে একটা কালো হুডি বের করে সেটা পরে নিলেন। মাথাটা থাকতেই ক্রুর হাসি হাসলেন তিনি। এই কালো হুডিতে অন্যরকম একটা শক্তি আছে। যার কারনে এটা পরার পর নিজেকে অনেক শক্তিশালী মনেহয় তার। মুখে পৈশাচিক হাসি নিয়ে একটা রুমে গেলেন তিনি। রুমটা দেখতে কোন একটা ল্যাবরেটরির থেকে কোন অংশে কম নয়। একদিকে বড় এক ডেক্সটপ। মনিরুল ইসলাম ডেক্সটপের সামনে বসলেন। ডেক্সটপের স্কিনে জ্বলজ্বল করছে King নামটা। তিনি নামের উপর ক্লিক করলেন। ডেক্সটপের পর্দায় ভেসে উঠলো একটা মেসেজ,
” এই ডিটেকটিভ অনেক বাড়াবাড়ি করছে। আমার ভাইয়ের পায়ে গুলি করেছে। ওর একটা ব্যাবস্থা করতেই হবে।” নিচে লেখা “KING”
মনিরুল ইসলাম দ্রুত হাতে টাইপ করলো,
” তুমি নিজের কাজ করো। এই ডিটেকটিভকে আমি দেখে নিবো।” নিচে লেখলো, “DEATH”
ডেক্সটপ থেকে মুখ সড়িয়ে মুখটা গম্ভীর করে হাতের আঙ্গুল দিয়ে চসমাটা উপরের দিকে তুলে গলার স্বর শক্তকরে বলল, “ডেথকে ধরবে। এত সহজ ডেথকে হাতের নাগালে পাওয়া। ডেথ এর রাজ্যে আমিই রাজা। এই রাজ্যে যে রাজত্ব করতে আসবে তার একটাই শাস্তি, মৃত্যু।”
অট্টহাসিতে ভেঙে পরলো মনিরুল ইসালাম।
” অনেক বার বেড়েছে তোমার ডিটেকটিভ। এবার তোমার দিকটা দেখতে হবে।” KING তার কাজ করে নিবে। এপর্যন্ত যতগুলা মানুষের সাথে কাজ করছে তার মধ্যে কিংকে তার বেশ পছন্দ হয়েছে। ছেলেটার মধ্যে স্পেশাল কিছু রয়েছে যার কারনে ডেথ তাকে বেশ পছন্দ করে। “কিং” বছর বিশের এক যুবক। কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারর ডিপার্টমেন্টের স্টুডেন্ট হওয়ার সুবাদে ইন্টারনেটের এই নিষিদ্ধ ওয়েবসাইট সম্পর্কে জানতে পারে। কৌতুহল বসত সে একদিন ডুকে পরে ডাক নেটে। সেখানে অবশ্য আরো একটা কারন আছে আর সেটা হলো, নিজের পরিচিতি বৃদ্ধি করা। যেটা যে অল্প সময়ের মাঝে পরেছে। ডাক নেটে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ঘাটাঘাটি করার সময় একাদিন তার কাছে মেসেজ আসে ডেথ এর কাজ থেকে। যেখানে ডেথ তাকে তার হয়ে কাজ করতে বলেছে। বিনিমনে সে পারিশ্রমিক তো পাবেই সাথে তার পরিচিতিও হবে। সেই থেকে ডেথ এর সাথে কাজ করে কিং। ডেথ কিংকে চিনলেও কিং কখনো ডেথকে দেখেনি। সময়সময় মেসেজের মাধ্য তথ্য পাঠানো হয়েছে তার পার্সেল সেটা কুরিয়ারের মাধ্যমে। তবে সেখা ডেথ ব্যতিত অন্য কোন নাম ছিলো না। কিং ছেলেটা যেমন সাহসী তেমন দুরন্ত। তাই তো ডেথ তাকে দিয়ে কাজ করাচ্ছে না হলে বাকিদের মতো কিং ও হয়তো ডেথ এর কবলে পরে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহন করতো।
____________________________
ঋতুর ধারায় প্রকৃতি জগতে প্রানের সজীবতা রং রুপ ও সিগ্ধতা নিয়ে আসে শরৎ ঋতু। শরৎের ভোরে বয়ে চলেছে ঝিরঝিরি হাওয়া। ছোটছোট পাখিদের বেপরোয়া ধাপাধাপি ও মিষ্টি কলতনে ভরে উঠে চারিদিকে। ভোরের ধবধবে নীল আকাশের বুকে সাদা পেচার মতো তাকিয়ে আছে ভূমি। প্রকৃতির এই অভূত পূর্ন সৌন্দর্য তাকে স্পর্শ করছে কিনা। কৃষ্ণভ্রমরের মতো রাশীরাশী চুল বাতাশে দোল খেয়ে বারি খাচ্ছে ভূমির কোমড়ে। হুস নেই ভূমির। আরাভের সাথে তার তিনদিন যাবৎ কথা হয়না। কলেজ থেকেও ছুটি নিয়েছে সে। আচ্ছা সে কি জানেনা,
” তাকে দেখার জন্যে আমার অক্ষিদ্বয় প্রতিনিয়ত অপেক্ষায় থাকে।”
“এত সকালে ছাদে কি করছিস বোন?”
তন্ময়ের কথায় সামনে তাকায় ভূমি। মাথা নাড়িয়ে বলে,
” এমনি, সকালটাকে উপভোগ করছিলাম।”
তন্ময় কথা বাড়ালো না। টাওয়ালটা মেলে দিয়ে নিচে চলে গেলো। ভূমির বিষন্ন মুখে সেখানেই দাঁড়িয়ে ভাবতে থাকলো। আরাভের ফ্ল্যাটে যাওয়াটাকি ঠিক হবে। চলে যাবে আরাভের ফ্ল্যাটে। হ্যাঁ, যাওয়া যায়। অধোরে হাসি ফুটে উঠলো তার। হাসি হাসি মুখ নিয়ে নিজের রুমে চলে আসে ভূমি। আলমারিতে নিজের জামাকাপড় বের করতে গিয়ে চোখ পরে আরাভের কোটের দিকে। যেটা সেদিন ভূমির গায়ে জড়িয়ে দিয়েছিলো আরাভ। কোটটা বের করে সেটা নিজের বুকে জড়িয়ে নিলো ভূমি।
আজ আর কলেজে যাওয়া হলো না ভূমির। আরাভের ফ্ল্যাটের সামনে এসে রিক্সা থেকে নামে। রিক্সাওয়ালার ভাড়া মিনিয়ে সামনের দিকে অগ্রসর হয়। আরাভের ফ্ল্যাটের সামনে এসে লম্বাশ্বাস নেয় তারপর কলিংবেল বাজায়। সোহান এসে দরজা খুলে দরজার সামনে ভূমিকে দেখে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। ভূমি এখানে আসবে সেটা তো জানায়নি আরাভ। সোহান মৃদু হেসে বলে,
” আরে ভাবি আপনি এখানে? না মানে আরাভ তো কিছু বলেনি।”
” আসলে আমি কাউকে না জানিয়ে চলে আসছি। ভাবলাম সারপ্রাইজ দেই।
” ওও আচ্ছা। আসুন ভিতরে আসুন।”
সোহান দরজার সামনে থেকে সরে দাঁড়ালে ভূমি ভিতরে প্রবেশ করে। ড্রয়িংরুমে সকলে বেশ মনোযোগ দিয়ে কথা বলছিলো। হয়তো গুরত্বপূর্ণ কিছু কথা। বেশ মনোযোগ দিয়ে আলোচনা করছে সবাই। সাথে দিগন্তও আছে। এই সময় এখানে ভূমিকে দেখে উপস্থিত সকলে অবাক। সকলের দৃষ্টি এখন ভূমির উপর। আরাভের ভ্রুযুগলে সুক্ষ্ম ভাজ তবে মুখে তার প্রাপ্তির হাসি। ভূমি বলল,
” না আসলে আমি আরাভকে এই কোটটা দিতে এসেছিলাম।”
তবুও সকলের উৎসুক দৃষ্টি। ভূমির কথা যেন তাদের বিশ্বাস হচ্ছে না। আরাভ স্মিত হেসে হাত বাড়িয়ে ভূমিকে নিজের কাছে ডাকলো। এতগুলো মানুষের সামনে এভাবে আরাভের কাছে যেতে সংকোচ বোধ করলো ভূমি। তাই মাথা নিচু করে সেখানেই দাঁড়িয়ে রইলো। মনে মনে এখন নিজেকেই গালি দিচ্ছে, “কেন সে এখানে আসতে গেলো। আরাভ যখন তার সাথে দেখা করছে না তার মানে সে ব্যাস্ত। সবটা জেনেও কেন ভূমির মন শান্ত থাকতে পারেনা। এখন সবাইকে কি করে বুঝাবে সে, তার প্রান প্রিয়র দেখা না পেয়ে মনটা ছটফট করছিলো বলেই তো সে এখানে এসেছে।” আড় চোখে সবার দিকে তাকালো একবার। সবাই কেমন সন্দেহের দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে। আরাভ এখনো তার দিকে একটা হাত বাড়িয়েই রেখেছে। একটা গম্ভীর কন্ঠশ্বর শুনে সামনে তাকালো ভূমি। দিগন্ত, হ্যাঁ দিগন্ত-ই বলল,
” একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে কথা বলছি। এভাবে দাঁড়িয়ে সময় নষ্ট না করে আরাভের পাশে গিয়ে বসো।”
সবাই দিগন্তের দিকে তাকালো। আরাভের দৃষ্টি আরো তীক্ষ্ণ হলো। দিগন্তের দিকে তাকিয়ে কিছু বুঝার চেষ্টা করলো সে।তখন দিগন্ত বলল,
” আসলে আমার একটু তাড়া আছে তাই বলছিলাম।”
আরাভ কিছু বলল না। ভূমির দিকে তাকিয়ে হাসিমুখে বলল,
” এসো, আমার পাশে বসো।”
ভূমি গিয়ে আরাভের পাশে বসলো। আরাভ আবার বলল,
” ক্লাস নেই আজ?”
” কলেজে যাইনি।”
আরাভ ভূমির আঙ্গুলের মাঝে নিজের আঙ্গুল ডুবিয়ে দিয়ে সামনে তাকিয়ে বলল,
” আমরা যে কি বলছিলাম?”
দিগন্ত আড় চোখে আরাভ ভূমির হাতের দিকে তাকিয়ে বলল,
” কি আছে এই দ্যা ডেথ এলিমেন্ট-এ।
আরাভ লম্বা একটা শ্বাস টেনে বলতে শুরু কীলো,
” দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঠিক আগে ইউনাইটেড স্টেটে মাফয়া দলগুলোর মধ্যে একটা বিশেষ ধরনের ড্রা*গের প্রচলন ছিলো। তবে কিছু মাসের মধ্যে সেই ড্রা*গের ব্যাবহার সম্পর্ন বন্ধ করে করে দেওয়া হয় এবং সেই সঙ্গে ড্রাগের উৎপাদন ও সম্পর্ন বন্ধ করে দেওয়া হয়। এর পিছনে কি কারন সে সম্পর্কে কোন কারন জানা যায়নি। ওই ড্রা*গের সে সমস্ত উপাদান ছিলে সেগুলোর তথ্য ইউনাইটেড স্টেটের নিজেস্ব ডেটাবেজে অত্যন্ত সুরক্ষিত ভাবে গোপন রাখা হয়েছে। সেই ডেটাবেজ থেকে আমরা ওই তথ্য বের করে নেই। আসলে প্রচলিত কোন ড্রা*গের সাথে “দ্যা ডেথ এলিমেন্ট এর উপাদান মিল না পাওয়ায় আমরা বিভিন্ন ধরনের নিষিদ্ধ ড্রা*গ সম্পর্কে খোঁজখবর নেওয়া শুরু করে দিয়েছিলাম। বুঝতেই পারছেন এই কাজটা এক প্রকার চুরি করার মতোই। তবে আমরা কারো পার্সোনাল তথ্য কাউকে বিক্রি করিনি। শুধু মাত্র নিজেদের যেটুকু প্রয়োজন সেইটুকু নিয়েছি। এইরকম বিশেষ ড্রা*গের খোঁজখবর নিতে গিয়ে আমরা শেষ পর্যন্ত ওই বিশেষ ড্রা*গের নামটা জানতে পারি। আশ্চর্যজনকভাবে ওই বিশেষ ড্রাগের সাথে “দ্যা ডেথ এলিমেন্ট এর সম্পূর্ণ মিল রয়েছে। ওই ড্রা*গ এর নাম দেওয়া হয়েছিলো।” দ্যা ফরবিডেন”!
“দ্যা ডেথ এলিমেন্ট” কে সোজা বাংলায় “দ্যা ফরবিডেন” এর রিমেক-ই বলা যায়।
” দ্যা ফরবিডেন” সম্পর্কে খুব বেশী জানা না গেলেও এটুকু জানা গেছে, সেই সময়ে এই ড্রাগের কারনে বহু মানুষের প্রান গেছে। তাই কয়েক মাসের মধ্যে এই ড্রাগ নিষিদ্ধ করা হয়েছিলো। বিষয়টা সমনে আসার পর থেকে আমরা মারাত্মক কিছু খারাপের আশংকা করছি। এই সময় আমাদের দেশকে খুব একটা সুরক্ষিত বলে মনে হচ্ছে না। আমার কাছে আমার প্রতিশোধটা অনেক বড়। তবে এখন এসব কিছুকে ছাপিয়ে গেছ আসন্ন ভবিষ্যৎ এর চিন্তা। এই ড্রা*গ যে কতটা ভয়ংকর তা কম বেশী আমরা সবাই জানি। সেখা একটা নিষিদ্ধ ড্রা*গ যা এক সময় বহু মানুষের প্রান নিয়েছে সেই ড্রা*গ নিয়ে ডেথ কি করতে পারে সেটা ভাবনারও বাইরে। এতদিন পর্যন্ত আমরা আমাদের প্রতিশোধ নিয়ে ভাবলেও এখন আমাদের মূল চিন্তা দেশের আসন্ন ভবিষ্যৎ কে রক্ষা করা। আমরা চাইনা আর কেউ ডেথ এর শিকার হোক। তাতে যদি আমাদের জিবন চলে যায় তাও আমরা এর শেষ চাই। জিবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ডেথ এর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্যে আমরা বদ্ধপরিকর।”
কথাগুলো বলে থামে আরাভ। ওর চোখের দৃঢ়তা প্রকাশ করে কথাগুলোর গুরুত্ব। ভূমির চোখমুখে ফুটে উঠে আতঙ্ক। আরাভ লক্ষ করতেই মৃদু হেসে বলে,
” এত চিন্তা করো না নিলাদ্রিতা।” ভূমির আরো কাছে গিয়ে বলে, ” তোমার চোখ ভয় নয় প্রেম দেখতেই বেশী পছন্দ করি।”
তবুও যেন আতঙ্ক কমে না ভূমি। ভয়ে চোখমুখ রক্তশূন্য হয়ে যায়। আরাভ তাহমিদকে এদিকটা সামলাতে বলে ভূমিকে নিজে নিজের পার্সোনাল রুমে যায়।
চলবে,,,,,,,,,,
#Mahfuza Afrin Shikha.