রঙীন ফানুস পর্ব-১০

0
1397

#রঙীন ফানুস
#পর্ব-১০
#আফরিন ইভা

—” পরীর দু’চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে রাজের ওদিকে কোন খেয়াল নেই।

“রাজ পরীর দিকে একটিবারও তাকায় নি।”

“পরীর বুঝতে আর বাকি নেই, রাজ পরী কে অবিশ্বাস করে হয়তো রাফির কথাগুলোই বিশ্বাস করেছে।”
“বিশ্বাস করবেই না কেন?”
“রাফি এমনভাবে বানিয়ে বানিয়ে কথাগুলো বললো যে কারো বিশ্বাস না করার কোনো উপায় নেই। ”

” পরীর ইচ্ছে করছে খুব ইচ্ছে করছে রাজ কে জড়িয়ে ধরে বলতে, রাজ একটি বার আমার চোখের দিকে তাকান, আমাকে কী এতো টা নোংরা মেয়ে মনে হয়, আমি কি এতোটাই জগন্য যে আপনার পবিত্র ভালোবাসা রেখে অবৈধ ভালোবাসার পেছনে ছুটবো?
আপনার ভালোবাসা কী এতোটাই ঠুনকো
যে, আমি তা অপবিত্র করতে কাউকে আমার রুমে ডেকে নিয়ে আসবো?
বিশ্বাস করুন রাজ বিশ্বাস করুন আপনাকে ছাড়া আমি কাউকে বিশ্বাস করি নি আমার এই জীবনে। আপনার সাথে যে আমার অনেক হিসেব বাকি এখনো। আপনাকে যে অনেক কিছুই বলার আছে, যা কাউকে বলতে পারছিনা।
প্লিজ রাজ একটি বার আপনার পরী কে দেখুন, আপনার পরী কতটা কষ্ট পাচ্ছে।
আপনি রাফির কথা বিশ্বাস করলেন, আর আপনার পরীর চোখের পানির কোনো মূল্য নেই আপনার কাছে?

— “রাজ পরীর হাত এতো জোরে ধরেছে যে, পরীর হাতে রাজের পাঁচ আঙুলের ছাপ বসে গেছে ।”

“রাফির সামনে নিয়ে, রাজ পরীর হাত ছাড়লো।”

“রাফি পরীর দিকে তাকিয়ে আবার চোখ সরিয়ে নিলো।”

“পরী হতাশায় নিমজ্জিত হয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে, ব্যাথায় হাত জ্বলে যাচ্ছে। বুকের চিনচিনে ব্যথাটা যেনো গাঢ় হতে লাগলো।
এ ব্যাথা বিশাল ব্যাথা, যে ব্যাথায় পুরো শরীর হিম হয়ে নিস্তেজ হয়ে আসছে।
পরীর মাথায় নানান চিন্তা এসে ভিড়ে যাচ্ছে ।চোখের সামনে কালো অন্ধকার ভেসে আসছে।
রাজ কে হারানোর ভয় যেনো তাড়া করছে পরী কে। পরী কী তাহলে রাজ কে হারাতে চললো।”

—“রাজ শান্ত ভাবে রাফি বলে ডাকল, যেনো কিছুই হয় নি। ”

“রাফি রাজের দিকে তাকিয়ে ভীষণ ভয় পেয়ে গেলো।রাফির পায়ের নিচের মাটি যেনো সরে গেলো। রাজের চেহারা ভয়ার্ত রকম লাল,চোখ গুলো একদম রক্তবর্ণ, রাগে ঠোঁট জোড়াসহ কাঁপছে। যেনো বিশাল ঝড়ের পূর্বাভাস। ”

–” রাজ আবার বলতে শুরু করলো, রাফি তুই তো আমার ভাই তাই না?
আমি জানি তুই মিথ্যা বলিস নি তোর সব সত্যি। আমি পরীর থেকেও তোকে বিশ্বাস করি। ”

–” রাজের এসব কথা শুনে পরীর পুরো পৃথিবীটাই যেনো অন্ধকারে ছেয়ে গেলো।
মাথাটা কেমন ঝিমঝিম করছে, চোখ দুটো বন্ধ হয়ে আসছে, তবুও নিজেকে শান্ত রেখে শক্তভাবে দাঁড়িয়ে রইলো।রাজকে আজ অচেনা লাগছে পরীর, বড্ড অচেনা, অজানা। ”

” রাজ ঠোঁট দু’টো ভিজিয়ে আবার বলতে শুরু করলো, তুই বলেছিস তো পরী চরিত্রহীন?
হুম ঠিক আছে আমিও মেনে নিচ্ছি পরী চরিত্রহীন। তোকে টেনেহিঁচড়ে এই রুমে নিয়ে এসেছে।
কিন্তু তুই, তুই আসলি কেন বলতো আমাকে?
একজন মেয়ে মানুষ একজন পুরুষ শক্তির কাছে কখনো পেরে উঠে না তুই তা ভালো করেই জানিস।
তুই কাপুরুষ তাই হয়তো ওর ডাকে চলে এসেছিস তাই-না।

রাজ কিছুক্ষণ দম পেলে আবার বলতে শুরু করলো,তুই বলেছিস তো মনে আছে পরী তোর সাথে নোংরামো করতে চেয়েছে?

“স্বয়ং পুরো পৃথিবী এসেও যদি বলে আমার পরী চরিত্রহীন আমি তা বিশ্বাস করবো না যতোক্ষণ এ দেহে প্রাণ আছে।
তুই কি করে পারলি পরীর নামে মিথ্যা অপবাদ দিতে?

“রাজের কথা শুনে পরীর পুরো শরীরে পবিত্রতার শিহরণ বইছে, চারদিকে যেনো প্রজাপতি উড়ে বেড়াচ্ছে, দূর থেকে শিউলী ফুলের সুভাস এসে মন কে মাতিয়ে দিচ্ছে ।”

“রাজ নিজের ঠোঁট উল্টিয়ে রাফির চোখে চোখ রেখে বললো,তুই আমার ভাই তো তোকে আমার খুব চেনা আছে।
লন্ডনে কি কি করেছিস তুই না জানালেও আমি জানি।

“রাজের কথাগুলো শুনে রাফি নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। মুখে কোনো কথা নেই। ”

“রাজ চেঁচিয়ে বললো, ” রাফি আমার চোখে তাকা একবার।”

“রাফির কোনো সাড়া নেই। ”

রাজ পরীর হাত ধরে কাছে নিয়ে আসলো। রাফির মুখোমুখি দাঁড় করালো।
রাজ চেঁচিয়ে বললো, রাফি তুই একবার চেয়ে দেখ, এই পরীর নামে তুই খারাপ কথাগুলো বলছিস তো, ওর হাত টায় তাকিয়ে দেখ, কতো টা জখম করেছি আমি, কিন্তু ও একবারের জন্যও বলেনি হাত ছাড়ুন। তাঁর একটাই কারণ সারাজীবনের জন্য আমার হাত ধরেছে তোদের জন্য নরপিশাচদের জন্য হাত ছাড়বার জন্য নয়।
রাজ আবার পরীর চোখে চোখ রেখে বলতে শুরু করলো, পরী এমন মেয়ে যাকে দূর থেকে ভালোবাসলেও হয়, কাছে গিয়ে ছুঁতে হয় না বুঝলি তো। যার হৃদয়ে আছে পবিত্রতার ছোঁয়া, যাকে ছুঁয়ে দেখতে হয় না।
এখন জবাব দে, পরীর নামে কেনো বদনাম করলি জবাব দে রাফি জবাব দে?
নয়তো এখন তোর কি অবস্থা করি ভাবতেও পারবি না।”

—“রাজের এতো রাগ দেখে পরী ভয় পেয়ে কাঁপতে শুরু করলো।”

–“রাজ গর্জে উঠলো, ডাপার আনসার মি!?”

—“রাফি মাথা উঁচু করে পরীর দিকে এক নজর তাকিয়ে রাজের দিকে তাকিয়ে চেঁচিয়ে বললো হ্যাঁ আমি মিথ্যা বলেছি।
পরী আমাকে ডাকেনি, আমি নিজেই এসেছি। তোর কাছে পরীর কথা শুনতে শুনতে মনের অজান্তে আমিই পরী কে ভালোবেসে ফেলেছি।
আর তুই রাজ তো সবার প্রিয়, এমনকি আমার মা-বাবা ভাইবোনও তোর পাগল।
ছোট বেলা থেকেই তুই সেরাটা পেতিস।
আমি সবসময় তোর পেছনেই থাকতাম।
তাই এর পরিসমাপ্তি ঘটাতেই আমি তোর ভালোবাসা টা নিয়ে গিয়ে আমার জীবনের পূর্ণতা ঘটাতে চেয়েছিলাম।
আর কান খুলে শুনে রাখ আমি পরী কে ভালোবাসি। পরী কে পেতে যা যা করতে হয় আমি সব করবো। এখন না পাই ঠিক কেঁড়ে নিবো পরী কে।

.
.
.

—“রাফির কথাগুলো রাজের গলায় যেনো আঁটকে আসছে। কথাগুলো যেনো কানে এসে নৃত্য করছে। রাজ আর শুনতে পারছে না, সহ্য করতে পারছে না রাফির কথাগুলো।
রাজ দৌড়ে রাফির গলা চেপে ধরলো।
তোর এতো বড়ো সাহস আমার পরীর দিকে নজর দিয়েছিস?
কিভাবে ভাবলি আমার প্রাণভোমরা কে তোর হাতে সঁপে দেবো?
আর সবার ভালোবাসার কথা বললি তো?
তুই কোনো দায়িত্ব পালন করিস,যে সবাই তোকে ভালোবাসবে। ”

–” রাফির দম আটকে আসছে রাজের ওদিকে কোনো হুঁশ নেই। রাফি নিজেকে ছুটাতে ব্যাস্ত।”

” কিছু একটা হয়ে যাবে ভেবে পরী রাজের কাছ থেকে রাফি কে ছুটাতে এগিয়ে আসলো।”
” রাজ এতো জোরে ধরে রেখেছে যে, রাফি কে বাঁচানো পরীর সাধ্যের বাহিরে। ”

” রাজ পরী কে উদ্দেশ্য করে বললো,” পরী বৃথা চেষ্টা করোনা, এই পশু টাকে আমার হাত থেকে কেউ বাঁচাতে পারবে না আজ। আমি ওকে মেরেই ফেলবো,যে চোখ দিয়ে তোমার দিকে নজর করেছে ঐ চোখ তুলে নিবো।”

“রাফির অবস্থা খুবি খারাপ যে কোনো সময় অঘটন ঘটে যেতে পারে। পরীর ভীষণ ভয় হচ্ছে। রাজ ছাড়ুন প্লিজ ছাড়ুন আপনাকে আমার কসম দিলাম রাফি কে ছেড়ে দিন।
রাজ এ কথা শুনার পর পরীর দিকে এক নজর তাকিয়ে রাফির গলা থেকে হাত সরিয়ে নিলো।
রাজ রাফি কে টানতে টানতে নিচে নিয়ে গেল।”

“এদিকে পরীর তো খুব ভয় করছে রাজ কি না কি করে বসে। পরীও রাজের পেছন পেছন গেলো।”

“রাজ রাফি কে বললো,তোর সকল জিনিসপত্র গুছিয়ে এখুনি চলে যা,বাঁচার ইচ্ছে থাকলে।”

“রাফি মিনিট দশকের মধ্যে সকল জিনিস গুছিয়ে চলে গেলো।
যাওয়ার আগে পরীর দিকে তীব্র নজরে তাকালো, মুখে কিছুই বললো না। ”

“পরী ঘৃণা ভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিলো।”

“রাজ দরজাটা সজোড়ে ধাক্কা মেরে বন্ধ করলো।
রাজের রাগ যেনো কমছেই না।
রাগ কন্ট্রোলের জন্য পরী রাজ কে এক গ্লাস পানি খাওয়ালো।রাজ তবুও দম মেরে দাঁড়িয়ে রইলো ।”

“হঠাৎ কলিং বেল বেজে উঠলো।
পরীর কলিজা টাও যেনো ধুপধাপ করে উঠলো।
তাহলে কি রাফি ফিরে এসেছে?
পরীর চিন্তাটা আরো বেড়ে গেলো। চিন্তায় চিন্তায় মাথাটা যেনো ফেটে যাচ্ছে পরীর।”

“পরী ভয়ার্ত কলিজা নিয়ে দরজার কাছে এগোতে গেলে, রাজ পরী কে থামিয়ে নিজে দরজা খুলতে গেলো।
রাজ দরজার দিকে যত এগোচ্ছে পরীর মন তপ্ত বালুকার ন্যায় উত্তপ্ত হচ্ছে।”
“রাজ দরজা খোলবার সাথে সাথে পরী চোখ বন্ধ করে ফেললো। নিভু নিভু চোখে সামনে তাকালো পরী। তাকিয়ে দেখলো পরীর শ্বাশুড়ি এসেছে।
হতাশার রেশ কাটিয়ে পরীর অশান্ত মন শান্ত হলো।”

—“রাজ দরজা খুলে উপরে চলে গেল।”

—“পরী নির্বিকার দৃষ্টিতে রাজের দিকে তাকিয়ে থাকলো।”

“পরীর শ্বাশুড়ি পরীর মাথায় হাত বুলিয়ে জিজ্ঞেস করলো রাজ কী কোনো বিষয় নিয়ে চিন্তিত? ”
শ্বাশুড়ির কথা শুনে বুকের ভেতর টা মুচড়ে উঠলো পরীর।
পরী কি বলবে বুঝতে পারছে না।
পরী রিলাক্স মুডে জবাব দিলো, না তো মা কিছুই হয় নি। ”

“পরীর শ্বাশুড়ি যেতে গিয়েও আবার থেমে গেলো। ফিরে এসে পরী কে জিজ্ঞেস করলো রাফি এভাবে হন্তদন্ত হয়ে ব্যাগ নিয়ে কোথায় গেলো? ”

“রাফির কথা শুনে পরীর বুক টা ভয়ে চুপসে গেলো।
পরী আমতাআমতা করে জবাব দিলো, আসলে মা আমি সঠিক জানি না, তবে যাওয়ার সময় বলে গেলো উনার না-কি কি একটা ইম্পরট্যান্ট কাজ পরে গেছে তাই উনাকে যেতেই হবে।
তাই রাজও আর নিষেধ করেনি।”

–“পরীর শ্বাশুড়ি কিছু একটা ভেবে বললো, তাহলে ঠিক আছে, কাজের তো কোনো বাহানা নেই, যে কোনো সময় যেতেই হবে।
পরী তুমি উপরে যাও রাজ কে নিয়ে আসো। আমিও ফ্রেশ হয়ে আসছি, সবাই একসাথেই খাবো।”

–” রাজের কথা শুনে পরীর শরীর হিম হয়ে গেলো। পরী কিভাবে এ মুখ দেখাবে?পরীর কোন দূষ না থাকলে সবকিছু তো পরীর কারণেই হলো।পরী মনে মনে নিজেকে দোষারপ করছে। রাজ যে খুব কষ্ট পেয়েছে পরী খুব ভালোভাবেই জানে। পরী আস্তে করে রুমে ঢুকলো। রুমে ফিনফিনে নিরবতা কাজ করছে। বাতাস গুলো যেনো অভিমান করেছে কোথাও একটু খানি বাতাসের ছোঁয়া নেই। রুমটা কেমন খাঁখাঁ করছে।
পরী রুমের চারপাশে খুঁজে দেখলো, না কোথাও তো রাজ নেই।
পরী ওয়াশরুম থেকে শুরু করে সব খুঁজে দেখলো কিন্তু না কোথাও খুঁজে পেলো না রাজ কে। ”

“অবশেষে বারান্দার কথা মনে পরলো পরীর। দৌড়ে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো।
গিয়ে যা দেখলো পরীর দু’চোখ বেয়ে পানি পরতে লাগলো। চারপাশ যেনো নিস্তব্ধতায় ছেয়ে যাচ্ছে, পরীর চোখ বন্ধ হয়ে আসছে।পরী ভাবতেই পারছেনা রাজ এটা কিভাবে করতে পারলো।
একটিবারও পরীর কথা ভাবলো না।
পরীর বুক টা জ্বলে যাচ্ছে মাথা টা ঘুরছে।

#চলবে—–