#রঙীন ফানুস
#আফরিন ইভা
#পর্ব- ১৭
__________________
–“রুমে একাকী বসে আছে পরী।
খুব একা লাগছে নিজেকে।”
” রাজ কিছু দরকারি কাজ আছে বলে বাহিরে গিয়েছে। সে-ই যে গেলো,আর আসবার নাম নেই।
পরী বুঝতে পারছে না কি এমন দরকারি কাজ পরলো, এভাবে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে গেলো।”
“পরী রুমের আলো জ্বালাচ্ছে আর নিভাচ্ছে।
এই আলোর মতোই জীবনে সুখ এসে ধরা দিচ্ছে আবার নিভে যাচ্ছে পরীর।
হতাশায় নিমজ্জিত পরীর মন।
আজ কতোদিন পর সীমান্তের সাথে দেখা হয়েছে পরীর।মানুষটা সবদিক থেকে একই রকম। আগে যেমন খারাপ আচরণ করতো, এতোদিন পরও সে-ই একই আচরণ করলো সীমান্ত। ”
” পরী গভীর মনোযোগ দিয়ে ভাবছে, এই নিগূঢ় পৃথিবীতে কতো মানুষ আছে, সবাই নামেই মানুষ। কিন্তু মনুষ্যত্বের দিক দিয়ে কজনই বা মানুষের অন্তর্গত।”
“ভাবতে ভাবতে পরীর দুচোখের পাতা ভিজে উঠেছে।
পরীর দু-চোখ আজ শুধু রিক্ততায় সিক্ত। এসব ভাবতে ভাবতে একসময় ঘুমিয়ে পরলো ।
হিজল বনের মাঝে বসে আছে পরী।
পরীর মন খুশিতে আত্মহারা। পাখিদের সাথে চুপিচুপি কথা বলছে পরী,।
প্রকৃতির সাথে হাত মিলিয়ে মন যেনো আজ মাতাল হয়ে উঠেছে পরীর।
হঠাৎ পেছন থেকে কেউ এসে চোখ চেপে ধরলো।
মুহূর্তেই পরীর স্বপ্ন ভেঙে গেলো।”
.
.
.
স্বপ্ন ভেঙে নিভু নিভু চোখে তাকালো পরী।
কিন্তু না তো কিছুই দেখতে পাচ্ছে না পরী।
সব কালো অন্ধকারে ছেয়ে ঢেকে আছে।
” পরী বুঝতে পারছে, কেউ তার চোখ বেধে দিয়েছে।
যে-ই পরী চোখ থেকে বাঁধন খুলতে গেলো।
কেউ এসে পরীর হাত খাপ করে ধরে ফেললো।
” নো পরী
এখন নয়, আর একটু অপেক্ষা করো।
তোমার জন্য বিশাল সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে।
” মুহুর্তেই পরীর মন খুশিতে ভরে গেলো।
সারপ্রাইজ পেতে কার না মন চায়।”
রাজের কন্ঠ শুনে পরী বুঝতে পারে যে এ আর কেউ নয়, রাজ চলে এসেছে।
“পরীর অপেক্ষা তাহলে শেষ হলো।
রাজ কে ছাড়া এতোক্ষণ কিছুই ভালো লাগছিল না পরীর। রাজ নেই যেনো কিছুই নেই।
রাজ যেভাবে বললো ঐভাবেই পরী দাঁড়িয়ে রইলো। কোন তাড়া নেই পরীর।
রাজ যে অনেক বড় সারপ্রাইজ দিতে চলেছে পরী বুঝতে পেরে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।
কারণ অপেক্ষা ছাড়া কিছুই করার নেই পরীর।”
“রাজ কাছে এসে আলতোভাবে পরীর হাত ধরলো।”
” পরীও রাজের সাথে সাথে পা চালিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।”
” রাজ আস্তে করে পরীকে সোফায়।
বসালো। চোখের বাঁধন খুলে দিলো।”
” পরী যা দেখলো অন্তর আত্মাসহ কেঁপে উঠল। সব যেনো স্তব্ধ। চারদিক যেনো মধুর তায় খেলা করছে।
নিজের অনূভুতিরা আজ যেনো চুপিচুপি কি যেনো ইশারা করছে পরী কে ।
দূর দিগন্ত উন্মোচিত হয়ে পাখিরা যেনো গান গাইছে।”
” রাজ এগুলো কখন করলো পরী ভাবছে।
স্বপ্নের ঘোরে ছিলো তাই হয়তো টের পায়নি পরী।”
” পুরো ঘর অন্ধকারে আচ্ছন্ন, এই আচ্ছন্নতা দূর করতে হাজারো মোমবাতিগুলো মিটমিটিয়ে জ্বলছে। মোমবাতিগুলো নিজে জ্বলে অন্যকেও আলোকিত করছে, , নাম না জানা হরেকরকম বিদেশি ফুল দিয়ে সাজানো পুরো ঘর। শিউলি ফুলগুলো যেন আজ ইচ্ছে করে নিজের সুভাস ছড়াতে প্রতিযোগিতায় নেমেছে । ফুলের সুভাস এসে মনকে জমিয়ে দিচ্ছে পরীর। পরীর হৃদয়ে যেন আজ বাঁধভাঙা ঢেউ এসে খেলে যাচ্ছে।পরীর সামনে একটি টেবিল রাখা,তাতে রাখা ডজন খানেক মোমবাতি , পরীর চোখ গেল সজ্জিত একটা বাটিতে, গোলাপের পাপড়ি ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা বাটিতে। মোমবাতির আলোতে চারদিকটা মোহনীয় লাগছে।
প্রেমিক হৃদয় আজ হার মানতে রাজি, মানবে না কোনো বাঁধা।
“নিভুনিভু চোখে তাকালো পরী, সামনে তাকিয়ে যাকে দেখলো, পরীর হৃদয় খাপছাড়া হয়ে উঠলো।
রাজ কে আজ সত্যিই রাজপুত্রের মতো লাগছে।
উজ্জ্বল আলোতে রাজের চোখের পাপড়িগুলো ভীষণ রকম কাঁপছে।
কাঁপা কাঁপা পাপড়িগুলো যেন রাজের সৌন্দর্য কে আরো দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।
রাজের রক্তিম ঠোঁটগুলো আজ ভীষণ রকম ক্লান্ত দেখাচ্ছে।
উপরের ঠোঁট দিয়ে নিচের ঠোঁট চেপে রেখেছে রাজ। রাজের কণ্ঠনালী’টা আজ ভীষণ রকম ফুলা দেখাচ্ছে, ধূসর পাঞ্জাবী তে কি যে দারুণ লাগছে রাজ কে।
প্রতিদিনই পরীর চোখে রাজ একজন সুপুরুষ। কিন্তু আজ রাজকে লাগছে মায়াবী পুরুষ।
যাকে দেখলে কঠিন হৃদয়েও একরাশ মুগ্ধতা খেলা করে, যার মায়া জাল ডিঙিয়ে কারো যাওয়ার সাধ্য নাই, সে হলো পরীর রাজ।”
.
.
.
রাজের হাত পরীর হাত কোমল স্পর্শে স্পর্শ করলো।
” পরী রাজের পানে চেয়ে দেখলো, রাজের চোখে হাজারো আকুতি,হাজারো স্বপ্ন, হাজারো মুগ্ধতা। মুগ্ধতার রেশ যেনো কাটতেই চাইছে না পরীর।
পরীরও ইচ্ছে করছে রাজের বুকে ঝাঁপ দিতে, দু’চোখে চোখ রেখে হারিয়ে যেতে। ”
“রাজের স্পর্শে শিহরণ বয়ে গেলো পরীর শরীরে। ”
” রাজ পকেট থেকে কিছু একটা বের করলো।”
” পরী মোহনীয় দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো রাজের পানে।
লকেটসহ একটা চেইন পরিয়ে দিলো পরী কে।
“পরী লকেট টা খুলে দেখে যা দেখলো পুরো স্তব্ধ হয়ে গেলো।
লকেটের ভেতর অনেক সুন্দর করে লেখা
রাজের পরী।”
একরাশ মুগ্ধতা এসে দোলা দিলো পরীর হৃদয়ে ।
” রাজ মুখ ফুটে বলতে লাগলো, এ লকেটে যেমন লিখা আছে, এ বুকের মাঝখানেও সেই একি লেখা খোদাই করা। যা কখনো মুছবেনা।
যা কেউ চাইলেও মুছতে পারবে না।”
” রাজের কথাগুলো পরীর মস্তিষ্কে অদ্ভুতভাবে কিছু একটা জানান দিচ্ছে।
পরী মাথাটা নিচু করে নিচে তাকিয়ে আছে।”
” আমার দিকে তাকাও পরী।
রাজের কথায় পরী কোন সাড়া দিলো না। ”
” রাজ আবার ডাকলো…. পরী…..
আমার কথা শুনছো পরী…..
আমার দিকে তাকাও,এ চোখে তাকাও। ”
” কথাগুলো এসে লাগছে পরীর বুকে। ব্যাথিত হৃদয় নিয়ে তাকালো পরী। ”
” পরীর চোখে চোখ রাখলো রাজ।”
“রাজ পরীর হাত টা বুকে চেপে ধরলো।
এ বুকে হাত দিয়ে দেখো পরী, তোমার জায়গাটা বড্ড ফাঁকা।
শূর্ণস্থান’টা পূর্ণ করে দাও পরী। শূর্ণস্থানটা পরীর পূর্ণ ভালোবাসায় ভরিয়ে দাও পরী।
এ বুকে তুমি আছো থাকবে চিরকাল।
তুমি যে আমার মরণব্যাথা। যে ব্যাথা তুমি ছাড়া সারাতে পারবে না কেউ । যদি তুমি বুঝতে তাহলে আমাকে আর এতটা পোড়াতে না পরী। ”
“পরী বড্ড কঠিন তুমি। ”
” রাজের কষ্ট আর সহ্য করতে পারছেনা পরী।
পরী রাজের দিকে খুব ভালো করে তাকালো।
রাজকে ভীষণ কষ্ট দিয়েছে পরী।
রাজ যে খুব কষ্টে আছে রাজের চেহারা দেখেই বুঝা যাচ্ছে।
রাজের চোখের কোণে চিকচিক করছে পানি। ”
“রাজ পরীর কাছে প্রগাঢ় আকুতি জানাল, একটা বার বিশ্বাস করে দেখো পরী।সীমান্তের মতো বিশ্বাস ভাঙবো না আমি ।”
রাজ পরীর কাছাকাছি একদম কাছাকাছি এসে দাঁড়িয়েছে। রাজের নিশ্বাস পরীর উপর গিয়ে পড়ছে।
পরী শক্ত করে সোফার হাতল চেপে ধরলো।
পরীর নিশ্বাস আঁটকে আসছে।
হঠাৎ পরী চোখ বন্ধ করে খুলে তাকালো। ”
.
,.
.
” পরী দেখতে পেলো রাজ একটু দূরে দাঁড়িয়েছে।
” পরী আমি তোমাকে কথা দিয়েছিলাম তুমি ডাকলে আমি আসবো।
কিন্তু বিশ্বাস করো ধৈর্য মানুষের মহৎ গুন তা আমি জানি।
ধৈর্যের ফল কখনো মিষ্টি কখনওবা বিষাক্ত হয়।
আমি যে আর পারছিনা পরী।
আমিও যে একজন মানুষ।
প্রচন্ড চাপ নিয়ে কথাগুলো বলছে রাজ।
রাজ আবার দম নিয়ে বলতে শুরু করলো।
পরী কি ভুল ছিলো আমার বলো?
সেই কবে থেকেই তোমাতে ডুবেছি আমি।
তুমি যে আমার গলার কাঁটা হয়ে বিঁধে আছো।
তোমাকে ওগরানো সম্ভব নয়।
হয় তুমি দাও নিজ হাতে মরন আমায়, নয়তো করাও বিষপান।
তবুও রেখোনা নিজেকে আড়ালে।
আমি যে কোন ব্যাথা আর পারবোনা সইতে।”
” পরী রাজের কাছে এসে চোখের জল মুছে দিলো।”
” পরীও চায় আজ বলতে।
রাজ আপনি খুবি ভালো।
শুধু ভালো বললে ভুল হবে, জগতের শ্রেষ্ঠ ভালো বলে যদি কেউ থাকে আর সে হলেন আপনি।
আমিও চাই না আর আড়ালে থাকতে।
কথাটা আমি আরো আগে বলতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সময় সুযোগ হয়ে ওঠেনি।
পরী কথাগুলো বলছে আর ঘামছে।
এসির টেম্পোরাল খুব বাড়ানো, তবুও পুরো পৃথিবীর গরমগুলো যেন আজ পরীর’ই লাগছে।
অনেকবার বলতে গিয়েও বলতে পারিনি রাজ।
“রাজ পরীর কথাগুলো গভীর মনোযোগ দিয়ে শুনছে। ”
“পরীর মুখ যেনো রক্তিম আকার ধারণ করেছে।”
“আমি’আমি….. বলে পরী থেমে গেল।”
“পরীর মুখপানে তাকালো রাজ।
কিছু একটা শুনবে বলে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে আজ। ”
” কাঁপা কাঁপা ঠোঁটে কঠিন সত্যটা বলে ফেললো আজ। কথাটা বলতে বড্ড কষ্ট হচ্ছিল পরীর।
পরী চায়না রাজের এ হৃদয় নিয়ে খেলা করতে আর।
বড্ড দেরি করেছে পরী।
কথাটা আরো আগে বলা উচিত ছিলো পরীর।”
“এরপর পরী যা বললো, রাজ স্তব্ধ।
নিজের কানকেও যেন বিশ্বাস করতে পারছে না।
এ সত্যটা রাজ জানতে চায়নি।
এমন কঠিন কথাটা শুনতে চায় নি রাজ।
এ কঠিন সত্যটা কি আদৌও সত্য রাজের বিশ্বাস করতেই যেন কষ্ট হচ্ছে। ”
#চলবে——–