রঙ বেরঙের অনুভূতি পর্ব-০৪

0
202

#রঙ_বেরঙের_অনুভূতি
#লেখনীতেঃতানজিলা_খাতুন_তানু

(৪)

সুহানি অবাক হয়ে বললোঃ এইগুলো আপনি কোথায় পেলেন।

নোহানঃ ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখলে যে কেউ ভাবে।

সুহানিঃ আপনি আমাকে এইগুলো দিন।

নোহানঃ না,আগে উত্তর গুলো দাও।

সুহানিঃ কি উত্তর।

নোহানঃ এই ডিজাইন গুলো তুমি করেছো।

সুহানি মুখ বাঁকিয়ে বললোঃ এই বাড়িতে আপনি আর আমি ছাড়া কেউ নেয়। আর আপনি এইগুলো আমার ঘর থেকে পেয়েছেন তারমানে কি দাঁড়ালো এইগুলো আমার করা ডিজাইন তাই না।

নোহানঃ ওহ।

সুহানি নোহানের কাছ থেকে ডিজাইন গুলো নিয়ে চলে যায়। নোহান সুহানির বসের কথা ভাবতে লাগলো সে বলেছিলো সুহানি খুব ভালো একজন ডিজাইনার। সত্যি যদি সুহানি ভালো ডিজাইন করে,আর এইগুলো যদি ওর করা হয় তাহলে সেদিন অনুষ্ঠানে সুহানি সিলেক্টেড হলো না কেন?নোহানের মনে সন্দেহের দানা বাঁধতে শুরু করলো। আগে থেকেই কি সুহানি এত সুন্দর ডিজাইন করতো না নতুন লিখেছে। কিন্তু ডিজাইন গুলো দেখে মনে হচ্ছে অভিজ্ঞ হাত।

নোহানের মনে পড়ে আগের কথা। যেদিন প্রথম দিয়ার সাথে দেখা। অসম্ভব সুন্দর একটা প্রোজেক্ট সবার সামনে তুলে ধরেছিলো। নোহান দিয়ার কাজের প্রতি মুগ্ধ হয়েছিলো। আর সেই কাজের মুগ্ধতাটাই আসতে আসতে দিয়ার প্রতি ভালোবাসায় রূপ নিলো। কিন্তু একটা ঘটনা গোটা জীবনটাকে এলোমেলো করে দিলো।

নোহানের কিছু একটা মনে পড়ায় চোখ মুখ লাল বর্ন ধারন করলো। রাগে গজগজ করতে করতে বললোঃ ছাড়বো না তোমাকে আমি।

কোন অদৃশ্য প্রতিশোধের খেলায় মেতে উঠেছে নোহান শিকদার। আর এই খেলার পরিনতিই বা কি হবে,সেটা কেউ জানে না।

২দিন পর…

নোহান বাড়ির সব কাজ সুহানিকে দিয়ে করিয়েছে। সুহানি ও কোনো প্রতিবাদ করেনি চুপচাপ করে গেছে। সুহানি একা হয়ে গেছে,সারাদিন চুপ করে থাকে, আগের মতো হাসিখুশি আর নেয়।বাবা মায়ের সাথেও যোগাযোগ করতে নেয়নি নোহান। নোহান সুহানির সাথে কথা বলে না বললেই চলে, প্রয়োজনে একটা আধটা কথা বলে। সুহানি বসে আছে সোফায় নোহান সোফায় বসে বললো।

নোহানঃ সুহানি একটা কথা ছিলো।

সুহানিঃ কি

নোহানঃ তোমার জন্য একটা কাজ আছে,আমার কোম্পানিতে।

সুহানিঃ কি কাজ।

নোহানঃ আমার কোম্পানিতে ডিজাইনার হিসাবে জয়েন করবে।

সুহানি নোহানের এমন কথা শুনে আকাশ থেকে পড়লো। নোহান ওকে এরকম একটা প্রস্তাব দেবে সেটা ভাবতেই পারে নি। এই নোহানের মাথায় আবার কি ঘুরছে উপর ওয়ালা ভালো জানেন।

নোহানঃ কি হলো বলো।

সুহানিঃ আপনার মাথায় কি ঘুরছেন বলুন তো,হুট করে আবার কাজে জয়েন করতে বলছেন।‌

নোহান কপাট রাগ নিয়ে বললোঃ কারোর ভালো করতেই নেয়।

সুহানি তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললঃ আপনি আর আমার ভালো দুটো কথা একসাথে কখনোই যায়না। আপনি আমার ভালো চান না সেটা আমি ভালো করেই জানি ।

নোহান সুহানির হাতটা ধরে নিজের কাছে টেনে নিয়ে বললোঃ হ্যা সত্যি আমি তোমার ভালো চাইনা,আর কাজটা তোমাকে করতেই হবে।

সুহানিঃ জোড় করে করাবেন।

নোহানঃ না তোমাকে একটা অফার দিয়েছিলাম ,নিজের সময় কাটানোর জন্য সেটা না নিতে চাইলে নিতে হবে না।

সুহানি কিছু একটা ভেবে বললোঃ আচ্ছা আমি জবটা করবো।

নোহানের মুখে হাসি ফুটে উঠল।

পরেরদিন..

সুহানি রেডি হয়ে আসতেই নোহান বললোঃ ট্যাক্সি নিয়ে চলে যাও।‌আর হ্যা ঠিক টাইমের মধ্যে পৌঁছাবে,নাহলে শাস্তি পাবে,আর অন্য কোথাও যাবার প্ল্যান করবে না মনে থাকে যেন সবগুলো কথা।

নোহান কথাগুলো বলে চলে যায়,সুহানি রাগে ফোঁস ফোঁস করে উঠে, কিন্তু কিছু করার নেয়। সবকিছু না জানা পর্যন্ত ওকে যে এসব সহ্য করতেই হবে।

সুহানি বাইরে ট্যাক্সির জন্য দাঁড়িয়ে থাকে। গরমের মধ্যে মুখটা লাল হয়ে আছে।রাগে গজগজ করতে,যদি পারে নোহানকে চিবিয়ে খাবে।

সময় ৯:৫৮…

সুহানি একপ্রকার দৌড়ে অফিসে প্রবেশ করলো।‌রিসেপশনে গিয়ে বললোঃ নোহান শিকদারের কেবিনটা কোথায়।

রিসেপশনে থাকা মেয়েটা সুহানির দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে,যেন ভূত দেখেছে।

সুহানিঃ কি হলো বলুন।

মেয়েটাঃ ওদিকে, কিন্তু আপনি যেতে পারবেন না স্যারের পারমিশন ছাড়া।

সুহানি মেকি হাসি দিয়ে বললঃ আপনাদের স্যার জানে আমি আসবো।

মেয়েটাঃ তবু ম্যাম একবার স্যারকে জিজ্ঞাসা করে নিই, একটু ওয়েট করুন।

মেয়েটা নোহানকে কল করলোঃ স্যার।

নোহানঃ হ্যা বলো।

মেয়েটাঃ‌আপনার সাথে একটা মেয়ে দেখা করতে চাইছে।

নোহানঃ কি নাম বলুন।

মেয়েটাঃ ম্যাম আপনার নাম কি?

সুহানিঃ সুহানি।

মেয়েটাঃ‌স্যার সুহানি।

নোহান বাঁকা হেসে বললঃ ওকে,ওনাকে ওয়েটিং রুমে ওয়েট করতে বলুন।‌আমি পড়ে ডেকে নেবো।

মেয়েটাঃ ওকে স্যার

মেয়েটা ফোনটা কেটে দিয়ে সুহানি কে বললোঃ ম্যাম স্যার আপনাকে অপেক্ষা করতে বললো।

সুহানি এমন করে তাকালো যেন মেয়েটাকে কাঁচা গিলে খাবে। ওহ ভালো করেই বুঝতে পারছে নোহান ইচ্ছা করে এসব করছে। সুহানি অপেক্ষা করতে লাগলো আর নোহান ল্যাপটপে বসে ওকে দেখতে লাগলো।

নোহান মনে মনে কিছু একটা ভেবে বাঁকা হাসলো।

বিকালে…

সুহানিকে নোহান ইচ্ছা করে সারাদিন বাইরে বসিয়ে রেখেছিলো। ৩ টের সময় মেয়েটা বললোঃ ম্যাম আপনি ফিরে যান,স্যার চলে গেছে।

সুহানির মনে হচ্ছে নোহানের মাথাটা ফাটিয়ে দিতে। সারাদিন এভাবে বসিয়ে রাখার কোনো মানে হয় না। সুহানি প্রচুর পরিমাণে রেগে আছে।

রাগে গজগজ করতে করতে বাড়ি গিয়ে দেখলো, নোহান সোফায় বসে বসে সরবত খাচ্ছে। রঙ্গমূর্তি হয়ে নোহানের সামনে দাঁড়িয়ে বললোঃ আপনি আমাকে সারাদিন এভাবে হ্যারাস করলেন কেন?

নোহান সুহানির কথাকে পাত্তা না দিয়ে সরবত খেতে লাগলো।

সুহানিঃ এই আপনার আমার উপর কিসের রাগ বলুন তো,এভাবে অত্যাচার করছেন আমার উপরে।

নোহান সুহানির দিকে তাকিয়ে বললোঃ তোমাকে …

সুহানিঃ কি?

নোহানঃ তোমাকে

সুহানি রাগ নিয়ে বললোঃ আরে বলবেন তো।

নোহানঃ তোমাকে রাগলে হেবি লাগে।

সুহানি শক খেয়ে গেলো নোহানের এমন কথা শুনে,একটা অদ্ভুত শিহরন বয়ে গেল। নোহান ওর মুখের দিকে তাকিয়ে বললোঃ কি হলো ঝাঁসির রানি হূট করে লজ্জাবতী হয়ে গেলো কেন?

নোহান কথাটা বলেই অট্রহাসিতে ফেটে পড়লো। সুহানি নোহানের হাসির দিকে তাকিয়ে আছে, এই প্রথম নোহানকে হাসতে দেখলো, সত্যি দিয়া ঠিক বলতো নোহানের হাসিটা অসম্ভব সুন্দর।‌

সুহানিঃ‌কি ব্যাপার দিয়া তুই যে মিস্টার শিকদারের উপরে পুরো ফিদা হয়ে গেলি।

দিয়াঃ কি করবো বল,মানুষটার হাসিটা অসম্ভব সুন্দর,এই হাসির প্রেমে কেউ না পড়ে থাকতেই পারবে না। তুই দেখলে তুইও পড়ে যাবি।

সুহানিঃ‌ধ্যাত খালি উল্টো পাল্টা কথা তোর।

সুহানির আজকে মনে হচ্ছে সত্যি নোহানের হাসির প্রেমে যেকোনো মেয়ে পড়ে যেতে পারে। মানুষটাকে হাসলে কত সুন্দর লাগে কিন্তু মানুষটা এভাবে মুখ গোমড়া করে থাকে কেন? কি হয়েছে ওনার। আর দিয়াই বা কোথায়?

নোহান হাসি থামিয়ে বললোঃ কি দেখছো হাঁ করে।

সুহানি ঘোরের মধ্যে থেকে বললোঃ আপনাকে।

নোহানঃ কি?

সুহানি ঘোর থেকে বেড়িয়ে আসলো। আর নোহানকে কিছু না বলে ভেতরে চলে গেলো‌। নোহান সুহানির যাবার দিকে তাকিয়ে মনে মনে কিছু একটা বললো।

#চলবে…

বিঃ দ্রঃ ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।