#রঙ_বেরঙের_অনুভূতি
#লেখনীতেঃতানজিলা_খাতুন_তানু
#ধামাকা_পার্ট
(৭)
সুহানি বিছানায় শুয়ে শুয়ে কথাগুলো ভাবছে দিয়া কোথায়? কি হয়েছিলো সেদিন। সবকিছু আমাকে জানতেই হবে।
রাত্রিবেলা,,
নোহান সুহানিকে ডেকে পাঠিয়েছে ডাইনিং রুমে।
নোহান মেডকে বললঃ তোমাদের ম্যামকে বলো খাবার খেতে।
সুহানিঃ কদম দি তোমাদের স্যারকে বলে দাও আমার খিদে নেয়।
নোহানঃ কদম তোমার ম্যামকে বলে দাও খাবার না খেলে অসুস্থ হয়ে পড়বে তারপরে বলবে আমি খেতে দেয়নি,এসবে আমি নেয় বাবা চুপচাপ খেতে বলো।
সুহানিঃ কদমদি ওনাকে বলে দাও আমি এরকম কখনোই বলবো না।আমার খিদে নেয় আমি খাবো না,ওনাকে খেতে বলে দাও।
কদম একবার এর দিকে আর একবার ওর দিকে তাকাচ্ছে। দুজনে ঝগড়া করছে কিন্তু মাঝখানে কদমকে রেখে অদ্ভুত।
কদমঃ তোমার ঝগড়া করো আমি যায়।
কদম চলে যায়,নোহান আর সুহানি একে অপরের দিকে রাগি চোখে তাকায়। সুহানি নিজের ঘরের দিকে যেতে যাবে তখনি নোহান পেছন থেকে বললোঃ খাবার না খেলে মেডিসিন খেতে পারবে না।তাই চুপ করে খাবার গুলো খাও
সুহানি অবাক হয়ে নোহানের দিকে তাকালো। নোহান কিভাবে জানলো ওর মেডিসিন লাগবে।
নোহানঃ এত চিন্তা ভাবনা না করে চুপচাপ খেয়ে নাও।
সুহানিঃ খাবো না।
নোহানঃ আমাকে জোড় করতে বাধ্য করো না।
সুহানি নোহানের চাপে পড়ে কোনো রকমে একটু খেয়ে মেডিসিন নিয়েছো।
২ দিন পর…
সুহানি এখন আগের থেকে অনেকটাই সুস্থ। এই দুদিন অফিসে যায়নি। আজকেও যায়নি একা ঘরে বসে আছে। তখন শাওন ওকে ফোন করে একটা জায়গায় আসতে বললো। সুহানি প্রথমে না করলেও শাওনের জোড়াজুড়িতে রাজি হয়ে যায়।
সুহানি রেডি হয়ে শাওনের কথা মতো একটা রেস্টুরেন্টে পৌঁছায়।
সুহানিঃ কি ব্যাপার এতটা খুশি কেন?
শাওনঃ কারন আছে। আজকে সারাদিন তোমাকে আমি ট্রিট দেবো।
সুহানিঃ কারনটা?
শাওনঃ পড়ে বলি।
সুহানিঃ ওকে।
শাওন ওর আর সুহানির জন্য খাবার অর্ডার করলো। দুজনে খাচ্ছে আর কথা বলছে হেসে হেসে।
ওদের দিকে রক্ত চক্ষু করে তাকিয়ে আছে নোহান।হ্যা ওই রেস্টুরেন্টেই নোহান একটা ডিল করতে এসেছে। ডিল করতে করতে ওর চোখ পড়ে শাওন ও সুহানির উপরে।
নোহানকে বার বার অন্যমনস্ক হতে দেখে,মিস্টার আহমেদ বললোঃ মিষ্টার শিকদার এনিথিং রং।
নোহান ওইদিকে তাকিয়েই বললোঃ না কিছু না।
নোহানের দৃষ্টি অনুসরন করে মিষ্টার আহমেদ বললোঃ ওদের আপনি চেনেন নাকি।
নোহান মাথা নাড়িয়ে হ্যা বললো। মিষ্টার আহমেদ দাঁত বের করে বললোঃ তাহলে মিষ্টার শিকদার ওই মেয়েকে আমার কাছে পাঠাতে পারবেন এক রাতের জন্য,তাহলে আমাদের সব ডিল আপনাদের সাথেই করবো।
নোহান রাগী চোখে মিষ্টার আহমেদের দিকে তাকালো। নোহানের রাগী চোখ দেখে বললোঃ আরে রাগ করেন কেন? এতে আমার ওহ লাভ আর আপনার ওহ।
নোহানঃ আমার লাভ ক্ষতি আমিই দেখে নেবো,এবার আপনার টা আপনি দেখুন। আমি আপনার সাথে কোনো ডিল করবো না।
মিষ্টার আহমেদঃ এতটা রেগে যাচ্ছেন কেন?
নোহান আহমেদের গলার কলারটা ধরে বললোঃ ওর দিকে চোখ তুলে তাকালেনা আপনার চো’খ দু’টো আর চো’খে’র জা’য়’গা’তে থা’ক’বে না।
মিষ্টার আহমেদঃ আমার একবার যেদিকে চোখ যায় আমি সেটা হাসিল করেই ছাড়ি।
নোহানের মাথায় আগুন ধরে গেল, মিষ্টার আহমেদ কে মারতে লাগলো। গোটা রেস্টুরেন্টের সবাই ওনাদের দিকে তাকিয়ে আছে। ম্যানেজার ছাড়াতে চাইছে কিন্তু নোহান মে’রেই যাচ্ছে।
নোহানঃ নোহান শিকদার নিজের জিনিসের উপর কারোর নজর সহ্য করে না। আর কোনোদিনও যদি ওর দিকে চোখ তুলে তাকাতে দেখি ওখানেই মে’রে ফেলে দিয়ে আসবো।
নোহান মিষ্টার আহমেদ কে ছেড়ে দিলো। মিষ্টার আহমেদ রাগী চোখে তাকিয়ে চলে গেলো। ম্যানেজার সকলকে চলে যেতে বললো। সবটাই দাঁড়িয়ে দেখছিলো সুহানি আর শাওন। রেস্টুরেন্টের পরিবেশ স্বাভাবিক হতেই শাওন সুহানির দিকে তাকিয়ে বললোঃ সুহা এখান থেকে চলো। স্যার দেখলে চাকরি থাকবে না।
সুহানিঃ তুমি যাও আমি আসছি।
শাওন সুহানিকে রেখে আড়ালে চলে যায়। নোহান সুহানির কাছে এসে দাঁড়িয়ে পড়লো।সুহানি নোহানের দিকে তাকিয়ে আছে, নোহানের কথাটা বার বার কানে বাজছে, কি এমন কারন যার জন্য নোহান মা’রা’মা’রি করতে লাগলো।
সুহানি নিজের চোখ দিয়ে ইশারা করে বললো কি হয়েছে।
নোহান কিছুই না বলে,চলে গেলো।নোহান চলে যেতেই শাওন সুহানিকে এসে বললোঃ চলো।
সুহানিঃ কোথায়?
শাওনঃ একটা কাজ আছে চলো।
সুহানিঃ কি?
শাওনঃ গেলেই দেখতে পাবে।
শাওন আর সুহানি একটা পার্কে এসে দাঁড়ায়।
সুহানিঃ এখানে কেন?
শাওনঃ তোমাকে আমি কিছু কথা বলতে চাই।
সুহানিঃ কি কথা
শাওন হাঁটু গেড়ে বসে বললোঃ আই লাভ ইউ
শাওনের এমন কথায় সুহানি আকাশ থেকে পড়লো। অপরদিকে সবটাই দেখেছিলো নোহান। শাওন সুহানিকে প্রোপস করছে এটা কিছুতেই মেনে নিতে পারলো না। গাড়িটা চালিয়ে ওখান থেকে চলে যায়, বাকি কথাগুলো না শুনেই।
সুহানিঃ এসব কি?
শাওন একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বললোঃ প্র্যাক্টিস করলাম।
সুহানি ভ্রু কুঁচকে বললোঃ কিসের?
শাওনঃ প্রোপস করার।
সুহানিঃ কিছুই বুঝতে পারলাম না।
শাওনঃ আসলে আমি একজনকে ভালবাসি,তাকে প্রোপস করবো কিন্তু কিভাবে করবো সেটাই বুঝতে পারছিলাম না তাই তোমাকে দিয়ে টেষ্ট করলাম।
সুহানি আলতো করে হেসে বললোঃ এটা কিন্তু ঠিক না। আমাকে ভালোবাসার কথা জানিয়ে অন্য কারোর হতে পারো না তুমি।
শাওন সুহানির দুষ্টুমি বুঝতে না পেরে বললোঃ কি বলছো এসব আমি তোমাকে বোনের মতো দেখি।
সুহানি দাঁত বের করে বললোঃ আর আমি দাদা হিসাবে তোমাকে।
শাওনের জানে প্রান ফিরে আসলো। বেচারা ভয় পেয়ে গিয়েছিলো খুব জোরে।
সুহানিঃ তা আমার ভাবিটা কে?
শাওনঃ আগে তাকে বলি তারপর।
সুহানিঃ ওকে।
শাওনঃ আচ্ছা একটা কথা বলবো।
সুহানিঃ কী?
শাওনঃ তোমার সাথে কি নোহান স্যারের কোনো সম্পর্ক আছে।
সুহানি শাওনের মুখে এই কথা শুনে চমকে উঠলো, কিন্তু নিজেকে সামলে নিয়ে বললোঃ আরে কি বলো না,আচ্ছা বাদ দাও আমাকে বাড়ি ফিরতে হবে বাই।
সুহানি শাওনকে বিদায় জানিয়ে চলে গেলো বাড়িতে। শাওন ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বললোঃ মনে হচ্ছে কিছু একটা আড়াল করতে চাইছো,যাই হোক তবে আমার মনে হচ্ছে তোমাদের মাঝে কোনো না কোনো সম্পর্ক তো আছেই। রেস্টুরেন্টে যখন একে অপরের দিকে তাকিয়ে ছিলে তখন তোমাদের চোখে অন্য কিছু একটা ছিলো।
রাত ১২টা…
এখনো পর্যন্ত নোহান বাড়িতে ফেরেনি।সুহানি জেগে আছে, রহিম চাচা ওহ জেগে ছিলেন কিন্তু সুহানি জোর করে ঘুমাতে পাঠিয়ে দিয়েছে।
গাড়ি আসার আওয়াজ শুনতে পেয়ে সুহানি দরজাটা খুলে দিল। এলোমেলো পায়ে নোহান দরজার সামনে এসে দাঁড়ালো। নোহানের গা থেকে বিশ্রী গন্ধ আসছে। সুহানি চোখে মুখে বিস্ময় নিয়ে বললোঃ আপনি মদ খেয়েছেন?
নোহানঃ হ্যা খেয়েছি বেশ করেছি আবার খাবো তাতে তোমার কি?
সুহানি বুঝতে পারলো নোহান জ্ঞানে নেয়,নোহানকে কোনো রকমে নিজের ঘরে নিয়ে গেলো। বিছানায় দিয়ে চলে যাবে,নোহান হাত ধরে নিজের কাছে টেনে নিয়ে বললোঃ প্লিজ আমাকে ছেড়ে চলে যেয়ো না দিয়ার মতো।
সুহানিঃ আচ্ছা যাবো না।
নোহানঃসত্যি তো।
সুহানিঃ হুম,আচ্ছা বলুন তো দিয়া কোথায়?
নোহানঃ দিয়া তো আমাকে ছেড়ে অনেক দূরে চলে গেছে।
সুহানিঃ কোথায় গেছে দিয়া।
নোহান যেটা বললো,তাতে সুহানি চমকে উঠলো। সুহানির মনে হচ্ছে কানে কম শুনছে। মাথাটা ভো ভো করে ঘুরছে। না এটি কিছুতেই হতে পারে না। মন আর মস্তিষ্কের যুদ্ধ লেগে গেছে। নোহানের কথাটি কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না সুহানি।
সুহানিঃ কি বলছেন এসব আপনি?
নোহানঃ হ্যা ঠিক বলছি দিয়া আমাকে ছেড়ে চলে গেছে।
নোহান সুহানিকে ধরে বাচ্চাদের মতো ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো। সুহানির চোখ দিয়েও একটা ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়লো।
#চলবে…
বিঃ দ্রঃ- ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।