#রঙ_বেরঙের_অনুভূতি
#লেখনীতেঃতানজিলা_খাতুন_তানু
(৯)
সময়ের সাথে নোহানের মাঝে পরির্বতন আসে। নোহান যতবার সুহানিকে কষ্ট দিতে যায় ততবারই মনে একটা করে প্রশ্ন এসে জমা হয়। দিয়ার শেষ বলা কথাটা “সুহা” ছিলো, নোহানের কথার উত্তরের কথাটাও সুহা ছিলো। স্বাভাবিক ভাবেই নোহানের মনে হয়েছে দিয়ার খু”নি সুহানিই। কিন্তু কেন এখন সেটা মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে সেটাই বুঝে উঠতে পারছে না।
সুহানিও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে দিয়ার মৃ”ত্যু রহস্য উদঘাটন করার। কিন্তু কোনোকিছুই খুঁজে পাচ্ছে না। কে দিয়াকে মা”র”তে পারে সেটাই বুঝতে পারছে না। দিয়ার কোনো শত্রু ছিলো বলো সুহানির জানা ছিলো না। তাহলে কেন দিয়াকে এভাবে প্রান হারাতে হয়েছে। তার উত্তরটা এখনো পুরোটাই রহস্যাভৃত।
নোহান সুহানির সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছে। মাঝে কেটে গেছে আরো একটা মাস। নোহানের নিরবতা সুহানিকে আরো কষ্ট দিচ্ছে। বিনা কারনে,বিনা দোষে দোষী হয়ে আছে এটা কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না সুহানি।
সুহানি রোজকার দিনের মতোই অফিসে যাবে বের হয়েছে। এমন সময় পেছন থেকে একটা গাড়ি এসে খুব জোরে ধাক্কা মারলো। সুহানি মুখ থুবড়ে পড়ে গেলো রাস্তায়। র’ক্ত গড়িয়ে পড়ছে, সুহানির চোখটা আস্তে আস্তে বন্ধ হয়ে আসছে। সুহানির মনে হচ্ছে ওর প্রান পাখিটা আর বেশিক্ষন নেয়,এখনি মনে হয় প্রানটা উড়ে চলে যাবে। নিভু নিভু চোখে দেখতে পেলো,কেউ একজন ওকে জড়িয়ে ধরে পাগলামি করছে। তাকে স্পর্শ করার আগেই ও অজ্ঞান হয়ে গেলো।
অন্যদিকে..
কেউ একজন অট্রহাসিতে ফেটে পড়লো।
– বলেছিলাম না সুহানি শিকদার। আমার পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে আসলে অ’কা’লে ঝরে যেতে হবে,দিয়া শিকদারের মতো। দিয়া তো ম’রে’ই গেছে তোমাকেও যে ম’র’তে হতো। নাহলে আমার সব প্ল্যানটা শেষ হয়ে যেতো। একবার যদি সবকিছু তোমার হাতে চলে আসে তো তাহলে আমি যে বড্ড বিপদে পড়ে যাবো। তাই তোমাকেও চলে যেতে হলো। দুই বান্ধবী উপরে গিয়ে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করো।
আবারো হাসিতে ফেটে পড়লো। সত্যি না মিথ্যা।কিসের হবে জয়। ষড়যন্ত্র না সত্য কোনটা জিতে যাবে।সুহানিও কি চলে যাবে দিয়ার কাছে। জিতে যাবে কি ওই ষড়যন্ত্রকারী।
নোহান হসপিটালের ও.টির সামনে বসে আছে। আজ এলোমেলো লাগছে নোহানকে ৩ মাস আগে এই একিরকম ভাবে দিয়াকে র’ক্তা’ক্ত ভাবে দেখেছিলো। দিয়াকে বাঁ’চা’তে পারেনি এবারেও কি সুহানিকেও পারবে না। নোহানের কোনো কিছুই ভালো লাগছে না। সুহানির অপারেশন চলছে।
নোহানের কাঁধে কেউ একজন হাত রাখলো। নোহান পেছনে ফিরে তাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো। ছেলেদের নাকি কাঁদতে নেয়, কিন্তু ছেলেরাও তো মানুষ তাদেরও তো প্রান আছে,তাদেরও তো মন আছে। কাছের মানুষকে হারানোর কষ্ট আছে,বুকে একরাশ বেদনা আছে,যন্ত্রনা আছে আর এই সবকিছুই প্রকাশিত হতে পারে কান্নার মাধ্যমে। কান্না করা ভালো সেটা ছেলে হোক বা মেয়ে। বিশেষ করে ছেলেরা তারা কাঁদতে না পেরে আরো গম্ভীর হয়ে পড়ে এটা ক্ষতিকর।
নোহান কাঁদতে কাঁদতে বললোঃ দিদিয়া আমার সাথেই এরকম কেন হয় আমি কি করেছি। আমার ভাগ্যটা এতটা খারাপ কেন। আমার কাছে যেই থাকে তারই ক্ষতি হয়ে যায় কেন বল না।
নোহাঃ ভাই শান্ত হ। দ্যাখ এখানে তোর কোনো দোষ নেয়। এখানে তোর কি হাত আছে বল।
নোহানঃ হ্যা সবকিছুই আমার দোষ আমিই খারাপ। নাহলে দ্যাখ প্রথমে বাবা-মা,তারপরে দিয়া আর তারপরে সুহানি আমার জন্য বিপদে পড়ে গেছে।আমিই খারাপ আমারই সব দোষ।
নোহাঃ ভাই নিজেকে সামলা। দ্যাখ বাবা মায়ের সাথে যেটা হয়েছে ওটা একটা অ্যাক্সিডেন্ট। আর দিয়ারটা খু’ন।আর সুহানির টাও অ্যাক্সিডেন্ট তাহলে এখানে তোর হাত থাকলো কিভাবে?
নোহানঃ সবকিছু আমার জন্যই হচ্ছে। আমি জানি।
নোহাঃ চুপ একদম চুপ। ডক্টর আসছেন দাঁড়া কথা বলি।
নোহা এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করলোঃ ডক্টর সুহানি কেমন আছে।
ডক্টরঃ অবস্থা খুবই গুরুতর। ৪৮ ঘন্টা না কাটা পর্যন্ত কিছুই বলা যাবে না।
ডক্টর চলে গেলো। নোহা নোহানের কাছে গিয়ে বললোঃ ভাই এবার বল তো কি হয়েছে। আর সুহানিকে ই বা তুই কোথায় পেলি।
নোহানঃ সুহানি অফিসে আসছিলো আর আমি ওর পেছনেই গাড়িতে ছিলাম হঠাৎ দেখলাম একটা গাড়ি দ্রুত এসে সুহানিকে ধাক্কা দিয়ে চলে গেলো। সুহানি র’ক্তা’ক্ত হয়ে রাস্তায় পড়ে গেলো।আর আমি এসব দেখেও কিছূই করতে পারলাম না।
নোহান নিজের হাত দিয়ে চুলগুলো কে টানতে লাগলো।
নোহাঃ ভাই বুঝলাম না।সুহানির পেছনে ছিলি কেন?
নোহানঃ দিদিয়া তোকে বলা হয়নি আমি সুহানি কে বিয়ে করেছি।
নোহা চমকে উঠলো। নোহান সুহানিকে বিয়ে করেছে,এসবের কিছুই জানে না।
নোহাঃ ভাই এসব কি বলছিস তুই?
নোহানঃদিদিয়া তোকে পড়ে সবটা বলবো কিন্তু এখন একটু চুপ করে থাক।
৩দিন পর….
নোহাকে নোহান সবটা বলে দিয়েছে।
নোহাঃ ভাই এটা কিন্তু তোর ঠিক হয়নি।তুই কিছু না জেনে সুহানিকে বিয়ে করে নিলি কেন,একবার ভাবলি না কোনটা সঠিক আর কোনটা ভুল।
নোহানঃ দিদিয়া আমি তখন ওই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে কি করবো কখনোই বুঝে উঠতে পারিনি। আমি সুহানির উপর রেখে ক্ষিপ্ত হয়ে প্রতিশোধের আগুনে দগ্ধ হয়ে ওর জীবনটা নরক বানাতে উদ্ধৃত হয়েছিলাম।তবে সুহানি কোনো না কোনো ভাবেই এই ষড়যন্ত্রের সাথে জড়িত তার শাস্তি ওহ পাবেই । আমার দিয়ার মৃ’ত্যু’র প্রতিশোধ আমি নেবোই।
নোহান গটগট করে চলে গেলো। নোহা ওর ভাইয়ের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল। কোন অজানা যুদ্ধে যেতে উঠেছে সবাই কেউ জানে না।
হসপিটালে..
৪৮ঘন্টার আগেই সুহানির জ্ঞান ফিরে আসে। আজকে নোহান সুহানিকে বাড়িতে নিয়ে যাবে,ডক্টর বলেছিলেন কিছুদিন রাখার জন্য কিন্তু নোহান রাজি নয়।
সুহানিকে নোহান কোলে করে ঘরে নিয়ে আসলো। সুহানি পুরোটা সময় নোহানের দিকে তাকিয়ে ছিলো। ওহ ভালো করেই এই দুদিন মানুষটাকে দেখেছে কিভাবে অস্থির হয়ে উঠেছিলো। সুহানি এটাও জানে এটা ওর জন্য নয় দিয়ার মৃ’ত্যু’র প্রভাবেই এরকম করছিলো নোহান।
নোহান সুহানিকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে বললোঃ আমি তোমার খাবার পাঠিয়ে দিচ্ছি।
সুহানিঃ খাবো না আমি
নোহানঃ তোমাকে জিজ্ঞেস করিনি আমি।
সুহানিঃ আমিও আপনাকে আমাকে বাঁচাতে বলিনি।কেন বাঁচালেন আমাকে এই নরক যন্ত্রনার থেকে মৃ”ত্যু টাই ভালো ছিলো।
নোহান সুহানির কাছে গিয়ে বললোঃ তোমাকে এত সহজে ম’র’তে দিচ্ছি না আমি,তোমাকে তিলে তিলে শে’ষ করবো। শারিরীক যন্ত্রনা না মানসিক যন্ত্রনায় তোমাকে শে’ষ করবো মিসেস নোহান শিকদার।
নোহান চলে যায়। সুহানি হাসলো, আর কিছুই তো শেষ হবার নেয় যা হবার হয়েই গেছে। নিজের বোন তূল্য বান্ধবীর খু’নী হিসাবে তার দিকে আঙুল উঠেছে। সে কি পারবে কখনোই এই আঙ্গুলটাকে নিজের দিক থেকে সরাতে নাকি সারাজীবন মিথ্যা টাকে বয়ে বেড়াতে হবে।
অন্যদিকে…
– তাহলে আমার ধারনা এতদিন ভুল ছিলো। সুহানি কিছুই জানে না এখনো পর্যন্ত। এবারেই তো আসবে মজা। কাঁটা দিয়ে কিভাবে কাঁটা তুলতে হয় এবার দেখবে তোমরা। সুহানি তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে নাও,তুমি না সুস্থ হলছ মজা হবে কিভাবে। কিভাবে আসল খেলাটা জমবে। সুহানি তুমি আর নোহান কখনোই আমার তৈরি করা জ্বাল থেকে বের হতে পারবে না। হা হা হা হা হা।
#চলবে….
বিঃ দ্রঃ-ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
হ্যাপি রিডিং।