রহস্যে ঘেরা ভালবাসা পর্ব-১০

0
737

#রহস্যে_ঘেরা_ভালবাসা
#পর্ব_১০
#M_Sonali

বিকেল ৩.০৫ মিনিট
আলমারি থেকে নিজের কাপড়চোপড় বের করে সেগুলো গুছিয়ে ব্যাগ এর মধ্যে রাখছি আমি। একটু আগে আব্বু এসেছে আমাকে আর হায়াকে নিতে। সেখানে গিয়ে কয়েকদিন থাকবো বলে। এ বাড়িতে এসেছি প্রায় সাত দিন হল। এই সাতদিনের মাঝে মীরের সাথে স্বামী-স্ত্রীর কোনো সম্পর্ক না হলেও বন্ধু স্বরূপ একটা সম্পর্ক গড়ে উঠেছে আমার। তবে সে সব সময় আমাকে এড়িয়ে চলতে ভালোবাসে। তাতে অবশ্য কয়েকদিনের মাঝে আমার অভ্যাস হয়ে গেছে। তাই আর খারাপ লাগা কাজ করে না। নিজেকে অনেকটাই মানিয়ে নিয়েছি। মনকে সবসময় সান্তনা দিয়ে বলি, সে আমাকে স্ত্রী হিসেবে মেনে না নিলেও, স্ত্রী হিসেবে নিজের ঘরে থাকতে তো দিয়েছে! সবার সামনে তো স্বামী-স্ত্রী হয়েই রয়েছে। এটাই অনেক। আর আমি জানি একদিন না একদিন তার মনে আমার জন্য অবশ্যই জায়গা তৈরি হবে। সে আমাকে মেনে নিবে। আমাকে ভালও বাসবে ইনশাআল্লাহ।

এসব কথা ভাবছি আর কাপড়চোপড় গুলো গোছাচ্ছি আমি। হঠাৎ পিছনে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে কাপড় রেখে পিছনে ফিরে তাকালাম। তাকাতেই দেখি মীর আমার ঠিক পিছনে দাঁড়িয়ে আছে। মুখটা কেমন চুপসে গেছে তার। দেখে মনে হচ্ছে ভীষণ ক্লান্ত সে। আমি তাঁকে কিছু জিজ্ঞেস করবো, তার আগেই সে আমাকে বলে উঠল,

–” আব্রু আমাকে একটু তোমার কোলে মাথা রাখতে দেবে প্লিজ? আর আমার মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দেবে? আমি ভীষন ক্লান্ত।”

ওনার এমন কথায় যেন আমি বরফের মতো সেখানেই জমে গেলাম। কিছুক্ষণের জন্য সবকিছু ভুলে গেলাম। উনার কথাটাকে নিয়ে ভাবতে লাগলাম। হঠাৎ করে উনার কি হলো, যে সে ইচ্ছাকৃতভাবে আমার কোলে মাথা রেখে শুতে চাইছে। তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে বলছে? এটা কি স্বপ্ন নাকি সত্যি? আমাকে চুপ থাকতে দেখে সে আবারো বলে উঠলো,

–“কি হলো আব্রু, দিবে না?”

উনার কথায় হালকা ঝাঁকুনি দিয়ে উঠল আমার শরীর। আমি দ্রুত ওনার আর একটু কাছে এগিয়ে গিয়ে বললাম,

–” কেন দেবনা, অবশ্যই দেব মীর। আসুন এখানে আসুন।”

কথাটা বলে ওনার হাত ধরে নিয়ে এসে বিছানার একপাশে বসলাম আমি। উনিও সুন্দরভাবে তার মাথাটা আমার কোলের মধ্যে রেখে চোখ বন্ধ করে আমার পা জড়িয়ে ধরে শুয়ে রইলেন। আমি আলতো ভাবে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলাম। সবকিছুই যেন স্বপ্নের মত মনে হচ্ছে আমার। তবে একটা কথা ভেবে খুব অস্বস্তি হচ্ছে। ওনার হঠাৎ কি হল? যে ওনাকে এমন লাগছে। আর এভাবেই বা কেনো কথা বলছেন উনি? হঠাৎ মাথার মধ্যে একটা চিন্তা আসলো।কেন যেন মনে হতে লাগলো যে ওনার হয়তো ওনার এক্স গার্লফ্রেন্ডের সাথে কোন কিছু নিয়ে রাগারাগি হয়েছে। তাই হয়তো ওনাকে এত ক্লান্ত লাগছে। মনে মনে ভাবলাম একবার জিজ্ঞেস করি। কিন্তু উনি বিরক্ত হবেন বলে আর জিজ্ঞেস করলাম না। আর তাছাড়া ওই মেয়েটিকে নিয়ে কোন কথা বলার ইচ্ছা নেই আমার। যাকে আমি চিনিও না মাত্র। মনে মনে ভীষণ অস্বস্তিতে পড়ে গেলাম। কোনভাবেই বুঝতে পারছি না কি হয়েছে উনার। এদিকে আব্বুর সাথে চলে যাওয়ার সময় হয়ে গেছে। কিন্তু ওনাকে এভাবে রেখে যাওয়ার মতো কোন ইচ্ছাও নেই আমার।

এভাবে বেশ কিছুটা সময় পার হয়ে যাওয়ার পর আচমকাই মীর উঠে বসলো। তারপর আমার দিকে তাকিয়ে শান্ত গলায় বললো,

–“এখন আমার অনেকটাই ভালো লাগছে আব্রু। তুমি এখন চলে যেতে পারো। তবে হ্যাঁ সেখানে গিয়ে কিন্তু নামাজ পড়া ভুলে যেও না। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ সময় মত পড়বে বুঝলে?”

ওনার কথায় মাথা নাড়িয়ে সায় দিলাম। তারপর বিছানা ছেড়ে নেমে কয়েক পা সামনে এগিয়ে গিয়ে আবারও পিছন দিকে ঘুরে দাঁড়ালাম। দাঁড়িয়ে ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলাম,

–” আপনার আসলে কি হয়েছে মীর? হঠাৎ করে আপনি এরকম আচরণ করলেন! আর এত ক্লান্ত’ই বা ছিলেন কেন? আপনার কি হয়েছে আমি কি জানতে পারি?”

আমার কথা শুনে হঠাৎ করে ওনার মুখে গম্ভীরতা ছেয়ে গেল। উনি আমার কোন কথার উত্তর না দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যেতে যেতে ঝাঝালো গলায় বলল,

–“তোমার আব্বু তোমার জন্য অপেক্ষা করছে। তাড়াতাড়ি চলে যাও। এত প্রশ্ন আমার পছন্দ নয়। আর তুমি আমাকে প্রশ্ন করার মতো অধিকার এখনো আদায় করতে পারেনি। আর কখনো এমন প্রশ্ন করবেনা। ”

কথাগুলো বলেই সে রুম থেকে বেরিয়ে চলে গেল। কিছুক্ষণ আগের মীর আর এখনকার মীরের সাথে যেন আমি কিছুতেই মেলাতে পারছি না। সবকিছুই গুলিয়ে যাচ্ছে আমার। তবে এবার কেন জানিনা ভীষন রাগ হল আমার। একটু আগেও তো সবকিছু ঠিক ছিল! তাহলে কি এমন প্রশ্ন করেছি তাকে যে, ওনার এভাবে আমাকে কথাটা বলতে হল। মনে মনে ভীষণ রাগ হল। তাই দেরি না করে ব্যাগটাকে গুছিয়ে নিয়ে রেডি হয়ে নিচে চলে গেলাম। তারপর আব্বু আর হায়াকে নিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম।

গেট দিয়ে বেরিয়ে গাড়ির কাছে পৌঁছাতেই হঠাৎ করে আমার চোখ চলে গেল সেই বেল গাছের দিকে। দেখলাম পাখি দুটি সেখানে নেই। হয়তো উড়ে গেছে কোথাও। কেন জানিনা পাখি দুটির ওপর ভীষণ মায়া তৈরি হয়েছে আমার। ইচ্ছে করলো একবার তাদের দেখতে। আসলে এই কয়েকটা দিন সারাক্ষণই তাদেরকে চেয়ে চেয়ে দেখেছি। ভীষন ভালো লাগতো তাদের দেখতে। ছোটবেলা থেকে আমি পাখি অনেক বেশি পছন্দ করি। সেখানে এমন জোড়া পাখি হলে তো কথাই নেই। তাদের দেখতে না পেয়ে ছোট্ট একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে গাড়িতে উঠে পড়লাম। তারপর গাড়ি করে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম।

চলবে———————-