রাখিব তোমায় যতনে পর্ব-১৫

0
458

#রাখিব_তোমায়_যতনে
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ১৫
সকাল থেকেই মনটা বেশ খারাপ শুদ্ধতার।সাথে মন খারাপ সানামেরও। দু বান্ধবী আনমনা হয়ে গাছের নিচে বসে আছে।কেউ কারো সাথে কথা বলছে না।শুদ্ধতা বার বার নীবদ্ধ’র নাম্বারটা বের করেও কল করতে পারছে না।লোকটাকে আজ অনেক মনে পরছে।আজ নিয়ে তিনদিন হলো লোকটাকে আশেপাশেও দেখছে না। ইদানিং যে নিজের সাথে কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছে না শুদ্ধতা।কেমন একটা দমবন্ধকর অনুভূতি যেন চারদিক থেকে ঘিরে ধরেছে ওকে।যে অনুভূতির বেড়াজাল চিরে শুদ্ধতা কিছুতেই বেড়িয়ে আসতে পারছে না।বুকটা কেমন যেন ধরফর করছে শুদ্ধতার। দীর্ঘশ্বাস ফেললো শুদ্ধতা।ঘার ঘুরিয়ে সানামের দিকে তাকালো।এই মেয়েটার যে আবার কি হয়েছে বুঝতে পারছে না।কই শুদ্ধতাকে একটু শান্তনা দিবে তা না করে এই মেয়েটাও কেমন থম মেরে বসে আছে।শুদ্ধতা এইবার নিজেই বলে,
-‘ কিরে তোর আবার কি হয়েছে?’

শুদ্ধতার কথায় হকচকিয়ে উঠে সানাম।এতোক্ষন নিজের খেয়ালে বিভোর ছিলো সে।কিন্তু আকস্মিক শুদ্ধতা এইভাবে ডাকায় বেশ ঘাবড়ে গিয়েছে ও।সানাম বলে উঠে,
-‘ কি হবে কিছুই না।তুই বল? তোর কি হয়েছে?’
-‘ আমার থেকে কি লুকাচ্ছিস?তুই জানিস না আমরা একে-অপরের কাছ থেকে কিছু লুকাই নাজ?কারনটা জলদি বল সানাম।’

সানাম হতাশার শ্বাস ফেললো।সে বেশ বুঝতে পেরেছে শুদ্ধতাকে এখন ওর মনের কথা না বলা ছাড়া উপায় নেই।সানাম বলতে লাগল,
-‘ কাল যখন তোকে প্রফেসরের রুমে ডেকেছিলো।আমি তোর জন্যে বাহিরে অপেক্ষা করছিলাম।ঠিক তখন তোর দেবর মানে ঐক্য ভা….!’

ভাইয়া বলতে গিয়ে থেমে গেলো সানাম।মনের ভীতর যেন কিছু একটা কামড়ে ধরে ওকে ঐক্যকে ভাই ডাকতে হেলে।সানাম জিহবা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিয়ে বলে,
-‘ উনি আমাকে সেখানে প্রপোজ করেন শুদ্ধতা।’
-‘ হ্যা তো করতেই পারে?তুই যথেষ্ট সুন্দরী।এতে এমন মুখ লটকিয়ে রাখার কি হলো? তুই কি বলেছিস সেটা বল।আন্সার হ্যা বলতেই হবে তোকে।কারন ঐক্য ভাইয়া খুব ভালো একজন ছেলে।’

সানাম অবাক দৃষ্টিতে তাকালো শুদ্ধতার এমন কথা শুনে।ও ভাবতেও পারিনি শুদ্ধতা এমন সহজভাবে ব্যাপারটা নিয়ে নিবে।হা করে সামাম তাকিয়ে আছে শুদ্ধতার দিকে।শুদ্ধতা সানামকে এইভাবে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলে,
-‘ কি হলো?এইভাবে তাকানোর কি হয়েছে?’
-‘ তুই এসব কি বলছিস শুদ্ধতা?’ সানামের কন্ঠে বিষ্ময়কর ভাব!
-‘ যা বলছি ঠিক বলছি। তুই কি আন্সার দিয়েছিস সেটা বল।হ্যা নাকি না!’

সানাম মুখ লটকিয়ে বলে,
-‘ আমি কিছুই বলিনি।উনার মুখে ভালোবাসি শুনে আমার কি জানি হয়েছিলো।কান্না আসে পরেছিলো আমার।তাই আমি সেখান থেকে দৌড়ে চলে যাই।আর সোজা বাড়িতে চলে আসি।’

শুদ্ধতা রেগেমেগে বলল,
-‘ সা*লি ফকি*ন্নি এইজন্যেই তো তোকে আমি পুরো ভার্সিটি খুজেও পাইনি।আমি পুরো পাগল হয়ে গিয়েছিলাম।ফোনটাও বন্ধ করে রেখেছিলি।কতোবার যে আমি ফোন দিয়েছি তোকে।তোকে খুঁজতে গিয়ে আবার বিশাল এক তথ্য জোগাঢ় করে নিয়েছি।’

শুদ্ধতার শেষের কথায়।সানাম ভ্রু-কুচকে তাকালো।বলে,
-‘ তথ্য মানে কিসের তথ্য?’

শুদ্ধতা নিজের ফোন বের করলো।তারপর আশে পাশে তাকালো কেউ আছে না কি।সব ঠিক ঠাক দেখে সানামকে সেদিনের করা ভিডিওগুলো দেখালো।সব দেখে সানাম মুখে হাত দিয়ে থম মেরে বসে।কাঁপা কাঁপা গলায় বলে,
-‘ আমাদের ভার্সিটিতে এসব হয়?মা*রাত্মক-ভ*য়ঙ্কর ব্যাপার-স্যাপার রে শুদ্ধতা!’

শুদ্ধতা গম্ভীর কন্ঠে সুধালো,
-‘ এটাই তো আমার মক্ষম সুযোগ ওই জা*নোয়ার কে শাস্তি দেওয়ানোর।আমার বুবু আত্ম*হত্যা করায় বেচে যায় কুকু*রটায়।মাত্র একবছর জেল খেটেছে।এইবার বাঁচবে কিভাবে? যে করেই হোক আমি ওকে সর্বোচ্চ শাস্তি দিবো।কিন্তু আমাকে আরো প্রমান জোগাড় কর‍তে হবে।এই একটা ভিডিও এর উপর ওর শাস্তি হবে হয়তো কয়েক বছরের জেল।কিন্তু আমি চাই ও সারাজীবন জেলে পঁচে যেন মরে।আমার তো নিজ হাতে ওকে খু*ন করতে ইচ্ছে করে।কিন্তু আমার হাত বাধা।চাইলেও আমি সেটা করতে পারবো নাহ!’

সানাম শুদ্ধতার কাধে হাত রেখে বলে,
-‘ মন খারাপ করিস না দোস্ত।আমিও তোর সাথে আছি।তাসনীম আপুর সাথে অন্যায়ের যথাযথ বিচার আমরা পাবোই দেখিস।’
-‘ হুম।তোরটা বল এইবার।কি সিদ্ধান্ত নিলি?আমার জা হবি?ব্যাপারটা কিন্তু সেই হবে।আমরা দুই বান্ধবী তাদের দুইভাইকে জ্বালিয়ে মা*রবো!’

সানাম একেরপর এক ঝাটকা যেন নিতে পারছে না।বলে,
-‘ শুদ্ধতা তোর আজ কি হয়েছে বলবি?আমাকে কিছুক্ষন পর পর যেই শক দিচ্ছিস আমি ম*রেই যাবো বোন।তোর কি হয়েছে?’
-‘ আমার আবার কি হবে?তুই কি বলছিস এসব?’
-‘ আমি ঠিকই বলছি।এইযে তোর কথার মাধ্যমে আমি স্পষ্ট বুঝতে পেরেছি তুই নীবদ্ধ ভাইয়াকে বিয়ে করার জন্যে রাজি।সত্যি কি এমন?আমাকে প্লিজ তোর মনের কথাটা জানা।’

শুদ্ধতা দৃষ্টি নত করলো।অতঃপর বেশ শান্ত সুরে নিজের মনের কথাটাই ব্যক্ত করলো,
-‘ হ্যা আমি রাজি উনাকে বিয়ে করতে।এটা ছাড়া আর কোন উপায় আমি দেখছি না।আজ না হোক কাল আমাকে বিয়ে কর‍তেই হবে।যদি উনাকেও না করি অন্য একজনকে করতে হবে।তাহলে উনাকে বিয়ে করি।তাছাড়া তার ফ্যামিলির প্রতেকটা মানুষ আমাকে ভীষন আদর করে। সেটা অন্য কেউ আর করতে পারবে কি না আমি জানি নাহ।’

সানাম একলাফে শুদ্ধতাকে একলাফে জড়িয়ে ধরলো।অত্যন্ত খুশি মনে বলে,
-‘ আমি অনেক হ্যাপি তোর জন্যে। ফাইনালি ইয়ার তুই রাজি হলি।বিশ্বাস কর নীবদ্ধ ভাইয়া তোকে ভীষন ভালোবাসে।তুই তোর সিদ্ধান্তে কোনদিন পস্তাবি নাহ।বিলিভ মি!’
-‘ হুম!’

সানাম শুদ্ধতাকে ছেড়ে দিতেই শুদ্ধতা উঠে দাড়ালো।সানামের হাত ধরে টেনে ওকেও উঠিয়ে বলে,
-‘ চল আমার সাথে।’
-‘ আরেহ কোথায় যাবো?’
-‘ আহা চল নাহ।আমরা এখন ঐক্য ভাইয়ার কাছে যাবো। তুই ভাইয়াকে তোর আন্সার হ্যা বলবি।’

সানাম ঘাবড়ে গেলো বেশ।
-‘ কি বলছিস এসব?আমি পারবো না।’

শুদ্ধতা বলে,
-‘ আগে এটা বল তুই কি ঐক্য ভাইয়াকে নিয়ে কিছুই ফিল করিস না?যদি উত্তর না হয় আমি জোড় করবো না তোকে।’

সানাম কিয়ৎক্ষন নিরবতা পালন করলো।অতঃপর ছোট্ট আওয়াজে বলে,
-‘ হ্যা! উনাকে দেখলে আমার মনের ভীতর কিছু একটা ফিল হয়।সে আশেপাশে থাকলে আমার ভালো লাগে।’
শুদ্ধতা হেসে বলে,
-‘ তাহলে চল।দেরি কিসের?’

সানামকে আর কিছু বলতে না দিয়ে শুদ্ধতা সানামকে টানতে টানতে ঐক্য’র কাছে নিয়ে গেলো।ঐক্য তখন শহিদ মিনারে একা বসেছিলো।শুদ্ধতাকে দেখেই দাঁড়িয়ে গেলো।
-‘ আরে ভাবি আপনি?’
-‘ হুম।’
-‘ কিছু দরকার ছিলো ভাবি?’
-‘ দরকার আমার না আপনার ভাইয়া।আপনি নাকি আমার বান্ধবীকে ভালোবাসেন?তাকে নাকি প্রপোজ করেছিলেন?’

ঐক্য বেশ ঘাবড়ে গেলো শুদ্ধতার কথায়।ও বেশ ভালোভাবেই জানে ওর ভাবি এসব একদম পছন্দ করে না।এতোদিন অন্যদের শুদ্ধতাকে চর মারতে দেখেছিলো।আজ কি তবে ও নিজেই সেই চরের ভাগিদার হবে?ঐক্য অসহায় চোখে সানামের দিকে তাকালো।সানাম যে শুদ্ধতাকে এইভাবে সবটা বলে দিবে ভাবতে পারেনি ঐক্য। ঐক্যকে এইভাবে ঘাবড়াতে দেখে শুদ্ধতা হেসে বলে,
-‘ রিলেক্স দেবরজি। আমার বান্ধবী আপনাকে লাইক করে। তাই তো টানতে টানতে এখানে নিয়ে আসলাম। আপনি যে আমার বান্ধবীকে ভালোবাসেন সেটা আমাকে বললেই তো হতো তাই নাহ?’

সানাম লজ্জা পেয়ে চোখ নামিয়ে নিলো।ঐক্য হেসে দিলো শুদ্ধতার কথা শুনে।মাথার পিছনে হাত দিয়ে মাথা চুলকাতে লাগলো। ঠিক এমন সময় ঐক্য’র ফোন সশব্দে আওয়াজ তুলে উঠে। ঐক্য নাম্বার চিনতে না পারলো না তবে ফোনটা রিসিভ করে কানে লাগালো,
-‘ হ্যালো।আসসালামু আলাইকুম। কে?’

অপাশ থেকে একে একে আস্তে আস্তে যা বললো সবটা শুনে ঐক্য হতভম্ব হয়ে গেলো।চেচিয়ে উঠে বলে,
-‘ হোয়াট?কি বলছেন এসব? ‘
-‘…………..!’
-‘ আমি এক্ষুনি আসছি।’

ঐক্য ফোন কাটতেই শুদ্ধতা অস্থিরতা নিয়ে জিজ্ঞেস করে,
-‘ কি হয়েছে ভাইয়া?আপনাকে এমন দেখাচ্ছে কেন?’

কিন্তু ঐক্য যা বললো তার জন্যে মোটেও তৈরি ছিলো না শুদ্ধতা।
-‘ নীবদ্ধ ভাইয়া আর জয় এক্সিডেন্ট করেছে ভাবি।’

#চলবে__________
ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।