রাজনীতির রংমহল পর্ব-০৭

0
494

#রাজনীতির_রংমহল
#সিমরান_মিমি
#পর্বসংখ্যা_০৭

তোমার কি কোনো সমস্যা হচ্ছে ভাইয়া?আমাকে এর আগে কখনো দেখো নি?এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?

বাকরুদ্ধ হয়ে গেল রাহুল। স্পর্শী যে বাবার সামনেই এমন ভাবে নাকানিচুবানি খাওয়াবে তা ক্ষুনাক্ষরেও বুজতে পারেনি।আবদূর রহমান খাওয়া রেখে স্পর্শীর দিকে তাকালো।তারপর ছেলের দিকে তাকিয়ে বললো-

আমিও তোমার সমস্যাটা’র কথা জানতে চাইছি রাহুল।বেশ অনেকদিন ধরে জিজ্ঞেস করতে চাইলেও সময় বা সুযোগ কোনোটাই হয়ে ওঠে নি।তাছাড়া স্পর্শী মাও তো আর আগের মতো বাড়িতে আসে না যে দুটো কথা বলবো।

বলেই স্পর্শীর দিকে পুনরায় তাকালেন। স্পর্শী নিরব ভাবেই নিচের দিকে তাকিয়ে খেয়ে যাচ্ছে।ভীষণ খারাপ লাগলো আব্দুর রহমানের। সেই জন্মের তিনদিন পর থেকে যে বিপাশা ওকে নিয়ে এলো সেই থেকে বাবার মতো যত্নে-স্নেহে বড় করে তুলেছে।স্পর্শীও বাবার মতো সারাক্ষণ আবদারের মেলা নিয়ে বসতো।খাবার টেবিলে কখনো নিরব হয়ে খেতে পারতো না।দুই ভাই-বোন মিলে কারাকারি -ভাগাভাগি-রাগারাগিতে মেতে থাকতো। কিন্তু হঠাৎ করে মেয়েটা একদম নির্জীব হয়ে গেল৷ বাড়ি তো ছাড়লোই সেই সাথে আগের সেই চঞ্চলতাও ছেড়ে দিলো।হোস্টেলে কত কষ্ট করে থাকছে।আব্দুর রহমান চাইলেই জোর করে স্পর্শীকে বাড়িতে রাখতে পারতেন।কিন্ত তা করেন নি। ভয়ে,পাছে যদি অধিকারের প্রশ্ন ওঠে।বাবার চেয়ে খালুর দরদ বেশি।নিরবে দীর্ঘ শাস ছাড়লেন।মুখের খাবার শেষ করে রাহুলকে বললেন-

বেশ অনেকদিন ধরে তোমার বেহায়াপনা সহ্য করছি।আর নয়,এবার যেকোনো একটা সিদ্ধান্তে যেতে হবে তোমায়।এই মাসের মধ্যে হয় তুমি মেয়ে পছন্দ করবে না হয় আমরা তোমার জন্য মেয়ে দেখবো।অনেক হয়েছে,বয়স তো আর থেমে থাকছে না।দুদিন পরে মেয়ে পাওয়াই মুশকিল হয়ে যাবে।দ্রুত চাকরী নেও আমি বিয়ের ব্যাবস্থা করছি।

রাহুল অসহায় হয়ে স্পর্শীর পানে চাইল।ওর কি একটুও কষ্ট হচ্ছে না।তারপর বাবার দিকে তাকিয়ে বললো-

আব্বু তুমি জানো আমি….

ধমকে উঠলেন রহমান সাহেব।চেচিয়ে বললেন-

খবরদার!আমি তোমাকে শেষ বারের মতো সাবধান করছি স্পর্শী’মাকে ডিস্টার্ব করবে না।তোমার পছন্দ কে গুরুত্ব দিয়েই এতোদিন অপেক্ষা করেছি।আর নয়,স্পর্শী তোমাকে পছন্দ করে না।তাই ওর জন্য আর বসে থাকবে না।তুমি আমার ছেলে,এতটুকু সেল্ফ রেস্পেক্ট নেই তোমার মধ্যে।মেয়েটা তোমার জন্য বাড়ি পর্যন্ত ছেড়েছে।এবারে কি চাও?

থেমে,

ঠিকাছে,তুমি যদি বিয়ে না করে চিরকুমার থাকতেও চাও তাহলেও আমার কোনো সমস্যা নেই। আমি আগে তাহলে স্পর্শী’মার বিয়ে দেব।

খুক করে কেশে উঠলো স্পর্শী।এতোক্ষণ তো সব ভালোয় ভালোয়’ই যাচ্ছিলো। হঠাৎ আবার তার বিয়ে কেন?

রেগে টেবিল ছেড়ে উঠে গেল রাহুল।স্পর্শীও গেল নিজের রুমে।আর কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়েই হোস্টেলে চলে যাবে।

খালামনির কাছে বিদায় নিয়ে গেটের কাছে এলো স্পর্শী।স্কুটিতে বসতেই ওপাশ থেকে রাহুল হাত ধরে টেনে হিচড়ে নামালো।তেড়ে এসে স্পর্শীর দু-গাল চেপে ধরে বললো-

খুব তেজ না তোর।তোর তেজ কিভাবে কমাতে হয় তা রাহুলের ভালো করে জানা আছে।ওই তুই কোন রাজার ছেলেকে বিয়ে করবি হ্যা?দেখতে তো আহামরি কতটা সুন্দর ও না।এতো দেমাগ কেন?তোর থেকে হাজারগুন সুন্দরী মেয়েরা রাহুলের পায়ের কাছে বসে থাকে এটেনশন পাওয়ার জন্য।

দুহাত দিয়ে রাহুলের হাতের থাবা খুলতে চাইছে স্পর্শী।শেষে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দিয়ে বললো-

আমি জানি আমি দেখতে কেমন?সেটা তোমার থেকে জানতে হবে না।এতো সুন্দরী মেয়েরা পেছনে পড়ে থাকলে বেহায়ার মতো এখনো আমার পেছনে ছ্যাচড়ামি করো কেন?খবরদার আমার গায়ে ভুলেও হাত দিবে না।তুমি ছুলেও আমার বমি আসে।

হতভম্ব হয়ে গেল রাহুল।বুকের ভেতরটা কেমন দুমড়ে-মুচড়ে যাচ্ছে।স্পর্শী কি তাহলে প্রেম করে অন্যকারো সাথে?চোয়াল শক্ত করে স্পর্শীর হাতে থাকা ফোন’টা ছিনিয়ে নিলো।

স্ক্রিন অন করতেই দেখলো “নেতামশাই” লিখে সেভ করা নাম্বার থেকে দুটো মিসডকল।কললিস্টে ঢোকার আগেই ছিনিয়ে নিজের ফোন নিয়ে গেল স্পর্শী।রাহুল দাতে দাত চিবিয়ে বললো-

ওই এই নেতামশাই কে?তুই প্রেম করিস?স্পর্শী, আমার মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে কিন্তু।

–তোমার সাহস হলো কি ভাবে আমার ফোন চেক করার?তুমি কোন আক্কেলে আমার ফোন ধরছো?

–ওই নাম্বার টা কার?

–আমার জামাইয়ের।আর কিছু?বিয়ে করছি আমি।প্রেম করে বিয়ে করছি।এই জন্য তোমাকে ইগনোর করি।বুঝতে পারো না তুমি।আর দ্বিতীয়বার আমার চোখের সামনে পড়বে না।

বলেই স্কুটি নিয়ে চলে আসলো রহমান ভিলা থেকে।
প্রায় অনেকটা দূরে নির্জন জায়গায় আসতেই স্কুটি থামায়।ডুকরে স্কুটির পাশে বসে পড়ে।কাদতে থাকে অনবরত।ডান হাতটা ব্যাথায় নীল হয়ে আছে।দুগাল যন্ত্রনায় যেন ছিড়ে যাচ্ছে।তার জীবনটা এমন কেন?বাইরের মানুষ সবসময় অধিকার দেখায়।একটা নিজের মানুষ নেই,যাদের সাথে মনখুলে জেদ ধরে বসে থাকতে পারে।কেউ নেই স্পর্শীর।সবাই শুধু দায়িত্ব টা পালন করে।বাবা তো থেকেও নেই।মাসে মাসে হাজার হাজার টাকা পাঠিয়ে শুধুমাত্র দায়িত্ব টুকু এড়িয়ে যায়।মাঝেমধ্যে মনে হয় ওই টাকা ছুড়ে মারতে।কিন্তু তাহলে চলবে কিভাবে?এতটাও সহজ নয় জীবন।

ফোন অনবরত বাজছে।সেদিকে হুশ নেই স্পর্শীর।সে তো হুহু করে ব্যাথায় জর্জরিত হাতের উপর হাত বুলিয়ে কেদে যাচ্ছে।কতক্ষণ পর পর চারদিকে তাকিয়ে দেখছে কেউ আছে কিনা।সে তো কাউকে নিজের দুর্বলতা প্রকাশ করতে চায় না।

স্পর্শীয়া,এই মেয়ে?স্পর্শীয়া।তুমি কি কাদছো?
এই কি হয়েছে?এইইই?স্পর্শীয়া?

কোলের মধ্যে থেকে ছোট্ট আওয়াজে এমন উত্তেজিত কন্ঠের আওয়াজ শুনতেই চমকে উঠলো স্পর্শী।শব্দ টা ফোন থেকেই আসছে।হাতে নিতেই দেখলো নেতামশাই নাম্বার টি।হয়তো হাতে টাচ লেগেই রিসিভড হয়ে গেছে। ফোন কেটে দিল স্পর্শী।ভাল লাগছে না তার কথা বলতে। কল কাটার সাথে সাথেই ওপাশ থেকে আবারো কল আসলো।টানা তিনবার কাটার পরেও যখন ফোনের পর ফোন আসলো তখন রেগে ফোনটা’ই বন্ধ করে রাখলো স্পর্শী।

হতাশ হয়ে স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে রইলো পরশ।মেয়েটা কাদছিলো,হ্যা।হুহু করে কাদছিলো,পরশ স্পষ্ট শুনেছে সেই কান্নার আওয়াজ। কি এমন হয়েছে যে স্পর্শী কান্না করছিলো। বুকের বাম পাশটা কেমন চিনচিন করে উঠলো। ইচ্ছে করছে ছুটে যেতে ঢাকায়।গিয়ে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে সান্ত্বনা দিতে।কিন্তু কোন অধিকারে যাবে সে?এখনো যে কোনো সম্পর্কের সুত্রপাত’ই ঘটেনি।আর তাছাড়াও সে যে ভীষণ ব্যাস্ত।পিরোজপুর থেকে ঢাকায় যেতে আসতে কমপক্ষে পাচ-ছয় ঘন্টা লাগবে।একজন রাজনৈতিক নেতার কাছে কি এই সময় হবে তাও কোনো মেয়েকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য।মাথার উপর হাত রেখে চোখ বন্ধ করে নিল পরশ।ভীষণ অস্থির অস্থির লাগছে।

সারাদিন শেষ। নিজের অতি ব্যাস্ততা থাকা সত্ত্বেও প্রতি দশ মিনিট পর পর স্পর্শীর নাম্বারে ফোন দিয়েছে পরশ।ফোন আগের মতোই বন্ধ।উফফস, এতোটা অস্থির কেন লাগছে?আচ্ছা,সে ও তো স্পর্শীর সাথে কথা বলার মাঝখানেই ফোন বন্ধ করে দেয়।তখন কি তার ও এমন অস্থির অস্থির লাগে।

রাত নয়টা,পুনরায় ফোন দেওয়ার সাথে সাথেই চমকে উঠে পরশ।রিং পড়ছে।একবার,দুইবার, তিনবার…….কেটে গেল ফোন।রিসিভড হলো না।পুনরায় দশ বারের মতো ফোন দেওয়ার পরেও যখন ধরলো না।তখন পরশ গুটিগুটি অক্ষরে মেসেজ পাঠালো।

স্পর্শীয়া,ফোন ধরছো না কেন?আর সারাদিনে ফোন বন্ধ করে রেখেছিলে কেন?

সাথে সাথেই ওপাশ থেকে ফিরতি বার্তা এলো।

–কেন?এখন খারাপ লাগছে।যখন আপনি কথার মাঝখানে বন্ধ করে রাখেন,তখন?আমি ফোন ধরবো না।

মেজাজ বিগড়ে গেল পরশের৷ ইচ্ছে করছে কানের উপর দু-তিনটা মারতে।সে কতটা ভয় পেয়ে গেছিলো আর এই মেয়ে ঢং করছে তার সাথে।দাতে দাত চেপে আবারো ফোন দিলো।কিন্তু ধরলো না।শেষে আবারো মেসেজ দিলো-

ফোন ধর,কথা আছে আমার।

–আমার তো কোনো কথা নেই। শুনুন নেতামশাই,নিজের নেতাগিরি অন্যদের উপর ফলান।আমাকে একদম বিরক্ত করবেন না।ফোন ও দিবেন না।আমি অলরেডি সিম চেঞ্জ করে ফেলেছি।

ব্যাস,মেসেজ আসার সাথে সাথেই ওপাশের ফোন বন্ধ।দাতে দাত চেপে ফোন’টা ছুড়ে ফেলে দিল পরশ।এই মেয়ের কত্তবড় সাহস?তাকে ইগ্নোর করে।এমনকি সে ফোন দিলে বিরক্তও হয়।নাহ,আর ফোন দিবে না পরশ।একটা মেয়ের কাছে এতটা ছোট হওয়াও উচিত হবে না।ভীষণ ভাবে স্পর্শীর কথাগুলো আত্নসম্মানে লাগলো পরশের।

চলবে?

#রাজনীতির_রংমহল
#সিমরান_মিমি
#বোনাস_পার্ট

কেটে গেছে আরো পাচদিন।প্রথম প্রথম অভিমান করে স্পর্শীকে ফোন না করলেও পরবর্তীতে নিজের সদ্য জন্ম নেওয়া অনুভূতিতে দগ্ধ হয়ে ফোন করেছে।কিন্তু তাকে আগের মতোই হতাশ করে স্পর্শী সিম বন্ধ করে রেখেছে।রেগে গিয়ে বেশ কড়াভাবে কয়েকটা মেসেজ দিয়ে শাসিয়েছেও পরশ।এই যেমন:

তোমার সাহস কিভাবে হয় আমাকে ইগনোর করার?

_এই মেয়ে,ফোন ধর।আমাকে চিনো তুমি?থাপড়ে গাল লাল করে দিবো।

–তোমাকে একবার হাতের কাছে পাই,তারপর বোঝাবো এই পরশ শিকদার কি জিনিস।

কিন্তু স্পর্শী বরাবর’ই নিরব।তবে সামান্য অনুভূতি যে তার মধ্যেও বাসা বেধেছে সে ব্যাপারে সে ভীষণ আপসেট।এই যেমন তার ইচ্ছে করছে এখন পরশের সাথে কথা বলতে কিন্তু চেয়েও পারছে না।তবে পরশকে জ্বালানোর জন্য সারাদিন সিম বন্ধ রাখলেও প্রতিদিন রাত বারোটার পর টুপ করে দুটো মেসেজ দিয়ে ফোন বন্ধ করে রাখে।এই যেমন:

নেতামশাই,কেমন আছেন আপনি?

_আমাকে কি মিস করছেন?

_এই আপনি এক্ষুনি ফোন দিন,কথা বলবো আপনার সাথে।আমার ফোনে ব্যালেন্স নেই।

পরশ সাথে সাথে ছটফট করে উঠে স্পর্শীর নাম্বারে ফোন দেয়।কিন্তু বরাবরের মতোই তাকে হতাশ করে দিয়ে ওপাশ থেকে মেয়েলি কন্ঠে ভেসে আসে-

আপনার কাঙ্ক্ষিত নম্বরটিতে এই মুহুর্তে সং্যোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।অনুগ্রহ করে কিছুক্ষণ পর আবার চেষ্টা করুন। ধন্যবাদ।

স্পর্শী যে তাকে জ্বালানোর জন্যই ইচ্ছে করে মেসেজ দিয়ে উশলে ফোন বন্ধ করে রাখে সে ব্যাপারে নিশ্চিত পরশ।কিন্তু তারপরেও সারাদিন পর রাত বারোটা বাজাতেই স্পর্শীর মেসেজের জন্য অপেক্ষা করে থাকে সে।

ভাই,এই ভাই,আরে বাবা কোন জগৎ এ আছিস?

পাভেলের জোড়ালো কন্ঠ শুনেই হুশ ফেরে পরশের। বারকয়েক ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে ধীর কন্ঠে বলে-

বল?

ক্ষেপে যায় পাভেল।উগ্র কন্ঠে বললো-

বল মানে কি?এতোক্ষণ যে বললাম সেটা কানে নিস নি।আবার নতুন করে বলতে হবে নাকি?এই সত্যি করে বলতো তোর কি হয়েছে?সারাক্ষণ ঝিমটি মেরে কি এতো ভাবিস?

থেমে চিৎকার করে,

বাই দা ওয়ে, তুই প্রেমে টেমে পড়িস নি তো।কাকে নিয়ে ভাবনার মধ্যে সংসার করছিলি হ্যা?

পরশ মুখ দিয়ে বিরক্তিকর শব্দ বের করলো।তারপর পাভেলের দিকে তাকিয়ে বলল-

কি বলছিলি?আবার বল।খেয়াল করি নি।

পাভেল ধীর কন্ঠে আবার বলতে লাগল-

আমি আসলে এখন যেতে পারবো না। আমার এখানে একটা ফ্রেন্ড আছে,ওর কাছেই কাজ আছে।তুই প্লিজ একা চলে যা।আমি আজ রাত’টা থেকেই কাল চলে আসবো।আব্বু-আম্মুকে একটু ম্যানেজ করিস প্লিজ।

শান্ত চোখে ভাইয়ের দিকে তাকালো পরশ।পচিশ বছরের পরিপূর্ণ যুবক ভাইটি আজ ও সামান্য কিছুর জন্য হলেও তার অনুমতি নেয়। তাকে না জানিয়ে বা পরামর্শ নিয়ে একটা কাজ ও এখনো করে নি।ভীষণ ভালো লাগে পরশের। পাভেল চাইলে’ই তাকে না বলে ঢাকায় আসতে-যেতে পারে।কিন্তু সেটা আজ অবধি করে নি।আলতো হেসে দিয়ে বলল-

আচ্ছা যা।সাবধানে থাকিস।আর শোন,একদম বাইরে বেশী রাত পর্যন্ত থাকবি না।আর কালকেই বাড়ি আসবি।

পাভেল গাড়ি থেকে লাফ দিয়ে নামলো।তারপর ভাইয়ের সমস্ত কথায় সম্মতি দিয়ে রাস্তার পাশে গিয়ে কাউকে ফোন করলো।দশ মিনিটের মধ্যে তার’ই সমসবয়সী একজন ছেলে বাইক নিয়ে এলো।ব্যাস সেটাতে চরে বসে চলে গেল নিজেদের গন্তব্যে।এতক্ষণ পর্যন্ত গাড়ি সাইডে করে দাঁড়িয়ে ছিলো পরশ।পাভেল যেতেই পুনরায় গাড়িতে এলো।তারপর ফোনটা বের করে গুটি গুটি অক্ষরে মেসেজ লিখলো-

সংশপ্তক এর সামনে এসো।আমি ওয়েট করছি।

বন্ধ হওয়া সিমটা’তে মেসেজ টা সেন্ড করলো পরশ।তারপর ড্রাইভারের উদ্দেশ্যে বললো-

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে যাও।

গাড়ির জানালা আলতো ফাক করে বাইরে তাকালো পরশ।বন্ধ ফোনে মেসেজ পাঠিয়েছে।হয়তো ঘন্টাখানেকের মধ্যে জাবির ক্যাম্পাসে পৌছেও যাবে। কিন্তু আদোও কি স্পর্শী মেসেজটা দেখবে?আর দেখলেও কি আসবে সংশপ্তকে।যদি না আসে?

পুনরায় মস্তিষ্ক তুমুলভাবে বিদ্রোহ করলো।
–না আসলে আসবে না।তো তাই বলে কি পরশ অপেক্ষা করবে না তার জন্য।হোক না একটু বেহায়া,তাতে কি জাত যাবে?প্রেম করতে গেলে এরকম একটু আধটু ছ্যাচড়া হতেই হয়।প্রেমিকরা বেহায়া উপাধি না পেলে জাত প্রেমিক হয় না।

গেটের সামনে পরপর তিনটা মাইক্রো থামলো।পরশ গাড়ি থেকে নামতেই সামনের এবং পেছনের গাড়ি থেকে তিনজন পুলিশ এবং চারজন বডিগার্ড নামলো।পরশ তাদের ইশারায় সেখানে থাকতে বলে গেটের মধ্যে ঢুকলো।কিন্তু মহসীন শুনলো না।দ্রুতপায়ে এসে বলল-

স্যার,আমরা আপনার থেকে দুরত্বে থাকবো।কিন্তু তাও একা ছাড়তে পারি না।কখন কি হয়ে যায়?ক্যাম্পাস টা অনেক বড়।আপনি কোথায় যাবেন?

সংগত মনে করলো পরশ।তারপর তাদের নিয়েই ভেতরে ঢুকলো।

বিকেল তিনটা।অসংখ্য স্টুডেন্ট ঘুরে বেড়াচ্ছে ক্যাম্পাস জুড়ে।কেউ কেউ আড়চোখে তাকিয়ে দেখছে পরশের দিকে।এমন বডিগার্ড /পুলিশ নিয়ে কে ঢুকলো ক্যাম্পাসে এ নিয়ে তুমুল কৌতুহল কারো কারো মাঝে। সংশপ্তকের সামনে আসতেই সামান্য অবাক হলো পরশ।স্পর্শী দুরেই দুটো মেয়ের সাথে বেশ হেসে হেসে কথা বলছে।তাহলে মেসেজটা দেখেছে।বডিগার্ড দের সেখানেই থামতে বলে সিড়ির দিকে এগিয়ে গেল পরশ।

কালো রঙের পাঞ্জাবি,জিন্স,চোখে কালো চশমা,হাতে কালো ঘড়ি, পড়া নেতামশাইকে দেখেই সামান্য টাস্কি খেল স্পর্শী। বান্ধবীদের কিছু একটা বলে আলতো পায়ে টিপে টিপে পরশের পাশে এলো।পরশকে পাঞ্জাবির হাতা গোটাতে দেখে ভ্রু কুচকে ফেললো স্পর্শী। কি ব্যাপার?মারবে টারবে নাকি?
আরেকটু পাশে আসতেই পরশ দু-কদম পিছিয়ে মাঠের অন্যদিকে তাকালো।স্পর্শী হালকা কাশি দিয়ে পরশের দৃষ্টি আকর্ষন করলো। কিন্তু পরশ এখনো অন্যদিকে তাকানো।ঠোট টিপে হেসে দিল স্পর্শী। বললো-

নেতামশাই কি ভীষণ রেগে আছেন নাকি?

দাতে দাত পিষে পরশ স্পর্শীর উদ্দেশ্যে বললো-

থাপড়ে গাল লাল করে দিব ফাজিল মেয়ে।এই ক দিন কতটা জ্বালিয়েছো আন্দাজ আছে তোমার?কোন সাহসে সিম চেঞ্জ করেছ?

স্পর্শী নিরব হয়ে পরশের দিকে তাকালো।সে এখনো মাঠের অন্যদিকে তাকিয়ে আছে।রাগ হলো স্পর্শীর।অন্যদিকে তাকিয়ে কেন কথা বলছে?তার দিকে তাকালে কি জাত চলে যাবে নাকি।মুখ দিয়ে চটপট করে বললো-

তা আমাকে মেসেজ দিয়ে এখানে আসতে বলা হয়েছে কেন ঝটপট বলুন। হোস্টেলে যাব আমি।

একপলক তাকালো পরশ স্পর্শীর দিকে।এক কদম সামনে আসতেই তার’ই মতো স্পর্শী চার কদম দূরে গিয়ে দাড়ালো। হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলো পরশ।ঠোট দুটো উচু করে গরম নিঃশাস ফেলে বললো-

স্পর্শীয়া,তুমি কি সত্যিই কিচ্ছু বুজছো না।নাকি বুঝতে চাইছো না।

থেমে,
আচ্ছা আমাকে তোমার কি মনে হয় বলোতো?

চট করে একপলক পরশের দিকে তাকিয়ে মুখ ভেংচি মারলো।তারপর ত্যাড়া কন্ঠে বললো-

আপাতত আমার পেছনে লাগা আর পাঁচ’টা বখাটে ছেলের চাইতে বেশী কিছু নয়।

হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলো পরশ।দূরে তাকিয়ে দেখলো বডিগার্ড গুলো এখনো তার দিকে সোজা হয়ে তাকিয়ে আছে।স্পর্শীর দিকে তাকিয়ে শান্ত কন্ঠে বললো-

আমি একজন এমপি স্পর্শীয়া।একটু তো সম্মান করো।

–তো,আমি কি ভোট দিয়েছি নাকি?
ত্যাড়া কন্ঠে পুনরায় বলল স্পর্শী।

হাসলো পরশ।তারপর ত্যাড়া কন্ঠে বললো-

ভোট দিবে কিভাবে?তোমার কি ভোটের বয়স হয়েছে নাকি।

চোখ ছোট ছোট করে পরশের দিকে তাকিয়ে স্পর্শী বললো-

এক্সকিউজ মি।বাইশ চলছে আমার।ওকে?

_পার্ফেক্ট।

–কি পার্ফেক্ট?
ভ্রু কুচকে স্পর্শী জিজ্ঞেস করলো।পরশ তার দিকে তাকিয়ে বললো-

তোমার বয়স।বিয়ের জন্য একদম পার্ফেক্ট।

নাক ছিটকালো স্পর্শী। বললো-

এহহহ,আপনাকে বিয়ে করবে কে?

__আপাতত তুমি করো,পরে না হয় আরো ভালো মেয়ে পেলে করে নিব বিয়ে।

আলতো হেসে পরশ বললো।চোখ ছোট ছোট করে কোমড়ে হাত দিয়ে স্পর্শী বললো-

কিহহহ,আমি সতীনের সংসার করবো নাকি?হ্যা।

পরশ বলল-
আচ্ছা করো না।তুমি না চাইলে সতীন আনবো না।ওকে।

–সতীন কেন?আমি নিজেও আপনার সংসার করবো না। বিয়েই করবো না আবার সংসার।

মুখ বিকৃত করে ফেলল পরশ।স্পর্শীর দিকে তাকিয়ে সিরিয়াস ভংগিতে বলল-

স্পর্শীয়া,তুমি যদি চাও এমন টিপিকাল প্রেমিক দের মতো তোমায় সারাক্ষণ জ্বালাবো,ফ্লাট করবো,সময় দেবো,ঝগড়া করবো তাহলে ওকে ফাইন।আমি করবো। কিন্তু বিয়ের পর।আই প্রমিজ প্রতিদিন তোমায় জ্বালানোর জন্য এক ঘন্টা সময় অবশিষ্ট রাখবো।কিন্তু প্লিজ আর তেড়ামি করো না।।আমি এভাবে নিয়মিত তোমার সাথে দেখা করতে আসতে পারবো না।এমন সময় আমার নেই।

স্পর্শীয়া পরশের দিকে তাকিয়ে বলল-

তো আমি আপনাকে বলেছি নাকি আমার সাথে দেখা করতে আসতে?আপনি নিজে থেকে এসেছেন আবার নিযে থেকে চলে যান।এখন আমি হোস্টেলে যাব।

হাতের ঘড়ির দিকে তাকালো পরশ।আর সময় নেই।এখান থেকে পিরোজপুর যেতে হবে। তারপর পার্টি অফিসে গিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ আলোচনায় বসতে হবে।স্পর্শীর দিকে কয়েকপলক তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে সেখান থেকে চলে গেল।বডিগার্ড রাও পরশের পিছু নিল।

আর স্পর্শী?সে তো ব্যার্থ চোখে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলো।ব্যাস্ততা,হ্যা এই ব্যাস্ততার কারনেই আজ সে আপনজন থেকে দূরে।বাবাও তো এমপি ছিলেন।এই ব্যাস্ততার অজুহাত দিয়ে সেও তো একদম ছুড়ে ফেলে দিয়েছেন বাইরের মানুষের কাছে। দরকার নেই এমন কাউকে?যার কাছে স্পর্শীর আগে অন্য কেউ ইম্পর্ট্যান্ট।

চলবে?