রুপালির রূপ পর্ব-০৭

0
195

রুপালির রূপ

সাইয়্যেদাতুন নেছা আফনান

পর্ব:০৭

মিসেস রেহানা রান্নাঘরে কাজ করছিলেন হঠাৎ কলিংবেলের শব্দ শুনে কাজ ফেলে দরজা খুললেন। দরজা খুলে অপরিচিত লোক দেখে মৃদু হেসে বললেন,

– কাকে চাই?

– এটা কি রুপালিদের বাসা?

– জি, কেন?

– ভিতরে আসি?

– হ্যাঁ,অবশ্যই।

ভিতরে এসে বসলেন ভদ্রমহিলা। মিসেস রেহানা খাদেমা খালাকে ডেকে নাস্তা বানাতে বললেন। তিনি বসলেন ভদ্রমহিলার কাছে। ভদ্রমহিলা বললেন,

– আমি এসেছি আমার ছেলের জন্য আপনার মেয়েকে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে।

– বিবাহযোগ্য মেয়ে আছে প্রস্তাব তো আসবেই স্বাভাবিক। তবে আপনাদের তো আমরা চিনি না, তাই সম্পূর্ণ বায়োডাটা বললে ভালো হয়।

মিস্টি হাসলেন মারিয়া আফরোজ। বললেন,

– আমি মারিয়া আফরোজ বাঙলা কলেজের শিক্ষিকা, আমার স্বামী রওশান আলম তিনিও একই কলেজের শিক্ষক আর আমাদের একটা ছেলে নাহিদ আহসান সে একটা মাল্টি কোম্পানিতে চাকরি করে। আমরাও মিরপুরেই থাকি।

– বুঝলাম, মেয়ের বাবা বাসায় নেই তো, সে আসলে তাকে জানাবো।

– অবশ্যই।

– আপনাদের বাসা কোথায় বলছিলেন?

মারিয়া আফরোজ ঠিকানা বললেন। বেশ কিছু সময় গল্প করে চলে গেলেন।

মিসেস রেহানাও চললেন রান্নাঘরে। তবে মনে মনে বেশ চিন্তিত। কি হবে সামনে! রাদের মা এবং দাদু খুবই সিরিয়াস আবার রুপালি আগাতে চাইছে না! কি যে হবে কে জানে। একরাশ চিন্তা নিয়ে রান্না করতে লাগলেন।

————

রাদের পা নাড়াতে পারে ইদানিং। ক্যারিং নিয়ে হাটতেও পারে তবে কষ্ট হয়। পায়ের ব্যথাটাও কমেছে অনেকটা। ক্যারিংয়ে ভর দিয়ে মায়ের রুমে আসে। মিসেস রাহি বই পড়ছিলেন। রাদকে আসতে দেখে বইটা বন্ধ করে রাখে। রাদ বিছানায় বসে। বলে,

– মা, রুপালির বাবার সাথে কথা বলেছিলে?

– বলেছিলাম, তবে ভাইজান বলেছে রুপালি না চাইলে বিয়ে হবে না।

– রুপালি রাজি বিয়েতে, আমাকে বলেছে।

– তোমাকে যখন বলেছে তখনের পরিস্থিতি ছিল ভিন্ন, আর এখনের পরিস্থিতি ভিন্ন।

রাদ মাথা নিচু করে ফেলে। এরই মধ্যে মাহি আসে রুমে। ভাইকে এখানে দেখে খুশি হয়ে বলে,

– ভাই তুমি হাঁটতে পারছো?

– হ্যাঁ পারছি ক্যারিংয়ে ভর করে।

– যাক্, আস্তে আস্তে আগের মতো পারবে ইনশাআল্লাহ।

– ইনশাআল্লাহ।

– ভাই, আজ রুপালি আপুকে দেখলাম, তবে আপু হলে গেল। বাসায় থাকছে না?

মিসেস রাহি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,

– আমাদের বাসা থেকে যেয়ে হলে উঠেছে রুপালি।

রাদ বলে,

– কেন?

– তোর আঙ্কেলের উপর রাগ করে মনেহয়।

– তুমি জানো কীভাবে?

– সেদিন বলেছিল।

রাদ উঠে দাঁড়ায়। ক্যারিংয়ে ভর করে চলে যায় নিজের রুমে।

————

রুপালি মাত্রই টিউশন শেষ করে হলে এসেছে। গরমে অবস্থা নাজেহাল। ঘেমে হিজাবটাও ভিজে গিয়েছে।

একটু ঠান্ডা পানি খেতে ইচ্ছে করছে কিন্তু উপায় নেই। রুপালির মনে পরে বাসার কথা। আগে বাইরে থেকে বাসায় গেলেই ঠান্ডা শরবত এগিয়ে দিতো মা। মাঝেমধ্যে আইসক্রিমের বাটিটাও সামনে দিতো যাতে তৃপ্তি নিয়ে খেতে পারে। সেসব ভেবে দীর্ঘশ্বাস ফেলে রুপালি। পোষাক পাল্টে ফোন নিয়ে বসে। ডায়াল থেকে মোহনার নাম্বার বের করে ফোন দেয়। কয়েকবার রিং হওয়ার পরে ওপাশ থেকে বলে,

– আসসালামু আলাইকুম ননদী, খবর কি হুম?

– ওয়ালাইকুমুস সালাম ভাবি, এই তো আলহামদুলিল্লাহ, তোমরা কেমন আছো?

– আলহামদুলিল্লাহ চলছে।

– ভাইয়া কোথায়?

– এইতো আছে। কথা বলবে?

– না, ভাবি তুমি তোমার বাসায় গিয়েছো আর?

– হ্যাঁ কিছুদিন পরেই গিয়েছি।

– আঙ্কেল মেনে নিয়েছে?

– হ্যাঁ, কোনো বাবা-মা পারে না তার সন্তানের সাথে রাগ করে থাকতে।

– তোমার ফোনের সাউন্ড স্পিকার কি বাড়ানো?

– হ্যাঁ কেন?

– না,আসলে ভাবছি আমার বুঝি কোনো ভাই নেই আজ থেকে, আমার বাবা-মায়েরও কোনো ছেলে নেই।

– এসব কি বলছো তুমি?

– হ্যাঁ ঠিকই বলছি, তোমরা অপরাধও করলে আবার বাবা তোমার ভালো চেয়ে তোমার বাবার ভালো চেয়ে ভাইকে ভালো উপদেশও দিলো কিন্তু বিনিময়ে ছেলেকে হারালো। আসলে দরকার ছিল তোমাদের আলাদা সংসারের এজন্য বাহানা বানিয়ে নিলে। নয়তো কোথায় থাকো একবার হলেও বলতে আর নাহয় বাসায় এসে মাফ চাইতে।

রুপালি ফোন কেটে দেয়। চোখে অশ্রুর আনাগোনা। ভাবছে, ‘ যা ধারনা করে বললাম এগুলো কি আসলেই সত্য!’

রুপালি ফোন কাটার পরে একটা মেসেজ আসে ফোনে। মেসেজটা ওপেন করে দেখে ভাইয়ের নাম্বার থেকে এসেছে।

-” আল্লাহ হাফেজ, এখন থেকে তোমার সাথেও যোগাযোগ বাদ। আসলেই একাই থাকতে চাই। তোমার সাথের সকল যোগাযোগ বন্ধ করলাম। ” নাম্বারটা ব্লক হয়ে গিয়েছে।

রুপালি হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে। মায়ের কাছে ফোন করলো। রিসিভ করতেই বলে,

– মা, ভাইয়ার ফোনে যখনই ফোন দেই তখনই ভাবি ফোন রিসিভ করে, আমি ভেবেছিলাম কাকতালীয়। কিন্তু না, কাকতালীয় না, ভাইয়াই যোগাযোগ রাখতে চায় না। আমাকেও ব্লক করে দিয়েছে আজ।

মিসেস রেহানা শব্দ করে কেঁদে দেয়। বলে,

– ওর ফোন নাম্বারটা দে, তোর বাবাকে দিবো, ইকবাল ভাইকে দিবো, সে ঠিকানা অন্তত বের করে দিবে। দেখবো ও আমাদের দেখে কীভাবে কথা না বলে থাকে!

– মা, তোমার লাজ নেই?

– সন্তানের সাথে লাজ দেখালে চলবে না। তুই নাম্বার দে।

রুপালিরও অন্তর কাঁদে ভাইয়ের জন্য। ঝটপট ফোন নাম্বারটা বের করে দেয়।

————

রুপালির চাচা একজন ওসি। তাকে ফোন নাম্বার দেয়ার পরে তিনি লোকেশন বের করে হানিফ সওদাগরকে নিয়ে যান।

বাড্ডার এক বিলাশবহুল ফ্লাটে লোকেশন দেখে অবাক হন হানিফ সওদাগর। তার জানামতে ফাহিম একটা ছোট চাকরি করে।তাতে খেয়ে পরে দিন যাবে এত বিলাসবহুল জীবন চালানো সম্ভব না। হানিফ সওদাগরের চোখে পানি এসে এই ভেবে ছেলে আবার অসৎ উপার্জন করে না তো!

ইকবাল হোসেন কলিংবেল চাপেন। দুইবার কলিংবেল চাপার পরে দরজা খোলে মোহনা। দরজা খুলে শশুড়কে সামনে দেখে অবাক হয়। কপালে ঘাম জমা হয়।

চলবে,