রৌদ্রর শহরে রুদ্রাণী পর্ব-৩+৪

0
784

#রৌদ্রর_শহরে_রুদ্রাণী
#পর্বঃ৩
#Saiyara_Hossain_Kayanat

“জানি না কাকে চিঠি লিখছি, তবে একটা অনুরোধ প্লিজ এই পাখি গুলোকে দেখে রাখবেন। বেশি কিছু করতে হবে না শুধু মাঝে মধ্যে সময় করে এসে দেখে যাবেন পাখিগুলো ঠিক আছে কি না। আমি খুবই দুঃখিত আপনাকে এভাবে বিরক্ত করার জন্য।”

আরশি চিরকুট টা পড়ে খানিকটা অবাক হলো। এভাবে অচেনা কাউকে পাখি দেখাশোনা করার দায়িত্ব দেয় কেউ তা-ও আবার চিরকুট লিখে!! আরশির কাছে এটা নেহাতই একধরনের বাচ্চামি মনে হচ্ছে। আরশিও ভদ্রতা বজায় রাখতে রুমে এসে প্রতিত্তোরে একটা চিরকুট লিখলো-

“আপনি চিন্তা করবেন না। আমরা বাসায় থাকলে অবশ্যই আপনার পাখিগুলো দেখে রাখবো।”

চিরকুটটা লিখে মুচড়ে গোলাকার করে পাশের বারান্দায় ছুড়ে মারলো। পাখি গুলো এখনো চেচামেচি করছে সেটা দেখে আরশি পাখিগুলোর উদ্দেশ্যে বলল-

“এতো ঝগড়া করিস কেন তোরা!! তোদের নাম লাভ বার্ড তোরা সব সময় ভালোবাসায় ডুবন্ত থাকবি তা না করে সব সময় শুধু ঝগড়াঝাটিই করিস।”

কথা গুলো বলে আরশি নিজের রুমে চলে গেল। ফ্রেশ হয়ে ডাইনিং টেবিলে আসলো কাসফিয়াকে বসে থাকতে দেখে কিছুটা উৎসুক কন্ঠে বললো-

“জানিস কাসফি আমার পাশের বারান্দায় দুটো পাখি আছে।”

কাসফিয়া ফোনে স্কিনে দৃষ্টি রেখেই ভাবলেশহীন ভাবে বললো-

“তো কি হয়েছে!!”

আরশি কাসফিয়ার হাত থেকে থেকে ফোনটা ছিনিয়ে নিয়ে বলল-

“পাখিগুলোর মালিক আমার বারান্দায় একটা চিরকুট লিখে দিয়েছিল। আমি যেন পাখিগুলো মাঝে মাঝে দেখে রাখি।”

কাসফিয়া এবার কিছুটা আগ্রহ নিয়ে বললো-

“তারপর তুই কি করলি?”

“আমিও একটা চিরকুট লিখে দিয়েছি পাখিগুলোকে নিয়ে যেন চিন্তা না করে।”

আরশির এমন নির্লিপ্ত উত্তর শুনে কাসফিয়া বিস্ময়ের সাথে বললো-

“পাখিগুলোর মালিক ছেলে নাকি মেয়ে??”

আরশি ছোট্ট করে উত্তর দিল-

“জানি না”

কাসফিয়া কিছুটা সময় চুপ থেকে সন্দেহের দৃষ্টি আরশির দিকে নিক্ষেপ করে বললো-

“তুই কি নব্বই দশকের মতো চিরকুটের প্রেম শুরু করলি না-কি আশু!!”

আরশি বিরক্তি নিয়ে বলল-

“কি সব যা-তা বলছিস!! বাদ দে এসব এখন নাস্তা কর।”

কাসফিয়া আর কথা বাড়ালো না। এই মেয়েটা কখন কি করে কিছুই বুঝে উঠতে পারে না কাসফিয়া।

———————

সারারাত হসপিটালে নাইট ডিউটি করে দুপুরের দিকে রৌদ্র বাসায় ফিরেছে। ফ্রেশ হয়ে বিকেলের দিকে বারান্দায় আসলো তার শখের পাখিগুলোকে দেখতে। বারান্দার মেঝেতে পরে থাকা একটি মোচড়ানো গোলাকার কাগজ দেখে রৌদ্রর ভ্রু জোড়া কুচকে এলো। বারান্দায় কাগজ আসলো কি করে সেটা ভাবতে ভাবতেই কাগজটা হাতে তুলে দেখতে লাগলো। আরশির দেওয়া চিরকুটটা পরে রৌদ্র বেশ অবাক হলো পরক্ষণেই পুরো ব্যাপারটা বুঝতে পারলো।

কাল ভুলে পাখিগুলোকে রুমের ভিতরে রেখেই চলে গিয়েছিল রৌদ্র। তাই আজ সকালেই তার কাজিনকে বলেছিল যেন বাসায় এসে পাখিগুলো বারান্দায় রেখে দিয়ে যায়। কিন্তু নির্বান যে পাখি দেখাশোনার জন্য চিঠি লিখে মানুষদের বিরক্ত করবে বুঝতে পারেনি রৌদ্র। কিন্তু কে এই চিঠির মানুষটা?? এখন কি তাকে সব খুলে বলা দরকার?? এইসব সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতেই রৌদ্র কিছুটা অস্বস্তি নিয়ে একটা চিরকুট লিখে ফেলল। কাঁপা কাঁপা হাতে চিরকুটটা পাশের বারান্দায় ছুড়ে মারলো। জীবন প্রথম সে এভাবে কাউকে চিরকুট লিখে দিচ্ছে। নির্বানের এমন একটা বাচ্চামির জন্য এখন তাকেও এসব কর‍তে হচ্ছে ভাবতেই রাগ লাগছে রৌদ্রর। ফোন দিয়ে কিছুক্ষন নির্বানকে না ধমকালে তার এই রাগ যাবে না।

———————
রাতে বারান্দায় এসে আবারও একটি চিরকুট দেখতে পেল আরশি। কৌতুহল নিয়ে চিরকুটটা তুলে দেখলো-

“আমি আসলে খুবই দুঃখিত আমার কাজিন কিছুটা ছেলেমানুষী করেই আপনাকে চিঠি লিখে বিরক্ত করেছে। আমি বুঝতে পারছি অচেনা মানুষের কাছ থেকে চিঠি পাওয়া খুব অস্বস্তির তবুও বলছি প্লিজ আপনি কিছু মনে করবেন না। আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।”

আরশি মুচকি হাসলো তবে কেন তার কারন জানা নেই আরশির। বেশ কিছুক্ষন বারান্দায় সময় কাটিয়ে রুমে এসে আবারও চিরকুটের উত্তর হিসেবে একটা চিরকুট লিখলো কিন্তু আজ লিখেছে লাল কাগজে। আগের মতো করেই চিরকুটটা পাশের বারান্দায় ছুড়ে মারলো। তারপর পাখিগুলোর দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে রুমে এসে শুয়ে পরলো।

সকালে ঘুম ভাঙেতেই তারাহুরো করে রেডি হয়ে কাসফিয়া সাথে বেড়িয়ে পরলো আরশি। আজ একটা অনুষ্ঠান আছে ভার্সিটিতে একদমই ভুলে গিয়েছিল। কথায় আছে তাড়াহুড়ো সয়তানের কাজ। তাড়াহুড়ো করলে ঝামেলা হবেই এখনো ঠিক সেটাই হলো। তাড়াতাড়ি করে বাস থেকে নামতে গিয়েই পা মচকে গেল। ব্যথায় মৃদুস্বরে আর্তনাদ করে উঠলো আরশি। কাসফিয়া সাথে সাথে আরশির কাছে গিয়ে আঁকড়ে ধরলো। কিছুটা দূরে নিয়ে একটা বেঞ্চিতে বসিয়ে আরশির পা টা দেখে চিন্তিত গলায় বললো-

“পা মচকে গেছে মনে হচ্ছে আশু। তুই এতটা বেখায়ালি কেন!! এখন লেংরা হয়ে বসে থাকবি খুব ভালো হয়েছে।”

আরশি অসহায়ের মতো মুখ করে মিনমিনিয়ে বলল-

“এমনিতেই ব্যথা পেয়েছি, এখন আবার তুইও বোকা দিচ্ছিস এটা কি ঠিক করছিস কাসফি!!”

আরশির কথায় কাসফিয়া খানিকটা রেগে গেল। আরশিকে দাঁড় করিয়ে শক্ত গলায় বললো-

“একদম চুপ থাক। চল এখন হসপিটালে যাবো। ভার্সিটিতে যেতে হবে না আজ।”

আরশি আর কিছু বলার সাহস পেল না। কারন আরশি জানে কাসফিয়া একবার রেগে গেলে তার অবস্থা খুবই খারাপ হবে। তাই চুপচাপ কাসফিয়া সাথে হসপিটালে চলে গেল।

————————

ডক্টরের অপেক্ষায় বেশ কিছুক্ষন ধরে বসে বসে অপেক্ষা করছে কাসফিয়া আর আরশি। হঠাৎ করেই কাসফিয়া কিছুটা চেচিয়ে বলে উঠলো-

“দোস্ত এটা তো ওই চুমু দেওয়া ছেলেটা।”

আরশি চমকে উঠে কাসফিয়ার দৃষ্টি অনুসরণ করে তাকিয়ে দেখলো একটা লোক সাদা এপ্রোন পরে এদিকেই এগিয়ে আসছে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে উনি এখানের ডক্টর। আরশি ওইদিনের ঘটনা মনে করেই এখান থেকে পালানোর জন্য অস্থির হয়ে পরলো যেন এই লোকের মুখোমুখি হতে না হয়। লজ্জা আর অস্বস্তিতে দ্রুত বসা থেকে উঠে পেছন ঘুরে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই ব্যথায় চিৎকার করে উঠলো। তাল সামলাতে না পেরে পড়ে যাবে এমন সময় রৌদ্র দৌড়ে এসে আরশিকে আঁকড়ে ধরলো। আরশির ডান হাত রৌদ্রর ডান হাতে আর আরশির বা বাহুতে রৌদ্রর আরেক হাত রেখে আরশিকে ধরে ফেললো।

আরশির হঠাৎ এমন করায় কাসফিয়ার হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। ওর কথা শুনে আরশি আচমকা এভাবে উঠে চলে যাবে সেটা কাসফিয়া বুঝতে পারেনি।

আরশি মনে মনে নিজেকেই গালি দিচ্ছে। কথায় আছে ‘যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যা হয়।’ আরশির সাথেও সেটাই হলো। যার কাছ থেকে লজ্জায় পালাতে চাচ্ছে আবারও সেই মানুষটার কাছে এসেই ধরা পরলো। আবারও সেই একই লজ্জাজনক পরিস্থিতি। ভাবতেই লজ্জায় মিইয়ে যাচ্ছে আরশি।

চলবে….

#রৌদ্রর_শহরে_রুদ্রাণী
#পর্বঃ৪
#Saiyara_Hossain_Kayanat

“লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই আমি জানি ওই চুমু…. না মানে ওইদিনের ঘটনাটা একটা এক্সিডেন্ট ছিল। আমাকে দেখে লজ্জা পেয়ে এভাবে পালিয়ে যেতে হবে না।”

রৌদ্রর এমন সোজাসাপ্টা কথা শুনে আরশি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল। আরশি নিজেকে সামলিয়ে পাশে ভ্যাবলার মতো দাঁড়িয়ে থাকা কাসফিয়ার হাত ধরে টেনে কাছে এনে ওর হাত ধরে দাড়ালো। রৌদ্র আরশিকে ছেড়ে দিয়ে এপ্রোনের পকেটে দু’হাত গুজে দিয়ে দাঁড়ালো। অপলক দৃষ্টিতে আরশিকে দেখছে নিখুঁতভাবে পরোক্ষ করছে। কেন যেন মনে হচ্ছে আরশিকে আগেও দেখেছে।

“তুই কি আমাকে একটু ধরতে পারলি না কাসফি??”

আরশি দাঁতে দাঁত চেপে কথাটা বলল। কাসফিয়া আরশিকে ভালো করে আগলে ধরে বলল-

“আমি কি জানতাম না-কি তুই আমার কথা শুনে এভাবে পালিয়ে যেতে চাইবি!!”

কাসফিয়া কথা গুলো বলে রৌদ্রর দিকে তাকিয়ে নম্রতার সাথে বলল-

“ভাইয়া আপনি তো মনে হচ্ছে এখানেরই ডাক্তার। আসলে ওর পা মচকে গেছে এখানে অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছি কিন্তু হাড়ের ডাক্তার না-কি আরও পরে আসবে। আপনি কি কোনো হেল্প করতে পারবেন??”

কাসফিয়ার কথা শুনে রৌদ্র আরশির পায়ের দিকে একপলক তাকিয়ে শান্ত গলায় বললো-

“আমার কেবিনে আসুন আপনার। আমি দেখছি ওনাকে।”

রৌদ্র কথাটা বলেই ডান পাশের একটা রুমে চলে গেল। আরশি কোনো মতেই এই লোকের কাছে যাবে না বলে মনে মনে শপথ করলো। কিন্তু কাসফিয়ার আরশির ভাবনায় পানি ঢেলে দিয়ে কাঠকাঠ গলায় বললো-

“আমি জানি তুই মনে কি ভাবছিস। ওইসব এখন মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে আমার সাথে চল তা না হলে আমি এক্ষুনি আংকেলকে ফোন করবো।”

কাসফিয়ার কথায় আরশি বিরক্তিতে চোখমুখ কুচকে ফেললো। এই মেয়েটা সব সময় আরশির মনের কথা বুঝে যায়। আরশিকে কিভাবে তার কথায় রাজি করাতে হবে সেই পদ্ধতিও খুব ভালো করেই জানা আছে। আরশি জানে এখন তার আব্বুকে ফোন দিলে উত্তেজিত হয়ে সাথে সাথেই এখানে চলে আসবে আর এটা আরশি চায় না তাই চুপচাপ কাসফিয়ার সাথে কেবিনে চলে গেল। রৌদ্র আরশিকে চেয়ারে বসতে ইশারা করে হাতের ফাইলে দৃষ্টি দিল। আরশিকে এখনো দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কাসফিয়া চোখ রাঙিয়ে আরশিকে চেয়ারে বসিয়ে দিল। আরশি বেশ অস্বস্তিতে পরে গেল বার এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। দেয়ালে লাগানো কিছু হার্টের ছবি দেখে আরশি বিস্মিত হয়ে রৌদ্রর দিকে তাকিয়ে কিছুটা আমতা-আমতা করে বলল-

“আপনি কি হার্টের…”

আরশির কথা শেষ হওয়ার আগেই রৌদ্র হাতের ফাইল থেকে নজর তুলে আরশির দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বলল-

“হ্যাঁ, আমি কার্ডিওলজিস্ট। দেখি আপনার পা টা দিন এদিকে।”

রৌদ্র আরশির সামনে হাটু গেড়ে বসে কথাটা বলার সাথে সাথেই আরশি খানিকটা পিছিয়ে গেল। চোখে মুখে ভয়ে ছাপ ফুটে উঠেছে। আরশি সন্দেহের দৃষ্টিতে রৌদ্রর দিকে তাকিয়ে মিনমিনিয়ে ভয়াতুর কন্ঠে বলল-

“আপনি হার্টের ডক্টর হয়ে আমার পা ঠিক করবেন কিভাবে!!”

রৌদ্র আরশির পা টা নিজের হাতে তুলে ভালো করে একবার দেখে নিয়ে গম্ভীর গলায় বললো-

“অর্থোপেডিক্স সম্পর্কে আমার একটু হলেও ধারণা আছে। আর আপনার পা টা শুধু মচকে গেছে তেমন কিছু না, এটা আমি ঠিক করতে পারবো। ভয় পাবেন না আমার উপর ভরসা রাখুন।”

আরশি একটা শুকনো ঢোক গিলে কাসফিয়ার দিকে তাকালো। কাসফিয়া চোখের ইশারা সম্মতি জানালেই আরশি নিম্ন স্বরে বললো-

“আচ্ছা ঠিক আছে।”

কথাটা বলার সাথে সাথেই রৌদ্র আরশির পায়ে কিছুটা জোরে চাপ দিল। আরশি চোখ খিচে বন্ধ করে ব্যথায় আর্তনাদ করে উঠলো। ডান হাত দিয়ে রৌদ্রর কাধে খামচে ধরলো শক্ত করে। কাসফিয়া আরশির চিৎকার শুনে সাথে সাথেই আরশির কাধে হাত রেখে উত্তেজিত হয়ে বললো-

“আশু তুই ঠিক আছিস তো!!”

কাসফিয়ার কথা শুনে রৌদ্রর বিদ্যুৎ ঝলকের মতো কিছুটা একটা মনে পরলো। রৌদ্র এই কথাটা এর আগেও শুনেছে এই হসপিটালই প্রায় দু’বছর আগে। একটা মেয়ে Gynecologist এর কেবিনের বাহিরে বসে দু’হাতে মুখ ডেকে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না করছিল। তখনই একজন কেবিন থেকে বেরিয়ে এসে ঠিক এই একই কথাটা বলেছিল “আশু তুই ঠিক আছিস তো!!” মেয়েটা মাথা তুলে একপলক তাকিয়ে থেকেই পাশের মেয়েটার কোমড় জড়িয়ে ধরে ডুকরে ডুকরে কেঁদে উঠেছিল। রৌদ্র শুধু কান্নারত মেয়েটার চেহারা একপলকই দেখেছিল হ্যাঁ এই মেয়েটাই তো ছিল। এই জন্যই এই মেয়েটাকে চেনা চেনা লাগছিলো তার। সেদিন কেন যেন মেয়েটার কান্না দেখে রৌদ্রর খুব খারাপ লেগেছিল তাই রাতে সেই ডক্টরের সাথে কথা বলে কারন জানতে চেয়েছিল। প্রচন্ড পেট ব্যথার আর অতিরিক্ত ব্লিডিং এর জন্য কিছু টেস্ট দিয়েছিল ডক্টর সেদিন তার রিপোর্ট পেয়েছিল। হরমোনজনিত কিছু কারনে মেয়েটার মা হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম আর এইজন্যই মেয়েটা এভাবে কান্না করেছিল। শুধু এতটুকুই রৌদ্র জেনেছিল মেয়েটা সম্পর্কে।

“আরে মিয়া আপনার মধ্যে কি দয়ামায়া বলতে কিছু নেই না-কি!! এভাবে কেউ ব্যথা জায়গায় চাপ দেয়!!”

আরশির এমন ঝাঁঝালো কণ্ঠে রৌদ্রর হুশ ফিরলো। আরশি এখনো রৌদ্রর কাধে খামচে ধরে আছে। রৌদ্র আরশির কথায় কোনো সাড়া না দিয়ে পা কিছুটা নেড়েচেড়ে দেখে বললো-

“এখন ঠিক আছে। ঠান্ডা পানির ছেক দিলেই পা ফোলা কমে যাবে। আর কিছুদিন লাফালাফি একটু কম করলেই আপনারা জন্য ভালো।”

আরশি অবাক চোখে তাকিয়ে রৌদ্রর কথা শুনছিল। পা টা এখন আর আগের মতো ব্যথা করছে না।আরশি এখন বুঝতে পারলো রৌদ্র পা ঠিক করার জন্যই এভাবে চাপ দিয়েছে। আরশিকে চুপ থাকতে দেখে রৌদ্র আরশির হাত নিজের কাধ থেকে নামিয়ে হাতটা নেড়েচেড়ে কিছুটা পর্যবেক্ষণ করে শান্ত গলায় বললো-

“আপনার নখ গুলো বেশ সরু। বেশি বড় হয়নি তবুও সব সময় কেটে যতটুকু পারেন ছোট করে রাখবেন। আর আমার সামনে আবারও আসার আগে অবশ্য নখ গুলো কেটে আসবেন দরকার পরলে প্রতিদিন নখ কাটবেন। বার-বার যদি আমার গায়ে কেউ এমন নখের আঁচড়ের দাগগুলি দেখে তাহলে মানুষ কি ভাব্বে বুঝতে পারছেন!!”

রৌদ্রর এমন কথা শুনে কাসফিয়া বিষম খেয়ে কাশতে লাগলো। আর আরশি থম মেরে বসে আছে। রৌদ্রর কথা গুলোর মানে বুঝতে পেরে পরক্ষনেই নিজের হাত গুটিয়ে নিয়ে লজ্জায় লাল হয়ে মাথা নুয়িয়ে ফেললো। লজ্জায় আরশির গাল গুলো লাল বর্ন ধারন করেছে। আরশির লাল হয়ে যাওয়া গাল গুলো দেখে রৌদ্র মনে মনে একটা মুচকি হাসি দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে গেল। রৌদ্র কথা পাল্টানোর জন্য নিজের চেয়ারে বসে স্বাভাবিক হয়ে বলল-

“তা আপনার কি করেন? আর এতো বেখেয়ালিতে কোথায় যান সব সময়?”

কাসফিয়া স্বাভাবিক হয়ে ভদ্রতার সাথে বলল-

“পাশের ভার্সিটিতেই আমরা পড়ি। আজ একটু তাড়াহুড়ো করতে গিয়েই এমন হলো।”

আরশি দাঁড়িয়ে কাসফিয়ার হাত ধরে অস্থির কন্ঠে বললো-

“আচ্ছা কাসফি চল এখন দেরি হচ্ছে।”

কাসফিয়া বুঝতে পারছে আরশি এখানে থাকতে চাইছে না তাই রৌদ্রর উদ্দেশ্যে বলল-

“আচ্ছা আপনার ফি!!”

রৌদ্র নিজের চুল গুলো ঠিক করতে করতে গম্ভীর গলায় বললো-

“এতটুকুর জন্য কোনো ফি হয় না। নিজের খেয়াল রাখবেন আর সাথে ওনাকেও দেখে রাখবেন। এটা আমার কার্ড কখনো দরকার পরলে যোগাযোগ করতে পারেন দ্বিধাবোধ না করে।”

রৌদ্রর এগিয়ে দেওয়া কার্ডটি কাসফিয়া হাতে নিয়ে বলল-

“আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আজ তাহলে আসছি। ভালো থাকবেন।”

রৌদ্র চোখের ইশারায় সম্মতি জানাতেই আরশি তাড়াতাড়ি করে কাসফিয়াকে নিয়ে চলে আসলো। কেবিন থেকে বেরিয়েই আরশি একটা স্বস্তির শ্বাস নিল। আরশি মনে মনে বলল- “এই লোকটার সামনেই কেন বার বার লজ্জায় পরতে হয় আমাকে!! আর লোকটারই বা কি দরকার ছিল এভাবে কথা বলার!!” কথা গুলো ভেবেই আরশির বিরক্ত লাগছে। আরশি আর কাসফিয়া কিছুটা এগিয়ে যেতেই Gynecologist এর কেবিনের দিকে আরশির নজর পরলো। আরশি থমকে দাঁড়িয়ে গেল চেহারায় গম্ভীরতা ফুটে উঠেছে। কাসফিয়া আরশির দৃষ্টি অনুসরণ করে কেবিনের দিকে তাকাতেই আরশির মনের অবস্থা বুঝে গেল। আরশি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবারও আস্তে-ধীরে হাটা শুরু করলো। সারা রাস্তা কেউ আর কোনো কথা বলেনি। রৌদ্র আজ ছুটি নিয়েছে তাই কাল নাইট ডিউটি করে আজ সকালেই বাসায় চলে এসেছে। আজ আসার সময় একটা ময়না পাখি দেখে পছন্দ হয়েছে তাই সেটাও কিনে নিয়ে আসলো। পাখিটা বারান্দায় রেখে আসার জন্য বারান্দায় গিয়ে একটা লাল রঙের কাগজ দেখে হাতে তুলে নিলো।

“আমি কিছু মনে করিনি আর পাখিগুলো আমার কাছে ভালোই লাগে তবে আপনার পাখিগুলো খুব ঝগড়াটে। নামের সাথে একদমই মিল নেই। নাম লাভ বার্ড হলেও সারাক্ষণ শুধু ঝগড়াঝাটিই করে ভালোবাসা একদমই নেই।”

রৌদ্র চিঠিটা পরে খানিকটা হাসলো। রৌদ্র জানে না কে এই চিঠির মানুষ ছেলে না-কি মেয়ে তবুও চিঠির প্রতিত্তোরে আরেকটা চিঠি দিল। কাগজটা ছুড়ে মারার কিছুটা সময় পরই দরজা খোলার শব্দ হতেই রৌদ্র বিস্ফোরিত চোখে মানুষটার দিকে তাকিয়ে আছে।

আরশি বাসায় এসে কিছুক্ষণ রেস্ট নিয়ে পাখিগুলো কথা মনে পরতেই কাসফিয়াকে পাশের বারান্দার পাখিগুলো দেখানোর জন্য জোর করে নিয়ে এসেছে। আরশি যেহেতু এখনো ভালো করে হাঁটতে পারে না তাই কাসফিয়া আপত্তি করেনি। আরশিকে ধরে ধরে বারান্দায় নিয়ে আসছিল কিন্তু তাড়াহুড়ো করে বারান্দার দরজা খোলার সময় আরশি পরে যেতে নিলেই কাসফিয়া কিছুটা রেগে বলল-

“সব সময় এত তাড়াহুরো করিস কেন আশু!!”

আরশি মুখ গোমড়া করে আস্তে-ধীরে বারান্দায় এসে পাখিগুলোর দিকে তাকাতেই চমকে গেল। অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সামনের দিকে।

চলবে…..

( ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ আর ভালোবাসা সবাইকে।❤️❤️)