#লাবণ্যর_সংসার
#পর্ব_1
#কৃ_ষ্ণ_ক_লি
—“ আমি তোমার কাছে থাকবো নিবিড় ভাইয়া। আমাকে ঘুম পাড়িয়ে দিবে গো! আমার ঘুম আসছে না। ”
সদ্য বিবাহিত নিজের স্বামীকে জড়িয়ে থাকা মেয়েটির মুখের কথাগুলো শুনে থম মেরে দরজার কপাট ধরে দাঁড়িয়ে থাকে লাবণ্য। ওর হাত – পা যেনো ঠান্ডা হতে শুরু করে।
লাবণ্যর স্বামী নিবিড় ওর দিকে একঝলক তাকিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে জড়িয়ে থাকা মেয়েটিকে ছাড়ানোর জন্য।
—“ মেঘলা কি করছিস ছাড় আমায়? কি হয়েছে তোর? ”
এতটুকু বলেই মেঘলাকে ছাড়িয়ে নিলে বুঝতে পারে মেয়েটার সারা শরীর গরম আগুন। নিবিড়ের বুঝতে দেরী হলো না মেঘলার এমন আচরণের কারণ। ভ্রু যুগল কুঁকড়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। মেঘলাকে দ্রুত বিছানায় শুইয়ে দিয়ে নিবীড় ঔষধের প্যাকেট হাতে নিয়ে সেখান থেকে একটা মেঘলাকে জোর করে খাইয়ে দেয়।
—“ আমার ঔষধের প্রয়োজন নাই। তুমি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলে আমার জ্বর ভালো হয়ে যাবে। ”
—“ উফফ,,, মেঘলা বকবক বন্ধ করে চুপ করে ঘুমাতো। এতো জ্বর বাঁধিয়েছিস কি করে? ”
—“ তুমি জানো না নিবিড় ভাইয়া ছোটো থেকে তো এই জ্বরটাই আমার সঙ্গী। যখন যখন আমি একা হয়ে যাই তখন তো এই জ্বরটাই আমাকে সঙ্গ দেয়। তুমি জড়িয়ে ধরলে জ্বর চলে যায়। ”
ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে মেঘলা , নিবিড় ধমকে উঠে। মেয়েটাকে বুকে নিয়ে শুয়ে পড়ে। মাথার চুলে বিলি কাটতে থাকে। ওদিকে যে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে কেউ একজন অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছে তা যেনো নিবিড়ের ভাবনার বাইরে। হুঁশ আসে ওর ফুপু রুমানিয়া বেগমের ডাকে,,
—“ আজকের দিনেও তুই এখানে আসলি। আমি তো ছিলাম , মাথায় হাত বুলিয়ে দিতাম। জ্বর হয়েছে আমিও তো তোকে সামলাতে পারতাম। তা না করে একছুটে নিবিড়ের কাছে চলে আসলি। ”
নিবিড়ের থেকে মেঘলার মা একটান দিয়ে মেয়েকে তুলে বসিয়ে দেয়।
—“ তোর কি এখনও কাণ্ডজ্ঞান হবে না বলতো? আজ ওদের বিশেষ একটা দিন । তোর অসুস্থতার জন্য তুই ওদের অসুবিধায় ফেলিস না মা। চল তোকে রুমে নিয়ে যাই। ”
—“ না আমি যাবো না , কোথাও যাবো না। ও নিবিড় ভাইয়া আম্মুকে এখান থেকে চলে যেতে বলো না গো। আমি যাবো না তোমায় ছেড়ে। ”
নিবিড়কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে মেঘলা। রুমানিয়া বেগম অনেক জোরাজুরি করতে থাকে মেঘলাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য।
—“ ফুপ্পিমা থামো তো , মেয়েটার জ্বর আর এই অবস্থায় তুমি ওকে কেনো জোরাজুরি করছো বলোতো? ”
—“ নিবিড় তুমি আর কোনো কথা বলো না। ও যা বলবে তাই কি করতে হবে? তোমার বিয়ে হয়েছে আজ , তোমার স্ত্রীকে তুমি সময় দেবে। আজ তোমাদের জন্য বিশেষ একটা দিন। সেখানে ওর পাগলামি গুলো তুমি কেনো প্রশয় দিবে বলো তো!
মেঘলা অনেক হয়েছে এবার তুমি চুপচাপ এখান থেকে যাবে। ”
—“ আম্মু আমি যাবো না। নিবিড় ভাইয়ার কাছে না থাকলে আমার যে জ্বর ভালো হবে না আম্মু। ”
রুমানিয়া বেগম মেঘলাকে বকুনি দিয়ে নিয়ে যেতে গেলে নিবিড় থামিয়ে দেয়।
—“সেদিন কি হয়েছিল তুমি কি ভুলে গেছো ফুপ্পিমা? মনে আছে সেদিনও কিন্তু ওর গায়ে এমনই ধূম জ্বর ছিলো। অফিসে ইম্পপ্রটেন্ট একটা মিটিং ছিলো। তুমি আর ফুপা বলেছিলে তোমরা মেঘলাকে সামলে নেবে। আমার যাওয়ার প্রয়োজন নেই। কিন্তু শেষ রাতে আমাকেই ছুটতে হয়েছিলো তো! জ্বর বেড়ে গিয়ে হস্পিটালাইজড্ করবার উপক্রম হয়েছিলো!
মনে পরে? ”
—“ হুম কিন্তু আজকের মতো একটা দিনে ওর এখানে থাকা ঠিক নয় বলেই তো,, ”
—“ ওহ কাম অন ফুপ্পিমা , কি তখন থেকে আজ – আজ করে চলেছো বলোতো! বিশেষ দিন কি চলে গেলে আর আসে না? বিয়ে করেছি বলে কি পরিবারের লোকজনদের কে সময় দিব না? পরিবারের প্রতি দায়িত্ব-কর্তব্য পালন করতে পারবো না বিয়ে করেছি বলে? ”
নিবিড়ের ক্রুদ্ধ গম্ভীর গলার কথাগুলো শুনে রুমানিয়া বেগম আর কিছু বলার সাহস পেলেন না।
নিবিড় পুনরায় মেঘলাকে শুইয়ে দিয়ে একটা চাদর টেনে দেয় ওর ওপর।
—“ লাবণ্য তুমি কিছু মনে করো না মা। আসলে আমার মেয়েটা ছোটো থেকেই নিবিড়ের ওপর নির্ভরশীল। অসুস্থ হলেই ওর নিবিড় ভাইয়াকে পেলেই ও সুস্থ হয়ে যায়। অনেকটা অক্সিজেনের মতো মনে করে ওর ভাইয়াকে। ”
রুমানিয়া বেগমের কথায় চমকে উঠে । চোখ থেকে গড়িয়ে আসা পানিটা আলতো হাতে মুছে নেয়। রুমানিয়া বেগম হাসিমুখে লাবণ্যর মাথায় হাত রেখে বলে,,
—“ আমি জানি মা আজকের রাতটা একটা মেয়ের জন্য কতোখানি! কতো স্বপ্ন দেখে মেয়েরা এই রাতটা নিয়ে। আমি জানি আমার মেয়ের জন্য তোমার অনেক অসুবিধা হচ্ছে।”
—“ না না ঠিক আছে ফুপ্পিমা। আমি কিছু মনে করি নি। জ্বর হয়েছে বলেই তো মেঘলা এখানে এসেছে, ওর ভাইয়ার কাছে। আপনি চিন্তা করবেন না ফুপ্পিমা আমার কোনো অসুবিধা হচ্ছে না। ও থাক এখানে। ”
লাবণ্যর কথায় রুমানিয়া বেগম আশ্বস্ত হয়ে রুম থেকে চলে যান। লাবণ্য রুমের দরজা বন্ধ করে ওখানেই দাঁড়িয়ে থাকে। নিবিড় পরম যত্নে আধশোয়া হয়ে মেঘলার চুলে বিলি কেটে দিচ্ছে। লাবণ্য বেশ কয়েকক্ষণ নিবিড়ের দিকে তাকিয়ে থাকে। লাবণ্য আশা করেছিলো নিবিড় হয়তো ও কে পাশে এসে বসতে বলবে। কিন্তু তার কোনও লক্ষণ না পেয়ে লাবণ্য বিছানার কাছে এগিয়ে আসে। জড়তা কাটিয়ে লাবণ্য কি বলবে বুঝতে না পেরে মুখ ফসকে বলে উঠে,,,
—“ জ্বর টা কি কমেছে একটু? ”
ব্যাস লাবণ্যর এতটুকু কথাতেই যেনো নিবিড়ের কান – মাথা গরম হয়ে যায়। লাবণ্য যে ওর সদ্য বিয়ে করা স্ত্রী, তা ও ভুলে যায়। দাঁতে দাঁত চেপে ঝাঁঝিয়ে উঠে,,
—“ সঙ্গে সঙ্গে ঔষধ খেলেই জ্বর কমে যায়! ম্যাজিক না কি ইডিয়েট। ”
নিবিড়ের এমন ব্যবহারে কষ্ট ও লজ্জায় মাথা নিচু করে নেয়। নিবিড় মেঘলার মুখের দিকে তাকিয়ে লাইট অফ করে দেয়। লাবণ্য কি করবে বুঝে উঠতে পারে না। কিছু জিজ্ঞাসা করলে আবার যদি নিবিড় রেগে যায়! সেই ভয়ে লাবণ্য ওখান থেকে সরে ব্যালকনিতে চলে আসে। আজকের রাতটা যে ওর জীবনে এমনভাবে কাটবে তা হয়তো ও স্বপ্নেও ভাবেনি।
আজ পারিবারিক ভাবেই নিবিড় আর লাবণ্যর বিয়েটা হয়। আর সব মেয়েদের মতোই অনেক স্বপ্ন ও আশা নিয়ে ফুলে সাজানো বিছানায় বসেছিলো। স্বামী নামক মানুষটাকে চেনা – জানা , তাকে বোঝা , তার পছন্দ – অপছন্দ জানা। দুরুদুরু বুকে বিছানায় বসে অপেক্ষা করেছিলো লাবণ্য। দরজায় খট্ করে আওয়াজ পেতেই মনের মধ্যে একটা ভালো লাগা কাজ করে। নিবিড়কে কাছে এগিয়ে আসতে দেখে ও বিছানা থেকে নেমে দাঁড়ায়। সালাম জানালে নিবিড়ও তার প্রতিত্তর করে মুচকি হাসে। লাবণ্যকে বিছানায় বসিয়ে ওর আঙুলে আংটি পরিয়ে দেয়। মৃদু হেসে নিবিড় প্রশ্ন করে,,
—“ পছন্দ হয়েছে? ”
—“ জ্বী। ”
মুখ নীচু করেই উত্তর করে লাবণ্য। বেশ কিছুক্ষণ নিরবতা দেখে লাবণ্য মুখ তুলে অবাক হয়। নিবিড় ওর কাছে নেই। কোথায় গেলো ভেবে চারপাশে চোখ বুলাতে থাকে লাবণ্য। তারপর নিবিড়কে ড্রেস চেঞ্জ করে ওয়াশরুম থেকে বের হতে দেখে।
—“ ওই ভাবে বসে না থেকে আটা-ময়দা মাখা মুখটা ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে এসো। আর এইসব ভারী গহনা , শাড়ী চেঞ্জ করে আসো। কিভাবে যে পরে আছো সিরিয়াসলি! তোমায় দেখে তো আমি নিজেই হাঁপিয়ে উঠছি। ”
নিবিড়ের এমন কথায় লাবণ্য হাসবে না কি কাঁদবে!
নিবিড় ল্যাপটপ নিয়ে সোফায় বসে পড়ে। লাবণ্য নিবিড়ের কাজ দেখে কিছুটা অবাক হয়ে যায়।
—“ কি হলো যেতে বলছি তো? ”
নিবিড়ের মৃদু ধমকে লাবণ্য তৎক্ষণাৎ বিছানা থেকে নেমে দাঁড়ায়। ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে গহনা খুলতে থাকে। ঠিক সেই সময় দরজায় নক পরে। নিবিড়, লাবণ্য দুজনেই দরজার দিকে তাকায়। এরপর তিন চারবার দরজা ধাক্কা দিলে লাবণ্যই গিয়ে দরজা খুলে। আর তারপর,,,
লাবণ্যর ভিতর থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে। বিয়ের এই রাতটা নিয়ে ওর যে অনেক স্বপ্ন ছিলো। ভেবেছিলো আজ রাতে ও স্বামীর কাঁধে মাথা রেখে চাঁদ দেখবে , জোৎস্না বিলাস করবে! কিন্তু তা আর হল কই! তার জায়গায় বারান্দায় রাত কাটাতে হচ্ছে।
আচ্ছা নিবিড় চাইলেই তো লাবণ্যকে ওর পাশে বসতে বলতে পারতো! লাবণ্যর প্রশ্নে তো হাসি মুখেও বলতে পারতো এক্ষুণি কি জ্বর কমে গো , তুমি কপালে হাত ছুঁইয়ে দেখো! প্রথম রাতেই এতো চড়া মেজাজে কথা বলাটা যে লাবণ্যর মন খারাপের কারণ। আচ্ছা মানুষটাই কি এমন! ভীষণ বদরাগী! রূক্ষস্বভাবের।
লাবণ্যর মনের অজান্তেই চোখের কার্নিশ বেয়ে এক – দু ফোঁটা নোনা পানি গড়িয়ে আসে।
চোখে ঠান্ডা তরল জাতীয় কিছু জিনিস পড়ায় কেঁপে উঠে লাবণ্য। ধড়ফড়িয়ে উঠে বসে নিবিড়কে চোখের সামনে দেখে। নিবিড় মুচকি হেসে লাবণ্যর পাশে বসে।
—“ সুপ্রভাত লাবণ্যময়ী.. ”
—“ জ্বী সুপ্র… ”
লাবণ্য বলতে গিয়েও থেমে যায় কারণ নিবিড় ওর পাশে থেকে উঠে গেল। তারপর হাতে দু কাপ কফি নিয়ে এসে ধরিয়ে দেয়। লাবণ্য বেশ অবাক হয়।
—“ অ্যাম সরি , আই নো কাল তোমার সাথে অনেকটা রুডলি বিয়েভ করেছি। আমার একদম উচিৎ হয়নি। অ্যাকচুয়্যালি আমার এমনিতেই অনেক কাজের প্রেসার ছিলো। কাল আমি বাধ্য হয়েই ল্যাপটপ নিয়ে বসেছিলাম। কিন্তু মেঘলার জ্বর এর জন্য আমি কাজটা করতে পারলাম না। মেয়েটা আমাকে ছাড়া কিছু বোঝে না, তারপরে অসুস্থ থাকলে তো কোনও কথাই নেই। ফুপ্পিমার ওভাবে কথা বলা, সবকিছুতেই আমার বিরক্ত লাগছিলো। তাইজন্য তোমাদের ওপর একটু চিৎকার করে ফেলেছিলাম, সরি। ”
নিবিড় লাবণ্যকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে কথাগুলো বলাতে , কাল রাতের সমস্ত কষ্ট গুলো যেনো এক নিমিষেই মিলিয়ে গেলো। লাবণ্যর মুখে প্রশান্তির হাসি।
—“ রুম থাকতে ব্যালকনিতে আসলে কেনো? সোফায় শুয়ে পড়তে পারতে। তা না করে ব্যালকনির ফ্লোরে এসে শুলে কেনো? তোমায় ডেকেছি অনেকবার কিন্তু তুমি তো নিজের খেয়ালেই মত্ত ছিলে? আমি কাছে এসেও তোমাকে ডাকতে পারলাম না। কারণ মেঘলা শক্ত করে জড়িয়ে ছিলো আমায়। তাইতো আসতে পারলাম না তোমার কাছে।
তুমি তো কাল রাতে ফ্রেশও হয়নি মনে হয়। যাও ফ্রেশ হয়ে এসো। ”
—“ মেঘলা কেমন আছে? ”
—“ হুম জ্বর টা কেটে গিয়েছে এখন ঘুমাচ্ছে ।”
নিবিড় উঠে চলে গেলে লাবণ্য গুটিগুটি পায়ে রুমের মধ্যে আসে। মেঘলাকে একপলক দেখে ওয়াশরুমে চলে যায়। গোসল সেরে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল আঁচড়ে নেয়। হালকা গহনা পরে চোখে কাজল লাগিয়ে নেয়।
— “ নিবিড় ভাইয়া… নিবিড় ভাইয়া,, ”
মেঘলার ডাকে লাবণ্য এগিয়ে গিয়ে ওর পাশে বসে। কপালে হাত ছুঁইয়ে মেঘলাকে ডাকে। মেঘলা চোখ খুলে লাবণ্যকে দেখে চারপাশ তাকিয়ে দেখে উঠে বসতে যায়। লাবণ্য ও কে ধরে সাবধানে তুলে বসিয়ে দেয়।
—“ জ্বর তো নেই একদম । কেমন লাগছে তোমার শরীর এখন? ”
—“ নিবিড় ভাইয়া কোথায়? ”
—“ তোমার ভাইয়া তো নিচে চলে গেছে। আমি কি ডাকবো? ”
—“ না , অ্যাম সরি। কাল আমার জন্য তোমার অনেক সমস্যা হয়েছে তাই না গো? আমার আসা উচিৎ হয়নি কিন্তু।”
—“ মেঘলা তুমি অসুস্থ তোমাকে দেখা উচিৎ আগে। আর এভাবে বলছো কেনো তোমরা সবাই। আমি কিছু মনে করিনি। ”
—“ তুমি না যেমন মিষ্টি দেখতে, ঠিক তেমনই তোমার মিষ্টি ব্যবহার। ”
মেঘলার কথা শুনে লাবণ্য হেসে ফেলে। মেঘলা লাবণ্যর দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়।
—“ আচ্ছা চলো আমরা নিচে যাই। ব্রেকফাস্ট টেবিলে তোমার জন্য সবাই অপেক্ষা করছে। চলো।”
লাবণ্য – মেঘলা নীচে আসলে মেঘলার কাছে নিবিড়ের মা শিউলি বেগম মেঘলাকে আসতে দেখে চেয়ারে বসিয়ে দেয়।
—“ মেঘ মা তুই উঠে আসলি কেনো। আমি তো এক্ষুণি তোর খাবার নিয়ে যাচ্ছিলাম। আমি তো তোর জ্বরের কথা শুনেই ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। বেশ তো ছিলি কোথা থেকে জ্বরটা বাঁধিয়ে বসলি বলতো? ”
—“ উফফ মামী রিল্যাক্স , আমি এখন একদম ঠিক আছি। আমার জ্বর তো জানো একদিনেই ভালো হয়ে যায়। আমাকে নিয়ে ব্যস্ত হয়োনা তো। আচ্ছা তোমরা কেউ নতুন বউ কে তো দেখো! ”
রুমানিয়া বেগম লাবণ্যর মাথায় হাত রাখে।
— “ কাল নিশ্চয়ই ঠিক মতো ঘুম হয়নি মা তোমার? ”
লাবণ্য হাসিমুখে কিছু বলতে গেলেই শিউলি বেগম বলে উঠে,,
—“ ঘুমানোর জন্যও দিন – রাত অনেক পড়ে আছে। এখন আমার সাথে রান্নাঘরে আসোতো দেখি। এই বাড়ির নিয়ম নতুন বউ বিয়ের পরদিন রান্না করে খাওয়াবে এবং আজ থেকেই রান্না ঘরের দায়িত্ব পালন করতে হবে তোমাকে। কাল থেকে ভোর পাঁচটায় উঠে পড়বে। কে কি খাবে আমি সব আজ বলে দিচ্ছি। চলো তো এখন।”
—“ আচ্ছা এই নিয়ম গুলো কিছুদিন পর পালন করলেও তো হতো। ”
—“ কেনো নিয়ম চেঞ্জ হবে! আমাকেও তো বিয়ের পরদিন থেকেই রান্না ঘরের দায়িত্ব চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিলো। কই সেদিন তো কিছু বলোনি? তাহলে আজ কেনো? শাশুড়ি মা মারা যাওয়ার পর এই বাড়ির দায়িত্ব আমার হাতে দিয়ে গেছেন। এই বাড়ির কর্তী আমি। তাই আমি যা বলবো তাই হবে। ”
আতীক সাহেব স্ত্রীর কড়া গলায় বলা কথাগুলো শুনে চুপ করে যায়। শিউলি বেগম আরও একবার বুঝিয়ে দেন এই মেয়ে তার পছন্দ না। এই মেয়েকে ছেলের বউ হিসেবে মেনে নিতে পারছেন না।।
চলবে…