লাভ গেম পর্ব-১৪

0
651

#লাভ_গেম
#ফাবিহা_নওশীন

১৪.

আদ্রিশ অফিসে যাওয়ার পর রুশা মিজান চাচার কাছে গেল। মিজান চাচা ওকে দেখেই বুঝে গেল রুশা কেন এসেছে, কি জিজ্ঞেস করতে এসেছে।
তবুও বলল,
“মা, কিছু বলবে?”
রুশা ইতস্তত করে বলল,
“হ্যা, চাচা আমি আদ্রিশের ব্যাপারে জানতে চাই।”
“কি জানতে চাও?”
“ওর ফ্যামিলি, ছোট বেলা সম্পর্কে জানতে চাই।”
মিজান চাচা দৃষ্টি নামিয়ে অন্যদিকে চেয়ে বলল,
“আমি ওর অতীত, ছেলেবেলা, বাবা-মা সম্পর্কে কিছু বলতে পারব না।”
“আদ্রিশ আমার স্বামী, আমার অধিকার আছে।”
“আদ্রিশের‍ যেদিন উচিত মনে করবে সেদিন নিজেই বলবে। তুমি ধৈর্য ধরো।”
“না, আমি পারছি না। আদ্রিশের অদ্ভুত ব্যবহারগুলো আমাকে পীড়িত করছে। আপনি যদি না বলেন আমি নিজেই আদ্রিশকে জিজ্ঞেস করব। ও হয়তো রেগে যাবে, রিয়েক্ট করবে অথবা আমার গায়ে হাত তুলবে। তবুও আমি জিজ্ঞেস করব।”
রুশা মিজান চাচার দিকে আড়চোখে তাকালেন। তার দৃষ্টিতে ভয় আর শংকা।
“না মা, তুমি জিজ্ঞেস করতে যেও না। ও রেগে যাবে।”
“তাহলে আপনি বলুন। আমি প্রমিস করছি ওকে আমি এ নিয়ে কিছু জিজ্ঞেস করব না যতক্ষণ পর্যন্ত ও নিজে না বলে। আমি না জানলে কি করে ওকে সাহায্য করব, ওর সমস্যা বুঝব?”
মিজান চাচা কিছুক্ষন ভাবল। রুশা মনে মনে ভাবছে কাজ হয়তো হয়েছে।

মিজান চাচা রুশাকে নিজের ঘরে নিয়ে গেল। তারপর বলতে শুরু করল,
“আদ্রিশ ছোট বেলায় খুব হাসিখুশি, শান্তশিষ্ট, বিনয়ী ছিল। ওর বাবা ওকে বিনয়ী হতে শিক্ষা দিয়েছে। আদ্রিশের বাবা বড় সাহেব নিজেও খুব বিনয়ী ছিল, খুব ভালো মানুষ ছিলেন। স্ত্রীকে খুব ভালোবাসতেন কিন্তু হঠাৎ তিনি মারা গেলেন। তারপর আর বিয়ে করেন নি। আদ্রিশকে নিজেই লালন-পালন করেছেন। আদ্রিশকে নিয়েই থাকতেন। বড় সাহেব ব্যবসায়ীক কাজে বিদেশে গেলে ওকে নিয়ে যেত, অফিসেও নিয়ে যেত। কিন্তু স্কুলে ভর্তির পর সমস্যা বাড়ল। ওর স্কুলে গার্জিয়ান মিটিং থাকলে দেখা যেত বড় সাহেবের সেদিন মিটিং থাকত, আদ্রিশের পরীক্ষা থাকলে বড় সাহেবের বিদেশে যেতে হতো। তিনি আদ্রিশকে রেখে যেতেন না এতে করে ব্যবসার অনেক ক্ষতি হতে শুরু করে। দুদিক এক সাথে তাল মেলাতে পারতেন না। তিনি অনুভব করেন আদ্রিশের একজন মা প্রয়োজন। কিন্তু তিনি বিয়ে করতে চাইতেন না। উনার বন্ধু লতিফ সাহেব অনেক বুঝানোর পরে তিনি বিয়ে করতে রাজি হোন।লতিফ সাহেবের মামাতো বোনকে বিয়ে করে ঘরে আনেন। তখন আদ্রিশের আট বছর। প্রথম কিছুক্ষণ আদ্রিশকে ভালোবাসলেও পরবর্তীতে ওকে আর দেখতেই পারত না। এছাড়াও বড় সাহেব আর মেডামের মধ্যে সারাক্ষণ ঝগড়া লেগেই থাকত। কি নিয়ে ঝগড়া হতো জানি না। তবে বড় সাহেব কেমন চুপচাপ হয়ে গেলেন। সারাক্ষণ এক ধ্যানে কিছু ভাবত। জিজ্ঞেস করলে বলতো কিছু না। আদ্রিশের দিকেও নজর দিতে পারত না। হঠাৎ একদিন আদ্রিশ বাবা হাঁপাতে হাঁপাতে আমার কাছে এসে চোখ বড়বড় করে ঘামতে লাগল। কিছু বলার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না। অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেল। আমি ডাক্তার ডেকে আনি। ততক্ষণে জ্বর চলে এসেছে। ডাক্তার বলল কিছু দেখে ভয় পেয়েছে। ডাক্তার যাওয়ার জন্য পা বাড়ালেই চিৎকারের শব্দ শুনি। সবাই দৌড়ে বড় সাহেবের ঘরে যাই দেখি তিনি ফাঁসিতে ঝুলে আছেন। পুলিশ এলো, মেডাম পুলিশকে বললেন বড় সাহেব অনেকদিন ধরে চুপচাপ থাকতেন। জিজ্ঞেস করলে বলতেন না, জোর করলে ঝগড়া শুরু করে দিতেন। তারপর দাফন হয়ে যায় পুলিশ আর আসেনি। আদ্রিশের জ্বর কমার নাম নেই। জ্বরে জ্ঞান নেই। বিছানায় সাতদিন পড়ে রইল। বাবার মৃত্যু, দাফন কিছু জানতে পারল না। মেডামও তেমন খবর নিল না। সাতদিন পরে এক সকালে চোখ মেলে বলল,
“বাবা!”
আমি শান্তনা দিয়ে বললাম সাহেব অফিসে গেছেন। রাতে চলে আসবে। তুমি ঘুমাও। ঘুমিয়ে পড়ল। বিকেলের দিকে জ্বর ছেড়ে দিল। কাঁদতে কাঁদতে বলল ওরা আমার বাবাকে মেরে ফেলেছে। আমি বললাম বড় সাহেব গলায় দড়ি দিয়েছেন। আত্মহত্যা করেছে। ও বলল না, ওরা ওর বাবাকে মেরে ঝুলিয়ে দিয়েছে, ও নিজের চোখে দেখেছে। আমাকে সেটাই বলতে এসেছিল। সব শুনে আমি আঁতকে উঠলাম। ওর মুখ চেপে ধরলাম। এর মানে লতিফ সাহেব আর মেডাম বড় স্যারকে মেরে সব আত্মহত্যার নামে ধামাচাপা দিয়েছেন। নিশ্চয়ই পুলিশকে টাকা খাইয়ে কেস বন্ধ করে দিয়েছে। এখন আদ্রিশ বাবা যদি মুখ খুলে লাভ হবে না। পুলিশ বিক্রি হয়ে গেছে। ওরা আদ্রিশকেও মেরে ফেলবে। তাই আমি ভয় দেখালাম, বলতে নিষেধ করলাম। আদ্রিশ বাবা চুপ করে গেল। কেমন পালটে গেল। সব সময় গম্ভীর হয়ে বসে থাকত। রাগে ফোঁসফোঁস করত। মেডামকে দেখলে ক্ষেপে যেত, চোখ মুখ কেমন করত। আমি সামলে নিতাম। ওর উপর মেডামের অত্যাচার দিন দিন বাড়তে লাগল। নিজের বাড়িতে চাকরবাকরের মতো ব্যবহার পেত। অযথা মারত, খেতে দিতো না, শারিরীক, মানসিক অত্যাচার করত। পিঠে এখনো সে দাগ আছে। তুমি হয়তো দেখেছো। মেডাম একদিন অসুস্থতার নাম করে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়ে কি সব ওষুধ পত্র নিয়ে আসে। আদ্রিশ বাবা খেতে চাইতো না জোর করে খাওয়াতো। ওষুধ খাওয়ার পরে অস্বাভাবিক আচরণ করত, হিংস্র হয়ে উঠত। ও মেডামকে মারার জন্য উতলা হয়ে পড়ল। প্রতিবার আমি সামলে নিয়েছি তাই মেডামের চোখে পড়েনি। আমি শিখিয়ে দিলাম ওষুধ দিলে মুখে যেন রেখে দেয় তারপর ফেলে দেয়। আমি গরিব, অশিক্ষিত মানুষ। এক মাথা খারাপের ডাক্তারের কাছে আদ্রিশ বাবাকে নিয়ে গেলে বলল, ও সুস্থ নয়। ওকে পাগল বানানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এছাড়া ওর ব্রেইন দূর্বল। বাবার মৃত্যুতে শকড পেয়েছে। কি করব আমি বুঝতে পারছিলাম না। অনেক
গুলো দামী ওষুধ দিল। কিন্তু টাকার অভাবে কিনতে পারলাম না। এভাবে চলতে লাগল। লতিফ সাহেব আর মেডাম বিয়ে করে নিলেন। বুঝলাম ওরা আগেই থেকেই প্রেমিক প্রেমিকা। সম্পত্তির লোভে বন্ধুকে ফাঁদে ফেলে মেরে ফেলেছে। আদ্রিশ বাবাকে নিয়ে ভয়ে ভয়ে থাকতাম। ও দিন দিন ভয়ংকর হয়ে উঠছিল। একদিন চা দিতে গিয়ে শুনতে পেলাম আদ্রিশ বাবাকে মারার প্লান করছে ওরা। আমি প্রচন্ড ভয় পেয়ে গেলাম। আদ্রিশ বাবাকে নিয়ে পালিয়ে যেতে চাইলাম কিন্তু আদ্রিশ নাছোড়বান্দা যাবে না৷ তখন দশ বছর, ফাইভে পড়ে। কিছুটা বড় হয়েছে। পরিস্থিতি আরো বড় করে দিয়েছে। আদ্রিশ মনে মনে কিছু ভাবছিল। আমি ভয় পেতে লাগলাম। একদিন বিকেলে মেডাম আর লতিফ সাহেব ছাদে ছিল। দুজন দুজনের মতো মোবাইলে ব্যস্ত ছিল। আদ্রিশ বাবা মেডামকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিল। মরে গেল মেডাম। আমি ভয়ে শেষ হয়ে যাচ্ছিলাম কিন্তু বাচ্চা ছেলে আদ্রিশের মনে ভয় দেখতে পেলাম না। ও তৃপ্তি আর পৈশাচিক হাসি দিল। দশ বছর বয়সে প্রথম খুনটা করল।”
মিজান চাচা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। রুশার চোখে পানি। কৌতূহল নিয়ে জিজ্ঞেস করল,
“তারপর?”
“তারপর আদ্রিশের চিৎকার শুনে সবাই ছাদে যাই। আদ্রিশ চিৎকার করে বলছে,লতিফ আংকেল আমার মামনিকে ফেলে দিয়েছে। লতিফ সাহেব অস্বীকার করলেন। পুলিশ এলো। সব চাকরবাকর সাক্ষী দেওয়াতে লতিফকে নিয়ে গেল। আদ্রিশকে বাঁচাতে আমিও মিথ্যা সাক্ষী দিলাম। আদ্রিশ এও বলল ওর বাবাকে লতিফ খুন করেছে সম্পত্তির লোভে। লতিফের জেল হয়ে গেল। আদ্রিশ বাবা নিজের রাজত্ব ফিরে পেল। সেদিন পাগলের মতো হেসেছিল। কিন্তু মাথাটা ঠিক হলো না।”
“ডাক্তার দেখাননি?”
“দেখিয়েছিলাম। ডাক্তার বলেছিল ওর মাথায় গুরুতর সমস্যা। কি জানো একটা নাম বলল। চিকিৎসা করতে হবে। আদ্রিশ রাজী হলো না। অনেক চেষ্টা করেছি। ততদিনে ও আর বাধ্য ছেলে নেই। লতিফ সাহেব ওর বাবাকে ধোঁকা দেয় সম্পত্তির লোভে আর ওর সৎ মা চরিত্রহীন ছিল। নিজের স্বামীকে মেরে ফেলে প্রেমিকের জন্য। তখন থেকেই ও ধোঁকাবাজ, লোভী, চরিত্রহীন মানুষ সহ্য করতে পারে না। ও আরেকটু বড় হলো, যখন পনেরো বছর তখন আবারও বললাম কিন্তু ও রেগে গিয়ে ভাঙচুর শুরু করে। চিৎকার চেঁচামেচি করে। বলে আমি কি পাগল? আর আর দশজন মানুষের সাথে মিশছি কি করে? পড়াশোনায় এত ভালো রেজাল্ট করছি কি করে? আমাকে আমার মতো থাকতে দেও। সেদিন অনেক ক্ষেপে গিয়েছিল তাই আর কিছু বলিনি। তারপর যখন সেজান এলো তখনও চেষ্টা করেছিলাম তাও কাজ হয়নি। বাচ্চা বয়সে চোখের সামনে বাবার মৃত্যু, ভয়ানক শকড, শারীরিক,মানসিক নির্যাতন, রাগ-ক্ষোভ, পাগল বানানোর ওষুধ এসব মিলিয়ে ছেলেটা অসুস্থ হয়ে পড়ল। পাগল হয়ে গেল। একটা শান্তশিষ্ট ছেলে কিসে পরিণত হয়ে গেল। পুরো ছেলেবেলাটাই নষ্ট হয়ে গেল ওর। বাবা-মা ছাড়া একটা ছেলে কি করে বড় হয়? কি করে মানুষ হয়?”
মিজান চাচা কাঁদতে লাগল। রুশা আর দাঁড়াতে পারল না। উঠে চলে গেল।

.

আদ্রিশ পাশে বেঘোরে ঘুম যাচ্ছে। রুশার চোখে ঘুম নেই। আদ্রিশের দিকে একবার তাকাল। ওর কেন জানি খুব কষ্ট হচ্ছে। কান্না পাচ্ছে খুব। চোখের সামনে বাবা-মায়ের মৃতদেহ ভেসে উঠল। রুশার ছেলেবেলাও সুখের ছিল না। এইদিক দিয়ে আদ্রিশের কষ্টটা বুঝতে পারছে। রুশার তখন দশ বছর। ওর বাবা একজন রাজনীতিবিদ ছিল। ব্যস্ততার কারণে স্ত্রী, সন্তানদের সময় দিতে পারতেন না। একদিন স্ত্রীকে বললেন তৈরি হয়ে নিতে। দুজন মিলে ঘুরতে যাবে। রুশাও যেতে চাইল। ওর বড় ভাই ওকে ঘুরতে নেওয়ার লোভ দেখিয়ে ওকে আটকায়। বাবা-মায়ের মাঝে ওকে পাঠাতে চায়নি। কিন্তু মাঝ রাস্তায় এক্সিডেন্ট হয়ে স্পট ডেট হলো তাদের। লাশ যখন বাড়িতে আনে রক্তাক্ত দেহ দেখে রুশা ভাইয়ের পেছনে লুকিয়ে পড়ে। ভাই ওকে আগলে নেয়। তারপর তিনি নিজ হাতে রুশাকে সাহসী, শক্তভাবে গড়ে তুলেন। রুশা আজ সাহসী, শক্ত মনের হলেও ওই দৃশ্য চোখের সামনে ভাসলে নিজেকে শক্ত রাখতে পারে না। ভয়ে কুঁকড়ে যায়। কাঁদতে শুরু করে। আজও তাই করছে। কাঁদতে কাঁদতে হেঁচকি উঠে গেল। আদ্রিশের মুখের দিকে চেয়ে কাঁদছে। আদ্রিশ তো তখন আরো ছোট ছিল। চোখের সামনে বাবাকে মারতে দেখে ওর কেমন লেগেছে সেটা অনুভব করার চেষ্টা করছে। ওর তো ভাইয়েরা ছিল কিন্তু আদ্রিশের কেউ ছিল না। রুশা নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারছে না। শব্দ করে কাঁদছে। আদ্রিশ ওর কান্নার শব্দ পেতেই জেগে যায়। রুশাকে বসে বসে কাঁদতে দেখে হন্তদন্ত হয়ে উঠে বসে। বিচলিত হয়ে জিজ্ঞেস করল,
“কাঁদছো কেন? ভয় পেয়েছো? খারাপ স্বপ্ন দেখেছো?”
রুশা কিছু না বলে আদ্রিশকে ঝাপটে ধরে। আরো জোরে জোরে কাঁদতে লাগল। আদ্রিশ কেন জানি ভয় পাচ্ছে, নিজের জন্য কখনো ভয় পায়নি কিন্তু রুশার জন্য ভয় পাচ্ছে।
“রুশা, তুমি না বললে আমি কি করে বুঝব? বলো প্লিজ।”
রুশা কি বলবে বুঝতে পারছে না। তাই বলল বাবা-মার কথা মনে পড়ছে। অনেক মিস করছি তাদের। আদ্রিশের বুক চিড়ে একটা দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে এল।
“জানো, আমার মাকে তেমন মনে পড়ে না। বুঝ হওয়ার আগেই তিনি মারা গেছেন। কিন্তু বাবাকে খুব মনে পড়ে। চোখের সামনে কুকুরের বাচ্চাগুলো সম্পত্তির লোভে বাবাকে মেরে ফেলল। আমি কিছু করতে পারিনি। ছোট ছিলাম ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। তবে ছাড় দেইনি। লতিফ আংকেলকে ফাঁসিতে ঝুলিয়েছি। লতিফ আংকেল আর তার প্রেমিকা মিলে প্লান করে আমার বাবার সম্পত্তির জন্য বাবাকে খুন করে। ওই মহিলা বাবাকে বিয়ে পর্যন্ত করেছিল সম্পত্তির জন্য। যখন জানতে পারল সব আমার নামে বাবা আগেই লিখে দিয়েছেন তখন আর সহ্য হলো না বাবাকেই মেরে দিল।”
“আর আপনার সৎ মা এখন কোথায়?”
আদ্রিশ চুপ করে গেল।
“এসব বাদ দেও। পুরনো কথা মনে করতে চাই না।”
রুশা আদ্রিশকে চুপটি করে জড়িয়ে ধরে বসে আছে। ছাড়তে ইচ্ছে করছে না। ভালো লাগছে ওর৷ আদ্রিশ আবারও বলতে লাগল,
“তোমাকে বিয়ে করার কয়েকটা কারণ আছে। এক, তোমাকে দেখেই আমার পছন্দ হয়ে গিয়েছিল। দুই, তুমি খুব সৎ ছিলে আর তিন, তুমি এতিম তাই। আমিও এতিম, তুমিও এতিম। একে অপরের দুঃখ কষ্ট বুঝতে পারব। একে অপরকে পরিবার দিতে পারব, সঙ্গ দিতে পারব তাই তোমাকেই বেছে নিলাম। আমি সব সময় তোমার পাশে আছি। বাবা-মায়ের জন্য কেঁদো না। কখনো মন খারাপ করবে না। আমি আছি তো। আমি কখনো তাদের অভাব বুঝতে দেব না। সব সময় তোমার ছায়া হয়ে থাকব। দুঃখ কষ্ট কখনো তোমাকে ছুতে পারবে না। এখন ঘুমাও। তোমাকে অনেক ক্লান্ত লাগছে।”
রুশা আদ্রিশকে ছাড়ছে না। আদ্রিশ মুচকি হাসল। তারপর ওকে বুকে জড়িয়ে শুয়ে পড়ল। রুশার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। রুশা চোখ বন্ধ করে আছে। ওর এই মুহুর্তে কিছু ভাবতে ইচ্ছে করছে না। আদ্রিশের কেয়ারগুলো অনুভব করছে।

চলবে…..