লাভ গেম পর্ব-২২+২৩

0
664

#লাভ_গেম
#ফাবিহা_নওশীন

২২.

রুশা আবারও জোরে শ্বাস নিল। শানের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে চেয়ে বলল,
“সরি, ভাইয়া।”

তারপর রিভলবার নিজের মাথায় ঠেকায়। এমন কিছুর জন্য কেউ প্রস্তুত ছিল না। রকি
আর শান দু’জনেই হকচকিয়ে যায়। ওরা দুজন ওর দিকে এগিয়ে যেতে চাইলে রুশা বলল,
“কেউ আমার কাছে আসবে না।”

রকি আর শান থমকে দাঁড়িয়ে গেল। রুশা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,
“আই কান্ট। এর চেয়ে সহজ নিজেকে খুন করা। আমি ওকে মারতে পারব না। সে শক্তি আমার নেই।”

শান বলল,
“পিউ, রিভলবারটা নামা বোন। গুলি বেড়িয়ে যাবে। ওটা মাথা থেকে নামিয়ে ফেল। তুই নিজে এ-সব প্লান করেছিস। আমরা শুধু হেল্প করেছি। তাহলে আজ কেন এমন পাগলামি করছিস?”

“হ্যাঁ, সব প্লান আমার ছিল। কিন্তু এই কাজটা আমি করতে পারব না। আমাকে মাফ করে দিও ভাইয়া।”

রকি আদ্রিশের প্রতি রুশার দূর্বলতা দেখে রেগে গেল।
“পিউ, ওকে গুলি করো। মেরে ফেলো। তুমি না পারলে আমাকে বলো।”

রুশা বিস্ফোরিত দৃষ্টিতে ওর দিকে চেয়ে বলল,
“খবরদার! আদ্রিশের গায়ে একটা আঁচড়ও দেবে না।”

রকি বিস্ময় নিয়ে প্রশ্ন করল,
“পিউ তুমি কি ওকে…?”

রুশা চিৎকার করে বলল,
“আমি ওকে ঘৃণা করি। খুব ঘৃণা করি। ও আমাকে আজ কোথায় এনে দাঁড় করিয়েছে দেখো। যে মেয়ে বিদেশে থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে দেশের সেবা করতে চেয়েছে সে আজ রিভলবার হাতে তুলে নিয়েছে মানুষ খুন করার জন্য। ও আমার সহজ সরল জীবনে বিষ ঢেলে দিয়েছে। ওকে আমি ঘৃণা করি।”
রুশার চোখ বেয়ে পানি পড়ছে। আদ্রিশ ওদের কাহিনি দেখছে। কিছুই বুঝতে পারছে না। রুশার এমন করার কারণও খুঁজে পাচ্ছে না।

রকিও চিৎকার করে বলল,
“যাকে ঘৃণা করা যায় তাকে মারাও যায়। ঘৃনার যোগ্য ব্যক্তির জন্য নিজের মাথায় রিভলবার ঠেকানো যায় না। নিজেকে মারা যায় না।”

“কিছু কিছু মানুষকে ঘৃণা করা গেলেও মারার কথা ঘূর্ণাক্ষরেও ভাবা যায় না। কিছু ঘৃণা মৃত্যুদন্ড দেওয়ার জন্য যথেষ্ট নয়।”

শান এতক্ষণ চুপ থাকলেও ওর কথা শুনে বলল,
“ভুলে গেলি সব? তোর প্রতিজ্ঞা, তার কি হবে?”

রুশা চুপ করে আছে। রকি এগিয়ে এসে বলল,
“সেটা আমি পূরণ করে দিচ্ছি।”

“নাহ, রকি তুমি বাড়াবাড়ি করছো?”

“তাহলে তুমি বলো কেন ওকে মারতে চাইছো না। কি কারণে হঠাৎ ওর উপর তোমার এত দয়া চলে এলো?”

রুশা দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“শুনতে চাও? তাহলে শোন! আমি আমার বাচ্চাকে পিতৃহীন করতে পারব না। আমি আমার সন্তানের সাথে এত বড় অন্যায় করতে পারব না।”

বাচ্চার কথা শুনে রকি, শান অবাক হলো। সাথে আদ্রিশও। আদ্রিশ বুঝতে পারছে না রুশা সত্যি বলছে না আবার কোনো বড় খেলা খেলছে। ও নিজে রুশাকে ওয়াশরুমে খুব খারাপ অবস্থায় দেখেছে। ডাক্তার বলেছে ওর মিস ক্যারেজ হয়ে গেছে। রুশার এত কান্নাকাটি, কষ্ট পাওয়া এসব কি ছিল? নাটক! না এখন যা করছে তা নাটক। এক দিনে কত সত্যের মুখোমুখি হবে ও।

রকি অস্ফুটস্বরে বলল,
“বাচ্চা!”

রুশা পেটে হাত দিয়ে বলল,
“হ্যাঁ বাচ্চা। আমার বাচ্চা।”

শান বাকরুদ্ধ। কি রিয়েকশন দিবে বুঝতে পারছে না।
“তুই আমাকে মিথ্যা বলেছিস? এই খুনির বাচ্চা লালন-পালন করছিস?”

“হ্যা, আমি মিথ্যা বলেছি। সব আমার নাটক ছিল। এই বাচ্চা আদ্রিশের এটা যেমন সত্যি তেমনি এটাও সত্যি যে এই সন্তানের মা আমি। কোনো মা তার সন্তানকে মারতে পারে না। মারা তো দূর ভাবতেও পারে না। যারা পারে তারা অন্তত মা নয় পিশাচিনী। আমার পুরো পৃথিবী এক দিকে আর আমার বাচ্চা আরেকদিকে। আমি বাধ্য হয়েছি ভাইয়া তোমাকে মিথ্যা বলতে। তুমি আমাকে বাধ্য করেছো। তুমি আমার ভাই হয়ে কি করে আমার বাচ্চাকে মেরে ফেলার কথা বলতে পারো? এর চেয়ে ভালো তো আমাকে মেরে ফেলো। মা আর সন্তান এক সাথে পৃথিবী থেকে বিদায় নেব। যেভাবে আমাদের ভাবি তার সন্তান নিয়ে বিদায় নিয়েছিল।”

শান মাথা নিচু করে নিল। আদ্রিশের দিকে আড়চোখে তাকাল। ও ভাবলেশহীন। রকি বাচ্চার জীবিত থাকার কথা শুনে আরো রেগে যায়। ওর মাথায় খুন চেপেছে।
শান কি বলবে বুঝতে পারছে না। এই মুহুর্তে কি উচিত আর কি অনুচিত বুঝতে পারছে না।
“কিন্তু আমি মনে করি, এই রকম বাবা থাকার চেয়ে পিতৃহীন হয়ে জন্ম নেওয়া ভালো। তুই বাচ্চা চাস তো? ঠিক আছে আমি এ নিয়ে আর একটা কথাও বলব না কিন্তু আদ্রিশ…

রুশা চোখ মুখ শক্ত করে মাথায় শক্ত করে রিভলবার ধরে বলল,
“তাহলে ওর সাথে আমি আর আমার সন্তানও বিদায় নেব। তুমি আমাকে খুব ভালো করে জানো। নিজেকে মেরে দেব। আই মিন ইট।”

রকি আদ্রিশকে সহ্য করতে পারছে না। শানকে ফিসফিস করে বলল,
“তুমি কি করবে জানি না আমি আদ্রিশকে আজ বেঁচে ফিরতে দেব না।”

শান ফিসফিস করে বলল,
“পাগল হয়েছো? পিউ কি বলছে শুনো নি? ও নিজের ক্ষতি করে দেবে। ওর চোখ মুখ দেখো। ভুলেও এ কাজ করবে না।”

“আমি ওকে সহ্য করতে পারছি না।”

“পিউয়ের কিছু হলে আমিও সহ্য করতে পারব না। তোমার একটা ভুলের জন্য আমার বোনের যদি কিছু হয় তাহলে ভালো হবে না।”

“তাহলে আদ্রিশকে ছেড়ে দেব?”

“পিউ যদি চায় তবে তাই হবে।”

রকি আদ্রিশের দিকে কটমট করে তাকাল। তারপর রুশাকে মিনতি করে বলল,
“পিউ, তোমার বাচ্চার দায়িত্ব আমার। কিন্তু আদ্রিশকে ছাড়তে পারব না।”

রুশা মৃদু হেসে বলল,
“তাহলে আমার হাতে মরার জন্য প্রস্তুত হও। নিজেকে মারার আগে স্বামী হত্যার প্রতিশোধ নিয়েই যাব।”

রকি সামনে থাকা চেয়ারে লাথি মারল। আদ্রিশ রুশাকে দেখছে। শুধুমাত্র বাচ্চার জন্য ওকে বাঁচানোর এত আকুলতা,এত চেষ্টা? না অন্য কারণ আছে? যে কারণই থাকুক আদ্রিশ আর বাঁচতে চায় না। রকি ওকে মেরে দিক তাতেই ওর শান্তি।
আদ্রিশ ঠোঁট নাড়াতে পারছে না। অনেক কষ্টে ঠোঁট নাড়িয়ে কম্পিত কণ্ঠে বলল,
“কিল মি।”

সবাই ওর কথা শুনে ওর দিকে তাকাল। রুশা অশ্রুসিক্ত নয়নে ওর দিকে তাকাল। আদ্রিশ কেন এটা বলছে তা অজানা নয়। রুশা দ্রুত মোবাইল বের করে সেজানকে কল করল। সেজান আগে থেকেই রুশার বলা জায়গায় প্রস্তুত ছিল। রুশা ওকে একটা ঠিকানা দিয়ে বলেছিল দলের লোক নিয়ে সেখানে প্রস্তুত থাকতে। সেজান এটা শুনে অনেক প্রশ্ন করেছিল রুশা শুধু বলেছে সময় হলে জানতে পারবে। সেজানের অগত্যা অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় ছিল না।

রকি আর শান রুশাকে অনেক বুঝানোর চেষ্টা করে যদি শেষ পর্যন্ত রুশা মেনে নেয়। কিন্তু না রুশা নিজের সিদ্ধান্তে অটল ছিল। সেজান ভেতরে এসে রুশাকে মাথায় রিভলবার ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অবাক হয়। কোনো প্রশ্ন করার আগেই রুশা বলে,
“সেজান ভাই, সময় কম। তাড়াতাড়ি আদ্রিশকে বের করুন।”
সেজান তাই কোনো প্রশ্ন না করে আদ্রিশের বাঁধন খুলতে শুরু করে। দু’জন লোক ওকে ধরে বাইরে বের করে নেয়। রুশা একবার শান আর রকির দিকে তাকায়। ওরা দু’জনেই অগ্নি দৃষ্টিতে চেয়ে আছে। তারপর সেজানের সাথে বের হয়ে যায়। আদ্রিশকে গাড়িতে না তোলা পর্যন্ত দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকে। ওকে গাড়িতে তুলে সেজান রুশাকে বলল,
“ভাবি তাড়াতাড়ি আসুন।”

রুশা শান্ত কন্ঠে বলল,
“আমি যাব না সেজান ভাই। এ পর্যন্তই আমার দায়িত্ব ছিল। ওকে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নিয়ে যান। আর হ্যা কড়া সিকিউরিটিতে রাখবেন। সুস্থ হওয়ার পর একা ছাড়বেন না। ও স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত ওর সঙ্গ দিবেন। আর সব সময় এভাবেই পাশে থাকবেন।”

সেজান ফ্যালফ্যাল করে ওর দিকে চেয়ে আছে। রুশার কথা, আচরণ কিছুই স্বাভাবিক লাগছে না।
“ভাবি আপনি এসব কি বলছেন? এখানে কি হচ্ছে, আপনি কি বলছেন আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। আমাকে একটু খুলে বলবেন?”

“আদ্রিশ সুস্থ হলে সব জানতে পারবেন।”

“আপনি যাবেন না? আমি আপনাকে এখানে ফেলে যেতে পারব না। ওরা আপনার জন্য ডেঞ্জারাস।”

রুশা মৃদু হেসে বলল,
“ওরা আদ্রিশের শত্রু আমার নয়। ওরা আমার কোনো ক্ষতি করবে না। এখন প্লিজ ব্রেনে প্রেসার না দিয়ে আদ্রিশকে হাসপাতালে নিয়ে যান। ও খুব কষ্ট পাচ্ছে।”

“কিন্তু ভাবি…!”

“আমার নাম রুশা নয়, আমার নাম পিউ। পিউ চৌধুরী। আর ওরা আমার আপনজন। আই থিংক বুঝতে পেরেছেন। শত্রু আমি আপনাদের।”
রুশা শূন্যে দৃষ্টি দিল। এসব না বললে সেজান যাবে না। তাই বলে দিল। ওর চোখ ছলছল করছে। সেজান ওর কথা শুনে বাকরুদ্ধ। কেন জানি রুশার কথা ঠিক মনে হচ্ছে। নয়ত ওরা এভাবে ওদের ছেড়ে দিতো না। রুশাকে আজ অনেক অচেনাও লাগছে।
সেজান রুশার দিক থেকে নজর ফিরিয়ে নিয়ে গাড়িতে ওঠে বসে। গাড়ি স্টার্ট দিলে রুশা গাড়ির দিকে তাকায়। যতদূর গাড়ি দেখা গেছে চেয়ে ছিল। ওর চোখ বেয়ে পানি পড়ছে। ধপ করে মাটিতে বসে পড়ল।

শান আর রকি এক সাথে বের হয়ে এল। শান রুশাকে বলল,
“তোকে কি বলব, কি বলা উচিত বুঝতে পারছি না। নিজেই দাবার কোটে সৈন্য সাজিয়ে, দীর্ঘ সময় লড়াই করে টিকে থেকে জেতার আগ মুহুর্তে পুরো কোট এলোমেলো করে দিলি। কিছু বলার নেই তোকে। তুই কি চাইছিস আমি বুঝতে পারছি না। কিন্তু এটুকুই বলব তোর এই আচরণে প্রচন্ড কষ্ট পেয়েছি। এমন ছেলেমানুষী না করলেও পারতি।”
শান দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে গাড়িতে ওঠে বসে। রুশাকে রেখেই চলে যায়। কারণ ও ভালো করে জানে রুশা যাবে না ওর সাথে।

রকি রুশাকে বলল,
“আমার সাথে চলো।”

“তোমার সাথে কেন যাব?”

“তাহলে কোথায় যাবে? আদ্রিশের কাছে যেতে পারবে না আর শানও তোমাকে নিয়ে গেল না।”

“আমার যাওয়ার অনেক জায়গা আছে। লিভ মি এলোন।”

রকি যাচ্ছে না তাই রুশা উঠে হাঁটা দিল। ও গন্তব্যহীন ভাবে হাঁটছে। ওর এখন একটাই চিন্তা একটা নিরাপদ আশ্রয়স্থল। সত্যি জানার পর আদ্রিশ ওকে পেলে ছাড়বে না। তাই ভাবছে আবার লন্ডন চলে যাবে। বাচ্চাটাকে এসব থেকে দূরে রাখবে। সেখানেই মানুষ করবে। রুশা বর্তমান গন্তব্য ঠিক করে নিল। এখন কবরস্থানে যাবে।

চলবে……

#লাভ_গেম
#ফাবিহা_নওশীন

২৩.

আদ্রিশ চারদিন যাবৎ হাসপাতাল থেকে বাড়িতে ফিরেছে। হাসপাতালে ওকে নয়দিন থাকতে হয়েছে। পুরোপুরি সুস্থ হওয়ার পর বাড়িতে এসেছে। ও বাড়িতে ফেরার পর আর বের হয়নি। ওর অফিস, ব্যবসা বানিজ্য সেজান সামলাচ্ছে। আদ্রিশের এসব আর ভালো লাগে না। কিছু করতে ইচ্ছে হয় না। ইচ্ছেগুলো রুশা সাথে করে নিয়ে গেছে। নিজেকে ঘরবন্দী করে নিয়েছে। যখন সবকিছু মাথায় চাড়া দিয়ে উঠে তখন সামনে যা পায় তাতে রাগ মিটিয়ে ড্রিংক করে নেশায় বুদ হয়ে থাকে। মাঝেমধ্যে ইচ্ছে হয় রুশার মুখোমুখি হতে, জানতে ইচ্ছে করে কোন অপরাধের এত বড় শাস্তি পেল। কিন্তু ইচ্ছে করেই সেই ইচ্ছেটা দমিয়ে রাখে। রুশা এখন কোথায় আছে জানে না আর জানতেও চায় না। রুশার মুখোমুখি হলে একটা অঘটন ঘটে যাবে। যেটা আদ্রিশ চাইছে না। তবে কতদিন পর্যন্ত এই ইচ্ছেটা দমিয়ে রাখতে পারবে তাতেও বেশ সন্দিহান৷ সেজান আদ্রিশের এই অবস্থা নিতে পারছে না। ও এখন আদ্রিশের বাড়িতে থাকে। যতদিন সিচুয়েশন স্বাভাবিক না হচ্ছে এখানেই থাকবে। আদ্রিশকে হাসপাতাল থেকে বাড়িতে অনেক বার জিজ্ঞেস করে ফেলেছে রুশার ব্যাপারে, সেদিন কি হয়েছি সে ব্যাপারে কিন্তু আদ্রিশ একটা কথাও বলেনি আর সেজানের উপর রাগারাগিও করেনি। সেজান এখন হাল ছেড়ে দিয়েছে। তবে সেদিন কিছু একটা তো হয়েছিলই যে কারণে আদ্রিশ এমন বিহেভ করছে। আর রুশা নিজে বলেছে ও রুশা না পিউ, ওদের শত্রু। রুশার অন্য একটা পরিচয় আছে কিন্তু সেটা কি আর ও কে কিছুই জানে না। এতকিছুর মধ্যে একটা প্রশ্ন সবচেয়ে বেশি ঘুরপাক খাচ্ছে সেটা হলো রুশা আদ্রিশের শত্রু হওয়ার পরেও কেন ওকে বাঁচালো? কেন নিজের লোকের সাথে লড়ায় করে আদ্রিশকে ওর হাতে তুলে দিল? সেজান জানে না কিছু।

দুদিন আগের ঘটনা। সেজান রাতের বেলায় কথার সাথে দেখা করতে গিয়েছিল। ওর মাথায় রিভলবার রেখে বলেছিল রুশার ব্যাপারে যা যা জানে সবকিছু বলতে। কিন্তু কথা বেচারি রুশার ব্যাপারে এসব শুনে ট্রমায় চলে যায়। কারণ ও নিজেও এতটুকুই জানতো যতটুকু সেজান জানে। সেদিন কথা বলেছিল,
“বিশ্বাস করুন, আমি রুশা আপুর ব্যাপারে এটুকুই জানি যে উনার কেউ নেই। উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া বাড়িতে তিনি অনাথ আশ্রম গড়েছেন। বাচ্চাদের পড়ানোর জন্য টিচার প্রয়োজন তাই আমি এপ্লাই করেছিলাম। আর জবটা পেয়ে যাই।”

সেজান ওর কথা বিশ্বাস করেনি সেদিন। রিভলবার আরো চেপে ধরে বলেছিল,
“সত্যিটা বলে দেও, নয়তো আজ শেষ বারের মতো পৃথিবীর আলো দেখবে।”

“আমি কোন সত্যি বলব? আমি এটুকুই জানি।”

“অসম্ভব। একটা মেয়ে এখানে বসে এতকিছু করেছে আর তুমি ওর কাছের মানুষ হয়ে জানবে না? তুমিও ওর সঙ্গে আছো তাই না? তোমার এই পরিচয়টাও ফেক তাই না? তোমারও অন্য পরিচয় আছে। তোমরা কার হয়ে কাজ করো?”

কথা কাঁদতে কাঁদতে বলল,
“কি বলছেন আপনি এসব? আমাকে দেখে এমন মনে হয়?”

“ভাবিকে দেখেও এমন মনে হয়নি। কিন্তু তিনি যে খেল দেখালো তাতে অনেক কিছুই মনে হচ্ছে। ভাবি এখন কোথায় আছে? তাড়াতাড়ি বলো।”

“আমি জানি না। আমি সত্যিই কিছু জানি না। আমি রুশা আপুকে তার বিয়ের দুইমাস আগে থেকে চিনি। তার সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না।”

সেজান এক কথা শুনতে শুনতে রেগে যায়। তরতর করে ঘামছে। রাগান্বিত কন্ঠে বলেছিল,
“যারা কোনো গ্যাং এর হয়ে কাজ করে তারা এমনই বলে। জান দিয়ে দেবে তবুও মুখ খুলে না। এতদিন শুনেছি আজ নিজের চোখে দেখলাম। আর এই তোকে আমি বিশ্বাস করেছিলাম। এতদিন মনে মনে চেয়েছিলাম, স্বপ্ন দেখেছিলাম। বিয়ে করতে চেয়েছিলাম। ছিহ! আজ ঘৃণা হচ্ছে। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া ভাইয়ের মতো ধোঁকা খেয়ে দুমড়ে মুচড়ে যাওয়ার আগে বেঁচে গেছি।”

কথা নির্বাক হয়ে ওর দিকে চেয়ে আছে। স্থির চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে। কয়েকবার পলক ফেলে বলল,
“এর বাইরে আমার আর কোনো পরিচয় নেই। আপনাদের সাথে যে ধোঁকা হয়েছে আমার সাথেও একই ধোঁকা হয়েছে। আপনারা যতটুকু জানেন আমিও ততটুকুই জানি। যদি বিশ্বাস না হয় তবে যা করতে এসেছেন তাই করুন। আমি মরে গেলে এই পৃথিবীতে কাঁদার মতো কেউ নেই। কেউ আমার জন্য কষ্ট পাবে না। আর আমারও আফসোস নেই।”

সেজান প্রতি উত্তরে কিছু না বলে রিভলবার প্যান্টে গুজে চলে গেল। কথা ধপ করে বিছানায় বসে পড়ল। সেজান ওকে ভালোবাসত, বিয়ে করতে চেয়েছিল? কথারও মনে হয়েছিল সেজান ওকে পছন্দ করে। ওর নিজেরও সেজানকে ভালো লাগতে শুরু করেছিল। তারপর বারবার নিজেকে ফিরিয়ে নিয়েছিল। মনকে বুঝিয়েছিল ওর ধারণা সত্যি না হলে এই অনুভূতির জন্য কষ্ট পাবে। কিন্তু আজ ওর ধারণা সত্যি হওয়ার পরেও কষ্ট হচ্ছে। সেজানকে আজ পেয়েও হারিয়ে ফেলল। সেজান ওর সরলতাকে বিশ্বাস করছে না।

****
অনেকগুলো দিন কেটে গেছে। রুশা শহর থেকে দূরে এক ফ্লাটে একা থাকে। হাসপাতালে থাকা অবস্থায় গোপনে আদ্রিশের খোঁজ নিয়েছে। ওর সুস্থতা নিশ্চিত করার পরেই লন্ডন যাওয়ার জন্য কাগজপত্র তৈরি করেছে। রুশা এখন লন্ডনে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। কাগজপত্র প্রস্তুত হতে একটু সময় লাগবে। আগামী দশ-বারো দিনের মধ্যে লন্ডন চলে যেতে পারবে বলে আশা করছে। মোটামুটি সব মিলিয়ে দুই মাসের জন্য ও বাড়ি ভাড়া নিয়েছে। যতদিন দরকার এখানে থাকবে। এখানেই নিয়মিত বেবির চেকাপ করছে। রকি এর মধ্যে একবার কল করেছিল। রকির সাথে ওর কথা কাটাকাটি হয়। দুজনের মধ্যেই বেশ রাগারাগি হয়েছে। দুজনের মধ্যে যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল তা নষ্টের পথে।

কয়েকদিন পর আদ্রিশ সিদ্ধান্ত নিল রুশার মুখোমুখি হবে। নিজের জন্য না হোক ওদের বাচ্চার জন্য। প্রথমে হাসপাতালে সেই ডাক্তারের সাথে মিট করে যিনি রুশার মিস ক্যারেজ কনফার্ম করেছিলেন। তাকে গিয়ে হুমকি দেওয়ায় গরগর করে সব সত্যি বলে দেয়। রুশা নাকি উনার পায়ে পড়ে কান্নাকাটি করে বলেছিল ওর স্বামী বাচ্চা চায় না। বাচ্চা মেরে ফেলার জন্য চেষ্টা করেছে আর এখন মানুষের সামনে ভালো সাজার জন্য নাটক করেছে। উনি যেন বলে দূর্ঘটনায় বাচ্চা মারা গেছে। তাহলে রুশা আদ্রিশের হাত থেকে বাচ্চাটাকে বাঁচাতে পারবে। তাই মিথ্যা বলেছিল আদ্রিশকে। আদ্রিশ সব শুনে চোখ বন্ধ করল। সেজান পাশে দাঁড়িয়ে ছিল। সবকিছু ওর মাথার উপর দিয়ে গেল।

হসপিটাল থেকে বের হয়ে আদ্রিশ হাঁটছে আর ওর পেছনে পেছনে সেজান।
“ভাই, আমাকে একটু বলবেন কি হচ্ছে?”

আদ্রিশ দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে হাঁটতে হাঁটতে বলল,
“রুশার আসল নাম পিউ চৌধুরী। শান চৌধুরীর বোন। ওদের বড় ভাইয়ের সাথে দেড় বছর আগে পার্টনারশিপে নতুন বিজনেস লন্স করেছিলাম তারপর কি হয়েছিল মনে আছে?”

“থাকবে না আবার? সব মনে আছে। আর সেদিন কী ঘটেছিল তাও মনে আছে।”

“এর বদলা নিতেই পিউ রুশা সেজে আমার লাইফে আসে। ওকে না চেনার কারণ ও লন্ডনে থাকত। পেশায় কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার।”

“বাপরে!”

“সেই হুডি পরা মানুষটাই রুশা মানে পিউ।”

“ভাবি তো দেখছি খুবই ডেঞ্জারাস। উনাকে দেখে কখনো এমন মনে হয়নি।”

“আমার মনে হয়েছে। অনেক বার মনে হয়েছে। সবচেয়ে বড় ডেঞ্জারাস কাজ কি করেছো জানো?”

“কী ভাই?”

“আমার বাচ্চা এখনও আছে। সহি সালামত আছে। বাথরুমে পড়ে যাওয়া, মিস ক্যারেজ সব ওর সাজানো নাটক ছিল।”

সেজানের মাথা ঘুরছে। এত এত টুইস্ট নিতে পারছে না।
“ভাবি এমন কেন করল? কী চাইছেন উনি? আর আপনার ক্ষতি চাইলে সেদিন সবার বিরুদ্ধে গিয়ে আপনাকে বাঁচালো কেন?”

“হয়তো এর পেছনেও কোনো কারণ আছে। কোনো বড় খেলা খেলছে রুশা। ও এখন কোথায় আছে জানা জরুরি। আমি আমার বাচ্চাকে নিজের থেকে দূরে থাকতে দেব না। ওকে খুঁজে বের করো সেজান। ওর সাথে আমার বোঝাপড়া আছে।”

“ওকে ভাই, চেষ্টা করছি।”

কিছুদিন পর।
রুশার লন্ডনের ফ্লাইট দু’দিন পর। লাস্ট টাইম চেকাপের জন্য রুশা তৈরি হয়ে কাঁধে ব্যাগ নিয়ে মাথায় ঘোমটা দিয়ে বের হচ্ছে। দরজা খুলতেই রুশা স্তব্ধ হয়ে যায়। স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। পা দুটো যেন মেঝের সাথে আঁটকে গেছে। নড়তে পারছে না। বুকের ভেতর হৃদপিণ্ড দ্রুত চলছে। রুশা ঘনঘন ঢোক গিলছে। দরদর করে ঘামছে। কপাল বেয়ে চিকন ঘামের রেখা ফুটে উঠেছে। সামনে আদ্রিশ শান্ত দৃষ্টি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অনেক কষ্টে অনেক দিন ব্যয় করে রুশাকে খুঁজে পেয়েছে। রুশা দুপা পিছিয়ে গেল। আদ্রিশ ওর ফ্লাটের ভেতরে ঢুকে গেল। রুশা কি করবে বুঝতে পারছে না। টেবিলের উপরে রাখা ছুরিটা হাতে নিয়ে পেছাতে পেছাতে বলল,
“আমার কাছে আসবে না।”

কিন্তু আদ্রিশ ওর কথা শুনছে না। এগিয়ে যাচ্ছে ওর দিকে। রুশা বাম হাতে ছুরি রেখে জোরে টান মারল। ঘন লাল রক্তে হাত মেখে যাচ্ছে। মেঝেতে টপটপ করে রক্তের ফোঁটা পড়ছে। আদ্রিশ দাঁড়িয়ে গেল। রুশা এখন যা খুশি করতে পারে। নিজের ক্ষতি করবে কিন্তু আদ্রিশের কাছে নিজেকে সমর্পণ করবে না।
আদ্রিশ দাঁড়িয়ে বলল,
“ওকে আমি আগাবো না। এখানেই দাঁড়িয়ে আছি।”

রুশা জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে। মাথাটা কেমন ঘুরছে। গলা শুকিয়ে গেছে। রুশা আদ্রিশকে বলল,
“এখানে কী চাই তোমার? চলে যাও। আমার দিকে আসার চেষ্টা করলে বারান্দা থেকে লাফাবো তবুও তোমার কাছে নিজেকে সমর্পণ করব না।”

আদ্রিশ আগেই বুঝেছে রুশা সহজে ধরা দিবে না। রুশা দৃষ্টি সরিয়ে হাতের দিকে নিল। হাতটা জ্বলে যাচ্ছে। আদ্রিশ এই সুযোগে রুশাকে ধরে হেচঁকা টান মারল। ওর ডান হাত চেপে ধরে ছুরিটা ফেলে দিয়ে ঘুরিয়ে ওকে নিজের আয়ত্তে নিয়ে এল। বাম হাত কাটা থাকায় রুশা তেমন প্রতিরোধ করতে পারল না।
“ছাড়ো আমাকে? ছাড়ো।”

“ছাড়ার জন্য তো ধরিনি। তুমি জানো না আমাকে? এত বড় অন্যায় করার পর তোমাকে আমি এমনি এমনি ছেড়ে দেব?”

“তুমি কী ছাড়বে আমাকে আমি সেদিন তোমাকে ছেড়ে দিয়েছি।”

“আমি তোমার কাছে একবারও দয়া চেয়েছি? বাঁচার আকুলতা দেখিয়েছি?”

“কারণ তুমি তো মানুষ নও তাই মৃত্যু ভয় তোমার নেই। খুন করতে করতে মৃত্যুকে ভয় পাও না।”

“বাজে কথা রেখে বলো কেন আমার সাথে এমন করলে? কী পেলে এসব করে? আমি জানতাম তুমি যেমন দেখতে তেমন নও। তুমি কোনো খেলা খেলছো। জেনে-বুঝে চুপ থেকেছি। আমার মন মানতে চায়নি। ব্রেন বারবার তোমার ভুলগুলো আমাকে ধরিয়ে দিলেও মন মানতে চাইতো না। আমি কিছুতেই চাইতাম না তুমি আমার কাছে অপরাধী প্রমাণিত হও। তাহলে যে তোমাকে শাস্তি দিতে হবে। আমি হারিয়ে ফেলব তোমাকে। তাই দেখেও না দেখার ভান করে থাকতাম। বলে না অন্ধ ভালোবাসা মানুষকে অন্ধ করে দেয়?
আমি ঠিক তেমন অন্ধ হয়ে গিয়েছিলাম কিন্তু বিশ্বাস করো একবারো ভাবতে পারিনি তুমি এত বড় মাপের খেলোয়াড়।”

রুশা ঝারা মেরে আদ্রিশকে সরিয়ে দিয়ে বলল,
“তাই তো সহজ-সরল,ভোলা ভালা মেয়ে সেজে তোমার জীবনে প্রবেশ করি। নিজেকে প্রস্তুত করতেও কয়েক মাস সময় নিয়েছি। বিয়ে তুমি নও আমি করেছি তোমাকে, প্রতিশোধ নিতে। নিজেকে প্রতিনিয়ত দূর্বল হিসেবে উপস্থাপন করেছি। কথায় কথায় কেঁদে কেটে ভাসিয়েছি। শক্তিমান মানুষেরা দূর্বল মানুষ খুব পছন্দ করে। ভয় পেতে দেখলে মনে মনে পৈশাচিক আনন্দ পায়। তাই নিজেকে এভাবে উপস্থাপন করেছি।”

আদ্রিশ পাশের সোফায় বসে জিজ্ঞেস করল,
“ভালোবাসাটাও অভিনয় ছিল?”

রুশা ওড়না দিয়ে হাত পেচিয়ে আদ্রিশের দিকে চেয়ে বলল,
“আই উইশ তাই হতো। ভালোবাসা নিয়ে যদি অভিনয় করা যেতো, আজকে এই দিন দেখতে হতো না। তোমাকে ভালোবাসা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল ছিল। এই ভুলটা যদি না হতো আজকে আমি একা হয়ে যেতাম না, ভাইয়ার সাথে আমার সম্পর্ক নষ্ট হতো না, আমাকে এভাবে পালিয়ে বাঁচতে হতো না, আমাকে এভাবে কাঁদতে হতো না, অপরাধবোধে ক্লান্ত হতে হতো না, দু-হাত তুলে ভাইয়ার কাছে বারবার ক্ষমা চাইতে হতো না, আমার প্রতিজ্ঞা পূরণ হতো আর প্রতিশোধ নেওয়াও হয়ে যেত। কিন্তু কিছুই হলো না।”

“আমার সাথে তোমার সমস্যা কী? কীসের প্রতিশোধ নিতে চাও তুমি? তোমাকে তো আমি চিনতামই না। মাসখানেক আগে নতুন করে চিনেছি। তোমাকে কী বলে ডাকব রুশা না পিউ চৌধুরী? সাজ্জাদ চৌধুরী আর শান চৌধুরীর একমাত্র আদরের ছোট বোন পিউ চৌধুরী। তার পড়াশোনা লন্ডনে। ইঞ্জিনিয়ারিং করে দেশের একজন নামকরা ব্যবসায়ীর পেছনে পড়েছে। তাকে বিয়েও করেছে।”
আদ্রিশ তাচ্ছিল্য হাসল।

“শাট আপ! নিজেকে কী মনে করো? তোমাকে আমার মতো মেয়ে খুব সহজে বিয়ে করেছে? আমার মতো একটা মেয়ে তোমাকে বিয়ে করবে? সিরিয়াসলি? দশ বছর বয়সে বাবা-মাকে হারিয়েছি। তারপর আমার বড় ভাই আমাকে আর শান ভাইয়াকে বাবা-মায়ের আদর স্নেহ দিয়ে বড় করেছেন। আমাদের সব সময় আগলে রেখেছেন। এক হাতে সব দিক সামলেছেন। বাবা-মার অভাব বুঝতে দেয়নি। নিজের কথা কখনো ভাবেনি। সব সময় চেষ্টা করেছেন আমাদের ভালো রাখতে। তিনি অসম্ভব ভালো মানুষ ছিলেন। শত্রুও স্বীকার করবে তিনি ভালো মানুষ ছিলেন। কাউকে আঘাত করার কথা কখনো ভাবেনি। আমাদের জন্য বিয়ে পর্যন্ত করতে চায়নি। ছুটিতে আমি দেশে এসে জোর করে ভাইয়াকে বিয়ে করিয়েছি। অনেক ভাগ্য করে এমন ভাবি পেয়েছিলাম। কিন্তু তার একটা বাচ্চা না থাকায় দুঃখের শেষ ছিল না। ভাইয়া এ নিয়ে তাকে কখনো কিছু বলেনি। তবুও কষ্ট পেত। কারণ ভাইয়াকে খুব ভালোবাসত। অবশেষে আল্লাহ মুখ তুলে তাদের দিকে তাকালেন। আমাদের পরিবারে আনন্দ ফিরে এসেছিল। আমি শুধু ভাবতাম কবে পরীক্ষা শেষ হবে আর এই মুহুর্তগুলোর ভাগ পাবো। পরীক্ষা চলাকালীন ভাইয়া ভাবি কাউকে কলে পাইনি। শান ভাইয়া বলেছিল সাজ্জাদ ভাইয়া বিজনেসের কাজে ডুবাই গেছেন। সাথে ভাবিও। আমি যেন বাড়ির কথা মাথা থেকে ঝেরে ফেলে শুধু পরীক্ষার কথা ভাবি। সেদিন শান ভাইয়া মিথ্যা বলেছিল আমাকে।”
রুশা কান্নায় ভেঙে পড়ল।
“আমি শেষ বারের মতোও সাজ্জাদ ভাইয়াকে দেখতে পারিনি। সে আমার ফেরার আগেই কবরের বাসিন্দা হয়ে গেছে। আমার ভাই, আমার ভাইকে আমি চিরদিনের মতো হারিয়ে ফেললাম। আমাকে আর জড়িয়ে আদর করবে না। বলবে না পিউ কলিজাটা আমার। পুরো পৃথিবী এক দিকে আমার পিউ একদিকে। বিদেশে একা আমি নিজেকে সামলাতে পারব না তাই শান ভাইয়া আমার দেশে ফেরার অপেক্ষা করেছিল। আমি দেশে ফিরে ভাইয়াকে না পেয়ে পাগল হয়ে গিয়েছিলাম। তার মৃত্যুর কথা শুনে জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। টানা ছয়দিন হাসপাতালে ছিলাম। আমি আর শান ভাইয়া হাসতে ভুলে গেলাম। পুরো বাড়ি মৃত্যুপুরী হয়ে গেল। কেন করলে আদ্রিশ এমন? আমার ভাইয়া তোমার কী ক্ষতি করেছিল?”

আদ্রিশ ঘাবড়ে গেল ওর কথা শুনে।
” মানে কী? কী বলছো এসব?”

“নাটক করো না। আমি জানি তুমি আমার ভাইয়ার খুনি। খুন করেছো একটা পরিবারকে।”

“তোমার ভাই,ভাবি কার এক্সিডেন্টে মারা গেছেন।”

“হ্যা, তুমি ঘটনাটা এভাবেই সাজিয়েছো। তুমি তো কোনো কাজের প্রমাণ রাখো না। কোথাও বিচার পাব না তাই নিজেই শাস্তি দিতে এসেছিলাম।”

আদ্রিশ উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
“পাগল হয়ে গেছো তুমি।”
তারপর রুশার ডান হাত চেপে ধরে টানতে টানতে বাইরে নিয়ে গেল।
“ছাড়ো আমাকে। কোথাও নিয়ে যাচ্ছো?”

“হাসপাতালে। তোমার এই নাটকের এসপার উসপারা করতে।”

চলবে…..