লাভ গেম পর্ব-৩২

0
665

#লাভ-গেম
#ফাবিহা_নওশীন

৩২.

আদ্রিশ আর রুশার কলিজার টুকরো ছোট্ট আর্দ্রের বয়স এখন সবে তিন মাস। আদ্রিশ, রুশা ওকে নিয়ে শপিংয়ে এসেছে। আর্দ্রকে বেবি ব্যাগে আদ্রিশ কেরি করছে। আর্দ্র হাসছে আর চারপাশে পিটপিট করে দেখছে। রুশা আর্দ্রের জন্য খেলনা দেখছে। আদ্রিশ আর্দ্রকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। রুশা অনেকটা দূর পর্যন্ত এগিয়ে গেছে। ওর হাতে ছোট ছোট জামা।
রুশা সেখান থেকে পছন্দ মতো ছেলের জন্য কতগুলো জামাকাপড় সিলেক্ট করল।

“হায় পিউ!”
রুশা চমকে উঠে কন্ঠস্বর শুনে। কপাল কুঁচকে বিরক্তি নিয়ে তাকাল সামনের দিকে।
রকি মুচকি মুচকি হাসছে। রুশা ভ্রু কুঁচকে ওর দিকে চেয়ে জামাকাপড় রেখেই পেছনে হাঁটা ধরল। আদ্রিশ যদি দেখে তবে ঝামেলা হয়ে যাবে। রুশা চায়না শপিংমলের মধ্যে কোন সিন ক্রিয়েট হোক। রকি দ্রুত হেঁটে ওর সামনে গিয়ে পথ আগলে দাঁড়াল। রুশা ভয়ার্ত দৃষ্টিতে সামনের দিকে তাকাচ্ছে।

রকি ওর ফ্যাকাসে মুখ দেখে বলল,
“আরে পিউ আমাকে ভয় পাচ্ছে? আনবিলিভেবল।”

রুশা রাগ কন্ট্রোল করে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“তোমার মতো সামান্য কিটকে আমি ভয় পাব? নেভার! আমি চাইনা এখানে কোন সিন ক্রিয়েট হোক। আদ্রিশ যদি দেখে তাহলে কি হবে তুমি নিজেও ভাবতে পারবে না।”

রুশা সামনের দিকে চেয়ে দেখল আদ্রিশ আর্দ্রকে ওদের গার্ডের হাতে দিয়ে ওদের দেখে এগিয়ে আসছে। রুশা চোখ বন্ধ করে ফেলল। রকি পেছনের দিকে ঘুরল। আদ্রিশকে দেখে কিছুটা ভয় পেলেও প্রকাশ করল না।
“কী সমস্যা এখানে?”
রুশাকে প্রশ্ন ছুড়ে দিল। রুশা উত্তর দিচ্ছে না। রকি আলতো হেসে বলল,
“এই একটু খোঁজ খবর নিচ্ছি।”

আদ্রিশ রুশার হাত ধরে বলল,
“চলো রুশা, আর্দ্র অনেকক্ষণ যাবৎ বাইরে আছে। আমাদের বাড়িতে যেতে হবে।”

রকি গার্ডের কোলে ছোট একটা বাচ্চা দেখল। রকি আর্দ্রের দিকে এগিয়ে গিয়ে দুহাত বাড়িয়ে বলল,
“বাবু, তোমার বাবা এসেছে। আসো, আসো।”
আর্দ্র ওর দিকে চেয়ে আছে। আদ্রিশ আর নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে পারল না। রুশার হাত ছেড়ে দিয়ে পেছনে থেকে গিয়ে ওর কলার চেপে ধরে। রকি কিছু বোঝার আগেই মুখে এলোপাতাড়ি ঘুষি মারল আদ্রিশ। রুশা কি করবে বুঝতে পারছে না। গার্ডকে ইশারা করল আর্দ্রকে নিয়ে সরে যাওয়ার জন্য। গার্ড আর্দ্রকে নিয়ে সরে গেল।

রকির নাক দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। আদ্রিশ ওর কলার চেপে ধরা অবস্থায় বলল,
“তোকে তখন ছেড়ে দেওয়ায় ভুল হয়েছে। জানে মেরে দেওয়া উচিত ছিল। আমার ছেলেকে নিয়ে আবার আজেবাজে কথা বলছিস। আমি আর তোর নাটকে ফাঁসবো না। আর কখনো যদি রুশা আর আমার ছেলের আশেপাশে দেখি তবে জানে মেরে ফেলব।”

রকি হাসছে আর বলছে,
“পিউ, আগের চেয়ে হট হয়ে গেছো।”
রুশা রাগে রি রি করতে করতে ওর দিকে এগিয়ে গেলে আদ্রিশ রকিকে একটা লাথি মারল। তারপর সজোরে আরেকটা লাথি মেরে ফেলে দিল। রকি মেঝেতে পড়ে গিয়ে হাসছে। আদ্রিশ ওর দিকে এগিয়ে যেতে নিলে দেখে শপিংমলের গার্ডরা দৌড়ে চলে এসেছে। এসে ওকে নানান প্রশ্ন করছে। আদ্রিশ সেদিকে পাত্তা না দিয়ে রকির দিকে রক্তচক্ষু চেয়ে রুশার হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগল।

গাড়িতে ওঠে আদ্রিশ রাগে ফোঁসফোঁস করছে। রুশা আর্দ্রকে কোলে নিয়ে অবাক হয়ে ভাবছে আদ্রিশ এতকিছুর পরেও কেন রকিকে মারেনি। ওর আচরণ অনুযায়ী রকির এখনো বেঁচে থাকার কথা না। নিশ্চয়ই এর পেছনে কোন বড় কারণ আছে।
“তোমার সাথে ও কী কথা বলছিল?”
রুশা আদ্রিশের কথায় চমকে উঠে। আর্দ্রকে একবার দেখল। ও ঘুমাচ্ছে। আদ্রিশ যেভাবে কথা বলছে তাতে আর্দ্রের ঘুম ভেঙে যাবে।

“আদ্রিশ, আস্তে কথা বলো। ও জেগে যাবে।”

আদ্রিশ দ্বিগুণ তেজ নিয়ে বলল,
“আরে যাক না জেগে। ও কী বলছিল তোমাকে? নিশ্চয়ই আমার ছেলেকে নিয়ে আজেবাজে কথা বলেছে।”

রুশা আর্দ্রকে ভালো করে আগলে নিয়ে বলল,
“ও শুধু আমার নাম ধরে ডেকেছে। আমি ওকে ইগ্নোর করে চলে আসছিলাম আর ও আমার পথ আগলে দাঁড়ায়। আমি ওকে চলে যেতে বলেছি। তারপর তুমি তো নিজেই সামনে আসলে।”

“চলে যেতে কেন বলেছো? দুইটা থাপ্পড় মারতে পারোনি? কী করেছে ভুলে গেছো?”

“আমি এত মানুষের মধ্যে সিন ক্রিয়েট করতে চাইনি। তাছাড়া আমার সাথে কে কি করেছে সেটা আমি কখনো ভুলব না।”

আদ্রিশ চুপ করে গেল। রুশা যে ওকেই বলেছে বুঝতে বাকি নেই। আর্দ্র জেগে গেছে। রুশা ওকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেল। আদ্রিশ কিছু একটা ভাবছে।

বাড়িতে ফিরে ফ্রেশ হয়ে রুশা আর্দ্রকে খাওয়াচ্ছে। আদ্রিশ বারবার ঘরে এসেও ফিরে যাচ্ছে। ওকে অস্থির অস্থির লাগছে। রুশা শুধু আড়চোখে দেখছে। আর্দ্রকে খাওয়ানো শেষ হলেই আদ্রিশ কথাকে নিয়ে ঘরে ঢুকে।
আদ্রিশ কথাকে বলল,
“আর্দ্রকে নিয়ে একটু নিচ থেকে ঘুরে আসো। রুশার সাথে আমার একটু কথা আছে।”
কথা রুশার কোল থেকে আর্দ্রকে নিচ্ছে। আদ্রিশ সিঙ্গেল সোফায় গিয়ে বসে পড়ল। রুশা বুঝতে পারছে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তাই আর ত্যাড়ামি না করে কথার কাছে আর্দ্রকে দিয়ে দিল। কথা চলে যেতেই আদ্রিশ দরজা বন্ধ করে দিয়ে এল। রুশা গোলগোল চোখ করে চেয়ে আছে। আদ্রিশ ওর কাছে এসে দু-হাত পকেটে গুজে বলল,
“বস। ঠান্ডা মাথায় আমার কথা শুনবে আর সব প্রশ্নের উত্তর ভেবেচিন্তে দিবে।”

রুশা সোফায় বসে পড়ল। সামনের চুলগুলো কানের পেছনে গুজে সিরিয়াস ভঙ্গিতে বসে আছে। ওর চোখ আদ্রিশের দিকে।
আদ্রিশ কিছুক্ষণ সময় নিয়ে বলল,
“তোমার ভাইয়ের মৃত্যুর ব্যাপারে আমি কিছু বলতে চাই। তুমি আমাকে তোমার ভাইয়ের খুনি ভাবো। কিন্তু আমি তাকে খুন করিনি। হ্যা এ জীবনে অনেক মানুষ মেরেছি কিন্তু তোমার ভাইকে আমি মারিনি। আমি তোমার কাছে প্রমাণ করতে চাই আমি এসবের সাথে জড়িত নই। কেন প্রমাণ করতে চাইছি জানো? আর্দ্রের জন্য। ওর উপরে আমাদের দুজনের প্রব্লেম প্রভাব ফেলছে। নয়তো আমি কখনো তোমার কাছে নিজেকে প্রমাণ করতে চাইতাম না। কে আমাকে কি ভাবে তাতে আমার বিন্দুমাত্র কিছু আসে যায় না। আমি তোমাকে ভালোবাসি কিংবা বাসি না এটা কোন ফ্যাক্ট না৷ ফ্যাক্ট আর্দ্রের ভবিষ্যৎ। আমি চাই ও স্বয়ংসম্পূর্ণ পরিবার পাক। তাই আজ আমি নিজ থেকে তোমার সাথে এই বিষয়ে কথা বলতে এসেছি। তোমার কাছে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার ইচ্ছে থাকলে অনেক আগেই করতাম। আমি তোমার ভাইকে খুন করিনি রুশা।”

রুশা এতক্ষণ চুপ থাকলেও এইবার মুখ খুলল,
“আই উইশ এটা সত্যি হত।”

আদ্রিশ চোয়াল শক্ত করে বলল,
“এটাই সত্যি কিন্তু তুমি মানতে চাইছো না। একদিন এই জন্য তোমাকে আফসোস করতে হবে। ভেঙেচুরে শেষ হয়ে যাবে।”

“এই জন্য যদি কখনো আমাকে আফসোস করতে হয় তবে সেদিন হবে আমার জীবনের সেরা দিন। সেদিন আমি তোমার পায়ে পড়ব৷ মাফ চাইব। তুমি যা শাস্তি দিবে মাথা পেতে নেব৷”

“যদি সেদিন তোমাকে মাফ করতে না পারি? তাই বলছি আমাকে বিশ্বাস করো। তোমাকে মিথ্যা বলে আমার কী লাভ? তুমি আমার কী বিগড়াবে? আমি কারণ ছাড়া কাউকে মারি না।”

“যে লোক পঞ্চাশ লক্ষ টাকার জন্য একজন মানুষকে মারতে পারে সেখানে কোটি কোটি টাকার ব্যাপার। তুমি টাকার জন্য সব পারো।”

আদ্রিশ বুঝতে পারছে না কি করে রুশাকে বিশ্বাস করাবে।
“আচ্ছা, তুমি বলো আমি কেন মেরেছি সাজ্জাদ চৌধুরীকে?”

“কারণ তোমাদের পার্টনারশিপে সমস্যা হয়েছিল। তুমি চাইতে একটা ভাইয়া চাইতো একটা। দুজনের মতের বনিবনা হত না। তুমি শেষে ভাইয়ার কাছে প্রস্তাব করলে ভাইয়ার ভাগের টাকা দিয়ে দেবে। পুরো ব্যবসায় নিজের জন্য চাইলে ভাইয়া নিষেধ করায় ঝামেলা বেঁধে গেল। কারণ ভাইয়ার অনেক বড় স্বপ্ন ছিল এই ব্যবসায় নিয়ে।”

সব আদ্রিশের মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। ও এসব করেছে অথচ জানতোই না।
“তোমাকে এসব কে বলেছে? আমি এটাই বা কে বলেছে আমি তোমার ভাইয়াকে মেরেছি?”

রুশা চুপ করে গেল। আদ্রিশ ওকে চুপ করে থাকতে দেখে ধমকে উঠে,
“চুপ করে থেকো না। স্পিক আপ। চুপ করে থাকা কোন কিছুর সমাধান নয়। তোমাকে কেউ গুটি বানিয়ে খেলছে। অথচ তুমি জানোই না।”

রুশা চোখ তুলে তাকাল আদ্রিশের দিকে। তারপর আবার চোখ নামিয়ে নিল। আদ্রিশ প্রশ্নের উত্তর না পেয়ে ক্ষেপে যায়।
“রুশা, আমি কিছু জিজ্ঞেস করেছি। শুনতে পাচ্ছো? উত্তর দেও। কে বলেছে এসব? রকি?”

রুশা নিচু স্বরে বলল,
“না, শান ভাইয়া।”

আদ্রিশ রুশার কথা শুনে প্রথমে শকড হলেও পরে কিছু একটা ভেবে হেসে ফেলল। রুশা বিস্ময় নিয়ে ওর হাসি দেখছে। চোখে মুখে রাজ্যের ভয়। আদ্রিশের হাসির ধরণ ভালো লাগছে না।
“তুমি শান ভাইয়ার ক্ষতি করার কথা ভাবছো না তো?”

“এত বড় মাপের মানুষের আমি কী ক্ষতি করব? ও তোমাকে মিথ্যা বলেছে। ও নিজেই জানে না তোমার ভাইয়াকে আদোও খুন করা হয়েছে কি না। ও ইচ্ছে করে আমার নাম বলেছে। এর পেছনে অবশ্য কারণ আছে।”

রুশা কৌতুহল নিয়ে জিজ্ঞেস করল,
“কী কারণ?”

“সাজ্জাদ চৌধুরী রাজনীতি করত। সেখানে ব্যস্ত সময় কাটাতো। তাই শান চৌধুরীকে ব্যবসার দায়িত্ব দিয়েছিল কিন্তু শানের সাথে আমার বনিবনা হচ্ছিল না। আমি এটা সাজ্জাদ চৌধুরীকে জানাই আর বলি যে শান নিজের খেয়াল খুশি মতো কাজ করলে আমি পার্টনারশিপ ভেঙে দেব কারণ লস করে বিজনেস আমি করব না। তার পরের দিন এসে শান চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে দেয়।সাজ্জাদ চৌধুরীর ভাই বলে আমি ওকে ছেড়ে দিয়েছি। নয়তো আমার উপর চিৎকার চেঁচামেচি করবে আর আমি ছেড়ে দেব তা হয় নাকি? সাজ্জাদ চৌধুরী মাঝমধ্যে এসে সব খোঁজ খবর নিতেন৷ আমার সাথে সব সময় যোগাযোগ করতেন। সব ভালোই চলছিল। তারপর হঠাৎ তার মৃত্যুর খবর শুনলাম। তার মৃত্যুর পরে আমি শানের সাথে পার্টনারশিপ ভেঙে দেই। কারণ ও খুব লোভী। নিজের ফায়দা চায়। আর আমিও লস করতে কিংবা রাজি নই। প্রচুর তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে চুক্তি ভেঙে দেই। এতে শানের প্রচুর লস হয়। আমার উপর ভীষণ ক্ষেপে যায়। হাতাহাতিও হয়। ওকে উপরে পাঠাইনি সাজ্জাদ চৌধুরীর কথা ভেবে। তার প্রতি আমার একটা রেসপেক্ট কাজ করত। যদি মারার হতো শানকে মারা উচিত ছিল সাজ্জাদ চৌধুরীকে নয়৷ শান আমার উপর সেদিনের প্রতিশোধ নিচ্ছে৷ তাই তোমাকে আমার নাম বলেছে।”

রুশা বসা থেকে দাঁড়িয়ে বলল,
“শাট আপ! আমার ভাই এত নিচ নয়। একজনের উপর ব্যক্তিগত ক্ষোভের কারণে বড় ভাইয়ের খুনির উপাধি দেবে?”

“সেটাই করেছে। আমি খুন করিনি। আমি এখন তোমাকে একটা মিথ্যা কথা বললে কিংবা কোন বিষয়ে প্রতারণা করলে সেটা আর্দ্রের উপর প্রভাব পড়বে। তাই আমি মিথ্যা বলব না। আমি করিনি খুন সাজ্জাদ চৌধুরীকে। আর খুব শীঘ্রই প্রমাণ করে দেব। বুক চাপকে কাঁদার সময় এসে গেছে তোমার।”

আদ্রিশ দরজার কাছে গিয়ে থমকে দাঁড়াল। তারপর ফিরে বলল,
“জানতে ইচ্ছে করেনি রকিকে কেন মারিনি? ওকে মারিনি কারণ আমার মনে হয়েছে ওর বেঁচে থাকা জরুরি। ও এই রহস্যে জড়িয়ে আছে। অনেক কিছু জানে ও। তাই আমার ছেলেকে মারার চেষ্টা করার পরেও ওকে ছেড়ে দিয়েছি যাতে প্রয়োজনে ওকে ব্যবহার করতে পারি। ওকে গোডাউনে আঁটকে রেখেছি। এখন সেখানেই যাচ্ছি। তুমি চাইলে যেতে পারো।”

রকির মাথায় গরম পানি ঢালছে আর রকি গগনবিদারী চিৎকার করছে। আদ্রিশের পাশে রুশা দাঁড়িয়ে আছে।
আদ্রিশ ইশারা করল ওর লোককে চলে যেতে। আদ্রিশ আর রুশা ওর সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। আদ্রিশ ওর চুল টেনে ধরে বলল,
“রুশার ভাইকে আমি মেরেছি এসব কেন বলেছিস তুই আর শান? সাজ্জাদ চৌধুরীর মৃত্যু কিভাবে হয়েছে? সত্যি করে বল। আজকে আমার মেজাজ খারাপ আছে।”
আদ্রিশ তারপর গরম লাল হয়ে যাওয়া শিক এনে বলল,
“মিথ্যা বললে তোর দুই চোখ এই গরম শিক দিয়ে তুলে নেব।”

রকি এমনিতেই মুমূর্ষু রোগীর মতো ছটফট করছে। প্রাণ আসছে আর যাচ্ছে।
আদ্রিশ আবারও ধমকে বলল,
“মিথ্যা বলেছিস কেন রুশাকে?”

রকি বিরবির করে বলল,
“শান বলতে বলেছে। কিন্তু আদ্রিশ এসবের কিছুই জানে না। আমি সত্যি বলছি। আমাকে ছেড়ে দেও প্লিজ।”

রুশা ওর কথা শুনে ওইখান থেকে বের হয়ে এল। আদ্রিশ ওর পেছনে পেছনে গেল। রুশা রাগে ফুঁসছে। আদ্রিশের অস্তিত্ব অনুভব করে পেছনে ঘুরে বলল,
“আমাকে বোকা মনে হয়? তুমি ওর কী অবস্থা করেছো? ওকে মেরে এসব স্বীকার করিয়েছো তাই না? শান ভাইয়া কখনোও আমাকে মিথ্যা বলবে না।”

“উফফ, রুশা। তুমি এত বোকা কেন? আমি কেন ওকে দিয়ে স্বীকার করাব? তুমি শানকে গিয়ে জিজ্ঞেস করো।”

“তুমি প্রমাণ করে দেও তুমি খুন করোনি। এক্সিডেন্ট অথবা অন্য কেউ মেরেছে আমার ভাই, ভাবিকে। আমি সব ধরনের সাপোর্ট দেব। কিন্তু আমার ভাইয়ের দিকে আঙুল তুললে আমি মেনে নেব না।”

আদ্রিশ বুঝতে পারছে এখানে রুশার ভাইয়ের প্রতি বিশ্বাস, ভালোবাসা, ইমোশন জড়িয়ে আছে।
“আচ্ছা, ফাইন। আমি প্রমাণ করব। এতে তোমার সাহায্য প্রয়োজন। সাজ্জাদ চৌধুরীর মোবাইল, ল্যাপটপ এগুলো প্রয়োজন।”

“ভাইয়ার মোবাইল এক্সিডেন্টে শেষ। আর ল্যাপটপে কিছু পাইনি। আমি চেক করেছি।”

“আর পার্সোনাল নোটবুক, ডায়েরি, কোন পেপার?”

“ওসব আমি খুঁজিনি।”

“গুড!”

আদ্রিশ অন্যদিকে ঘুরে ঠোঁট কামড়ে ধরে কিছুক্ষণ ভাবল।

.

আদ্রিশ সাজ্জাদের ডাইরির একটা পেজ খুলে ভ্রু কুঁচকে চেয়ে আছে। পেজটা ছিড়ে ডাইরি জায়গা মতো রেখে দিল। আদ্রিশ খুব সাবধানে ছেড়া কাগজটা পকেটে রাখল।
গাড়ি ড্রাইভ করতে করতে একটা কথাই ভাবছে, “সাজ্জাদ চৌধুরী কাকে মানুষ কর‍তে পারেনি।”

চলছে…..

(রিচেক দেইনি।🤦‍♀️)