লাল নীল সংসার পর্ব-০১

0
351

#_সূচনা_পর্ব_
#_লাল_নীল_সংসার_
#_মারিয়া_রশিদ_

–” ভাইয়া! আজ আমার কলেজের বেতন জমা দেওয়ার লাস্ট ডেট। আর রেজিষ্ট্রেশনের টাকা দেওয়ারও শেষ সময় চলে এসেছে।”

বোন সাঝের এমন কথা শুনে বোনের দিকে তাকায় তার বড় ভাই শিশির। শিশির হালকা রাগী কন্ঠে বলে ওঠে,
–” আজ তোর বেতন জমা দেওয়ার লাস্ট ডেট, আর তুই এখন এসে আমাকে বলছিস?”

সাঝ মাথা নিচু করে বলে ওঠে,
–” সরি ভাইয়া! আসলে আমি বলবো বলবো করেও বলা হয়ে ওঠে নি।”

শিশির পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করে দুইহাজার টাকা সাঝের হাতে দিয়ে বলে ওঠে,
–” রেজিষ্ট্রেশন ফি কতদিনের মাঝে জমা করতে হবে?”

সাঝ ছোট্ট গলায় বলে ওঠে,
–” দুই দিনের মাঝে।”

শিশির সোফা থেকে উঠতে উঠতে বলে ওঠে,
–” ঠিক আছে। চিন্তা করিস নাহ। পেয়ে যাবি ইনশাআল্লাহ।”

শিশির কথা গুলো বলে নিজের মাকে বলে বেরিয়ে যায় অফিসে যাওয়ার উদ্দেশ্যে। শিশির রাস্তায় দাড়িয়ে আছে বাসের জন্য। কিন্তু এখনও বাস আসে নি। আজকাল বাস আসতে বড্ড লেট করছে। অফিসেরও দেরি হয়ে যাচ্ছে। বিরক্ত লাগছে শিশিরের। দেরি হলেই বসের ঝাড়ি শুনতে হবে। একটা কম্পানিতে বসের এসিস্ট্যান্ট হিসাবে জব করছে সে। খুব বেশি মাইনে সে পায় নাহ, এই দিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয় তাকে। মানিব্যাগ টাহ বের করে শিশির। একবার মানিব্যাগের দিকে তাকিয়ে দেখে কি অবস্থা হয়েছে তার মানিব্যাগের। ভার্সিটির দ্বিতীয় বর্ষে কিনেছিলো মানিব্যাগ টাহ। উপরের চামড়া উঠে গিয়ে বাজে দেখায়। কিন্তু, নিজের জন্য টাকা খরচ করে মানিব্যাগ কেনার ইচ্ছে তার জাগে নাহ। মানিব্যাগটাহ খুলতেই দেখে একটা পঞ্চাশ টাকার নোট, দুইটা একশ টাকার নোট, দুইটা দশ টাকার নোট আছে। আগামীকাল বেতন দেওয়া হবে। ততোসময় এইটাই সম্বল। সাঝকে তার রেজিষ্ট্রেশনের টাকা দিতে হবে। সংসারের বাজার আছে, বাবার ঔষধ কত খরচ। আগামীকাল টাকাটাহ পেলে অনেক কাজই আছে। এইসব ভাবতে ভাবতে বাস আসতেই শিশির বাসে উঠে যায়।


সাঝ মাকে বলে ভাইয়ের দেওয়া টাকা নিয়ে কলেজের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ে। সাঝ কলেজে সব সময় হেঁটেই যাওয়া আসা করে। কলেজে হেটে যেতে আসতে ১৫ মিনিটের মতো লাগে। রিক্সায় যেতে লাগে ৫ মিনিট। কিন্তু, নিজেদের আর্থিক অবস্থা বুঝে সে। তাই কখনো রিকশায় যাওয়া আসা করে নাহ। হেঁটেই যাওয়া আসা করে। সাঝ এইবার ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে। বেশ মেধাবী ছাত্রী সে। বিজ্ঞান বিভাগে পড়াশোনা করছে। যেখানে সবাই অনেক কোচিং, প্রাইভেট পড়ে, সেখানে সাঝ একটা মাত্র কোচিং এ পড়াশোনা করে টপ তিনজন স্টুডেন্টের মাঝে নিজের অবস্থান রাখতে পারে। সাঝের স্বপ্ন একদিন সে মস্ত বর ডাক্তার হবে। কিন্তু, তার পরিবার কি এতো ব্যয় করতে পারবে? তা পারুক বা নাহ পারুক, স্বপ্ন দেখতে তো আর বাঁধা নাই।

সাঝ কলেজে এসেই আগে অফিস কক্ষে গিয়ে নিজের বেতন জমা দিয়ে ক্লাসে আসতেই দেখে তার বান্ধবীরা কি নিয়ে জানি আলোচনা করছে। সাঝ তার সব থেকে কাছের বান্ধবী কোয়েলের পাশে বসে বলে ওঠে,
–” কিরে কি নিয়ে আলোচনা করছিস তোরা?”

কোয়েল সাঝের দিকে তাকিয়ে হাসি মুখে বলে ওঠে,
–” আরে, পরশু দিন রুহির জন্মদিন। ওদের বাড়িতে অনেক বড় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হচ্ছে ওর জন্মদিন উপলক্ষে। ও আমাদের সবাইকে দাওয়াত দিয়েছে। আমরা সেইটা নিয়েই আলোচনা করছি।”

রুহিও সাঝের দিকে তাকিয়ে হেসে বলে ওঠে,
–” সাঝ! তোরও দাওয়াত থাকলো। অবশ্যই আসবি কিন্তু।”

কথাটাহ শুনতেই সাঝের মুখটাহ মলিন হয়ে আসলেও মুখে হাসি ফুটিয়ে বলে ওঠে,
–” আমি জানি নাহ আসতে পারবো কি নাহ। তবে তোর জন্মদিনের জন্য অনেক অনেক শুভেচ্ছা রইলো।”

রুহি একটু জেদি কন্ঠে বলে ওঠে,
–” আমি কোনো কথা শুনতে চাই নাহ সাঝ! তোকে আসতেই হবে।”

সাঝ কিছু বলার আগেই কোয়েল বলে ওঠে,
–” তুই তো কখনোই কোথাও যেতে চাস নাহ সাঝ। এমন কেন তুই? কতো মজা হয়, জানিস? কয়েক দিন আগে কলেজের পিকনিকেও গেলি নাহ। এখন অন্তত রুহির জন্মদিনের অনুষ্ঠানে আয়। অনেক মজা হবে।”

সাঝ একটু হেসে বলে ওঠে,
–” আমি চেষ্টা করবো। কিন্তু, কোনো নিশ্চয়তা দিতে পারছি নাহ।”

রুহি একটু গম্ভীর কন্ঠে বলে ওঠে,
–” দেখ সাঝ, এইবার যদি তুই নাহ আসিস তাহলে আমরা সবাই তোর উপর খুব রাগ করবো বলে দিলাম।”

সাঝ কিছু বলতে যাবে তার আগেই ক্লাসে স্যার চলে আসায় ক্লাসে মন দেয় ওরা। সাঝ কখনোই কোথাও যেতে চাই নাহ। তার ভাইকে বললে হয়তো নাহ করবে নাহ। টাকার ব্যবস্থাও করে দিবে। কিন্তু সাঝ চায় নাহ। অনেক বুদ্ধিমাতি সে। তার প্রতি মাসে কলেজ ফি আর একটা কোচিং দিয়ে ২৭০০ টাকা লাগে। এইসব অনুষ্ঠান পিকনিকে যোগ দিতে গেলে হাজার হাজার টাকা চলে যায়। এই টাকা এইভাবে খরচ নাহ করলে তার পরিবারের অনেক উপকার হবে কাজেও লাগবে। তাই সাঝ কখনোই কোথাও যেতো চায় নাহ।


শিশির অফিসে পৌঁছে নিজের ডেস্কে বসে কাজ শুরু করতেই টেবিলের উপর থাকা টেলিফোন বেজে উঠে। শিশির রিসিভার টাহ কানে নিয়ে বলে ওঠে,
–” Hello! Shishir is speaking.”

–” Mr. Shishir come in my chamber.”

–” Yes, sir.”

রিসিভার টাহ রেখেই বসের কেবিনে চলে যায়। শিশির দরজা নক করতেই তার বস মি. সাজিদ ভেতরে যেতে বলে। শিশির মি. সাজিদের সামনে দাড়াতেই তিনি বলে ওঠে,
–” বসুন, মি. শিশির।”

শিশির বসতেই মি. সাজিদ বলে ওঠে,
–” মি. শিশির আপনি প্রায় লেট করে আসেন। আপনি আমার এ্যাসিসট্যান্ট, আমি আসার আগে আপনাকে অফিস এ্যাটেন্ড করতে হবে। আগে তো খুব পানচুয়াল ছিলেন। কিন্তু, আজকাল আপনি এমন করছেন কেন আমি জানি নাহ। আপনি যদি নিজেকে সামলিয়ে নাহ নেন তাহলে, সরি টু সে, আমি নিউ এ্যাসিসটয়ান্ট দেখতে বাধ্য হবো।”

শিশির উদগ্রীব হয়ে বলে ওঠে,
–” সরি স্যার। আর কখনো এমন হবে নাহ। আমি সঠিক সময়ে আসার চেষ্টা করবো। আসলে আজকাল বাসটাহ একটু লেট টাইমে ছাড়ছে, আর ঢাকা শহরের জ্যাম সম্পর্কে তো আমরা সবাই জানি।”

মি. সাজিদ গম্ভীর কন্ঠে বলে ওঠে,
–” তাহলে, বাসে কেন আসেন? ট্যাক্সি বা সিএনজি করে আসবেন। আর এতো জ্যাম যখন জানেন, তাহলে আরও আর্লি বের হবেন। মি. শিশির আমি জানি, আপনি কাজ খুব ভালো করেন। অনেক মন দিয়ে কাজ করেন। তাই আমি আপনাকে খুব পছন্দ করি। কিন্তু, আপনি যদি টাইম মেইনটেইন নাহ করেন। তাহলে যাহ বললাম তাই। মাথায় রাখবেন।”

শিশির মাথা নিচু করে বলে ওঠে,
–” জি, স্যার!”

–” যান, এইবার নিজের কাজ করুন।”

শিশির আর কোনো কথা নাহ বলে কেবিন থেকে বেরিয়ে গিয়ে নিজের ডেস্কে বসে। আসলেই আজকাল সে দেরি করে অফিসে আসছে। আসলে বাস লেট টাইমে ছাড়ছে আজকাল, তার উপর ট্যাক্সি, সিএনজি তে আসতে গেলে অনেক টাকা চলে যায়। এতো টাকা যাতায়াতে খরচ করলে কেমন চলবে তার সংসার। কিন্তু, তাও এই চাকরি টাহ কোনোভাবেই হারালে চলবে নাহ। পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী সে। এই চাকরি চলে গেলে পানিতে ভেসে যাবে তার পরিবার। শেষ হয়ে যাবে তার পরিবার। নাহ, কোনোভাবেই এই চাকরি হারানো চলে নাহ। এমনিতেই এই চাকরি করেই সংসার চালাতে তার হিমশিম খেতে হচ্ছে। আর চাকরি চলে গেলে তো কোনো কথায় নেই। সংসার খরচ, ছোট ভাইবোনের পড়ালেখা, বাবা-মায়ের ঔষধ সব মিলিয়ে অনেক খরচ। তার উপর আজকাল চাকরির যে বাজার, শিক্ষিত বেকার ছেলের সংখ্যা দিন দিন এতো বেড়ে চলছে। সবই তো দেখছে সে। নাহ, যে করেই হোক তাকে এই চাকরি টাহ টিকিয়ে রাখতে হবে। মুখমণ্ডলে একটু হাত বুলিয়ে কাজে হাত লাগায় শিশির।


ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে আসে আদনান। এখন তাকে আরও তিনটা টিউশন করতে যেতে হবে, তারপর বাড়ি যাবে। আজ কেন জানি বড্ড ক্লান্ত লাগছে তার। তাও, ক্লান্তিকে পেছনে ফেলে ছুটতে হবে তাকে। বড় ভাই একা একা সংসার খরচ মেটাতে থাকে। তাকে বারন করেছিলো, কষ্ট হয়ে গেলে টিউশন নাহ করতে। মন দিয়ে লেখা পড়া করার জন্য। কিন্তু একা বড় ভাইয়ের উপর আর কতো চাপানো যায়? একটু টিউশনি করে যদি কিছু খরচ চালিয়ে নেওয়া যায় তাহলে মন্দ কি?
অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্র আদনান। নিজেরও কিছু খরচ থাকে তার। সব সময় কি আর বড় ভাইয়ের কাচে হাত পাতা যায়? টিউশন করে নিজের খরচ মিটিয়ে সংসারে টুকিটাকি দিতে পারলে তো সংসারেরও ভালো আর বড় ভাইয়ের উপর চাপ টাহও একটু কমলো। এমন সময় ফোন কল আসতেই আদনান ফোন বের করে দেখে তার বড় ভাই শিশির কল করেছে। আদনান কল টাহ রিসিভ করে বলে ওঠে,
–” হ্যালো, ভাইয়া!”

শিশির একটু রাগী কন্ঠে বলে ওঠে,
–” আসসালামু আলাইকুম, আদনান!”

জিহবা কামড়িয়ে ধরে আদনান। খানিকটা লজ্জাও পেলো। তাও নিজেকে সামলিয়ে বলে ওঠে,
–” ওয়ালাইকুম আসসালাম, ভাইয়া!”

শিশির ভাইয়ের অবস্থা বুঝতে পেরে মুচকি হেসে বলে ওঠে,
–” কোথায় তুই?”

আদনান রাস্তা দিয়ে হাটতে হাটতে বলে ওঠে,
–” এইতো ভার্সিটি থেকে বের হলাম মাত্র। টিউশনি করতে যাবো।”

শিশির একটু গম্ভীর কন্ঠে বলে ওঠে,
–” দুপুরে নাহ খেয়ে?”

–” নাহ ভাইয়া! আমি সিংগাড়া বাহ কিছু একটা খেয়ে নিবো।”

–” টিউশনে বিকালে গেলে সমস্যা?”

–” নাহ! সমস্যা নেই। কিন্তু, আমি ভাবছিলাম….”

কথা শেষ করতে পারে নাহ আদনান। তার আগেই গম্ভীর ভাবে শিশির বলে ওঠে,
–” কিছু ভাবতে হবে নাহ তোকে। এখন সোজা বাসয় যাবি, গোসল করবি, নামাজ পড়বি, খাবার খাবি, তারপর যাহ করার করবি। ঠিক আছে?”

আদনান হাঁটা থামিয়ে বলে ওঠে,
–” ঠিক আছে, ভাইয়া!”

শিশির মুচকি হেসে বলে ওঠে,
–” হুম! আল্লাহ হাফিজ।”

–” তুমি খেয়েছো?”

–” নাহ, এখন যাচ্ছি।”

–” ওহ! আচ্ছা, রাখছি। আল্লাহ হাফিজ।”

ফোন কেটে দেয় আদনান। আদনান ফোনের দিকে তাকিয়ে একটু হাসে। যেইদিনই সে চিন্তা করে যে একবারে টিউশন শেষ করে বাসায় ফিরবে সেইদিনই ভাইয়ের ফোন চলে আসে, আর সেম অর্ডার করে। ভাইয়ার কথা অমান্য করতে পারবে নাহ সে। তাই আর বেশি কিছু নাহ ভেবে, বাস ধরার জন্য হাটা শুরু করে।

এইদিকে শিশির ভাইয়ের সাথে কথা বলা শেষ করে ক্যান্টিনের দিকে চলে যায়। ১০ টাকা দিয়ে দুইটা সিংগাড়া আর ৫ টাকা দিয়ে একটা কলা কিনে খেয়ে নেয়। সাধারণত ১০০ টাকার মাঝে ভাত তরকারি পাওয়া যায় ক্যান্টিনে। কিন্তু এখন পকেটের অবস্থা ভালো নাহ। তাই ১৫ টাকা দিয়ে চালিয়ে নিচ্ছে সে। কারন একদম হাত ফাঁকা হয়ে গেলে আর এক সমস্যা। কখন কোন সমস্যা হয় বলা তো যায় নাহ। সাময়িক কিছু টাকা, হোক তা একশ দুইশ, টাকা হাতে থাকা ভালো। নাই মামার থেকে কানা মামাই ভালো। কিন্তু মাঝে মাঝে ভাই টাহ কে একটু ফোন দিয়ে শুনতে হয়। নাহলে এই যে, দুপুরে তার মতো আধপেটা খেয়ে থাকতো তার আদরের ভাই। নিজের যাহ হবে হোক, কিন্তু পরিবারকে যা তা ভাবে দেখতে পারবে নাহ সে। তাই নিজে আধপেটা খেয়ে থাকলেও ভাই কে বাড়ি পাঠিয়ে দিলো ভরপেট খাওয়ার জন্য।


রাত হয়ে গেছে। সাঝ নিজের রুমে পড়াশোনা করছে। একটা ছোট্ট ফ্লাট নিয়ে থাকে ওরা। ঢাকা শহরে ছোট্ট ফ্লাট গুলোরও যা মূল্য, বাবারে! ওদের ছোট্ট ফ্লাটে দুইটা মাঝারি সাইজের বেডরুম আছে, যার একটাতে ওদের বাবা-মা থাকে অন্যটাতে শিশির আর আদনান থাকে। আর একটা ছোট্ট সাইজের রুম আছে যেখানে সাঝ থাকে, মাঝে একটা মাঝারি রকমের রুম, যেখানে একটা চার চেয়ারের ডাইনিং টেবিল, দুইটা সোফা, আর একটা ছোট্ট টিভি আছে, পাশেই একটা ছোট কিচেন রুম, আর মাঝের রুমের একপাশে একটা বাথরুম আর একটা বারান্দা। আহিয়া রহমান ( ওদের মা ) রান্না ঘরের কাজকর্ম করছেন, আজিজ রহমান ( ওদের বাবা ) টিভি দেখছেন। এমন সময় কলিং বেলের আওয়াজে আহিয়া রহমান এগিয়ে এসে দরজা খুলতেই দেখে শিশির এসেছে। শিশির নিজের মাকে দেখে বলে ওঠে,
–” আসসালামু আলাইকুম, মা!”

আহিয়া রহমান মুচকি হেসে বলে ওঠে,
–” ওয়ালাইকুম আসসালাম, বাবা!”

শিশির জুতা খুলতে খুলতে বলে ওঠে,
–” সাঝ, আদনান ওরা কোথায়?”

আহিয়া রহমান শিশিরের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” সাঝ পড়াশোনা করছে আর আদনান এখনও বাসায় ফেরে নি।”

–” ওহ!”

শিশির ভেতরে আসতেই বাবাকে সোফায় বসা দেখে বলে ওঠে,
–” আসসালামু আলাইকুম, আব্বু!”

আজিজ রহমান শিশিরের দিকে তাকিয়ে হেসে বলে ওঠে,
–” ওয়ালাইকুম আসসালাম!”

–” তোমার শরীর কেমন আছে?”

–” আলহামদুলিল্লাহ! যাহ, গিয়ে হাত, মুখ ধুয়ে, জামা কাপড় পাল্টে নে।”

–” জি আব্বু!”

শিশির নিজের রুমে গিয়ে জামা পাল্টে লুঙ্গি পরে গলায় একটা গামছা ঝুলিয়ে নিয়ে আদনান কে ফোন করতেই ওপাশ থেকে রিসিভ করে আদনান বলে ওঠে,
–” আসসালামু আলাইকুম, ভাইয়া!”

–” ওয়ালাইকুম আসসালাম! কোথায় তুই?”

আদনান রাস্তার পাশে দাড়িয়ে বলে ওঠে,
–” মাত্র টিউশন শেষ করে বের হলাম ভাইয়া। এখনই বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিবো।”

–” আচ্ছা! আয়। সাবধানে আসিস।”

আদনান মুচকি হেসে বলে ওঠে,
–” জি ভাইয়া। রাখছি, আল্লাহ হাফিজ!”

–” আল্লাহ হাফিজ।”
শিশির ফোন কেটে বাথরুমে চলে যায় হাত মুখ ধোয়ার জন্য। শিশির গামছা দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে নিজের রুমে চলে আসতেই সাঝ দরজার কাছে দাঁড়িয়ে বলে ওঠে,
–” ভাইয়া আসবো?”

শিশির দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে সাঝ হাতে একটা গ্লাস নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। শিশির মুচকি হেসে বলে ওঠে,
–” তোর আমার রুমে আসার জন্য অনুমতি লাগবে, পুচকি?”

সাঝ মুচকি হেসে ভেতরে আসতে আসতে বলে ওঠে,
–” নেওয়া ভালো।”

শিশির আর কিছু বলে নাহ, একটা গেন্জি পরে নেয়। সাঝ হাতের গ্লাস টাহ এগিয়ে দিয়ে বলে ওঠে,
–” নাও, অনেক গরম পড়েছে। সারাদিন অনেক খাটুনিও গেছে হয়তো। এই লেবুর শরবত টাহ খেয়ে নাও।”

শিশির মুচকি হাসি দিয়ে গ্লাস টাহ হাতে নিয়ে বলে ওঠে,
–” খাটুনি তো তোরও যায়। আই, ভাগাভাগি করে খাই।”

সাঝ হেসে বলে ওঠে,
–” নাহ! তুমিই খাও।”

শিশির হেসে দিয়ে সাঝ কে টেনে বিছানায় বসিয়ে নিজের পাশে বসে বলে ওঠে,
–” আমার একটু গ্যাসের সমস্যা হচ্ছে। এতো টাহ খেলে আরও বাড়তে পারে। তার থেকে আমরা আধাআধি খাই, তাহলে আমাদের দুইজনের উপকারও হবে, আর আমার গ্যাসের সমস্যা বাড়ার কোনো উপায়ও থাকবে নাহ। ভালো হবে নাহ বল?”

শিশিরের কথা শুনে সাঝ হেসে দেয়। শিশিরও হেসে গ্লাস টাহ সাঝের দিকে এগিয়ে দিয়ে নিজের হাতেই আধা গ্লাস শরবত খাইয়ে দেয় আদরের ছোট্ট বোন কে। তারপর নিজে শরবত টুকু খেয়ে নিয়ে গ্লাস টাহ সাঝের হাতে দিয়ে বলে ওঠে,
–” পড়ালেখা কেমন চলছে?”

–” আলহামদুলিল্লাহ! ভাইয়া।”

শিশির এগিয়ে এসে সাঝের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে ওঠে,
–” অনেক ভালো করে পড়ালেখা করতে হবে তোকে। অনেক ভালো রেজাল্ট করতে হবে ইনশাআল্লাহ। মেডিকেলে চান্স পেতে হবে, অনেক বড় ডাক্তার হতে হবে আমার বোনকে। কেমন?”

সাঝ মুচকি হেসে বলে ওঠে,
–” ইনশাআল্লাহ, ভাইয়া! কিন্তু, ভাইয়া ডাক্তারি পড়াশোনাই যে অনেক খরচ।”

শিশির মুচকি হেসে বলে ওঠে,
–” তোকে এইগুলো নিয়ে কে ভাবতে বলেছে? হুম? এইসব নিয়ে একদম ভাববি নাহ। তুই শুধু পড়ালেখা টাহ ভালো ভাবে কর। আমি নিজের রক্ত বেঁচে হলেও তোকে ডাক্তারি পড়াবো।”

সাঝের চোখ ভরে আসে। তার ভাইটা এতো ভালো কেন? সাঝ শিশির কে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেয়। শিশির মুচকি হেসে নিজের বােন কে জড়িয়ে ধরে।

কিছু সময় পর আদনান চলে আসলে হাত মুখ ধুয়ে শিশিরের কথায় নামায আদায় করে নেয়। এই আদনান টাহ শিশির যে কয়বার বলবে সেই কয়বারই নামায পড়বে। নিজে থেকে এক ওয়াক্ত নামাযও পড়ে নাহ। শিশিরকে বলে বলে পড়াতে হয়। এইদিক দিয়ে সাঝ খুব ভালো। আযান দিলেই নামায আদায় করে নেয়।

সবাই খাবার টেবিলে বসে আছে। আহিয়া রহমান শিশিরকে এক টুকরো পেটির মাছ তুলে দিতেই শিশির মাছটাহ সাঝের প্লেটে দিয়ে দেয়। সাঝ কিছু বলতে যাবে তার আগেই শিশির বলে ওঠে,
–” আমার থেকে তোর বেশি মাছ খাওয়া প্রয়োজন। তোকে অনেক পড়ালেখা করতে হয়। তাই মাছের দরকার বেশি।”

সাঝ শিশিরের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” কিন্তু, ভাইয়া মা তো আমার জন্য মাছ রেখেছে।”

–” কিন্তু তুই তো গাদার মাছ খুব একটা ভালোভাবে খেতে পারিস নাহ। তোর মাছটাহ আমিই খাচ্ছি।”

–” কিন্তু, তুমি তো পেটির মাছ বেশি পছন্দ করো।”

–” কিন্তু, তার থেকেও বেশি পছন্দ করি, আমার বোনের পেটির মাছ খাওয়া দেখতে।”

শিশির ওর মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” মা! আমাকে একপিস গাদার মাছ দাও।”

আহিয়া রহমান মুচকি হেসে শিশির কে এক পিস মাছ তুলে দেন। আদনান, আজিজ রহমান, আহিয়া রহমান, সাঝ সবার মুখেই মুচকি হাসি বিদ্যমান।

#_চলবে………..🌹