লাল নীল সংসার পর্ব-০৬

0
161

#_লাল_নীল_সংসার_
#_মারিয়া_রশিদ_
#_পর্ব_৬_

২ দিন পর….
শিশির অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে সাঝের রুমে আসে। সাঝ এই দুইদিনে প্রায় সুস্থ হয়ে গেছে। এই দুই দিন সে কোচিং যায় নি। কিন্তু, বাসায় সব সময় পড়ালেখা করছে। কোয়েল সাঝকে কোচিং এর সব নোট দিয়ে গেছে। শিশির এসে দেখে সাঝ বিছানায় বসে বালিশের সাথে হেলান দিয়ে বই পড়ছে। শিশির একটা মুচকি হাসি দিয়ে সাঝের সামনে বসতেই সাঝ একটু হাসে। শিশির সাঝের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে ওঠে,
–” এখন শরীর কেমন লাগছে?”

সাঝ একটু উৎসাহ নিয়ে বলে ওঠে,
–” ভাইয়া! আমি এখন পুরোপুরি সুস্থ। তাও তোমরা শুধু শুধু আমাকে এইভাবে পুতুল সাজিয়ে বসিয়ে রেখেছো।”

সাঝের কথা শুনে শিশির হেসে দেয়। সাঝ হালকা ভ্রু কুচকে ভাইয়ের দিকে তাকায়। সে হাসির কি বললো? শিশির মুখে হাসি রেখেই সাঝের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” তুই তো আমাদের কাছে একটা পুতুলই পাগলী। সবার আদরের পুতুল।”

শিশিরের কথা শুনে সাঝ একটু হাসে। সাঝ একটু আহ্লাদী সুরে বলে ওঠে,
–” ভাইয়া! আজ কোচিং যায়, প্লিজ।”

শিশির একটু সোজা হয়ে বসে বলে ওঠে,
–” আজকের দিন টাহ থাক। আজ আর একটু রেস্ট নে। আগামীকাল থেকে যাস ইনশাআল্লাহ!”

সাঝ কিছু সময় চুপ করে থেকে মুখে হাসি টেনে বলে ওঠে,
–” আচ্ছা! ঠিক আছে।”

শিশির সাঝের গাল টেনে বলে ওঠে,
–” এইতো আমার লক্ষী বোন। আচ্ছা! তুই পড়, আমি অফিস যাবো।”

–” ঠিক আছে।”

শিশির চলে যায়। সাঝ আবার পড়তে থাকে। শিশির মাঝের রুমে আসতেই আজিজ রহমান নিজের রুম থেকে বেরিয়ে এসে শিশিরের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” অফিসের জন্য বের হচ্ছিস, বাবা?”

শিশির আজিজ রহমানের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” জি, আব্বু! কিছু বলবেন?”

আজিজ রহমান একটু ভেবে বলে ওঠে,
–” হ্যা! কিছু কথা ছিলো। অফিসের কি দেরি হয়ে যাবে?”

–” নাহ! আব্বু! সমস্যা নেই বলেন।”

আজিজ রহমান সোফায় গিয়ে বসলে শিশিরও তার পাশে গিয়ে বসে। আজিজ রহমান শিশিরের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” জমি বিক্রির ব্যাপারে খবর আছে।”

শিশির একটু নড়েচড়ে বসে বলে ওঠে,
–” কি খবর, আব্বু?”

–” চল্লিশ হাজার টাকা পর্যন্ত দাম উঠছে।”

শিশির একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে ওঠে,
–” বিক্রি করে দাও আব্বু। বাকি দশ হাজারের ব্যবস্থা হয়ে গেছে।”

আজিজ রহমান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি প্রদান করে নিজের রুমে চলে যায়। শিশির নিজের বাবার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে একটা বড় নিশ্বাস নিয়ে মাকে বলে অফিসের জন্য বেরিয়ে যায়। শিশির হাঁটতে হাঁটতে ফার্মগেটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, বাসে উঠার জন্য। নিজের বাবার কথা ভাবছে শিশির। তানার নিশ্চয় কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু, কি করবে শিশির? তার যে আর কোনো উপায় নেই। নিজের উপরও রাগ হচ্ছে শিশিরের। এতো কষ্ট করেও বাবা মাকে কষ্ট পেতে হচ্ছে। কেমন সন্তান সে? ভাবতে ভাবতে বাস স্টপে এসে দাড়িয়ে অপেক্ষা করতে থাকে শিশির। এমন সময় পাশ থেকে মিষ্টি মেয়েলি কন্ঠে কেউ বলে ওঠে,
–” আরে আপনি?”

শিশির পাশে তাকিয়ে দেখে ছোয়া দাড়িয়ে আছে মিষ্টি হেসে। মেয়েটার হাসি টাহ আসলেই সুন্দর। শিশিরের মুখে হাসি ফুটে উঠে। তারপর বলে ওঠে,
–” জি! বাসের জন্য অপেক্ষা করছি।”

–” অফিস যাচ্ছেন?”

–” জি! আপনি?”

মেয়েটি সহাস্যে বলে ওঠে,
–” একটু কাজে যাচ্ছি।”

–” বাসে যাবেন?”

–” জি!”

–” ওহ!”

এমন সময় বাস চলে আসতেই ছোয়া আর শিশির বাসে উঠে যায়। ছোয়া আজও জানালার পাশে বসেছে। শিশির একবার ভাবলো তার পাশে বসার জন্য কিন্তু সে যদি কিছু মনে করে তাই আবার পেছন দিকে যেতে নিলেই ছোয়া বলে ওঠে,
–” আমার পাশে বসলে কি আপনার কোনো সমস্যা হবে?”

শিশির নেতিবাচক ভাবে মাথা নাড়িয়ে বলে ওঠে,
–” আমার কোনো সমস্যা নেই। আপনার সুবিধার জন্যই অন্য সিটে বসছিলাম।”

ছোয়া মুচকি হেসে বলে ওঠে,
–” আমার কোনো সমস্যা নেই। বসতে পারেন।”

–” ধন্যবাদ!”

শিশির ছোয়ার পাশে বসতেই ছোয়া শিশিরের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” সাঝের কি অবস্থা?”

শিশির সহাস্যে বলে ওঠে,
–” আলহামদুলিল্লাহ! ভালো। আজ কোচিং যেতে চাইছিলো, নিষেধ করে এলাম। আর একদিন রেস্ট করুক।”

–” ভালো করেছেন।”

এমন সময় ছোয়ার ফোন বেজে উঠতেই ছোয়া ফোন রিসিভ করে বলে ওঠে,
–” আসসালামু আলাইকুম, আম্মা!”
–”…………”
–” আম্মা! তুমি চিন্তা করো নাহ। আমি কাজ শেষ হলেই চলে আসবো।”
–”…………….”
–” এতো চিন্তা কেন করছো? কি করবে ওনারা আমার? আমার বাবা নেই জন্য, আমরা কি অসহায়? একদম নাহ আম্মা, আমার বাবা আমাকে এই শিক্ষা দেয় নি।”
–”………”
–” আমি এখন কাজ টাহ শেষ নাহ করে বাসায় ফিরবো নাহ আম্মা! তুমি চিন্তা করো নাহ।”
–”……….”
–” আমাকে মাফ করো আম্মা! আমি এই ব্যাপারে তোমার কোনো কথাই শুনবো নাহ। বাদ দাও, স্পন্দন স্কুলে গেছে?”
–”……………”
–” ঠিক আছে! তাহলে তুমি রেস্ট নাও। দুপুরে কিছু রান্না করতে হবে নাহ। আমি রান্না করে এসেছি। তোমাকে আর আগুনের কাছে যেতে হবে নাহ। রাইস কুকারে শুধু ভাত বসাবে। আর আমি এসে রাতের রান্না করে নিবো।”
–”…………..”
–” যাহ বললাম তাই করো আম্মা! আমি তো আর সব সময় করি নাহ, তাই নাহ? তোমার শরীর টাহ ভালো নেই।”
–”……………..”
–” আচ্ছা! সাবধানে থেকো। আল্লাহ হাফিজ!”

ছোয়া ফোন কেটে ব্যাগে রেখে দেয়। শিশির এতো সময় চুপচাপ মেয়েটির কথা শুনছিলো। প্রথম কথা গুলো শুনে কিছু বুঝতে পারে নি, কিন্তু পরবর্তী কথাগুলো খুব ভালো লেগেছে তার। বোঝায় যায় মেয়েটি অনেক সাংসারিক আর নিজের মায়ের অনেক খেয়াল রাখে। শিশির ছোয়ার দিকে তাকিয়ে আমতা আমতা করে বলে ওঠে,
–” আন্টি কি অসুস্থ?”

ছোয়া শিশিরের দিকে একপলক তাকিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে মলিন কন্ঠে বলে ওঠে,
–” হ্যা! আসলে, আম্মার জ্বর হয়েছে। আমার বাবা মারা যাওয়ার পর আমার আম্মাই সব। তাই, সব সময় আম্মার জন্য চিন্তা হয় আমার।”

–” আপনার ছোট ভাইয়ের নাম কি স্পন্দন?”

ছোয়া মুচকি হেসে বলে ওঠে,
–” জি!”

শিশিরও মুচকি হেসে বলে ওঠে,
–” মাশাআল্লাহ! খুব সুন্দর নাম।”

ছোয়া একবার জানালা দিয়ে বাহিরে তাকায়। তারপর শিশিরের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” বলছি যে, আমার নামতে হবে এখানে। যদি একটু উঠে দাড়াতেন।”

শিশির ব্যস্ত ভাবে উঠতে উঠতে বলে ওঠে,
–” অবশ্যই।”

ছোয়া উঠে দাড়ালে, শিশির আবার বসে পড়ে। ছোয়া শিশিরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে ওঠে,
–” আসি। ভালো থাকবেন। আল্লাহ হাফিজ!”

শিশিরও হেসে বলে ওঠে,
–” আল্লাহ হাফিজ!”

ছোয়া নেমে যায় বাস থেকে। শিশির কি মনে করে জানালা দিয়ে ছোয়া কে দেখার চেষ্টা করে। কিন্তু, এর মাঝেই বাস আবার চলতে শুরু করেছে। ব্যস্ত রাস্তায় ছোয়াকে আর দেখা যাচ্ছে নাহ। শিশিরের মন টাহ কেমন জানি খারাপ হয়ে গেলো। পাশের সিট টাহ কেমন জানি খালি খালি লাগছে। একি? শিশির কি তাহলে ছোয়াকে মিস করছে নাকি? কিন্তু সে কেন তাকে মিস করবে? তাকে তো তার মিস করার কথা নাহ। তাহলে? না না, শিশির নিজেকে স্বাভাবিক করে নিয়ে ছোয়ার চিন্তা বাদ দিতে থাকে। নিজেকে নরমাল রাখার চেষ্টা করে। এমন সময় বাস তার গন্তব্য স্থানে চলে আসতেই, শিশির বাস থেকে নেমে অফিসের উদ্দেশ্যে হাটা শুরু করে।


–” ভাউ!”

কারোর এমন আওয়াজে কেঁপে উঠে আদনান। আদনান তাড়াতাড়ি পাশে তাকিয়ে শব্দের মালিককে দেখতেই মুখে হাসি ফুটে উঠে আদনানের। আর আদনান কে এরকম ভাবে কেঁপে উঠতে দেখে শব্দের মালিক স্নেহার হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাওয়ার মতো অবস্থা। আদনান প্রথমে একটু হাসলেও তারপর বিষয়টি খেয়াল হতেই কিছুটাহ ভ্রু কুচকে স্নেহার দিকে তাকিয়ে থাকে। স্নেহা নিজের হাসিটাহ কোনোরকম ভাবে একটু সামলিয়ে বলে ওঠে,
–” বেশি ভয় পেয়েছিস?”

কথাটি বলে আবার হাসিতে ফেটে পড়ে স্নেহা। আদনান কিছু টাহ রাগী কন্ঠে বলে ওঠে,
–” এতে এমন করে হাসার কি আছে? বদমাশ মেয়ে। এরকম ভাবে হঠাৎ করে এসে শব্দ করলে তো মানুষ ভয় পাবেই।”

স্নেহা নিজেকে কিছুটা সামলিয়ে নিয়ে বলে ওঠে,
–” উফ! বাবা! আজকাল হাসতে গেলেও কষ্ট হয়ে যায়।”

আদনান কিছুটাহ ব্যাঙ্গ করে বলে ওঠে,
–” হ্যা! তাতো হবেই। বড়লোকের আদরের দুলালি যে।”

স্নেহা কিছুটাহ মুখ ফুলিয়ে আদনানের দিকে তাকালে আদনান একটা দাঁত বের করা হাসি দিয়ে বলে ওঠে,
–” এমন করে তাকাস কেন, ককটেল সুন্দরী? আচ্ছা, এইসব বাদ দে। আগে বলেন ম্যাম, আপনার বিদেশ ঘুরা হলো? এতো তাড়াতাড়ি চলে এলেন কেন?”

স্নেহা কিছুটাহ বিরক্তি মাখা কন্ঠে বলে ওঠে,
–” আর বলিস নাহ। একটা বাজে সময় বিদেশে ঘুরতে গেছি। এখন যাওয়া টাই উচিত হয় নি। ভালোভাবে কোথাও ঘুরতেও পারি নি। আর দুই সপ্তাহ পর, ফাইনাল এক্সাম। ওখানে গিয়েও পড়তে হয়েছে, আর সেই জন্যই তাড়াতাড়ি চলে এলাম। এমনিও পড়ায় তাও অনেক গ্যাপ হয়ে গেছে।”

–” চিন্তা করিস নাহ। আমি সব গুলো ক্লাস এটেন্ড করেছি। তোকে নোট দিয়ে দিবো পড়ে নিস।”

স্নেহা একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলে ওঠে,
–” Thanks বেডা।”

এমন সময় কোথা থেকে রিয়াদ এসে ওদের পাশে বসে স্নেহার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” কিরে ককটেল সুন্দরী, চলে এলি? কি পরীক্ষার জন্য এতো তাড়াতাড়ি আসা লাগলো বুঝি?”

স্নেহা রিয়াদের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট উল্টো করে সম্মতিসূচক মাথা ঝাকায়। স্নেহার এমন ফেস দেখে রিয়াদ আর আদনান হেসে দেয়। ওদের হাসি দেখে স্নেহাও হেসে দেয়। স্নেহা আদনানের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” আগামীকাল নোট গুলো নিয়ে আসিস মনে করে।”

আদনান স্নেহার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” হুম! আনবো। তুই চিন্তা করিস নাহ।”

স্নেহা আদনানের দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দেয়। তারপর ওরা তিনজন একসাথে আড্ডা দিতে থাকে। কিছু সময় পর আদনান থেকে ওদের থেকে বিদায় নিয়ে ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে আসে। আজ অনেক দিন পর স্নেহাকে দেখে ওর মন টাহ অনেক ভালো হয়ে গেছে। স্নেহা বাবা, মায়ের একটাই মেয়ে। স্নেহার একটা বড় ভাই আছে। স্নেহা অনেক বড়লোক পরিবারের মেয়ে। ওদের বন্ধুমহলের মাঝে হয়তো স্নেহাই সব থেকে বেশি রিচ ফেমিলির মেয়ে। আবার স্নেহা দেখতেও মাশাআল্লাহ অনেক সুন্দরী। কিন্তু, এতো কিছু থাকতেও মেয়েটার মাঝে বিন্দু মাত্র কোনো অহংকার নেই। কোনো অমার্জিত চলা ফেরা নেই, পোশাকও পরে মার্জিত ভাবে। মাঝে মাঝে নামাজও পড়ে। আদনানের স্নেহাকে অনেক ভালো লাগে। কিন্তু, আদনান কখনো তার দিকে বন্ধুত্ব ছাড়া অন্য কোনো ভাবনাই আনতে চাই নাহ। কিন্তু, আদনানের মাঝে মাঝে মনে হয়, ও একটু বেশিই স্নেহাকে নিয়ে ভাবে। কিন্তু, আদনান ভাবতে চায় নাহ। কিন্তু, আদনান কি স্নেহা কে নিয়ে তাও ভাবে নাহ? এই যে স্নেহা বিদেশ গিয়ে তিন সপ্তাহর মতো থেকে এলো, আদনান কি তাকে মিস করে নি? অবশ্যই করেছে। মাঝে মাঝে খুব কান্নাও পেতো। কিন্তু, আদনান কখনোই এইসব প্রোশ্রয় দেয় নাহ। কারন ওদের দুই পরিবারের মাঝে অনেক ফারাক। বুঝে আদনান, তাই নিজেকে বেশি আস্কারা সে দেয় নাহ।

আদনান হাঁটতে হাঁটতে একটা ঘড়ির দোকানের সামনে দাড়িয়ে যায়। আদনানের কাছে এখন ছয় হাজার টাকা আছে। ওর টিউশনির টাকা। ভাইয়া বলেছে, কাকার টাকার নাকি সব ব্যবস্থা হয়ে গেছে। আর টাকা নাকি লাগবে নাহ। তাই জমানো টাকা রেখে দিয়ে নতুন পাওয়া টিউশনির টাকা গুলো ভাইয়া নেয় নি।

আদনান ঘড়ির দোকানের সামনে দাড়িয়ে ভাবলো সাঝের জন্য একটা ঘড়ি কেনা যাক। বোন টাহ কখনোই কোনো কিছু মুখ ফুটে চায় নাহ। দুই সপ্তাহ পর আদনানের অনার্স তৃতীয় বর্ষের ফাইনাল এক্সাম। তার মাঝামাঝিতেই সাঝের এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হবে। পরীক্ষার সময় একটা ঘড়ির খুব দরকার হবে। এসএসসি পরীক্ষার সময় সাঝকে একটা ঘড়ি ভাইয়া কিনে দিয়েছিলো। সেইটা ভালো আছে কি নাহ কে জানে? আর তাছাড়া এইচএসসি পরীক্ষা উপলক্ষে আদনান তো একটা ঘড়ি দিতেই পারে। আর বেশি কিছু ভাবে নাহ আদনান। ভেতরে গিয়ে সাঝের জন্য পাঁচশ টাকা দিয়ে একটা ঘড়ি কিনে নেয় আদনান। নিজের জন্য সাতশো টাকা দিয়ে একটা ঘড়ি কিনে। আর ভাইয়ার জন্য ছয়শো টাকা দিয়ে একটা মানিব্যাগ। সেইদিন যখন তার জমানো টাকা ভাইয়া মানিব্যাগে রাখছিলো, তখন আদনান ভাইয়ার মানিব্যাগ টাহ দেখে কষ্ট পেয়েছিলো। কেমন ছাল চামড়া উঠে গেছে। তখনই ঠিক করেছিলো, পরে হাতে টাকা আসলেই ভাই কে একটা মানিব্যাগ কিনে দিবে। খুশি মনে জিনিস গুলো কিনে বাড়ির যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাস স্টপের দিকে হাটা শুরু করে আদনান।


মাঝের রুমে শিশির সোফার উপর বসে টিভি দেখছে। সাঝ আর আহিয়া রহমান খাবার টেবিলে এনে রাখছে। আজিজ রহমান গ্রামে গেছেন জমি বিক্রির ব্যপারে। আদনান সবার দিকে একবার তাকিয়ে এগিয়ে এসে সোফার পর বসে হালকা জোরে বলে ওঠে,
–” সাঝ! একটু এইদিকে আই তো।”

–” আসছি!”

সাঝ তরকারির গামলা টাহ টেবিলের উপর রেখে আদনানের সামনে দাড়িয়ে বলে ওঠে,
–” বল।”

আদনান সাঝের দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিয়ে সাঝকে টেনে সোফার উপর বসিয়ে দেয়। তারপর হাতের শপিং ব্যাগ টাহ সামনের ছোট্ট টেবিলের উপর রাখতেই সবাই ব্যাগটির দিকে তাকায়। আহিয়া রহমানও শাড়ির আঁচলে হাত মুছতে মুছতে এগিয়ে এসে ব্যাগের দিকে একপলক তাকিয়ে আদনানের দিকে ফিরে বলে ওঠে,
–” এইটা কি বাপ?”

আদনান মায়ের দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিয়ে ব্যাগ টাহ টেনে নেয় নিজের কাছে। প্রথমে সেখান থেকে একটা ছোট্ট বক্স বের করতেই সবাই বেশ উৎসুক চোখে তাকিয়ে আছে। আদনান শিশিরের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” ভাইয়া! তোকে কখনো আমার সেরকম কিছু দেওয়া হয় নি। আমি তো আর বেশি উপার্জনও করি নাহ। কিন্তু, আমার আজ তোকে এইটা দিতে মন চাইলো। আমি জানি এইটা খুব কম দামের একটা জিনিস। তাও, আমি নিজে পছন্দ করে এনেছি।”

আদনানের দিকে সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। আদনান বক্সটা খুলতেই দেখা যায় একটা মানিব্যাগ। শিশিরের ঠোঁটে ফুটে উঠে একটা মুচকি হাসি। আদনান শিশিরের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” এর থেকে বেশি কিছু দেওয়ার সামর্থ আমার হয় নি ভাইয়া।”

কথাটাহ বলে মানিব্যাগ টাহ শিশিরের দিকে এগিয়ে দিতেই শিশির সেইটা নিয়ে আদনান কে এগিয়ে আসতে ইশারা করে। আদনান একবার সাঝের দিকে তাকিয়ে শিশিরের দিকে এগিয়ে গেলে শিশির আদনানের মুখে হাত রেখে কপালে একটা ভালোবাসার পরশ একে দিয়ে বলে ওঠে,
–” তুই নিজেও জানিস নাহ, এইটা আমার কাছে কতোটা দামি। আমার ছোট্ট ভাইটা আমাকে প্রথম একটা জিনিস এনে দিয়েছে, এতে যে ভালোবাসা আছে তার সাথে কি টাকার পরিমাপ করা যায়?”

আদনান একটা শান্তির হাসি দেয়। সবাই মিষ্টি হাসি দিয়ে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। আদনান সাঝের পাশে এসে বসে ব্যাগ থেকে আরও একটা বক্স বের করে সেইটা সাঝের দিকে দিয়ে বলে,
–” বুড়ি এইটা তোর?”

সাঝ উৎসাহ নিয়ে বলে ওঠে,
–” আমার?”

আদনান মুচকি হেসে মাথা নাড়াতেই সাঝ বক্স টাহ খুলে দেখে সুন্দর একটা লেডিস ঘড়ি। সাঝ আনন্দ নিয়ে আদনানের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” অনেক সুন্দর হয়েছে। Thank you Davai.”

আদনান ঘড়িটাহ নিয়ে নিজে বোনের হাতে পরিয়ে দিয়ে বলে ওঠে,
–” এইচএসসি এক্সাম দিবি, তার গিফট। এইটা পড়ে এক্সাম দিতে যাবি।”

সাঝ এক মুখ হাসি নিয়ে আদনানের দিকে তাকিয়ে সম্মতিসূচক মাথা ঝাকায়। তারপর বলে ওঠে,
–” তোর জন্য কিছু কিনিস নি?”

আদনান শপিং ব্যাগ থেকে আর একটা বক্স বের করতে করতে বলে ওঠে,
–” এনেছি। আর দুই সপ্তাহ পর আমারও ফাইনাল এক্সাম। তাই আমিও ঘড়ি এনেছি।”

আদনান ঘড়ি টাহ বের করতেই সাঝ আদনান কে ঘড়িটাহ পরিয়ে দিয়ে বলে ওঠে,
–” খুব সুন্দর লাগছে ঘড়ি টাহ তোর হাতে।”

আহিয়া রহমান দাঁড়িয়ে দাড়িয়ে তার সন্তানদের কান্ড দেখছেন। আল্লাহ হয়তো তাকে ঘর ভর্তি টাকা দেয় নাই, কিন্তু তার থেকেও দামি তাকে ঘর ভর্তি সুখ দিয়েছে। সন্তানদের এইসব দেখলে তার বুক টাহ যে একদম ভরে যায়। চোখ ভিজে হয়ে আসতে থাকে আহিয়া রহমানের। সুখের জল এইসব। চোখে জল, মুখে হাসি নিয়ে সন্তানদের দেখতে থাকেন তিনি৷ তার পৃথিবীতো এরাই। আল্লাহ যেন সব সময় এমন দৃশ্য দেখার সৌভাগ্য দান করেন। আমিন!!!

#_চলবে………….🌹