লাল নীল সংসার পর্ব-০৮

0
154

#_লাল_নীল_সংসার_
#_মারিয়া_রশিদ_
#_পর্ব_৮_

শিশিরের বাস ধরার জন্য বাস স্টপের দিকে যাচ্ছে আর আশেপাশে তাকাচ্ছে। সে কি কাউকে খুজছে? কাউকে দেখার আশা রাখছে? কাকে? ছোয়া কে? না নাহ, এইসব কি আশা করছে সে? এইসব করা কি তার মানায়?

গতকাল রাতে অনেক দেরি করে ঘুম এসেছে তার। ভালো একটা ঘুম তার হয়ও নি। কারন টাহ কি তার অজানা? একদম নাহ। ছোয়া কে নিয়ে ভাবছিলো শিশির। না চাইতেও মেয়েটা ধীরে ধীরে তার ভাবনায় প্রবেশ করছে। কিন্তু, এইটা তো তার ঠিক হচ্ছে নাহ। কোনো মায়ায় যে সে নিজেকে জড়াতে চায় নাহ। যদি নিজের অবস্থান আর একটু ভালো জায়গায় হতো তাহলে আর দ্বিতীয় বার ভাবতো না সে। কিন্তু, এই অবস্থানে থেকে ছোয়াকে নিয়ে তার ভাবনা ঠিক না।

শিশিরের মস্তিষ্ক, মন সব যেন দুইরকম সাড়া জাগিয়ে তুলছে তার। একবার বলছে, ছোয়া কে নিয়ে ভাবতে তো আর একবার বলছে, ভাবনা বন্ধ করতে। উফ! এইসব ভাবতে ভাবতে বাস চলে আসলে শিশির তাতে উঠে চলে যায়।

এইদিকে…..
ছোয়া তাড়াতাড়ি বাস স্টপে এসে আশেপাশে তাকাতে লাগে। সব কেমন ফাঁকা ফাকা লাগছে। বাস কি তাহলে চলে গেলো? ছোয়া পাশের বেঞ্চে একজন লোককে বসা থাকতে দেখে তার দিকে দিকে এগিয়ে গিয়ে বলে ওঠে,
–” ভাই! এখানের লাস্ট বাস টাহ চলে গেছে?”

লোকটি ছোয়ার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” জি! আপা! এই তিন চার মিনিট হলো বেরিয়ে গেলো।”

ছোয়ার মুখ টাহ কেমন জানি মলিন হয়ে গেলো। একটা রিকশা ডেকে নেয় ছোয়া ভার্সিটি যাওয়ার জন্য। খুব তাড়াতাড়ি বের হতে চেয়েছিলো, কিন্তু তাও দেরি হয়ে গেলো। ছোয়া কেন যে এতো তাড়াতাড়ি বের হয়ে এসেছিলো সে নিজেও জানে নাহ। হয়তো, কাউকে দেখার উদ্দেশ্য। কিন্তু, এইটা কি সে ঠিক করছে? নিজের অতীত কি সে ভুলে যাচ্ছে? কম বয়সে নিজের জীবনে ঘটা সেই ঘটনা কি সে ভুলে যাচ্ছে? নাহ ভুলে গেলে চলবে নাহ। আর সে ভুলেও নি। কিন্তু, তাও শিশির নামের লোকটার কথা সে ভাবনা থেকে বের করতে পারে নাহ। প্রথম দিন দেখা থেকেই কেমন জানি, ছেলেটার ব্যবহার, কথা, আচরন তার মস্তিষ্কে গেঁথে গেছিলো। তারপর থেকেই এই ভাবনার উৎপত্তি। ছোয়া একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে চারিদিকের কর্মব্যস্ত মানুষগুলো কে দেখতে থাকে।


আদনান মাত্র টিউশনি শেষ করে বের হলো। এখন বিকেল হয়ে গেছে। আজ স্নেহাদের বাসায় যাওয়ার কথা। আদনান কখনো স্নেহাদের বাসায় যায় নি। কেমন কেমন যেনো লাগছে তার। তারপরও আর কি করার, স্নেহা যেভাবে কান্না করছিলো, আদনান নাহ গিয়ে পারবেই না। মেয়েটা পড়া ভালোই পারে, হয়তো ভয়তেই সব গুলিয়ে ফেলছে। এইটা হতে দেওয়া যাবে নাহ। ওর সাহস জোগাতে হবে। নাহলে, মেয়েটা সত্যি সত্যিই রেজাল্ট খারাপ করে ফেলবে। এইসব ভাবছে এমন সময় ফোন বেজে উঠতেই দেখে স্নেহার কল। আদনান কল রিসিভ নাহ করে “আসছি” লিখে ম্যাসেজ পাঠিয়ে দেয়। স্নেহা সকালেই আদনানকে বাসার ঠিকানা পাঠিয়ে দিয়েছে। আদনান একটা রিকশা নিয়ে স্নেহার বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হয়।

কিছু সময়ের মধ্যেই স্নেহার বাসার সামনে চলে আসে আদনান। রিকশার ভাড়া মিটিয়ে স্নেহাদের বাসার দিকে তাকায় আদনান। বাহ! বেশ সুন্দর স্নেহাদের বাসা। বাউন্ডারি দেওয়া বিশাল এরিয়ার মাঝে স্নেহাদের আকাশি রং এর ডুপ্লেক্স হাউজ। একটা বড় গেট বরাবর একটা সরু রাস্তা চলে গেছে বাসা পর্যন্ত। রাস্তার দুইপাশে বাগান। আদনান এগিয়ে যায় গেটের দিকে। আদনান গেটের সামনে আসতেই দারোয়ান এগিয়ে এসে আদনানের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” আপনি কে ভাই?”

আদনান কি বলবে বুঝে উঠতে পারছে নাহ। তারপর আমতা আমতা করে বলে ওঠে,
–” আমি আদনান! স্নেহার বন্ধু।”

দারোয়ান লোকটি একটু উচ্ছ্বাস নিয়ে বলে ওঠে,
–” ওহ! আপনিই আদনান? ম্যাম আমাকে বলে রেখেছে আপনার কথা। যান, ভেতরে যান।”

কথাগুলো বলে দারোয়ান লোকটি গেট খুলে দিলে আদনান একটু হেসে ভেতরে চলে যায়। বাসার দরজার সামনে দাড়িয়ে কলিং বেল চাপতেই একজন ভদ্রমহিলা দরজা খুলে দেয়। মহিলা টি কিছু বলতে যাবে তার আগেই স্নেহা পেছন থেকে এগিয়ে আসতে আসতে বলে ওঠে,
–” কে এসেছে খালা?”

মহিলা টি বলে ওঠে,
–” মুই চিনি নাহ। ভাই কে আফনি?”

আদনান কিছু বলার আগেই স্নেহা আদনান দেখে একটা আনন্দের হাসি দেয়। তারপর এগিয়ে এসে বলে ওঠে,
–” আদনান! তুই চলে এসেছিস? আই। আমি তোর জন্যই ওয়েট করছিলাম।”

আদনান একটু হেসে ভেতরে চলে আসে। তারপর স্নেহা ভদ্র মহিলাটির দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” খালা! তোমাকে যা যা বললাম, আমার রুমে পাঠিয়ে দিও।”

–” আইচ্ছা!”

স্নেহা আদনান কে নিজের রুমের দিকে যেতে লাগে। আদনান হাটছে আর আশেপাশে তাকিয়ে দেখছে। স্নেহাদের বাড়ির ভেতরটাও খুব সুন্দর করে সাজানো। আদনান ভাবে, এই মেয়ে কে নিয়ে ভাবে সে? কোথায় আদনান আর কোথায় এই রাজকুমারী? আদনানের কেমন জানি কষ্ট হতে থাকে। তাও নিজেকে সামলিয়ে রাখে আদনান।

স্নেহার রুমে চলে আসে ওরা। আদনান পুরো রুমে একটু চোখ বুলিয়ে নেয়। এসি চলছে তাই রুম টাহ বেশ ঠান্ডা আর রুম টাহ খুব সুন্দর করে গোছানো। আদনান অবাক হয়ে যাচ্ছে স্নেহার রুমে এতো পুতুল দেখে। একজন ভার্সিটি পড়ুয়া মেয়ের রুমে যে এতো পুতুল থাকতে পারে, সেইটা আদনানের ভাবনার বাহিরে ছিলো। এতো সময় হয়ে গেলো আদনান স্নেহার মা, বাবা, ভাই কাউকেই দেখলো নাহ। আদনান স্নেহার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” তোর বাসার সবাই কোথায়?”

স্নেহা আদনানের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” বাপি আর ভাইয়া অফিসে। মামনি খালামনির বাসায় গেছে।”

–” বাসায় তুই একা?”

–” হুম! আপাততো। আই আমাকে বুঝিয়ে দে এখন।”

–” হুম!”

আদনান আর স্নেহা চেয়ার টেবিলে বসতেই সেই ভদ্রমহিলাটি ট্রেতে করে পুডিং, কোল্ড কফি, সন্দেশ, পায়েস, রসমালাই, আপেল আর মাল্টা নিয়ে আসে। আদনান স্নেহাকে কিছু পড়া ভালোভাবে দেখিয়ে দিয়ে হালকা নাস্তা করে বেরিয়ে যায়।


ছোয়া একটা পার্কে বসে আছে। তার পাশে জারিফা ( ছোয়ার বেস্ট ফ্রেন্ড ) বসে বসে বাদাম খাচ্ছে। ছোয়া কেমন যেনো অন্যমনোস্ক হয়ে আছে৷ চারিদিকে একবার চোখ বুলিয়ে নেয় জারিফা। সন্ধ্যা হয়ে এসেছে প্রায়। সবার মাঝেই কেমন একটু ঝিমানো ভাব। তারপর ছোয়ার দিকে তাকায় জারিফা। ছোয়াকে এমন অন্যমনস্ক দেখতে ওর একদমই ভালো লাগে নাহ। জারিফা ছোয়ার কাঁধে হাত দিয়ে বলে ওঠে,
–” ছোয়া!”

জারিফার ডাকে একটু কেঁপে উঠে ছোয়া। তারপর জারিফার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” বল!”

–” কি হয়েছে তোর?”

–” কি হবে? কিছুই হয় নি।”

–” আমাকে বলবি নাহ কি হয়েছে?”

ছোয়া একবার জারিফার দিকে তাকিয়ে একটু জোরে নিশ্বাস নিয়ে বলে ওঠে,
–” জানিস, আজকাল একজনের ভাবনা আমার মস্তিষ্ক মন জুড়ে ঘুরে বেড়াই শুধু।”

জারিফা বাদাম চিবোতে চিবোতে হালকা ভ্রু কুচকে বলে ওঠে,
–” মানে? কি বলছিস, কিছুই বুঝছি নাহ।”

একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে জারিফাকে শিশিরের সব কিছু খুলে বলে ছোয়া। তারপর ছোয়া জারিফার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” আমি নাহ ওনাকে নিয়ে ভাবতে চাই নাহ। বিশ্বাস কর জারিফা আমি একদমই ভাবতে চাই নাহ।”

–” কেন ভাবতে চাস নাহ? তোর ঐসব ঘটনার জন্য?”

ছোয়ার চোখ ছলছল করে উঠে। হালকা কাঁদো কন্ঠে বলে ওঠে,
–” শিশিরের কোনো ক্ষতি হোক আমি কখনোই চাই নাহ। মানতে পারবো নাহ। আর আমি আমার অতীত টাহও ভুলতে পারবো নাহ। নিজেকে কখনোই ওনার সাথে জড়াতে চাই নাহ। ওনার ফুলের মতো জীবনে আমার মতো কাটা প্রবেশ করাতে চাই নাহ। তখন ছোট ছিলাম। মানসিক ভাবে খুব ভেঙে পড়েছিলাম। আর আমি জানি, আমার বাবা এইসব সহ্য করতে নাহ পেরেই স্টোক করেন। চলে যান আমাদের ছেড়ে। তিন বছর আগের ঘটনা আমার জীবনকে থমকে দিয়েছে জারিফা। সত্যিই থমকে দিয়েছে।”

ছোয়া কান্না করেই ফেলে। জারিফা ছোয়াকে জড়িয়ে ধরে ভিজে আসা কন্ঠে বলে ওঠে,
–” কান্না করিস নাহ। আমি জানি তিন বছর আগের ঐ ঘটনা টাহ তোর জন্য খুব ভয়াবহ ছিলো। কিন্তু, এখানের কেউ তো ব্যাপার টাহ জানে নাহ। যা জানে সব তোর গ্রামের মানুষেরা জানে। তুই এখানে কেন সেই কথা গুলো টেনে নিয়ে বসে আছিস? নিজের মতো করে…..”

কথা শেষ করতে পারে নাহ জারিফা। তার আগেই ছোয়া জারিফার কাছের থেকে একটু সরে এসে চোখ মুছতে মুছতে বলে ওঠে,
–” নারে, কেউ জানুক বা নাহ জানুক, আমি তো জানি। আর ঐ ঘটনা গুলো আজও আমাকে ঘুমোতে দেয় নাহ। মাঝে মাঝে মনে হয় মরে যায়। শুধু হারাম আর আম্মা, ছোট ভাইয়ের মুখ দেখে কিছু করতে পারি নাহ।”

–” আচ্ছা! আপাততো এইসব বাদ দে। চল একটু হেটে তারপর ফুচকা খাই। মন টাহ ভালো হয়ে যাবে। আর এই শিশির মশাইয়ের ব্যাপার টাহ পরে ভাবা যাবে। তারপর বাসায় যাবো চল।”

ছোয়া জারিফার দিকে মুচকি হাসি দেয়। তারপর দুইজনে মিলে একটু আশে পাশে হাঁটে, স্পন্দনের জন্য এক বক্স চকলেট কিনে নেয় ছোয়া, দুইজনে মিলে ফুচকা খেয়ে বাসায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে হাঁটতে থাকে। জারিফার বাসার রাস্তা একদিকে আর ছোয়ার বাসার রাস্তা একদিকে। ওরা রিকশা নিবে এমন সময় পাশ থেকে পুরুষালী কন্ঠে কেউ বলে ওঠে,
–” ছোয়া আপনি?”

কন্ঠ টাহ কানে আসতেই ছোয়া তাড়াতাড়ি পাশে তাকিয়ে দেখে শিশির মুচকি হাসি দিয়ে দাড়িয়ে আছে। শিশির ছোয়ার দিকে তাকাতেই হাসি টাহ একটু ফিকে হয়ে যায়। কারন, ছোয়ার চোখ লাল হয়ে হালকা ফুলে আছে, নাকও কিছুটাহ লাল হয়ে আছে, মনে হচ্ছে কান্না করেছে। কেমন যেন ধুক করে উঠে শিশিরের বুক। জারিফা শিশিরের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। কে ওনি? ছোয়া শিশিরের দিকে তাকিয়ে হালকা হেসে বলে ওঠে,
–” আপনি এখানে?”

–” কাজে এসেছিলাম একটু।”

জারিফা ছোয়ার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” ছোয়া! ওনি কে?”

ছোয়া জারিফার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” ওনার নাম শিশির!”

জারিফা একটু চমকে যায়। এই তাহলেই শিশির? আজই ওনার গল্প শুনলো আর কাকতালীয় ভাবে আজই ওনার সাথে দেখা হয়ে গেলো। জারিফা ছোয়ার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” ওহ! আচ্ছা! শোন, কথা বল তোরা আমি বাসায় গেলাম।”

ছোয়া সম্মতিসূচক মাথা নাড়লে জারিফা একটা রিকশা ডেকে উঠে চলে যায়। ছোয়া শিশিরের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” বাসায় যাবেন নাহ?”

–” হুম! বাসে উঠবো৷ আপনি যাবেন?”

ছোয়া একটু ভেবে বলে ওঠে,
–” চলুন!”

ছোয়া আর শিশির হাঁটতে থাকে বাস স্টপের দিকে। শিশিরের অফিসের একটা কাজে এসেছিলো। সারাদিন একবারও ছোয়াকে নিয়ে ভাবে নি সে। ভাবনার মাঝেই আনতে চায় নি ছোয়াকে। কিন্তু, এখানে কাজে এসে হঠাৎ ছোয়া কে দেখে কথা বলার লোভ সামলাতে পারে নি সে। ঠিক করছে নাহ ভুল করছে এতো ভাবনা তার মাথায় আসে নি। এগিয়ে এসেছে ছোয়ার সাথে কথা বলতে।

ছোয়া খুব চুপচাপ হেঁটে যাচ্ছে। ছোয়ার ফোলা চোখ মুখ দেখে শিশিরের কেমন জানি লেগে উঠেছিলো। এখন আড় চোখে বার বার তাকাচ্ছে ছোয়ার দিকে। মেয়েটা একদম চুপ হয়ে আছে। কান্না যে করেছে তার ফরসা মুখে সেইটা স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। ভালো লাগছে নাহ শিশিরের। খুব খুব অস্থির অস্থির লাগছে তার।

হাঁটতে হাঁটতে ওরা বাস স্টপে চলে এলো। এর মাঝে দুইজনের ভেতর কোনো কথা হলো নাহ। খুবই অবাক হয়ে আছে শিশির। আগে যে কয়বার দেখা হয়েছে মেয়েটাহ খুব উৎফুল্ল হয়ে কথা বলেছে তার সাথে। কিন্তু, আজ আর কোনো কথা বলছে নাহ। অনেক চুপচাপ হয়ে আছে মেয়েটা। কি হয়েছে তার? এর মাঝেই বাস চলে আসতেই ছোয়া আর শিশির বাসে উঠে বসে।

আজও ছোয়া জানালার পাশে বসেছে। আশেপাশে কয়েকটি সিট খালি আছে। আর কিছু সময়ের মাঝে হয়তো একটুও ফাকা থাকবে নাহ। শিশির ভাবছে ছোয়ার পাশে বসবে কি নাহ, আজ তো ছোয়া তাকে বসতেও বলছে নাহ। একমনে বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে ছোয়া। আর কিছু নাহ ভেবে ছোয়ার পাশে বসে পড়ে শিশির। ছোয়া একবার শিশিরের দিকে তাকিয়ে হালকা হাসি দিয়ে আবার বাহিরের দিকে তাকায়।

শিশিরের খুব মন খারাপ হচ্ছে। মেয়েটা আজ কথা কেন বলছে নাহ? এমন করে চুপচাপ হয়ে আছে কেন? কি হয়েছে তার? সে কি বুঝতে পারছে নাহ, সে তার সাথে কথা বলতে চাই? কিন্তু, সে এতো আগ্রহই বা কেন হচ্ছে তার সাথে কথা বলার জন্য? সে তো তার কথা আর ভাববে নাহ বলে ঠিক করেছিলো, তাহলে এখন মেয়েটাহ কথা বলছে নাহ দেখে সে অস্থির হয়ে উঠছে কেন? আর কিছু নাহ ভেবে শিশির ছোয়ার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” আপনি সেইদিন আমার বাসায় গেছিলেন শুনলাম।”

ছোয়া শিশিরের কথা শুনে শিশিরের দিকে তাকায়। তারপর হালকা হেসে বলে ওঠে,
–” জি! আসলে, সাঝের সাথে রাস্তায় দেখা হয়েছিলো। ও এতো বার করে বললো, যে আর না করতে পারি নি।”

শিশির হালকা হেসে বলে ওঠে,
–” ভালোই করেছিলেন। সাঝ, মা আপনাকে দেখে খুব খুশি হয়েছিলো। সাঝ পরে আপনার কথা খুশি মনে বলছিলো।”

শিশিরের কথা শুনে ছোয়া মুচকি হাসি দেয়। তারপর বলে ওঠে,
–” আপনার বাবার সাথে ঐদিন দেখা হয়েছিলো। অনেক ভালো কথা বলেন ওনি। শুধু ওনি নাহ, আপনার ছোট ভাইয়ের সাথে আমার আলাপ হয় নি, বাকি যাদের সাথে হয়েছে, সবাই আলহামদুলিল্লাহ অনেক ভালো।”

শিশির কি মনে করে যেন হঠাৎ বলে ওঠে,
–” আমিও?”

শিশিরের আচমকা এমন কথা শুনে ছোয়া একটু চমকে যায়। লজ্জাও পায় ছোয়া। তাড়াতাড়ি জানালার দিকে মুখ ঘুরিয়ে নেয়। শিশিরেরও মাথায় আসলো কি বললো সে? শিশিরেরও কেমন যেন লাগতে শুরু করে। একপলক ছোয়ার দিকে তাকিয়ে নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে বলে ওঠে,
–” আমার ভাইও অনেক ভালো। একদিন পরিচয় করিয়ে দিবো।”

শিশিরের কথা শুনে একটু হাসে ছোয়া। এর মাঝেই ওরা ফার্মগেট চলে আসে। শিশির আর ছোয়া নেমে যায়। ছোয়া শিশিরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে ওঠে,
–” আসি! ভালো থাকবেন।”

শিশিরও মুচকি হেসে বলে ওঠে,
–” জি! সাবধানে যাবেন।”

–” আল্লাহ হাফিজ!”

–” আল্লাহ হাফিজ!”

ছোয়া চলে যায় একটা রিকশা নিয়ে। শিশির ছোয়ার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। ছোয়া রিকশা থেকে একটু পিছনে তাকাতেই শিশিরের দিকে তাকিয়ে দেখে শিশির তার যাওয়ার দিকেই তাকিয়ে আছে। শিশিরকে এমন ভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে তাড়াতাড়ি মাথা ঘুরিয়ে নিয়ে ছোয়া। ছোয়াকে এরকম করতে দেখে মিষ্টি হাসি ফুটে উঠে শিশিরের ওষ্ঠে। ছোয়া দৃষ্টিসীমার বাইরে চলে গেলে শিশির নিজের চুলে একটু হাত বুলিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে হাটা শুরু করে।

#_চলবে………….🌹