#লীলাবালি🌺
#পর্ব_২৮
আফনান লারা
.
বাবা তার রুমে ঢোকার সময় অর্ণবকে বললেন বাজার থেকে পেপসি দুই লিটার নিয়ে আসতে।তাই অর্ণব নিজের মানিব্যাগটা নিয়ে চলে গেছে।মৃদুলও ওর সঙ্গে গেলো।
মম কলির সাথে ছাদে ছবি তুলছিল তখন।কুসুম মাটির পথটাতে দাঁড়িয়ে অর্ণবের চলে যাওয়া দেখছে।পথটার পাশে বনের ঝাড়।আর এই পাশটায় ধানক্ষেত।
কুসুম অর্ণব যাবার পর কিছুটা পথ হেঁটে গেলো এদিক সেদিক দেখতে দেখতে।অর্ণবদের পাশের বাসার এক আন্টি তখন গোসল করতে যাচ্ছিলেন।কুসুমকে দেখে বিড়বিড় করে বললেন,’নতুন বউ নাকি এমন ঘুরঘুর করে।ছেঃ’
কুসুম কথাটা শুনতে পেয়ে খয়েরী আঁচলটা মাথায় টেনে চলে যাওয়া ধরতেই পেছন থেকে একজনের ডাকে থামলো আবার।পেছনে ফিরে দেখলো তার সামনে একটা মেয়ে।সাদা পুতির কাজ করা একটা শাড়ী পরে আছে মেয়েটা।চুল খোলা।হাতে দুটো চুড়ি।সেগুলো অবশ্য কালো।দেখে এনাকেও শহরের মনে হলো কুসুমের কাছে।কুসুমের সামনের মেয়েটি আসলে জুথি।
কুসুমকে সে চিনতে পারলোনা।ওকে এভাবে ঘুরঘুর করে দেখতে দেখে বললো,’এখানে অর্ণবদের বাড়ি কোনটা জানো?’
কুসুম হাত দিয়ে দেখিয়ে বললো,’এটা’
জুথি কুসুমকে থ্যাংক ইউ বলে চললো সেদিকে।কুসুম জুথির গায়ের পারফিউমের গন্ধে মাথা ধরে দাঁড়ালো।কি ঝাঁঝালো ঘ্রান!!
এরপর জুথির পিছু পিছু সেও চললো।জুথি হনহনিয়ে অর্ণবদের বাড়ির ভেতর ঢুকতে যেতেই সামনে পড়লো অর্ণবের মা।
তাকে সালাম দিয়ে সে জিজ্ঞেস করলো অর্ণব কোথায়।
মা উত্তর দেওয়ার আগে কুুসমের দিকে একবার তাকালেন।কুসুম শাড়ীর কুচি মুঠো করে ধরে ছুটে আসছিল এদিকে।সেও দেখতে চায় কি হবে এখানে।মা বললেন অর্ণব তো বাজারে।জুথি এবার বললো,’তার রুমটা দেখিয়ে দিন আমায় ‘
-“তুমি কে তা তো বুঝলাম না’
-‘আমি উনার বান্ধুবী’
কুসএম সামনে এসে জুথিকে আবারও দেখছে।জুথির কথাবার্তা শুনে তেমনটাই মনে হলো যেমনটার বর্ণণা একদিন অর্ণব তাকে দিয়েছিল।তার চাহিদা।সাদা শাড়ীতে কি সুন্দর লাগে মেয়েটাকে।ধরে দেখতে ইচ্ছে করলো কুসুমের।দেরি না করে শাড়ীর আঁচলটা ধরে দেখলো সে।শাড়িটা সুতির।এরপর মাথা বাঁকিয়ে কুচি দেখতে লাগলো তারপর নিজের শাড়ীর কুচি।মেয়েটার কুচি গুলো কি সুন্দর সাজানো,আর তার গুলো সব এলোমেলো। মেয়েটার চুল ও তো কেমন চিকচিক করা আর সোজা।যেন একটা পরী!!
জুথি কুসুমের এমন ব্যবহারে আশ্চর্য হলোনা।এর আগেও চাচার বাসার আশেপাশের মেয়েগুলো ওকে এমন ভাবেই দেখছিল।
মা জুথির এমন ব্যবহার দেখে আন্দাজ করলেন এ যেন তেন বান্ধুবী হতে পারেনা অর্ণবের।তাই চুপিচুপি ওর বাবার ঘরের দিকে চললেন।কুসুম জুথির সামনে এসে বললো,’আপনার নাম কি?’
-‘জুথিকা মৃন্ময়ী ‘
——
অর্ণব পেপসির বোতল এনে সোফার সামনের টেবিলে রেখে সেখানে বসতে যেতেই কুসুম ওর সামনে এসে কিছু একটা বলতে চাইতেই অর্ণব ওকে থামিয়ে বললো,’আমার ফোন জ্বলছে তাই তো?’
-“না।’
-“তো?
-‘মৃন্ময়ী আপু এসেছে’
অর্ণব চোখ বড় করে এদিকসেদিক তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো কোথায় এখন।কুসুম বললো ওর রুমে।
অর্ণব সোজা মৃদুলের দিকে তাকিয়েছে।মৃদুল কাছে এসে বললো সে জুথিকে বাড়ির এড্রেস দেয়নি।কি করে পেলো তাই বুঝতেছেনা।কুসুম অর্ণবের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।
অর্ণব মাথায় হাত দিয়ে তার রুমের দিকে গেলো।জুথি সাজানো বাসরের প্রত্যেকটা ফুল ধরে ধরে দেখছিল।এই বাসর মিশু আর কলি মিলে সাজিয়েছিল অর্ণব আর কুসুমের জন্য।জুথি একটা গোলাপ হাতে পেছনে তাকাতেই অর্ণবকে দেখে কোমড়ে হাত দিয়ে বললো,’কি দোষ করেছিলাম?এভাবে শাস্তি দেবেন?আমি কতবার ফোন করেছিলাম।আমার সাথে কথা না বলার মৌনব্রত করেছিলেন?লাভ হলো?আমি তো তপন ভাইয়ার থেকে এড্রেস পেয়েই গেলাম।’
অর্ণব মূর্তির মতন দাঁড়িয়ে আছে।জুথি হাসিমুখে এগিয়ে এসে অর্ণবকে জড়িয়ে ধরতে যেতেই ও দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো।জুথি মুখটাকে ফ্যাকাসে করে বললো,’কি হলো?আচ্ছা, আপনাদের বাসায় কারো বিয়ে নাকি?’
অর্ণব মাথা নিচু করে বললো,’হুম।আমার বিয়ে’
জুথি খিলখিল করে হেসে বিছানায় গিয়ে বসে পা তুলে গোল হয়ে বসে বললো,’বউ তো আমি।তা কাকে বিয়ে করলেন?’
-‘যে আমার ভাগ্যে ছিল’
জুথি আবারও হাসছে।একটা হলুদ গোলাপ টেপ থেকে ছুটিয়ে লাল গোলাপের সাথে লাগিয়ে ধরে বললো,’বাসরটা সুন্দর করে সাজানো হয়েছে।আচ্ছা আমি একটা মেয়েকে দেখলাম,বেশ দেখতে।একেবারে দারুণ!কে ও??’
-“আমার স্ত্রী ‘
জুথি রেগে এবার বিছানা থেকে নেমে বললো,’এটা কেমন মজা করা?একদম এমন মজা করবেননা।আমার সত্যি সত্যি মনে হয়।
ভাল্লাগেনা এমন মজা।চলুন আমার সাথে বাকিদের পরিচয় করিয়ে দেবেন’
—-
-‘ও এতক্ষণ ঐ মেয়ের সাথে কিসের কথা বলে?মেয়েটা কে জানো?’
-‘না তো জানিনা।কুসুমকে পাঠাবো ওর রুমে?’
-“না থাক।হতে পারে মেয়েটা ওর ভার্সিটির কেউ।কুসুম আবার অন্য কিছু ভাবতে পারে।তুমি এক কাজ করো মিশুকে বলো কুুসুমকে যেন কাজে ব্যস্ত রাখে।আমি দেখছি বিষয়টা কি’
অর্ণবের বাবার কথা শুনে মা চলে গেলেন কুসুমকে আনতে।।
অর্ণব কি বলবে না বলবে তার মাথা কাজ করছেনা কিছুতেই।জুথির চোখ তাকে কিছু বলতে দিচ্ছেনা।জুথি এরই মাঝে ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ফেললো।মুখটা অর্ণবের পাঞ্জাবিতে ডুবিয়ে বললো,’অনেক বেশি ভালোবাসি।আর কষ্ট দেবেন না প্লিজ।আমার সহ্য করার এত ক্ষমতা নেই।অনেক কষ্ট দিয়েছেন কাল থেকে।আর মনে হয় একটু কষ্ট পেলে মরেই যাব’
অর্ণব জুথিকে বুক থেকে সরিয়ে দূরে ঠেলে দিলো।জুথি এবার ঘোর থেকে পুরোপুরি বেরিয়ে গেছে।ছলছল চোখে তাকিয়ে থেকে বললো,’আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলেন এটা আপনার বাসর না!!তাকান!’
অর্ণবের চোখ দিয়ে পানি টপটপ করে নিচে ফ্লোরে গিয়ে পড়ছে।জুথি চিৎকার করে বাসরের সব ফুলগুলোকে ছিঁড়ে ফেললো এক টানে।পুরো বাসর ছিন্নভিন্ন করে নিচে বসে গেছে সে।চিৎকার শুনে বাবা ভেতরের রুম থেকে ছুটে এসে এমনটা দেখে চোখ কপালে তুলে ফেলেছেন।
অর্ণবের দিকে তাকিয়ে বললেন,’কে ও?’
অর্ণব কিছু বলতে পারছেনা।জুথি কাঁদছে নিরবে।মাথাটা বিছানায় ঠেকিয়ে রেখে।কুসুম ছাদে কলির সাথে দৌড়াদৌড়ি খেলছিল।তার মনে নেই জুথির কথা।
—
-‘কি হলো বলছিস না কেন?মেয়েটা কে?’
-“আমার……আমার..!আমার অনেকদিনের একটা অল্প সময়ের অনুভূতি।যার নাম নেই আমার কাছে।শেষ হয়ে গেছে কাল রাত আটটা পনেরো মিনিটে।এর নাম আমার কাছে নেই।জিজ্ঞেস করোনা’
জুথিকে কাঁদতে দেখে বাবা এক পা একা পা করে এগিয়ে এসে বললেন,’মা তুমি কাঁদছো কেন?’
জুথি কান্নার কারণে কিছু বলতে পারছেনা।বাবা চুপ করে চলে আসলেন রুম থেকে।মা এসে বললেন কুসুম মনে হয় ছাদে।বাবা মাকে কড়া করে বলে দিলেন কুসুম যেন নিচে না আসে।
অর্ণব জুথির কাছে এসে বললো,’আমায় ক্ষমা করবেনা জানি।কিন্তু ঘৃনা করোনা।আমি হেল্পলেস ছিলাম। আমার হাতে চয়েস ছিলো না জুথি।ভাগ্যের সাথে হেরে গেছি।কুসুম আমার স্ত্রী হবার ছিল।তিন বছর ধরে আমি অনেক করেও শেষে হেরেই গেলাম।তুমি এভাবে কেঁদোনা।আমি অপরাধ করেছি যদি তবে শাস্তি দাও।মাথা পেতে নেবো।কিন্তু এভাবে কেঁদোনা।আমি তোমার চোখের পানি দেখবার ভয়ে কথা বলার সাহস পাচ্ছিলাম না এতসময় ধরে।জুথি শুনতে পারছো?’
জুথু নিচের থেকে উঠে দাঁড়ালো।অর্ণবের চোখে চোখ রেখে বললো,’যেদিন ভালোবাসলাম, সেদিন বিচ্ছেদ দিলেন??হয়ত আমি অভিশাপ দেবো না কাউকেই।কিন্তু আমার মনের উপর তো আমার নিয়ন্ত্রন নেই।সে যদি ছুটে আসে বারবার,,সে যদি আপনার সংসারে ভাঙ্গন করতে চায়,সে যদি সহ্য করতে না পারে!!
সে যদি অভিশাপ দেয় তবে আপনি আমায় মাফ করে দেবেন।প্লিজ মাফ করে দেবেন!আমাকে এড়িয়ে যাবেন।কারণ জুথি জীবনে একবারই ভালোবেসেছিল।আর সেটা আপনাকে!
প্রথম ভালোবাসা জুথি ভুলবেনা।সরি!আপনার মৃন্ময়ী ভুলবেনা!কোনোদিন ভুলবেনা।মরে গেলেও না।’
এবার জুথি চলে যাওয়া ধরতেই অর্ণব ওর সামনে এসে পথ আটকে দাঁড়িয়ে বললো,’এভাবে কেন বলছো?তোমার কি মনে হয় আমি জেনে শুনে বিয়েটা করেছি?পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে করেছি।বিশ্বাস করো!যদি বিয়েটা না হতো তবে এই বাসরের বধূ তুমি হতে’
জুথি মাথা তুলে বললো,’কিন্তু আমি তো হইনি!হয়েছে তো অন্য কেউ।তাহলে কেন কি হতো না হতো তা বলে আরও কষ্ট দিচ্ছেন?’
কথাটা পুরো বলতে না পেরে জুথি অর্ণবের পাঞ্জাবিটা খাঁমছে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বললো,’একবার বলুন আপনি মজা করতেছেন।একবার বলুন এই বাসর আপনার না!’
অর্ণব জুথির মাথায় হাত দিয়ে ওকে সোজা করে দাঁড় করিয়ে বললো,’আমার কিছু বলার নেই।ভালো থেকো।মৃদুলকে বলছি তোমায় বাড়ি পৌঁছে দেবে’
জুথি পিছিয়ে গেলো।হাতের সাথে লেগে অর্ণবের টেবিলের ফুলদানিটা পড়ে ভেঙ্গে গেছে।
জুথি চোখ মুছতে মুছতে বললো,’কথা ছিল সাজিয়ে ফেরাবেন ঢাকায়।আজ আমার কাজল লেপটে, সাদা শাড়ীতে নোনতা অশ্রু মিশে যে বর্ণ হয়েছে এমন সাজের কথা ছিল তাহলে?
মৃন্ময়ী নিজের খেয়াল নিজে রাখতে জানে।তার কারোর প্রয়োজন নেই।অল্প সময়ের জন্য যে মনে সাড়া জাগাতে এসেছিল তার বড্ড প্রয়োজন ছিল,কিন্তু আজ সে অন্য কারোর।
সে মৃন্ময়ীর না।তবে তাই হোক। মৃন্ময়ী একাই সব পারবে।শুধু একটা কথাই বলবো,কখনও আমার কল আর রিসিভ করবেননা।এটা ঠিক না।কখনও আমার সাথে দেখা হলে চোখে চোখ রাখবেননা।আমি চাইনা আপনি ঐ মেয়েটার সাথে অন্যায় করুন।ঠিক বললেন।আজ আমিও ভাগ্যের সাথে হেরে বসে আছি।আমি ফেল করেছি।’
জুথি দুহাত দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে অর্ণবের পাশ দিয়ে চলে গেলো।
ওর মা বাবা বাহিরের রুমেই ছিলেন।জুথিকে চলে যেতে দেখে তারা এবার অর্ণবের দিকে তাকালেন।অর্ণব মূর্তির মতন দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।কুসুম কলির সাথে খেলার ছলে নিচে নেমে এসে যখন দাঁড়ালো তখনই জুথি চলে যাচ্ছিলো।
যখন সে এসেছিল তখন তার চোখের কাজলের টানটা কি সুন্দরই না লাগছিল আর এখন কাজল লেপটে কেমন হয়ে আছে।চোখ লাল।পাপড়িগুলো ভেজা।
জুথি কুসুমকে দেখে থেমে গিয়েছিল।কুসুম জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে।
জুথির চোখে আবার পানি এসে গেছে।কুসুমকে দেখাতে চাইলোনা।চলে গেলো ওখান থেকে।কুসুম ওর চলে যাওয়া দেখে বুঝতে পারলো ভেতরে কিছু একটা হয়েছে।তাই দৌড় দিলো ভেতরের দিকে।
চলবে♥
#লীলাবালি🌺
#পর্ব_২৯
আফনান লারা
.
কুসুম সবার মুখটা বাংলার পাঁচের মতন হয়ে আছে দেখে সোজা অর্ণবের রুমের দিকে গেলো।গিয়ে দেখলো রুমের যাচ্ছেতাই অবস্থা।কিছুক্ষণ আগে যে সাজানো বাসরটা সে দেখেছিল সেটার কিছুই আর অবশিষ্ট রইলোনা।পাশেই অর্ণব মূর্তির ন্যায় দাঁড়িয়ে আছে।চোখ পানিতে টইটুম্বুর।কুসুম রুমটা দেখা শেষে অর্ণবের দিকে তাকালো এবার।অর্ণব সঙ্গে সঙ্গে মুখটা ফিরিয়ে হাত দিয়ে মুছে ফেললো।অর্ণবের রুমে যে সুন্দর ফুলদানিটা কুসুম দেখেছিল এতদিন, যেটাতে সে আজ নিজের হাতে ফুল রেখে সাজিয়েছিল, সেই ফুলদানিটা ফ্লোরে পড়ে চুরমার হয়ে গেছে।কুসুম নিচে বসে একটা টুকরো তুলে পেছনে তাকালো আবার।অর্ণবের কোনো নড়চড় না দেখে একটা একটা করে টুকরো তুলতে লাগলো সে।এসব কে করেছে মাথায় ঢুকছেনা।
আমচকা উনার বান্ধুবী এসে কেনোই বা রুমটা তছনছ করবেন?তাহলে নিশ্চয় উনি করেছেন।আমাকে পছন্দ করেননা ঠিক আছে।কিন্তু এভাবে ফুলের সাথে রাগ দেখানোর মানে কি।ফুল কি দোষ করেছে?
টুকরোগুলোকে পাশের ঝুড়িতে ফেলে ফুল সব এক এক করে নিয়ে টেবিলে রাখছে কুসুম।অর্ণব চলে গেছে।কোথায় তা জানেনা কুসুম।কেউই জানেনা।মৃদুল আর মম দুপুরের খাবার খেয়ে তারাও চলে গেছে।কুসুমের বাবা মা মার্কেট করতে গিয়েছিলেন বলে এই পুরো ঘটনার ব্যাপারে জানলেননা।কুুসুমকে সবাই খেতে ডাকলো।কিন্তু অর্ণবের এমন ব্যবহার দেখে তার খাওয়া উঠে গেছে।কিচ্ছু মুখে তুলতে মন চাইছেনা।বাবা অর্ণবকে কল করেও পেলেন না। বাড়ি ফিরে কুসুমের মা ওকে জোর করে নিজের হাতে খাবার খাইয়ে দিয়ে কলিকে নিয়ে চলে গেছিলেন বিকেলের দিকে।কুসুম বারান্দায় এসে অর্ণবের অপেক্ষা করছিল।অর্ণবের বাবা নামাজ পরে বাসায় ঢোকার সময় ওকে এভাবে মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ফোন নিয়ে আবারও কল করলেন কিন্তু এবার অর্ণবের ফোনই বন্ধ বলছে।
সন্ধ্যা হতেই বাগিচা থেকে শতে শতে মশা এসে ঘরে ঢোকা শুরু করলো।কিছু আক্রমণ করে বসেছে কুসুমকেও।কিন্তু তার নড়চড় নেই। সে অর্ণবের রকিং চেয়ারটাতে বসে অপেক্ষা করে যাচ্ছে ওর ফেরার।
হাতে পায়ে মশা কামড়ে ফুলিয়ে ফেলার পরেও কুসুমের মাঝে কোনো পরিবর্তন আসলোনা।
মিশু ভাবী এসে রুমের আলো জ্বালিয়ে কুসুমকে চা খেতে ডাকলেন।কিন্তু সে সাড়া দিলোনা।
ভাবী আর ডাকেননি।সাগর ভাইয়ার ফোন এসেছিল বলে তার রুমে চলে গেছিলেন তাড়াহুড়ো করে।
সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত হয়ে গেছে।দশটা বাজে তখন।কুসুম রকিংচেয়ারে বসে ঘুমোচ্ছিল।ঠাস করে দরজা খোলার আওয়াজ পেয়ে জেগে গেলো সে।উঠে দাঁড়িয়ে রুমের ভেতরে তাকালো।অর্ণব কোনোদিকে না তাকিয়ে সোজা বিছানার মাঝখানে লম্বা হয়ে শুয়ে পড়েছে।কুসুম অনেকক্ষণ তাকিয়ে থেকে ওকে দেখলো।চিৎ হয়ে শুয়েছে বলে মুখটা দেখা হলোনা।রাগ হলো অনেক।তাই সোজা রুম থেকে বের হয়ে গেলো সে।যাবার সময় দরজাটা জোরে আটকে গেলো।অর্ণব চমকে মাথা তুলে তাকিয়ে বুঝতে পারলো এটা কুসুমের কাজ।তাও না দেখার ভান করে আগের মতন শুয়ে পড়েছে সে।দরজার বিকট শব্দ মা বাবাও শুনেছেন।
—
-‘অর্ণবের গালে থাপ্পড় মারতে পারলে আমার শান্তি হতো”‘
-‘ও যখন ঐ মেয়েটাকে পছন্দই করে আমাদের বলতে পারতো।কাল তো ওর জোর করাতেই আমরা বিয়েটা দিলাম”
-‘আমার ও মাথা ধরছেনা।এখন এত রাতে এসে আবার রাগ দেখাচ্ছে!কুসুমটা কিছু মুখে দেয়নি।যাও ওদের দুজনকে ডেকে খাইয়ে দাও।আমি গেলে আমার হাত চলবে!’
অর্ণবের মা রুম থেকে বেরিয়ে অর্ণবের রুমের কাছে এসে ওকে ডাকলেন দুবার।এরপর ও এসে দরজা খুলে বললো,’দরজা তো খোলাই।ভেতরে আসতে পারো’
-“কুসুম কোথায়?’
-“আমি কি জানি!’
-“তুই কি জানিস মানে?এত নাটক কেন করছিস?ওরে বিয়ে করবার সিদ্ধান্তটা তোর ছিল, তাহলে কেন এমন করছিস?ওকে কষ্ট দেবার জন্যই কি তাহলে তোর বিয়েটা করার?অন্য মেয়েকে যখন ভালোই বাসছিস তবে কুসুমকে বিয়ে কেন?ঐ মেয়েটা কি দোষ করেছে?দুপুরবেলা বেরিয়ে রাতের দশটায় ঘরে ফিরলি।মেয়েটা তোর অপেক্ষায় ছিল জানিস?’
-‘ওকে আমি অপেক্ষা করতে বলেছিলাম?’
-‘এখন যা ওকে ধরে এনে ডাইনিং টেবিলে বসা।আমি খাবার বাড়ছি।দুজনে মিলে পেট ভরে খাবি।কত কষ্ট করে আমি এত পদ রান্না করলাম।কেউ ঠিক করে খেলোনা’
অর্ণব আবার গিয়ে শুয়ে পড়েছে।মা কোমড়ে হাত দিয়ে বললেন,’ঠিক আছে! তোর বাবাকে ডাকছি’
অর্ণব চট করে আবার উঠে বসে গেলো।মায়ের দিকে গম্ভীর ভাবে তাকিয়ে থেকে বললো,’এবার জোর করবা সব কিছুতে?’
-“বিয়েটা তুই তোর ইচ্ছেতে করেছিস।আমরা জোর করে একটা সময়ে থেমে গিয়েছিলাম তোর ঘাউড়ামির সাথে না পেরে।কিন্তু কাল তুই নিজের ইচ্ছায় রাতের এগারোটায় বিয়ে করেছিস।এরপর যদি মেয়েটার সাথে অন্যায় করিস সেটা ঠিক করতে অবশ্যই আমরা জোর করবো।’
অর্ণব পাঞ্জাবির হাতা উঠাতে উঠাতে বললো,’যাচ্ছি!’
মা মুচকি হাসি দিয়ে আওয়াজ বাড়িয়ে বললেন কুসুম মনে হয় ছাদে।
অর্ণব সোজা ছাদের দিকে গেছে।সেখানে কুসুম এমন ভাবে বসে ছিল যেন স্ট্যাচু হয়ে গেছে। অর্ণবের মাথা রেগে চড়ক গাছ হয়ে ছিল। হনহনিয়ে ওর সামনে গিয়ে হাত ধরে এক টানে উঠিয়ে দাঁড় করিয়ে ফেলে বললো,’কি সমস্যা কি তোমার?’
-‘কিসের সমস্যা আমার?’
-“তুমি জানো না?তাহলে আমি বলছি!আমাকে একটু শান্তিতে থাকতে দাও!’
-“দিলাম তো।আপনার থেকে দূরে থাকলেও কি সমস্যা? ‘
অর্ণব ওর হাতে চাপ দিয়ে বললো,’বাড়িতে একা তুমি আর আমি থাকিনা।যে রাগ তুমি দেখালে সেটা বাবা মা ও দেখেছে।এসব করে তাদের দিয়ে আমাকে টাইট করতে চাও?’
-‘আপনাকে কিছু বলতেই চাইনা।আপনি রাগ দেখিয়ে যাবেন আর আমি সেগুলো দেখে যাবো?শুরুটা কে করেছিল?’
অর্ণব এবার বললো,’যদি চাও আমি তোমার সঙ্গে থাকি তবে আমার বাবা মায়ের সামনে আমায় ছোট করবেনা।তারা আমার পক্ষ নেয় না।বরং তোমার পক্ষ নেয় সবসময়।সেটা জেনেই কি এমন করছো?’
কুসুম হাত ছাড়িয়ে নিয়ে চলে গেলো ছাদ থেকে।অর্ণব অবাক হলো কুসুমের পাল্টা এমন রাগ দেখে।
কুসুম সোজা মেহমানের রুমে ঢুকে বসে আছে।অর্ণব ছাদ থেকে নেমে ডাইনিং টেবিলের কাছে এসে চেয়ার টেনে বসতে যেতেই মা এসে বললেন,’কিরে কুসুম কই?’
-‘আসেনি?’
-‘তোকেই তো পাঠালাম ওকে আনতে।আশ্চর্য! কত দেরি হয়ে গেলো।মেয়েটা খাবে কখন’
অর্ণব কুসুমের নাম ধরে জোরে ডাকলো।কুসুম ডাক শুনে দাঁড়িয়ে পড়েছে।এমন ভাবে ডাকলো যেন এখন কুসুম সামনে উপস্থিত না হলে মারামারি হানাহানি শুরু হয়ে যাবে।তাই ভয় পেয়ে ছুটে গেলো ওখানে।অর্ণব ওর দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করায় ও চুপচাপ পাশে চেয়ার টেনে বসে গেলো।মা মিটমিট করে হাসছেন।এরপর তিনি সব খাবার বেড়ে দিয়ে চলে গেলেন ওখান থেকে।অর্ণব চুপচাপ খাচ্ছে।কুুসুম খেতে পারছেনা।বমি আসছে।ঔষুধ সেটা মিশু ভাবীর থেকে নিতে হবে খাওয়ার জন্য।এখন ভাত কিছুতেই খাওয়া যাবেনা।
তাই ভেবে উঠতে যেতেই অর্ণবের ধমক খেয়ে আবার থামলো।অর্ণব বললো বসে চুপচাপ খেতে।কুসুম মাথা নিচু করে বললো,”আমি পরে খেয়ে নেবো’
-“তুমি চাইতেছো বাবা এসে আমাকে ঝাড়ি দিক? আর আমি তোমায় নিজের হাতে খাইয়ে দিই?আর সেটারই বাকি আছে এখন’
-“আমি সেটা বলিনি। আমার শরীর খারাপ লাগছে।ঔষুধ খেয়ে তারপর ভাত খাবো।আপনার এত ভাবতে হবেনা।’
-“কিসের ঔষুধ?কি হয়েছে তোমার?’
-‘ভাত খেতে বসলে বমি পায়।’
-“বমি পাবেই তো।সকাল থেকে কতবার দেখেছি আমাদের বাগানের সব ফলপাকড় ছুটিয়ে ছুটিয়ে খেয়েছো।এগুলো খেলে ভাত খাওয়া আসবে কই থেকে?বুঝছি গ্যাস্ট্রিকের ঔষুধ।’
অর্ণব বাম হাত দিয়ে মাথার চুল টানতে টানতে রুমে ফিরে গিয়ে ঔষুধ খুঁজে বের করে বললো,’ঔষুধ তো আমার কাছেই থাকে’
-‘কাল থেকে আপনার চোখে যে আগুন জ্বলছে, আমি ঔষুধের কথা জিজ্ঞেস করতাম কি করে?আমার কথা তো কেরোসিন ‘
অর্ণব পাতা থেকে ঔষুধ টিপ দিয়ে বের করে মুখ তুলে তাকালো কুসুমের দিকে।তারপর গ্লাস এগিয়ে ধরে নিজে খেতে বসলো চুপচাপ।মনে মনে বললো,”মাঝে মাঝে কাঁচা ডিম মনে হয়,আর মাঝে মাঝে অমলেট।কুসুম নামটা সার্থক।’
চলবে♥
#লীলাবালি🌺
#পর্ব_৩০
আফনান লারা
.
অর্ণবের চাহনিতে রহস্য খুঁজে পেলো কুসুম।তার ঐ কথায় যে এমন করে তাকিয়ে আছে সেটা আর বোঝার অপেক্ষা করেনা।তবে কথাটা শুনে ভাল ভাবছে নাকি খারাপ?
যাই হোক,এই মানুষটা তো আমায় সবসময় খারাপই ভাবেন।আমি আর ভালোর সংজ্ঞা খুঁজতে যাবোনা।
অর্ণব খাবার শেষ করে চলে গেছে রুমে।বিছানায় বসে ফোন হাতে নিয়ে ফেসবুকে গেলো।হঠাৎ জুথির একটা কাজে হাসবে নাকি কাঁদবে তা ভাবতে গিয়ে তব্দা খেয়ে বসে আছে সে।
জুথি ওর এমন কোনো পোস্ট বাকি রাখেনি যেগুলোতে এঙ্গরি রিয়েক্ট দেয়নি।এই কান্ড ঘটিয়েছে সন্ধ্যা বেলায়।মানে মেয়েটার মাথা মনে হয় গেছে।
ফোন রেখে সামনে তাকাতেই কুসুমকে দেখলো কি একটা বলার জন্য চলাফেরা করছে সামনে দিয়ে।বারবার ঘুরেফিরে এক জায়গায় এসে দাঁড়াচ্ছে।
অর্ণব কথা না বলে উঠে বের হতে গেলো রুম থেকে।কুসুম ছুটে এসে জিজ্ঞেস করলো কোথায় যাচ্ছে সে।অর্ণব জানালো ভাত খাওয়ার পর ৪০কদম হাঁটা তার অভ্যাস।কুসুম আর কিছু বললোনা, অর্ণব ও চলে গেছে।সেসময়ে মিশু ভাবীর অট্টহাসি কানে আসায় কুসুম গেলো তার রুমের কাছে।ভিডিও কলে সাগর ভাইয়ার সাথে কথা বলছেন তিনি।কুসুম মুচকি হেসে চেয়ে রইলো ওদিকে।সাগর ভাইয়া মিশু ভাবীকে বলছেন ভাবীকে নাকি আজ বাচ্চাদের মতন লাগে।ভাবী সে কারণেই হাসছেন।
এটা দেখে কুসুমের মনটা খারাপ হয়ে গেলো।তাকেও তো সবাই বাচ্চা বলে কিন্তু কই উনি তো পছন্দ করেন না!
অর্ণবের ফোন জ্বলছে।কুসুম রুমে এসে চেয়ে দেখলো জুথির কল।কিন্তু ধরলোনা।বুঝতেও পারলোনা এটা কার কল।কল একের পর এক আসছে।
ধরে নিলো মৃন্ময়ীর কল।
-‘কিন্তু উনি তো ফোন ধরতে মানা করলেন আমায়।বাহিরে গিয়ে বলবো যে ফোন এসেছে?
না থাক।নাহলে আবার ঝাড়ি দেবেন।’
কুসুম গিয়ে বিছানায় গোল হয়ে বসলো এবার।কল একের পর এক আসছে অনবরত।এরপর মেসেজ।ও ফোনটা হাতে নিয়ে মেসেজে চোখ বুলালো।ইংরেজীতে লেখা মেসেজ।একটা ওয়ার্ডও তার মাথায় ঢুকলোনা।বাংলা হলেও ঢুকতোনা।আকারে বড় মেসেজ।কুসুমের নিজের প্রতি রাগ হলো, কেন সে পড়ালেখা জানেনা?জানলে এখন লেখাগুলো পড়তে পারতো।
অর্ণব সেসময়ে রুমে ঢুকতেই কুসুম ফোনটা রেখে দিলো আগের জায়গায়।অর্ণব কাছে এসে বিছানার ওপর থেকে ফোন নিয়ে মেসেজে ক্লিক করেছে।জুথি লিখেছে- “””পারছিনা ভুলতে।”””কপি করে দশবার লেখা।
এটা দেখে অর্ণবের খারাপ লাগলো।কুসুম হাত নাড়িয়ে বললো,’মিননয়ি আপু মনে হয় আবারও ফোন করেছিল।আপনি তো মানা করেছেন তাই ডাকিনি”
অর্ণব ফোন পকেটে ঢুকিয়ে শুয়ে পড়েছে।কুসুম লুকিয়ে রাখা একটা গোলাপ বালিশের তলা থেকে বের করে হাতে নিয়ে মিটমিট করে হাসছিল নিঃশব্দে।গোলাপের ঘ্রান নাকে আসতেই অর্ণব পেছনে তাকালো।কুসুমের হাতে গোলাপ দেখে কিছু না বলে চোখ বন্ধ করে ফেলেছে সে।কুসুম গোলাপটা মাথায় গেঁথে বললো,’একটা কথা শুনবেন?’
-“না’
-‘সাগর ভাইয়ার নাকি বাচ্চা স্বভাবের মেয়ে ভাল্লাগে।তাই মিশু ভাবীকে বলছিল আজ তাকে অনেক ভালো লাগছে তিনি কিসের নাকি বাচ্চামো করছিলেন।’
-‘তো?’
কুসুম কিছু বললোনা চুপ করে থাকলো।অর্ণব পেছনে ফিরে বললো,’আমার আর সাগর ভাইয়ার পছন্দের মাঝে আকাশ পাতাল তফাৎ’
-‘ওহ।আচ্ছা আপনি কি ঢাকায় চলে যাবেন? ‘
-“হ্যাঁ’
-‘আর আসবেননা?’
-‘না আসবোনা।গেলে বাঁচি।এখানে আমার দম আঁটকে আসছে’
-‘আমাকে নেবেন?’
-‘না’
কুসুম এবারও উত্তরে কিছু বললোনা।চুপ করে শুয়ে পড়েছে।ওর নিরবতা হয়ত আশা করেনি অর্ণব।ভেবেছে কান্নাকাটি করবে যাবার জন্য।পরে ভাবলো ভালোই হলো নাছড়বান্দা গিরি দেখালোনা।জোর করলেও ওকে আমি সঙ্গে নেবো না।থাকি মেসে।ওকে নিলে আলাদা বাসা নিতে হতো।এখনও ঠিকঠাক চাকরিও পাইনি।তাছাড়া ওকে কদিন সহ্য করতে পারছিনা,সঙ্গে নিয়ে গেলে মাসের পর মাস সহ্য করতে হতো’
আজ রাতেও অর্ণবের ঘুম আসছেনা।এদিকে সবে বারোটা বাজে।ফজরের কাছাকাছি সময় হলে হয়ত মসজিদে গিয়ে বসে থাকতো।ওখানে একটু হলেও মনে শান্তি পাওয়া যায়।কিন্তু এ সময় তো রাতের শুরু।
উঠে বসে সে মুখটা মুছে নিলো দুহাত দিয়ে।কদিন ধরে না হচ্ছে ঘুম আর না যাচ্ছে মাথা ধরা।
-‘কবে আমার জীবন আবার আগের মতন হবে।’
হাতের ঘড়িটা দেখতে গিয়ে দেখলো হাতই খালি।খুলে কই রেখেছিল সেটাই মনে পড়লোনা।বালিশের তলায় চেক করে পেছনে তাকালে অর্ণব।চোখ পড়লো কুসুমের মুখের ওপর।রুমের লাইট তারা নেভায়নি বলে কুসুমকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিলো।ভেবেছিল ঢাকায় না নিয়ে যাওয়ার কথায় কুসুম কোনো রিয়েকশান দেখায়নি কিন্তু সে অবশ্যই রিয়েকশান দেখিয়েছে তবে তা নিরবে।চোখ পানিতে ভিজে আলোয় চিকচিক করছে।
অর্ণব মুখ ফিরিয়ে নিলো।মেয়েরা কথা দিয়ে ছেলেদের মানাতে না পারলে কান্না দিয়ে মানায়।তবে আমি মানছিনা।এমনিতেও জীবন থেকে শান্তি উঠে চলে গেছে।ওকে ঢাকায় নিয়ে গেলে জীবনে আর কিছু থাকবেনা আমার।তাছাড়া আমি পুরোটা সময় বাহিরে থাকবো।ও একা একটা মেয়ে কি করে থাকবে??ওরে একা রেখেও তো আমি সারাক্ষক্ষণ টেনসনে থাকবো।কি না কি হয়ে বসে।আমার ভয় লাগে না জানি বাবা জোর করে ওকে আমার সাথে পাঠিয়ে দেন।তাহলে আমি শেষ।কিছুতেই নেওয়া যাবেনা।এখানেই থাকুক।ভাল থাকবে।’
জুথির ফোন এসেছে আবার।অর্ণব ফোন মাত্র হাতে নিয়েছিল। জুথির কল দেখে কেটে অফ করে দিলো একেবারে।জুথির সাথে কথা বললে ও আরও ইমোশনাল হয়ে যাবে।আর ও তো বলে গেছে ওর কল যেন না ধরি।
বারান্দায় এসে গ্রিলে মাথা ঠেকিয়ে সে ভাবলো যদি জুথি জেদ করে কিছু করে বসে?
ভয় লাগলো আবার।শেষে বাধ্য হয়ে সে নিজেই ফোন করেছে ওকে।অনেকক্ষণ রিং হবার পর জুথি রিসিভ করলো। ওপাশ থেকে কোনে সাড়া না পেয়ে অর্ণব বললো,’কি হয়েছে?ঠিক আছেন?”
-‘আমি এত কষ্ট কোনোদিন পাইনি।আমার কোনো কিছু সহ্য হয়না।কি করলে নিস্তার পাবো একটু বলবেন?”
-‘সেটা যদি আমার জানার থাকতো তাহলে আমি নিজের উপর এপ্লাই করতাম’
-‘আচ্ছা আমাদের তো বেশিদিনের সম্পর্ক হয়নি।দেড় মাসই তো।তাহলে কেন এমন লাগে?কেন আমি আপনাকে ভুলতে পারছি না।বুকে জ্বালা করে।আমি আপনার পাশে ঐ মেয়েটাকে মেনে নিতে পারছিনা কেন?আপনি আমার হলেননা কেন?ভালোবেসে অপরাধ করেছি?’
কুসুম গোলাপের কাটার খোঁচা খেয়ে জেগে গেছে।অর্ণব নেই দেখে চমকে উঠে বসলো ।দরজা ভেতর থেকে লাগানো বলে বারান্দার দিকে তাকালো সে।ওখানে অর্ণব ফোনে কথা বলছিল।কুসুম বিছানা থেকে নেমে তাকিয়ে রইলো সেদিকে।
-“না অপরাধ করোনি।আমি আসলে…..’
অর্ণব কথা বলতে বলতে পেছনে তাকিয়ে কুসুমকে দেখে কথা থামিয়ে ফেলেছে।
জুথি বললো,’আপনার স্ত্রী সামনে?’
অর্ণব সঙ্গে সঙ্গে কলটা কেটে দিয়েছে।কুসুম কিছু বললোনা।সে ভাবলো অর্ণব তার সাথে এক বিছানায় শুলে ওর ঘুম হয়না বলে বারান্দায় সময় কাটায়।কার ফোন এসেছিল তা ভাবলো না সে।
অর্ণব এগিয়ে এসে বললো,”আমার ফ্রেন্ড কল করেছিল।’
-“আমি কি জিজ্ঞেস করেছি?”
-‘তাহলে ওমন দাঁড়িয়ে কি দেখছিলে?’
-‘কিছু দেখছিলাম না।বুঝার চেষ্টা করছিলাম আপনার অসুবিধার কারণেই কি একসাথে বিছানায় শোন না’
-‘তো কি বুঝলে?’
-“কিছু বুঝিনি।আমি বালিশ নিয়ে মেহমানের রুমে যাবো?’
-“চুপচাপ গিয়ে ঘুমাও।এক মিনিট!তুমি গ্যাস্টিকের ঔষুধ খেয়ে আধ ঘন্টা পর ভাত খেয়েছিলে?’
-“না’
-“তো যাও খাও’
কুসুম চোরের মতন মুখ করে বালিশ একটা নিয়ে যেতে যেতে বললো,’আপনি আলো নিভিয়ে ঘুমান।শুভ রাত্রি’
-‘এই দাঁড়াও!’
-“কি?’
-“বালিশ রাখো।তোমাকে আমি বলছি অন্য রুমে গিয়ে থাকতে?আমার কথার অবাধ্য হওয়া কে শিখিয়েছে তোমায়?স্বামীর কথা স্ত্রীর মেনে চলতে হয় জানোনা এটা??’
কুসুম মুখে হাসি ফুটিয়ে বালিশ রেখে চলে গেলো খেতে।
অর্ণব ফোন বন্ধ করে বিছানায় বসে পড়েছে।কিসের মধ্য দিয়ে সে হাঁটছে তা সে নিজেও জানেনা।একজন দায়িত্ব আরেকজন অনুভূতি।
-‘জুথিকে ফোন দেওয়াই আমার উচিত হলোনা।ও এখন আরও পাগলামো করবে।কোনদিকে যাব!
ও নিজেকে আমার থেকে দূরে সরাতে পারছেনা,আর আমিও পারছিনা।’
কুসুম একা একা ভাত খেতে বসেছে।অর্ণবের বাবা তখন পানি খেতে এসেছিলেন।কুসুমকে একা খেতে দেখে তার মেজাজ গেলো খারাপ হয়ে।সোজা গেলেন অর্ণবের কাছে।সেখানে ওকে বসে থাকতে দেখে বললেন,’কুসুম এ সময়ে খেতে বসেছে কেন?তখন তোর সঙ্গে খায়নি?’
-‘না।ওর গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বলে ঔষুধ খেয়েছিল।’
-“তো যা ওর পাশে বসে থাক, জেগেই যখন আছিস।’
কুসুম সব শুনে ভাত জলদি মুখে দু লোকমা পুরে প্লেট লুকিয়ে ফেলে বললো,’আমার খাওয়া শেষ।উনাকে আসতে হবেনা।এতক্ষণ তো আমার সামনেই ছিলেন।রুমে গেলেন বেশি সময় হয়নি তো ‘
-‘ওহহ’
বাবা আর কিছু বলেননি।চলে গেলেন।কুসুম পানি খেয়ে ফিরে আসলো রুমে।অর্ণব হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে মুখ ঢেকে শুয়ে আছে।আলোটা নিভিয়ে কুসুম ল্যাম্প শ্যাডের কাছে এসে সুইচ টিপলো ওটা জ্বালাতে।কিন্তু আলোটা জ্বলছিলোই না।তাই শুরু করলো সুইচ নিয়ে যুদ্ধ।শেষে অর্ণব হাত বাড়িয়ে সুইচটা অন করে বললো,’রাত করে বাঁদরামি করতে মন চায় তোমার?আচ্ছা তোমার মা, বাবা তোমায় কি করে সামলাতো?বাড়িতেও এমন আকাম কুকাম করে বেড়াতে??মারতোনা তোমায়?বকতোনা?আমার জীবনে এমন উঠতি বয়সী, টইটই করে শয়তানি করে বেড়ানো মেয়ে আর দেখিনি।তোমাকে দেখে শান্তশিষ্ট মনে হলেও তুমি তা নও।খুব জ্বালাও আমাকে।এ কারণে তোমাকে আমি ঢাকায় নেবোনা’
-“যদি জ্বালানো কমিয়ে দিই।তাহলে নেবেন?’
-“আমি কাল চলে যাব।জ্বালানো কমানোর সময় ঢের পাবে এখানে থেকে থেকে’
কুসুমের মুখটা আবার ফ্যাকাসে হয়ে গেলো।মন খারাপ করে নিজের বালিশটা নিয়ে দরজা খুলে চলে গেলো খনিকের মধ্যেই।অর্ণব ওকে বিছানায় আসতে না দেখে উঠে বসে দেখলো সে তো রুমেই নেই।বালিশটাও নেই।
-‘চুপচাপ চলেও গেছে???
এই মেয়েটা এমন কেন!!!থাকুক মেহমানের রুমে।যত যাই করুক নেবোনা ঢাকায়।আমার রাগ আরও বেশি।হুহ!’
অর্ণব রাগ করে আবার শুয়ে পড়েছে।
চলবে♥