#শত_ ডানার_ প্রজাপতি
#urme prema (sajiana monir )
পার্ট : ২৩
সেই রাতে অগ্নি আর বাড়িতে ফিরে না । সবসময়ের মতই উনার রাগের মুষল আমাকেই দিতে হয় । মায়ের কাছে আমারই জবাবদিহি করতে হয় । বাড়ির সবাই আমাদের রাগারাগির ব্যাপার টা আঁচ করতে পেরেছিলো । আজ একদম নিশ্চিত হলো । এই লোক দুনিয়াদারির কোনো কিছুই আমলে নেয় না । নিজের যা মনে চায় হুট করে তা করে চলে যায় । পরবর্তীতে কি হবে ,না হবে তা ভেবে দেখে না । আমি রুমের সবকিছু গোছগাছ করে ঘুমিয়ে পড়ি আগামীকাল ভার্সিটিতে কালচারাল প্রোগ্রাম ।
সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে নাস্তা করে নিলাম । অগ্নি এখনো বাড়িতে ফিরেনি । মায়ের কাছ থেকে জানতে পারি অগ্নি ভার্সিটির হলে আছে । আজকের ফাংশনের সব আয়োজন করে সেখানেই থেকে গেছে । আমি ছোট্ট একটা হতাশার নিশ্বাস ছাড়ি । কখনো কোনো কিছু পরিবর্তন হবে না । না উনি ,না উনার রাগ জেদ ।
বিকেলের দিকে রেডি হয়ে নিলাম ।গোল্ডেন পাড়ের ক্রিম কালারের হাফ সিল্ক জামদানী শাড়ী পড়লাম ।শাড়িতে ছিটে ছিটে লাল সুতোর কাজ । চুল গুলো মাঝ সিথি করে খোপা করে নিলাম । খোপায় আর্টিফিশিয়াল লাল সাদা গোলাপ ফুল । মুখে হাল্কা মেকাপ । ঠোঁটে রোজি রেড কালার লিপস্টিক । কপালে ছোট্ট একটা কালো টিপ । কানে হোয়াইট স্টোনের গোল্ডেন ঝুমকো । হাত ভরা সাদা গোল্ডেন স্টোনের চুড়ি ।
আয়নায় নিজের দিকে তাকিয়ে আছি । চেহারায় একটা ম্যাচুরিটি ফুটে উঠেছে । শুধু কি শাড়ী পড়ার কারনেই এমন দেখাচ্ছে ? নাকি জীবনের কঠিন বাস্তবতার জন্য ?
মামী সবসময় বলতো হুর ম্যাচিউর হও ! তোর মাঝে কবে ম্যাচিউরিটি আসবে ? এতো বড় হয়েছিস এবার তো একটু ম্যাচিউর হও !
তখন মনে প্রশ্ন আসতো আচ্ছা কি ভাবে ম্যাচিউর হয় ? আমি কেন হতে পারিনা? চেষ্টা তো কম করছিনা ! তবে কেন ম্যাচিউর হচ্ছিনা ?
এখন আমার সেইসব প্রশ্নের উত্তর পেয়েছি সত্যি তো এটাই যে ম্যাচিউরিটি বয়স বা সময়ের সাথে আসেনা । জীবনের তীক্ত বাস্তবতার অভিজ্ঞতা এনে দেয় । এই যে আমাকে একরাতের মাঝেই ম্যাচিউর করে দিয়েছে । আয়নায় আমার প্রতিবিম্বটি দেখে মনে হচ্ছে খুব সুন্দর সদ্য সুখি বিবাহিতা দাড়িয়ে । কিন্তু ভিতরে ভিতরে প্রতিমুহূর্ত আমি ভেঙ্গে চুরমার হচ্ছি ।আমার বিষন্নতা ভরা চেহারার উপর হাসি খুশির মুখোশ পরে আছি । কেউ নাই বা জানুক মুখোশের আড়ালে আমি কতটা ভালো আছি !
মায়ের থেকে বিদায় নিয়ে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে রওনা হই । রিকশা থেকে নামতে দেখি শেফা নীল সাদা শাড়ী পরে গেটে সামনে দাড়িয়ে । খুব সুন্দর লাগছে । আমাকে দেখেই সবসময়ের মত জরিয়ে ধরে ।উল্লাসিত কন্ঠে বললেন ,
– “হায়য়য় মেরি জান ! যা লাগছিস না একদম বোম । আমি যদি ছেলে হোতাম না এখনি তুলে নিয়ে বিয়ে করে ফেলতাম । আর….”
আমি শেফাকে কিছু বলতে না দিয়ে বললাম,
– “হয়েছে তোর ? মানে তুই এমন করিস যে আমি বিশ্বসুন্দরী । ”
– “তা তো বটেই ”
– “তুই নিজেও কম না অকে ! এই দেখ নিল শাড়ীতে কত সুন্দর লাগছে । আজ কত ছেলে যে আহত নিহত হবে আল্লাহ্ জানে । ”
– “মেডাম আপনা সামনে সব আমি কিছুই না ।বুঝেছেন ! ”
– “হয়েছে হয়েছে এবার ভিতরে চল । ঔ দিকে ফাংশন শুরু হতে বেশি দেরী নেই । ”
দুজন ভিতরের দিকে চলে গেলাম । ভিতরে যেতেই প্রথমে অগ্নির দিকে চোখ গেল । আমার দিকে হা করে তাকিয়ে উনি ।পড়নে সাদা পাঞ্জাবি । সাদা পাঞ্জাবীর গলায় স্প্রিং এর গোল্ডেন কারুকাজ করা । আবার মাঝে মাঝে স্টোন ও রয়েছে । চুল গুলো সবসময়ের মত স্টাইল করে ব্রাশ করা । হাতে ব্রেন্ডেড ঘড়ি । সবসময়ের মত মনে একটা প্রশ্ন জাগলো এই লোক এতো সুন্দর কেন ? কিন্তু নিজের মনকে কন্ট্রোল করি । উনি আমার নয় । আর অন্যের জিনিসে নজর দেওয়া কুজনের কাজ । অগ্নি থেকে চোখ সরিয়ে নেই । এই মুহূর্তে অগ্নি আমার কাছে বিষের মত লাগছে এর কারণ তার পাশে থাকা নিহা নাগিনী ।
আমি অন্যদিকে চলে যাই ।
_____________________________
পানি পিপাসা পেয়েছে তাই ভার্সিটির ক্যান্টিনের দিকে যাই পানি আনতে। এদিকটায় খুব একটা লোকজন নেই । সবাই মাঠে অনুষ্ঠান দেখতে ব্যস্ত । শেফাকে সামনের সাড়ি তে বসিয়ে এসেছি । ক্যান্টিনের সামনে সাইন্স লেভের দিকে আসতে পিছন থেকে কেউ আমার হাত টেনে ধরে । আমি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে দেখি অগ্নি । আমি উনার দিকে প্রশ্ন বোধক চোখে তাকালে । উনি প্রতিউত্তরে রাগি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে । এবার আমি আবার কি করলাম?
আমি হাত ছাড়াতে চাইলে । উনি আমার হাত চেপে ধরে টেনে ল্যাবের ভিতরে নিয়ে যায় । আমাকে নিজের সামনে দাড়া করিয়ে নিজে টেবিলের উপর হ্যালান দিয়ে বাঁকিয়ে দাড়ায় । আমার দিকে ছোট ছোট চোখ করে উপর থেকে নিচ পর্যন্ত সুক্ষ্ম ভাবে পরখ করছে । আমি উনার দিকে তাকাচ্ছি না আশেপাশে চোখ বুলাচ্ছি ।আমি উনার চোখের দিকে একদম তাকাবো না । উনার এই গভীর চোখ সর্বনাশা । আমি চাইনা আবার এই চোখে মায়ায় পড়তে ।
এই হাল্কা শীতের মাঝেও আমার হাত পা ঘামছে । এই লোক কি করতে চাইছে আমার মাথায় খেলছে না । আমি অন্যদিকে তাকিয়ে আমতা আমতা করে বলি ,
– “এখানে নিয়ে এসেছেন কেন? বাহিরে অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেছে । আমাকে যেতে দিন । ”
উনার গম্ভির প্রশ্ন ,
– “এদিকে কি করছিলে ?”
আমি আগের মত মিনমিন স্বরে উত্তর দিলাম ,
– “পানি পিপাসা পেয়েছিল । তাই পানি খেতে এসেছি । ”
অগ্নি আমার দিকে তাকিয়ে ফোনটা বের করে কাউকে ফোন করে পানি আনতে বলেন । আমি ভ্রু কুঁচকে উনার দিকে তাকাই উনার দৃষ্টি তখনো আমার দিকে । আমি একপা পিছাতেই উনি আমার ডানহাত ধরে নিজের দিকে টান দেয় । আচমকা এভাবে টান দেওয়ায় আমি ভার সামাল দিতে না পেরে উনার কাঁধে হাত রাখি । উনি দুহাতে আমার কমোড় চেপে ধরে ।উনার বরফ শীতল হাত আমার শাড়ির আঁচল ছেড়ে কমোড় স্পর্শ করেছে । দুজনের মাঝে খুব একটা ফাঁকা নেই । আমার গলা শুকিয়ে আসছে । বারবার এদিক ওদিক তাকাচ্ছি । আমি উনার দিকে না তাকিয়েও বলতে পারছি উনি আমার দিকে গাঢ়তর দৃষ্টি তে তাকিয়ে আছে । ভয়ংকর এই দৃষ্টি যা আমার এতোদিনের রাগ জেদ দিয়ে তৈরি করা ইগ্নোরের দেয়ালটাকে নিমিষেই ভেঙে চুরমার করতে সক্ষম । আমার মনে শান্ত কুটিরে ঝড় তুলে তছনছ করতে যথেষ্ট !
আমি উনার কাঁধ থেকে হাত সড়াতে চাইলে উনি আমার কমোড়ে আরো জোড়ে চেপে ধরে । মনে হয়ে নখ ডেবে কেটে গেছে । আমি আর হাত সড়ানোর চেষ্টা করলাম না ।
উনি এক আঙুলে আমার কানের ঝুমকো নিয়ে খেলা করতে করতে বললেন ,
– “শাড়ী পড়েছেন ভালো কথা । নিজের চকচকা মসৃণ পেট কি সবাইকে দেখানো জরুরী ? ”
আমি সোজাসুজি ভাবে উত্তর দিলাম ,
– “আমি ইচ্ছে করে পেট বের করিনি । আর তাছাড়া শাড়ী পড়লে একটু আকটু পেট দেখা যায়ই । ”
উনি ধমকের স্বরে বললেন ,
– “এমন শাড়ী কেন পড়তে হবে যেটায় পেট দেখা যায় ? ”
আমি কিছু বললাম না । চুপ করে থাকলাম । উনি আবার বললেন ,
– “শাড়ী কি জানো দিয়ে আটকায় ? কি নাম জানো ? পিন ..”
আমি ভোতা মুখ করে বললাম,
– “সেফটিপিন ”
– “হ্যা ঐটাই । এক্সট্রা সেফটিপিন আছে ?”
আমি উনার দিকে ক্রুদ্ধ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে পার্স থেকে থেকে বের করে দিলাম । উনি সেফটিপিন দিয়ে পেট ডেকে শাড়ী আটকিয়ে দেয় । আমি ছোট ছোট চোখ করে তাকিয়ে আছি । এতো দরদ কিসের উনার ?
হঠাৎই কেউ দরজায় টোকা দেয় অগ্নি কমোড় থেকে হাত সড়িয়ে সামান্য দূরে দাড়ায় । কিন্তু এখনো আমার খুব কাছেই রয়েছে ।কেউ দেখলে কেলেঙ্কারী হয়ে যাবে । আমি দূরে যেতে চাইলে উনি গম্ভির কন্ঠে বললেন ,
– “কাল কি বলেছি কথা কানে যায় নি ? বউ তুমি আমার । দেখলে দেখুক ! ”
আমি উনার দিকে অবাক দৃষ্টি তে তাকিয়ে । উনি আমার থেকে চোখ ঘুরিয়ে দরজার দিকে তাকিয়ে বললেন,
– “ভিতরে আয় । ”
উনার বন্ধু তানবীর ভিতরে আসে ।পানির বোতল দিয়ে মুচকি হেসে চলে যায় । পানির বোতলের কেপ খুলে আমার দিকে পানির বোতল বাড়িয়ে দিলেন । আমি কাঁপা কাঁপা হাতে পানি নিয়ে । অর্ধেকটা শেষ করলাম । উনি গম্ভির স্বরে বললেন ,
– “এখন সোজা সিটে যেয়ে বসবে । একটুও নড়বে না । বাহিরের অন্যান্য ছেলেরা এসেছে ।একা থাকা সেফ না ।কিছু প্রয়োজন হলে আমাকে কল করবে । ”
আমি হ্যা বোধক মাথা নাড়িয়ে চলে আসলাম । এক রাতে উনার এমন পরিবর্তন কি ভাবে ? উনি কি তবে সত্যি সত্যি আমাকে ছাড়বেনা ? যদি সুপ্তি ফিরে আসে তখনো না ?
_____________________________
কিছুক্ষণ পরই গানের জন্য স্টেজে আমার নাম ডাকে । আমি শেফার দিকে ভিতু চোখে তাকাই । শেফা আমাকে “অল দ্যা বেস্ট” উইশ করে । আমি মুখে ভিতু হাসি নিয়ে স্টেজের দিকে পা বাড়াই খুব ভয় করছে । এতো দিন পর এতো মানুষের সামনে গান গাওয়া । নার্ভাসনেস কাজ করছে । চোখ বন্ধ করে দীর্ঘ নিশ্বাস নেই । মামা সব সময় বললেন এতে মন হালকা হয় । ভয় কেটে যায় । অনেকটা সাহস নিয়ে স্টেজে উঠি । সুর তুলেছে আমি স্টেজে উঠে অগ্নি কে খুঁজি কিন্তু উনি নেই । আশেপাশে কোথাও নেই । মনে একরাশ অভিমান ভর করে । অভিমানের সাথে চোখ বুজে নিলাম ।
গান ধরলাম,
প্রাণ দিতে চাই ,মন দিতে চাই
সবটুকু ধ্যান সারাক্ষণ দিতে চাই
তোমাকে ,ও …তোমাকে ……
স্বপ্ন সাজাই নিজেকে হারাই
দুটি নয়নে রোজ নিয়ে শুতে যাই
তোমাকে ,ও….তোমাকে ….
জেনেও তোমার আঁখি চুপ করে থাকেভ
রোজ দুফোঁটা যেন আরো ভালো লাগে
গানে ,অভিসারে চাই শুধু বারে বারে
তোমাকে ,ও…. তোমাকে
যেদিন কানে কানে সব বলবো তোমাকে
বুকের মাঝে জাপ্টে ঝড়িয়ে ধরবো তোমাকে ।
পথ চেয়ে রই দেরী করোনা যতি
আর ভোলা যাবেনা জীবনে কখনোই
তোমাকে ,ও ….তোমাকে …… ।
————————
————————
পুরো গান শেষ করে চোখ খুলে তাকাই ।শতশত হাত তালির আওয়াজ । গান গাইতে গাইতে কখন যে চোখের কোনে জল জমেছে টেরই পাইনি । সামনে তাকিয়ে আমার চোখ থমকে যায় । রুহ কেঁপে উঠে । অগ্নি স্টেজের সামনে দাড়িয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে । চোখ মুখ লাল হয়ে আছে । চোখের কোনায় জল । চুল গুলো অগোছালো । যেন উনার উপর বড়সড় কোনো ঝড় গিয়েছে । কি হয়েছে উনার ? এই অবস্থা কেন ?
আমি স্টেজ থেকে তাড়াতাড়ি করে নেমে আসি । আমি আসতে আসতে উনি চোখে পলকে গায়েব হয়ে যায় । ছেলেদের ভিড় । আমি আর সেদিকে পা বাড়ালাম না । ফোন দিলাম ফোনটা ও বন্ধ বলছে ।মনে ভয় আতঙ্ক নিয়ে শেফার পাশে বসে পড়ি । অনুষ্ঠানের দিকে আমার কোনো মন নেই । চোখে শুধু অগ্নির সেই চেহারা ভেসে উঠছে । কোনো ভাবেই নিজেকে শান্ত করতে পারছিনা ।
ঘন্টা খানেক পর মামীর ফোন আসে । মামী থেকে জানতে পারি অগ্নি ঐ বাড়িতে গিয়েছে । কারো সাথে কোনো কথা না বলে সোজা আমার রুমে গিয়েছে । রুমের কাবার্ড থেকে কিছু নিয়ে সাথে সাথে চলে এসেছে । মামী নাকি খুব ডেকেছে কিন্তু কোনো জবাব দেয় নি । খুব রেগে ছিলো ।
এখন আমার খুব ভয় হচ্ছে । কি করবো মাথায় আসছে না । ফোনটাও বন্ধ !
আরো একঘণ্টা কেটে যায় । নিজেকে আর শান্ত রাখতে না পেরে । উনার বন্ধু তানবীরকে উনার কথা জিগ্যেস করি । উনি জানান অগ্নি ভিতরের ভবনে । আমি কোনো কিছু না ভাবেই সেদিকে ছুটে যাই । ভবনের সামনে এসে উনাকে ডাকতে লাগি। কিন্তু কোনো সাড়াশব্দ নেই । অন্ধকার খুব ভয় করছে । আমি শুকনো ঢোক গিলে ভিতরের দিকে যাই । হঠাৎ কেউ পিছন থেকে আমার চোখ বেঁধে ফেলে । আমাকে জোর করে কোলে তুলে নেয় । আমি বার বার জিগ্যেস করি কিন্তু কোনো উত্তর নেই ।
তার শরীরে মিষ্টি ঘ্রাণ আমাকে জানিয়ে দিচ্ছে এটা অগ্নি । কিন্তু হ্ঠাৎ একটা ডাক আমার মাথা আসমান ভেঙে দেয় সব কিছু এলোমেলো করে দেয় ।
সামনের সেই ব্যক্তিটা আমার ঘাড়ে মুখ ডুবিয়ে জড়িয়ে ধরে খুব আদুরে গলায় বললেন ,
– “পরীজাননন”
এই ডাক আমি আগেও বহুবার শুনেছি । হাজার বার শুনেছি । মুহূর্তই ভয়ে আমার হাত কাঁপাকাঁপি শুরু হয়ে যায় । আমার ভয়ংকর অতীত ভেসে উঠে । …
চলবে ….❤️
#শত_ ডানার_ প্রজাপতি
#urme prema (sajiana monir )
পার্ট : ২৪
সামনের লোকটির ঘনঘন নিশ্বাস আমার কাঁধে পড়ছে । চোখের জলে অনেকটাই ভিজে আছে আমার কাঁধ । আমার শরীর ঠান্ডা হয়ে আসছে । ভাবলেশহীন ভাবে দাড়িয়ে আছি । ভয়ে মাথা কোনো কাজ করছে না । আমি ভয়ে ভয়ে বললাম ,
– “আপনি অগ্নি ,তাই না ?”
কিন্তু সামনের থেকে ফিসফিস স্বরে উত্তর আসলো ,
– “না পরীজান ,আমি অগ্নিধ্র অরন্য ,তোমার অরন্য । ”
আমার ভয়ে চুপছে যাই । হঠাৎ করে আবার এত দিন পর নিজের অতীতের মুখোমুখি হতে হবে । তা আমার জানা ছিলোনা । যেই অতীতকে আমি একটা খারাপ স্বপ্ন ভেবে ভুলে যাচ্ছিলাম । সেই অতীত যে আমার বাস্তবরূপ নিয়ে আমার সামনে দাড়াবে তা আমি কল্পনাও করিনি । আমি ভয়ে হাত পা ছুঁড়াছুঁড়ি করতে চাইলে অরন্য খুব শক্ত করে জরিয়ে ধরে । যেন হাতের বাঁধন হাল্কা হলে আমি পালিয়ে যাবো ।
আমি কান্না করতে করতে বলি ,
– “কি চান ? আপনি কেন ফিরে এসেছেন আমার জীবনে? আপনি তো বলেছিলেন আমি আপনার যোগ্য নই । আমাদের মাঝে সেই দেড় বছরের সম্পর্ক আপনার কাছে একটা প্যাংক ছিলো । আমি আপনার বিনোদনের মাধ্যম ছিলাম । কি দোষ ছিলো আমার? কি করেছিলাম আমি? শুধুই তো ভালোবেসে ছিলাম । না দেখে না জেনে আপনাকে ভালোবেসে ছিলাম । পাগলের মত ভালোবেসে ছিলাম । আপনার প্রেমে অন্ধ ছিলাম । কেন আমার সাথে এমন টা করলেন ? কেন? বলুন ?
আপনার যদি বিনোদনের জন্য কাউকে প্রয়োজন ছিলো তাহলে কেন আমার জীবনে এসেছিলেন ? ”
অরন্য ভাঙা স্বরে বললেন ,
– “এতোটা দিন একবারের জন্যও আমার খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করলে না পরীজান ? জানতে চাইলে না কি হয়েছিলো ? আমি যে এক বড় গোলক ধাঁদার মাঝে আটকে ছিলাম । আমি সেদিন এসেছিলাম আমার পরীজানের সাথে দেখা করতে । কিন্তু সেটা তুমি ছিলে না । লাস্ট সাত মাস আমি যাকে পরীজান জেনে এসেছি সে আসলে একটা ছলনা ছিলো । এই সাতটা মাস মিথ্যা ছিলো। আজ জানলাম তুমি আমার পরীজান । আজ যদি গান না শুনতাম তবে আজও আমি ভুল ধারনা নিয়ে বেঁচে থাকতাম ।হুর আমি তোমার গানে পাগল হয়েছিলাম । আমিও তোমাকে পাগলের মত চেয়েছি ইভেন এখনো পাগলের মত চাই ।
সেদিন আমি সত্যি এসেছিলাম তোমার সাথে দেখা করতে কিন্তু আমার যার সাথে দেখা হয় তা তুমি ছিলে না । আ.. ”
আমি উনাকে কিছু বলতে না দিয়ে তাচ্ছল্যের হাসি দিয়ে বললাম,
– “আবার নতুন মিথ্যা । তাই না ? কিসের ভালোবাসার কথা বলছেন ? হ্যা কিসের ভালোবাসা । আপনি অস্বীকার করতে পারবেন সেদিন আপনি আমাকে মেজেজ করে বলেন নি যে আপনি আমার সাথে টাইম পাস করেছেন ? আমার সাথে কথা বলা থেকে শুরু করে সব কিছু আপনার প্যাংকের অংশ ছিলো । আমি আমাকে নিজে মেসেজে বলে ব্লক করে দিয়েছিলেন । ”
উনি উত্তেজিত স্বরে বললেন ,
– “হ্যা হুর আমি বলেছিলাম । কিন্তু এগুলো কোনো কিছু করিনি । তুমি একবার শান্ত ভাবে আমার পুরো কথাটা শুনো ।সেদিন কি হয়েছিলো ..
– “কি বলবেন আর ? আমার কোনো নতুন মনগড়ান কাহিনী শুনাবেন । জানেন এক সময় আপনাকে এক পলক দেখার জন্য পাগল ছিলাম । সেদিন আপনার একটা মেসেজ আমার পুরো দুনিয়া এলোমেলো করে দিয়েছিলো । পাগলের মত কান্না করেছিলাম । বার বার মনে একটা কথা জাগছিল যে কেন আপনি এমন করলেন ? আমি আপনাকে পাগল পাগল হয়ে খুঁজেছিলাম । কি না করেছি আমি !
কত কষ্টে দিন পাড় করেছি । কত বার সুইসাইড করার চেষ্টা করেছিলাম ।
কিভাবে নিজেকে সামাল দিয়েছি আপনার আইডিয়া আছে ? কত রাত নিদ্রাহীন চোখের অশ্রু ফেলে কাটিয়েছি ।জানেন ?
কিন্তু আজ? আজ মনে হচ্ছে আপনাকে দেখার আগে আমার মৃত্যু হোক । চাইনা আপনাকে দেখতে আপনার পরিচয় জানতে । অনেক কষ্টে সব ভুলেছি । আপনাকে দেখলে আবার সব এলোমেলো হয়ে যাবে । আর এবার আমি আর নিজেকে সামাল দিতে পারবো না মৃত্যু আমার জন্য একমাত্র পথ থাকবে ।
আপনি আমার জীবনের সবচেয়ে বড় অভিশাপ । আপনার জন্য আমার অতীত বর্তমান সব আদারে ডেকে গেছে । আজ আপনি আমাকে মেরে সব শেষ করেন । না হয় আমার থেকে সারাজীবনের জন্য দূরে সরে যান । কোনো দিন আমার সামনে আসবেন না । ”
অরন্য আমার হাত ছেঁড়ে দেয়। হয়তো আমার থেকে এমন কিছু আশা করেনি । কোনো সাড়াশব্দ নেই । আমার চোখ এখনো বাঁধা । অরন্য কাঁপা কাঁপা স্বরে বললেন ,
– “পরীজান তোমাকে শেষ করে দেওয়ার মত শক্তি সাহস আমার নেই । আমার বেঁচে থাকার কারণ তুমি । এতোদিন শুধু নিজেকে প্রশ্ন করতাম কেন আমি বার বার তোমার কাছে ছুটে আসি ? কেন তোমার নেশায় পড়ি বার বার? কেন তোমাতে এতোটা মগ্ন থাকি । আজ নিজের সব প্রশ্নের উত্তর পেয়েছি । এতো দিন পর তোমাকে পেয়েছি । নিজের থেকে কি করে দূরে যেতে দেই বলো ? আমাদের ভাগ্যে অনেক আগেই একে অপরের সাথে জুড়ে গেছে । তুমি চাইলেই আমার থেকে দূরে যেতে পারবে না । না দুনিয়ার কোনো শক্তি পারবে তোমাকে আমার থেকে আলাদা করতে । তুমি চাইছো তো আমার পরিচয় না জানতে ? ঠিক আছে আমি বলবো না আমার পরিচয় । কিন্তু মনে রেখ তোমাকে নিজের থেকে আলাদা করছিনা । আমার চাওয়া এতোটা প্রখর হবে যে তুমি আবার আমাকে ভালোবাসবে । ”
আমি কোনো উত্তর দিলাম না । চুপ করে রইলাম চোখ থেকে এখনো পানি ঝোড়ছে । অরন্য আমার কপালে গালে ঠোঁটে নিজের আলতো স্পর্শ দিয়ে আমার ঘাড়ে মুখ ডুবায় । আমি কোনো ঘোরের মাঝে আছি । বাঁধা দেওয়ার শক্তি আমার মাঝে অবশিষ্ট নেই । বেশ কিছুক্ষণ পর আমার কানের কাছে মুখ এনে আদুরে আলতো স্বরে বললেন ,
– “সুন্দরী !! তুমি আমার শুধুই আমার । এতো ভালোবাসা দিবো তোমার সব কষ্ট মান অভিমান ভুলিয়ে দিবো । ”
এতোটুকু বলেই আস্তে আস্তে সে চলে যায় আমি তাড়াতাড়ি নিজের চোখের বাধঁন খুলে ফেলি। পুরো কক্ষ অন্ধকার । কেউ নেই । অরন্যের “সুন্দরী” ডাকটা এখনো কানে বাজছে । কেন অগ্নি আর আরন্যের মাঝে এতো মিল ? অরন্য কেন এই নামে ডাকলো ? তবে কি অরন্য আর অগ্নি একজনই ? আমি তাড়াতাড়ি বাহিরে এসে অগ্নিকে খুঁজতে লাগি কিন্তু উনি নেই । কোথাও নেই ।
মায়ের থেকে জানতে পারি উনি গেস্টদের সাথে আছে । মা কে মাত্রই ফোন করে জানিয়েছেন ।
_________________________
গাড়ীতে বসে আছি এক পাশে মা অন্যপাশে অগ্নি ।মাঝে আমি । ড্রাইভার গাড়ি ড্রাইভ করছে । অন্ধকার নেমেছে অগ্নি সিটে হ্যালান দিয়ে বসে চোখ বন্ধ করে আছে । আমার মনে হাজারো প্রশ্ন জাগছে । অরন্য কি অগ্নি ? তখন এবার দেখে নিলেই পারতাম । কিন্তু উনাকে দেখলে যে নিজেকে সামাল দিতে পারতাম না !
মনের ঘাঁ যে আবার জেগে উঠতো ।চোখের সামনে ছলছল করে অতীত ভেসে উঠে ,
অতীত_______
মাত্রই স্কুলের দুয়ার পেড়িয়ে কলেজে যাওয়ার প্রহর গুনছি । আজ কলেজের প্রথম দিন জীবনের নতুন ধাপ শুরু হচ্ছে । মামা নতুন ফোন উপহার দেয় । আমিও বেশ আনন্দের সাথে তা গ্রহণ করি । আমার ক্লাসের সব মেয়েদের কাছেই সেলফোন ছিলো । শুধু আমার ছিলো না । ফোন পেয়েই আনন্দে নেচে উঠি । সব সময়ের মত আমি সুপ্তি আর শেফা একই কলেজে একই সাব্জেক্টে ভর্তি হই । দিন বেশ ভালোই যাচ্ছিলো । নতুন পরিবেশ নতুন সব ফুরফুরে মন । মামার থেকে সব ধরনের স্বাধীনতা পেলেও ফেসবুক ইউজ করার কোনো রকম অনুমতি আমার ছিলো না । কেন জানিনা মামা খুব একটা পছন্দ করতেন না ।
ক্লাসের সব মেয়েদেরই ফেসবুক ইউজ করতে দেখতাম । আমারো মনে খুব ইচ্ছে জাগতো ফেসবুক চালানোর । কিন্তু সেই সাথে মামার ভয় ও ছিলো । মনে সাথে অনেক যুদ্ধ করে সেদিন প্রথমবারের মত মামার অবাধ্য হই । আর এই অবাধ্যতাই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় কাল হয়ে দাড়িয়েছিলো ।
একদিন কলেজ থেকে সুপ্তিদের বাড়িতে যাই । আমি শেফা সুপ্তি এক সাথে খুব আড্ডা দেই ।আড্ডার মাঝে সুপ্তি আর শেফার সামনে ফেসবুক চালানোর ইচ্ছেটা জাহির করি । সুপ্তি শেফা অনেক বুঝিয়ে আমার ভয় কম করলো ।সেদিন ফোনে ফেসবুক ইন্সটল করি । নিজের নামে কোনো আইডি খুলি না । যদি মামা কোনো ভাবে জানতে পারে ? খুব রেগে যাবে ! তাই সুপ্তির একটা আইডি লগইন করি । যেটা মাঝে মাঝে শেফাও ইউজ করে । ঐ আইডি তিনজনের কমন আইডি ছিলো । প্রফাইলে ছিলো সুপ্তির হাতের ছবি । আর নামও ছিলো অন্য । বেশ কয়েকদিন কেটে যায়। আমার দিনও খুব ভালো যাচ্ছিলো ।শেফার বার্থডে তে ইনভাইট করে । রাত হওয়ার সেদিন তাদের বাড়িতে থেকে যাই । রাতে ঘুমানোর আগে শেফার কাজিনদের সাথে আমি ,শেফা , সুপ্তি আড্ডা দিচ্ছিলাম । আড্ডার সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং পার্ট ছিলো ট্রুথ অর ডেয়ার গেম ।খেলার সময় বোতলের মুখ আমার দিকে পড়ে । আমাকে জোরপূর্বক ডেয়ার দেওয়া হয় । আর গান গাইতে বললেন । আমি পরিনীতা মুভির “তোমাকে “গানটা গাই । এদিকে শেফা তা ভিডিও করে । কলেজের আড্ডা গ্রুপে শেয়ার করে । অন্ধকার হওয়ায় চেহারা দেখা যাচ্ছেনা ।শুধু ছায়া দেখা যাচ্ছে আর হাতের গিটার টা । ঘন্টার মাঝেই শতশত মানুষের সাড়া । আমি শেফার সাথে রাগারাগি করে ভিডিও ডিলিট করে দেই । রাত বারটা ফেসবুকিং করছিলাম । হুট করে মেসেজ রিকোয়েস্টে চোখ যায় । চেক করে দেখি “অগ্নিধ্র অরন্য”নামে কেউ টেক্সট পাঠিয়েছে । নাম দেখে খুব ইন্টারেস্টিং লাগছে । আমি মেসেজ চেক করে দেখি হাই লেখে নক করেছে। আমি সিন করে ফেলে রেখে দিলাম । উনি আমার মেসেজ পাঠিয়েছে
– “ইগো দেখাচ্ছেন ?”
আমি এবার উত্তর দিলাম ,
– “মটেও না । আমি অপরিচীতদের সাথে কথা বলি না ।
– “আপনি চাইলে আমরা পরিচীত হতে পারি !”
– “বিশেষ কোনো কারণ আছে কি ?”
উনার মেসেজ ,
– “হুম আছে তো । অবশ্যই আছে । এই যে আপনি আমার রাতের ঘুম হারাম করলোন তার দায়ভার কে নিবে ? শুনি? ”
– “আমি? আমি কি করে হারাম করলাম ? ”
– “উমম ঠিক আপনার দোষ দেওয়া যায় না আপনার গান আপনার স্বর আমার ঘুম হারাম করেছে । ”
আমি আনমনে হেসে মেসেজ পাঠালাম ,
– “আপনার মনে হচ্ছে না আপনি খুব অযুক্তিক কথা বলছেন ? আমার গানে এমন কি ছিলো যে আপনার ঘুম হারাম হয়েছে ? তাছাড়া আমার থেকে অনেক ভালো গায়ক গায়িকা আছে সবার গান শুনেই কি আপনার ঘুম হারাম হয়? ”
উনি দাঁত বের করে হাসির ইমোজি দিয়ে মেসেজ পাঠালেন ,
– “সবার টায় না আপনার টায় হয়েছে । বায় দ্যা ওয়ে আপনার নাম কি ? বাড়ি কোথায় ? ”
– “আপনাকে কেন বলবো? আমি তো আপনাকে বলতে বাধ্য নই । ”
– “আপনি নিজের নাম আর বাড়ির নাম বললে নিশ্চিত আমি আপনার বাড়িতে দাওয়াত খেতে আসবো না । আমি তো জাস্ট এতটুকু জানতে চেয়েছিলাম যে যার কন্ঠ এতো সুরেলা তার নাম কি হতে পারে ? আর সে কোন দুনিয়ার লোক ? এই দুনিয়ার নাকি মায়ারাজ্যের ? ”
– “আপনার মনে হচ্ছেনা আপনি বাটারিং করছেন? ”
– “নো ওয়ে ! একদমই না ।
আমি সত্যিটা বলছি ।
আপনার নাম কি ? আর কোথায় থাকেন ? ”
– “আমি আসমানে থাকি । শুনে খুশি হয়েছেন ? ”
অপর পাশ থেকে হাসির ইমোজি দিয়ে মেসেজ আসে ,
– “তাহলে আমি আপনাকে পরীজান বলতে পারি ? ”
– “এজ ইউর উইশ ”
সাথে সাথে অরন্য নিক নেম চেঞ্জ করে পরীজান দেয় ।সেদিন থেকে উনার সাথে কথা শুরু হয় । উনার কথা গুলো আস্তে আস্তে আমাকে দুর্বল করে দেয় । উনার পাগলামো গুলো আমাকে খুব অবাক করতো । উনার সাথে কথা বলার পূর্বে উনাকে শর্ত দেই কোনো দিন আমার পরিচয় জানতে চাইবেনা কখনো আমার ছবি দেখতে চাইতে পারবে না । উনি সাথে সাথে রাজী হয় । উনার সাথে রাতের পর রাত কথা হয় । ফোনে ঘন্টার পর ঘন্টা কথা হয় । একদিন হুট করে অরন্য আমাকে প্রপোজ করে আমি কোনো উত্তর দেই না । আমার মনেও উনার জন্য অনুভূতি আছে । কিন্তু আমি আরো কিছুদিন উনার পরিক্ষা নিতে চাই । আমি দেখতে চাই তার ভালোবাসার গভীরতা কতটা ?
একবছর কেটে যায় । আমি তখন সেকেন্ড ইয়ারে । অনেক ভেবে সিদ্ধান্ত নেই আমি অরন্য কে আমার মনের কথা জানাবো । উনার সাথে দেখা করবো । অরন্যকে জানাতেই সে রাজি হয়ে যায় । যেন এই অপেক্ষা তেই ছিলো । ডেট ফিক্সড করা হয় নববর্ষের দিন । কলেজে প্রোগ্রাম সেদিন । আর ঐদিনই আমরা দেখা করবো ।অরন্যের পরিচয় আমারো জানা ছিলোনা আমিও অরন্যের মত না দেখে না জেনে তাকে ভালোবেসে গেছি । শুধু তার কন্ঠ কে ভালোবেসেছি ।
সুপ্তি আর শেফাকে জানাই । শেফা শুনে খুব খুশি হয় । কিন্তু সুপ্তির হয়তো ভালো লাগেনি । আমি নববর্ষের দিন চোখে হাজার স্বপ্ন নিয়ে খুব সুন্দর করে সেজে শাড়ি পড়ে যাই। নির্ধারিত জায়গায় নির্ধারিত সময়ে উনার অপেক্ষা করি । কিন্তু উনার কোনো খোঁজ নেই । উনাকে ফোন দেই ফোনটাও বন্ধ । এক ঘন্টা দুই ঘন্টা কেটে যায় কিন্তু তার দেখা নেই । সকাল থেকে বিকাল হয়ে যায় কিন্তু উনি আসে না । কিছুক্ষন পর ঝড় শুরু হয় । আমি বৃষ্টি তে ভিজে উনার অপেক্ষা করি । কিন্তু উনি আসে না । সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে আসি । মামী ভেজা শরীর দেখে রাগারাগি করেন আমি কোনো উত্তর না দিয়ে নিজের রুমে চলে যাই । বার বার তার ফোনে ফোন দেই কিন্তু বার বার বন্ধ বলছে । আমার আইডি তেও লগইন করে পারিনা । আইডি ডিজেবল হয়ে গেছে । কোনো রাস্তা না পেয়ে সারারাত কান্না করি । চিৎকার করে কান্না করি । আমি অরন্য কে পাগলের মত ভালোবেসে ফেলে ছিলাম । সারাদিন কিছু না খেয়ে বৃষ্টি তে ভেজার কারনে সেন্সলেস হয়ে যাই । যখন জ্ঞান ফিরে নিজেকে হসপিটালের বেডে আবিষ্কার করি । বাড়িতে
ফিরতেই আবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করি কিন্তু একটা আননোন নাম্বার থেকে মেসেজ দেখে চোখ আটকিয়ে যায় । মেসেজটা ছিলো ,
“আমি অগ্নিধ্র অরন্য । তোমার সাথে আমার এতো দিন যে সম্পর্ক ছিলো তা একটা প্যাংক ছিলো । আমি তোমার সাথে টাইম পাস করেছি । আমি তোমাকে ভালোবাসি না । যা ছিলো সব অভিনয় । আমার সাথে কোনো যোগাযোগ করার চেষ্টা করবে না । ”
মেসেজটা দেখেই আমার মাথায় আসমান ভেঙে পরে । সব কিছু এলোমেলো হয়ে যায় । মাথা কাজ করা বন্ধ করে দেয় । আমি বেশ কয়েক বার সুইসাইড করার সিদ্ধান্ত নেই । এমনকি চেষ্টা ও করি । কিন্তু মামার মুখের দিকে তাকিয়ে পারিনা । নিজের মনের কথা শেয়ার করার জন্য কাউকে খুব দরকার ছিলো । তাই নিজের সবসময়ের বন্ধু আমার “শত ডানার প্রজাপতি “ডায়রীতে লিখে রাখি । আস্তে আস্তে নিজেকে সামাল দিতে লাগি ।
বর্তমান____________
আমি নিজের কল্পনা জগত থেকে বেরিয়ে আসি । ছোট্ট একটা নিশ্বাস নেই । কেন জানি বার বার মনে হয় অগ্নি আর অরন্য একজনই । কিন্তু সুপ্তির আর অগ্নির রিলেশনের কথা মনে পড়লে সব অগোছালো হয়ে যায় । অগ্নি তো সুপ্তি কে পাগলের মত ভালোবাসে । তাহলে আমার সাথে কেন এমন করবে ?
এসব ভেবে অগ্নির দিকে তাকাতেই দেখি অগ্নি আগের মত সিটে হ্যালান দিয়ে আমার দিকে ছোট ছোট চোখ করে তাকিয়ে আছে। আজ এই চোখে স্পষ্ট আমার জন্য ভালোবাসা দেখছি । উনি আমার হাত উনার হাতের মাঝে নিয়ে মুগ্ধ হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বিরবির করে বললেন ,
– “কখনো তোমার হাত ছাড়বো না পরীজান ”
চলবে …❤️
প্লিজ সবাই সবার মতামত জানাবেন । ভুল ত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন 😊😊😊 ।