শত ডানার প্রজাপতি পর্ব-৩১+৩২+৩৩

0
4559

#শত_ ডানার_ প্রজাপতি

#urme prema (sajiana monir )

পার্ট : ৩১

ডিসেম্বর মাস কনকনে শীত। ছোট দিন । পাঁচটা বাজতেই বেলা ডুবে । এখন ঘড়িতে চারটা বাজতে চলছে । দিনের আলো আস্তে আস্তে ফুরিয়ে আসছে । সূর্যটা পশ্চিমা আকাশে হেলে আছে । আমি আয়নার সামনে দাড়িয়ে চুল ব্রাশ করছি । এইতো শেফা এলো বলে ।
নিজেকে হাসি খুশি রাখতে সামান্য সেজেছি । পড়নে ডায়মন্ড জর্জেটের কলারওয়ালা কালো গ্রাউন । সামনের দিকে গোল্ডেন শো বাটন । চোখে গাঢ় করে কাজল ।ঠোঁটে হাল্কা গোলাপি লিপস্টিক । গলায় অগ্নির দেওয়া সেই চেইনযুক্ত লকেট । হাতে সিম্পল স্টোনের চুড়ি । চুল গুলো ছেড়েই রেখেছি । এমন সময়ই শেফার আগমন ঘটে । সব সময়ের মত আমাকে দেখেই জড়িয়ে ধরে বললো,

– “হায় মেরি জান! পুরো আগুন লাগছে । আজ তো উনি দেখেই হার্ট এটাক করবে । ”

শেফার কথায় ভ্রু কুঁচকিয়ে বলি ,

– “এই উনি টা কে ? ”

শেফা আমতা আমতা করে বললেন ,

– “কে আবার ,আমার হবু বর । তুই যে ভাবে সাজগোজ করেছিস না ।তোর দিকেই তাকিয়ে থাকবে আমাকে আর দেখবে কই ? ”

– “হয়েছে তোর আজগুবিকথা ? এবার বের হই ? ”

– “হুম চল চল । এমনিতেই অনেক লেট হয়ে গেছে । ”

দুজন রেস্টুরেন্টের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম । কিছুক্ষনের মাঝেই বড় এক রেস্টুরেন্টের সামনে অটো থামে । ভাড়া মিটিয়ে । দুজন ভিতরে যাবার জন্য পা বাড়ালাম । কাচের ভারী দরজা খুলতেই চোখ কপালে । অনেক বড় রেস্টুরেন্ট । ওয়েটার আমাদের উপরে বসতে বললেন । আগের থেকেই নাকি আমাদের জন্য উপরে রফটপে টেবিল বুক করে রেখেছেন । চিকন কাঠের সিড়ি বেয়ে উপরে উঠি । পরিবেশ দেখে চোখ মুগ্ধতায় জুড়িয়ে যায় । অসম্ভর সুন্দর করে সাজানো । উপরের সিলিং কাচের । আর সেই কাচের উপরে লতাপাতা বেয়ে উঠেছে । মাঝে মাঝে ফুল। অসম্ভব সুন্দর লাইটিং । চারদিকে বাহারি রকমের গাছ । ফুলে ফুলে ভরা । মাঝেই ছোট এক ঝর্না । মনে হচ্ছে বাহিরের দেশে কোনো রেস্টুরেন্টে বসে আছি । খুব ইউনিক ভাবে সাজিয়েছে । এখানে খুব একটা মানুষজন নেই । দু একটা টেবিলে রয়েছে । আমি আর শেফা বুক করা টেবিলে বসে পড়ি ।ভিআইপি ভাবে সাজানো ।
খেয়াল করে দেখি ঠিক একই ভাবে আরেকটা টেবিল সাজানো ।কিন্তু কিছুটা পরিবর্তন । ঐ টেবিলে ক্যান্ডল আর কালো গোলাপের একটা বুকে রাখা । কালো গোলাপ সহজে পাওয়া যায় না । খুব এক্সপেন্সিভ হয় ।
কালো গোলাপ দেখেই অরন্যের স্মৃতি মনে পড়ে । একবার ফোনে অর্রন্যকে বলেছিলাম আমার কালো গোলাপ দেখার খুব শখ । সেদিন অর্রন্য বলেছিলো যেদিন আমার সাথে প্রথম ডেট করবে সেদিন আমার জন্য কালো গোলাপের বুকে নিয়ে আসবে । আনমনেই এসব ভেবে মুখে তাচ্ছিল্যের হাসি চলে আসে । মানুষ কত টা ছলনাকারী হয় । আমার জীবনের সবচেয়ে বড় আঘাত অরন্যের থেকে পাওয়া । অর্রন্যের জন্যে আজও আমার সব শখ স্বপ্ন বিষের ন্যায় মনে হয় । নিজের প্রতি রাগ ঘৃণা হয় ।
সামনের টেবিলটা নিশ্চয় কেউ তার ভালোবাসার মানুষের জন্যে এতোটা সুন্দর করে সাজিয়েছে ।

আমি ফোন হাতে নিয়ে ঘাটাঘাটি করছি । অগ্নি না ফোন করেছে , না কোনো মেসেজ দিয়েছে । প্রচন্ড রাগ হচ্ছে । এমন কেন উনি ? এখন নিজের উপর আরো বেশি রাগ হচ্ছে । উনার থেকে কেন এতোটা আশা করছি । আমি নিজেই তো অগ্নি থেকে দূরে থাকতে চেয়েছি । মুক্তি চেয়েছি । কিন্তু এখন কেন আমার এতোটা কষ্ট হচ্ছে ? কেন অগ্নির জন্য প্রত্যেকটা সেকেন্ডে কষ্ট পাচ্ছি ? যখন অগ্নির সাথে ছিলাম তখন তার কাছে আসা আমাকে কষ্ট দিয়েছে । আর এখন অগ্নির থেকে দূরে আছি । ওর দূরে থাকাটা আমাকে কষ্ট দিচ্ছে । না মেনে নিতে পারছি না নিজের থেকে দূরে সরিয়ে দিতে পারছি । এই কেমন দোটানায় পড়েছি ?
এসব ভাবতে ভাবতে ফোনটা টেবিলে আছাড় দিয়ে রাখি । সজোরে ফোন রাখায় শেফা কিছুটা কেঁপে উঠে । আমার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে ,

– “কি হয়েছে এমন রেগে আছিস কেন? ”

– “কিছুনা এমনিই ভালো লাগছে না । তোর হবু বর কত দূর ? ”

শেফা সিড়ির দিকে তাকিয়ে উৎসাহী স্বরে বললেন ,

– “ওই যে এসে গেছে !”

আমি সিড়ির দিকে তাকিয়ে বড়সড় বিষম খাই । তানবীর ভাই ? শেফার হবুবর তানবীর ভাই? অগ্নির সবচেয়ে কাছের বন্ধু । কেন বোন দুনিয়ায় কি ছেলের অভাব ছিলো ? বেছে বেছে উনাকেই বিয়ে করার জন্য পেলো ?
তাদের কি আগের থেকেই সম্পর্ক ছিলো? নাকি বাড়ি থেকেই বিয়েটা হচ্ছে ।
আমি শেফার দিকে বিষ্মকর চোখে তাকিয়ে আছি । শেফার হয়তো আমার চাহনি তে আমার মনের কথা বুঝেছে । আমার দিকে দাঁত বের করে ভিতু হাসি দেয় ।আমি চোখ ঘুরিয়ে সামনের দিকে তাকাতেই আসমান থেকে পরি । তানবীর ভাইয়ার পিছনে অগ্নি । পুরো হিরোদের মত এন্ট্রি নিয়েছে। আমাদের দিকেই আসছে । মুহূর্তেই চোখে মুখে খুশির জোয়ার উঠে । মনে সমুদ্রের বিশাল ঢেউ খেলছে । কিন্তু খুব বেশিক্ষণ এই ঢেউ খেলতে দিলাম না । মুখ ভার করে রাখলাম । মন তেতো অভিমানে ভার হয়ে যায় । দুদিন আমার কোনো খোঁজ খবর নেয়নি ।একটা ফোন পর্যন্ত করেনি । আমি কেন উনার দিকে তাকাবো ? না উনার দিকে তাকাবো! না কোনো কথা বলবো ।
আমি অপরিচীতদের মতই থাকবো । উনি উনার বন্ধুর সাথে এসেছে । আর আমি আমার বান্ধবীর সাথে । আমি উনাকে চিনি না । হুহ !

অগ্নি ঠিক আমার সামনা সামনি বসেছে । খুব স্টাইল নিয়ে । আড়চোখে উনার দিকে তাকাই । পড়নে কালো জেকেট ভিতরে কালো টিশার্ট । হাতে ঘড়ি । চুলগুলো জেল দিয়ে ব্রাশ করা । উনাকে কালোতে যা লাগছে না । একদম চকলেট বয় । চোখে লেগে থাকার মত সুন্দর লাগছে ।
দুদিন ধরে বউ বাড়ি থেকে চলে এসেছে কোথায় দেবদাশ হয়ে থাকবে তা না । উনি এই দুদিনে আরো হিরো হয়েছে । বদ লোক একটা । আমি নিজের চোখকে কন্ট্রোল করে অন্যদিকে তাকাই । এই লোকের দিকে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকলে ঘোরে চলে যাই । আমি চোখ ফিরিয়ে সামনের দিকে তাকাই । তানবীর ভাই আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে ,

– “কেমন আছেন ভাবী জি ? ”

– “জি ভাইয়া ভালো । আপনি কেমন আছেন? ”

– “জি ভাবী ভালো আছি । খুব অপেক্ষা করায়নি তো ! ”

– “না না ভাইয়া । আমরা এইতো মাত্রই এসেছি । ”

আমি আবার আড়চোখে অগ্নির দিকে তাকাই অগ্নি চেয়ারে হেলান দিয়ে আরামে বসে আছে । ঠোঁটে মিষ্টি হাসি মাখানো । চোখ দুটো আমার দিকে নেশাগ্রস্থ ভাবে তাকিয়ে । উফফ এই চাহনি আমার বুকে তীরের মত লাগছে । আমি ঢোক গিলে চোখ ঘুরিয়ে ফেলি । তানবীর ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে জিগ্যেস করি ,

– “তো ভাইয়া কি ভাবে আমার বান্ধবীর সাথে পরিচয় ? ”

তানভীর ভাইয়া অভাক চোখে তাকিয়ে বললেন,

– “কি ভাবী আপনার বান্ধবী আপনাকে কিছু জানায়নি?
আমরা তো রিলেশন ছিলাম । তার পর বাড়িতে বিয়ের জন্য জানাই । আর সবাই মেনে নেয় । ”

আমি ড্যাবড্যাব চোখে একবার তানবীর ভাইয়ার দিকে তাকাই আরেকবার শেফার দিকে । এই মেয়ে এতো বজ্জাত কেন? এতো কিছু হলো আমাকে জানায় নি ! এই তার বন্ধুত্ব ?
শেফা আমার রাগী দৃষ্টি দেখে । আমতা আমতা করে বলে ,

– “দোস্ত না রাগ করছিস কেন! আমি তো সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলাম । ”

আমি দাঁতে দাঁত চেপে বলি ,

-“আনফরচুনেটলি! শক খেয়ে বসে আছি ! ”

শেফা ভোলাভালা চেহারা করে বললেন,

– “দেখ আমার কোনো দোষ নেই । আমি তোকে আগেই বলেছিলাম আমি এক ছেলের সাথে রিলেশনে আছি । ওই যে বলেছিলাম না সাইকো । উনিই সেই সাইকো । ভাবলাম এতো পাগলের মত ভালোবাসে বিয়েই করে নেই । ”

তানবীর ভাইয়া শেফার কথায় হা করে তাকিয়ে আছে । অগ্নি টেবিলের উপর হাত রেখে । ছোট চোখ করে আমার দিকে তাকিয়ে । শেফাকে বলে ,

– “তোমার বান্ধবী আবার ভালোবাসা খুব একটা বুঝে না । তাকে বুঝিয়ে লাভ নেই ”

– “হ্যা আপনি তো ভালোবাসায় পিএইচডি করেছেন তাই না? ”

– “হুম করেছি তো ? তোমার মত তো না অবুঝ ! ”

আমাদের দুজনের ঝগড়া দেখে তানবীর ভাইয়া করুন স্বরে অগ্নির দিকে তাকিয়ে বললেন ,

– “ভাই তোরা আমার এতো সুন্দর ডেটটা কে যুদ্ধক্ষেত্র কেন বানাচ্ছিস ? ”

আমি আর অগ্নি দুজন চুপ হয়ে যাই । আমি অন্যদিকে ফিরে তাকাই । অগ্নি আমাকে উদ্দেশ্যে করে বললেন,

– “চলো ওই টেবিলে ! ”

আমি রেগে উত্তর দেই,

– “কেন? আমি কেন যাবো? আপনি ঝগড়া করেছেন আপনি যান ।”

অগ্নি আমার দিকে ঝুকে নিচু গলায় বললেন,

– “সত্যি! তোমার কমনসেন্সের অভাব । ওরা ডেটে এসেছে একটু তো এদের প্রাইভেসি দেও ।”

আমি আর কথা বাড়াই না । সত্যি তো ডেটে এসেছেন । একটু তাদের একা ছেড়ে দেওয়া উচিত । একান্ত কিছু মুহূর্তের জন্য । যেহেতু শেফা আগের থেকে তানবীর ভাইয়ার চেনাজানা তাহলে শুধু আমাকে নিয়ে আসার কি দরকার ছিলো । মাথায় ডুকছে না ।
অগ্নির আমাকে উনার সাথে যেতে বলে আমি উনাকে ফলো করি । উনি পাশের সেই সাজানো টেবিলটায় । ওয়েটার এসে ক্যান্ডল গুলো জ্বালিয়ে দেয় । আমি চাপা স্বরে অগ্নিকে বলি,

– “অন্যকারো বুক করা টেবিলে বেসেছেন কেন ? দেখছেন ডেকোরেশন করা । হয়তো কাউকে সারপ্রাইজ দিবে । উঠুন অন্য টেবিলে চলুন । ”

আমি উঠে যেতে নেই । অগ্নি তার আগেই আমার হাত টেনে বসিয়ে দেয় । আমি ছোট ছোট চোখ করে তাকিয়ে আছি । অগ্নি আমার দিকে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে বললেন ,

– “উঠতে হবে না । আমিই এই টেবিল বুক করেছি । ”

– “কার জন্য ? পাত্রী খুঁজছেন? নিশ্চয় পাত্রী খুঁজছেন !
আমি চলে এসেছি দুদিন হলো না এর মাঝে পাত্রী খোঁজা শুরু করে দিয়েছেন ? বাহ ! এই আপনার ভালোবাসা ? আপ্নি..

আমি আর বলতে পারলাম না তার আগেই উনার ধমক পড়ে । আমি চুপ হয়ে যাই । উনি রেগে বললেন,

– “এতো বাজে বকবক করো কেন তুমি ? আমার পুরো কথা না শুনেই নিজের আকাশকুসুম কাহিনী বানিয়ে ফেলছো । আমি কি একবার ও বলেছি আমি এসব অন্যকারো জন্য করেছি? কেন তোমার মাথায় কি নিজের নাম আসে না ? মাথামোটা মেয়ে ! মুড নষ্ট করার জন্য তুমি গ্রেড । ”

আমি হা হয়ে আছি । এসব কিছু আমার জন্য ? আমার ? মুহূর্তেই মন খুশিতে ভরে গেল । আমি খুশি হয়ে উল্লাসিত স্বরে বলি ,

– “এসব আমার জন্য ? ”

– “তো আমার কি আর চার- পাঁচটা বউ আছে? যে তাদের জন্য এসব করবো? ”

– “কথার সোজাসুজি উত্তর দিতে পারেন না? শুধু রাগ করেন । কাল বাড়ি থেকে আসার সময় ও রাগ দেখিয়েছেন । দুদিন এবারের জন্য ফোন দেননি । যোগাযোগ করেন নি । তো আমি তো এসব বলবোই ”

– “তুমি রাগিয়ে দেও কেন? আর আমাকে ছেড়ে আসার জন্য যে ভাবে উতলা হয়ে আছিলে রেগে তো যাবোই । সারারাত আমার বুকে ঘুমিয়েও তোমার জেদ বিন্দু মাত্র কমেনি সকালেই ড্যাং ড্যাং করে ব্যাগ গুছিয়ে বাড়িতে চলে এসেছো ।আমি রাগ করবো না ? চাটবো ? ”

– “আর দুদিন ফোন করলেন না যে ?”

মুখ ফুলিয়ে উত্তর দিলেন ,
– “আমি তোমার সাথে রেগে ছিলাম । ”

– “তাহলে আজ রাগ কি করে টাই টাই ফুস হলো ? ”

উনি রেগে উত্তর দেয় ,

– “আমি তো আর তোমার মত নির্দয় না । পারছিলাম না তোমাকে না দেখে থাকতে । পাগল হয়ে যাচ্ছিলাম । তাই এসেছি আজ না দেখলে নির্ঘাত মরে যেতাম ! ”

আমি উনার কথায় কিটকিটে হেসে দেই।আমার হাসিতে উনি আরো রেগে নাক ফুলাতে লাগে । আমি খুব কষ্টে ঠোঁট চেপে হাসি আটকাই । অগ্নি প্রত্যেকটা কথা বাচ্চাদের মত ঠোঁট ফুলিয়ে করছিলো । বাচ্চারা যেমন খেলনা হারিয়ে ফেলে অভিযোগ করে অগ্নিও তেমনটাই করছিলেন ।অগ্নির এই বাচ্চা রূপ প্রথমবার দেখলাম । ইচ্ছে করছে উনার লাল নাকটা একটু টেনে দেই । কিন্তু তা এখন করা যাবেনা । আমি তো অগ্নির উপর রেগে আছি । তা তো উনাকে বুঝাতে হবে । তাই মুখে সাথে সাথে ভারী ভারী ভাব আনলাম ।

চলবে …..❤️

#শত_ ডানার_ প্রজাপতি

#urme prema (sajiana monir )

পার্ট : ৩২

গালে হাত দিয়ে আশে পাশে চোখ বোলাচ্ছি । শেফা তানবীর ভাই চুটিয়ে প্রেম করছে।আশেপাশে সবাই যে যার মত ব্যস্ত । একমাত্র আমিই বোর হচ্ছি । কারণ সামনে রাক্ষসরাজ বসে আছে । মুখ খুললেই এই মুহূর্তে ঝগড়া শুরু হবে । যা যুদ্ধের রূপ নিবে । যা করে আমি এই সুন্দর মুহূর্তটা নষ্ট করতে চাই না । আমি চুপ করে বসে আছি ।অগ্নি আমার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে গান ধরলেন ,

“বন্ধুর দুইটা চোখ ,আরে বন্ধুর দুইটা চোখখখ ”

বন্ধুর দুইটা চোখ যেন দুই নালা বন্ধুক ”

“আরে গুল্লি পাইরা ”

ডিস্কাও~~~~ডিস্কাও

আমি উনার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে আছি ।এই মুহূর্তে আমার উনাকে খুন করে ফেলতে ইচ্ছে করছে । জাস্ট খুন করে ফেলতে ইচ্ছে করছে । আমি দাঁতে দাঁত চেপে বলি ,

– “এই সব কোন ধরনের অসভ্যতা ? কি সব গান গাইছেন? ”

– “এখানে অসভ্যতার কি আছে? তার আমি বললেই অসভ্যতা তুমি বললে কিছু না? ”

আমি তোতলাতে তোতলাতে বলি ,

– “আমি কবে এই গান বললাম? আপনি কেন মিথ্যা বলছেন? ”

– “ভুলে গেছ সুন্দরী ? ওই যে ইশারার হলুদের রাতে । যেদিন আমাদের মধ্যে…

উনি আর কিছু বলার আগে আমি উনার মুখে হাত দিয়ে আটকাই । বাপরে যা লোক । এখনি সবার সামনে হাড়ি ভেঙে দিতো । আমি গোল গোল চোখ করে উনার দিকে তাকিয়ে আছি।রেগে চাপা স্বরে বলি,

– “আপনি কি নিয়ত করেই এসেছেন আমার সাথে শুধু ঝগড়া করবেন? আমার সাথে ঝগড়া হয়েছে বলে এই ভাবে পাবলিক প্লেসে আপনি আমার মানসম্মানের বারোটা বাজাবেন ? ”

অগ্নি আমার হাতের তালুতে চুমু খায় । আমি রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে হাত সরিয়ে ফেলি । অগ্নি টেডি হাসি দিয়ে বললেন ,

– “আমি তো চাই ই তোমার সাথে একটু রোমান্টিক কথা বলতে একান্ত কিছু সময় কাটাতে । কিন্তু তুমি সেই সুযোগ দেও কই ? আমি সামনে থাকলেই পেঁচীর মত মুখ করে রাখো । তাই ভাবলাম তুমি ভালোয় ভালোয় কথা বলবে না । তাই একটু ঝগড়াই করা যাক । ”

– “আমি পেঁচি ? আমি? আর আপনি কি দুধে ধোয়া তুলসী পাতা ! ”

– “দেখেছো! এই যে তুমি আবার ঝগড়া শুরু করে দিয়েছো । ”

– “আমি আর কোনো কথাই বলবো না !”

বলেই মুখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে রাখলাম ।এমন সময় হাতে অগ্নির হাতের উষ্ণ স্পর্শ পেলাম । এই স্পর্শটা অন্যরকম একদম আলাদা । আমি মুখ ঘুরিয়ে অগ্নির দিকে তাকালাম । অগ্নির চেহারাটা কেমন যেন মলিন হয়ে আছে।ঠোঁটে মলিন হাসি । এই হাসিটা তেই আমার সব রাগ হাওয়া হয়ে যায় ।অগ্নি মৃদু স্বরে বললেন,

– “আমি জানি আমি অনেক ভুল করেছি । তোমার সাথে অন্যায় করেছি ।তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি । অনেক কাঁদিয়েছি । তার জন্য সারাজীবন ক্ষমা চাইলেও কম হবে । সবকিছু ভুলে আমাকে কি একটা সুযোগ দেওয়া যায় না ? সারাজীবন তোমাকে আগলিয়ে রাখবো । এতোটা ভালোবাসবো যে দুনিয়ার সব সুখ তোমার পায়ের কাছে এনে দিবো ! ”

আমি চোখ নামিয়ে বলি ,

– “আমার কিছুসময়ের প্রয়োজন ”

– “টেক ইউর টাইম । আমি তোমার উপর কোনো চাপ দিচ্ছিনা । তোমার যতসময় প্রয়োজন তুমি নেও কিন্তু সবশেষে উত্তরটা যেন আমার পক্ষেই হয়।আমি কোনো ভাবেই হারাতে পারবো না । আমি তোমার সাথে সব নতুন করে শুরু করতে চাই । তোমার প্রেমিক হতে যাই । মারাত্মক ভাবে আবারো তোমাতে আসক্ত হতে চাই ! ”

আমি চোখ উঠিয়ে প্রশ্ন করি ,

– “আবারো মানে ”

অগ্নি মুচকি হেসে উত্তর দেয় ,

– “তোমাকে যতবার দেখি নতুন ভাবে নতুন করে প্রেমে পড়ি ।তোমার প্রত্যেকটা রুপ মুগ্ধ করা ,পাগলপারা করে দেয় । এই দেখ আজ কালো পড়েছো । কালো সাধারণ শোকের চিহ্ন হয় । কিন্তু আমার কাছে এই কালো রং ও আজ প্রেমের রঙ মনে হচ্ছে ।তুমি জানো তোমার এই কানের ঝুমকাটাকে আমার কত হিংসে হয় ? কিছুক্ষণ পর পরই তোমার সুন্দর ঘাড়টা ছুঁয়ে দিচ্ছে । আর আমার মন উতলা করে দিচ্ছে । এই যে তোমার খোলা চুল আমার হার্টবিট বাড়াচ্ছে তা কি তুমি বুঝো ??
পাগল করে দিয়েছো সুন্দরী ! একদম পাগল করে দিয়েছো । এখন নিজেকে কি করে সামাল দিবো বলো ? ”

আমি অগ্নির কথা লজ্জায় হা করে আছি । অগ্নির এই দুষ্টু চাহনি আর পাগল করা হাসি আমাকে বার বার লজ্জায় ফেলছে।আমি লজ্জায় চোখ নামিয়ে ফেলি । কি বলবো অগ্নিকে ? বলার মত কোনো ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না । অগ্নি আমাকে এতোটা গভীর করে দেখেছে ? কখন আমাকে এতোটা পর্যবেক্ষন করলো । সারাক্ষণ তো আমার সাথে ঝগড়া করলো । এই ঝগড়ার ফাঁকেফাঁকে মুক্ত চাহনিতে কি সবটা পর্যবেক্ষন করেছে ?

_______________________

শেফা দিন দিন মীরজাফর হয়ে যাচ্ছে । এই তো এই দুদিন শেফা যতবার কল করেছে অগ্নি কনফারেন্স কলে ছিলো । কই একবার তো শেফা বললো না ! আজ ও বলতো না যদি আমি কথায় কথায় না বের করতাম । তাই তো বলি শেফার হয়েছেটা কি? এতো ঘনঘন ফোন কেন তার !
বদ মেয়ে অগ্নিকে হেল্প করা হচ্ছিলো । এখন বান্ধবী থেকে তার বর আপন হয়ে গেলো ?
সব ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নিয়েছি অগ্নিকে একটা সুযোগ দিবো । শেষবারের মত অগ্নিকে বিশ্বাস করবো । একটা সুযোগ তো সে ডিজার্ভ করে ।
অগ্নির দেওয়া কালো গোলাপের তোরা হাতে নিয়ে দোলনায় বসে আছি । কালো গোলাপ এতোটা সুন্দর হয় তা আমার জানা ছিলো না । আচ্ছা অগ্নি কি করে জানে আমার কালো গোলাপ পছন্দ ? এতোটা কি করে চিনে সে আমাকে ?
এসব ভাবতে ভাবতেই ফোনটা বেজে উঠে । ফোন হাতে নিয়েই দেখি অগ্নি ফোন করেছে । রিসিভ করে কানে ধরতেই অপর পাশ থেকে অগ্নির আদুরে স্বর ,

– “সুন্দরীইইইইইইইইইই ! ”

আমি বুকে হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে নেই । উফফফ উনার ডাকগুলো বুকে যেয়ে বিঁধে । অগ্নি আবার বললো,

– “কি হয়েছে কথা বলো না কেন ? ”

আমি চোখ খুলে গলা ঝেড়ে বলি,

– “কি হলো এতো রাতে ফোন দিলেন যে? ”

– “এখন আমার বউ কে আমি ফোন দিতে পারবো না? ”

– “ঝগড়া করতে ফোন করেছেন ? ”

– “না তো । নতুন করে সবটা শুরু করতে ফোন করেছি । ”

– “এই নিশিরাতে ?”

– “হুম । তোমার সাথে রাত জেগে প্রেম করবো । ঔযে স্কুল কলেজের ছেলেমেয়েরা যেভাবে প্রেম করেনা ঠিক সেই ভাবে । ”

– “বুড়া বয়সে উড়োজাহাজ চালানোর শখ হয়েছে আপনার ? ”

– “আমি বুড়ো হয়ে গেছি ? এটা তুমি বলতে পারলে? ”

– “আমি কি একবারো আপনাকে বুড়ো বলেছি? আমি জাস্ট কথার কথা বললাম । ”

– “এই দেখ কই একটু রোমান্টিক কথাবার্তা বলবো তা না তুমি ঝগড়া শুরু করে দিয়েছো । এটা কি ঠিক ? ”

আমি চুপ করে রইলাম । অগ্নি বললো ,

– “আচ্ছা বলো আজকের ডেট তোমার কেমন লাগলো? ”

ডেটের কথা মনে পড়তেই মুখে আনমনে হাসি ফুটে উঠে । উফফ এতো সুন্দর করেও কি কেউ ডেট প্লান করে । একদম শানদার । কিন্তু মুখে তা প্রকাশ করলাম না । ভাব নিয়ে বললাম ,

– “হুম ভালো ছিলো ”

অগ্নি বাচ্চাদের মত বিরক্তের স্বরে বললেন,

– “উফ হুর একটু মন খুলে কথা বলো না সুন্দরী । ”

– “সবাই ডেটে লাল গোলাপ আনে আপনি কালো গোলাপ আনলেন যে? ”

– “কারণ তোমার পছন্দ তাই! ”

– “আপনি কি করে জানলেন আমার কালো গোলাপ পছন্দ ? ”

উনি রহস্যময় ভাবে বললেন ,

– “তোমার ব্যপারে এমন অনেক কিছু আছে যা আমি জানি ।আমি তোমাকে যতটা চিনি তুমি নিজেকে ততোটা চিনো না । ”

আমি চুপ করে গেলাম । দুজনের মধ্যে পিনপতন নীরবতা । নীরবতা ভেঙে আমিই বললাম ,

– “একটা কথা বলবো ? কিছু মনে করবেন না তো ! ”

– “হাজারটা বলুন রানী সাহেবা । ”

আমি চাপা হেসে বলি ,

– “জানেন আপনার কন্ঠ কথা বার্তা সবকিছু আমার এক চেনা কারো সাথে খুব মিল । এতো টা মিল যে মাঝে মাঝে মনে হয় আপনিই সে । ”

– “তাহলে আমাকে সে ভেবেই গ্রহণ করে নেও । ”

– “তা হয় না । আমি তাকে প্রচন্ড ঘৃণা করি । প্রচন্ড পরিমান । এতোটা যে তার চেহারা দেখার ও কোনো ইচ্ছে নেই । জীবনের সবচেয়ে বড় আঘাত আমি তার থেকে পেয়েছি । তাকে ঘৃণা করি । শুধুই ঘৃনা !”

– “হুর প্রত্যেকটা জিনিসের দুইটা পিঠ থাকে এক পিঠ দেখে কোনো কিছু বিবেচনা করা ঠিক না।আসল সত্যিটা জানার চেষ্টা করো । কাহিনী অন্যরকম ও হতে পারে । ”

– “আপনি কি আমার স্বামী নাকি তার লয়ার ?আমি এসব ব্যাপারে আর কথা বলতে চাই না। আশা করি আপনিও আর এ ব্যাপারে কথা বাড়াবেন না । ”

অগ্নি আর এই ব্যাপারে কথা বাড়ায় না । সারারাত এটা ঐটা বলে সারারাত ফোন আলাপে কাটিয়ে দেই । ভোরের দিকে ঘুমানোর জন্য বিছানার দিকে পা বাড়াই ।

চলবে ….❤️

#শত_ ডানার_ প্রজাপতি

#urme prema (sajiana monir )

পার্ট : ৩৩

ঘুম ভাঙে বেলা দশটায় । বাহিরে মিষ্টি রোদ । ফ্রেশ হয়ে হয়ে নাস্তা সেরে বারান্দায় বসি । শীতের সকালের রোদটা খুব বিশেষ হয় । কুয়াশার পর এই রোদের উষ্ণত্ব স্পর্শ ছুঁয়ে দেয়।মিষ্টি রোদে চোখের পাতায় কেমন যেন নিদ্রা নিদ্রা ভাব ভর করেছে। আমি কোনো রকম চোখ টানা দিয়ে আছি । ইদানীং রাত জেগে জেগে ঘুমের টাইমটেবল সব উলট পালট হয়ে গেছে । এখন রাতজেগে কথা বলাটা রুটিন হয়ে গেছে । কেমন যেন অন্য অনুভূতি কাজ করছে । কিছুটা লজ্জা আর অনেকটা ভালোলাগা । যেন আমি টিনেজার হয়ে গিয়েছি । টিনেজারদের মত নতুন নতুন প্রেমে পড়ার অনুভূতি ,কৌতূহল ,আবেগ সবকিছু মিলিয়ে দিন বেশ ভালো কাটছিলো । আমি আবার অগ্নির প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ছি । নয়া নয়া প্রেমের মিষ্টি অনুভূতি বেশ সুন্দর । কেউ ঠিক বলেছে দূরত্ব সম্পর্কের গুরুত্ব বুঝায় । নতুন করে সব শুরু করতে আমাদের মাঝের এই দূরত্বটা দরকার ছিলো । অগ্নি যেন দিন দিন বয়স কমে যাচ্ছে ।উনার হুটহাট পাগলামো গুলো আমাকে আশ্চর্যের শেষ শিখরে পৌছিয়ে দেয় । হুটহাট গিফট পাঠায় । রাত দিন নেই হুট করে বাড়ির সামনে চলে আসে । এই তো কাল রাতেরই কথা অগ্নি হুট করে রাত তিনটার দিকে বাড়ির সামনে এসে হাজির । এতো রাতে কেন এসেছে ? তা জিগ্যেস করতেই উত্তর দেয় । তার নাকি বাড়িতে মন বসছিলোনা । তার নাকি এই মুহূর্তে আমাকে খুব করে দেখতে ইচ্ছে করছিলো । দিন দিন একদম পাগল হয়ে যাচ্ছে । পাগল না হলেই কি এই কনকনে শীতে বাড়ীর সামনে এসে এভাবে দাড়িয়ে থাকে।কত করে বললাম ভিতরে আসতে । কিন্তু না সে আমার কোনো কথাই কানে নিলেন না । উনি নাকি প্রতিজ্ঞা করেছেন আমার মারাত্মক প্রেমিক হবে । বাড়িতে আসলে তো তা আর প্রেমের সম্পর্ক থাকবে না স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক হবে । অগ্নি এই যুগের প্রেমিক হতে চায় না । সে নব্বুই শতকের প্রেমিক হতে চায় । যে প্রেমিক সারাক্ষণ তার প্রেমিকা কে দেখার জন্য ছটফট করবে ।শর্তহীন ভাবে ভালোবাসবে ।
আমি উনার উত্তরে শুধু হেসেছি । বিয়ের পরের প্রেমটা সত্যি খুব সুন্দর হয় । এখানে নির্দ্বিধায় চুটিয়ে প্রেম করা যায় । না থাকে কোনো হারানোর ভয় না থাকে কোনো অনিশ্চয়তা ।
অগ্নির এসব পাগলামো দেখে ভাবি । সত্যি কি আমি উনার এমন পাগলামো ভালোবাসার যোগ্য? আমি কি এতোটাই বিশেষ কিছু ?
অগ্নির এই পাগলামো গুলো তে আমার মন গলতে শুরু করেছে ।
হ্ঠাৎ ই কারো কথার আওয়াজে আমার ভাবনা জগতে কারো টোকা পরে । পিছনে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখি উৎস ভাইয়া আর নিশিত একগাল হেসে দাড়িয়ে আছে । আমি মুচকি হেসে তাদের কাছে এগিয়ে যাই । দুজনকে খুব সুন্দর মানিয়েছে । নিউলি মেরিড কাপল । নিশিত লাল শাড়ি পড়েছে নাকে নোস পিন । গাঁয়ে হাল্কা গহনা । এইতো গত শুক্রবার বিয়ে হয়েছে । বড় করে আয়োজন করেনি । উৎস ভাইয়া কড়াকড়ি ভাবে নিষেধ করেছেন । তাছাড়া নিশিত ও এসব লোক দেখানো আয়োজন পছন্দ করে না। সে বরাবারই সাদাসিধা জিনিস পছন্দ । তারপর ও মামা বলেছিলেন চিটাগাং এ বিয়েতে যেতে । কিন্তু মা মানা করেছে । এইতো কিছুদিন আগেই চিটাগাং থেকে এসেছে সবাই।এখন আবার যাওয়াটা ঝামেলা । প্লানিং এর ও একটা ব্যাপার আছে । আমি মুচকি হেসে জিগ্যেস করি ,

– “কেমন আছেন আপনারা ?”

উৎস ভাইয়া মুচকি হেসে উত্তর দেয় ,

– “আলহামদুলিল্লাহ আমরা ভালো আছি । তুমি কেমন আছো ? ”

– “জি ভাইয়া আলহামদুলিল্লাহ।আমি কনফিউজড ! ”

উৎস ভাইয়া মুচকি হেসে বললেন,

– “তা কেন শুনি ?”

– “এই যে কি বলে ডাকবো আপনাদের ?এখন তো সম্পর্ক দু দিক থেকে । ”

– “সম্পর্ক দু দিক থেকে তো কি হয়েছে ? পুরোনো সম্পর্ক কি পাল্টিয়েছে? আগে যা বলে ডাকতে তা বলেই ডেকো । শুধু জটিল বানানোর কি দরকার । ”

– “হুম তা ঠিক নতুন করে সম্পর্কের মারপ্যাঁচে পরে ডাকতে গেলে তা অনেক জটিল হবে।
তা বলেন কি করে আসা ? নতুন নতুন বিয়ে হয়েছে কোথায় আমার ননদটাকে নিয়ে বেড়াবেন তা নয় আপনারা এখনো ঢাকাতেই আছেন?
নট ফেয়ার ভাইয়া।”

– “হুম যাবো তো । আগে রিসেপশনটা শেষ হোক তার পর । আর এই রিসেপশনের ইনভাইটেশন দিতেই আসা ।
ফুপির কাছ থেকে শুনলাম তুমি এ বাড়িতেই আছো । তাই ভাবলাম দুজন একসাথে এসেই তোমাকে ইনভার্ট করি।আফটার অল আমাদের স্পেশাল গেস্ট । ”

আমি মুচকি হাসি । ভাইয়া আবার বললেন ,

– “আগামী শনিবার রিসেপশন ।অগ্নি আন্টি সবাই আসবে । তোমাকেও আসতেই হবে।”

– “জি ভাইয়া অবশ্যই আসবো । ”

– “আমি যাই ফুফা ফুপির সাথে দেখা করে আসি । তোমারা কথা বলো । ”

উৎস ভাইয়া চলে যায় । আমি নিশিতের থুতনি তে হাত রেখে বলি,

– “খুব মিষ্টি লাগছে ।”

নিশিত লাজুক হেসে বললো ,

– “ধন্যবাদ ভাবী ”

– “দোয়া করি সবসময় এমন হাসি খুশি থাকো । ”

দুজন আড্ডা দিচ্ছি । হ্ঠাৎ কথার মাঝে নিশিত আমার হাত জড়িয়ে ধরে বললো ,

– “ভাবী আমি তোমার কাছে সবসময় কৃতজ্ঞ ”

আমি প্রশ্নবোধক চোখে তাকিয়ে জিগ্যেস করি ,

– “তা কেন ? ”

– “এই যে তোমার জন্যই আজ আমি উনাকে পেয়েছি । ভাবি আমি জানি উনার প্রথম ভালোবাসা তুমি । হয়তো এখনো তোমাকে ভালোবাসে । কিন্তু আমার তা নিয়ে কোনো মন খারাপ নেই ।আমার সবচেয়ে বড় পাওয়া আমি উনার স্ত্রী । উনার জীবনের অংশ হয়েছি । হয়তো কোনো দিন উনার ভালোবাসার মানুষ হতে পারবো না । কিন্তু এতটুকুতেই খুশি উনার জীবনের অংশ আমি।যদি তুমি উনাকে না ফিরিয়ে দিতে তাহলে হয়তো আমি এমন জীবনসঙ্গী পেতাম না। তাই আমি তোমার কাছে সর্বদা কৃতজ্ঞ । উনার জীবনে সর্বদা মুখ্য নায়িকা তুমিই থাকবে আমি না হয় সাইড নায়কা হয়েই রয়ে গেলাম । ”

– “নিশিত তুমি যথেষ্ট বুদ্ধিমতী আর খুবই ভালো মনের একটা মেয়ে।আমি জানি তুমি ঠিক উৎস ভাইয়ার মন জয় করে নিবে।কারো প্রথম প্রেম হওয়াটা খুব সহজ । কিন্তু শেষ ভালোবাসা হওয়া অনেক জটিল । আর শেষ ভালোবাসাটাই জীবনে মুখ্য চরিত্র হয় ।আর উৎস ভাইয়ার জীবনে সেই মুখ্য চরিত্রটাই তুমি । ভাইয়ার জীবনের মুখ্য নাইকা । আমি জানি তুমি ভাইয়ার জীবনে সব অতীত ভুলিয়ে নতুন করে স্মৃতি গড়ে তুলবে । ”

– “দোয়া করো ভাবী ”

– “অবশ্যই ”

___________________________

আজ অনেক দিন পর ভার্সিটি তে যাচ্ছি ।এতো দিন ক্লাস বান্ধ করেছি ইচ্ছে করেই । অগ্নিহীন ভার্সিটি তে এসে কি করবো । তার উপর নিহার কুটনামি দেখার বিন্দু মাত্র ইচ্ছে নেই । আমি অগ্নির স্ত্রী তা জানার পর না জানি নিহার কি অবস্থা । নিশ্চিত নতুন কোনো ঝামেলা পাকাবে ।
আজ একসাপ্তাহের অগ্নির পানিশমেন্ট শেষ । অগ্নি ভার্সিটি তে আসছে । আমিও শেফার সাথে ভার্সিটি তে যাচ্ছি।
মন একদম ফুরফুরে । আজ কতদিন পর ভার্সিটি তে এসেছি । অগ্নির সাথে দেখা হবে । কিন্তু জনাব আছে কই ? আশেপাশে কোথাও তো নেই ! ফোনটাও রিসিভ করছে না । অদ্ভুত লোক !
তানবীর ভাইয়াকে জিগ্যেস করতেই জানতে পারি । অগ্নি কালচারাল ক্লাবে আছে । এই সময় সেখানে কি করছে ?সামনে তো কোনো ফাংশন নেই । তাহলে এসময় সেখানে থাকার কারণ কি ? এসব ভাবতে ভাবতেই ক্লাবের সামনে যাই ।জনশূন্য নীরব পরিবেশ ।ক্লাবের অফিস রুমের দরজাটা ভিড়ানো । আমি এক কদম এক কদম করে সামনের দিকে এগিয়ে যাই । দরজা খুলতেই চোখজোড়া সানা ভরা হয়ে যায়। শরীরে প্রত্যেকটা শিরা উপশিরায় খুব দ্রুত গতিতে রক্ত দৌড়াচ্ছে । মাথায় রক্ত উঠে গেছে । অগ্নিকে নিহা জড়িয়ে ধরে আছে । অগ্নি ছাড়ানোর চেষ্টা করছে । কিন্তু নিহা জড়িয়ে ধরে কান্না করছে।আমি রেগে সামনের দিকে এগিয়ে যাই । সর্বশক্তি নিয়ে নিহাকে ধাক্কা দিয়ে অগ্নি থেকে দুরে সরাই । নিহা নিচে পরে যায় । অগ্নি ভয়ে আমতা আমতা করে বললেন,

– “হুর বিশ্বাস করো আমি কিছু জানিনা। আমিতো ক্লাবে একটা কাজে এসেছি নিহা এখানে এসে এসব করছে। বিশ্বাস করো ,,,

অগ্নি কে আর কিছু বলতে দেই না।রাগী চোখ দেখিয়ে থামিয়ে দেই । নিহার কাছে যেয়ে তাকে উঠিয়ে । হাত মোচড় দিয়ে ধরে দুগালে দুইটা চড় দেই । গাল চেপে ধরে চিৎকার করে বলি,

– “কি ভেবেছিস এতোদিন ছাড় দিয়েছি তাই বলে আমি দুর্বল ? কিছু করতে পারবো না? আমার স্বামীর দিকে নজর দিলে চুল টেনে ছিঁড়ে ফেলবো শাঁকচুন্নি বদমাইশ মেয়ে ।এই থাপ্পড়ের কথা গুলো যদি মনে থাকে ভবিষ্যৎ এ আর কোন দিন অগ্নির দিকে চোখ দিবিনা । আর যদি দিস কাঁটা চামচ দিয়ে চোখ তুলে ফেলবো বিরিং খেলবো । ”

নিহাকে ওয়ার্নিং দিয়ে অগ্নির হাত ধরে টেনে নিয়ে আসি । অগ্নি আমার দিকে হা হয়ে তাকিয়ে আছে । আমি অগ্নিকে নিয়ে সোজা পার্কিং এরিয়াতে চলে আসি । গাড়ি তে বসে বড় বড় নিশ্বাস ফেলছি । রাগে তখনো আমার শরীরে কাঁপছে । ইচ্ছে করছে নিহাকে কুঁচি কুঁচি করে কেটে লবণ লাগিয়ে দেই । অগ্নি পানির বোতল টা খুলে আমার দিকে এগিয়ে দেয় । আমি ঢকঢক করে পানিটা শেষ করি । অগ্নি তখনো অবাক চোখে আমার দিকে তাকিয়ে । আমি রাগী চোখে তাকাতেই । অগ্নি ভীতু স্বরে বললেন,

– “বিশ্বাস করো আমি কিছু জানি না । প্রমিজ। তোমার কছম । ”

– “আমি জানি ! ”

– “তাহলে আমার উপর কেন রেগে আছো । ”

– “আপনাকে ছুঁবে কেন ঔ শাঁকচুন্নি ? এই যে এখানে এখানে স্পর্শ করেছে তাই না ?

বলেই উড়না দিয়ে অগ্নির শরীর মুছে দিতে লাগলাম । অগ্নি আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে । আমি রেগে রেগে গর্জন করে বললাম ,

– “কেন জড়িয়ে ধরলো? বলুন কেন? এগুলো তো আমার জায়গা তাই না ? ও কেন এই যে এখানে মাথা রাখলো ? ”

এগুলো বলে রাগে জিদে কান্না করে দিলাম । কিছু কিছু মানুষ আছে রেগে গেলেও কান্না করে।আমিও তাদের মধ্যে একজন । প্রচন্ড রাগে প্রচন্ড রকম কান্না করি। অগ্নি সাথে সাথে আমাকে তার বুকে জড়িয়ে ধরে । আমি ছুটে আসতে চাইলে আরো শক্ত করে জরিয়ে ধরে। আমি অগ্নির বুকের কাছে শার্ট খামচে ধরি । সামনে দুটো বোতাম ছিঁড়ে যায় । বুকে মুখ লুকিয়ে কান্না করতে করতে বলি,

– “আমার সহ্য হয় না আপনার দিকে কোনো মেয়ে তাকালে । রাগ হয় । খুবই রাগ হয় । ইচ্ছে করে তাকে খুন করে ফেলি । ভাল্লাগেনা । কেন এতো সাজগোজ করে হিরো সেজে ঘুরতে হবে ? কেন মেয়েদের দেখাতে হবে ? ”

– “আচ্ছা ঠিক আছে আর হিরো সেজে ঘুরবো না।আমি শুধু আমার সুন্দরীর ।
আমার সুন্দরী যেমনটা বলবে তেমন ভাবেই হবে । এবার কান্না বন্ধ করো । ”

– “না করবো না ,আমি কান্না করবো! অনেক কান্না করবো । আপনার কি ? ”

– “আমার কষ্ট হয়তো ”

– “হোক কষ্ট বেশি করে হোক ! ”

অগ্নি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে । নিজের সর্বস্র চেষ্টা করছে কান্না থামানোর ।

চলবে…❤️

প্লিজ সবাই সবার মতামত জানাবেন । ভুল ত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন 😊😊😊।