শত ডানার প্রজাপতি পর্ব-৩৪+৩৫+৩৬

0
4656

#শত_ ডানার_ প্রজাপতি

#urme prema (sajiana monir )

পার্ট : ৩৪

সোফায় দুপা উঠিয়ে মুভি দেখছি । হাতে চিপসের প্যাকেট ।ঘড়ির কাটা দশের দিকে । আস্তে আস্তে রাত গভীরতর হচ্ছে । শীতের রাত দশটা বাজতেই অনেক রাত । কিছুক্ষণ পূর্বেই রাতের খাবার শেষ করেছি ।কিছুই ভালো লাগছে না । সবকিছু কেমন জানো খালি খালি লাগছে । ভার্সিটি থেকে অগ্নির সাথে ঝগড়া করে এসেছি । যদিও এটাকে ঝগড়া বলেনা । আমি একাই চিৎকার চেঁচামেচি করে এসেছি । অগ্নি বাধ্য ছেলের মত চুপ ছিলো শুধু মাথা নাড়িয়েছে ।রাগের বসে যাতা বলে এসেছি । নিহার রাগ সব অগ্নির উপর ঢেলেছি ।সারাদিন একবারের জন্যও অগ্নিকে ফোন দেই নি । না অগ্নিকে ফোন দেওয়ার সুযোগ দিয়েছি । ফোন বন্ধ করে রেখেছি । অগ্নি আপুর ফোনে ফোন দিয়ে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছে । আমি কথা বলেনি । কিন্তু এখন খুব কষ্ট লাগছে । বুকটা খালি খালি লাগছে । তাই মনকে ভুলিয়ে রাখতে মুভি দেখছি । কিন্তু এতেও বিশেষ কোনো লাভ হচ্ছে না । মন শুধু অগ্নি অগ্নি করছে ।
হ্ঠাৎ ডোর বেলটা বেজে উঠে । এতো রাতে কে আসলো । মনে খানিকটা সন্দেহ সৃষ্টি হয় । আমি এসব ভাবতে ভাবতেই দরজার দিকে পা বাড়াই । কিন্তু তার আগেই মামী দরজা খুলার জন্য পা বাড়িয়েছে । আমি মামীর পিছন পিছন যাই । দরজার সামনে যেতেই চোখ কপালে । অগ্নি দাড়িয়ে আছে । মুখে একগাল প্লাস্টিক হাসি নিয়ে । মামী ও এতো রাতে অগ্নি দেখে বেশ অবাক । মামী ভয়ে ভয়ে অগ্নি কে জিগ্যেস করেন ,

– “বাবা এতো রাতে তুমি এখানে ! মানে বাড়িতে সব ঠিক ঠাক আছে বাবা । ”

– “জি আন্টি সব ঠিক আছে । একটা কাজে এদিকে এসেছিলাম । ফিরতে রাত হয়ে গেল তাই ভাবলাম আজ রাত এখানে থেকে যাই ।আজ কাল যা অবস্থা বলা যায়না কখন কি হয়ে যায় । ”

– “কত রাত হয়েছে । দেশের যা অবস্থা । যাক বাবা বেশ ভালো করেছো এসেছো। ”

আমি মামী আর অগ্নির আহ্লাদী দেখে হা করে আছি । এটা কোনো রাত ? মাত্রই তো রাত দশটা বাজে । অগ্নির জন্য তো মাত্র সন্ধ্যা হলো । আর ভয় ? অগ্নির সাথে ভয়ের দূরদূরান্ত পর্যন্ত কোনো সম্পর্ক নেই । এই যে মুখের ভোলাভালা প্লাস্টিক হাসিটা । এই হাসির পিছনে রাক্ষসরাজ অগ্নি লুকিয়ে আছে । অগ্নি ফুলফর্মে এসেছে আমাকে শায়েস্তা করতে তা আমি বেশ বুঝচ্ছি । উনার আড়চোখের ক্রুদ্ধ দৃষ্টি আমাকে তা ঠিক বুঝিয়ে দিচ্ছে । এই দৃষ্টি আমাকে বলছে “হুর ,একবার শুধু হাতের মুঠোয় পাই তোমাকে আমি চাটনি করবো ”
মামী যেতেই মামীর আঁচল ধরে পিছনে পিছনে চলে যাই।এখানে থাকা মানে বিপদ । মামী সব খাবার গরম করে দেয় । আমি তা টেবিলে এনে সাজাই । অগ্নি মামার সাথে ড্রইংরুমে কথা বলছে । অগ্নির এসেছে শুনে মামা ঘুম থেকে উঠে এসেছে । মামীর কথা মত অগ্নিকে খাবার টেবিলে ডেকে আনি । অগ্নি তখনো আমার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে । মামী চলে যেতেই অগ্নি ক্রুদ্ধস্বরে বললেন ,

– “খায়িয়ে দেও ”

আমি আমতা আমতা স্বরে বলি ,

– “কে আমি? ”

– “এখানে কি অন্য কেউ আছে ? ”

– “ইয়ে মানে বলছিলাম কি ,,,মানে আর কি ,,”

– “তোমার কোনো বাহানা চলবে না । যা বলেছি তা করো । মামা বাড়িতে এসে খুব পাখনা গজিয়েছে তাই না? আজ সব পাখনা কাটবো । ”

আমি আর কোনো কথা বলিনা অগ্নির কথা মত তাকে খায়িয়ে দেই । অগ্নি বেশ তৃপ্তির সাথে খাচ্ছে ।

___________________________

ডিনার শেষ করে রুমে আসতেই দেখি পুরো রুম অন্ধকার । অগ্নি কোথায় গেলো ? লাইটের কাছে যেতেই ঠাস করে দরজা বন্ধ হওয়ার আওয়াজ কানে আসে । আমি কেঁপে উঠি । পিছন থেকে অগ্নি আমার হাত মোচড় দিয়ে নিজের বুকের সাথে চেপে ধরেছে । আমি ছাড়ানোর চেষ্টা করলাম না । এতে কোনো লাভ হবে না । অগ্নি আমার কানের কাছে মুখ গুজে দাঁতে দাঁত চেপে বললেন,

– “খুব সাহস বেড়ে গেছে তাই না ? সকাল থেকে ফোন বন্ধ করে রেখেছো । কোনো খোঁজ খবর নেই । কি আমাকে কষ্ট দিতে ভালো লাগে তাই না? খুব আনন্দ হয় ? এই যে সারাদিন আমি ছটফট করছি। না খেয়ে পাগল পাগল হয়ে ফোন করছি । কষ্ট পাচ্ছি এসব খুব ভালো লাগছে তাই না ? ”

অগ্নির কথা শুনে ভয়ে আমার গলা শুকিয়ে আসছে । না জানি এই লোক রেগে কি করে । আমি আমতা আমতা করে বলি,

– “এভাবে রেগে যাচ্ছেন কেন । আমিও তো আপনার উপর রেগেছিলাম । তাইতো ফোন অফ করে রেখেছি । ”

– “আচ্ছা তা কেন শুনি ? কি অপরাধ আমার ?আমি কি নেহাকে বলেছি আয় আমাকে জড়িয়ে ধর !
আমি কিন্তু এখনো আগের অগ্নিই আছি । নিজের জিনিস নিজের কাছে কি করে রাখতে হয় খুব ভালো করে জানি । মাইন্ড রিফ্রেশমেন্টের জন্য মামা বাড়িতে আসতে দিয়েছি । আমার মাথা বিগড়ে দিলে তুলে নিয়ে যাবো । সারাজীবনেদ জন্য মামা বাড়িতে আসা বন্ধ ! ”

আমি মিনমিন করে বলি ,

– “স্যরি তো ”

অগ্নি কোনো কথা না বলেই পিছন থেকে আমার ঘাড়ে মুখ ডুবায় । অগ্নির প্রত্যেকটা ঘনঘন ভারী নিশ্বাসে আমি কেঁপে উঠছি । চোখ বন্ধ করে খুব শক্ত করে গলার লকেট টা চেপে ধরেছি ।দুজনের মাঝে নীরবতা । শুধু নিশ্বাসের ভারী শব্দ কানে বাজছে ।আমি কিছু বুঝে উঠার আগেই হুট করেই অগ্নি কোলে তুলে নিয়ে বারান্দার দিকে অগ্রসর হয় । আমি চোখ বন্ধ করে অগ্নির বুকে মাথা হেলিয়ে দেই । অগ্নি আমাকে কোলে নিয়েই বারান্দার রেলিং ঘেষে দাড়ায় । কুয়াশায় ঘেরা চারদিক । ঠান্ডা আবহাওয়া । শীত পুরো শরীর শিরশির করছে। খানিক উষ্ণতার আশায় অগ্নির সাথে আরো গভীর ভাবে জড়িয়ে যাই । উপরের দিকে তাকিয়ে দেখি অগ্নির মাতাল দৃষ্টি আমার দিকে । আমি লজ্জায় চোখ নামিয়ে নেই । অগ্নি আদুরে গলায় বললেন ,

– “এই দূরত্ব আর সহে না । কালই সাথে করে নিয়ে যাবো । ”

– “কেন টিনেজারদের মত প্রেম করার ভূত ঘাড় থেকে নেমে গেছে ? ”

অগ্নি আমার নাকে নিজের নাক ঘষে আহ্লাদী স্বরে বললেন ,

– “হুম ,এখন নিজের বউয়ের মত ভালোবাসতে ইচ্ছে করে । সারাদিন বুকের সাথে এভাবে জড়িয়ে রেখে ভালোবাসি বলতে ইচ্ছে করে । ”

– “তাই? আর কি কি করতে ইচ্ছে করে ? ”

– “উমমম পুতুলের মত সাজিয়ে রেখে সারাক্ষণ ড্যাবড্যাব করে দেখতে ইচ্ছে করে । তোমার এই সুন্দর হাত দুটো তে চুমু খেতে ইচ্ছে করে আর…..”

অগ্নিকে আর কিছু বলার সুযোগ দেই না মুখ চেপে ধরি । অগ্নি আমার হাতের চুমু খেয়ে বলে ,

– “তুমি তো জানতে চাইলে ”

– “তাই বলে এসব কিছু বলবেন ? সত্যি আগ্নি ,আপনি লাগামহীন হয়ে গেছেন । ”

– “আমার কি দোষ সবকিছুর জন্য তুমিই দায়ী । ”

– “বাহ! সব দোষ নন্দ ঘোষ । আমি কি করলাম ? ”

– “হুম তোমারি তো দোষ ! এই যে আমাকে দিন দিন পাগল বানিয়ে দিচ্ছো । সারাক্ষণ তুমিই মাথায় ঘুরঘুর করো । তুমিহীন পাগল পাগল হয়ে যাচ্ছি ।
কাল কিন্তু তুমি আমার সাথে বাড়ি ফিরছো! ”

– “অগ্নি শুনুন না কাল না দুদিন পর যাই? ”

অগ্নি বাচ্চাদের মত নাক ফুলিয়ে বায়না ধরে বললেন ,

– “না না তুমি কালই আমার সাথে যাবে ”

– “আমি কাল চলে গেলে আপু একা হয়ে যাবে । আপু প্রেগন্যান্ট আপুর পাশে সর্বদা কাউকে প্রয়োজন । আপুকে রেখে যাওয়া কি ঠিক হবে ? মামী একা কতদিক সামলাবে ? ”

– “তাই বলে স্বামী কে এভাবে কষ্ট দিবে ? তোমার কি চোখে পড়ছেনা আমি সারাক্ষণ তুমিহীন ছটফট করছি । ”

– “দুইটা দিনই তো !”

অগ্নি মুখ ফুলিয়ে বললেন ,

– “তোমার যা ইচ্ছে করো ”

আমার মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি আসে । অগ্নির গালে টুপ করে চুমু দিয়ে দেই । অগ্নি আমার দিকে হা হয়ে তাকিয়ে আছে । আমার থেকে এমনটা আশা করেনি । আমি লাজুক হেসে অগ্নির বুকে মুখ লুকাই । অগ্নি বাঁকা হেসে বলে ,

– “তুমি অনেক বড় অপরাধ করে ফেলেছো সুন্দরী । এবার এই ভুলের শাস্তি তো তোমাকে পেতে হবে ! ”

– “আপনার সব শাস্তি শিরোধার্য। মরন ও! ”

– “হুম মারবো তো বটে । কিন্তু বিষে না মধুতে মারবো । ”

আমি লজ্জায় জর্জরিত হয়ে যাচ্ছি । অগ্নি আমাকে নিয়ে রুমের দিকে পা বাড়াচ্ছে ।এবার না থাকবে কোনো সংকোচবোধ ,না থাকবে কোনো বাঁধা । প্রেমের এক নতুন অধ্যায় শুরু হবে । কিন্তু অতীত কি আদো পিছু ছাড়বে ?

চলবে ….❤️

#শত_ ডানার_ প্রজাপতি

#urme prema (sajiana monir )

পার্ট : ৩৫

বিকেলের প্রহর পেড়িয়ে সন্ধ্যার দিকে পা ফেলছে । আমি রেডি হচ্ছি আর বার বার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছি । আজ উৎস ভাইয়া আর নিশিতের রিসেপশন । অগ্নি জানিয়েছেন সন্ধ্যার পর এসে রিসিভ করবে । একসাথে প্যাকিং করে রাখতে বলেছেন আজ রিসেপশন থেকে,সোজা ঐ বাড়িতে ফিরবে । শাড়ীর কুচিগুলো ঠিক করছি । শাড়ীর সাথে আমার খুব একটা যায় না । যদিও শাড়ী পড়াটা খুব পছন্দের কিন্তু সামলাতে পারিনা । শুধু অগ্নির জন্যই শাড়ি পড়া । অগ্নি বায়না ধরেছে আজ ফাংশনে আমাকে শাড়ি ই পড়তে হবে ।অগ্নি নিজের পছন্দ করে শাড়ী কিনে পাঠিয়েছে । বেবী পিংক জর্জেট শাড়ি । শাড়ির পাড়ে পার্ল আর স্টোনের ভারী কাজ ।সাথে কমোড় পর্যন্ত ডার্ক পিংক ডিজাইনার ব্লাউজ । সব কিছুই বিষণ সুন্দর । বলতে হবে উনার পছন্দ লাখে এক । সব সময় আনকমন আর ইউনিক জিনিসের দিকে উনার নজর ।আমাকে পছন্দ করতে দিলে সারাদিন ঘুরেও পছন্দ করতে পারতাম না । শাড়ির সাথে ম্যাচিং করে ভারী কানের দুল পরেছি । চুল গুলো কার্ল করে দুপাশ দিয়ে সামনে এনে রেখেছি । অগ্নির কড়া ইনস্ট্রাকশন চুল খুলা রাখতে হবে । জনাবের আমার খুলা চুল খুব পছন্দের । আর হাল্কা মেকআপ । সবটা অগ্নির পছন্দ অনুযায়ী । এমন সময়ই ফোনটা বেজে উঠে । ফোন হাতে নিয়ে দেখি অগ্নির কল । রিসিভ করতেই অগ্নির উতলা স্বর ,

– “আর কত অপেক্ষা সুন্দরী ? আমি যে একনজর দেখার জন্য ছটফট করছি । ”

– “তাই ? তো ফোন রেখে একটু অপেক্ষা করুন আসছি ! ”

– “উহু ফোন কাটা চলবে না । কথা বলতে বলতে নিচে আসো ।”

-“আপনি সত্যি পাগল ! ”

– “হুম শুধু তোমারি জন্য ”

অগ্নির সাথে কথা বলতে বলতে নিচে আসি । অগ্নি গাড়িতে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে । ডার্ক চকলেট স্যুট পরা । বুকের পাশে পকেটে খুব সুন্দর সিল্কের রোমাল গুছিয়ে রাখা । আর তার চেয়ে খানিকটা দূরে কিং ক্রাউনের আকৃতির স্টোন ব্রোঞ্জ । হাতে casio এর সিলভার গোল্ডেন কম্বিনেশনের ওয়াচ । চুল গুলো পারফেক্টলি সেপারেটেড করা। ফর্সা গালে খোঁচা খোঁচা দাড়ি । একদম ফর্মাল লুক । ঠোঁটে চার্ম হাসি ।এতো সুন্দর কেন এই লোক? আমাকে পাগল করে ছাড়বে ।
আচ্ছা ডার্ক কালারে কি সব ছেলেদেরই এতোটা মানায়? নাকি শুধু অগ্নিকেই এতোটা স্পেশাল বানায় !
যদিও অগ্নি এমনিতেই বিশেষ । যাই পড়ুক না কেন চোখ ফেরানো যায় না ।
অগ্নির চোখের তীক্ষ্ণ চাহনি সোজা আমার বুকে যেয়ে লাগছে । কি চায় অগ্নি আমি এক্ষুনি হার্ট এটাক করে মরে যাই ? অগ্নি আমার দিকে পা বাড়াচ্ছে । আমি চোখজোড়া নামিয়ে ফেলি । আমার কাছে এসে যাই আমাকে কিছু বলবে এমন সময়ই মামা মামী চলে আসে । অগ্নি কিছুটা দূরে সরে যায় । মামা মামী কে সালাম জানিয়ে কুশল বিনিময় করে । আমি আড়চোখে অগ্নিকে দেখছি । অগ্নিরো একই দশা আমার দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছে । অগ্নি মামার থেকে লাগেজ নিয়ে গাড়ী তে তুলেন ।গাড়ির দরজা খুলে দেন মামা মামী পিছনের সিটে বসে। আর আমি অগ্নির পাশের সিটে । অগ্নি গাড়িতে উঠে আমার সিট বেল বেঁধে দিতে লাগেন ।কোনা চোখে তখনো আমাকে দেখছে । আমার কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিস আওয়াজে বললেন ,

– “উফফফ ,সুন্দরী মাথা একদম ধরিয়ে দিলে । নেশা না করেও মাতাল আমি ! ”

অগ্নির উত্তরে আমি লজ্জায় চোখ নামিয়ে লাজুক হাসি । অগ্নি কিছু বললেন না ড্রাইভিং এ মন দিলেন ।

লাল ভারী কাতান পড়ে লাল টকটকে বউ সেজে বসে আছে নিশিত । পাশেই গোল্ডেন স্যুটে উৎস ভাইয়া । দুজন কে একসাথে খুব মানিয়েছে । সবার মুখে একই কথা ‘মেইড ফর ইজ আদার ‘। চিটাগাং থেকে আজ সকালেই নানু বাড়ির সবাই এসেছেন । আভরিনও এসেছে । আমি একপ্রকার এড়িয়ে চলি । আভরিনের নজর আমার খুব একটা ভালো লাগছে না । সবার সাথে ভাব আদান প্রদান করে । নয়া দাম্পত্যির দিকে ষ্টেজে এগিয়ে যাই । আমাদের দেখেই উৎস ভাইয়া একগাল হেসে দাড়িয়ে যায় । অগ্নির সাথে গলা মিলায় । আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,- “ইউ লুকিং বিউটিফুল! “আমি মুচকি হাসি । অগ্নি নিশিতকে এটা ওটা বলে ক্ষেপাচ্ছে । নিশিত কখনো ক্ষেপে যাচ্ছে আবার কখনো লাজুক হাসছে । ভাই বোনের খুনসুটি দেখে আমি আর উৎস ভাইয়া হাসছি ।

ভিড় থেকে কিছুটা দূরে আছি । মাত্রই ডিনার শেষ করিছি ।রাউন্ড টেবিলে পাশাপাশি আমি আর অগ্নি বসে । আমার হাতে ডিজার্ট প্লেট । আমি খুব মন দিয়ে মেল্ট চকলেট কেক খাচ্ছি । ইচ্ছে করেই সামনে তাকাচ্ছিনা ।অগ্নি টেবিলের উপর একহাতে গালে হাত দিয়ে আমাকে খুব গভীর করে দেখছে । অগ্নির চাহনি ধীরে ধীরে আরো গভীর হচ্ছে । এই চাহনিতে আমার টিকে থাকা সম্ভব না । লজ্জায় লজ্জাবতীর মত নেতিয়ে যাবো । তাই নিজের ডিজার্টের দিকে মন দেওয়া উত্তম । অন্তত এই চাহনির সম্মখীন তো হতে হবে না । আড়চোখে আশেপাশে তাকিয়ে দেখি মেয়েরা অগ্নিকে নিয়ে কানাকানি করছে । কেউ কেউ আমার দিকে আগুন ধরানো দৃষ্টি তে তাকাচ্ছে । কারণ আমার কাছে অস্পষ্ট নয়। অগ্নির সাথে আছি বলেই তাদের এই জেলাসি । আমি এবার চোখ তুলে অগ্নির দিকে তাকাই । মানুষটা এমন কেন ? আমি তো আহামরি বিশেষ কিছু নই ।অগ্নির সামনে তো কিছুই না । তাহলে কেন আমাকে এভাবে দেখে ? আমার মাঝে কি এমন বিশেষ কিছু আছে ! নাকি আমাকে ভালোবাসে বলেই এমন পাগলামী করে । এই যে আশেপাশের মেয়েগুলো উনাকে চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে । এমন ভাবে তাকিয়ে আছে সেদিকে উনার কোনো খেয়াল নেই । উনার সব ধ্যান আমার দিকে । এই যে আমার দিকে লাগামহীন ভাবে তাকিয়ে আছে । সত্যি বলতে আমার খুব আনন্দ হচ্ছে । যাকে বলে পৈশাচিক আনন্দ । এই যে সবাই অগ্নির দিকে তাকিয়ে আছে আর অগ্নি আমার দিকে । আহ !

_______________________________

____________________________

ভ্যানুর সামনে হাঁটাহাঁটি করছি । খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে । বাহারি রং এর লাইটিং । তার উপর কুয়াশা ঘেরা চার দিক । সব মিলিয়ে খুব সুন্দর লাগছে । একদম মুগ্ধ করা পরিবেশ । অগ্নি ভিতরে উনার এক বন্ধুর সাথে কথা বলছে । আমি ঘুরে ঘুরে সব দেখছি । হ্ঠাৎ ই চোখ যায় এক বাচ্চা মেয়ের দিকে । দেখতে বিষণ মিষ্টি । ব্লু ফ্রক পড়া । বড় চুলগুলো খোঁপা করা । মাথায় স্টোনের ক্রাউন পড়া । বড় বড় চোখ আর সরু ঠোঁট । ইচ্ছে করছে গুলুমুলু গাল দুইটা একটু টিপে দেই । আমি একপা একপা করে সামনের দিকে পা বাড়াই । মেয়েটি একটা বেঞ্চে বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে ।আশ্চর্য আশেপাশে কেউ নেই । আমি মেয়েটির পাশে বসতেই আমার দিকে একপলক তাকিয়ে আবার আকাশের দিকে গভীর ভাবে তাকায় যেন কিছু খুঁজছে । আমি মিষ্টি হেসে বললাম,

– “আকাশের তারা গুনছো ? আমি হেল্প করবো ? ”

বাচ্চা মেয়েটি না বোধক মাথা নাড়ায় । তারপর আবার চুপ । আমি আবার জিগ্যেস করি ,

– “তোমার আম্মু কোথায় ?”
এবার মেয়েটি আমার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আকাশের দিকে আঙুল দিয়ে ইশারা করে । তার মানে মেয়েটির মা বেঁচে নেই । আমার চোখজোড়া ভরে আসে । ইশ এতো ফুটফুটে একটা বাচ্চার মা নেই । নিজের ছেলেবেলার কথা মনে পড়ে । বাবা মা না থাকার যন্ত্রণা কতোটা কষ্টের তা আমার জানা ।আমি মেয়েটির মাথায় হাত রাখতেই মেয়েটি আমাকে হুট করে জড়িয়ে ধরে ফুফিয়ে কান্না করে দেয় । কান্না করতে করতে বলে ,

– “জানো আমাকে কেউ আদর করেনা । বাবাইও না । দাদুন দিদা কেউ না । আমার খুব মাম্মামের কথা মনে পরে । আমি মাম্মামের কাছে যাবো । বলো আমি এতো পঁচা? কেন মাম্মাম আমাকে রেখে চলে গেলো ? ”

মেয়েটার মাঝে আমি আমার ছেলেবেলা দেখছি । ছেলেবেলায় আমারো খুব ইচ্ছে করতো নিজের মাকে কাছে পাওয়ার । কাউকে নিজের সব দুঃখ কষ্ট বলার ।কেউ মাথায় হাত রাখলে মনে হতো সে আমার সবচেয়ে কাছের মানুষ ।
বাচ্চা মেয়েটারো হয়তো এমন বোধ হচ্ছে । তাই তো অচেনা এক মানুষের কাছে নিজের সব কষ্টের কথা শেয়ার করছে । আমি মেয়েটাকে জড়িয়ে ধরে মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বলি,

– “তুমি মটেও পঁচা না মামুনি । তুমি খুব স্পেশাল তাই তো আল্লাহ্‌ তোমার মাকে নিজের কাছে নিয়ে গেছে ঐযে ঐ আকাশে আছে । তুমি যখন অনেক বড় হবে তখন তোমার কাছে ফিরে আসবে । ”

– “সত্যি বলছো । ”

– “হুম । ”

– “তুমি কি করে জানো ? তুমি কি এঞ্জেল ? ”

– “উমম না । আমি হুর । হামিয়া হুর । ”

– “হুর মানে তো এঞ্জেল ই । আমি তোমাকে এঞ্জেল বলেই ডাকবো কেমন ? তুমি একদম এঞ্জেলদের মত সুন্দর । দেখলে পরী পরী মনে হয় । ”

আমি কপালে চুমু খেয়ে বলি ,

– “আচ্ছা মামুনি তোমার যা ভালো লাগে বলিও । ”

হ্ঠাৎই মেয়েটা কিছু মনে করার চেষ্টা করে বললো ,

– “ওহো এঞ্জেল আমাকে এখন যেতে হবে দিদা আর বাবাই হয়তো খুঁজছে । দেরি করলে বকুনি দিবে । আমি এখন আসি । টাটা । ”

বলেই ছুটে যায় । আমি পিছন থেকে নাম জিগ্যেস করলে জানায় তার নাম আরশি চৌধুরী । আমি মুচকি হেসে আরশির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকি । কি মিষ্টি মেয়ে । কে বলবে এই মেয়ের মা নেই ।মেয়েটার ভিতরে এতো কষ্ট লুকিয়ে আছে । দুরন্ত মেয়েটিকে ভিতরের কষ্টগুলো শান্ত করে দিয়েছিলো । যাক আজকের পর তো একটু মন খুলে হাসতে পারবে । মিথ্যা আশা নিয়েই হোক নতুন করে তো বাঁচতে পারবে ।

____________________

বাসায় ফিরবো । গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছি । অগ্নি গাড়ি বের করতে গেছে । এমন সময় খুব দ্রুত গতিতে পাশ দিকে এক গাড়ি যায় । আমি নিচে পরে যাই । আগেই সরে যাওয়ার খুব একটা লাগেনি । আমি পিছন থেকে খেয়াল করে দেখি । গাড়িতে একটা লোক ছিলো পাশেই আরশি বসে ছিলেন । নিশ্চিত এটা আরশির বাবা । দেখেই বোঝা যাচ্ছিলো খুব বাজে লোক । এতো বড় অন্যায় করে গাড়ি থামিলো না । স্যরি বলার প্রয়োজনবোধ করলেন না । এমন সময় অগ্নি ছুটে আসে । আমার হাত পা চেক করছে । হাতে সামান্য একটু কেটেছে । আমাকে গাড়িতে বসিয়ে হাতে মেডিসিন লাগিয়ে দেয় । খুব রেগে আছে অগ্নি । মনে হচ্ছে গাড়ি চালকে পেলে এখনি খুন করবে । জাস্ট খুন করে ফেলবে । আমাকে বার বার গাড়ির নাম্বার জিগ্যেস করেছে । আমি বলেছি আমি খেয়াল করিনি । যদিও মিথ্যা বলেছি । কি দরকার শুধু শুধু ঝামেলার । অগ্নি যা মাথা গরম লোক । বড় ঝামেলা পাকিয়ে দিবে ।
অগ্নি গাল ফুলিয়ে গাড়ি তে উঠে । গাড়ি স্টার্ড দেয় । অগ্নি গাড়ি ড্রাইভ করছে ।এখনো রাগে ফুসছে । আমি আগতো করে অগ্নির কাঁধে মাথা রাখি ,

– “আমার সাথে রাগ করছেন কেন ? আমি কি করেছি ? ”

– “আমি তোমার উপর রাগ করিনি। আমার নিজের উপর রাগ হচ্ছে । আমার তোমার সাথে থাকা উচিত ছিলো । আমার কেয়ারলেসের কারনে এমনটা হয়েছে । ”

– “আপনি শুধু শুধু কেন নিজেকে দোষারোপ করছেন । এটা জাস্ট একটা এক্সিডেন্ট । ”

অগ্নি কোনো কথা জবাব দিলো না । আমি কিছুক্ষণ পর অগ্নির দিকে তাকিয়ে বলি,

– “আমি একটা কথা জিগ্যেস করি । ”

অগ্নি ড্রাইভ করতে করতে উত্তর দেয় ,

– “হুম করো ”

– “যদি আজ আমার কিছু হয়ে যেত । তাহলে কি আপনি আমাকে মিস করতেন ? ”

অগ্নি সাথে ব্রেক কষে । খুব জোড়ে ঝাঁকুনি লেগে গাড়ি থেমে যায় । অগ্নি বড় বড় নিশ্বাস নিচ্ছে । চোখে হারানোর ভয় ।
আমার দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে বললেন ভাঙা গলায় বললেন,

– “আর কখনো এসব কিছু মুখে আনবে না ।এমনটা ভাবতেই আমার শ্বাস আটকে আসে । আর মিস করার জন্য মানুষের বেঁচে থাকতে হয় । তুমিহীন আমি মরে যাবো । আমার বেঁচে থাকার জন্য তুমি প্রয়োজন । ”

অগ্নির কথাগুলো খুব সাধারণ মনে হলেও এই কথাগুলোর গভীরত্ব অনেক । এর ব্যাখ্যা টা সীমাহীন । অগ্নির চোখে স্পষ্ট হারানোর ভয় দেখা যাচ্ছে । এই ছলছল চোখ গুলো চিৎকার করে বলছে “হুরহীন এই অগ্নি প্রাণহীন ” ।

চলবে …❤️

#শত_ ডানার_ প্রজাপতি

#urme prema (sajiana monir )

পার্ট : ৩৬

সময় নিজ গতিতে চলছে । আস্তে আস্তে আমার আর অগ্নির সম্পর্কটাও স্বাভাবিক হয়েছে । আর পাঁচটা কাপলের মত আমাদের সম্পর্ক চলছে । কিছুদিন পূর্বেই অগ্নির ফাইনাল এক্সাম শেষ হয়েছে । রেজাল্ট এখনো বের হয়নি । আমিও পড়াশোনা আর সংসার নিয়ে ব্যস্ত ।আপুর নেক্সট মান্থ ডেলিভারি ।সবকিছুই স্বাভাবিক কিন্ত সব কিছুর মাঝে মায়ের ব্যবহার আজ কাল কেমন যেন অস্বাভাবিক । মাকে দেখে মনে হয় খুব একটা সুস্থ না। কিছু জিগ্যেস করলে উত্তরে বলেন একদম সুস্থ । কিন্তু মায়ের কথা গুলো আমার খুব একটা বিশ্বাস হয় না । মায়ের চেহারায় স্পষ্ট পিড়া ফুটে উঠে । ইদানীং মা খুব তাড়া দিচ্ছে অগ্নিকে বিজনেসে জয়েন করার জন্য । আবির ভাইয়ার পাশাপাশি সবকিছু সামাল দিতে । অগ্নি বরাবরই মায়ের কথায় ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে থাকে । যদিও মা আর অগ্নির সম্পর্ক এখন পুরোপুরিভাবে স্বাভাবিক । কিন্তু অগ্নি এতো তাড়াতাড়ি অগ্নি বিজনেস জয়েন করতে চাইছে না । মায়ের সবকিছু গুজগাছ করার খুব তাড়া ।

ভার্সিটি থেকে কিছুক্ষণ পূর্বেই ফিরেছি । বাড়িতে আমি আর আপু ছাড়া কেউ নেই । লাঞ্চ করে রুমে বই নিয়ে বসেছি । ক্লান্ত দুপুর ঘুমে চোখ জোড়া ভেঙে আসছে । কোনো ভাবে চোখ খোলা রাখার আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছি । বিছানায় আদো আদো চোখে বইয়ের দিকে চোখ বোলাচ্ছি । এমন সময়ই ফোনটা বেজে উঠে । হাতে নিয়ে দেখি মায়ের নাম্বার । মনে খানিক সন্দেহ সৃষ্টি হয় । মা আর এই সময়ে ? কোনো বিপদ আপদ হলো নাকি । তাড়াতাড়ি ফোন রিসিভ করি । অপর পাশ থেকে পুরুষের কন্ঠ ভেসে আসে । ভয়ে হৃদয় আরো জমে যায় । মায়ের ফোন অন্যকারো কাছে কি করে ? আমি নিজেকে থতমত স্বরে বলি ,

– “হ..হ্যালো ,কে? ”

– “মেডাম আমি বাতেন অফিসের ম্যানেজার ”

– “মা কোথায় ,এটা তো মায়ের নাম্বার । আপনার কাছে কি করে ? মা ঠিক আছে তো? ”

– “মেডাম আদ্রিতা মেডাম হ্ঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছে । এক্ষুনি আপনারা হসপিটালে আসেন । ”

আমার মাথায় যেন বাজ পরে । গলা শুকিয়ে গেছে । ভিতু গলায় জিগ্যেস করি,

– “ক…কোন হসপিটালে ? ”

– “প্রাইম হসপিটালে ”

আমি দ্রুত ফোন রেখে হসপিটালে চলে যাই । আপুকে চম্পার সাথে রেখে আসি।আসার সময় অগ্নি আর আবির ভাইয়াকে ফোন দিয়ে জানাই । আবির ভাইয়া ঢাকার বাহিরে এক মিটিং এ ছিলেন । আর অগ্নি বন্ধুদের সাথে । অগ্নি হসপিটালের এই এরিয়াতেই ছিলো । আমি পৌছানোর আগেই অগ্নি হসপিটালে আসে । মায়ের চেম্বারের বাহিরে কাচ ধরে দাড়িয়ে আছে । চেহারায় অসহায়ত্ব । অগ্নিকে খুব অগোছালো লাগছে । আমি অগ্নির সামনে দাড়াই । ভিতরে মা অচেতন হয়ে পরে আছে ডক্টররা চেকআপ করছেন । মাকে এই অবস্থায় দেখে খুব কষ্ট হচ্ছে । নিজের মাকে হারিয়েছি জন্মের সাথে সাথে ।মাকে ডাকার খুব ইচ্ছে হতো ।কিন্তু আমার কাছে তো মা ছিলো না । বিয়ের পর শাশুড়ির রুপে মা পেয়েছি । অনেক স্বাদ করে মা ডাকতাম । যতবার মা বলে ডাকতাম প্রত্যেক বার মনটা খুশিতে ভরে যেত ।যে মায়ের কাছ থেকেই এতো ভালোবাসা এতো স্নেহ পেয়েছি । আজ সে মাকে এমন অবস্থায় দেখে বুক চিড়ে যাচ্ছে । অগ্নি থম মেরে দাড়িয়ে আছে । আমি অগ্নির হাত ধরতেই সাথে সাথে আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেয়।। একদম বাচ্চাদের মত করে কাঁদছে । আমি অগ্নিকে শান্তনা দেওয়ার মত কোনো শব্দ খুঁজে পাচ্ছি না । কি বলবো ? আমি যে নিজেই শব্দহীন হয়ে গেছি ।

ডাক্টারের সামনে আমি আর অগ্নি বসে আছি । ডাক্টার আঙ্কল অপরিচীত নয় । পারিবারিক ডাক্টার । ডাক্টার আঙ্কল রিপোর্টটা হাতে নিয়ে আমাদের দিকে খুব গম্ভির করে তাকিয়ে বললেন ,

– “আমি এখন যা বলবো খুব মন দিয়ে শুনবে । নিজেদের শক্ত করো । ”

আমি ডাক্টার আঙ্কেলের কথায় আরো বেশি ভয় পেয়ে যাই অগ্নির ও একই অবস্থা । আমার হাত দুটো চেপে ধরে আছে । ডাক্টার আঙ্কল আবার বললেন ,

– “আদ্রিতার ব্রেন টিউমার । বেশ কয়েক মাস আগেই ধরা পড়েছে । আমার কাছে প্রথম থেকেই ট্রিটমেন্ট করছিলো । আমি বেশ কয়েক বার তোমাদের জানাতে চেয়েছি কিন্তু আদ্রিতা তা জানাতে দেয়নি । টিউমার অগ্নির বিয়ের কিছুদিন আগে ধরা পড়েছে । আদ্রিতা ইচ্ছে করে সবাইজে জানায়নি । সে সবদিক গুছিয়ে নিতে চেয়েছে । ”

অগ্নি ভাঙা গলায় জিগ্যেস করলেন ,

– “আঙ্কেল কোনো ট্রিটমেন্ট নেই যে মাকে পুরোপুরি সুস্থ করবে! দরকার পরে মা কে দেশের বাহিরে নিয়ে যেয়ে ট্রিটমেন্ট করবো । ”

– “স্যরি অগ্নি কোনো ট্রিটমেন্টই পসিবল না । টিউমারটা মাথার এমন জায়গায় হয়েছে যা অপারেশন করা পসিবল না ।কোনো ডক্টরই কিছু করতে পারবে না । আমি আদ্রিতাকে মেডিসিন দিয়েছিলাম তাও ঠিক মত নেয়নি । দিন দিন টেনশন আর চাপে আরো অবনতি হয়েছে । এখন লাস্ট স্টেজে আছে । যে কোনো সময় যে কোনো বিপদ ঘটতে পারে । ”

কথাটা শুনেই আমার শরীর ঠান্ডা হয়ে যায় চোখ থেকে আপনা আপনি পানি ঝোড়ছে ।

চলবে ….❤️

প্লিজ সবাই সবার মতামত জানাবেন । ভুল ত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন 😊😊😊।