শব্দহীন প্রণয়কাব্য পর্ব-০৮

0
254

#শব্দহীন_প্রণয়কাব্য(আট)
#Mst.Shah Mira Rahman
হায়াত বসার ঘরে সোফায় বসে হু হু করে কাঁদছে। শাহানা নিজের মেয়েকে ধরে রেখেছে। সালমান ডাইনিং টেবিলের একটা চেয়ারে বসে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে কন্নারত হায়াতের দিকে।বাড়ির সবাই স্তব্ধ।এরকম একটা ঘটনার জন্য কেউই প্রস্তুত ছিল না। সন্ধ্যা তাকালো সালমানের দিকে।বুদ্ধিমতি সে। সালমান কেন এরকম টা করেছে তা জানা আছে তার।তাই রাগ দেখালো না। শান্ত গলায় বলল,
“এমন কাজ কেন করলে সালমান?আমাদের বললে কি আমরা মেনে নিতাম না তোমাদের?তাহলে এভাবে জোড় করে বিয়ে করার কারন কি?”
“তোমাদের জানালে তোমরা মানতে তা আমিও জানি কিন্তু ওই বেয়াদব ঘাড়ত্যাড়া মহিলা মানতো না।তাই এমন করেছি।”
হায়াত ফুঁসে উঠলো,
“এই খবরদার আমাকে ঘাড়ত্যাড়া মহিলা বলবে না।বুড়ো খাটাস একটা।জোড় করে বিয়ে করেছে ও আমায়।দেখো কিভাবে মেরেছে আমায়।”
পরের কথাগুলো কাঁদতে কাঁদতে নিজের মাকে উদ্দেশ্যে করে বলল হায়াত। সন্ধ্যা তাকালো হায়াতের দিকে।গালে পাঁচ আঙুলের দাগ বসে গেছে।সালমান বিরক্ত হলো,
“মেরেছি বেশ করেছি।আরো দুই চারটা লাগানোর ইচ্ছা ছিল।হুহ্ বলে কিনা ‘মরে গেলেও কবুল বলবো না’ সেই তো একটা থাপ্পড় খেয়েই গড়গড় করে কবুল বললি।যত্তসব ন্যাকামি।”
“সালমান!”
সন্ধ্যা শাসালো ছেলেকে। সালমান চুপ করল।
“দেখেছ মা দেখেছ কিভাবে কথা বলছে আমার সাথে।”
শাহানা অসহায় চোখে তাকালো নিজের স্বামীর দিকে।এত ঘটনার পর ও সুলেমান চুপচাপ।তার কোনো প্রতিক্রিয়া নেই।মূলত সে নিজেই এই বিয়ের ব্যবস্থা করেছে। সাক্ষী হয়েছে ছেলে পক্ষের। সুলেমান এতক্ষণ চুপ থাকলেও এবার একটু নড়ে চড়ে বসে শান্ত চোখে তাকালো শাহিন মির্জার দিকে।সেই দৃষ্টি দেখে গলা পরিষ্কার করল শাহিন মির্জা।অতঃপর ছোট ভাইয়ের উদ্যেশ্যে বলল,
“দেখো মাহিন।ছেলে মেয়ে যা করেছে করেছে।এবার আমাদের এটা নিয়ে ভাবা উচিত। সালমান কেমন তা তোমরা খুব ভালো করেই জানো। এবার সিদ্ধান্ত টা তোমাদেরই নিতে হবে।
মাহিন মির্জা ভাবার সময় নিল না।সহজ গলায় নিজের বক্তব্য পেশ করল।
“আমি আর কী বলব ভাই।যা হওয়ার তা হয়ে গেছে।মেনে না নিয়ে তো কোনো উপায় নেই।তাই বলছিলাম কালকে কাছের কিছু মানুষ জন ডেকে ছোটখাটো অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আবার তাদের বিয়েটা দিতে।ছোট মানুষ কিভাবে কি করেছে না করেছে।”
কথাটা স্বাভাবিক হলে ও মানতে পারলো না হায়াত। চেঁচিয়ে উঠলো সে,
“অসম্ভব আমি ওই বুড়োকে আবার বিয়ে করতে পারবো না।কখনো না মরে গেলেও না।”
“তোকে এখানে বড়দের মধ্যে কে কথা বলতে বলছে হাহ।আর এতবার বুড়ো বুড়ো কাকে বলছিস।একবার ঘরে আয় তোকে বোঝাবো বুড়ো কাকে বলে?”
হায়াতের কান গরম হয়ে গেল।যেভাবে ফুঁসে উঠেছিল সেভাবেই চুপসে গেল। ছিঃ ছিঃ বদ লোক একটা বাড়ির সবার সামনে কিভাবে কথা বলছে। সন্ধ্যা এবার রাগ দেখালো।
“আহ্ সালমান কোথায় কি বলছো ভেবে চিন্তে বলো।আর হ্যা আজকে হায়াত তোমার রুমে যাবে না।কাল একবারে অনুষ্ঠান করে তোমার ঘরে পাঠানো হবে।”
“অসম্ভব,আমার বউ আমার ঘরে থাকবে।বাকি তোমরা কি করবে তা তোমাদের ব্যাপার।হায়াত চুপচাপ ভদ্রমেয়ের মতো আমার ঘরে যা।কোনো কাইকুই না।আমার জন্য অপেক্ষা কর আমি আসছি।”
হায়াত ক্ষেপে গেল।কোনো কথা না বলে গটগট করে নিজের ঘরে চলে গেল।অসভ্য লোক। লজ্জা সরম কিচ্ছু নেই।সবার সামনে কিভাবে কথা বলছে ছিঃ।
সালমান দেখল তার যাওয়া।মনে মনে ক্ষেপল।
“অভদ্র মহিলা একবার শুধু আয় আমার ঘরে তোর অভদ্রতার ক্লাস নিয়ে ছাড়বো আমি।”
_____
শুক্রবার দিন।আজ সকলেই বাড়িতে আছে। বাড়ির মধ্যে একটা উৎসব মূখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে।মীরা আজ জেদ ধরেছে দুপুরের সব রান্না সে নিজের হাতে করবে। সন্ধ্যা মানলো না। পুরো সপ্তাহ পর এই একটা দিন ই মেয়েটা আরাম করার সুযোগ পায়।এই দিনে মীরাকে রান্নাঘরে পাঠাতে নারাজ সে।মীরা মানলো না।সপ্তাহে একদিন যদি পরিবারের সবাইকে রান্না করে না খাওয়াতে পারে বিশেষ করে সুলেমান কে তবে সে স্ত্রী হিসেবে ব্যর্থ।সন্ধ্যা শুনলো তার যুক্তি।অতঃপর মীরার ইচ্ছে কে প্রাধান্য দিয়ে রাজী হলো।মীরা খুশি মনে রান্নাঘরের দিকে গেল।হায়াত গেল তার বেশ কিছুক্ষণ পর।মীরা তখন গরুর মাংস বসিয়েছে চুলায় বিরিয়ানির জন্য।হায়াতকে উঁকি দিতে দেখে মৃদু হাসল মীরা।
“কিছু লাগবে তোমার?”
“হুম।এক কাপ চা লাগবে।”
প্রায় বারোটা বেজে গেছে।এই সময় চা কে খায়?মীরার মনে মনে অবাক হলেও হায়াত কে বলল,
“ঠিক আছে আমি বানিয়ে দিচ্ছি।”
“না না আমি বানিয়ে নিচ্ছি তুমি তোমার কাজ করো।”
বলেই হায়াত একটা পাতিলে পানি নিয়ে চুলায় বসালো।মীরা কিছু বলল না।হায়াতের পাশে দাঁড়িয়ে নিজের কাজে মন দিল।পানি ফুটতে শুরু করলে হায়াত পাতিল নামিয়ে নিল কাপে পানি ঢালতে গিয়ে তার কি মনে হলো।ইচ্ছে করে পাতিল ফেলল‌।ফুটন্ত গরম পানি পুরোটা গিয়ে পরল মীরার পায়ে।আঁতকে উঠল মীরা।পা ধরে নিচে বসে পরল।হায়াত তাকিয়ে দেখল মীরাকে।তারপর নিজের করা কাজে নিজেই ভয় পেয়ে গেল। অনুশোচনা ঘিরে ধরল তাকে।কাঁদতে কাঁদতে এগিয়ে গেল মীরার দিকে। ততক্ষণে মীরার চিৎকারে সবাই রান্নাঘরে হাজির হলো। সুলেমান দেখল মীরাকে।তারপর হায়াতকে। কিন্তু টু শব্দটি করলো না।চুপচাপ ফ্রিজ থেকে বরফ বের করে মীরা কে কোলে তুলে রুমের দিকে গেল। হায়াত কেঁদে দিল।সালমান অগ্নিদগ্ধ চোখে তাকালো হায়াতের দিকে।হায়াত না না করে উঠল।
_____
মীরাকে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে নিজে নিচে বসল।টেনে নিল মীরার পা নিজের কোলে।খুব সন্তঃর্পণে বরফ ঘষতে লাগলো পায়ে।মীরা চেয়ে রইল সুলেমানের পানে।কেমন চুপ হয়ে আছে লোকটা।মাথা নিচের দিকে করে রেখেছে।এক মুহুর্তের জন্য যন্ত্রণা ভুলে গেলো সে।এই যে সুলেমান তার জন্য ভেতরে ভেতরে অস্থির হয়ে উঠেছে তা যেন খুব সহজেই ধরে ফেলল সে।পেটের ভেতর রঙিন প্রজাপতি উড়তে শুরু করল তার।ঠোঁটে হাসির রেখা দেখা গেল।সুলেমান এবার পা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো।ফাস্ট এইড বক্স এনে আবার বসল মীরার সামনে।মলম নিয়ে লাগিয়ে দিল পায়ে।এতক্ষণ পর মাথা তুলে তাকালো সুলেমান। শান্ত গলায় জিজ্ঞেস করল,
“জ্বলছে?”
“হুম।”
মীরার সহজ স্বীকারোক্তি। সুলেমানের বুকটা হু হু করে উঠল।ইচ্ছে হলো প্রিয় নারীটির সব ব্যাথা সব যন্ত্রণা নিজের করে নিতে। কিন্তু পারলো না।সুলেমান ঠোঁট বসালো মীরার পায়ে।মীরা কেঁপে উঠলো।নিজের পা সরিয়ে নিল। সুলেমান উঠে এলো।আগলে নিল মীরাকে।বুকের সাথে মাথাটা চেপে ধরে ধরা গলায় বলল,
“ঠিক হয়ে যাবে মীরা।আর একটু খানি।”
মীরা বুঝল না।সুলেমান সান্তনা কাকে দিল?তাকে নাকি নিজেকে?
_____
অতীত মনে হতেই কেঁপে উঠল হায়াত।যেই লোকটার জন্য ও এতো পাগলামি করলো লোকটা আজ থেকে তার ভাসুর। ছিঃ ছিঃ করে উঠলো হায়াতের মন।নিজের ভাসুরকে নিয়ে সে কত কিছুই না কল্পনা করেছে। অসস্থিতে গাঁট হয়ে গেল হায়াত।সেই সাথে রাগ বাড়লো সালমানের প্রতি।আজ ওই জঘন্য লোকটার জন্য এরকম একটা জঘন্য পরিস্থিতিতে পরেছে সে।সব ওই লোকটার দোষ সব।
_____
রাত দশটা।অক্টোবরের বৃষ্টির কোনো নিয়ম-কানুন নেই।হুট করে এসে হুট করেই চলে যায়।সেই সন্ধ্যে হতে বৃষ্টি নেমেছে।এখনো থামার নাম নেই।বাড়ি থেকে ছাতা আনেনি মীরা।তবুও আফসোস করলো না।নেমে এলো রাস্তায়।রিকশাও নিল না আজ।কিছু সময়ের ব্যবধানে ভিজে গেল মীরার শরীর।শাড়ি জড়িয়ে গেল পুরো শরীরে।এলোমেলো সিক্ত চুল গুলো লেপ্টে গেল মীরার গালে গলায়।মুহূর্তটা অনুভব করার চেষ্টা করল মীরা।কিন্তু বিষাদে ছেয়ে গেল হৃদয়।মনে মনে কামনা করল সুলেমান কে।লোকটা সাথে থাকলে দূরে সরিয়ে দেয়।অথচ দূরে গেলে কাছে পেতে মন চায়।মীরা আজকাল নিজেকে বুঝে উঠতে পারে না।কি চায় সে?কি চায় তার মন।এতকিছু আর ভাবলো না মীরা ভাবতে মন চাইল না।তার কল্পনা জুড়ে বিচরণ করল তার একান্ত পুরুষটি।এই সময় সুলেমান পাশে থাকলে দুজনে মিলে একসাথে অনুভব করত এই বৃষ্টিময় মুহুর্ত। তার কল্পনাকে বাস্তবে রূপান্তর‌ করতে পেছন থেকে ভেসে এলো অতি পরিচিত এক পুরুষালি কণ্ঠস্বর।
“মীরা।”
মীরা চমকালো।তড়াক করে ঘুরে দাঁড়ালো পেছনে।ছাতা হাতে সুলেমান দাঁড়িয়ে আছে।মীরার ঠোঁটের কোণে উঁকি দিল এক অনবদ্য হাসি। সুলেমান এগিয়ে এলো তার কাছে। মাথার ওপর ছাতা ধরল।
“এভাবে এতো রাতে ভিজছো কেন?ঠাণ্ডা লেগে যাবে তো।”
মীরা জবাব দিল না।তাকিয়ে রইল সুলেমানের দিকে।সুলেমান দেখল মীরার দৃষ্টি।সেই দৃষ্টিতে দৃষ্টি রেখেই ঠোঁট প্রসারিত করে হাসল সুলেমান। মীরার কি যেন হলো।হুট করেই জড়িয়ে ধরল সুলেমান কে।মিশে গেল তার বুকে। জড়িয়ে আসা কণ্ঠে আধো আধো বুলিতে বলে উঠলো,
“আপনি শুধু আমার সুলেমান।শুধু আমার।আপনাকে অন্য কারো সাথে কল্পনা করলে আত্মা কেঁপে ওঠে আমার।মৃত্যুসম যন্ত্রণা হয়।আপনি আমাকে ছেড়ে কখনো যাবেন না সুলেমান।আমি বললে ও না।”
সুলেমানের বুকে যেন এক পশলা বৃষ্টি নামলো। অদ্ভুত ভাবে কাঁপতে লাগলো হৃদপিণ্ড নামক যন্ত্রটা।এক হাত অতি যত্নে মীরার মাথায় রাখল।হুশ ফিরল মীরার।ছিটকে সরে এলো সুলেমানের কাছ থেকে।অতঃপর পিছু ফিরে বৃষ্টির মাঝে আবার হাঁটতে শুরু করল।কণ্ঠে জোর এনে সুলেমানের উদ্দেশ্যে বলল,
“বয়স হয়েছে আপনার।আর কত?এভাবে আমার পেছনে না ঘুরে নিজেকে নিয়ে ভাবুন।হায়াত ভালোবাসে আপনাকে।ওর সাথে আপনি ভালো থাকবেন।বিয়ে করে নিন তাকে।সুখের সংসার বাঁধুন।নিজের ভালোটা বুঝুন সুলেমান।”
বেশিদূর যেতে পারল না মীরা।হাতে টান পরলো তার।হুমড়ি খেয়ে পড়লো সুলেমানের বুকের ওপর।মুখ তুলে তাকালো মীরা।সুলেমানের শান্ত নির্মল দৃষ্টি তার দিকে নিবদ্ধ।মীরা তাকিয়ে রইল।সুলেমান হাতের ছাতাটা ছেড়ে দিল। রাস্তায় পড়ে বাতাসে কয়েকবার গড়াগড়ি খেল ছাতাটি।মীরা দেখল দৃশ্যটা।কোমড়ে সুলেমানের হাতের চাপ গভীর হলো।মীরা মিশে গেল তার সাথে।সুলেমান অন্য হাতে মীরার গালে লেপ্টে থাকা চুলগুলো আলগোছে গুছিয়ে দিয়ে শান্ত গলায় বলল,
“হায়াত এখন আমার ছোট ভাইয়ের স্ত্রী।তাকে নিয়ে এসব ভাবাও পাপ মীরা।”
মীরা চমকালো। হতবাক হলো।কিভাবে কি? হায়াত তো পছন্দ করতো সুলেমানকে।তবে সালমানের সাথে কিভাবে?মীরার অবাক হওয়া মুখশ্রী দেখল সুলেমান।অতঃপর গলায় অত্যন্ত আবেগ মিশিয়ে বলল,
“আমার জীবনে তুমি এক নারী মীরা।অন্য সব নারী আমার কাছে বিষাক্ত কাঁটার মতো।তাদের দৃষ্টি তোমার মতো আমার পুরো শরীরে শিহরণ জাগায় না বরং তীক্ষ্ণ হুলের মতো ফোড়ায়।আমি অন্য কাউতে এতটা প্রভাবিত হইনা যতটা তোমাতে হই।তুমি হাসলে, কাঁদলে,কথা বললে,ভালোবাসলে,রাগ করলে এমনকি ঘৃণা করলেও আমি তোমাতেই মুগ্ধ হই।আমার জীবনে শুধু তুমি এক প্রয়োজন মীরা অন্য কিচ্ছু না।”
মীরা তাকিয়ে রইল রইল সুলেমানের দিকে।চোখের জল গুলো বৃষ্টির সাথে ধুয়ে মুছে ফানা হয়ে গেল।গলা কাঁপল।কাঁপল ঠোঁট। ঠাণ্ডায় নাকি অনুভূতির তোপে বুঝলো না।আলো আঁধারির খেলায় সুলেমান তাকালো মীরার কাঁপা ঠোঁট পাণে।ঢোক গিলল। মুহূর্তেই হুড়হুড় করে তৃষ্ণা বাড়ল তার।নিজেকে আটকাতে চেয়েও আটকালো না।নিচু হয়ে নেমে এলো মীরার ঠোঁটের স্পর্শ পেতে।নিজের ঠোঁট দ্বারা পিষ্ট করল মীরার নরম কোমল ঠোঁট জোড়া।মীরা মিইয়ে গেল।মিশে রইলো সুলেমানের বক্ষে। সুলেমান আরো গভীরে মিশিয়ে নিল।যেন বেঁধে ফেলতে চায় তাকে নিজের বক্ষপিঞ্জরায়।মীরা হাঁসফাঁস করল।তবু ছাড়ল না সুলেমান।প্রিয় নারীর ঠোঁটের নেশায় মেতে উঠল।মীরার আশপাশ জ্ঞাত হলো।ছাড়ানোর চেষ্টা করল।ব্যর্থ হলো। এরই মাঝে কয়েকটি বাইকে শব্দ শোনা গেল।তাদের দিকেই এগিয়ে আসছে।সুলেমান ঠোঁট ছাড়ল মীরার।তবে নিজের থেকে ছাড়ালো না।
“আয় হায় কিইই মামা!ভাবি নাকি?”
মীরা চমকে উঠল।ভয় পেল।সুলেমান পিছু ফিরে তাকালো।কয়েকটি ছেলে বাইক থামিয়ে তাদের দিকেই তাকিয়ে আছে।সুলেমান চোখ দিয়ে পরখ করলো তাদের স্বভাব।অতঃপর মীরার হাত ধরে খুবই মোলায়েম হেসে তাদের উদ্দেশ্যে বলল,
“ঠিক বলেছ ছোট ভাই।আমার পয়ত্রিশ বছরের সাধনা সে।খুব অল্পতেই অভিমান করে বসে আমার ওপর।আবার অল্পতেই মেনে যায়।”
সুলেমানের এরকম অমায়িক হাসি দেখে ছেলে গুলো একে ওপরের দিকে তাকালো।তারপর তারাও হেসে জবাব দিল,
“সাহায্য লাগবে নাকি ভাইয়া?”
সুলেমান হেসে ঘাড় নাড়ালো।
“করলে ভালোই হয়।”
সাথে সাথে কথা বলা ছেলেটি নিজের বাইক থেকে নেমে দাঁড়ালো। সুলেমান কে ইশারা করল তার বাইকে বসতে। সুলেমান মীরার হাত ধরে এগিয়ে গেল সেদিকে।আজ ইচ্ছে করেই গাড়ি আনেনি সে।ইচ্ছে ছিল মীরাকে নিয়ে এই বৃষ্টি বাদলে ভবঘুরে হওয়ার।মীরা ভয় পেয়েছিল। ভেবেছিল ছেলেগুলো হয়তো বখাটে। সুলেমানের জায়গায় অন্য কেউ হলে হয়তো ভয় পেত বা ঝামেলায় জড়িয়ে পরত।অথচ সুলেমান কত সুন্দর ভাবে সামলে নিল পরিস্থিতিটা।এটা সুলেমানের আরেক টা গুণের মাঝে পরে। সুলেমান বাইকে উঠে মীরাকে ও ওঠার জন্য ইশারা করলো।মীরা সুলেমান কে ধরে উঠে বসল।দাঁড়িয়ে থাকা ছেলে আরেকটা বাইকের পেছনে বসল।একসাথে তিন চার টা বাইক স্টার্ট হলো।আবছা অন্ধকারে বৃষ্টি কাটিয়ে এগিয়ে চলল সামনের দিকে।মীরা পেছন থেকে জড়িয়ে ধরল সুলেমানকে। কাঁধে মাথা রেখে অনুভব করল প্রিয় মানুষ টির সান্নিধ্য।মীরা টের‌ পেল এখন আর তার মন খারাপ করছে না।মনটা বিষাদে ছেয়ে যাচ্ছে না।বরং সুখ নামে প্রজাপতি গুলো রং বেরংয়ের ডানা মেলে জানান দিয়ে যাচ্ছে তাদের উপস্থিতি।
চলবে🌺