#শরতের_এক_সাঁঝবেলায়
#পর্বঃ১৩
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি
এতো সকালে বেল কে বাজিয়েছে তা চিন্তা করতে করতে প্রিসা দরজা খুলে দিলো।
” আপনি এতো সকালে?” অপরপাশে থাকা নিহাদকে জিজ্ঞেস করলো প্রিসা।
” আপনি কালকে বলেছিলেন না কোন সাহায্য লাগলে যেন বলি তাই চলে এলাম।”
প্রিসা খানিকটা বিব্রত হলো কারণ সে এমনিতেই বলেছিলো।কিন্তু সে কি আর জানতো নিহাদ এটাকে সিরিয়াসলি নিয়ে নেবে।
” বলুন কি সাহায্য লাগবে?” নিচু স্বরে জিজ্ঞেস করলো প্রিসা।
একটা ছোট বাটি প্রিসার দিকে বাড়িয়ে দিলো নিহাদ।
” আসলে নতুন এসেছি তো তাই সব জিনিসপত্র এখনো কেনা হয়নি।চা করবো কিন্তু চিনি নেই।একটু চা করার জন্য লবণ না মানে চিনি দিলে ভালো হতো।”
নিহাদের কথা বলার ধরণ প্রিসার মনে খানিকটা সন্দেহ তৈরি করলো বটে তবে সে আপাততো তা নিয়ে চিন্তা করলো না।দ্রুত বাটিটা নিয়ে ভেতরে চলে গেলো।দরজার কাছে দাঁড়িয়ে জিরাফের মতো গলাটা লম্বা করে নিহাদ ভেতরে দেখতে লাগলো।
” এতো সকালে কে এসেছে আপু?” বক্সে খাবার নিতে নিতে জিজ্ঞেস করলো পালক।চিনির কৌটা থেকে চিনি বাটিতে নিলো প্রিসা।
” নিচের ফ্ল্যাটে নতুন ভাড়াটিয়া এসেছেন উনি।তুই টিফিন বক্সগুলো গুছিয়ে তৈরি হয়ে নে।দেরি হয়ে যাবে।”
প্রিসাকে আসতে দেখে নিহাদ ভালো ছেলের মতো সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে গেলো।
” এই নিন আপনার চিনি।”
” অসংখ্য ধন্যবাদ।স্কুলে যাবেন না?”
” অবশ্যই যাবো।না যাওয়ার তো কোন কারণ নেই।”
” তাহলে স্কুলে দেখা হবে।বাই।”
ফুরফুরে মন নিয়ে নিহাদ সিঁড়ি দিয়ে নেমে গেলো।প্রিসা দ্রুত দরজা বন্ধ করে দিয়ে তৈরি হতে চলে গেলো।
মধুপুর ব্রিজের কাছে একটা ময়লার স্তুপের পাশে বেহাল অবস্থায় পড়ে ছিলো কাদের আলী।জামা-কাপড় জায়গায় জায়গায় ছেঁড়া,গায়ে কা’লসি’টে দাগ,ময়লা লেগে শরীরের বে’হা’ল অবস্থা,বিভিন্ন জায়গায় র’ক্ত জমে গিয়েছে।ভয়ে কেউ কাছেও যায়নি।পুলিশ এসে তাকে তুলে হসপিটালে পাঠিয়েছে।
অফিসে এসে ইয়াসিন থেকে পালক জানতে পেরেছে রাদ এখনো আসেনি।পালক স্বাভাবিক ভাবে নিজের ডেস্কে বসে কাজ শুরু করে দিলো।তবে খানিক বাদে সবার ফিসফিস শব্দে পালক উঠে দাঁড়ালো।
অন্যসময় পালক দেখে এসেছে রাদ নিজেই রিমোটের সাহায্যে হুইলচেয়ার চালিয়ে নিয়ে যতো তবে এখন সেটার ব্যতিক্রম দেখতে পেলে পালক।প্রায় তার বয়সী একটা মেয়ে রাদের হুইলচেয়ার ঠেলে নিয়ে আসছে।সবাই উৎসুক হয়ে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে।
” এটা কি রাদ স্যারের গার্লফ্রেন্ড নাকি?”
” ধুর।এই পা ভা’ঙা পোলার আবার গার্লফ্রেন্ড থাকবে নাকি।কে হবে এই ল্যাং’ড়া পোলার প্রেমিকা।” তাচ্ছিল্যভাবে বললো নোরা।পালক স্বাভাবিক ভাবেই তাকিয়ে আছে তাদের দু’জনের দিকে।
” এটেনশন।সবাই মনোযোগ দিয়ে আমার কথা শুনবেন আশা করি।এই হচ্ছে আয়না শাহরিয়া,আমার কাজিন সিস্টার।আজ থেকে আয়নাও আমাদের অফিসের একটা অংশ।এখন থেকে সেও এখানে কাজ করবে।আশা করি আপনারা সবাই ওকে কাজে সাহায্য করবেন।আয়না তুই সবার সাথে পরিচিত হয়ে নে।ইয়াসিন তুমি এসো আমার সাথে।”
রাদ নিজের কেবিনে চলে গেলো তার পেছন পেছন ইয়াসিনও চলে গেলো।আয়না সবার সাথে পরিচিত হয়ে নিলো।খুবই নম্র ব্যবহার তার।সাব্বির নিজে যেচে আয়নার সামনে পরিচিত হতে এসেছে।আয়নাও সামান্য কথা বলে সে এসেছে।পালকের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হাসি দিলো আয়না।
” কেমন আছো আপু?তোমার কথা আমি ভাইয়ার কাছে শুনেছি।যেদিন ভাইয়া তোমার সাহসিকতার কথা বলেছিলো তখন থেকেই সুপ্ত ইচ্ছে ছিলো তোমার সাথে দেখার করার।তুমি অনেক ভালো।”
” ধন্যবাদ ম্যাডাম।”
” ধুর আপু ম্যাডাম বলছো কেন?আমিও তো তোমাদের মতো কাজ করতে এসেছি।তোরিই না আমি অফিসের বস।আমি তোমার থেকে এক বছরের ছোট হবো।তো এসব আপু,ম্যাডাম বলার দরকার নেই।তোমাকে আমার ভীষণ পছন্দ হয়েছে।তুমি আমার টেস্টে পুরোই একশতে একশো দশ।”
” টেস্ট?”
” কিছু না।আচ্ছা তুমি কাজ করো তাহলে।আমি ভাইয়ার সাথে দেখা করে কাজ বুঝে আসি।তোমার সাথে লাঞ্চ টাইমে জমিয়ে আড্ডা দেবো।”
রাদকে চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে ইয়াসিন মুখটা বেজার করে বললো,
” স্যার আপনার এই বোনকে এখানে আনার কি দরকার ছিলো?আমার সুখ কি কোন কালেই আপনার সহ্য হয়না?”
” কেন আয়না কি করেছে তোমাকে?তোমার চকলেট চু’রি করে খেয়ে ফেলেছে নাকি?” ইয়াসিনের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো রাদ।
” আপনার বোনটা এক নম্বরের ব’জ্জা’ত মহিলা।যতবার আপনাদের বাড়িতে যায় আমাকে জ্বা’লি’য়ে মা’রে।আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল ছিলো সেইদিন আপনার বাসায় যাওয়া আর ভুল করে ওই ভাঙা আয়নার জুতো পড়ে চলে আসা।তারপর থেকে আমার পিছনে লেগেছে ওই বজ্জা’তিনী মহিলা।”
” তো তুমি তার জুতো পড়ে চলে যাবে আর সে চুপ করে থাকবে এটা কি করে ভাবলে তুমি মুলা?যেখানে আমি এক চামচ তরকারি শেয়ার করতে পারিনা সেখানে আমার বোন কি করে তোমাকে ছেড়ে দেবে।”
” ধুর,আপনাকে বলাটাই বেকার।আমি কি আপনার কেউ লাগি যে আপনি আমার পক্ষ নেবেন।যা আড়ি আপনার সাথে,মাতবোনা না আর।”
” মাতবোনা?” ভ্রু উঁচু করে বললো রাদ।
” আব…….মানে আর আপনার সাথে কথা বলবো না।”
” কি কথা বলছো তোমরা?”
” কি আর বলবো একটা ব’জ্জা’ত মহিলার নামে নালিশ করছিলাম।” বিরবির করে বললো ইয়াসিন।
” আসলে মুলা একজনের নামে নালিশ দিচ্ছিলো।”
” ও আচ্ছা।থাক জুতো চো’রের হয়তো কোন কাজ নেই।কাজের অভাবে অন্যের মাথা খাচ্ছে।কি আর করবে।বাদ দাও তো ভাইয়া,তুমি আমার কাজগুলো বুঝিয়ে দাও।”
.
.
একটা রুমে সামনাসামনি বসে আছে দু’জন লোক।
” এগুলো কি হচ্ছে?হঠাৎ করে দু’জনের সাথে এরকম কেন হলো?একজন সুস্থ হলে তাকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেলো,চেষ্টা করেও ছাড়িয়ে আনতে পারেনি এখন আরেকজন আধ’ম’রা হয়ে হসপিটালে পড়ে আছে।কি হচ্ছে এসব?”
” আমি জানি না কিছু বুঝতে পারছিনা।”
” তোমার কি মনে হয় ও করছে না তো?”
” আরে না।ও আছে নেই অবস্থা।তাছাড়া আমি তো ওর উপর নজর রাখছি।ও কি করে এসব করবে?তুমি তো জানো ওর অবস্থা।ভোলাভালা একটা ছেলে,মোটেও ওর মাথায় এসব আসবে না।”
” তাহলে কে করছে এসব?কেন করছে?”
” জানিনা আমি কিছু জানিনা।”
দু’জন ব্যক্তিই হাতে ড্রিংক এর গ্লাস নিয়ে হিসেব কষতে লাগলো।
টিফিন শেষ করে বাইরে এসে প্রিসার চোখ গেলো প্লে গ্রাউন্ডের দিকে।কয়েকটা বাচ্চা মুখ গোমড়া করে দাঁড়িয়ে আছে।প্রিসা তাদের কাছে গিয়ে দাঁড়ালো।
” কি হয়েছে বাচ্চারা?”
টিচারকে দেখে তারা খানিকটা ঘাবড়ে গেলেও কিছু বললো না।
” কি হলো?তোমরা এভাবে দাঁড়িয়ে আছো কেন?কোন সমস্যা?সমস্যা হলে টিচারকে বলো।”
” টিচার আমরা না দোলনাতে উঠবো কিন্তু ওরা দোলনা থেকে একটুও নামছে না।”
” হ্যাঁ টিচার।ওই পঁ’চা মেয়েগুলো যেন আমরা না উঠতে পারি তাই দোলনাতেই বসে আছে।”
” এভাবে বলে না বাচ্চারা।চলো আমি দেখি কি করা যায়।”
প্রিসা দোলনার কাছে এসে দাঁড়ালো।
” টিফিন করেছে সবাই?”
” ইয়েস টিচার।” সবাই একসাথে বললো।
” বেশ।দেখো দোলনাটাতো তোমাদের জন্যই,তাহলে কেন ঝগড়া করছো?শোন সবাই এখন একলাইন করে দাঁড়াবে।তিনজন করে দোলনায় উঠবে,চারবার দোল খেয়ে নেমে যাবে যেন পরের জনও তোমার মতো দোল খেতে পারে।তোমার যদি আবারো দোল খেতে ইচ্ছে হয় তবে তুমি আবারো পেছন থেকে লাইনে দাঁড়াবে।এবার যারা যারা দোলনাতে দোল খেতে চাও তারা লাইনে দাঁড়িয়ে পড়ো।”
প্রিসা দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ তাদের গাইড করতে লাগলো।একটু দূরেই গাছের ফাঁক গিয়ে তাকে দেখছে নিহাদ।
” বাহ্ শান্তি নগরের রাজকন্যা তো দেখি আবার মায়াবতীও।সহজেই তো দেখি বাচ্চাদের ম্যানেজ করতে পারে।যাক ভালোই হলো ভবিষ্যতে বাচ্চাদের অন্তত আমার দেখাশোনা করতে হবে না।এটাও নোট করতে হবে।দেখি শান্তি নগরের রাজকন্যার মধ্যে আর কি কি গুণ আছে,সেটাও নোট করে রাখবো।কিন্তু মহারাণী হচ্ছেন গোমড়ামুখো।আমার সামনে এলে একলাইনের বেশি কথায় বলেনা।কি যে করি।” কথাটা বলে হতাশাভরা একটা নিশ্বাস নিলো নিহাদ।
চলবে………
#শরতের_এক_সাঁঝবেলায়
#পর্বঃ১৪
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি
আজ পাঁচদিন হতে চললো রাদ অফিসে আসছে না।প্রথম দু’দিন পালক স্বাভাবিক ভাবে ভেবেছিলো হয়তো অসুস্থ কিন্তু তৃতীয় দিনও যখন এলো না তখন পালকের কিছুটা চিন্তা হলো।তাই পালক আয়না থেকে জিজ্ঞেস করলো তার ব্যপারে।আয়না থেকে সে জানতে পারলো রাদ বাইরে আছে,বাড়িতেও নেই।সে আর ইয়াসিন কোন কাজের জন্য কোথাও গিয়েছে।
” আপু ওনাকে আমি একবার ফোন করেছিলাম ফোন বন্ধ ছিলো।”
” আমিও ফোন বন্ধ পাই আপু।মাঝেমাঝে ভাইয়া ফোন করে আমাকে তবে দু-তিন মিনিট কথা বলে রেখে দেয়।”
পালক আর বেশি কিছু জিজ্ঞেস করলো না।তবে তার কেন যেন রাদের জন্য চিন্তা হচ্ছে।
.
.
” আপনি সি’গা’রেট খান?”
আচমকা কারো কন্ঠ শুনে চমকে গেলো নিহাদ।পেছন ফিরে প্রিসাকে দেখে একটু বিব্রত হলো বটে তবে সেটা প্রকাশ করলো না।ধোঁ’য়া ছেঁড়ে হাতে থাকা সি’গারে’টটা পা দিয়ে পি’শে ফেললো।ততক্ষণে প্রিসাও নিহাদের সামনে এসে দাঁড়িয়ে পড়েছে।
” আপনি সি’গারে’ট খান?”
” দেখতেই তো পেলেন।না পেলে নিচে তাকিয়ে দেখুন।”
নিহাদের কথায় প্রিসা অপমানিত বোধ করলো।থমথমে গলায় বললো, ” আপনি না একজন শিক্ষক।একজন শিক্ষক হয়ে কি করে আপনি এসব খেতে পারেন?প্রতিটা বইয়ের আগে পিছে,ভিতরের পৃষ্ঠায় বড় বড় করে লেখা থাকে ” ধূম’পান স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষ’তি’ক’র।” এটা কি জানেন না?আপনি একজন শিক্ষক হয়ে এসব খেলে বাচ্চাদের কি শেখাবেন?নিজের জীবনের কি মায়া নেই নাকি?জানেন না সিগারেট খেলে ক্যা’ন্সা’রের মতো আরো কত কত রোগ হয়।এই সিগারেট খাওয়ার জন্য আপনার কত আয়ু কমে গিয়েছে আপনি জানেন?দেখে তো একদম ভোলাভালা মনে হয় কিন্তু কে জানতো আপনি এরকম।”
” কি করবো বলুন।টেনশনে থাকলে খেতে হয়।সবসময় তো আর খায় না।মাসে এক-দুইটা খেয়ে থাকি।”
” কিসের এতো টেনশন?বউ-বাচ্চা ফেলে এসেছেন নাকি?”
” আর বাচ্চা।এখনো পর্যন্ত কোন মেয়েই পাত্তা দিলে না তাহলে বউ আসবে কোথা থেকে?আর বউ না আসলে বাচ্চা আসবে কোথা থেকে।আর বউ-বাচ্চা না থাকলে তাদের জন্য টেনশন করবো কিভাবে?”
” বড় বেশিই কথা বলেন আপনি?” বিরক্ত নিয়ে বললো প্রিসা।নিহাদ হালকা হেসে মনে মনে বললো,
” আপনি আমার সামনে এলে আমার অধর জোড়া যে নিজের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে।সেইসাথে আমার হৃদয়টাও এতো দ্রুত চালতে থাকে মনে হয় এই বুঝি আপনি আমার হৃদস্পন্দন শুনে ফেললেন।”
” কি হলো কার ভাবনায় ডুবে গেলেন?”
” কারো নয়।তো টিচার প্রিসা এখন আমার কি করা উচিত?”
” সিগারেট খাওয়া বন্ধ করে দিন।না হলে নিজের তো ক্ষতি করবেন সাথে আশেপাশে যারা থাকবে তাদেরও ক্ষতি হবে।”
আচমকা কিছু না বলে প্রিসা দ্রুত পায়ে নিচে নেমে গেলো।হঠাৎ প্রিসার এভাবে চলে যাওয়াতে নিহাদ বেশ অবাক হলো।
ঘরে ঢুকেই থমকে গেলো প্রিসা,হাঁপাচ্ছে সে।বারবার চাইছিলো যেন তার দেখা ভুল হয় কিন্তু না সত্যিই অয়ন তার সামনে বসে আছে,পাশে বসে আছে দীপ্তি।
” এইতো প্রিসা চলে এসেছে।প্রিসা যা একটু ওদের জন্য নাস্তার ব্যবস্থা কর।”
” হ্যাঁ মা।”
প্রিসা একবার অয়নের দিকে তাকালো।গা জ্বালানো একটা হাসি দিলো অয়ন।প্রিসা বেশ ভালোই বুঝতে পারছে অয়ন নিশ্চয়ই কোন উদ্দেশ্য নিয়ে এসেছে।
নাস্তা নিয়ে এসে প্রিসা দেখলো অনিলা বেগম আর দীপ্তি নেই।প্রিসাকে দেখে অয়ন ফোন রেখে তার দিকে তাকিয়ে হাসলো।
” কি প্রিসারাণী কি খবর?কেমন চলছে দিনকাল?ভালো যাওয়ার কথা অবশ্য।দেখলাম তো ছাদে এক ছেলের সাথে দাঁড়িয়ে গল্প করছিলে।তা ছেলে কি বয়স্ক নাকি তাগড়া?টাকা পয়সা আছে তো?” নিচু স্বরে বললো অয়ন।
” আপনারা এখানে কেন এসেছেন?”
” আরে প্রিসারাণী এতো তাড়াহুড়ো কিসের।একটু দাঁড়াও জানতে পারবে।”
” আমাদের ঘর কেমন লেগেছে বউমা?প্রথমবার এলে তুমি।বলে এলে সাজিয়ে রাখতাম একটু।”
দীপ্তিকে দেখে অয়ন চট করে ফোনের দিকে তাকালো।এমন একটা ভাব করলো যেন কিছুই হয়নি।
” খারাপ না।ভালোই আপনাদের ঘর।”
” তা বউমা তোমরা হঠাৎ আমাদের বাড়ি? গুরুত্বপূর্ণ কিছু?”
” ফুপি আমরা পরের সপ্তাহে বান্দরবান যাচ্ছি,মধুচন্দ্রিমাতে মানে হানিমুনে যাচ্ছি।তাই ভাবলাম তোমাদেরও বলে যায়।”
” বাহ্ তা তো খুবই ভালো।নতুন বিয়ে হয়েছে একটু ঘুরতে তো যাওয়া দরকার।আরো আগে যাওনি কেন?বিয়ের এতো মাস পর যাচ্ছো।”
” আসলে কি বলো তো তখন দীপ্তির যেতে ইচ্ছে করছিলো না এখন তার শখ হয়েছে যাওয়ার।বউয়ের কথা তো আর ফেলা যায় না তাই চিন্তা করলাম এবার তাহলে যায়।কি প্রিসা জায়গাটা সুন্দর না?”
” হুম সুন্দর তো হবেই।এক বান্দর যাচ্ছে আরেক বান্দরকে দেখতে।বান্দরবানে কোন বানর এসে এই বেয়াদবটাকে দু’টো থা’প্প’ড় দিলে বেশ হবে।আমি তো সম্মানের খাতিরে দিতে পারিনি।তবে বান্দরের তো এটার সাথে কোন সম্পর্ক নেই,তাই সম্মানেরও ভয় নেই।”
” কিরে প্রিসা কি বিরবির করছিস?”
” কিছু না।আরে ভাবী বসে আছেন কেন?খান না,আপনার বড় ননদ আপনার জন্য নিজের হাতে বানিয়ে এনেছে।খেয়ে দেখুন।ভালো লাগলে বলবেন,আমি নাহয় রেসিপি বলে দেবো।চাইলে বাসায় চলে আসতে পারেন,একেবারে হাতে ধরে শিখেয়ে দেবো।চিন্তা করবেন না একদম ফ্রীতে শিখিয়ে দেবো।আফটার অল আপনি আমার ভাবী হোন।” আড়াচোখে অয়নের দিকে তাকিয়ে বললো প্রিসা।
.
.
পার্কে বসে কারোর আসার অপেক্ষা করছে প্রিসা।এরই মধ্যে কেউ তার পাশে এসে ধপ করে বসে পড়লো।
” এতোক্ষণ লাগে একটা আইসক্রিম নিয়ে আসতে?”
বড় একটা নিশ্বাস নিয়ে পালক বললো, ” কি করবো বলো,আমার দোষ নাকি?লেমন ফ্লেভারের আইসক্রিম খুঁজতে গিয়ে আমার জা’ন বেরিয়ে গিয়েছে।অনেক খুঁজে তারপর একটা পেলাম।” আইসক্রিমটা প্রিসার দিকে বাড়িয়ে দিলো পালক।প্রিসা প্যাকেটটা নিয়ে খানিকটা খুলে পালকের দিকে বাড়িয়ে দিলো।পালক ছোট একটা কামড় দিয়ে আইসক্রিমটা প্রিসার মুখের সামনে ধরলে প্রিসাও একটা কামড় দিলো।কথা বলতে বলতে দু’বোন মূহুর্তেই আইসক্রিমটা শেষ করে ফেললো।
প্রিসার কাঁধে মাথা দিয়ে বসে আছে পালক।বোনের মাথায় স্নেহের হাত বুলিয়ে দিলো প্রিসা।
” কি হয়েছে বোনু?মন খারাপ?”
” না কিন্তু ভালো লাগছে না।”
” কেন?কেউ কিছু বলেছে?”
প্রিসার কথার উওর না দিয়ে পালক আনমনে বললো, ” বাবা কেন আমাদের ছেড়ে চলে গেলো আপু?বাবা কি জানে না তাকে ছাড়া থাকতে আমাদের কষ্ট হয়?মা যে প্রতিদিন লুকিয়ে কান্না করে।এত তাড়াতাড়ি কেন চলে গেলো বাবা।আমার সে তার কথা খুব মনে পড়ে।” কথাগুলো বলতে বলতে নিঃশব্দে কান্না করতে লাগলো পালক।প্রিসা কিছু বলতে পারলো না।কিইবা বলবে সে তারও যে প্রতিদিন তার বাবার কথা মনে পড়ে।
পার্কের এককোণে বসে নিঃশব্দে তাদের পিতার কথা মনে করে চোখের জল ফেলছে দু’বোন।অন্যদিকে পার্কের আরেকপ্রান্তে একটা বাচ্চা তার বাবার সাথে হাসিখুশিভাবে খেলা করছে।কতই না বিচিত্র মানুষের জীবন।কেউ কারো স্মৃতি মনে করে খুশি হয় তো কেউ চোখের জল বিসর্জন দেয়।কারো জীবনে থাকে সুখের ছোঁয়া তো কেউ জীবন যুদ্ধে বেঁচে থাকার জন্য অাপ্রাণ লড়াই করে যাচ্ছে।
.
.
” এতোদিন পর আপনাদের খোঁজ খাওয়া গেলো।তো জুতো চো’র মশাই কি মনে করে আমাকে ফোন দিয়েছেন?” ভিডিও কলে থাকা ইয়াসিনকে বললো আয়না।
” আমার কোন শখ নেই তোমার মতো ব’জ্জা’ত খি’টখি’টে ভাঙা আয়নাকে ফোন করা তাও আবার ভিডিও কল।স্যার বলেছে তাই বাধ্য হয়ে করেছি।”
” তা কি জন্য করেছেন চো’র মশাই?”
” এই ব’জ্জা’ত মহিলা আমি মোটেও চোর নয়।আমাকে দেখে কি তোমার চোর মনে হয়?”
” চো’রের কি মুখে লেখা থাকে “আমি চো’র”।থাকে না তো তাহলে?কিন্তু আমি তো জানি আপনি আসলে একটা চো’র,জুতো চো’র।সুযোগ বুঝে আমার জুতো গুলো চু’রি করে নিয়ে গিয়েছে।”
” এই শোন আমি মোটেও চু’রি করিনি।ভুলে নিয়ে এসেছিলাম।”
” তো ভুলে নিয়ে গেলে এখনো ফেরত দেননি কেন?আর ভাইয়া কোথায়?কতখন ধরে আপনার সাথে বকবক করছি।রাদ ভাইয়া কোথায়?”
” স্যার আছেন,ব্যস্ত আছেন একটু।টেনশন করো না তুমি আর বাড়িতেও কাউকে টেনশন করতে বারণ করো।আর শোন পালক আছে না,তাকেও বলো রাদ স্যার ঠিক আছেন যেন টেনশন না করে।আর তোমরা দু’জন সাবধানে থাকবে।তোমার কোন পারসোনাল সমস্যা হলে পালককে বলবে আর অফিসের কাজের সমস্যা হলে ম্যানেজারকে বলবে।আমি এখন রাখছি,সাবধানে থাকবে সবাই।”
আয়নাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ইয়াসিন তাড়াহুড়ো করে কল কেটে দিলো।আয়না আবারো কল দিলে এবার ফোন বন্ধ পেলো।আয়নার মাথায় এটা আসছে না তাদের দু’জনের ফোন বন্ধ কেন থাকে।
চলবে………