শরতের এক সাঁঝবেলায় পর্ব-১৫+১৬

0
547

#শরতের_এক_সাঁঝবেলায়
#পর্বঃ১৫
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি

” আপনাকে না সেদিন বললাম সি’গা’রেট না খেতে তাও খাচ্ছেন।সেদিন তো তাও বাড়ির ছাদে খেলেন আজ একেবারে স্কুলের সামনে।আপনি এসব শেখাবেন বাচ্চাদের।আমি আপনাকে লাস্টবার বলছি খেলে খান কিন্তু স্কুলের আশেপাশে খাবেন না একদম।তাহলে আমি কি সিস্টারকে বলতে বাধ্য হবো।”

” আরে বাবা কুল কুল।এটা সি’গা’রেট না ললিপপ ছিলো।একজনের কথা শুনে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম পুরোপুরি খাওয়া ছেড়ে দেবে কিন্তু যার জন্য ছাড়বো ভেবেছিলাম সে নিজেই তো ভুল বুঝছে আর আমাকে বকছে।এখন ছেড়েও তো দেখি কোন লাভ হলো না।” বাচ্চাদের মতো মুখ ফুলিয়ে অভিযোগ করে বললো নিহাদ।অযথা নিহাদকে এতো কথা বললাতে প্রিসা খানিকটা লজ্জা পেলো।

” সরি আমি ভেবেছিলাম আপনি সি’গা’রেট খাচ্ছেন।”

” যা প্যাকেট ছিলো সব ফেরত দিয়ে ললিপপ কিনে নিয়েছি।এখন থেকে সিগারেট খেতে ইচ্ছে করেই ছোট বাচ্চাদের মতো ললিপপ খাবো।কি কপাল আমার বাচ্চাকে ললিপপ কিনে দেওয়ার বদলে নিজে ললিপপ খাচ্ছি।”

প্রিসা কিছু না বলে চলে গেলো।ললিপপটা আবারো মুখে দিয়ে প্রিসার যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো নিহাদ।

নিজের কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস কেনার জন্য শপিং মলে এসেছিল পালক।দোকান ঘুরতে ঘুরতে অনাকাঙ্খিত ভাবে দীপ্তির সামনে পড়ে গেলো সে।পালককে দেখে যে দীপ্তি চমকে গিয়েছে সেটা তার চেহারায় স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।

” কেমন আছো পালক?” জোড়পূর্বক হেসে বললো দীপ্তি।

” জ্বি ভালো আছি।আপনি কেমন আছেন?অয়ন ভাইয়ের সাথে এসেছেন বুঝি?শুনলাম বান্দরবান যাচ্ছেন।”

” হ্যাঁ তার জন্যই কেনাকাটা করতে এলাম।আচ্ছা আমি যাই।ভালো থেকে।”

পালক থেকে বিদায় নিয়ে দ্রুত পায়ে চলে গেলো দীপ্তি।পালকও আর দাঁড়িয়ে না থেকে নিজের কাজে চলে গেলো।
.
.

মাঝে কেটে গিয়েছে অনেকদিন।প্রায় দু’সপ্তাহ পর রাদ অফিসে এসেছে।কথার মাঝে সে পালককে বহুবার সরি বলেছে না বলে চলে যাওয়ার জন্য।

ব্যাগে কাপড়চোপড় সহ প্রয়োজনীয় জিনিস ব্যাগে ঢুকিয়ে নিচ্ছে পালক।প্রিসা এটাওটা এগিয়ে দিচ্ছে।
অফিসে আসার দু’দিনের মাথায় রাদ বলেছে তারা একটা প্রজেক্ট এর জন্য ঢাকায় যাবে।আজ রাতেই তারা বেরিয়ে পড়বে।সব গুছিয়ে খেয়ে বেরিয়ে পড়লো পালক।পালককে রিকশায় তুলে দিয়ে তারপর প্রিসা ভেতরে চলে এলো।সিঁড়ি দিয়ে উঠার সময় আচমকা তিনতলার দরজা খুলে গেলো।

” এতো রাতে কোথায় গিয়েছিলেন মহারাণী?” মিষ্টি হেসে জিজ্ঞেস করলো নিহাদ।

” বোনকে রিকশায় তুলে দিয়ে এলাম।”

” কোথায় যাচ্ছে এতো রাতে?”

” অফিসের কাজে বাইরে যাচ্ছে।”

” খেয়েছেন?”

” না।কিছুক্ষণ পর খাবো।আপনি খেয়েছেন?”

” জ্বি।খেয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়েছিলাম তখন আপনাকে দেখলাম।”

” রান্না পারেন বুঝি?”

” অবশ্যই।একদিন আসবেন,রান্না করে খাওয়াবো আপনাকে।একবার খেলে বারবার খেতে ইচ্ছে করবে।”

” বাহ্ আপনার ভবিষ্যত বউ তো অনেক ভাগ্যবতী।আচ্ছা আমি আসি।শুভ রাত্রি।”

” শুভ রাত্রি।সাবধানে থাকবেন।কোন সমস্যা হলে আমাকে বলবেন।”

মাথা নাড়িয়ে উঠে গেলো প্রিসা।যতক্ষণ না প্রিসার ঘরের দরজার বন্ধ করার শব্দ নিহাদ শুনতে পেলো না ততক্ষণ সে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে রইলো।

পনেরো জনের মতো যাচ্ছে তারা।সবাই অফিসে এসে তারপর বাসে করে একসাথে যাবে।পালক এসে দেখলো অনেকেই চলে এসেছে।বাকিদের সাথে হালকা কথা বলে ব্যাগ নিয়ে বাসে উঠে পড়লো পালক।পালককে দেখে আয়না হাত নাড়িয়ে তাকে কাছে ডেকে তার পাশে বসতে বললো।তাদের অপরপাশে ইয়াসিন আর রাদ বসেছে।দু’জনেই ফোনে কথা বলছে।পালক ব্যাগটা উপরে তুলে রেখে আয়নার পাশে বসলো।

” আমি জানালার পাশে বসেছি বলে তোমার কোন সমস্যা হবে আপু?”

” না আয়না কোন সমস্যা নেই।আমার নিদিষ্ট কোন জায়গা লাগে না।আমি সব জায়গায় ইজিলি বসতে পারি।তুমি বসে আরাম করে।”

” আসার সময় কোন সমস্যা হয়েছে পালকসাহেবা?”

ঘাড় গুঁড়িয়ে রাদের দিকে তাকালো পালক।অন্যদের মতো রাদও নিজের সিটি বসে আছে।হুইলচেয়ারটা সম্ভবত উপরে তুলে রাখা হয়েছে।পালক মাথা নাড়িয়ে বোঝালো তার আসতে কোন সমস্যা হয়নি।

” বাসে কোন সমস্যা হলে বলবেন।শরীর খারাপ লাগলে আয়নাকে বলবেন নাহয় আমাকে বলবেন।”

” আচ্ছা।”

সবাই এলে আস্তে আস্তে বাস ছেড়ে দিলো।আয়নার সাথে কিছুক্ষণ কথা বললো পালক।কিছুক্ষণ পর বাসের লাইট বন্ধ করে দেওয়া হলো।পালক মা আর বোনের সাথে কিছুক্ষণ কথা বললে সিটে হেলান দিয়ে চোখ বুজলো এবং একসময় ঘুমের দেশে পাড়ি জমালো।

আয়নার ডাকে চোখ খুললো পালক।বাইরে তাকিয়ে দেখলো আলো ফুটে গিয়েছে অর্থাৎ সকাল হয়ে গিয়েছে।জামা ঠিক করে আয়নার সাথে হোটেলে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে মুখ হাত ধুয়ে কিছু শুকনো খাবার কিনে বাসে ফিরে এলো সে।বাসে উঠে দেখলো দু-তিনজন ছাড়া সবাই হোটেলে।জানালায় হেলান দিয়ে,গায়ে হালকা একটা চাদর দিয়ে চোখ বুজে ঘুমিয়ে আছে রাদ।পালক চিন্তা করলো ডাকবে কিনা।কিছুক্ষণ ভেবে নিজের হাতে থাকা খাবার গুলো সিটে রেখে রাদকে আলতো ধাক্কা দিয়ে ডাকলো পালক।পিটপিট করে চোখ খুলে ঘুমঘুম চোখে পালকের দিকে তাকালো রাদ।ঘুমঘুম চোখ,এলোমেলো চুলে পালকের কাছে রাদকে খারাপ লাগছেনা।

” স্যার উঠবেন না?সকাল হয়ে গিয়েছে?”

” আমার চলে এসেছি পালকসাহেবা?” ঘুম জড়ানো কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো রাদ।

” না,আমাদের নিজেদের গন্তব্যে পৌঁছাতে আরো কিছুটা সময় লাগবে।সবাই হোটেলের ভিতরে গিয়েছে ফ্রেশ হয়ে ব্রেকফার্স্ট করতে।আপনি করবেন না?”

” ইয়াসিন কোথায়?”

” আপনি বসুন,আমি ডেকে নিয়ে আসছি।”

হাতে থাকা খাবারগুলো নিজের সিটে রেখে দ্রুত পায়ে বেরিয়ে গেলো পালক।কিছুক্ষণ পর ইয়াসিন আর আয়নার সাহায্যে রাদ ফ্রেশ হয়ে ব্রেকফার্স্ট করে ফিরে এলো।পালক পরে আর বের হয়নি।কিনে আনা খারাপগুলো বাসে বসেই খেলো সে।

আরো দু-তিন ঘন্টা পর বাস তাদের গন্তব্যে এসে থামলো।জায়গাটা মূলত গ্রাম তবে হালকা শহরের ছোঁয়াও আছে।সবাই নেমে যাওয়ার পর রাদ আর ইয়াসিন নামলো।বাস থেকে নেমে কিছুক্ষণ হাঁটার পর একট মাঝারি সাইজের হোটেলে এসে উঠলো তাঁরা।হোটেলে হালকা কিছু খেয়ে তারা বেরিয়ে পড়লো কাজের জন্য।কাজ শেষ করতে করতে বিকেল হয়ে গিয়েছে।প্রায় সবাই ক্লান্ত হয়ে হোটেল রুমে ফিরে ঘুমিয়ে পড়েছে।তবে রাদ,ইয়াসিন,পালক,আয়নাসহ আরো ৪/৫ জন হালকা বিশ্রাম নিয়ে আবারো বেরিয়ে পড়লো গ্রামটা ঘুরে দেখতে।

এখন হেমন্তকাল চলমান।ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে গ্রামের কৃষকেরা,সেইসাথে তাদের স্ত্রীরাও।মাঠে ফলে আছে হলুদ ধান।দূর থেকেই যেকোন মানুষের নজর কেড়ে নিতে সক্ষম এই হলুদ ধান।

তারা যেখানে এসেছে সেখানে এইসময় নাকি একটা মেলা চলমান আছে।প্রতিবারই এই মেলাটি হয়ে থাকে নতুন ফসল ফালানো উৎযাপন করার জন্য।তারা সবাই হাঁটতে হাঁটতে চলে এলো সেই মেলাটাতে।প্রবেশ পথটা বাঁশ,রঙ্গিন কাপড়,শুকনো ঘাস-পাতা দিয়ে সুন্দর করে সাজানো রয়েছে।জায়গাটা ইটপাথর দিয়ে বাঁধায় করা নয়,তাই রাদ সবাইকে সাবধানে আসতে বললো।প্রায় মানুষের রাদের দিকে তাকিয়ে আছে তবে এতে কারোর কোন মনোযোগ নেই।বাকিরা যে যার মতো ঘুরছে তবে পালক হারিয়ে যাওয়ায় ভয়ে আয়নার সাথেই রইলো।তারা চার জন ঘুরে দেখতে দেখতে একটা চুরির দোকানে এসে থামলো।নানা রঙের,নানা ধরনের চুরি সাজিয়ে রাখা আছে এখানে।আয়না এবং পালক চুরি নেড়েচেড়ে দেখছে।দেখার পর পালক দু’জোড়া লাল এবং কালো চুরি নিলো,আয়না নিলো সবুজ রঙের চুরি।তবে রাদ তাদের টাকা দিতে দিলো না অনেকটা জোড় করেই সে চুরির টাকা দিলো।আপাতত পালক আর কিছু বললো না।বেশি বাড়াবাড়ি করলে লোকে খারাপ ভাবতে পারে তাই সে সিদ্ধান্ত নিলো শহরে পৌঁছে টাকা ফেরত দিয়ে দেবে।এরপর তারা চারজন আরো অনেকগুলো দোকান ঘুরে দেখলো।আয়না অনেক কিছু কিনলেও পালক আর কিছু কিনলো না।
.
.
.

” তূর্য মিত্রকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা দু’দিন থেকে।”

” বাহ্ কি খুশির খবর।পার্টি দেবো?যত্তসব।এমনভাবে বলছেন যেন কোন খুশির খবর।খোঁজ কোথায় আছে সে।যেভাবেই হোক ওকে পুলিশের হাতে পড়তে দেওয়া যাবে না।পুলিশের হাতে আসার আগেই ওকে না হয় দেশ থেকে পালিয়ে যেতে বলো আর নয়তো মে’রে ফেলো।কিন্তু কোন ভাবেই যেন তূর্য মিত্র পুলিশের হাতের নাগালে আসতে না পারে।”

” কিন্তু তাকে খোঁজবো কোথায়?সব জায়গায় তো খুঁজলাম।”

” উফ…..তোমার দ্বারা একটা কাজও হয়না।এখন দেখি যা করার আমাকেই করতে হবে।”

চলবে……..

#শরতের_এক_সাঁঝবেলায়
#পর্বঃ১৬
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি

দুপুরের প্রহর শুরু হতে আর কিছুটা সময় বাকি আছে।পালক তার মা এবং বোনের সামনে মাথা নিচু করে বসে আছে,তারপাশে বসে আছে রাদ এবং পেছনে দাঁড়িয়ে আছে ইয়াসিন আর আয়না।চারজনের চোখেমুখে অনুতাপ,লজ্জা,ক্লান্তির চাপ বিদ্যমান তবে অনিলা বেগম এবং প্রিসার চোখেমুখে বিদ্যমান বিস্ময়ের চাপ।

অবিশ্বাস্য কন্ঠে অনিলা বেগম পালকের দিকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলেন, ” পালক তুমি না অফিসের কাজে গিয়েছিলে তাহলে এসব কি?হঠাৎ করে এসে বলছো তুমি বিয়ে করে ফেলেছো।তোমার পছন্দ থাকলে বলতে পারতে আমি তো তোমাকে এমন নয় যে জোড় করতাম।”

” মা তুমি প্লিজ বিশ্বাস করো আমরা সত্যিই কাজে গিয়েছিলাম।সবঠিক ছিলো সন্ধ্যা পর্যন্ত।কাজ শেষে মেলায় গিয়েছিলাম আমরা কয়েকজন।গ্রাম তাই সন্ধ্যা থেকেই সবই বন্ধ হয়ে যেতে লাগলো।আমরা বাইরে থেকে খেয়ে যখন হোটেল রুমে ফিরছিলাম তখন হঠাৎ করেই বৃষ্টি চলে এলো।ছাতা না থাকায় আমরা আশ্রয়ের জন্য জায়গা খুঁজতে থাকি।পরে যখন আমি আশ্রয়ের জায়গা খুঁজে পেয়ে যায় তখন আমি খেয়াল করি আমি এবং রাদ স্যার অন্যদের থেকে আলাদা হয়ে গিয়েছি।তখন এতো বৃষ্টি ছিলো যে বাইরে যাওয়ার উপায় ছিলো না তাই আমরা দু’জন ওই অন্ধকার জায়গায় অপেক্ষা করছিলাম। আচমকা কতগুলো লোক এসে পড়লো ভেবেছিলাম তারা আমাদের বাঁচাতে এসেছে কিন্তু না তারা আমাদের ভুল বুঝলো।তারা ভেবেছে আমরা খা’রা’প কাজ করছিলাম তাই জোড় করেই আমাদের বিয়ে দিয়ে দিলো।মা,আপু বিশ্বাস করো তোমরা।আমি সত্যিই এরকম হবে জানতাম না।” কথাগুলো বলতে বলতে পালকের চোখ দিয়ে পানি পড়তে লাগলো।

” কিন্তু এটা তো অন্যা’য়।জোড় করে কিছু না জেনে বিয়ে দেওয়াটা বড়ই অপরা’ধমূল’ক কাজ তাও আবার অপরিচিত দু’জন মানুষকে তারা কি করে বিয়ে দিতে পারে?”

প্রিসা পালকের কাছে এসে তার মাথায় বুলিয়ে তাকে শান্ত করার চেষ্টা করতে লাগলো।অনিলা বেগম চুপ করে কিছুক্ষণ ভাবলেন।

” পালক যা হয়েছে সেটা অনেক বড় অন্যা’য় কিন্তু মানুষের বিয়ে একবারই হয়।এখন তোমাদের বিয়ে হয়ে গিয়েছে,সেটা যেভাবেই হোক।তবে আমি বা আমরা তোমাদের জোড় করবো না।ভেবে দেখো তোমরা কি সম্পর্কটা এগিয়ে নিয়ে যাবে নাকি অন্যকোন রাস্তা অবলম্বন করবে।প্রিসা ওনাদের ওয়াশরুমটা দেখিয়ে দাও।তোমরা ফ্রেশ হয়ে এসে কিছু খেয়ে নাও তারপর চিন্তা করো কি করবে।”

প্রিসার পেছন পেছন ইয়াসিন রাদকে নিয়ে চলে গেলো।পালক এখনো একটা ঘোরের মধ্যে আছে।সবাই চলে যাওয়ার পর আয়না পালকের পাশে বসে তার কাঁধে হাত রাখলো।

” আপু বোন বলে বলছিনা আমার ভাইটা অনেক ভালো।অনেক নরম মনের মানুষ সে।বাবা-মাকে হারিয়ে পুরোই ভেঙে পড়েছে সে তবে সেটা কাউকে বুঝতে দেয়না।সবসময় হাসিখুশি থাকে।সবার সামনে সে হাসিখুশি থাকার চেষ্টা করলেও আসলে আমার ভাইটা বড়ই দুঃখী গো আপু।আমার ভাইটাকে একটু ভালোবেসো আপু,তাকে ছেড়ে যেওনা।জানো আপু আমার ভাইটা সময় পেলেই তোমার কথা বলতো।তোমার নাম তার ঠোঁটের আগায় থাকে।সে মুখ ফুটে বলেনি তবে কথায় আছে না মেয়েদের ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় তাকে।তাই আমিও বুঝি আপু আমার ভাইটা তোমাকে ভালোবাসে।দয়া করে তার ভালোবাসা ফিরিয়ে দিওনা।তুমি ছেড়ে গেলে সে হাসিখুশি থাকবে তবে ভেতরে ভেতরে যা একটু বেঁ’চে আছে তাও একেবারে শে’ষ হয়ে যাবে।”

আয়না উঠে চলে গেলো।পালক এখনো ফ্যালফ্যাল করে আয়নার যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছে।

খাবার খেয়ে রাদের বাড়ির উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লো তারা।যাওয়ার আগে অনিলা বেগম শুধু একটা কথায় বলেছেন,

” যা করবে ভেবেচিন্তে করবে।এই বিয়ে নিয়ে তোমার সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করছে তোমার বাকি জীবন।”

সারা রাস্তা পালক চুপচাপ জানালায় হেলান দিয়ে বাইরে তাকিয়ে ছিলো।রাদ লুকিং গ্লাসে বারবার পালকে দেখছিলো।তার চোখে মুখে অপরাধের চাপ।কাল রাত থেকে তাদের দু’জনের মধ্যে একটাও কথা হয়নি।

দু’ঘন্টার মধ্যেই রাদের বাড়িতে পৌঁছে গেলো তারা।কোথায় যাচ্ছে পালক তা জানে না।আয়না পালকের হাত ধরে বাড়ি সামনে এসে দাঁড়ালো।

” পালক মা তুমি!”

কারো কন্ঠ শুনে পালক শান্ত দৃষ্টিতে দরজা দিকে তাকালো তবে তাকানোর পরেই তার শান্ত চোখজোড়ায় বিস্ময় ছেঁয়ে গেলো।তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে নূরজাহান রহমান কিন্তু পালক একটা বিষয় বুঝতে পারলো না আয়নাতো বলেছে রাদের বাবা-মা নেই কিন্তু নূরজাহান রহমান যে তাকে সেদিন বলেছিলো তার একজন ছেলে এবং একজন মেয়ে।পালক ঘাড় গুঁড়িয়ে আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো।না সে এখানে প্রথমবার নয় বরং আগেও একবার এসেছিলো কিন্তু তখন কি আর সে জানতো একদিন এটাই হবে তার আরেকটা ঘর।

” মা তুমি আপুকে চেনো?”

” চিনবো না কেন।আরে পালক মা’ই তো সেদিন আমাকে সাহায্য করেছিলো,বাসায় পৌঁছে দিলো।তোকে তো আমি বলেই ছিলাম।পরে দু’বার ফোন করে আসতে বলেছিলাম কিন্তু সে এলো না।আমি তো ভাবতেও পারিনি রাদের সাথে পালকের বিয়ে হয়েছে।”

” এই ভাঙা আয়না আন্টিকে বলে না ভেতরে যেয়ে কথা বলতে।পালক না নতুন বউ আর কতক্ষণ বাইরে দাঁড়িয়ে থাকবে।” ফিসফিস করে আয়নাকে বললো ইয়াসিন।ইয়াসিনের কথা শুনে আয়না তড়িৎগতিতে তার মাকে বিষয়টা বললো।মেয়ের কথা শুনে নূরজাহান বেগম ক্ষাণিকটা লজ্জাবোধ করলেন এবং তাড়াতাড়ি নিয়মকানুন শেষ করে তাদের ভেতরে নিয়ে গেলেন।

ফ্রীজে থাকা লাড্ডু নিয়ে এসে পালকে খাইয়ে দিলেন নূরজাহান বেগম।আয়না তাকে আগেই ফোন করে সব বুঝিয়ে বলেছেন বিদায় তিনি শান্ত আছেন না হলে এতোক্ষণে রাগারাগি করে অবস্থা বেগতিক দিকে নিয়ে যেতেন।

” কেমন আছো মা?তোর কথা অনেক মনে পড়তো আমার কিন্তু লজ্জায় ফোন করতে পারতাম না।”

নূরজাহান বেগমের কথা আপাতত পালক শুনলো না।সে কৌতূহল আর চেপে রাখতে না পেরে জিজ্ঞেস করেই ফেললো, ” আন্টি আপনি কি আয়নার মা?”

” হ্যাঁ।আমিই আয়নার মা।”

” তাহলে রাদ স্যার আপনার কি হন?সেদিন না আপনি বলেছিলেন আপনার একটা ছেলে আছে।তাহলে রাদ স্যার কি আপনার…..?”

” আমি রাদের ফুপি,রাদ আমার বড় ভাইয়ের ছেলে।ভাই-ভাবী মা’রা যাওয়ার পর আমরা রাদের সাথে এখানেই থাকি।রাদ তো আমরাই ছেলে তাই নয় কি।”

অভিজ্ঞদের মতো মাথা নাড়লো পালক।নূরজাহান বেগম পালকের পাশে এসে তার মাথায় হাত রাখলেন।

” আমি জানি মা হঠাৎ এরকম করে বিয়ের মতো এতবড় একটা ঘটনা ঘটে যাওয়ায় তুমি এখনো ঘোরের মধ্যে আছো।প্রতিটা মেয়ের স্বপ্ন থাকে তার বিয়ে নিয়ে কিন্তু তোমার বিয়েটা এভাবে হুট করে একটা অচেনা জায়গায় হয়ে গিয়েছে।আমি বুঝতে পারছি তোমার মনের অবস্থা কিন্তু বিয়েটা তো হয়ে গিয়েছে এখন আর পিছু আসার কোন পথ নেই।তুমি আমাদের বিশ্বাস করতে পারো মা।তোমাকে কোনদিনও আমরা ক’ষ্ট দেবো না।আমার ছেলেটা বড়ই ভালো।”
.
.
অনেকক্ষণ ধরে প্রিসার ফোনটা বেজে চলেছে তবে রান্নাঘরে ব্যস্ত থাকায় প্রিসা তা ধরতে পারছেনা।কিন্তু ফোন বন্ধ হচ্ছেই না দেখে প্রিসা হাতের কাজ রেখে তাড়াতাড়ি রুমে এসে ফোনটা রিসিভ করলো।

” কে বলছেন?”

” এতোক্ষণে তাহলে মহারাণী ফোন ধরলো।”

কানের কাছ থেকে ফোন সরিয়ে প্রিসা দেখলো এটা আননোন নম্বর তবে তার বুঝতে অসুবিধে হলো না অপরপ্রান্তের মানুষটা কে।

” এতোক্ষণ লাগে ফোন ধরতে?কোন রা’জ্যের কা’জ করছিলে নাকি কোন ছেলেকে পটানোর ট্রাই করছিলে?”

” আমি কি করছিলাম,ফোন ধরতে কেন দেরি হলো সেটা তো আপনাকে বলার প্রয়োজনবোধ করছিনা আমি।কে হোন আপনি আমার?নিজে যেমন অন্যকেও তেমনটা ভাববেন না।”

প্রিসার কথা প্রতিবারের মতো এবারো অয়ন কানে তুললো না।

” শুনলাম তোমার ছোট বোন পালক নাকি অফিসের কাজে গিয়ে একেবারে বিয়ে করে ফিরেছে।তা সে আসলেই অফিসের কাজে গিয়েছিলো নাকি পালিয়ে বিয়ে করতে?ছোট বোন অনেক বড় কোন মাছ শি’কা’র করেছে তো তুমি কখন করবে?বড় বোনের আগে ছোট বোন বিয়ে করে ফেললো।অবশ্য তারই বা কি দোষ।বড় বোন বিয়ে না করে পড়ে আছে বলে কি ছোট বোনও থাকবে।তারও তো একটা চা’হি’দা আছে।এবার তুমিও প্লান করো কিভাবে আরো বড় মাছ জা’লে আটকানো যায়।ভালো মাছ না পেলে বলো পুকুরে খোঁজ দিয়ে দেবো।”

” অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করছেন কিন্তু।সামনে পেলে না থা’প্প’ড় মেরে সব দাঁত ফেলে দিতাম।নিল’র্জ্জে’র একটা সীমা থাকে,বেশি ওভারস্মার্ট হওয়া ভালো নয়।এখনো বাড়ির কাউকে কিছু বলিনি তবে বেশি বাড়াবাড়ি করলে বাধ্য হবো বলতে সাথে থা’প্প’ড় এবং সম্মা’নহানী ফ্রীতে দেবো।”

ফোন কেটে আবারো আরেকটা নম্বর ব্লক করে দিলো প্রিসা।

চলবে………