#শরতের_এক_সাঁঝবেলায়
#পর্বঃ২৩
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি
কোন পূ্র্ববার্তা ছাড়া বোনকে দেখার জন্য পাত্রপক্ষ এসেছে শুনে লাঞ্চ টাইমের পরেই পালক অফিস থেকে তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে পড়েছে।রাদও আসতে চেয়েছিলো তবে পালক বারণ করেছে বিধায় সে আসেনি।
দ্রুত সিঁড়ি দিয়ে উঠে নিজেদের ঘরের সামনে এলো পালক।দরজা ভিড়ানোই ছিলো বিদায় পালক তাড়াতাড়ি ভেতরে ডুকে পড়লো।ব্যাগটা সোফায় একপ্রকার ছুঁড়ে ফেলে তাদের রুমের দিকে অগ্রসর হলো।
প্রিসার পরনে তখনো বেগুনি রঙের সুতির শাড়িটা পরিহিত।সে ভাবুক দৃষ্টিতে জানালা দিয়ে বিকেলের আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিলো।
” আপু এসব কি শুনছি?”
প্রতিউওর দিলোনা প্রিসা।পালক বোনের পাশে গিয়ে বসলো।
” কারা এসেছিলো?”
” নিহাদ।” র্নিজীব স্বরে বললো প্রিসা।পালক চমকালো,ভড়কালো।
” কোন নিহাদ?তোর স্কুলে যে……” পালকের কথা সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই প্রিসা মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁবোধক উওর দিলো।পালক পুরোপুরি নিহাদকে না চিনলেও সে তার সম্পর্কে খানিকটা অবগত আছে।প্রিসা থেকে সে নিহাদের ব্যপারে জেনেছে।
” আপু আমাকে খুলে বলতো কি হয়েছে।”
প্রিসা একইভাবে আকাশের দিকে তাকিয়ে অন্যমনস্ক হয়ে বলতে লাগলো।
.
.
তাদের ঘরে থাকা দু’টো ডাবল সোফায় বসে আছে মোট তিনজন ব্যক্তি।তাদের মধ্যে দু’জন তার পূর্ব পরিচিত, নিহাদ এবং নিরা।প্রিসা চতুর মস্তিষ্ক বুঝতে সময় নিলোনা এরা আসলে ভাই-বোন এবং মহিলাটি তাদের মা।নিরা নিহাদের বোন বিষয়টা বুঝতে পেরেই প্রিসা চমকে উঠলো।প্রিসা নিহাদের দিকে তাকালো,তার মুখে খুশির আভাস স্পষ্ট বিদ্যমান।মুখে হাসি বজায় রেখে সে প্রিসার দিকেই তাকিয়ে আছে।দ্রুত চোখ সরিয়ে নিলো প্রিসা,কুশল বিনিময় করে সে তার মায়ের খোঁজে রান্নাঘরে পা বাড়ালো।অনিলা বেগম প্রিসাকে টেনে রুমে নিয়ে গেলেন এবং একটা শাড়ি ধরিয়ে দিলেন সেইসাথে এটাও বললেন নিহাদের মা শান্তি হোসেন তার জন্য সম্বন্ধ নিয়ে এসেছেন।প্রিসা ভেবেছিলো তার বলা কথাগুলোর কারণে নিহাদ আর কখনোই তার সামনে আসবেনা কিন্তু সে ঘুণাক্ষরেও টের পাইনি নিহাদ আচমকা এরকম এভাবে তার সামনে হাজির হবে।
প্রিসাকে তাদের সামনে এসে বসানো হলো।শান্তি বেগমের হাবভাব দেখে অনিলা বেগম এবং প্রিসা দু’জনেই নিশ্চিত হলো তারা সম্বন্ধ পাকা করেই যাবে।
সামনাসামনি দাঁড়িয়ে আছে প্রিসা এবং নিহাদ।খানিক সময় পর পর নিহাদ নাকের কাছে থাকা চশমাটা ঠেলে পেছনের দিকে করছে তবে তার দৃষ্টি স্থির প্রিসার দিকে।প্রিসার অস্বস্তি হচ্ছে,সেইসাথে রা’গও হচ্ছে।
” এসব কি নিহাদ?হুট করে এসব কোন ধরণের কাজ?” তে’জী গলায় বললো সে।তবে নিহাদ রাগলোনা বরং তার হাসিটা আরো চওড়া হলো।
” তাহলে কি আমার জানিয়ে আসা উচিত ছিলো?”
” মোটেও না।আপনার আসাই উচিত ছিলোনা।এসব কি?হুট করে এসে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে বসলেন।আপনাকে সেইদিন না এতো কথা বললাম তাও!”
” হুম সেইদিনের কথায় আমি খানিকটা কষ্ট পেয়েছিলাম তবে আমার দৃষ্টি থেকে আমি কোন ভুল করিনি।নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে বিপদ থেকে আগলে রাখতে চাওয়া কোন অপরাধ নয়।তবে তোমার দৃষ্টিতে যদি অপরাধ হয় তবে আমি তোমার হৃদয় জেলে অপরাধী হয়ে সারাজীবন বন্দী হয়ে থাকতেও রাজি।”
‘ ভালোবাসার মানুষ ‘ এতো ভারী কথাটা শুনে প্রিসার হৃদয়খানি কেঁপে উঠলো।সে সন্দেহ করেছিলো নিহাদ হয়তো তাকে পছন্দ করে কিন্তু ভালোবাসার মানুষ এটা প্রিসা আশা করি।সে ধারণা করেছিলো এটা ক্ষাণিকের মোহ কিন্তু তাকে সম্পূর্ণ ভুলপ্রমাণিত করে দিয়ে নিহাদ একেবারে তাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে বসলো।
” দেখুন নিহাদ বিয়ে কোন দু’দিনের ব্যপার নয়,সারাজীবনের ব্যপার।তাই হুট করে ঝোঁকের বশে সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হয়।”
” আমি তো মোটেও ঝোঁকের বশে সিদ্ধান্ত নেয়নি সম্পূর্ণ সজ্ঞানে এতো মাস ভেবে তবেই নিয়েছি।তুমি আমার আর কিছুদিন পর বৈধভাবেও শুধু আমারই হবে।আমি জানি তুমি রাজি হবে,রাজি তোমাকে হতেই হবে শান্তিনগরের রাজকন্যা।”
নিহাদ চলে গেলে তবে প্রিসা তার বলা কথাগুলো মনে মনে আওড়াতে লাগলো।
” আমি জানি তুমি রাজি হবে,রাজি তোমাকে হতেই হবে শান্তিনগরের রাজকন্যা।” প্রিসা বুঝতে পারলোনা নিহাদ কি করে এতোটা নিশ্চিত ভাবে বললো যে সে রাজি হবেই।
শান্তি বেগম আজকেই তাদের পারিবারিক বালাজোড়া পড়িয়ে যেতে চেয়েছিলেন কিন্তু অনিলা বেগম বাঁধা দিলেন।অনিলা বেগমের কথা সম্মান করে তারা আর কিছু করলোনা।
.
.
” এখন কি সিদ্ধান্ত নিলি আপু?তুই তো সন্দেহ করেছিলি ব্যপারটা কিন্তু তিনি তো তোকে শুধু পছন্দ করেনা ভালোও বাসে।ফিরিয়ে দিবি তুই?” চিন্তিত স্বরে বললো পালক।
” জানিনা আমি।”
প্রিসা পালকের মন সহজেই পড়তে পারলেও পালক সেটা বেশিরভাগ সময়ই পারেনা।এই যেমন এখনো সে বুঝতে পারছেনা প্রিসার মনে কি চলছে।নিজের উপর বি’র’ক্ত হলো পালক।
আজ রাতটা নিজের বাড়িতেই থাকবে বলে মনস্থির করলো পালক।বসে একটা সিদ্ধান্ত না নিলে চিন্তায় সবার মাথা শে’ষ হয়ে যাবে।আজ ফিরবে না তা জানাতেই রাদকে ফোন দিয়েছিলো পালক কিন্তু তার মুখের কথা কেঁড়ে নিলো রাদ।
” বাড়িতে কবে আসবে?”
” আজ আমি ফিরবোনা,তুমি খেয়ে নাও।”
পালকের কথা শুনে রাদ বিচলিত হয়ে পড়লো।
” কেন কেন?আমি কি একা থাকবো?”
” আজকের দিনটাই তো,কাল তো চলে আসবো।আমি তো জানোই কি হয়েছে বাড়িতে।এই সময় মা-আপু দু’জনেই এই ব্যপারে দ্বিধাগ্রস্ত,বুঝতেই পারছো।তুমি খেয়ে নাও আর ঔষধ খেয়ে নিও মনে করে।”
পালক আসবে না শুনে রাদের মন খারাপ হলো বটে তবে সে পালককে আসার জন্য জোড় করলোনা।তাকে সাবধানে থাকতে বসে সে ফোনটা কেটে দিলো।
নিহাদকে ফোন দেবে কিনা সেটাই ভাবছে প্রিসা।অবশেষে অনেক চিন্তাভাবনা করে প্রিসা মনস্থির করলো সে ফোন দেবে।ফোনে নিহাদের নম্বরটা উঠিয়ে কানের কাছে ধরলো প্রিসা।বুক ধকধক করতে তার।
” এতোক্ষণে তাহলে রাজকন্যা ফোন দিয়েছে।” নিহাদের কন্ঠ শুনে প্রিসার হৃদস্পন্দন বেড়ে গেলো।চুপ করে রইলো সে।
” কি হলো রাজনকন্যা চুপ করে আছো যে?কথা বলবে না আমার সাথে?”
” ব্যস্ত আপনি?”
” মোটেও না।আমি সারারাত তোমার সাথে গল্প করতে পারবো।”
” কালকে সকালে আমার সাথে দেখা করতে পারবেন?কথা আছে।”
” এখনি বলো আমি ফ্রী আছি।”
” না ফোনে নয়,সামনাসামনি কথা বলা প্রয়োজন।আমি মেসেজ করে বলে দেবো কোথায় দেখা করবো।” কথাটা বলে প্রিসা ফোন কেটে দিতে গেলে নিহাদ থামিয়ে দিলো।
” কাঁট’ছো কেন?আরেকটু কথা বলোনা।”
” ইচ্ছে নেই,কাল আশা করি দেখা করতে আসবেন।রাখছি,শুভ রাত্রি।” দ্রুত ফোন কেটে দিলো প্রিসা।আজ অজানা কারণে নিহাদের সাথে কথা বলার সময় একপ্রকার জড়তা কাজ করছিলো।নিজেকেই সে প্রশ্ন করলো এরকটা হওয়ার কারণ কি?
প্রিসার ফোন কেটে দেওয়ার সাথে সাথেই নিহাদের ফোনটা আবারো বেজে উঠলো।নিহাদ ভেবেছিলো প্রিসা ফোন করেছে কিন্তু এটা একটা অচেনা নম্বর।ফোন রিসিভ করতেই ভেসে এলো এটা গম্ভীর স্বর,
” মেয়েটাকে বিয়ে করোনা,খুব বা’জে মেয়ে।আগে একটা ছেলের সাথে সম্পর্ক ছিলো।অনেক ঘ’নি’ষ্ঠ ছিলো তারা।”
” আপনি কে বলছেন?”
” আমি কে সেটা বড় কথা নয়।ধরে নাও আমি তোমার শুভাকাঙ্ক্ষী।নিজের ভালো পাগলেও বোঝে।তাই ভালোর জন্য বলছি মেয়েটা মোটেও ভা’লো নয়,ওকে বিয়ে করলে তুমি সারাজীবন আপসোস করবে।ভেঙে দাও বিয়ে।”
নিহাদ কিছু বলার আগেই লোকটা ফোন কেটে দিলো।কপালে ভাঁজ পড়ে গেলো তার।বুঝতে পারলোনা আচমকা কে ফোন করে এধরণের উল্টোপাল্টা কথা বলছে।
এদিকে ফোন কেটে দিলো ক্রু’রভাবে হাসলো অয়ন।প্রিসাকে পাত্রপক্ষ দেখতে এসে এটা শুনে অয়ন ভেবেছিলো হয়তো কোন মধ্যবয়স্ক লোক হবে।তখন মনে মনে তাচ্ছিল্যের হাসি হেসেছিলো।কিন্তু যখন মায়ের থেকে জানতে পারলো ছেলেটা তার বয়সী তখন থেকে সে উঠে পড়ে লেগেছে সম্বন্ধটা ভাঙার জন্য।প্রথমে অনিলা বেগমকে ফোন করে এটাসেটা বলেছে কিন্তু যখন বুঝতে পারলো এখানে কোন কাজ হবেনা তখন সে ভুলিয়ে ভালিয়ে নিহাদের নম্বরটা নিয়ে নিয়েছে।কারণ হিসেবে দেখিয়েছে সে ছেলেটা সম্পর্কে খোঁজ নেবে,তাই অনিলা বেগমও সরল মনে দিয়ে দিয়েছে।লোকটা যাতে তার কন্ঠ পরবর্তীতে শনাক্ত করতে না পারে তাই অয়ন রুমাল পেঁচিয়ে কথা বলেছে।অয়ন জানেনা তার এরকম করার কারণ তবে সে খুবই ঈর্ষা’ন্বিত,সে কোনভাবেই চায় না এতো ভালো ছেলের সাথে প্রিসার বিয়ে হোক।তার মতে প্রিসা যখন তাকে রিজেক্ট করেছে,অপ’মা’ন করেছে তখন সে কোন ভালো ছেলেকে বিয়ে করতে পারবেনা,সে হতে দেবেনা।
চলবে…….
#শরতের_এক_সাঁঝবেলায়
#পর্বঃ২৪
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি
একটি মধ্যমানের রেস্তোরাঁয় সামনাসামনি বসে আছে নিহাদ এবং প্রিসা।তাঁদের দেখা করার কথা ছিলো একটা পার্কে তবে পরবর্তীতে নিহাদ জায়গায় পরিবর্তন করে ফেলেছে।
প্রিসা খানিকটা নার্ভাস তবে নিহাদ একদম স্বাভাবিকভাবে বসে আছে।
” দেখুন নিহাদ আমি আবারো বলছি বিয়ে কিন্তু সারাজীবনের ব্যপার তাই আরেকবার……”
” আমিও আবারো বলছি আমি এতোমাস ভেবে তবেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।এবার উওর দিও।”
” আমাকে বিয়ে করলে কিন্তু আপনি অনেক কিছু পাবেন না।আমাকে বিয়ে করলে যৌতু’কের কথা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে হবে,আমাকে বিয়ে করলে সারাজীবন কিন্তু এটা-সেটা দামী জিনিস পাবেন না।আমাদের মা-মেয়ে তিনজনের স্বল্প আয়ের সংসার,তাই বিয়েতে আমার মায়ের পক্ষে অনেক বেশি দামী কিছু দেওয়া সম্ভব নয়।”
” আমি কি এসব বলেছি তোমাকে?” দাঁতে দাঁত চেপে বললো নিহাদ।প্রিসা হাসলো, ” এখন চাননি কিন্তু পরবর্তীতে ঠিকই চাইবেন তাই আগেই বলে রাখছি।এতো কিছু ত্যা’গ করেও কি আমার মতো একজন সাধারণ,বা’বাহা’রা মেয়েকে আশা করি বিয়ে করবেন না।”
” অবশ্যই….. করবো।এবার বলো তুমি কি কি চাও।আমার নিজের আয়ে আমি তোমাকে তা দেবো।”
নিহাদের কথা শুনে প্রিসা খু্ব অবাক হলো।
” আপনি ভেবেচিন্তে বলছেন তো নিহাদ?পরবর্তীতে কিন্তু মত পরিবর্তন করতে পারবেন না।”
” তোমার প্রাক্তন প্রেমিকের নাম কি?”
আচমকা নিহাদের এধরণের প্রশ্ন শুনে প্রিসার বুক কেঁপে উঠলো।ঠোঁট কাঁপছে তার।মূলত সে এখানে এই বিষয়েই কথা বলতে এসেছিলো কিন্তু তার আগেই নিহাদ বলে বসলো।
” দেখুন নিহাদ ভুল বুঝবেন না।আমি এই সম্পর্কেও আপনাকে আজ বলতাম।”
” তার নাম অয়ন খন্দকার তাই নয় কি?”
প্রিসা দ্বিতীয়বার চমকালো।মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো সে।নিহাদ নিঃশব্দে হাসলো,তার হাসি দেখে প্রিসা নজর নিচে নামিয়ে ফেললো।
” তোমার প্রাক্তন এর সাথে কি তোমার সম্পর্ক খুব বেশি ঘনিষ্ঠ ছিলো?” মিহি কন্ঠে প্রশ্ন করলো নিহাদ, প্রিসা অসহায় দৃষ্টিতে তার দিকে তাকালো।
” আপনি যেরকমটা ভাবছেন সেরকম কিছুই নয় নিহাদ।অয়ন সম্পর্কে আমার কাজিন।আমাদের তিন মাসের সম্পর্ক ছিলো।যেটার অনেক আগেই ইতির ঘটে গিয়েছে কারণ সে মোটেও ভালো নয়।সম্পর্কের তিন মাসেই সে আমাকে বা’জে প্রস্তাব দিয়েছিলো।আর বর্তমানে সে বিবাহিত।আশা করছি আপনি আমাকে অবিশ্বাস করবেন না।”
নিহাদ হেসে বললো, ” প্রতিটা সম্পর্কে বিশ্বাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ।সম্পর্কে বিশ্বাস টুনকো থাকলে অন্যকেউ তো সুযোগ নেবেই।তোমাকে আমি ভালোবেসেছি,তাই বিশ্বাস আমি তোমাকে করি।”
” কিন্তু আপনি অয়নের কথা জেনেছেন কিভাবে?”
” সে আমাকে কাল রাতে ফোন করেছিলো এবং এটাও বলেছে তোমার সাথে নাকি তার খুবই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিলো।”
অবিশ্বাসে প্রিসার চোখ বড় হয়ে গেলো।নিহাদ পকেট থেকে ফোনটা বের করে কল রের্কড তাকে শোনালো।অয়নের কথা শোনার পর ঘৃ’ণা’য় প্রিসার গা গুলিয়ে এলো।অন্যদিকে নিহাদের প্রতি তার শ্রদ্ধা বৃদ্ধি পেলো।তার জায়গায় অন্যকেউ হলে হয়তো তাকে বা’জে কথা শোনাতো,অবিশ্বাস করতো কিন্তু নিহাদ ঠান্ডা মাথায় তার সাথে বিষয়টা নিয়ে কথা বলেছে।
” আপনাকে অনেক ধন্যবাদ নিহাদ আমাকে বিশ্বাস করার জন্য।”
” এবার বলো তোমার উওর কি?”
প্রিসা চুপ হয়ে গেলো।নিহাদ বুঝতে পারলো প্রিসা এখনো দ্বিধায় আছে।একটা হতাশাভারা নিশ্বাস নিলো সে।
” আচ্ছা তাহলে আমি এবার উঠি।ভালো থাকবেন।”
ব্যাগটা নিয়ে চেয়ার থেকে উঠে গেলো প্রিসা।দু’কদম এগোতেই নিহাদ তাকে পেছন থেকে ডাকলো।ঘাড় ঘুড়িয়ে থাকালো প্রিসা।
” আমার নিজের এবং নিজের ভালোবাসার উপর সম্পূর্ণ বিশ্বাস আছে।আমি জানি তুমি রাজি হবে তবে কখন তবে সেটা জানিনা।তবে আমি অপেক্ষা করবো তোমার জন্য।ভালোবাসি শান্তি নগরের রাজকন্যা।”
প্রিসা দাঁড়ালো না,ধুপধাপ পা ফেলে চলে গেলো।
.
.
রিকশা থেকে নেমে পেছন ফিরে বাড়িটার দিকে তাকালো প্রিসা।বর্তমানে সে তার মামাদের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে।অয়নের সাথে সে সামন-সামনি কথা বলবে।
প্রিসাকে দেখে রাদিয়া খন্দকার খু্ব একটা খুশি হলেন না।তিনি তার ননদের মেয়েদের তেমন একটা পছন্দ করেন না।প্রিসা সেদিকে মনোযোগ দিলোনা,সোজা চলে গেলো অয়নের রুমে।
বিছানায় বসে মোবাইল দেখছিলো অয়ন।প্রিসা এসে তার থেকে মোবাইলটা কেঁড়ে নিলো।আচমকা এরকম হওয়ায় অয়ন চমকে গেলেও প্রিসাকে দেখে দেখে ক্রু’রভাবে হাসলো।
” কি প্রিসামণি বিয়ে বুঝি ভেঙে গিয়েছে?হাহাহা…..আমি জানতাম তো এটা।”
” কেন করেছেন আপনি এরকমটা?”
” আমাকে রিজেক্ট করার শা’স্তি এটা।”
” আপনার মতো থা’র্ডক্লাস,ফা’লতু লোক যে আমার মামাতো ভাই ভাবতেই গা ঘি’নঘি’ন করছে।নি’চু মনের মানুষ একটা।আপনার কি নুন্যতম ল’জ্জা বোধ নেই নাকি?এতো কথা বলি তাও বেহায়া মতো পিছনে পড়ে থাকেন কেন?আপনি যে পালিয়ে বিয়ে করে বউ নিয়ে আছেন কোথায় আমি তো একবারও কিছু করিনি বা বলিনি তাহলে আপনি কেন আমার পেছনে পড়ে আছেন?আপনি যে একটা ছেঁ’চ’ড়া লোক সেটা বারবার প্রমাণ করছেন কেন?আর কি যেন বললেন রিজেক্ট করেছি?আপনার মনে নেয় আপনি তিন মাসের মাথায় আমাকে রু’মডে’টে’র মতো জ’ঘ’ন্য প্রস্তাব দিয়েছিলেন?ঘরে বউ আছে তাও আমার পিছনে পড়ে আছেন কেন?একটা মে’য়ে দিকে কি আপনার হয়না?”
” আমি বিয়ে করেছি,বেশ করেছি।বউ নিয়ে আমি ঘুরবো-ফিরবো,মজা করবো।সব তোমার চোখের সামনে করবো কিন্তু তুমি ভালো কিছু পাবে না।কারণ তুমি আমাকে অপ’মান করে রি’জে’ক্ট করেছো।এই যে খানিক আগেও যে কথাগুলো বললে না সেটাও প্রতি’শোধও আমি নেবো প্রিসামণি।”
” বাহ্ আপনি করতে পারবেন আর আমি করলেই দো’ষ।তাহলে শুনে রাখুন মাই কাজিন মিস্টার অয়ন খন্দকার আমি ওকেই করবো আর দু’সপ্তাহের মধ্যেই।প্রথম দাওয়াতটা আপনাকেই দিলাম।লজ্জা থাকলে বিয়েতে আসবেন না।”
প্রিসা অয়নের ফোনটা ধম করে টেবিলে রেখে বেরিয়ে গেলো।সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় তার দেখে হলো দীপ্তির সাথে হয়তো সে তাদের রুমেই যাচ্ছিলো।
প্রিসা দেখে সে গমগম কন্ঠে প্রশ্ন করলো, ” আমাদের রুমে কি করছিলে তুমি?”
” সেটা না হয় আপনার প্রাণপ্রিয় স্বামীকেই জিজ্ঞেস করুন।আর একটা কথা নিজের স্বামীর উপর একটু নজর রাখবেন,দিনকাল কিন্তু ভালো না।একজন মেয়ে হিসেবে উপদেশ দিলাম,মাথায় রাখবেন।না হলে দেখা যাবে মুরগী আপনার খাবার খাচ্ছে কিন্তু ডিম দিচ্ছে অন্যের ঘরে।আসি,দরজাটা বন্ধ করে যান।নয়তো আপনাদের মূল্যবান সম্পদ আবার চুরি হয়ে যেতে পারে।”
দীপ্তিকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে প্রিসা বেরিয়ে গেলো।অয়ন চুপ থাকবে বলে প্রিসার মনে হয়না তবুও তার শান্তি লাগছে।
প্রিসা চোখের আড়াল হতেই দীপ্তি দৌড়ে রুমে এলো।
” প্রিসা মেয়েটা আমাদের রুমে কি করছিলো?”
” সেটা জেনে তোমার কাজ কি?নিজের কাজ করোনা।” বিরক্তি নিয়ে বললো অয়ন।অয়নের কথা শুনে দীপ্তি চ’টে গেলো।তেজী গলায় সে বললো, ” আমার কাজ কি মানে?একটা বাইরের মেয়ে আমাদের বেডরুমে হুট করে ঢুকলো আর আমাকেই জ্ঞান দিয়ে গেলো।এখন তুমি বলছো আমার কি!দেখো অয়ন আমাকে দুধের বাচ্চা ভেবোনা,সব বুঝার ক্ষমতা আছে আমার।এখনো আমার আসল রু’প তোমরা দেখোনি।তাই বলছি উল্টাপাল্টা কিছু করোনা।”
অয়ন চোখ গরম করে দীপ্তির দিকে তাকালেও মেয়েটা তা গায়ে মাখলোনা,চলে গেলো।দীপ্তি কি বললো,না বললো আপাতত সেসবে অয়ন মনোযোগ দিলো না।সে পরিকল্পনা করছে,হয়তো খুব বাজে কোন পরিকল্পনা।
.
.
পালক,অনিলা বেগম সহ সবাই ব্যস্ত।প্রিসা সেদিনই নিহাদকে বিয়ে করার জন্য মত দিয়ে দিয়েছে।নিহাদের বিশ্বাস ছিলো তার ভালোবাসার উপর,প্রিসা রাজি হয়েছে শুনে নিহাদের যেন খুশির সীমা রইলো।তবে নিহাদ অনেকবার প্রিসাকে ফোন করেছে কিন্তু অগত্য কারণে প্রিসা একবারো নিহাদের সাথে কথা বলেনি কিংবা দেখাও করেনি।তবে নিহাদ ধৈর্য হারালোনা।কথায় আছে অপেক্ষার ফল মিষ্টি হয়ে থাকে।সেই কথায় বিশ্বাস করে নিহাদ অপেক্ষা করছে।তার বিশ্বাস সে ভালো ফল পাবেই।
প্রিসা নিহাদের বিয়েতে অনেক জাঁকজমকভাবে কোন কিছুই করা হয়নি।শুধু সাধারণ কিছু নিয়ম যেমন গায়ের হলুদ পালন করা হয়েছে।তাদের মামারা চেয়েছিলেন বোনের মেয়ের বিয়ে ধুমধাম করে দেবেন,যাবতীয় খরচ তারাই দেবেন তবে অনিলা বেগম একদম না করে দিয়েছেন।তিনি ভাইদের কাছ থেকে কখনোই কোন কিছুর সাহায্য নেননি এবারো নেবেন না।নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী আয়োজন করবেন,কি দরকার সামর্থ্যের বাইরে আয়োজন করে মানুষের চোখে বড় হওয়ার।
আজ প্রিসা আর নিহাদের বিয়ে।কমিউনিটি সেন্টারে বিয়েটা হবে।প্রিসার মামাদের বাড়ির সবাই যাচ্ছে বিয়েতে,কয়েকজন প্রথমে না যেতে চাইলেও প্রিসার বড় মামার আদেশে সবাই চুপচাপ যেতে রাজি হয়ে গেলো।তবে অয়ন কোনভাবেই যেতে রাজি হয়নি।সে নাকি তার বন্ধুদের সাথে এক কলেজ ফ্রেন্ডের বিয়েতে যাবে।তবে এসবে দীপ্তির কোন খেয়াল নেয়।সে তো দামী অলংকার,শাড়ী,মেকাপের আস্তরণে নিজেকে সাজাতে ব্যস্ত।ছোটরা জোর করছিলো বিদায় অয়ন বিরক্ত হয়ে সন্ধ্যা বেলাতেই ঘর থেকে বেরিয়ে গিয়েছে।কিন্তু সে হয়তো জানেনা তার জন্য কিছু একটা অপেক্ষা করছে,হয়তো ভালো কিছু কিংবা ম’ন্দ কিছু যেটা সে এখনো পর্যন্ত আশা করেনি।
চলবে…….