শহর জুড়ে আলোর মেলা পর্ব-১৬

0
365

#শহর_জুড়ে_আলোর_মেলা
কলমে: লাবণ্য ইয়াসমিন
পর্ব:১৬

বিয়ে বাড়িতে আনন্দপূর্ণ পরিবেশ। সকালের সেই কাহিনীর পর কিছুটা থমথমে ছিল সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কিছুটা হলেও কমে এসেছে। মিতুর বাবা জানিয়ে দিয়েছে মেয়েকে উনি ফেরত নিতে পারবেন না। দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে উনি উমরা পালন করতে যাচ্ছেন। ছেলেমেয়েরা সকলে কর্মস্থলে আছে। বাড়িতে কেউ থাকবে না। কথাটা শ্রাবণের কাছে বলতেই ও উত্তর দিলো,

> আপনি হজ্জ করতে যাচ্ছেন? হজ্জ করলেই কি হাজী হওয়া যায় মশাই? আপনার চরিত্র সম্পর্কে যতটুকু জানি সুদ আর ঘুষ ছাড়া আপনি কিছু চিনেন না। ভূমি অফিসের বিশাল মাপের হাঙ্গর বলে লোকেরা এক কথায় চিনে আপনাকে। হজ্জ করে টাকা পয়সাগুলোর উপর থেকে পাপ মোচনের চেষ্টা হচ্ছে। বুদ্ধি খারাপ না। আমার ফুপিকে আ*ত্ম*হত্যার প্ররোচনা আর মেয়ের হক মেরে দেওয়ার জন্য আমরা কি আবারও থানায় যোগাযোগ করবো? আমার চ্যানেলে আপনাকে নিয়ে ভাবছি চমৎকার একটা প্রতিবেদন করে ফেলবো।কেমন হবে?

ভদ্রলোকের মুখটা থমথমে হয়ে উঠলো। দ্বিতীয় স্ত্রী মিতুকে খুব একটা পছন্দ করে না। বাড়িতে নিলে ঝামেলা সৃষ্টি হবে। কি করবেন বুঝতে পারছেন না। শ্রাবণের কথা উনি গায়ে মাখলেন না। উদ্দেশ্যে সাধন করতে হলে এইটুকু সহ্য করা কঠিন কিছু না। উনি ফোনের ওপাশ থেকে বললেন,

> আমি মিতুর সব খরচ দিতে প্রস্তুত আছি। প্রতি মাসে ওর একাউন্টে ক্যাশ পাঠাবো। প্লিজ শ্রাবণ একটু বোঝার চেষ্টা করো। আমরা সত্যি থাকছিনা। তোমার আন্টির অনেক ইচ্ছে উমরা করবে।

শ্রাবণ তাচ্ছিল্যপূর্ণ হেসে দাঁত চেপে বলল,

> আল্লাহ আপনাদের মিলিয়ে দিয়েছেন। এতিমের হক মেরে এখন ভদ্রমহিলার উমরা যাওয়ার সখ জেগেছে? উনিতো সাক্ষাৎ জান্নাতি। আপনার ছোট মেয়ে মারিয়া টিকটকে অর্ধনগ্ন পোশাকে যুব সমাজে উষ্ণতা ছড়িয়ে ঘূর্ণিঝড় তুলেছে সেখবর কি আপনার স্ত্রী রাখে? ছেলের খবর নাইবা বললাম। গা*ঞ্জা টেনে বেড়ায় আর আপনারা যাচ্ছেন উমরা পালন করতে। হাস্যকর বিষয়। যাইহোক আমি যা বলার বলে দিয়েছি নতুন কিছু বলতে চাইছি না। আমার মুখ ভালো না। কখন কি বলে ফেলবো তখন আবার দোষারোপ করবেন।ফোন রাখছি।

শ্রাবণ উত্তরের আশা ছেড়ে ফোন রেখে দিলো। অযথা সময় নষ্ট। মিতু আপদটা সহজে ঘাড় থেকে নামছেনা। ভেবেই রাগে মাথা দপদপ করে উঠলো। পাশে রাহিন বসে ছিল। ইমেইল চেক করে বলল,

> সমস্যা কি? ভদ্রলোক মেয়েকে নিতে অস্বীকার করছে কেনো?

শ্রাবণ কপালে হাত রেখে উত্তর দিলো,

> শালার হাড় ব*জ্জা*ত। উমরা যাওয়ার নাটক করছে। ঘুষখোরটার অফিসের সকল তথ্য আর সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পাওয়া যায় কি আমাদের টিমের অনীকে পাঠিয়ে খোঁজ কর। অফিসের পিয়নকে টাকা খাওয়াবি ওই সব করে দিবে। ভদ্রলোকের শত্রুর অভাব নেই। ভূমি অফিসার, সম্পদের পাহাড় তৈরী করে ফেলেছে। প্রতিবেদন ঠিকঠাক হলে রেট পড়তে কতক্ষণ?

রাহিন কিছু একটা ভেবে বলল,
> নিজের আপন ফুপার পেছনে লাগবি? মানুষ কি বলবে?

> মানুষ যা ইচ্ছা ভাবুক শ্রাবণ মাহমুদ সেসবের তোয়াক্কা করেনা। যেটুকু বলেছি কর। বাকিটা আমি দেখে নিবো। ওর আসন যতক্ষণ না নড়বড়ে হচ্ছে ততক্ষণ আমার মনে শান্তি হচ্ছে না। মেয়েকে আমাদের ঘাড়ে চাপিয়ে আয়েশ করা না? জন্মের স্বাদ মিটিয়ে দিব।

শ্রাবণের কথা শুনে রাহিন বুঝে গেলো ভদ্রলোকের কপালে শনি আছে। ওকে বাঁচানোর চেষ্টা মানে বোকামি করা। ওদের আলোচনার মধ্যেই আলো ইশাকে নেই ভেতরে প্রবেশ করলো। গায়ে হলুদের ড্রেস কোর্ড লাল আর হলুদ রঙের। আলো লাল রঙের শাড়ি পরেছে। শ্রাবণ ফোন ঘাটাঘাটি করছিলো হঠাৎ আলোকে দেখে কপালে ভাজ পড়লো। মেয়েটা এখানে এসে একটু বেশি বেশি খোলামেলা চলাফেরা করছে। শশুর বাড়ি বলে কি নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধ আচরণ করতে হবে? রাহিন ল্যাপটপ নিয়ে সোজা বেরিয়ে গেলো। কাজের অভাব নেই। এখুনি অফিসে যাওয়া জরুরী। কক্ষে ওরা দুজন মানুষ অবস্থান করছে। শ্রাবণ ভ্রু নাচিয়ে জিঞ্জাসা করলো,

> কি প্রয়োজন?

আলো বোকা বোকা হেসে মাথা নাড়িয়ে বলল,

> আপনাকে প্রয়োজন। মানে সবাইতো আপার শশুর বাড়িতে যাচ্ছি সঙ্গে আপনিও যাচ্ছেন।তাই তাড়াতাড়ি কষ্ট করে পাঞ্জাবীটা পরে নিলে ভালো হয়।
শ্রাবণ অবাক হওয়ার ভান করে বলল,

> আমি যাচ্ছি নাকি? কৈই জানতাম না তো।

> সব আপনাকে জানতে হবে নাকি? সব সময় মুখটা ওরকম গম্ভীর করে রাখবেন না। দেখতে খুব একটা ভালো লাগে না। বোনের বিয়ে ভাই হিসেবে একটা দায়িত্ব আছে না আপনার? তাড়াতাড়ি চলুন সকলে অপেক্ষা করছে।

শ্রাবণ ঠোঁট কমড়ে কিছু একটা ভাবলো। ফোনটা পাশে রেখে সোজাসুজি ওর পা হতে মাথা অবধি স্ক্যান করে বলল,

> একেতো পরেছো আমার অপছন্দের রঙ তারপর আবার আমাকে রাজি করাতে এসে উল্টোপাল্টা বকছো। এভাবে কি আমি রাজি হবো? তোমার কি মনে হয় শ্রাবণ মাহমুদ বোনের বিয়েতে হাত পা গুটিয়ে ঘরে বসে আছে?

আলো থতমত খেলো। কথাটা সত্যি,সোনিয়ার বিয়ের যাবতীয় আয়োজন শ্রাবণ লোক দিয়ে করিয়েছে। এখন পয়সা ফেললে লোকের অভাব হয়না। ক্যাশে বিশাল অংকের টাকা আর হাতে মুঠো ফোন মানে পৃথিবী তোমার হাতের মুঠোয়। আলো ঢোক গিলে বলল,

> আরে বাবা মানছি আপনি সবটা করছেন কিন্তু কোথায় বোনকে বিয়ে দিচ্ছেন দেখবেন না? বোনের সুখটুকু চোখে দেখলেও শান্তি। বোঝেন না? ভাইবোনের ন্যায় এতো মধুর সম্পর্ক কি পৃথিবীতে আছে? চলুন না দেখে আসি, প্লিজ।

আলো ভীষণ সিরিয়াস। শ্রাবণ ওর অনুরোধ শুনে থমকালো। যাবে না এমনটা নয়। কিছু কাজ ছিল গুছিয়ে নেওয়ার জন্য রুমে আছে। আলোর এমন কাকুতি মিনতি শুনে মনের মধ্যে দুষ্ট বুদ্ধি চাপলো। তাই আরও খানিকটা গম্ভীর হয়ে বলল,

> যাওয়া যায় তুমি যদি আমার কিছু শর্ত মানো তবে। এখন সবটা তোমার উপরে নির্ভর করছে। প্রথমে বাবুকে আমার নিকট দাও। তারপর ভেবে উত্তর দাও।

আলো মুখটা ফুলিয়ে ফেললো। শ্রাবণ সুবিধার মানুষ না। নিজের বোনের বিয়ের অনুষ্ঠানে যাবে তাও ওকে শর্ত দিয়ে। অদ্ভুত মানুষ। কিন্তু কিছু করার নেই। বাইরে খুব বড় মুখ করে বলে এসেছে শ্রাবণকে ঠিক রাজি করাবে। সম্মান রক্ষা করতে হলে রাজি হওয়া ছাড়া উপায়ন্তর নেই। আলো সোজাসুজি ইশাকে ওর কোলে তুলে দিয়ে বলল,

> কি শর্ত শুনি?

শ্রাবণ ইশার গালে চুমু বসিয়ে দিয়ে ভ্রু নাচিয়ে বলল,

> ভেবে বলছো?

> ভাবার কি আছে? আপনি কি আমাকে বি*ষ খেতে বলবেন নাকি? তাড়াতাড়ি বলুন।

শ্রাবণ ভেবে নিলো। ইশা ওর হাতটা টেনে নিয়ে মুখে নেওয়ার চেষ্টা করছে। মেয়েটার এই এক খারাপ অভ্যাস। হাতে কিছু পেলে মুখে নেবার চেষ্টা করে। শ্রাবণ মেয়ের গালে পূণরায় চুমু দিয়ে বলল,

> প্রথম শর্ত শাড়ি চেঞ্জ করতে হবে। এমনে উল্কা সুন্দরী হয়ে আমার সঙ্গে যাওয়া যাবে না। দ্বিতীয়ত ইশাকে সব সময় সঙ্গে রাখতে হবে। মাঝে মাঝে আমি সাহায্য করবো সমস্যা হবে না। তৃতীয় শর্ত অভিকের সঙ্গে দুরুত্ব রেখে চলতে হবে। পারবে? পারলে বলো আমি রেডি হবো।

আলো হতাশ। এগুলো কেমন শর্ত? প্রথম দুটো ঠিক আছে কিন্তু শেষের শর্তটা কেমন জানি। অভিক ভালো ছেলে। ওর সঙ্গে আলোর খুব ভালো সম্পর্ক তৈরী হয়েছে। তাহলে ওর থেকে কেনো দুরুত্ব মেনে চলতে হবে? আলো ঠোঁট ফুলিয়ে বলল,

> অভিক ভাইয়া খারাপ নাকি? কেমন শর্ত এটা?

শ্রাবণ হাসলো। নিজের ভাইবোনদের সম্পর্কে ওর যথেষ্ট ভালো ধারণা আছে। অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো না। শ্রাবণ উত্তর দিলোনা বরং বলল,

> ভালো খারাপের পার্থক্য আমি না বরং তুমি নিজে থেকে খুঁজে বের করো। বয়স হয়েছে বুদ্ধি হয়নি এমন না । আমি শর্ত দিয়েছি মানলে ভালো না মানলে বলে দাও। আমার কাজ আছে। অযথা সময় নষ্ট করা আমি পছন্দ করিনা।

শ্রাবণের দাম্ভিক উত্তর। আলো দমে গেলো। মনে মনে ভাবলো শ্রাবণ নিশ্চয়ই জেনে বুঝে ওকে নিষেধ করেনি। কারণ ও নিজে খুঁজে নিবে। কথাটা ভেবে ও মাথা নাড়িয়ে বলল,

> আমি রাজি কিন্তু কি পরবো এখন ? শাড়িটা ওরা দিয়েছিল। ড্রেস কোর্ড ছাড়া কেমন লাগবে না?

শ্রাবণ উঠে গেলো। এক হাতে ইশাকে ধরে অন্যহাতে আলমারি থেকে একটা শপিং ব্যাগ বের করে আনলো। সেটা আলোর হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল,
> রেডি হয়ে নাও আমি বাইরে আছি।

> আর আপনি?

> ছেলেদের রেডি হতে তোমাদের মতো একদিন লাগে না। তাছাড়া আমি যথেষ্ট সুদর্শন। এমনিতেও মেয়েরা বিয়ের জন্য মাথা খারাপ করে দিচ্ছে। নতুন করে ঝামেলা সৃষ্টি করার ইচ্ছা নেই।

শ্রাবণ ভাব নিয়ে বেরিয়ে গেলো। আলো চোখ বড়বড় করে সেদিকে চেয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললো। আফসোস করে লাভ নেই ভেবে হাতের প্যাকেটটা অপেন করলো। কালো রঙের বেশ সুন্দর একটা ড্রেস সঙ্গে হিজাব রয়েছে। আলো দ্রুত চেঞ্জ করলো। শ্রাবণ ওকে অপছন্দ করেনা কিন্তু ভালোবেসে আহ্লাদ করে ড্রেস কিনে দিবে এমনটাও না। কারণ নিশ্চয়ই আছে।
**********
বিয়ের পর প্রথমবার রাকা রতনের অনুমতি বিহীন গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্য তৈরী হয়েছে। যেখানে রতন নিজে যাচ্ছে সেখানে স্ত্রী সন্তানদের কেনো নিবে না এটা ওর কাছে অবান্তর প্রশ্ন। রাকা মনের কষ্ট চেপে রেখে মুখ বন্ধ করে নিজের অধিকার এখন থেকে আর ছাড়বে না। রতন বাইরে বাইরে কি করে সেটা কি ওর কাছে কৈফিয়ৎ দেয়? এখানে সমাজের এক পক্ষ বলতে পারে স্বামীর পায়ের নিচে স্ত্রীর জান্নাত,রাকার উচিত হবে রতনের কথা অনুযায়ী চলাফেরা করা। কিন্তু কেনো? রাকা স্ত্রী বলে কি ওর মন থাকতে নেই? স্ত্রীর হক কি শুধুমাত্র পোশাক আর খাবার দিলে পরিপূর্ণ হয়? তবে মনের খোরাক কে পূরণ করবে? যেখানে ওর মতামত প্রদানের দাম নেই। নিজের ভালো খারাপ সবটা বিসর্জন দিয়ে কলের পুতুলের মতো চলাফেরা করতে হবে। ধর্মীয় বিধানের কোথাও কি লেখা আছে স্ত্রীকে শুধুমাত্র ভাত কাপড় দিয়ে ঘরে রাখো। তার ভালো খারাপের খবর রেখো না? রাকা সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিজের উপরে আর জুলুম করবে না। লোকের কথায় কি যায় আসে? সমাজের কিছু মানুষ আছে তাদের জন্ম হয়েছে মানুষের সমালোচনা করার জন্য। তাদের ভয়ে নিজেকে কষ্ট দেওয়ার মানে হয়না। রাকা ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে পরিপাটি করতে করতে কথাগুলো ভাবছিলো। কতদিন পর এভাবে কোনো অনুষ্ঠানে যাচ্ছে ঠিক মনে নেই। হিজাবের পিট আটকে পেছনে ফিরে অবাক হলো। রতন তীক্ষ্ণ নজরে ওকে দেখছে। রাকা পাত্তা দিলোনা। বিছানার উপরে ছোট মেয়েটা জুতা হাতে দাঁড়িয়ে আছে। সোজাসুজি গিয়ে ওর জুতা পরিয়ে দিলো। রতন এবার মুখ খঁললো,

> কোথায় যাচ্ছিস? গোছানোর আগে আমার কাছে শুনেছিস?

রাকা বেশ শান্ত। উত্তর দেওয়ার বিন্দু পরিমাণ ইচ্ছা অবশিষ্ট নেই। রতন অধৈর্য হয়ে উঠলো। সোজাসুজি ওর হাত টেনে নিজের দিকে ফিরিয়ে নিয়ে ধমক দিলো,

> কি বলছি আমি? থা*প্প*ড় খেয়ে কান বন্ধ হয়ে গেছে? আবারও দিব একটা? তুই গেলে আমি কিন্তু যাবোনা বললাম। বাড়িতে এক ছোট*লো*কের বাচ্চা এসে সবাগুলোর মাথা বিগড়ে দিচ্ছে। হাতির পাঁচ পা দেখছো না? ভাইয়ের চয়েজ এতো জঘন্য জানা ছিল না।

রাকার শরীর রাগি চিড়বিড় করে উঠলো। ভাইয়ের স্ত্রীকে নিয়ে এহেন মন্তব্য করতে পারলে নিজের স্ত্রীকে সে কিভাবে সম্মান করবে? রাকা চুপ থাকতে পারলোনা। চাপা কণ্ঠে বলল,

> তোমার থেকে এর চেয়ে বেশি আশা করা বোকামি। হয় আমি এই পোশাকে অনুষ্ঠানে যাব নয়তো ছেলেমেয়ে নিয়ে বাপের বাড়িতে ফিরবো। ভাইয়ার সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। ছেলেমেয়ে নিয়ে আমাকে অন্ততপক্ষে আজীবন অসম্মানিত হতে হবে না। তুমি থা*প্পড় ছাড়া আর কি পারো? পারলে শেষ থা*প্প*ড়টা মেরে দাও আর যদি সুযোগ না আসে।

রতন চমকে উঠলো। রাকার মুখে প্রতিবাদ শুনে কিছুটা অবাক। রাকা বাইরের মানুষের সঙ্গে যেমন ব্যবহার করুক না কেনো কখনও রতনের মুখেমুখে উত্তর করেনা। রতন দমলো না বরং তেড়ে আসলো,

> মাথা খারাপ হয়েছে তোর? বললাম না তুই কোথাও যাচ্ছিস না? আমি কিন্তু লোকজন মানবো না এখন সত্যি তোকে পি*টা*বো।

রতন তেড়ে আসতে গেলো তখনই দরজায় শ্রাবণ নক দিলো,

> ভাইয়া আসবো?

রতন থমকে গেলো। কোনোরকমে মুখে হাসি টেনে বললো,

> ভেতরে আই। কিছু বলবি?

শ্রাবণের গায়ে কালো রঙের পাঞ্জাবী। ফর্সা তকে দেখতে বেশ সুন্দর লাগছে। বাবা মায়ের তর্কবিতর্ক দেখে বাচ্চা মেয়েটা এককোনে ছোট হয়ে বসে আছে। মেয়েটা ভয় পাচ্ছে। শ্রাবণ গিয়ে ওকে কোলে তুলে নিয়ে বলল,

> ভাবির সঙ্গে জা*নো*য়ারের মতো ব্যবহার করিস কেনো? অপছন্দ হলে বল উপযুক্ত পাওয়া পরিশোধ করে বাবার বাড়িতে রেখে আসি। ছেলেমেয়ে দুটো যে তোকে য*মের মতো ভয় করে সেখবর রাখিস? তোর নিজের বাবার সঙ্গে কি তোর এমন সম্পর্ক? এখনো আহ্লাদে পারলে কোলে উঠে বসিস।

রতনের মুখটা থমথমে হয়ে উঠলো। সত্যি কথা শুনলে সকলের রাগ হয়। রতন তেড়ে আসলো শ্রাবণের দিকে। আলোকে ওর পছন্দ না। এই পরিবারের কোনো বউ গরীব ঘরের নেই শুধুমাত্র আলো ছাড়া। মনের মধ্যে জমিয়ে রাখা রাগটা উগড়ে দিয়ে বলল,

> তুই কা*পু*রুষ বলে কি আমিও কা*পু*রুষ হবো? বউকে আহ্লাদ করে চলবি চল আমাকে শেখাতে আসবি না। বউয়ের আচল ধরে চলা আমাদের বংশে নেই। তুই আমাদের বংশের কু*লা*ঙ্গার। নয়তো ওরকম ছোট*লো*কের বাচ্চার জন্য বাড়িতে অশান্তি করতিনা।তোর বউয়ের চরিত্র ভালো করে জানা আছে। আমার বউকে কি তোর বউয়ের মতো মনে করিস?

শ্রাবণ হাসলো। বাচ্চাটাকে কোল থেকে নামিয়ে ইশারা করলো বাইরে যেতে। মেয়েটা দৌঁড়ে গেলো। শ্রাবণ ঠোঁট কামড়ে বলল,

> তোর বংশের গৌরব খুব না? আমার জানা মতে চাচা চাচির অনুমতি ছাড়া সংসারের জন্য একটা সুতা পযর্ন্ত কিনেনা। তাহলে কি চাচা বংশের কু*লা*ঙ্গার? আমার দাদি ছিলেন মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে। তবে কি আমাদের দাদি ছো*ট*লোকের বাচ্চা ছিলেন? ভাইয়া তুই আসলেও নির্বোধ। জন্ম হতে আজ অবধি যা চেয়েছিস তাই পেয়েছিস। কিছু হারাতে হয়নি। জীবনে প্রিয় মানুষের ভূমিকা কতটা কিভাবে বুঝবি? ভাবির সঙ্গে এহেন ব্যবহার করে কি তোর বংশ গৌরব হিমালয়ের মতো উঁচু হচ্ছে? মানুষের মন, কখন যে বিষিয়ে যাবে বুঝতেও পারবি না। একবার তোর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলে পারবি আবারও আগের মতো করতে? সময় থাকতে ভালো হয়ে যা। আর শোন আমার স্ত্রী খারাপ অথবা ভালো সে আমি বুঝে নিবো তোকে মাতব্বরি করতে হবে না। আমার ঘরে দয়াকরে উঁকিঝুঁকি কাটতে যাসনা। আমি ভালো ছেলে না যে পরের কথায় উস্কানি পেয়ে ঘরে অশান্তি করবো। ভাবি আসেন আপনার জন্য সবাই অপেক্ষা করছে ।

শ্রাবণ বেরিয়ে আসতে চাইলো। পেছনে থেকে বাঁধা পেয়ে আবারও দাঁড়ালো। রতন রাকার হাত টেনে ধরেছে,

> ও যাবে না। ও গেলে আমি যাবনা বলে দিচ্ছি।

রাকা ভয় পাচ্ছে। আবারও যদি মা?রে? শ্রাবণ গিয়ে হাত ছাড়িয়ে দিয়ে উত্তর দিলো,

> তোর যেতে কে বলছে? সোনিয়ার বিয়ে কি তোর জন্য আটকে থাকবে? ভাবি আর বাচ্চারা যাচ্ছে। তোর ইচ্ছা হলে আই না হলে মোড়ের দোকানে বসে চা খা আর নিজের ঢোল নিজে পিটা।

রাকা শ্রাবণের সঙ্গে বেরিয়ে আসলো। রতন এভাবে অপমানিত হয়ে রাগে ফুলছে। ভাইয়ের সঙ্গে এই প্রথমবার কথা কাটাকাটি হলো। মিতু আর লিজা ওকে জানিয়েছিরো আলোর সম্পর্কে। তারপর থেকে মনের মধ্যে কেমন জানি নেগেটিভ ভাবনার উদয় হয়েছে। সেটা কিছুতেই সরাতে পারছে না। নয়তো সামান্য কারণে শ্রাবণের সঙ্গে তর্কবিতর্ক হতোনা। রাকা কথা শুনছে না সেটা আরও মড়ার উপরে খাড়ার ঘায়ের মতো অবস্থা।
*****
মেয়েকে কোলে নিয়ে শ্রাবণের পাশাপাশি বসেছে আলো। তুলি পেছনের দিকে আছে। অভিক চেয়েছিলো সবাইকে নিয়ে সুন্দর একটা ভিডিও তৈরী করে ফেসবুকে ছাড়বে কিন্তু আলো আর শ্রাবণের জন্য হলোনা। ওদের ড্রেস কোর্ড ঠিক নেই। গড়মিল রয়েছে। শ্রাবণ ফোনের দিকে চেয়ে আছে। ইদ্রিসের ভাই কি এতো সহজে হার মেনে নিয়েছে? একদম মানেনি বরং সুযোগের অপেক্ষায় আছে কখন প্র*তি*শোধ নেওয়া যায়। কথাটা ভেবে শ্রাবণ ইশার দিকে চাইলো। মেয়েটা মুখের মধ্যে হাত পুরে একমনে হেসে কুটিকুটি হচ্ছে। শ্রাবণ হাত বাড়িয়ে ওকে নিজের কাছে টেনে নিলো। বাচ্চার মুখটা পুরোপুরি মায়া দিয়ে গড়া। কোল থেকে নামাতে ইচ্ছা করেনা। ভাবলো, এইটুকু বাচ্চাকে কি*ড*ন্যাপের হুমকি দিতে পারে তারা কেমন হতে পারে?

চলবে

ভুলত্রুটি মার্জনা করবেন।