#শহর_জুড়ে_আলোর_মেলা
কলমে: লাবণ্য ইয়াসমিন
পর্ব:১৮
পৃথিবীতে নানা রঙের নানা ঢঙের মানুষের বসবাস। আমাদের চারপাশে অবস্থান করা প্রতিটা মানুষের আচরণ ভিন্ন। কেউ কেউ তো আবার কাছে থেকে আমাদের হৃদয়ে খঞ্জর চালাতে দুবার ভাবে না। কিছু মানুষের আলোচনা সমালোচনার ভয়ে আমরা চুপসে থাকি অথচ তারা আমাদের জীবনের কোনো অংশ নয়। রাকা বাবার বাড়িতে ফিরে এসেছে শুনে আশেপাশের প্রতিবেশীদের ভিড় লেগেছে। নানারকম কথাবার্তা হচ্ছে। কেউ বলছে” আগেই জানতাম ছেলে সুবিধার না। বংশপরিচয় ভালো হলেই কি মানুষ ভালো হয়?” কেউ বলছে,” ভুল করে ফেলেছে ক্ষমা করে দাও। বাচ্চাদের মুখের দিকে চেয়ে ফিরে যাওয়া উচিত। মাথা গরম করে সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হবে না” অনেকেই ভাবছে রাকার দোষ আছে।হয়তো শাশুড়ির সঙ্গে ঝামেলা আছে।রাকা রাত থেকে চুপচাপ বসে আছে। চোখের পলক ফেলতে ভুলে গেছে। বাচ্চারা বাইরে ছুটাছুটি করছে। ওরা হয়তো বুঝতেও পারছে না বাবা মায়ের জীবনের অমূল পরিবর্তন হতে চলেছে। রাকার বাবা ছেলের সঙ্গে মতামত দিয়েছেন কিন্তু ওর মা মানতে পারছে না। উনি ভাবছেন ছেলেদের মাথা গরম থাকে ওদের সঙ্গে তর্কাতর্কি না করাই উচিত। ঝামেলা হয়েছে পরে ঠিক হয়ে যাবে। রতন ভালো ঘরের ছেলে দেখতে সুদর্শন তাছাড়া দুইটা বাচ্চা আছে। এখন কোনো সিদ্ধান্ত নিলে বাচ্চাদের ভবিষ্যৎ নষ্ট হবে। তাতেই রাসেল খেপে উঠেছে। প্রতিবেশীদের তেড়ে বাইরে বের করে গেট আটকে দিয়ে চিৎকার করে বলে উঠলো,
> আমার বোনকে নিয়ে আর একটাও মন্তব্য শুনতে আমি রাজি না। যখন ও রতনের মতো ছেলের হাতে মার খেয়ে পড়েছিলো তখন ওর ব্যাথা কি পাড়ার লোকেরা ভাগ নিতে এসেছিলো? যেখানে সম্মান নেই সেখানে আমার বোন কেনো থাকবে? মা তুমি আর ঝামেলা করোনা। রাকা ওখানে যাবে না। বিকালে উকিল আসবে। আজকের মধ্যে ডিভোর্স হবে। আগামী তিনমাস পর ওর আবার বিয়ে হবে। ছেলে আমি দেখে ফেলেছি। ওর সংসার আমি নিজে হাতে নতুন করে সাজিয়ে দিবো। আর রতনের রতন আমি নিলামে চড়িয়ে ছাড়বো।
রাসেল খেপাটে মানুষ। সহজে রাগে না রাগলে আর নিজেকে শান্ত রাখতে পারেনা। রাজনীতিতে নামডাক আছে বেশ। আসছে বার চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হিসেবে নির্বাচনের প্রচারণার কাজ করছে। সমাজের ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে ওর উঠাবসা। বড় ভাই পুলিশের বড় দারোগা। ছোট চাচা জজকোর্টের উকিল। গোছানো পরিবার অথচ রাকার জীবনটা কেমন এলোমেলো। শরীরে প্রখর জ্বর। মা*রের জায়গা কালচে হয়ে র*ক্ত জমাটবদ্ধ হয়ে আছে। রাকা মাথা নিচু করে বলল,
> ভাইয়া রাগারাগি করোনা। আমার কপালে যা আছে সেতো বদলাতে পারবে না। বাবার শরীর খারাপ। তুমি অযথা রাগ করছো। আমি সুস্থ হয়ে নাহলে ফিরে যাবো। আম্মার সঙ্গে ঝামেলা করোনা।
রাসেল বিরক্ত হলো প্রচুর। ধমক দিয়ে বলল,
> তুই চুপ থাক। একটা শব্দও উচ্চারণ করবি না।আল্লাহ কি বলেছে, বান্দা তোমরা ভাগ্য পরিবর্তনের চেষ্টা করোনা কর্ম করা ছেড়ে ঘরে বসে থাকো? বলেছে নাকি? চুপচাপ থাকবি।
রাকা চুপ করতে বাধ্য হলো। ভাইয়ের কথার বাইরে কথা বলার সাহস কখনও হয়নি। যদি হতো তবে বিয়ের সময় হৃদয়ের অন্তঃস্থলে বসবাস করা সেই প্রিয় নামটা ঠিক উচ্চারণ করতে পারতো। কিশোরী হৃদয়ে ঝড় তোলা সেই মুখটা ভুলতে কতগুলো রাত জেগে কাটাতে হয়েছে। তবুও একটা শব্দও উচ্চারণ করতে পারেনি। হৃদয় ভাঙার সেই খবর পৃথিবীর কেউ জানেনা। অতি গোপনীয়তার সহিত ভুলে গিয়ে মুখ বুজে সংসার করেছে। রাকা চোখ বন্ধ করে ফেললো। কি করবে মাথায় আসছে না। দিশেহারা অবস্থা। স্বামীকে ত্যাগ করবো বললে তো আর হয়ে যায় না। ভাবনা চিন্তার বিষয় আছে। রাকার বয়স পঁচিশ চলছে।সতেরো বছর বয়সে বিয়ে হয়েছিল। পরপর দুইটা বাচ্চা। বয়সের কিছু হয়নি। এতোগুলো বছর কিভাবে ওই অবহেলা নিয়ে জীবন পার করবে? তাছাড়া এভাবে ফিরে গেলে রতনের সাহস দ্বিগুণ হবে। কোনো কিছু পরোয়া করবে না। ওকে ভাবতে দেখে রাসেল পূণরায় বলল,
> রতনের নাম এই বাড়িতে আর উচ্চারণ হবে না। ওর সঙ্গে আমি কোনো আত্মীয়তা করবো না। ছোট*লোকের বাচ্চা ভাবছে আমি চুপচাপ থাকবো।
রাসেল রাগে ফুলছে। গতকাল রাত থেকে শরীর বিষিয়ে যাচ্ছে। রাসেলের বাবা চুপচাপ বসে আছেন। মেয়ের কষ্ট দেখে উনার মুখে কথা নেই। উনি জানতেন মেয়ের দুর্বলতা। শুধুমাত্র নিজের ইগো আর বড়লোকি দেখানোর জন্য মেয়েটার জীবন উনি তছনছ করে দিয়েছেন। কোন মুখে মেয়ের সামনে যাবেন। রাসেল ঠিক করে ফেলেছে কি করতে হবে। রাকার ভবিষ্যৎ সুন্দর করার দায়িত্ব ওর। ভাই হয়ে বোনের জন্য প্রয়োজন হলে সুখপাখি ক্রয় করবে বলে প্রতিজ্ঞা করেছে। অন্যদিকে মোড়ের দোকানে একাকী বসে আছে রতন।শূন্য ঘর পড়ে আছে। বাচ্চাদুটোর কথা ভীষণ মনে পড়ছে। রাকার কথা ভাবলে রাগে শরীর জ্বলছে। বিশেষ করে আলোর জন্য বিরক্ততে মুখ ভার হয়ে আসছে। মনে মনে অসংখ্য গালিগালাজ করেছে। তবুও শান্তি মিলছে না। রাকা ফিরে আসবে ওর জানা আছে। স্বামী অন্যায় পেলে বউকে মা*রবে শাসন করবে এতে বাড়াবাড়ির কি আছে? রাসেল কিভাবে বোনের বিয়ে দেয় রতন সেটা দেখে নিবে। শেষমেশ এখানে ফিরবে জানা কথা।
****
ভূমি অফিসের সিনিয়র অফিসারের ঘুস নেওয়ার ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। সঙ্গে তার সম্পদের পরিমাণ নিয়ে দেশের মাটি চ্যানেলে প্রতিবেদন প্রকাশ পেয়েছে। তার ছোট ছোট ক্লিপ যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রথম স্ত্রীর আ*ত্মহ*ত্যা বড় মেয়েকে অবহেলা থেকে শুরু করে ভিডিওতে চৌদ্দ গোষ্ঠীর তথ্য আছে। রাহিন ভিডিও দেখতে দেখতে বলল,
> এই ভিডিও দেখে ভদ্রলোকের না হার্ট এ্যাটাক হয়ে যায়। এর পরেও কি মিতুকে ফিরিয়ে নিবে বলে মনে হয়? কি করবি ভেবেছিস?
শ্রাবণ খাপছাড়া উত্তর দিলো,
> ওর চিন্তা ও করবে। ওকি বাচ্চা যে আমি ওর মুখে খাবার তুলে দিবো? আ*বা*লদের চিন্তা করতে গিয়ে আমি মাথা খারাপ করতে পারবোনা। শ্রাবণের সময়ের মূল্য আছে। চ্যানেলের লাইসেন্স পাচ্ছি না সেই চিন্তাতে বাঁচি না। শোন আগামী কয়েকদিন বাড়ির সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করছি। আমাকে চাইলে বলবি কোথায় আছে জানিনা।
রাহিন ভড়কে গেলো। ওর নিখোঁজ হওয়া মানে সব ঝামেলা রাহিনের মাথার উপরে ঝুলে পড়া। নিজের পরিবারের থেকেও আজকাল শ্রাবণের ঝামেলা বেশি ওকে অতিষ্ঠ করে। কিছু করার নেই। যখন বেকার হয়ে ঘুরছিলো ঠিক সেই সময় শ্রাবণ ওর হাতটা ধরে উপরে তুলেছিলো। নয়তো পরিবার নিয়ে পথে বসতে হতো। বাবার চিকিৎসা বোনের বিয়ে সবটা এই চ্যানেলের উপরে নির্ভর করে হয়েছে। কতশত বন্ধু ছিল প্রয়োজনে কেউ পাশে থাকেনি। বিপদের সময় পাশে থাকা বন্ধুর চেয়ে প্রিয়জন আর কে আছে। রাহিন দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
> কিন্তু ভাবির বিষয়টা? ইদ্রিসের ভাই বারবার হুমকি ধামকী দিচ্ছে। যদি কিছু হয়ে যায় তখন?
> থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। শ্রাবণ মাহমুদের বউয়ের গায়ে সামান্য আঁচড় পড়লেও এই শহরে ভূমিকম্প হবে। এমপি পযর্ন্ত ফেঁসে যাবে। এই কেসের মধ্যে যতগুলা মাথা আছে সবগুলোর নাম আমি উল্লেখ করেছি। সেটা ইতিমধ্যে সবাইকে জানানো হয়েছে। এমপি কি গা*ঞ্জা টেনে চলাফেরা করে? দেশের মাটি চ্যানেলের অর্ধেক মালকিনের ক্ষতি করতে আসবে? শ্রাবণ মাহমুদ কাউকে অযথা চুমাচুমি করে না। তবুও ওরে সময় নিয়ে বুঝিয়ে এসেছি। কথা না শুনলে আর কি? নাইট পার্টির ভিডিও আছে। ওইটা আমার চ্যানেলে দাপট দেখাবে।
> সংসদ সদস্য ভাই। একটু ভয় করে চল। ক্ষতি একবার হয়ে গেলে তখন আফসোস করতে হবে।
শ্রাবণ ব্যাগ গোছাতে ব্যস্ত। আলো বাইরে আছে। সকালে মিতুকে ঠান্ডা মাথায় অপমান করার পর থেকে শ্রাবণের মেজাজ চড়ে আছে। বারবার ছ্যাঁচড়ামি করা ওর পছন্দ না। ওকে দেখলে নিজের বোকামির কথাগুলো বারবার মনে পড়ে যায়। ভালোবাসা কতটা দামি এরা যদি বুঝতে পারতো। লোভের জন্য ওকে ছেড়ে দিয়ে অন্য পুরুষের কাছে কৌশলে ধরা দিয়েছিল এখন আবার ফিরতে চাইছে। তখন যদি শ্রাবণ কোনো ভুল পদক্ষেপ নিতো সেই দ্বায়ভার কে নিতো? লোভী মেয়েদের সঙ্গে কেউ সুখে থাকতে পারেনা। এরা কাউকে সুখী করার ক্ষমতাও রাখে না। শ্রাবণ ভাবতে ভাবতে উত্তর দিলো,
> সমস্যা হবে না। আলোর দায়িত্ব নিয়েছি ঠিক পালন করবো। আলোর ভাইয়ের পোস্টিং হয়েছে ঢাকায়। ওর সঙ্গে কথা হয়েছে। বিষয়টা ও দেখছে। আলোর কাছাকাছি আসার চেষ্টা করলে ফল ভালো হবে না।
শ্রাবণ সবটা গুছিয়ে নিলো। হটাৎ শূন্য হাতে গ্রামে এসেছিলো পরে একটা একটা করে বেশ কিছু জিনিসপত্র নিয়ে আসতে হয়েছে। স্থানীয় বাজার থেকে কিছু কেনাকাটা করেছিলো। মন বলছে খুব তাড়াতাড়ি ওকে গ্রামে ডাকা হবে। বিশেষ করে রতনের জন্য। অনুমান সত্য হলে এক মাসের মধ্যে রতন ওর পা ধরবে রাকাকে ফিরিয়ে আনার জন্য। বিষয়টা শ্রাবণ এড়িয়ে যেতে চাইছে। চাচাতো ভাই সে পর না অন্যদিকে রাকার জন্য খারাপ লাগা কাজ করছে। রাকার উচিত হবে না এখানে ফিরে আসা। পরিবারের প্রতিটা সদস্য চাইছে রাকা ফিরে আসুক। আগের মতো সংসার করুক কিন্তু তাকে কি রতন ভালো হয়ে যাবে? না ঠেকলে শিক্ষা হয়না। শ্রাবণ একা ফিরে যাচ্ছে। আলোকে নিয়ে যেতে চেয়েছিলো কিন্তু সম্ভব হচ্ছে না। সোনিয়ার বিয়ের জন্য বাকীরা এখানে থাকবে ওকে নিয়ে গেলে দেখাশোনার কেউ থাকবে না।
***************
বিয়ের জন্য বিশাল আয়োজন করা হয়েছে। বাড়িতে পরপর কয়েকটা ঘটনার জন্য সবটা থেকেও যেনো কিছু নেই মনে হচ্ছে। আভিক আর তুলি মিলে বাকীদের স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছে। বড়দের কাজ আয়োজন করা ওসব নাচ গানের আসরে তাদের দেখা যায় না। মানুষ যখন বিপদে পড়ে তখন চারদিক থেকে ঝামেলা তাকে ঝাপটে ধরে। লিজা ফোন হাতে আনচান করছে। মারাত্মক একটা ভুল করে ফেলেছে। কি করবে মাথায় আসছে না। অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো না। আরাফ নামের এক ছেলের সঙ্গে ওর অল্পদিনের পরিচয় তারপর থেকে প্রেম। রেস্টুরেন্ট,সিনেমা হল আর পার্কে প্রচুর ঘোরাঘুরি করেছে। সেখানে ওদের দুজনের বেশ কিছু অন্তরঙ্গ ছবি ওই ছেলের ফোনে ছিলো। ছেলেটা সেই ছবিগুলো দেখিয়ে হুমকি দিচ্ছে। সময় দিয়েছে দশদিন। মধ্যে আশি হাজার টাকা পাঠাতে হবে নয়তো ছবি ভাইরাল করবে।খুব বেশি হলে ও বিশ হাজার পযর্ন্ত জোগাড় করতে পারবে কিন্তু বাকীটা কে দিবে? বাড়িতে টাকা চাইতে হলে উপযুক্ত যুক্তি দেখাতে হবে। ফোন হাতে ছাদের একপাশে দাঁড়িয়ে কথাগুলো ভাবছিলো তখনই আলো সেখানে আসলো। লিজাকে ফুপিয়ে কাঁদতে দেখে ওর খারাপ লাগলো তাই এগিয়ে আসলো,
> তোমার কি মন খারাপ? তোমার ভাইয়াকে আমি বুঝিয়ে বলবো। ও ঠিক তোমাকে বুঝবে। তোমাকে ভীষণ ভালোবাসে তাই রাগ করেছে। মানুষ প্রিয়জনের উপরে বেশি রাগ দেখাতে পারে। আমার ভাইয়াও এমন করতো।
আলো কথা থামিয়ে ওর দিকে চেয়ে আছে। লিজা ফুপিয়ে উঠলো। মন দুর্বল ছিল শ্রাবণের কথা ভেবে আরও খারাপ লাগছে। মানুষ ভুল করে যখন সেটা বুঝতে পারে তখন নিজেকে ভীষণ অপরাধী মনে হয়। লিজা কাঁদতে কাঁদতে বলল,
> আমাকে ক্ষমা করে দাও ভাবি। ভাইয়াকে বলে দিবা আমিও ওকে খুব ভালোবাসি। আমার নিজের ভাইয়ের থেকেও বেশি। ও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে বলেই হয়তো আমার উপর থেকে পৃথিবীর সবাই মুখ ফিরিয়ে নিলো। তোমার নামে অনেক মিথ্যা বলেছি। ভালো মানুষের ক্ষতি করতে চাইলে এমনিই হয়। আমি পাপি। পাপিদের পৃথিবীতে না থাকাই ভালো।
লিজা এলোমেলো বকছে। নাক মুখ ফুলে উঠেছে। সব সময় পরিপাটি থাকা মেয়েটার এমন এলোমেলো পোশাক দেখে আলোর ভেতরটা নড়ে উঠলো। মেয়েটা কি করতে চাইছে? আলো ভ্রু কুচকে বলল,
> লিজা কি সব বলছো? ভাইবোনদের মধ্যে মান অভিমান অহরহ চলতে থাকে। বাচ্চাদের মতো কথা বলছো তুমি। ভাবিদের পেছনে ননদেরা লাগবে এটা নতুন কিছু না। প্রতিটা বাড়িতে হয়ে আসছে। ভুল করে ক্ষমা চেয়েছো আমি মেনে নিয়েছি। আমিও যখন তোমার পেছনে লাগবো তখন তুমিও বিরক্ত হবা। বারবার এভাবেই চলতে থাকবে। তারজন্য তুমি এভাবে বলতে পারোনা।
আলো চেষ্টা করছিলো মেয়েটার ভেতরের খবর জানতে কিন্তু হলোনা। লিজা বরং আরও শব্দ করে কাঁদলো। মাথা নাড়িয়ে ভাঙা কন্ঠে বলল,
> আমি মানুষ চিনতে পারিনা ভাবি। ভালো মানুষদের ছেড়ে শুধু খারাপ মানুষদের বিশ্বাস করে ঠকে যায়। তুমি এতো সহজে আমাকে ক্ষমা করোনা। আমার কিছু ভালো লাগছে না।
লিজা অপেক্ষা করলোনা। কোনোরকমে বিদায় নিয়ে নিচে নেমে গেলো। আলো অবাক হয়েছে লিজার এহেন পরিবর্তন দেখে।
*******
বেশ রাত হয়েছে ইশার ঘুমানোর নাম নেই। আলোর চোখে ঘুম নেমেছে। তুলি বাইরে আছে। অভিকদের সঙ্গে কিছু একটা নিয়ে প্লান করছে। আলো ইশাকে কোলে তুলে নিলো। আপাতত তুলির কাছে দিয়ে ঘুমিয়ে নিবে। আগামীকাল বিয়ে। বাইরে গরু জ*বাই হচ্ছে। সাউন্ড বক্সে মৃদু আওয়াজে বিরহের গান চলছে। সেটা নিয়ে চিল্লাচিল্লি করছে তুলি। আলো চুপচাপ ইশাকে ওর কোলে দিয়ে বলল,
> আপু ঘুম পাচ্ছে। আম্মুর হাতে মরিচ। তুমি রাখবে ওকে?
তুলির হাত এগোতে হলোনা। তার আগেই ইশা ঝাঁপিয়ে পড়লো। তুলি দুহাতে ওকে আগলে নিয়ে গালে চুমু দিয়ে বলল,
> তুমি ঘুমাও। ইশু বাবু আজ ফুপির কাছে থাকবে।
আলো হাসলো। কেনো জানি ইশা ওর থেকেও তুলিকে অধিক পছন্দ করে। আলো ফিরে আসলো। চুপচাপ নিজের কক্ষে যাওয়ার সময় হঠাৎ কেনো জানি লিজা কথা মনে পড়লো। তাই নিজের কক্ষে না গিয়ে প্রথমে লিজার কক্ষের সামনে এসে দাঁড়ালো। নিচে সবাই আড্ডা দিচ্ছে অথচ লিজা নেই। আলো নক করলো কয়েকবার।কোনো সাড়াশব্দ নেই। আলো দ্রুত গিয়ে জানালার পাল্লা খোলার চেষ্টা করলো। কপাল ভালো ছিটকিনি দেওয়া ছিল না। কক্ষে মৃদু আলো জ্বলছে। অন্ধকার নেই। আলো সোজা তাকিয়ে চমকে উঠলো। সিলিং ফ্যানের সঙ্গে মেয়েটা ওড়নার সঙ্গে ঝু*লে আছে। কি ভয়ংকর দৃশ্য? সঙ্গে সঙ্গে আলো চিৎকার দিয়ে উঠলো। বুক ধড়ফড় করছে। বাঁচবেতো মেয়েটা?
চলবে