শুকনো বকুলের মালা গাঁথিব পর্ব-০৭

0
160

#শুকনো_বকুলের_মালা_গাঁথিব
#নীহারিকা_নুর
#পর্ব_৭

স্লো পয়েজনিং এর জন্য নুর এর বাবার এ অবস্থা জানতে পেরে নুরের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল। কেউ নিজে নিজে যে এটা করবে না তা শিওর। কেউ নিজের মৃ’ত্যু নিজে এভাবে ডেকে আনেনা। এমন কাজ কে করতে পারে বুজতে এক মুহুর্ত ও দেরী হলো না নুর বা রায়হান সাহেব কারোই। চাচা ভাতিজি একে অপরের মুখ চাওয়া চাওয়ি করল। দুজনের যা কথা হওয়ার চোখে চোখে হয়ে গিয়েছে। ডক্টর এর সাথে আরো কিছুক্ষন কথা বলে বের হলো। ডক্টর এর রুম থেকে বের হতে দেরী হলো নার্স এর ডাক পড়তে দেরী হলো৷ *** নং কেবিন এর পেসেন্ট এর লোকজন কোথায়?

নুর আর রায়হান সাহেব সামনে এসে দাড়ালেন। নার্স জানালো পেসেন্ট এর অবস্থা বেশি ভালো না। নুর দৌড়ে বাবার কেবিনে; প্রবেশ করল। দেখতে পেল রশিদ সাহেব কেমন যেন ছটফট করছেন। নির পাশে বসে বাবার হাত ধরল। এটা ওটা জিজ্ঞেস করল। জিজ্ঞেস করতে লাগল বাবা পানি খাবে। পানি দিব। কি লাগবে বলো।

নুর এর কথার আর জবাব দেয়না ওর বাবা। সে ইতোমধ্যে ইহজগতের মায়া ত্যাগ করেছে।

নুর বাবা বলে এক চিতকার দেয়। নুরের চিতকারে মনে হয় পুরো কেবিন কেপে উঠে। আচড়ে পড়ে বাবার বুকের ওপর। বাবার ওপর কত অভিমান, অভিযোগ না ছিল। মা চলে যাওয়ার পর ঠিকঠাক মতো কথাও বলেনি নুর। সব অভিমান অভিযোগ আজ যেন গলে পানি হয়ে গেছে। এখন শুধু আফসোসই হচ্ছে। বাবা নাহয় ভুল করেই ছিল তাই বলে কি এভাবে বাবাকে দূরে সরিয়ে দেয়ার কোন দরকার ছিল। এই যে বাবা আজ ছেড়ে চলে গেল। এখন কাকে বাবা বলে ডাকবে। সারাজীবন এর জন্য বাবা ডাকার অধিকার আজ কেউ যেন কেড়ে নিয়ে গেল।

আসলে রাগ, ক্ষোভ কখনোই আমাদের জীবনে ভালো কিছু বয়ে নিয়ে আসে না। রাগের বসে করা কোন কাজের ফলাফল কখনোই সুফল বয়ে আনে না। বাবার সাথে শেষ মুহুর্ত গুলো ভালো ভাবেও তো কা’টতে পারত।

রায়হান সাহেব এসে নুরকে বাবার বুক থেকে সরাতে চায়। কিন্তু তা কি আর পারে। নুরের আহাজারিতে ডক্টর, নার্সদের চোখ ও ভিজে ওঠে।

কঠোর হন রায়হান সিকদার। তিনি দুহাতে চোখের পানিটুকু মুছে উঠে দাড়ান। আজ বহু দিন পর তার বন্ধু আমিনুল এর কথা মনে পড়ে। গ্রাজুয়েশন এর পর থেকেই কেমন যেন একটা দূরত্ব বেড়ে গিয়েছে তাদের মধ্যে। মাঝে মধ্যে ফোনে কথা হলেও দেখা হয়না অনেক দিন। যে যে যার যার কর্মস্থলে ব্যাস্ত হয়ে পড়েছে। কিন্তু আজ বিপদে পড়ে বন্ধুর কথা মনে পড়ছে। এজন্যই হয়ত বলে প্রয়োজন ছাড়া কেউ কখনো মনে করে না।

আমিনুল অফিসেই ছিল। কিছু ফাইল দেখছিল। এমন সময় ফোন বেজে ওঠায় নজর বোলায় ফোনের স্কিনে। ফোনের স্কিনে জ্বলজ্বল করছে রায়হান লেখা নামটা। নাম্বার টা ফোনে সেইভ করা থাকলেও কখনো ফোন দেয়া হয় না। আজ সেই নাম্বার থেকে ফোন পেয়ে অবাক প্লাস খুশি দুইটাই হয়। তাড়াহুড়ো করে ফোনটা কানে ধরে।

– কেমন আছিস বন্ধু।

– ভালো নাইরে আমিনুল।

– কি হয়েছে বল তো?

– রশিদ এর কথা মনে আছে তোর?

– হ্যা থাকবে না আবার। ও যে ভাইয়া ভাইয়া করে কত টাকা নামাইছে আমার পকেট থেকে। ওর দুষ্টুমির কথা আজও মনে আছে আমার।

– ও আর নেই।

– নেই মানে কি বলছিস?

– হ্যা কিছুক্ষণ আগেই আমাদের ছেড়ে চলে গেছে।

– কীভাবে কি হলো। হঠাৎ..

– ইট’স আ মা’র্ডা’র কে’ই’স

– কি বলিস। কে করতে পারে

– দেখা কর। ডিটেইলস এ বলছি সব। কেইসটা তোকেই দেখতে হবে। আমি চাই না আমার ভাইয়ের খু’নি বেচে যাক।




আমিনুল এসে সামনাসামনি সব কিছু ডিটেইলস এ জানে। নুর এর সাথে কথা বলে ঝর্নার ফোনে কথা বলা সেই ভিডিও ফুটেজ ও কালেক্ট করে। সেই ভিডিওতে স্পষ্ট ছিল যে ঝর্না কোন কুকর্ম করতে যাচ্ছে। সন্দেহ টা আরো গুরুতর হয় যখন হসপিটালে সবাই উপস্থিত হলেও ঝর্না উপস্থিত হয় না। ঝর্না বেগমকে সন্দেহ করলেও তার বিরুদ্ধে তেমন কোন জোড়াল প্রমান ছিল না। কিন্তু ঝর্না বেগম তার আচরন দ্বারা সন্দেহ টা গাঢ় করতে থাকে।

আমিনুল তার ফোর্স নিয়ে রশিদ সাহেব এর বাসায় যায়। কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখতে পায় গেইটে তালা ঝুলছে। তার মানে ঝর্না বেগম বাসায় নেই। ফোন করে তাকে। ফোন সুইচড অফ। তার মানে দাড়াল ঝর্না বেগম পলাতক। ঝর্না যদি কিছু নাই করত তাহলে পালাল কেন। অবশ্যই সে কোন অপরাধ করেছে। তার সব রিলেটিভ দের বাসায় খোজ নেয়। কোন জায়গায় নেই ঝর্না বেগম।






রশিদ সাহেব নেই আজ প্রায় পাঁচ দিন হতে চলল। আমিনুল তার সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করে যাচ্ছে কিন্তু এর মধ্যে ঝর্না বেগমের কোন খোজ পাওয়া যায়নি। কোথায় গিয়েনগা ঢাকা দিয়ে রয়েছে কে জানে। পরিচিত কারো কাছে যে নেই এটা কনফার্ম।

নুর মেয়েটাও কেমন যেন স্থির হয়ে গিয়েছে। ঢ়েন কথা বলতেই ভুলে গিয়েছে। আর সবার আচরন ঠিকঠাক থাকলেও পাল্টে গিয়েছে খালিদা বেগমের ব্যাবহার। তার ভালোবাসা যেন দ্বিগুন বেড়ে গিয়েছে নুরের প্রতি। এটা কি সত্যিই নুরের প্রতি তার ভালোবাসা নাকি মা বাবা সব হারিয়েছে বলে নুরকে দয়া দেখাচ্ছেন তিনি এটার হিসেব নুর মিলাতে পারছে না। তবে এখন আর সেই হিসাব মিলাতেও চায় না নুর। কোন বিষয়ে মাথা খাটাতে মন চাচ্ছে না। বাবার চলে যাওয়ায় পেছনে নিজেকেও অনেকটা দোষী মনে হচ্ছে কেন যেন। সেদিন যদি ঝর্না বেগমের বলা কথার ভিডিও ফুটেজটা বাবা বা কাকার হাতে তুলে দিত তাহলে হয়ত আজ এই দিন দেখতে হতো না। বাবাও হয়ত বেচে থাকত।

আবার এটাও ভাবে তখন ঝর্না বেগমের বিরুদ্ধে এসব কথা কি বাবা বিশ্বাস করত। হয়ত করত না। ভাবত আমি তাকে পছন্দ করি না বলে তার বিরুদ্ধে ভুল কথা রটাতে চাচ্ছি।

কোন কিছুর হিসেবই যেন মিলছে না। মাঝে মাঝে আমাদের জীবনে এমন কিছু ঘটে যায় যার পেছনে আমাদের কিছু করার থাকে না।

এভাবে দিন কে’টে যেতে থাকে দিন। খালিদা বেগমের ভালোবাসা যেন দিন দিন বেড়েই চলেছে।
নিজের মেয়ে নবনীর থেকেও এখন বেশি ভালোবাসা নুরের জন্য রয়েছে তার। কিন্তু ঝর্না বেগম যে লাপাত্তা হয়েছেন তার কোন খোজ কোনভাবেই মিলছে না। এটা কীভাবে পসিবল৷ সব জায়গায় ফোর্স লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। কিন্তু কেউই খোজ পায় নি। এটা কীভাবে সম্ভব হতে পারে। কোন ভাবেই ট্রেস করা যাচ্ছে না তাকে।

নুর আস্তে আস্তে অনেকটা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে শুরু করেছে। স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে সবচেয়ে বড় ভুমিকা যে খালিদা বেগমেরই রয়েছে এটা বলা বাহুল্য। রায়হান সাহেব ও অনেজ হ্যাপি যে তার ভাতিজি তার কাছে ভালো আছে। তার ওয়াইফ তার ভাতিজির প্রতি অনেক কেয়ারিং।

কিন্তু রায়হান সাহেব এর এই খুশিতে ভাটা সেদিনই লাগে যেদিন খালিদা বেগম আলমারি গেছাতে গিয়ে তার ভিতরে রশিদ এর দেওয়া সেই কাগজটা পায়। সঙ্গে সঙ্গে সেটা নিয়ে ছুটে চলে যায় স্বামীর কাছে।

– এটা কি?

– ঢং বাদ দাও। তুমি খুব ভালো করেই জানো এটা কি। তেমার ওই ভাই হাড়ে হাড়ে একটা শয়তান ছিল। মেয়েদের শুধু বিয়েই করেছে কিন্তু কাউকে তার অধিকার টা ঠিক মতো দেয়নি। মরা’র আগে মেয়ের ভবিষ্যত নিয়ে ভেবে একদম উদ্ধার করে গেছে।

– কিসব আবোল তাবোল বকছ খালিদা।

– ঠিকই তো বলছি। রশিদ যে ম’রবে এটা ও আগেই বুজছিল৷ তাই তো এমন উইল করে গেছে তাইনা। রশিদ ঝর্নাকে এভাবে ঠকাল কেন।ঝর্না তো ওর ছোট বউ।

রায়হান সিকদার ওয়াইফ এর আচরণে অবাক না হয়ে পারে না। একজন খু’নির জন্য তার এত দরদ কোত্থেকে আসল।

#চলবে