শুধু তোমারই জন্য পর্ব-০১

0
719

শুধু তোমারই জন্য -১
শানজানা আলম

বাসে উঠে নীলির মনটা খারাপ হয়ে গেল। একদম পেছনে ছয়সিটে সিট পেয়েছে। কিন্তু তার কিছু করার ছিল না , নীলির দাদুভাই খুব অসুস্থ, হয়তো আর বাঁচবেন না। নীলিকে নাকি গতরাতে খুব দেখতে চেয়েছেন,
আজকে যেতেই হবে।
এটা সকাল আটটার বাস, “শামীম এন্টারপ্রাইজ” বলেই হুট করে বলেও একটা সিট পাওয়া গেল, নীলি নিয়মিত যাতায়াত করে বলে পরিচিত বাস কাউন্টার। নয়তো এই সময়ে নাইট কোচ বন্ধ, কুয়াশা পড়ে বলে। সকালের টিকিট পাওয়া খুব কঠিন। যাত্রীদের খুব চাপ থাকে।
পুরো বাস ভরা লোকজন গিজগিজ করছে।
নীলির মনে হলো, ভুল হয়েছে, কষ্ট করে হলেও সাতটার বাসে যাওয়া দরকার ছিল। কিন্তু তাহলে রওনা দিতে হতো ছয়টারও আগে, অত ভোরে আবার একা একা ধানমণ্ডি থেকে আসবে এটা নিরাপদ মনে হয়নি। মুখ কালো করে নিজের সিটে বসল নীলি।
একটু পরে ঠিক সামনের সিটে একটা ছেলে এসে বসল।
ঠিক ছেলে বলা চলে না , আরেকটু বড় মনে হয়। চেহারায় ভীষণ পুরুষালি একটা ভাব আছে। ঠান্ডার জন্য কালো জ্যাকেট, কালো টুপি, কালো সানগ্লাস, সু, জিন্স, মাফলার পরে আছে , সবই বেশ দামী মনে হলো নীলির। বাবারে বাবা, নীলি একটা সোয়েটার পরা তাতেই বাসে গরম লাগছে, ওনাকে দেখে নীলির একটু হাসি পেয়ে গেল। ছেলেটা কাঁধের ব্যাগটা উপরের বক্সে রেখে বসল।
একটু পরে কাউন্টারের সাদেক ভাই এগিয়ে এলো, নীলিকে, “আপা, কোন সমস্যা নাই তো?” জিজ্ঞেস করার সাথে সাথে ওই সামনে বসা ছেলেটাকে সালাম দিলো।ছেলেটা বোধহয় ইশারায় কিছু একটা বলল, নীলি বুঝতে পারলেও দেখতে পেল না।
নীলি বলল, “ভাই মহা সমস্যা, এই সিটে এত দূর যাবো কিভাবে বলেন তো, এরপর তো ঝাক্কি দিতে শুরু করবেন,
দেখেন না একটা সিট ম্যানেজ হয় কিনা অন্য জায়গায়? ”
সাদেক নামের লোকটি উত্তর দিলো, “না আপা, আজকে তো ফাঁকা নাই, কিন্তু পেছনে চার জন দিছি সমস্যা হবে না।
ছয়জন বসবে না।”
নীলি কি আর করবে, বসে পড়ল। তখন ওই কালো জ্যাকেট পরা ছেলেটি বললো, সাদেক, ওনাকে আমার সিটটা দিয়ে দাও, আমি পেছনে যাই।
তারপর নীলির দিকে তাকিয়ে বলল, ম্যাডাম, আপনি এখানে আসুন!
নীলি বলল, না থাক, ঠিক আছে। আপনার সিটটাও খুব সুবিধার নয়, চাকার উপর।
নীলির কথা শুনে ছেলেটি হেসে ফেলল। তারপর বলল, আচ্ছা আপনার সমস্যা মনে হলে আমাকে ডাকবেন। সিট পাল্টে বসা যাবে।
নীলি মনে মনে বলল-হু, এরপর এই অজুহাতে আমার ফোন নম্বর নিতে চাইবেন, আলাপ জমাবেন তাই তো, সেটা হচ্ছে না। নীলি নিজের সিটে বসে পড়ল আবার।
সাদেক ভাই ওই ছেলেটিকে বলল, আবির ভাই, আপনে এইটা কি কাজ করলেন, আপনে সে সদর পর্যন্ত যাবেন, কালকে জানাবেন না, বি লাইন দিতাম না কাউরে।
ছেলেটি হেসে বললো, আমিও জানতাম না, ভোররাতে জেনেছি যেতে হবে!
এই কথোপকথন শুনে নীলির মনে হলো-বাহ, ছেলেটির ভয়েস বেশ সুন্দর!
একটু পরে নীলির ফোন বাজলো , বাবা ফোন করেছে।
নীলি রিসিভ করে বলল,
-হ্যালো, জি আব্বু, বাসে উঠেছি।
-না ভাল সিট পাইনি, সমস্যা নাই, একদিনই তো।
-দাদাভাই কেমন আছে এখন?হাসপাতালে নিবা আজকে?
কথা শেষ করে ফোন রাখল নীলি।
এবার আবিরের ফোন বাজল, কাকে যেন বলল, ” আমি জরুরি কাজে নানাবাড়িতে যাচ্ছি, হ্যা মাও আছে ওখানে।………না, মা এখন ফিরবে না মনে হয়, সপ্তাহ খানেক থেকে তারপর……
আমি কালই ফিরব, যশোর থেকে এয়ারটিকিট করা আছে, আরে আমার ফিরতেই হবে, কাল রাতে আমার ব্যাংককের ফ্লাইট।”
নীলি মনে মনে বলল, বিদেশ যাবি যা, ফোনে চিল্লাইয়া বলার কি আছে, মানুষকে শোনানো আর কি! লোকটার কথায় মনে হচ্ছে ব্যবসায়ী, কি ক্লায়েন্ট ক্লায়েন্ট বলছিল, নীলি কানে হেড ফোন গুঁজে দিলো।
মাওয়া ঘাটে এসেই বাস সহজেই ফেরিতে উঠে গেল আজকে। সামনের বসা কালো জ্যাকেটওয়ালা বাস থামা মাত্রই নেমে চলে গেল। নীলি কিছু সময় বসে ভাবল, কতক্ষণ বসে থাকবে, তার চাইতে তিনতলা থেকে ঘুরে আসা যাক। সাথে কেউ থাকলে ভাত খেয়ে নেওয়া যেত। কিন্তু একা একটা মেয়ে কোথাও খাচ্ছে, এই দৃশ্যের সাথে বাংলাদেশের মানুষ এখনো পরিচিত হতে পারেনি। আশেপাশের সবাই হা করে তাকিয়ে থাকে, যেন “চলিতেছে সার্কাস”। নীলি আগে একবার খেয়েছিল, কিন্তু সবার চাহনি দেখে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এরকম আর খেতে বসবে না। নীলি সোজা ফেরীর তিনতলায় উঠে গেল। একটা চিপস নিয়ে জানালার পাশে কিছুক্ষণ বসল। জানালা দিয়ে বাইরের জায়গাটা দেখা যাচ্ছে। কিছুক্ষণ পরে সেই কালো জ্যাকেট ওয়ালা এসে জানালা আটকে দাঁড়াল।
নীলির প্রচন্ড মেজাজ খারাপ হলো। কিন্তু কি আর বলা যাবে, ও উঠে বাইরে চলে গেল। এখান থেকে বের হতে হলে ওনার সামনে দিয়ে যেতে হবে। একটু খানি চিপা জায়গা, একজন হাঁটা যায় না ঠিকভাবে।
নীলি কিছুটা দূরত্বে দাঁড়াল, লোকটি চলে গেলে নীলিও নামবে। কিন্তু কালো জ্যাকেটওয়ালা নামছে না। বরং রেলিং দুহাতে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। নীলি আড়চোখে দেখল, ঠোঁট দিয়ে ধোঁয়া ছাড়ছে, ডানহাতের তর্জনী আর মধ্যমার মাঝে একটা সিগারেট। এখন সকাল দশটা বাজে, এই সময়ে কেউ সিগারেট খায়!
আবির নীলির দিকে খেয়াল করেনি। দেখেছে একটা মেয়ে কিছু দূরে দাঁড়িয়ে আছে। চট করে চোখ পড়তে দেখলো নীলি আড়চোখে ভুরু কুঁচকে আবিরকে দেখছে। কিন্তু আবিরের একটা বিষয় খুব ভালো লাগলো। ফেরীর তিনতলায় প্রচন্ড বাতাস। এই বাতাসে পতপত করে মেয়েটার ওড়না আর চুলগুলো উড়ছে। গঠন পাতলা পাতলা হলেও মেয়েটার মাথা ভরা চুল। অদ্ভুত ভাবে চুলের প্রতি আবিরের একটা দুর্বলতা কাজ করে। তবুও নিতান্তই অপরিচিত আর বাচ্চা একটা মেয়ের চুলের দিকে তাকিয়ে থাকাটা আবির সমীচীন মনে করলো না।
নীলি তাকিয়ে দেখল, কাওড়াকান্দি ঘাট দেখা যাচ্ছে। আর অপেক্ষা না করে তাই সে ধীরে সুস্থে নেমে গেল।
নেমে যাওয়ার সময় আবিরের মুখে বাতাসে উড়ে এসে নীলির চুল ছুঁয়ে গেল। কেমন একটা শিরশিরে অনুভূতি, আজব তো, আবির তো মেয়েটাকে একদমই চেনে না!
আড়াল থেকে হয়তো অদৃশ্য কেউ মুচকি হাসলেন।

★★★
বাস বাদামহাটি পৌছাল তিনটার দিকে, ফেরীতে বেশি দেরী হয়নি। বাস থেকে নেমে ভ্যানে করে নীলি চলে গেল নীলিদের বাড়িতে, আর আবির আবিরের নানাবাড়িতে।
অদ্ভুত ঘটনা অপেক্ষা করছিল ওদের জন্য।
নীলির দাদাভাই কয়েকদিন ধরে শয্যাশায়ী, তাকে দেখতে এসেছিলেন আবিরের নানা। তারা দুজন বাল্যবন্ধু, তাদের নাকি আগেই ঠিক করা ছিল, তারা দুজন নিজেদের নাতি নাতনি বিয়ে দিবেন। এখন নীলির দাদু তার নাতজামাই দেখতে চান। এদিকে আবিরের মাও নানাবাড়িতে। তাকে মোটামুটি জানানো হলে, তিনি আবিরকে ফোন করে আসতে বলে দিয়েছেন। যদিও তিনি নীলিকে দেখেননি কিন্তু ওর পরিবার, বাবা মা পূর্বপরিচিত হওয়ায়, তার কোন সমস্যা নেই।
বাঁধ সাধলেন নীলির মা নিলুফার বেগম। নীলি এখনো তৈরি না বিয়ের জন্য। মাত্র অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পড়ছে, থার্ড ইয়ারে উঠবে সামনে। ওকে কিছু না জানিয়ে বিয়ে দিলে মারাত্মক ধাক্কা খাবে। তাছাড়া নীলি তার বেশি বয়সের অনেক সাধনার একমাত্র সন্তান। নীলিকে নিয়ে তার অনেক স্বপ্ন। তিনি কিছুতেই রাজী নন বিয়েতে।
নীলির বাবা গম্ভীর মুখে বললেন,আমার আব্বার কথার দাম নাই তোমার কাছে?
নীলির মা বললেন, ছেলেকে চিনো তুমি?নীলির চাইতে কত বড় হবে, এখনকার ছেলেমেয়ে, মানতে চাইবে? পরে অশান্তি হবে, আর তুমি না চাকরিজীবী ছেলে খুঁজো, এই ছেলে তো ব্যবসা করে!
-ব্যবসা করলেও অনেক কিছু করেছে, চিন্তা করছ, এইটুক ছেলে, শামীম এন্টারপ্রাইজ এর শেয়ার আছে!
নীলির মা মুখ কালো করে রইলেন।
নীলি কিছু বলারই সুযোগ পেল না। তার দাদুভাইয়ের সামনে রাত দশটায় তার বিয়ে হয়ে গেল। রাতে তার শরীর আরো খারাপ হওয়ায় তাকে নিয়ে খুলনা যাওয়া হলো। বাড়ির ছেলেরা সেদিকে চলে গেল। আবিরের মা নীলির মাকে বললেন, “আপা, আপনাদের এই কঠিন সময় কাটুক, পরে আয়োজন করে বউ নিবো।আমারও তো প্রস্তুতি নেই!”
নীলির গলায় একটা একভরি স্বর্নের চেইন পড়িয়ে দিয়ে তারাও চলে গেলেন!
আবিরের কাছে বিষয়টা খুব দ্রুত একটা বিজনেস ডিলের মতো মনে হলো! বউয়ের সাথে দেখা করার সুযোগ পেল মিনিট পনেরোর জন্য। নীলি তখনো কাঁদছিল, কি হচ্ছে এসব! আবিরকে দেখা করাতে নিয়ে এলেন নীলির ছোটচাচা। আবির ” এক্সকিউজ মি” , বলায় নীলি পেছন ফিরে দেখল, আবির! সেই কালো জ্যাকেটওয়ালা!
আবিরও ভীষণ চমকালো, সকালে বাসে আর ফেরীতে যে মেয়েটাকে দেখল, সেই মেয়েটা!
নীলির আসলে কথা বলার মতো অবস্থা ছিল না।
আবির শুধু নিজের কার্ডটা দিয়ে চলে এলো।
আবিরের আগেই টিকিট করা ছিল, তাই ওকে পরদিন সকালেই চলে যেতে হলো। নীলির ফোন নম্বর থাকলেও আর কথা বলা হলো না। আর নীলির পরীক্ষা সামনে তাই দাদুভাই একটু সুস্থ শুনে ও একদিন পরে ঢাকায় চলে এলো। সব কিছু এত দ্রুত ঘটে গেল, কেউ কিছু বুঝতেই পারল না।

★★★
নীলি দুদিন পর বাড়ি থেকে ঢাকায় ফিরেছে। ওরা আটজন মিলে একটা ফ্ল্যাটে থাকে। দুদিনে নীলির ঘুম হওয়ার কথা ছিল না কিন্তু অদ্ভুত ভাবে মাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়েছে।
নীলির মা মেয়ের সমস্যা বুঝেছেন। নীলি বিষয়টা মেনে নিতে পারেনি। ঘুমের মধ্যে কেঁপে কেঁপে উঠেছে।
নীলুফার বেগম ঠিক করেছেন, বিষয়টা এতো সহজে তিনি মেনে নিবেন না। নীলি তার বড় আদরের মেয়ে, অনেক যত্ন করে ওকে এতোদূর এনেছেন।
নীলির শাশুড়ি মানে আবিরের মা ফোন করেছিলেন নীলির সাথে কথা বলার জন্য। তিনি বুঝিয়ে বলেছেন, আপা আমার মেয়েটার এখনো মন তৈরিই হয়নি বিয়ের জন্য, ঢাকা থেকে এলো, জোর করে সই করিয়ে বিয়ে দিয়ে দিলাম, একটু সময় দেন ওকে নিজে থেকে মানিয়ে নেওয়ার।
আবিরের মা বলেছেন, জি আপা, জানি তো, ওর নাকি পরীক্ষা সামনে, ও পরীক্ষা দিক, আমার বাসা তো উত্তরা, ওর ভার্সিটি ধানমন্ডি, দেখি আবিরের সাথে কথা বলে, কি করা যায়, কবে অনুষ্ঠান করা যায়।
নীলির মা কথা বাড়াননি, আপাতত আটকানো গেল।
মেয়েটা ঝিম মেরে আছে। একদিন পরে বললো, মা টমেটো দিয়ে ট্যাংরা মাছের ঝোল খাবো, আর তালশাঁসের মোরব্বা বানাও। নীলির মা আয়োজন করে খাওয়ালেন। মেয়েকে খাওয়ানোর দিন শেষ, এরপরে হয়ত এত আসতেও পারবে না, আবিরের বাসা ঢাকায়ই।
ঢাকায় ফিরে বাসায় ঢুকতেই মনি বললো, নীলিবুড়ি, তুই এমন চকচকে হয়ে গেলি কিভাবে, বিয়ে টিয়ে হইছে নাকি!
নীলির বুক কেঁপে উঠল! বুঝলো কিভাবে মনি, কোন তো পরিবর্তন হয়নি! নীলির মা বলে দিয়েছেন কাউকে কিছু না বলতে। এখনই বলার দরকার নেই, সময়মতো সবাই জানতে পারবে।
তবে ঢাকায় ফিরে নীলির ভালো লাগলো। দু-তিন দিনে নীলি স্বাভাবিক হয়ে গেল, ক্লাশে যেতে লাগলো, যেন কিছু হয়ই নি।
নীলির মায়ের মাথায় চিন্তা উঁকি দেয়, আবেগের বসে মেয়েটাকে বিয়ে দিয়ে দিলো সবাই। কি যে হবে শেষ পর্যন্ত!
আবির ব্যস্ত মানুষ, কিছু বুঝে ওঠার আগেই ব্যাংককের ফ্লাইটে উঠতে হলো। খুবই জরুরি এই ডিল টা।
দুটো ক্লায়েন্ট মিটিং শেষ করে রেস্টুরেন্টের বারান্দায় এসে দাঁড়ায় আবির। এতক্ষণ কিছু মাথায়ই আসেনি, এখন নীলির কথা মনে পড়ছে। কি থেকে কি হয়ে গেল, মেয়েটাকে ভালো করে দেখাও হয়নি, সে নাকি বউ!
বউ সাজানো হয়েছিল কিনা, লাল একটা শাড়ি তো পরা ছিল মনে হয়, নাহ মনে নেই, মনে আসছে বাসে দেখা মাথায় নীল ওড়না দেওয়া মায়া মায়া মুখটা। মেয়েটা বেশ সুন্দরী, এবং বয়স কম। তার থেকে বেশ খানিকটা কম।
এডজাস্ট করতে পারবে তো!
কিছুক্ষণ পরে আবিরের বন্ধু এবং বিজনেস পার্টনার রিশাদ এসে পাশে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো, কি হয়েছে তোর, একটু অন্যমনস্ক?
-নাহ, কিছু না, এমনিই!
-তোকে এত অন্যমনস্ক দেখিনি আগে! এবার একটা বিয়েশাদি কর।
বিয়ের কথা শুনে হাসলো আবির , তারপর বললো, একটা মজার কথা শুনবি?
-বল
-আমার বিয়ে হয়ে গেছে!!
-হায় হায়, কি বলিস কবে, একা করছ নাকি? কোথায়? ওই যে মেয়েটার সাথে দেখা করলি ওইটা না কি বাসা থেকে দিছে? ভার্সিটির সেই জুনিয়রটা না তো!
আবির হাসতে হাসতে বলল, একে একে উত্তর দিচ্ছি,
এক, নিজে করিনি, মা বিয়ে দিয়েছে, নানাভাই তাকে প্ররোচিত করেছে নিজের বন্ধুর নাতনিকে পুত্রবধূ করতে। আপতত কবুল বলে সই করেছি, বউ দেখিও নি৷আর বউ আমার থেকে দুই হালি ছোট!
-বলিস কি! দেখি ছবি?
-ছবি নাই!
–ফেসবুক বের কর!
-ফেসবুক আইডি জানি না!
-এইটা তো ২০১৯ সাল মামা, মনে হয় ১৯৯০ মনে করতেছ নাকি!
–না রে, সত্যিই জানি না।
-ফোন নম্বর?
– হ্যা ফোন নম্বর আছে।
-দে কথা বলি?
–ধূর, আমিই ফোন করি নাই এখনো!
-আচ্ছা নাম্বারটা দে, ফেসবুকে খুঁজে বের করি! নাম্বার সেভ করতে অটো সাজেশন আসার কথা, তোর আসেনি?
–দেখিনি তো!
-দেখ দেখ!
-বাদ দে তো, পরে দেখবো! তুই বিল পে কর।
আমি মা কে ফোন করি একটু!
-ওক্কে, কর, ছবি বের করলে দেখাস কিন্তু!
কি আশ্চর্য, আবির ইচ্ছে করেই ছবি বের করল না রিশাদের সামনে। আগে নিজে দেখবে, তারপর মনে হলে দেখাবে, নিজের বউয়ের ছবি।এভাবে আরেকজনকে দেখাতে মান চাইল না। মাত্র কয়েক মিনিটে মেয়েটা বউ হয়ে গেছে আবিরের। এত দিনের বন্ধুর চাইতেও কোথাও আপন!
ফেসবুকে একটা সাধারণ ছবি দেওয়া নীলির। আবির অনেকক্ষণ দেখল। তারপর মাকে ফোন করলো!
-মা, কেমন আছো? ঢাকায় ফিরেছ? ওই দাদুর খবর কি?
-ওই দাদু কিরে, দাদাভাই বল, ভালো আছে, নীলির সাথে কথা হয়নি তোর?
–না, ফোন করিনি! আর কি ফোন করবো, বাচ্চা একটা মেয়েকে ধরে বিয়ে দিয়ে দিলে!
–এটাই তো ভালো তোর জন্য, তোর কথা শুনবে!
-উল্টোও হতে পারে, দেখা গেলো কোন কথা শুনলো না, এডজাস্ট হলো না!
-এসব বলে না আব্বা, সব ঠিক হবে, বিয়ে এরকমই হয়!
তুই তো আগে দেখিস নাই, মেয়েটা কিন্তু মিষ্টি, পড়াশোনায় ও ভালো।
কিন্তু ওর মা বললো, রান্না টান্না পারে না। আমি বলছি, ওসব শিখে ফেলবে!
-ধূর, ওর কি রান্না করা লাগবে নাকি!
–আরে তুই কি তোর বউকে পটের বিবি সাজিয়ে রাখবি??
বলে মা হাসল!আবিরও হাসল।
আবির কথা শেষ করে ফোন রাখলো! পটের বিবির জন্য কিছু কেনাকাটা করা যাক। রিশাদকে ডেকে ছবি দেখাল।
রিশাদ হাসতে হাসতে বললো, তুই না বলতি বউয়ের একটু ম্যাচিউরিটি দরকার, এ তো চাবি দেওয়া পুতুলের মতো হবে।
আবিরও হাসলো, পটের বিবি বা চাবি দেওয়া পুতুলের কিন্তু কথা বেশ শক্ত, বাসে সিটটা নেয় নি। বলেছিলো “আপনার সিটটাও সুবিধাজনক না”। আবির ঘোরাঘুরি করে বেশকিছু শপিং করে ফেলল নীলির জন্য।

চলবে