শুভ্র রঙের প্রেম পর্ব-২৩+২৪

0
1956

#শুভ্র_রঙের_প্রেম
#রুবাইদা_হৃদি

পর্বঃ২৩
মরভূমির মতো চারদিকে ছায়া বিহীন মনে হচ্ছে৷ আমার ভয়ে আত্মা উড়ে যাওয়ার অবস্থা৷ আশেপাশে তাকালাম দেখি আম্মু তাকিয়ে আছে আর সামনে উনি৷ ঝড়ের পূর্বাভাস বাতাসে৷ আমি কাঁদো কাঁদো চোখে উনার দিকে তাকিয়ে বলার চেষ্টা করলাম,’ আপনি লুকিয়ে পরুন নয়তো বলে যান আমি স্বপ্ন দেখছি৷ ‘
ভয়ার্ত চোখে নীতি আর রাহাতের দিকে তাকাতেই দেখলাম ভাবেলাশীন দাঁড়িয়ে আছে ওরা ৷ আম্মু এগিয়ে আসছে আমাদের দিকে আমার ইচ্ছা হচ্ছে ছুটে পালিয়ে যাই৷ কাল আসমান সমান সাহস ছিলো আর আজ উনাকে দেখেই ফুঁস করে হাওয়ার তালে মিশে গেছে৷ আম্মু আমার দিকে সন্ধিহান চোখে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বলল,
–‘ তুমি কি ভদ্রতা ভুলে গেছো হৃদিয়া?? ‘
আমি প্রশ্নসূচক চোখে তাকালাম৷ অভদ্রতামি তো করি নি৷ তবে ভদ্রতার প্রশ্ন আসছে কেন?? হেল্প মি আল্লাহ! কেলেংকারী হওয়া থেকে বাচাও৷ রাগ লাগছে উনার প্রতি৷ বাড়ি বয়ে আসার কি দরকার??
–‘ সালাম দেওয়া কি তোমায় শিখিয়ে দিতে হবে?? ‘

–‘ আ..আ..আসলামু আলাইকুম৷ ‘ আমি কেঁপে উঠে বলতেই উনি গম্ভীর ভাবে সালামের জবাব দিতেই আম্মু মুখে হাসি টেনে বলল,
–‘ হৃদিয়া নীতি, রাহাত আর! তোমার নাম কি বাবা?? সেই তিন বছর আগেও জানা হয় নি৷ ‘

–‘ মেহেরাব হোসেন স্নিগ্ধ! ‘ উনি মুচকি হেসে উত্তর দিলেন৷ আমি আরেকদফা অবাক হলাম৷ তিন বছর?? তিন বছর আগে সে না হয় আমাকে দেখেছে কিন্তু আম্মুকে? উফফ! দুনিয়া এতো ঘুরানো প্যাচানো কেন?
আমার অবাক চাহনী দেখে আম্মু আমার দিকে তাকিয়ে বলল
–‘ মতিঝিল যাওয়ার সময় রাস্তায় মাথা ঘুরে পরে গিয়েছিলাম মনে আছে তোর তিন বছর আগে?? ‘
আমি ভাবলাম গভীর ভাবে৷ রোজার সময় রোজা থেকে আম্মু মতিঝিল যাচ্ছিলো মামার বাসায় ইফতারের দাওয়াত দেওয়ার জন্য৷ অতিরিক্ত গরম আর ক্লান্তিতে রাস্তার মাঝে অজ্ঞান হয়ে পরে যায় পরে আমাদের হসপিটাল থেকে আম্মুর মোবাইল থেকে কেউ একজন ফোন করে ইনফর্ম করে আমাদের৷ মনে পরতেই আমি পূর্ণ দৃষ্টি মেলে বললাম,
–‘ ঘটনার সাথে উনার সম্পর্ক কি আম্মু?? ‘

–‘ বলেছিলাম তো, একটা ছেলে আমাকে হসপিটালে নিয়ে যায় আর এই সেই ছেলেটা৷ আমার জ্ঞান ফেরার পর আমার কাছে মোবাইল ব্যাগ সব বুঝিয়ে দিয়ে বেরিয়ে যায়৷ ‘

আমি বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে আছি সাথে উনিও৷ গভীর ভাবে ভাবছেন উনি৷ একহাতে মাথার চুল গুলো আলতো স্পর্শ করে অনেকক্ষণ পর বললেন,
–‘ ওইদিন রাতেই আমার ফ্লাইট ছিলো ইউরোপ যাওয়ার জন্য চট্রগ্রাম এয়ারলাইন্স থেকে আর আমি ছিলাম ঢাকায় তাই তাড়াহুড়ো করেই একপ্রকার বেরিয়ে গিয়েছি৷ আ’ম সো সর‍্যি আন্টি হাতে সময় থাকলে আমি আপনাকে বাসায় পৌছে দিয়ে যেতাম সাথে আমার কাঙ্খিত মানুষটাকে সেদিন পেয়েও যেতাম৷ ‘

–‘ মানে?? কার কথা বলছো বাবা?? ‘ উনি আম্মুর কথা শুনে বিচলিত হয়ে পরছেন৷ আমি পরিস্থিতি সামলানোর আগেই নীতি বলল,
–‘ আন্টি খিদে পেয়েছে৷ তোমার হাতের খিচুড়ি না খেয়ে একদম যাবো না৷ ‘

–‘ তোমরা হৃদিয়ার সাথে যাও আমি এখুনি আসছি৷’
আম্মু চলে যেতেই আমি রাগী দৃষ্টিতে তিনজনের দিকে তাকালাম৷ আমার দৃষ্টি দেখে তিনজন একেকজনের মুখের দিকে তাকাচ্ছে৷ রাহাত পিছিয়ে গিয়ে বলে উঠলো,
–‘ আমি কিছু জানি না দোস্ত,এই ই.. থুক্কু স্নিগ্ধ স্যার ধূর ভাইয়া আরে না দুলাভাই আমাদের নিয়ে এসেছে৷ ‘

–‘ কি বলে ডাকবি সেটা আগে ঠিক কর ফাজিল৷ ‘ নীতি রাগী স্বরে বলতেই রাহাত দাঁত বের করে হেসে উঠলো৷ আমি সেদিকে পাত্তা না দিয়ে কিচেনে উঁকি দিয়ে দেখলাম আম্মু দাঁড়িয়ে বিথীর সাথে রান্না নিয়ে আলোচনা করার মাঝে আমাদের দিকে তাকাচ্ছে৷ আমি উচ্চস্বরে ডেকে বললাম,
–‘ আম্মু সবাইকে নিয়ে ছাদে যাচ্ছি তুমি খাবার পাঠিয়ে দিয়ো বিথীকে দিয়ে৷ ‘

আম্মু অনুমতি দিতেই আমি নীতির হাত ধরে রাহাত আর উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,’ চলুন আমার সাথে৷ ‘
ছাঁদে এসে দাঁড়াতেই তিনজন ভেজা বেড়ালের মতো দাঁড়িয়ে আছে৷ উনি শার্টের উপরের বোতাম দুটো খুলে দিয়ে হাত দিয়ে বাতাস করতে করতে রাহাতের দিকে তাকিয়ে বলল,
–‘ খুব গরম পরেছে তাই না রাহাত?? চলো আমরা উত্তর সাইডে গিয়ে দাঁড়াই ওখানে ঠান্ডা বাতাস আছে৷ এখানে যা গরম সহ্য হচ্ছে না আর৷ ‘
রাহাত সম্মতি দিতেই পাঁ বাড়াতেই আমি হুংকার ছেড়ে বললাম,
–‘ এক পাঁ নড়বেন না কেউ৷ ‘
আমার কথা শুনে কাঁচুমাচু করছে সব৷ আমি উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
–‘ আপনার সাথে এই দুটোকেও দলে টেনেছেন বুঝি? আর আম্মুকে চিনেন আগে বললেন না কেন?? কি চলছে এইসব? ‘

–‘ বেমালুম ভুলে গিয়েছি৷ আন্টির আমার চেহারা মনে না থাকলে এই বিষয়টা অজানাই থেকে যেত৷ ‘
আমার নজর মিইয়ে গেলো৷ আমি কন্ঠের খাদ নামিয়ে বললাম,’ পরিচয় দিতেন কি বলে যদি আম্মুর সেদিন উপকার না করতেন??’
আমার প্রশ্ন শুনে আবারও একে অপরের দিকে তাকাচ্ছে সবাই৷ আমি উত্তরের অপেক্ষা না করে আবারো বললাম,
–‘ ভাগ্যিস আপনি সেই উপকার করা মানুষটা ছিলেন না হলে আপনার আজ ইন্টারভিউ দিতে হতো আম্মু কাছে৷ কি বিশ্রী ব্যাপার স্যাপার৷ কাল আমি বিয়ের ক..’

–‘ বিয়ে? কার বিয়ে৷ একদিনে বিয়ে টিয়েও হয়ে গেলো তোর? ভাই তো অকালেই বিধবা হয়ে
গেলো৷ ‘
রাহাতের কথা শুনে সবাই ওর দিকে তাকালো এইবার আমি মুখ কাঁচুমাচু করে বললাম,
–‘ কাল কিছু না ভেবেই বাসায় এসে আম্মুকে জানিয়েছি আমি একজনকে ভালোবাসি এবং তাকেই বিয়ে করবো৷ ‘

–‘ হোয়াট! তুমি পাগল?? তোমায় এই পাকনামি কে করতে বলেছে?? ‘

–‘ কেন আপনি বিয়ে করবেন না আমায়?? ওহ বুঝেছি আপনার তো ফিলিংস নেই আমার প্রতি৷ ভুল হয়েছে আমার৷ কাল থেকে আম্মুর সাথে বিয়ে নিয়ে লাগাতার ঝগড়া করে গেছি সব ভুলে আর আপনি বলছেন পাকনাকি! ওকে ফাইন আমার বিয়ের দরকার নেই৷ আপনি থাকবেন আপনার মতো৷’

–‘ শ্বাস নাও দেন আবার শুরু করো আমি পালিয়ে যাচ্ছি না৷’

কাঠখোট্টা রোদের মাঝে কার্ণিশে ঠেস দিয়ে দাঁড়ালেন উনি৷ চুল গুলো ঘামে ল্যাপ্টে আছে কঁপালে বিন্দু বিন্দু ঘামের সাথে৷ সাদা ফর্মাল শার্টের হাতা গুটানো৷ কালো রঙের ঘড়িটা চিকচিক করছে হাতে৷ রোদের হাজার উত্তাপ এক নিমিষের নজরে আমার কাছে ফিঁকে মনে হলো৷ আমি শুকনো ঢোক গিলে বলার মতো আর কিছুই খুজে পেলাম না৷ আমাদের পাশ কাটিয়ে নীতি আর রাহাত উত্তর সাইডের রাখা দোলনায় বসে কিছু একটা নিয়ে সিরিয়াস আলোচনা করছে৷
–‘ লজ্জা গুলো সমুদ্রে মিশিয়ে দিয়ে এসেছ ? আম্মুর সামনে ফ্রেন্ডদের সামনে বিস্তর আলোচনা করছো সব নিয়ে৷ ‘

–‘ লজ্জা যখন প্রয়োজন পরবে লজ্জায় একদম লাল হয়ে যাবো আপাতত লজ্জা নামক বস্তু আসছে না৷ এখন আপনি বলুন কাহিনি কি??’

আমি সরু চোখে প্রশ্ন করতেই উনি দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন৷ কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বললেন,
–‘ ছোটবেলায় থেকে আমার বাবা আর মায়ের মাঝে সম্পর্ক ছিলো সরু সুতোর মতো৷ একটু হাওয়া লাগলে দুলে উঠতো সব কিছু৷ প্রতিদিন বাবার রাগারাগি মায়ের কান্না ছোট এই আমি বিষিয়ে গিয়েছিলাম৷ বাবা ইউরোপ সেটেল হওয়ার জন্য অফিস থেকে বারবার এপ্লাই করছে আর ওই সময় মায়ের হার্টের ব্লক ধরা পরে৷ চিকিৎসা করানোর জন্য পর্যাপ্ত টাকা গুলো বাবা ভিসার কাজে লাগিয়ে দেয়৷ আমি যখন ক্লাস সেভেনে উঠলাম তখুনি বাবার আমেরিকা যাওয়ার সব কনফার্ম হলো৷ বাবা নিজ স্বার্থের জন্য আম্মুকে একা ফেলে চলে যায়৷ আমার নানু মারা যাওয়ার পর মামাদের সাথে যোগাযোগ নেই বললেই চলতো৷আম্মুর অসুস্থতা পাশে এসে দাঁড়ায় আমার ফুঁপি পরশ স্যার যিনি আমার ফুঁপা৷ পরশ স্যার আগে রাঙামাটি ছিলেন তারপর চট্টগ্রাম ভার্সিটির শিক্ষক ছিলেন জানো?? ‘
আমার দিকে ছুড়ে দেওয়া প্রশ্নে আমি দু দিকে মাথা দুলালাম৷ উনি আবার বলা শুরু করলেন,
–‘ বাবা আমেরিকা যাওয়ার পর সংসারের জন্য টাকা দিতো৷ মা ইচ্ছা করেই চিকিৎসা করাতো না৷ শুধু আমায় ডেকে বলতো,’ তোর টাকায় চিকিৎসা করাবো আমি৷ কোনো স্বার্থপরের টাকায় না৷ যে নিজের সুখের জন্য আমাদের ফেলে চলে গেছে৷ ‘ মা নিজেকে গুটিয়ে নেওয়া শুরু করে সেই সাথে আমার ছোট মতিষ্কের উপর চাঁপ বাড়তে থাকে৷ যেখানে মায়ের যত্ন দরকার ছিলো সেখানে নিজের যত্ন আর মায়ের যত্ন আমায় নিতে হতো৷ পরশ স্যারের সিফট হয় রাঙামাটি৷ আন্টিও চলে যায় আমাদের ছেড়ে৷ আরো একা হয়ে পরি আমি৷ ক্লাস নাইনের একটা ছেলের ম্যাচিউরিটি কত টুকু হয় তোমার জানা আছে?? যেখানে প্রত্যেক টা ছেলে স্বাধীন ভাবে ঘুরে বেড়াতো আর আমি ঘরের কোণে হয় অসুস্থ মায়ের পাশে বসে চিন্তায় মগ্ন থাকতাম নয়তো পড়ার টেবিলে মুখ গুজে থাকতাম৷ ডিপ্রেশন নামক শব্দটার সাথে তখন থেকেই সাক্ষাৎ হয় আমার৷ হঠাৎ করেই আমার বোর্ড এক্সামের আগে মায়ের অসুস্থা বেড়ে যায়৷ একদিন সকালে রুমে গিয়ে ডাকতেই দেখি আমার মা আর উঠে বসে না৷ হাজার বার ডেকেও সারা পাই নি৷ বাবাকে ফোন দিতেই সে আসে নি৷ আমি একা,চারদিকে আমি একা৷ সেই একা একজন আমি ধুকে ধুকে মরছি৷ ফুঁপি আর পরশ স্যার আমার পাশে থাকলেও উনারা আবার রাঙামাটি ফিরে যায়৷ আমি বয়েজ হোস্টেল থেকে এসএসসি লেভেল শেষ করি৷ বাবা ফোন দিতো প্রত্যেক দিন তার প্রতি একটা চাঁপা অভিমান আর আমার মায়ের করুন পরিণতি আমাকে আঁকড়ে রাখতো বাবার সাথে মিশতে৷ হতাশার চরম পর্যায়ে আমি মেন্টালি সিক হয়ে পরি৷ মা’য়ের কথা গুলো কানে বাজতো৷ আমি পারি নি নিজের টাকায় মা’কে চিকিৎসা করাতে৷ আমি পারি নি আমার মা’কে সুখ দিতে৷ মাথায় চিনচিন ব্যথা সব সময় হতে থাকে৷ আমার লাইফে কখনো কেউ আসে নি না এসেছে ফ্রেন্ড না এসেছে স্পেশাল কেউ৷ কাউকে সহ্য হতো না আমার৷ বাবা টাকা পাঠাতো আমার হাত খরচের সেই সাথে পড়াশোনার জন্য৷ মাঝে মাঝে নিজের বিষন্নতার জন্য মনে হতো সুইসাইড করি৷ তবে নিজেকে সামলে সাইকোলজিস্ট দেখাই৷ সে সাজেস্ট করে,সবার সাথে মিশতে,ঘুরতে প্রাণ খুলে বাঁচতে৷ চেষ্টা করি আর সেই চেষ্টার ভাগীদার আদি আর নোমান । ওরা আমার রক্তের না তবুও সবচেয়ে আপনজন৷ আমার ভাই। চট্রগ্রাম ভার্সিটিতে ওদের সাথে এক হল রুমে থাকতাম৷ মাঝে মাঝে আন্টি মানে আমার ফুঁপি দেখা কর‍তে আসতো৷ আমার চুপচাপ আর একা থাকার কারণ ওরা ফুঁপির কাছে থেকেই জানে৷ নিজের জীবন উপলব্ধি করার ক্ষেত্রে ওদের ভূমিকা অনেক৷ তবে আমি ওদের আমার কষ্টের ভাগিদার করি নি ওদের বলি নি কিছু তবুও ওরা ফুঁপির থেকে সব জেনে আমাকে আরো আগলে রাখে৷ ফোর্থ সেমিস্টারে ঢাকা এসে তোমার একটা ছবি আমার জীবন আরো উলটে পালটে দেয়৷ বাট আমি ভুলে গিয়েছিলাম কোথায় দেখেছি তোমায়৷ আদি,নোমান আর পরশ স্যার আমার অবস্থা দেখে আবারো সাইকোলজিস্ট দেখায়৷ এর মাঝে বাবা অনেক বার আমাকে তার কাছে যেতে বলেছে আমি যাই নি৷ ফুঁপি অনেক বার বোঝানোর চেষ্টা করেছে তাও মানি নি৷ আদি আর নোমানের জন্য আমি সেই মানুষটার দেশে যাই যে আমাদের ফেলে চলে গিয়েছিলো৷ ও হ্যাঁ,যাওয়ার আগে ঢাকায় এসেছিলাম এনজিওর কাজে আর তখন আন্টির সাথে দেখা হয়৷ ডিমেনশিয়ার প্রথম স্টেজ থেকে বের হওয়ার চেষ্টায় আছি হৃদি৷
‘ আমি বাঁচতে চাই আমি ভালো থাকতে চাই৷ সব ছোট ছোট কষ্ট গুলো হাসি মুখে বরণ করতে চাই৷ অনেক তো হলো একা থাকা এইবার আমি ভালোবাসে হাসতে চাই৷ ‘

উনার করুণ কথাগুলো আমার কানে ঘুরেফিরে বেড়াচ্ছে৷ গাল বেয়ে পানি গড়িয়ে পরেছে সেই আগেই৷ ভেজা চোখে উনার দিকে তাকিয়ে দেখি তীক্ষ্ণ রোদের আলোয় কষ্ট গুলো পুড়িয়ে দিচ্ছে উনায়৷ কালকে আম্মুর সাথে বিয়ে নিয়ে কথা বলে খুব একটা ভুল করি নি৷ তাকে ভালো রাখতে হলে তার সাথে থাকার চেয়ে বড় উপায় আর নেই৷ আমি ভেজা কন্ঠে বললাম,
–‘ আমি আপনার সাথে প্রত্যেকটা মূহুর্ত থাকতে প্রস্তুত৷ আমি আর কিছু শুনতে চাই না৷ আপনি পরশ স্যার আর আন্টিকে নিয়ে আসুন প্লিজ আমাদের বিয়ের কথা বলতে৷ ‘
উনি মৃদু হাসলেন৷ সোজা হয়ে উঠে দাঁড়িয়ে আমার কঁপালের বিন্দু বিন্দু ঘাম গুলো সযত্নে মুছে দিলেন৷ আমার মাথার উপর হাত দিয়ে সূর্যের আলা থেকে আবডাল করলেন৷ আমি বিষ্ময়ে বিমূর্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছি৷ দূর থেকে রাহাত সিটি বাজিয়ে বলল, ‘ জিয়ো দুলাভাই৷ তোমার না মানে আপনার মতো প্রেমিক ঘরে ঘরে চাই শুধু আমার ফারিহার ঘর বাদে কারণ ওইটা আমার জন্য বুকড৷ ‘
ওর কথা শুনে আমি ফিঁক করে হেসে উঠলাম সাথে উনিও৷ আমি উনার হাত নামিয়ে দিয়ে কাঁপা হাতে ওড়না উঠিয়েও নামিয়ে নিলাম লজ্জায়৷ আমার কাজ দেখে ঠোঁট টিপে হেসে নিজেই ওড়নার একসাইড দিয়ে নিজের সারা মুখ মুছে ফিসফিস করে বললেন,
–‘ বউয়ের দায়িত্ব শিখে রাখো এর পর আমি আর সাহায্য করবো না৷ ‘

–‘ তার মানে আপনি আমার চুল আর শাড়ি দেখেই চিনে ফেলেছিলেন সেদিন?? ‘ আমি উনার কথা উপেক্ষা করে বললাম৷ উনি চিলেকোঠার পাশে গিয়ে আবডালে দাঁড়ালেন রোদ থেকে বাঁচতে তারপর আবার বললেন,
–‘ ইউরোপ থেকে আমি ছুটে এসেছি আমার কাজ আমার স্বপ্ন পূরণ করতে আর সেটা হলো এতিম বাচ্চা আর বৃদ্ধাদের নিয়ে কাজ করা৷ আমি ভেবেছিলাম তুমি হয়তো আমার স্বপ্ন যাকে আমি অনুভব করতে তবে ছুঁতে পারি না৷ সেদিন রেস্টুরেন্টে মিটিং করার জন্যই বসেছিলাম আর তুমি হুট করে চড় মেরে দিলে৷ ‘ উনি চড় কথাটা বলেই গালে হাত দিলেন৷ আমি তাকিয়ে লজ্জায় মুখ নামিয়ে ফেলি৷
–‘ আমার তখন ও শুভ্র পরীর কথা মনে হয় নি৷ যখন পেছনে ঘুরলে কুঁকড়ানো খোলা চুল গুলো আমার মনে সেই তিন বছর আগে আমাকে পাগল করা অজানা মেয়েটার কথা মনে করিয়ে দেয়৷ যখন জানলে ভুল ব্যাক্তিকে মেরেছো তোমার নিভু নিভু চোখ দুটো আমায় তার কথা মনে করিয়ে দিয়েছে৷ আমার শব্দ ভান্ডার তখন শূন্য ছিলো৷ রাগ হলো তুমি দৌড়ে পালানোতে৷ সেদিনের পর আবার খুজি তোমায়৷ পরশ স্যার আমাকে জানায় তোমাদের ভার্সিটি তে নাকি ইংরেজি ডিপার্টমেন্টে স্যার নেই আমার কাজ যেহেতু ছিলো না তাই ভাবলাম সময় কাটানো যাবে স্টুডেন্টদের মাঝে থেকে৷ আমার ভাগ্যে তুমি ছিলে শুভ্র পরী তাই তো আবারও তোমায় পেয়েছি ভার্সিটি তে৷ সাদা আমার ভালোবাসা আর সেই ভালোবাসা জড়ানো পরী তুমি৷ ‘
আমি আবারো কাঁদলাম৷ এইবার আনন্দের কান্না৷ সে আমার কান্না দেখে রসিকতা করে বললেন,
–‘ হবু শ্বশুর বাড়ি এসে রোদ খাচ্ছিস স্নিগ্ধ৷ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে তোর নাম লেখা দরকার৷ এমন জামাই কোথায় পাবে আমার শ্বশুড়?? ‘
আমি একহাতে চোখ মুছে কটমট চোখে তাকালাম৷ বললাম,
–‘ কেন দুনিয়ায় অভাব আছে নাকি??’

আমার কথা শুনে সে বড় বড় চোখে করে তাকালো৷ আমিও ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে ঘুরে গেলেও সেই মায়াময় দৃষ্টির দিকে তাকিয়ে মুখ ফুঁটে বললাম,
–‘ আমি আছি৷ আপনার একেকটা কষ্টের সুতো নিজের সাথে মিশিয়ে নিবো৷ সব বিষন্নতা দূরে ঠেলে সুখে থাকবো৷ আপনি প্রাণ খুলে হাসবেন আপনার শুভ্র পরীর সাথে৷ শুনছেন আপনি আমার…!’
চলবে………

#শুভ্র_রঙের_প্রেম
#রুবাইদা_হৃদি

পর্বঃ২৪
লজ্জা নামক শব্দটা আমার কাছে ভিত্তিহীন মনে হলেও আজ লজ্জায় মিইয়ে মাটির সাথে মিশে যাচ্ছি৷ চোখেমুখে গরম নিঃশ্বাস আমার ভেতরে লজ্জা গুলো ঠিকরে বেরিয়ে পরতে চাইছে৷ আমার নজর নীচু কিন্তু তার??সেটা দেখার জন্য হলেও আমার দিকে ঝুঁকে থাকা ব্যাক্তিটার দিকে তাকাতে হবে৷ তাকাতে গেলেই আমি বরাবর ব্যর্থ৷ শাড়ির কুঁচি খাঁমচে ধরে বড়সড় একটা ঢোক গিলে আমতা আমতা করে বললাম,
–‘ স..স..সরুন আমার গরম লাগছে৷ ‘
উনার মৃদু হাসির শব্দ শুনে আমি লজ্জায় হাত দিয়ে মুখ ঢেকে ফেললাম৷ ইশ! কেউ দেখে নিলে কি ভাববে??
–‘ আপাদত কেউ এখানে নেই তাই কারো কিছু ভাবার কোনো কথাই আসে না৷ ‘
আমি হাত নামালাম না৷ হাত দিয়ে মুখ ঢেকে রেখেই বললাম,
–‘ আমি ভার্সিটি এসেছি আপনাকে তো বলি নি জানলেন কি করে? ‘

–‘ কেন আমার হবু শ্বাশুড়ি বলেছে৷ ‘

–‘ মানে.. নে?? আম্মু! ‘ আমি হাত নামিয়ে সোজাসুজি উনার মুখের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলাম৷ উনি জোরে হেসে উঠলেন৷ গাড়ির উপর থেকে এক হাত উঠিয়ে চুল গুলো পেছনে ঠেলে দিয়ে বললেন,
–‘ টানা একদিন পর সরাসরি দেখতে পেলাম৷ এতো শুদ্ধতা কেন তোমার মুখে? এতো আবেগ কেন তোমার ওই দুই চোখে? ‘

উনার আবেগী কথায় ইচ্ছা হচ্ছে ছুটে পালিয়ে যাই বহুদূর৷ এইভাবে কেউ বলে??
উনারা আমাদের বাসা থেকে দুপুরে খেয়েই বেরিয়ে এসেছিলেন কাল ৷ নীতি ওর বিয়ের দাওয়াত দিতে গিয়েছিলো৷ নীতির বিয়ে ঠিক হয়েছে৷ আর সেই সুবাদেই আমি আজ ভার্সিটি৷ কারণ নীতি আম্মুকে বলেছে, ওর সাথে যেন আমি সর্বক্ষণ থাকি ওর ইচ্ছা এইটা৷ আম্মুও বিনাবাক্যে মেনে নিয়েছে৷ স্নিগ্ধ স্যারকে দেখার পর থেকে আম্মুর ভাবাবেগ বুঝতে পারছি না আমি৷ সেদিনের সেই রাগ এখন নেই৷ আবারও আমার স্বাধীন জীবন ফিরে পেয়েছি৷ তবে নীতি আর আরিফ ভাইয়ার না হওয়া প্রেম টা এভাবেই শেষ হয়ে যাবে ভেবে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো বুক ফুঁড়ে৷
আমি ভার্সিটি তে পাঁ রাখতেই আমাকে একটানে গাড়িতে নিয়ে আসেন উনি৷ ড্রাইভ করে গুলশান ছাড়িয়ে শান্ত নিরিবিলি পরিবেশে নিয়ে আসেন৷ এখানের রাস্তা একদম ফাঁকা৷ রাস্তার দুই ধারে সারি সারি তাল গাছ আর রেইনট্রি৷ তার থেকে ঢালু নেমেই চাষের জমি৷ ধান চাষের জমি৷ সবুজ ধানের চারা গুলো বাতাসের তালে সমুদ্রের পানির মতো ঢেউ খেলছে৷ ধান খেতের পাশেই কোথাও কোথাও বড় হয়ে যাওয়া হলুদ সরিষা নজরে পরছে৷ কিছু কিছু ক্ষেতে কৃষক কাজ করছে৷ এতো সুন্দর গ্রামীণ ক্ষেত অনেক অনেক দিন পর চোখে পরতেই আমার করা হাজারো প্রশ্নের ঝুঁড়ি এক নিমিষেই থেমে যায়৷ আমি গাড়ির দরজা খুলে বুক ভরে নিঃশ্বাস নিতেই আমাকে আবারো একটানে গাড়ির সাথে মিশিয়ে দাঁড় করিয়ে উনি আমার দুই সাইডে হাত রেখে গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠেন,
–‘ আমার শ্বাস আটকে এখন নিজে শ্বাস নিচ্ছো?? এই তোমার একফোঁটা মায়া হয় না আমার জন্য? ‘
আমি মিটমিট চোখে তাকিয়ে থাকতেই উনি আবার বলে উঠেন,
–‘ তোমাকে একদম নতুন বউ লাগছে জানো৷ আজ এতো মোহ কেন পাচ্ছি তোমার মাঝে?? মনে হচ্ছে উঠিয়ে নিয়ে বিয়ে করে একদম নিজের সাথে মিশিয়ে নেই৷ ‘

সেই থেকে একভাবেই দাঁড়িয়ে আছেন উনি৷ আমার হার্টবিট মিনিটে মিনিটে ছন্দ হারাচ্ছে৷ খোলা জায়গা সেই সাথে সামনে থেকে আসা উত্তাল হাওয়া মন প্রাণ জুড়িয়ে যাচ্ছে৷
ফাগুনমাসে কেমন প্রেম প্রেম বাতাস থাকে আমার মনে হয়৷ আর আজ আমার প্রেমিক পুরুষ আমার সামনেই দাঁড়িয়ে আছে একবুক ভালোবাসা নিয়ে৷
–‘ রোবটের মতো দাঁড়িয়ে আছো কেন? ‘
আমি সামনে তাকিয়ে দেখি সে আমার থেকে কিছুটা দূরে সামনের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে৷ আমি অবাক হয়ে বললাম,
–‘ আপনি না এখানে ছিলেন? ‘

–‘ ছিলাম বুঝি? তোমার লজ্জা কাটলো ? যদি কেটে থাকে আমার কাছে এসে দাঁড়াও৷ ‘

আমি উনার ডাক শুনে গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে গেলাম৷ উনি আমাকে পাশে দাঁড়াতে দেখেই ঘুরে দাঁড়ালেন৷ মায়াময় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আমার হাত ধরতেই আমি কেঁপে উঠি৷ আমার হাত তার হাতে উঠিয়ে হঠাৎ করেই হাতের পিঠে চুমু দিয়ে বসে৷ ভূমিকম্পের ন্যায় আমার শরীর কেঁপে উঠলো৷ টান দিয়ে হাত সরাতে চাইলেই উনি আরো শক্ত করে আঁকড়ে ধরলেন৷ আমি আবারো মাথা নীচু করে ঠকঠক করে কাঁপছি৷ উনি আমার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললেন,
–‘ সাহস কোথায় রেখে এসেছো আজ? সামান্য স্পর্শে যে হাড়ে কাঁপা-কাঁপি করছো না জানি….!’ মুখ দিয়ে ‘ ব ‘ উচ্চারণ করেও থেমে গিয়ে আড়চোখে আমার দিকে তাকালেন৷ আমি জোরে জোরে শ্বাস নেওয়ার চেষ্টায় আছি৷ উনাকে অতিরিক্ত অক্সিজেন মনে হচ্ছে৷ যার ফলে,শ্বাস আটকে মারা যাওয়ার উপায়৷
–‘ স্ট্রেইট দাঁড়াও একদম নড়বে না৷ ‘

–‘ আপনাকে স্পর্শ করার চেয়ে বিদ্যুতের তার ধরা উত্তম৷ ‘

–‘ বিদ্যুৎতের তারকেই তাহলে ভালোবেসো আমার আর কি দরকার৷ ‘ উনি কন্ঠের গম্ভীরতা ধরে রেখেই বললেন৷ আমি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়েও দৃষ্টি নত করে ফেললাম৷ আমার আঙুলে ছোট সাদা পাথরের আংটি পরিয়ে দিলেন সযত্নে৷ আমি ঘোরে আছি সম্পূর্ণ৷ উনি আবারো আমার হাতে চুমু দিয়ে বললেন,

–‘ ভেবেছিলাম যেদিন তোমার সাথে প্রথম দেখা হবে সেদিন আংটি দিয়ে বলবো,ইউ সিলড ফর মি৷ প্রতিদিন যত্নে রাখা জিনিসটা আমার সবচেয়ে যত্নে গড়া ভালোবাসার কাছে গচ্ছিত করলাম৷ যে শুধুই আমার শুভ্র পরী ৷ আমার এবং আমার৷ ‘
আমি বিষ্ময়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে আছি৷ আমার মনের মাঝে ভালোলাগার ঝড় বইলেও বাইরে প্রকাশ পাচ্ছে না৷ আমাকে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে উনার হাসি মুখে কালো অন্ধকার ঘনীভূত হলো৷ আমি কি করবো ভেবে না পেয়ে প্রথমবারের মতো তার বুকে মুখ লুকিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলাম৷ অনুভূতি গুলোর সাথে আমার হৃৎপিন্ডের প্রত্যেক টা কম্পন তীব্র ভাবে বেড়ে চলেছে৷ আমি লজ্জায় আর একরাশ আনন্দে কাঁদছি৷ সে ব্যস্ত কন্ঠে বলল,
–‘ তোমার চোখে পানি মানায় না একদম৷ তাই কান্না করবে না৷ তোমার জন্য বরাদ্দকৃত ভালোবাসা অনেক তাই প্রত্যেক বার এইভাবে কাঁদলে যে চোখের পানি শেষ হয়ে যাবে৷ তখন আবার নতুন ভালোবাসায় সিক্ত হওয়ার জন্য পানি পাবে কোথায় বলো তো?? চোখে তো পানি সংকট দেখা যাবে৷ ইশ! কি ব্যাপারটা হবে তখন৷ ‘
উনার বেখেয়ালি কথা শুনে আমি চোখে মুছে আলতো হাতে ধাক্কা দিলাম তার বুকের মাঝে৷ উনি আমার কাজ দেখে হো হো শব্দে হেসে উঠলেন৷ আমি আবারো তার হাসির প্রেমে পরলাম৷ চোখেমুখে আছড়ে পরছে সমস্ত খুশি আর সেই খুশির ভাগীদার একমাত্র আমি এবং শুধুই আমি৷
________________________
–‘ এখনো সময় আছে নীতি! তুই আরিফ ভাইয়াকে বল তোর বাসায় প্রস্তাব দিতে৷ ‘

–‘ সব ঠিক হয়ে গেছে৷ সামনে সপ্তাহে ফাইনাল সব কিছু এখন আমি পিছিয়ে যাবো?? ‘

–‘ তুই পাঁ বাড়িয়েছিস বুঝি? তোর ফ্যামিলি বিশেষ করে তোর মামা তোকে ঠেলে দিচ্ছে৷ তুই আরিফ ভাইয়াকে বলে দেখ উনি ব্যবস্থা করবেই৷ কারণ উনি তোকে ভালোবাসে নীতি৷ শুনতে পারছিস? ‘

নীতি আমার কথা শুনে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো৷ ওর কান্নার আওয়াজে শপিংমলের অনেক আগ্রহ নিয়ে তাকাচ্ছে৷ আমি বিব্রতবোধ করলাম৷ নীতিকে একহাতে ঝাপটে ধরে বললাম,
–‘ বি কুল নীতি৷ সব ঠিক হবে৷ প্লিজ কান্না থামা৷ ‘

–‘ কিচ্ছুটি ঠিক হবে না৷ তোর ভালোবাসার মতো আমার ভালোবাসাটা কেন পরিণতি পাচ্ছে না হৃদি বলতে পারবি?? ‘ নীতি ভাঙা গলায় বলতেই আমার তীব্র কষ্ট হলো৷ উনি সেই জায়গা থেকে আমাকে নীতির কাছে মানে ভার্সিটি তে নামিয়ে তার এনজিওয়ের কাজে চলে গেছেন৷ আর আমরা সেখান থেকে শপিংয়ে এসেছি নীতির জন্য৷ ওকে নিয়ে ফুড কর্ণারে এসে বসলাম৷ আমি ওর কান্নারত মুখের দিকে তাকিয়ে নিজের অবস্থান ভেবেই শিউরে উঠলাম৷ মাঝে একটা দিন ভেবেছি তাকে পাবো না সেটা ভেবেই আমার চারিপাশ অন্ধকারে ঢেকে গিয়েছিলো আর নীতি?ও কত দিন ধরে এই সব সহ্য করে যাচ্ছে৷ টিস্যু পেপার দিয়ে ওর চোখ মুছিয়ে দিয়ে বললাম,
–‘ আমি চেষ্টা করবো একবার?? ‘
নীতি পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকালো আমার দিকে আমি ভরসার কন্ঠে বললাম,
–‘ উনাকে বলে দেখতেই পারি আমার মনে হয় সে কিছু একটা করতে পারবে৷ কিন্তু তার আগে আরিফ ভাইয়ার এড্রেস আর ফোন নাম্বার দে আমায়৷ ‘

–‘ উনি চট্রগ্রাম থাকেন শুনেছি কিন্তু ফোন নাম্বার তো নেই৷ ‘

–‘ তুই আরিফ ভাইয়ার বাসায় যাবি এখুনি নাম্বার আর এড্রেস জোগাড় করে আবার জলদি ব্যাক করবি৷ ‘

–‘ মানে কি হৃদি?? কি করতে চাচ্ছিস বল তো তুই?’

–‘ সময় হলেই দেখতে পাবি জানু৷ এইবার দৌড় লাগাও৷ জলদি যা আর এখানেই ফিরে আসবি৷ ‘

নীতি অবাক চোখে তাকিয়ে রয়েছে আমি ওর হাত ধরে দাঁড় করিয়ে সিএনজি ভাড়া করে উঠিয়ে দিলাম একপ্রকার জোর করে৷ ও আর কিছু বলার আগেই সিএনজি ছেড়ে দেয়৷ আমি কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে মুচকি হেসে ফোন হাতে নিয়ে ডায়াল করলাম আমার উনার কাছে৷ ফোন রিসিভ হতেই গম্ভীর ভাবে বললাম,
–‘ আপনার শুভ্র পরী উড়ে চলে যাচ্ছে যদি ধরতে চান দৌড়ে চলে আসুন৷ আপনার জন্য বরাদ্দকৃত সময় ধার্য করা হলো পনেরো মিনিট এর মাঝে মিরপুর স্টেডিয়ামের সামনে না আসতে পারলে আর তার দেখা পাবেন না…! ‘
বলেই মোবাইল রেখে দিয়ে পায়চারি তে লেগে পরলাম৷ আমার উক্ত ফোনকল পেয়েই পাক্কা এক ঘন্টা পর উনি আমার সামনে দাঁড়াতেই বুক কেঁপে উঠে আমার…
চলবে….
মন্তব্য করবেন সকলে♥