শুভ্র রঙের প্রেম পর্ব-৩১+৩২

0
1765

#শুভ্র_রঙের_প্রেম
#রুবাইদা_হৃদি

পর্ব:৩১
হাতের মুঠোয় উনার হাতের স্পর্শতে আমি প্রত্যেকটা মূহুর্ত অনুভূতি খুজে পাচ্ছি।বাতাস গুলো আজ ফিসফাস করে বলছে ,

‘ স্নিগ্ধ,এইনাম তোমার।একমাত্র তোমার।’

আমি হ্ঠাৎ করেই উনার হাত নিজেও শক্ত করে ধরলাম। উনি তাকালেন।আমি ছেড়ে দিতে চাইলে উনি সামনের দিকে দিকে তাকিয়ে’ই বললেন,
–‘ ছেড়ে দেওয়ার জন্য ধরি নি , আর না তোমাকে ছেড়ে দিতে দিবো। প্রত্যেকটা মূহুর্ত তোমার হাতে হাত রেখেই উপভোগ করবো।’

আমি মুখ ঘুরিয়ে নিলাম। পাশে থাকা রাহাত আমার দিকে তাকিয়ে চোখ টিপে বলল,
–‘ দুলাভাই আপনার তুলনা হয় ,না। এইজন্যই তো আপনারে প্রেমের গুরুর স্থান দিয়া দিছি।’
রাহাতের কথা শুনে বড়রা গুরুত্বপূর্ন আলোচনা রেখে ঘুরে তাকালো। উনিও হেসে বললেন,
–‘ শালাবাবু প্রেমের গুরুর প্রেম টা করতে দেও শান্তিতে। না হলে পরে প্রশিক্ষণ দিবো কি করে বলো তো ?’
–‘ প্রাইভেসি চাচ্ছেন দুলাভাই ? সেটা তো দেওয়া হবে না একদম। ‘
নীতি এগিয়ে এসে বলল। উনি হাত দিয়ে চুল গুলো ব্রাশ করে বললেন,
–‘ শালি সাহেবা !’

–‘ বলুন ভাইয়া। ‘

–‘ তোমার সাহস কি করে হয় ইম্পোর্ট্যান্ট ক্লাসে এসে কথা বলার?’

নীতি মূহুর্তেই ভড়কে গেলো। আমি আড়চোখে তাকিয়ে দেখলাম স্নিগ্ধ স্যারের ফর্মে আছে। রাহাত আর জান্নাত চুপসে গেছে।
উনি কি আমাকেও কথায় কথায় ধমকাবেন নাকি ? এই অন্যায় মেনে নেওয়া যাচ্ছে না। আমি গলার স্বরে গম্ভীরতা বজায় রেখে বললাম,
–‘ আমি আপনাকে বিয়ে করবো না।’
–‘ কেন ?’
–‘ আপনি বিয়ে করতে এসেছেন না ক্লাস নিতে ? দেখুন এমন হলে …
উনি গভীর চাহনিতে আমার দিকে তাকিয়ে হাসলেন। সেই হাসিতে স্পষ্ট ,’ তোমার বলা কথা আমি শুনলে তো !’
কিছুক্ষণ একে অপরের দিকে থম মেরে তাকিয়ে আছে সবাই।রাহাত নীরবতা ভেঙে ভয়ার্ত কন্ঠে বলল,

–‘ স…স্যা..র মানে দুলাভাই আপনি এখন কে ? মানে কিসের দায়িত্ব পালন করছেন ?’

উনি আমার দিকে তাকিয়ে উত্তর দিলেন,
–‘ বর্তমান আমি তোমার ফ্রেন্ডের প্রেমিক পুরুষের দায়িত্বে আছি। সো নো ডিস্টার্ব বিচ্ছু বাহিনী। ‘

–‘ আজ তো একা ছাড়ছি না আপনাদের।আঠার মতো পেছনে লেগে থাকবো।’

–‘ এই গোলাপি,একা ছাড়বে না মানে কি? আর তোমার বয়স হয়েছে বাসর ঘরে ঢোকার। যাও তো বাসায় ফিরে ঘুমিয়ে পরো।’
আদি ভাইয়া কোথা থেকে এসেই পকেটে হাত গুজে দাঁড়িয়ে বললেন। জান্নাতের গাল রাগে আরো লাল হয়ে উঠেছে।জান্নাত কোমরে হাত দিয়ে রাগী স্বরে বলল,
–‘ মিস্টার.আদি ওরফে আদা বেশি বকবক করলে পুরান ঢাকার ছেলেপেলে এনে পিটাবো আপনাকে।’

–‘ চট্রগ্রামের পোলা আমি আমারে ভয় দেখাও? সাহস তো কম না পিচ্চি। ‘

–‘ পিচ্চি হলে হবে আপনার বউ ! স্নিগ্ধ ভাইয়া এইসব নষ্ট আদার ঝুলি কেন সাথে আনেন বলেন তো ? পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। ইয়াক…’

সবাই ফ্যালফ্যাল চোখে তাকিয়ে এদের ঝগড়া দেখে চলেছে। উঠতে,বসতে ঝগড়া। এইটা আমার বিয়ের আসর না ঝগড়ার? আমি কিছু বলার আগেই সে উঠে ওদের সামনে গিয়ে বলল,

–‘ দুইটার মুখে দিয়ে আর একটা শব্দ বের হলে সারাজীবন ঝগড়ার টিকেট দিয়ে দিবো আমার বিয়ের আসরেই। ‘

উনার কথা শুনে আদি ভাইয়া লাফিয়ে উঠে কিছুটা দূরে গিয়ে বললেন,
–‘ আস্তাগফিরুল্লাহ্ ! দোস্ত এই অঘটন ভুলেও কর‍তে পারো না তুমি।’

–‘ তাহলে একদম ঝগড়া না। ওও হ্যাঁ,নোমান কোথায় ? এখনো আসলো না যে।’

কঁপালে চিন্তার ভাজ ফেলে বললেন উনি। আদি ভাইয়া নিজস্ব কথার ভাবে বললেন,

–‘ দেখ গিয়ে কোন চিপায় মিমের লগে বসে আছে।’

–‘ নোমান জানলে জান্নাতের সাথে মিলে পিটাবে তোকে। ‘
উনি আদি ভাইয়ার পিঠ চাপড়ে বললেন। আমরা নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছি। জান্নাত রাগে গজগজ করে আমার পাশে বসে ইচ্ছামতো বকে চলেছে।নীতি আরিফ ভাইয়ার সাথে চোখাচোখি প্রেমে ব্যস্ত ।রাহাতের আর রাফিনের বসবার সময় নেই।এই আছে তো এই কাজে ব্যস্ত ।
উনি আদি ভাইয়ার সাথে কথা বলছেন। তীব্র এক দীর্ঘশ্বাস বুক চিড়ে বেরিয়ে এলো।বিয়েটা হচ্ছে! তবে তাকে পাওয়ার আনন্দের সাথে আব্বু-আম্মু,দাদুন আর রাফিনকে ছেড়ে যাওয়ার কথা মনে হলেই মন বলছে, আর কিছুটা দিন থাকুক পরিবারের মূহুর্ত গুলো।কিন্তু সেটা আদেও সম্ভব একটা মেয়ের জীবনে ??

———————————-

চারদিকে সুন্দর মূহুর্তের আমেজ ভেসে বেড়াচ্ছে।বিয়ে নামক দায়িত্ব আর ভালোবাসার শব্দটা জুড়ে গেছে কিছুমূহুর্ত আগেই। ‘ কবুল ‘ এই তিনটা শব্দ আমার জীবনের পাতায় শুভ্র প্রেমিককে নিজের করে দিয়েছে।আমার ঠোঁটে হাসি।সব কিছু স্বপ্ন মনে হলেও আদেও এইটা স্বপ্ন নয়। আমি মাথা নীচু করেই বসে আছি। কাঁদছি! সব এতো জলদি আর সুষ্ঠু ভাবে হবে বুঝতেই পারি নি।
–‘ আবার কাঁদছো তুমি ! তোমার চোখের পানি আমার অনুমতি নিয়েছে আমার বউয়ের চোখ ভিজিয়ে দেওয়ার?’

বউ শব্দটা আমার ভেতর কাঁপিয়ে দিলো। কানে বাজতে থাকলো ক্ষণে ক্ষণে।আমি কম্পিত চোখে তাকালাম। স্নিগ্ধ ময় মুখে স্নিগ্ধ হাসি ঝুলানো।সবার সামনেই আমার চোখের পানি মুছিয়ে দিলেন উনি। সাথে সাথেই সবাই হো হো করে চিল্লিয়ে উঠলো। উনি বিরক্তিতেতে চোখ-মুখ কুঁচকে তাকালেন। নীতি,জান্নাত,রাহাত,আদি ভাইয়া,রাফিনের কোনো ভাবান্তর হলো না। এর মাঝেই নোমান ভাইয়া আর মিম আপু এসে দাঁড়ালেন। আদি ভাইয়া ওদের দেখে নাক ছিটকে বলল,
–‘ বাচ্চাকাচ্চা হওয়ার সময় একবারেই আসতি! কষ্ট কম হতো।’

–‘ রাস্তা হারিয়ে ফেলেছে এই আহাম্মক।উল্টো রাস্তা ধরে এয়ারপোর্টের রাস্তায় গিয়ে ঘুরেফিরে এসেছে।’ মিম আপু বিরক্তির সুর তুলে বললেন। নোমান ভাইয়া মেকি হাসি ঝুলিয়ে আমতা আমতা করে বললেন,

–‘ দোস্ত,কথা দিচ্ছি তোর বাচ্চা ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগেই আমরা পৌছে যাবো। এইবারের মতো মাফ কর।’

–‘ কান ধরে দাঁড়িয়ে থাক। আর দশবার বল,আমি আর লেট করবো না।’ উনি বললেন। সাথে সাথেই হাসির রোল পরে গেলো। আমি নির্বিকার ভাবে বসে বসে কার্যকলাপ দেখে চলেছি। নোমান ভাইয়া কথা না বাড়িয়ে এদিক ওদিক চোখ বুলিয়ে বলল,
–‘ মানসম্মানের ব্যাপার।তোর অনাগত মেয়ের ভবিষ্যৎ শ্বশুড় আমি ! একটু রহম কর।’

–‘ যা ব্যাটা,ওর ছেলের সাথে আমার মেয়ের বিয়ে দিবো তোর এন্ট্রি নাই। অন্য কোথাও ঢিল মারো। ‘ আদি ভাইয়া ফোঁড়ন কেটে বলতেই মিম আপু বললেন,
–‘ তোমার এন্ট্রি পরে দুইমাত্র দেবর। আগে বিয়ে করো।’

–‘ যে রাগ উনার আমার তো ভয় লাগে ভাবি।রাগের জন্য দেখো এখনো গাল লাল হয়ে আছে।স্নিগ্ধ আয়াতুল কুরসি বল তো আমি তোর সাথে পড়ি।’

জান্নাত ক্ষেপে গেলো মূহুর্তেই।আমার সামনে এসে অভিযোগের স্বরে বলল,

–‘ আপু,তুমি কিছু বলবা ? উনি কাকে মিন করে কথা গুলো বলছেন ? অসহ্য লোক একটা।’
আদি ভাইয়া হই হই করে কিছু বলার আগেই আব্বু সবার মাঝে এসে উনার সামনে দাঁড়ালেন।ঝগড়ার পরিবেশ হ্ঠাৎ করেই শান্ত পরিবেশে রুপ নিলো। আব্বুর পর একে একে আম্মু,দাদুন,পরশ স্যার,মৌমিতা আন্টি এসে দাঁড়ালেন ।বিয়ে পরানোর পর একসাথে নীচে নেমে গিয়েছিলেন সবাই আবার একসাথেই এসেছেন। উনি উঠে দাঁড়ালেন মাথা নীচু করে। আব্বু উনার মাথায় হাত রেখে বলল,

–‘ জেদ করে,মানিয়ে আমার পরীকে তুমি নিয়েছো। তোমার উপর সম্পূর্ণ ভরসা আমার ভেতর থেকে নিগড়ে আসছে।আমি জানি আমার পরী তোমার কাছে ভালো থাকবে।আগলে রেখো সব সময়।’
কথা বলার সময় আব্বুর কন্ঠ বারবার কেঁপে কেঁপে উঠছে।চোখ জোড়ায় পানির আভাস।আমার মন বিষিয়ে উঠলো মূহুর্তে আবারো। সব ছেড়ে যেতে হবে। আমি সবার মাঝেই শব্দ করে কেঁদে উঠলাম। আমার কান্নার আওয়াজে আম্মু্র থিতিয়ে রাখা কান্না গুলো প্রকাশ পেলো সশব্দে।আম্মু আমাজে ঝাপটে ধরলো। অনবরত কান্না করেই চলেছে। সবাই ব্যথাতুর চোখে তাকিয়ে আছেন। আর উনি অসহায় চোখে। আমি নিজেকে সংযত করতে গিয়েও আব্বুর আদর পেয়ে কান্নার পরিমাণ বাড়িয়ে দিলাম। রাফিন আজ একদম দুষ্টুমি করে নি আমার সাথে। টলমলে গলায় আমার সামনে এসে বলল,

–‘ এই আপু! কাদিস কেন ? তোকে কি বেঁচে দিয়েছি আমরা? কাল যাবি ভাইয়ার সাথে আবার পরশুদিন এসে পরবি।এতে কান্নার কি আছে ?’

আমি অশ্রুসিক্ত চোখে তাকালাম। ও নিজেকে ঠিক না রাখতে পেরে আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে বলল,

–‘ ভাইয়া কে বল আপু তোকে যেন না নিয়ে যায়। তুই এতো জেদি কেন? বিয়ে না করলে কি হতো বল তো? তোর কাছে এখন আপু আপু গন্ধ আসে না কেন ! কেমন পর পর লাগে। মনে হচ্ছে,তুই আর আসবি না আপু। আই রিয়েলি মিস ইউ।’

কান্নার মাঝেও বড্ড হাসি পেলো। ভাইটা আমায় অনেক ভালোবাসে। আমি কান্নারত অবস্থাই ওর কানে ফিসফিস করে বললাম,
–‘ ক্যামেরা আর মোবাইল টা রাখা আছে তোর টেবিলের ড্রয়ারে। দেখে বলিস,পছন্দ হয়েছে কিনা। আমার জমানো সব টাকা খরচ হয়ে গেলো কিন্তু।ভালো মতো পড়াশোনা করে সব সোধে-আসলে উসুল করবো।’

আমার কথা শুনে রাফিন ছেড়ে দাঁড়িয়ে অবাক হয়ে বলল,
–‘ ওই গুলো তুই নিয়ে যা। তবুও তুই যাবি না আপু।’

–‘ আপুকে তো যেতেই হবে রাফিন।তুমি না স্ট্রোং বয়।তোমার ফ্রেন্ডস রা এইভাবে কান্না করতে দেখলে কি বলবে ভাবো তো ? তুমি আপুর সাথে নিয়মিত দেখা করতে যাবা। ইভেন তোমার নিউ একটা বাসা হয়েছে তাই না বলো? ‘

উনি রাফিনের কাঁধে হাত রেখে নির্লিপ্ত ভাবে বললেন। রাফিন দুইহাতে নিজের চোখের পানি মুছে মাথা হেলিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
–‘ মন দিয়ে সংসার করবি। ভাইয়াকে একদম জ্বালাবি না।’

–‘ তোর চোখের পানি শেষ রাফিন? ভাই এতো জলদি রঙ পাল্টানোর ট্রেনিং তোর কাছে থেকে নিতে হবে তাই না প্রেমের গুরু। ‘

–‘ রাহাত ভাইয়া আমি কিন্তু সব তথ্য ফাঁস করে দিবো আমাকে লেগফুল করলে।’

ওদের ঝগড়া দেখে আমি কান্নার মাঝেও হেসে উঠলাম।আমার পাশে দাঁড়িয়ে উনি একটু ঝুঁকে বললেন,

‘ শুভ্র পরীকে তো শুভ্র হাসিতেই মানায়। সে কেন বুঝতে চায় না বলতো?’
আমি মৃদু কেঁপে উঠলাম।উনি আমাকে বিস্ময়ে রেখেই আব্বু-আম্মুর কাছে থেকে বিদায় নিচ্ছেন।
আমি অস্ফুটভাবে বললাম,
–‘ আজকেই চলে যাবো!’
দাদুন আমার পাশেই ছিলো। আমার কথা শুনে গালে হাত দিয়ে মাথা নীচু করে চুমু দিয়ে হেসে বলল,

–‘ বিয়ের পর স্বামীর বাড়ি যেতেই হয় এইটাই নিয়ম।ছোট আয়োজন হলেও বিয়েটা তো হয়ে গেছে। সুখে থাকো আর স্বামী সোহাগী হও বনু।’
দাদুনের শেষের কথাটুকু শুনে লজ্জায় পরে গেলাম আমি।অদ্ভুত একটা অনুভূতি গ্রাস করছে উনি নামক মানুষটাকে নিজের করে ভাবতেই….!
.

রাতের আঁধার হলেও সব কিছু আজ ঝকঝকে আলোয় আলোকিত। আমাদের গাড়িতে নোমার আর মিম আপু। পেছনের বড় গাড়িতে,রাহাত,রাফিন,নীতি ,আরিফ ভাইয়া,জান্নাত,আদি ভাইয়া,পরশ স্যার আর মৌমিতা আন্টি।
পেছনের গাড়ি থেকে গিটারের আওয়াজ আর ওদের গানের আওয়াজ চারদিক মুখরিত করে তুলেছে।নোমান ভাইয়া ড্রাইভ করছেন। উনি তাদের সামনেই আমার মুখ ঘুরিয়ে শাসনের সুরে বললেন,
–‘ চলো তোমাকে বাসায় দিয়ে আসি।’
আমি চমকে উঠে বললাম,
–‘ ক…কেন?’

–‘ যেভাবে কাঁদছো মনে হচ্ছে আমি জোর করে তুলে নিয়ে যাচ্ছি তোমায়।’

–‘ জোড় করেই তো নিয়ে যাচ্ছেন! বিয়ে নিয়ে সব প্ল্যানিং ভেস্তে দিয়ে সারপ্রাইজ প্ল্যান করেছেন।’ আমি বিড়বিড় করে বললাম। উনি ভ্রু কুঁচকে বললেন,
–‘ কিছু বললে?’
–‘ না।’ আমার সহজ স্বীকারোক্তি। উনি হ্ঠাৎ করেই একহাতে টেনে নিলেন আমায়। সমস্ত শরীর জুড়ে ভয়ংকর কাঁপুনি কোথা থেকে আসলো কে জানে। আমার মাথা তার বুকের মাঝে রেখে বললেন,

অবিন্যস্ত পৃথীবির বিন্যস্ততায়
সুর তুলে সুরের মোহনায়
আমি সিক্ত,তোমাতে সিক্তপ্রায়
শুধু তোমারি যাতনায়…
ভালোবাসি শুভ্র পরী তোমাকে তোমার শুভ্রতায়…

চলবে….

#শুভ্র_রঙের_প্রেম
#রুবাইদা_হৃদি

পর্বঃ৩২
গাড়ি চলছে আপন গতিতে তবে প্রেম নিজস্ব মনের মিলনে ছুটে চলেছে৷ আমার হাতের আঙুল গুলো খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে চলেছেন উনি মৃদু আলোতে৷ জানালা দিয়ে আসা ঠান্ডা শীতল বাতাস চোখেমুখে লেপ্টে পরছে কোমল ভাবে৷ পেছনের গাড়ি থেকে আদি ভাইয়া সুর তুলছেন৷ মিম আপু ক্লান্ত ঘুমিয়ে পরেছে উঠার পরেই৷ নোমান ভাইয়া পেছনে ফিরেতেই আমি হাত টান দিয়ে সরিয়ে নিতে চাইলে উনি বললেন,
–‘ পেছনে তাকাস কেন? তোর রোম্যান্সের সময় আমি ব্যাঘাত ঘটাইছি? ‘

–‘কোন রাস্তা দিয়ে যাবো সেটাই জিগ্যেস করতাম কিন্তু এইখানে চুপিচুপি রোম্যান্স চলছে সেটা কি করে জানবো!’

উনি আমার হাত তার বুকের বাঁ পাশে রেখে সন্ধিহান গলায় বললেন,
–‘ রাস্তা চিনিস তো?’
–‘ বাল,চিনলে কি তোমার রোম্যান্সের সময় তাকায় না-কি? ‘

উনি জানালা দিয়ে বাইরে উঁকি দিয়ে দেখে বললেন,

–‘ ঠিক পথেই যাচ্ছিস৷’
নোমান ভাইয়া ড্রাইভিং -এ মনোযোগ দিলেন৷ ঢাকা ছেড়েছি অনেকক্ষণ আগেই৷ আমি উনার দিকে ঘুরে বললাম,
–‘ কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন বলুন তো? ‘
উনি আমার হাতের পিঠে গভীর চুমু খেয়ে বললেন,

–‘ আমার প্রেমের রঙে৷ আমার ছোট দুনিয়ায় ! শুভ্র প্রেমের নিবাসে। ‘

_________

ঘুমের রেশ কেটে গেলো মূহুর্তেই৷ চোখ খুলে তাকিয়ে দেখি আমি হাওয়ায় ভাসছি৷ ভয় পেয়ে উনার গলা জড়িয়ে ধরতেই মুচকি হেসে উঠলেন উনি৷ পা দিয়ে গাড়ির দরজা বন্ধ করে চোখ টিপে বললেন,
–‘ বাসর ঘরে আর ঘুম পাবে না৷ যাক সুবিধা’ই হলো৷ ‘
আমার ঘুমু ঘুমু চোখে লজ্জার আভা খেলে গেলো৷ অস্ফুটস্বরে বললাম,

–‘ আপনাকে দেখতে ইনোসেন্ট লাগে কিন্তু আপনি মোটেও ইনোসেন্ট না৷ লজ্জাহীন মানুষ৷ ‘

উনি সামনে এগিয়ে যেতে যেতে ইনোসেন্ট ফেস করে বললেন,

–‘ সত্যি তাই? এই বলো তো,আমি কি তোমায় হুটহাট চুমু খেয়েছি সবার সামনে? ‘

–‘ জানি না৷ ‘
–‘ লজ্জাহীন মানুষটা এইবার সত্যি সত্যি এই সুন্দর উপাধি নেওয়ার প্রয়োজন মনে করছে৷ ‘

যাক বাবা উনি সিরিয়াস নিয়ে নিলেন! আমি পিটপিট চোখে উনার দিকে তাকিয়ে কথার মানে খুজে বেড়াচ্ছি৷ আমার ভাবনার মাঝেই উনি মাথা নীচু করছেন৷ তার দৃষ্টি আমার ঠোঁট জোড়াতে নিবদ্ধ৷ উনার ভাবনা বুঝতে পেরে আমি কেঁপে উঠা কন্ঠে বললাম,
–‘ আ..আপনি নীচু হচ্ছেন কেন? ‘
উনি জবাব দিলেন না৷ ঝুকে এলেন আরো৷
–‘ তুই তো মহা ধুরন্ধর৷ আমাদের ফেলেই বউ নিয়ে একা একা যাচ্ছিস৷ ‘
–‘ প্রেমের গুরু এইটা তো মহা অন্যায় আপনার৷ আমি আপনার স্টুডেন্ট অত্যন্ত আমাকে সাথে নিয়ে আসতেই পারতেন৷ ‘ রাহাত আর আদি ভাইয়া দৌড়ে আমাদের কাছে এসে বললেন৷ উনি বিরক্তিতে চোখ-মুখ কুঁচকে বিড়বিড় করে বললেন,

–‘ মহা জ্বালা তো! ঠিক ভাবে কিছু করতে গেলেই আসতে হয় এদের৷ বিয়ে করেও শান্তি নেই৷ কোথায় একটু…

–‘ গালি দিচ্ছো বন্ধু? দেও! দেও৷ আমাদের গালি শোনার জন্মগত অভ্যাস আছে৷ ‘ নোমান ভাইয়া মিম আপুকে একহাতে আঁকড়ে দাঁড়িয়ে বললেন৷ আপু পাঁচ মাসের প্রেগন্যান্ট৷ হুটহাট অসুস্থ হয়ে যায় প্রায় সময়।
সবাইকে এগিয়ে আসতে দেখে উনার দিকে তাকিয়ে আমার বড্ড হাসি পেলো৷ আমাকে হাসতে দেখে উনি আরো বিরক্ত হয়ে নামিয়ে দিলো আমায়৷ তারপর দাঁতে দাঁত চেপে বললেন,
–‘ চলুন সবাই৷ ‘
.

পূর্ণ থালার ন্যায় রুপোলী এক মস্ত চাঁদ আকাশ জুড়ে বিচরণ করছে৷ সোডিয়ামের আলো আর চাঁদের আলো মিলেমিশে সামনে সাজানো গোছানো প্রাচীর ঘেরা ছোট একটা বাগান৷ ইট বাধানো সরু রাস্তা এগিয়ে গিয়েই সাদা রঙ করা একতলা বাড়ি৷ সদ্য পেইন্ট করা সাদা রঙ আলোয় জ্বলজ্বল৷ ঝাপসা অন্ধকারে কারুকাজ গুলো নজর এড়ালো না৷ সুন্দর নিখুঁত ভাবে কারুকাজ করা৷ ডান পাশে কৃষ্ণচূড়া গাছ আর বাঁ পাশে শিউলি ফুলের গাছ ঢেকে রেখেছে বাড়িটা৷ সামনেই লাগানো অর্কিড গাছের চারা৷ বেলীফুলের সদ্য জন্মানো কলি রাতের আধারে নুইয়ে পরেছে।ফুঁপ্পি এগিয়ে এসে বললেন,
–‘ এইসব এই কয়েকদিনে করেছিস তুই কাজ ফেলে? তোর তো সিলেটে কাজ ছিলো। চট্রগ্রাম আর সিলেটা সামলিয়েছিস কি করে।’

–‘ ভুল বুঝছো ফুঁপ্পি,আমার কাজ সারতে দুদিন লেগেছে।বাচ্চারা তাদের নিজের ঘর পেয়েছে আজ আমাদের মতো। সব কাজ শেষ।ওদের মাথার উপর ছাদ হয়েছে। তাই তো স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে পা বাড়িয়েছি নতুন দুনিয়ায়।’
ফুঁপ্পি উনার কথা শুনে মাথায় হাত রেখে আদর করলেন। সাথে বললেন,
–‘ দোয়া করি বাবা তুমি ছোট বেলার সকল কষ্ট ভুলে নতুন কর বাঁচতে শিখো।আবার হাসতে শিখো।’
উনি মৃদু হাসলেন। ফুঁপ্পি চোখের কোণের পানি মুছে উনার থেকে চাবি নিয়ে আগেই ঢুকে কি সব নিয়ম কানুন আছে সেটার জোগাড় করতে লেগে পরলেন। সাথে মিম আপু,জান্নার আর নীতি।
বাসায় ঢুকে আমাদের উদ্দেশ্য করে নীতি বলল,
–‘ মিষ্টি ছাড়া মিষ্টি বউ তো আমরা ঘরে ঢুকতে দিবো না। এখন আমরা স্নিগ্ধ ভাইয়ার বাড়ির লোক তাই সব নিয়মকানুন আমরা ভাইয়ার হয়ে পালন করবো। ‘
উনি সামনে এগিয়ে বলল,
–‘ সব নিয়মকানুন করে আমার বউকে আমি নিজেই ঘরে ঢোকাবো। শালি সাহেবাদের দায়িত্ব কমিয়ে দিলাম।’

–‘ আপনার জন্যও নিয়মকানুন আছে সেইগুলা কে করবে আপনার বউ বুঝি ?’ মিম আপু মজা করে বলতেই উনি শেরওয়ানির দুটো বোতাম খুলে দিয়ে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললেন,
–‘ প্রয়োজন হলে করবে। কারণ,আমি ওর ‘ ও ‘ আমার। এই পুরো যোগের মধ্যে বিয়োগের কোনো স্থান নেই।’

–‘ আহ,স্নিগ্ধ ওদের দায়িত্ব পালন করতে দেও।’ পরশ স্যার নাকের ডগায় পরে থাকা চশমা ঠেলে দিয়ে বললেন। রাহাত উনার গম্ভীর ভাব দেখে মহা বিরক্ত সেটা ওর মুখভঙ্গি বলে দিচ্ছে। আমি ভয়ে আছি ফট করে কিছু একটা বলে না দেয়। শত হোক আমার ফুঁপ্পা শ্বশুর বলে কথা।
আমার ভাবনা সঠিক করে দিয়ে মুখ দিয়ে ‘ ক ‘ জাতীয় শব্দ উচ্চারণ করতেই আমি রাগী চোখে তাকালাম। ও আমার চোখের ভাষা বুঝতে পেরে রাগে গিজগিজ করে বলল,
–‘ গোপাল দাদুর ভূমিকা তুমি ছাড়বা না চাচা বুইঝা গেছি। যেখনে যায় ভূরি ভাসায় হুংকার ছাড়ে।বাল।’
আমি ওর পায়ের উপর পাড়া দিয়ে দম ফেললাম। ভাগ্যিস উনি শুনেন নি। রাহাত মৃদু চিৎকার করতেই সবাই ঘুরে তাকালো। ও আমার দিকে ক্ষিপ্র চোখে তাকিয়ে বুঝাতে চাইছে,’ আজ তোর বিয়া না হইলে থাপ্পড় মাইরা গাল লাল কইরা দিতাম।’
আমি ওকে উপেক্ষা করে উনার পাশে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলাম। রাফিন আমার পাশে এসে হাই তুলতে তুলতে বলল,
–‘ পুরো নয়দিন ভাইয়া বসতে দেয় নি আমাকে আর রাহাত ভাইয়াকে।তোর আজব স্বপ্নের বাড়ি বানাতে আমাদের ঘাম ছুটে গেছে। ‘
আমি অবাক চোখে তাকিয়ে বললাম,
–‘ তোরা এখানে ছিলি ?’
–‘ জ্বী ! সম্পূর্ণ ডিজাইন ভাইয়া নিজে ইঞ্জিনিয়ার দিয়ে তোর বর্ণনা অনুযায়ী করিয়েছে।’
আমি উনার দিকে তাকালাম। ফোনে একদিন এমন একটা বাড়ির কথা বলেছিলাম। শুভ্রতার ছায়া আর নানা ফুলের সমারোহে একটা ছোট বাড়ি। যেখানে শুভ্র ভালোবাসার সুখের ছোট সংসার হবে আমাদের। সেদিন উনি চুপ করে শুনে শুধু ‘ হু ‘ বলেছিলেন।
আমার ইচ্ছা হচ্ছে,উনাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে সবার সামনে বলি,
–‘ এই আপনি এতো মোহময় কেন ? আপনার ভালোবাসা গুলো এতো দামি কেন ? ছোট ছোট অনুভূতি গুলো এতো আকৃষ্ট করা কেন? না বলেও এতো সুন্দর ভালোবাসেন কেন? ‘
সব কেন গুলো আটকে রইলো। সোনালি সুতোর কাজের ঘিয়া রঙের শেরওয়ানীতে তাকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে।কঁপালে জড়িয়ে থাকা চুল গুলো যেন স্নিগ্ধ পরশে তাকে ছুঁয়ে দিচ্ছে। ফর্সা গালের কালো লাল মিশ্রিত কুচকুচে তিলটা আমায় জানান দিচ্ছে,’ উনি শুধুই তোমার !’
_________________________

বিভিন্ন সাদা ফুলে ছেয়ে আছে আমাদের ছোট ঘর।ঘরে ঢুকতেই হৃৎপিন্ডের কম্পন অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে। নীতি আর মিম আপু দুষ্টুমি করছে নানা বিষয় নিয়ে। ওদের কথাবার্তা শুনে লজ্জায় আমার কান লাল হয়ে উঠছে। নীতির দিকে তাকিয়ে গলার স্বর গাঢ় করে বললাম,
–‘ তোর বর মহাশয় না আছে। যা উনার সাথে রোম্যান্সে মন দে।’
নীতি আমাকে আলতো ধাক্কা মেরে বলল,
–‘ লজ্জা পাচ্ছিস ?’

–‘ না লজ্জা পাবো কেন ? আমার লজ্জা পাওয়া উচিৎ বুঝি? কিন্তু পাচ্ছে না তো। এই কি ভাবে লজ্জা পেতে হয় রে ?? আরিফ ভাইয়ের আদরের সময় যেভাবে তুই লজ্জা পাস আমাকে একটু বল তো। তাহলে আমারও উনার সামনে লজ্জা পেতে সুবিধা হবে। ট্রেনিং এর ব্যাপার স্যাপার আছে তাই না মিম আপু??’
আমার অকপটে বলা কথায় দুইজনে চুপসে যায়। নীতি একছুটে পালিয়ে যায়। আমি ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম,
–‘ কি ভাবে লজ্জা পেতে হয় বলে যা নীতি। যাহ ! চলে গেলো। তাহলে তুমি বলে দেও আপু। ‘
আমি মিম আপুর দিকে তাকিয়ে বলতেই উনি হাসফাস করে উঠে দাঁড়িয়ে বললেন,
–‘ আমার খারাপ লাগছে। যাই আমি। বাকি ক্লাস না হয় স্নিগ্ধ ভাই নিবে। ‘ লাস্টের কথাটা মুচকি হেসে বলে বেরিয়ে যায় আপু।’
ঘরের মাঝে আবার নীরবতা নেমে এলো। ফুলের বাহার থাকলেও কোথাও কোনো আলো নেই। লজ্জা পাচ্ছি না বললেও আমি ভেতর ভেতর লজ্জায় পুড়ে যাচ্ছি।
এতো গভীর আর শব্দহীন কেন রাতটা? অজানা অনুভূতি হু হু করে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরলো আমায়। ঘোমটা টেনে চুপ মেরে বসতেই দরজার আওয়াজ হয়। আমি আওয়াজ পেয়ে আরো সিটিয়ে বসে থাকি।
হৃদি তুমি লজ্জা আর ভয় পাচ্ছো কেন ? বি স্ট্রোং বেইব। সে তো তোমার।
নিজেকে নিজে হাজার সান্ত্বনার বাণী দিলেও চাঁদর খামচে ধরে বসে আছি। সে আমার পাশে গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে এসে হাতের ঘড়ি খুলে স্বাভাবিক কন্ঠে বললেন,
–‘ পাশের সেন্টার টেবিলের উপর জামা রাখা ।ওইগুলা নিয়ে চলো আমার সাথে।’
আমি লজ্জা ভুলে ঘোমটা ফেলে দিয়ে চোখ বড় বড় করে বললাম,
–‘ মানে ? কোথায় যাবো বাসর ঘর ফেলে।’
উনি আমার কথা শুনে ঠোঁট বাকিয়ে হাসলেন। বেডের উপর দুইহাত রেখে ভর দিয়ে ঝুকে দাঁড়িয়ে বললেন,
–‘ বাসর ঘর লাগে না-কি ? মনের বাসর ঘর হচ্ছে বড় বাসর ঘর।যেখানে তুমি আমি আর ভালোবাসার স্পর্শ গুলো থাকবে।’
ভুলে যাওয়া লজ্জা আবার ছুটে এসে লুটোপুটি খেলো আমার সারা মুখ জুড়ে। আমি আবার ঘোমটা টেনে লজ্জায় লাল হয়ে বসে থাকলাম। আমার কাজ দেখে হাসছেন উনি। উফফ! হাসির কি হয়েছে ?
উনি হাসি থামিয়ে সেন্টার টেবিল থেকে একটা প্যাকেট নিয়ে আমার হাত ধরে বললেব,
–‘ চলো। ‘
আমি বিস্ময় নিয়েই উঠে দাঁড়ালাম।উনি আমার হাত টেনে বারান্দায় নিয়ে গিয়ে ফিসফিস করে বললেন,
–‘ চুপ করে দাঁড়াও। বিচ্ছু বাহিনীর কান্ডকারখানা দেখতে।’
উনি আমার হাত দেয়ালে চেপে ধরে একদম কাছ ঘেষে দাঁড়ালেন। উনার প্রত্যেকটা শ্বাস-প্রশ্বাস আছড়ে পরছে আমার উপর। ভেরর তোলপাড় হয়ে যাচ্ছে ক্ষণে ক্ষণে।
উনার ভাবান্তর নেই। অনেকক্ষণ যাবৎ দাঁড়িয়ে থেকে আমার বিরক্তি লাগতেই উনাকে কিছু বলার জন্য তাকাতেই দেখি সে উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অন্ধকার রুমের ভেতর।
আমিও তার দৃষ্টি অনুসরণ করে তাকাতেই দেখতে পেলাম ওয়াশরুম থেকে কেউ একজন বেরিয়ে হাত দিয়ে ইশারা করে ডাকছে ভেতরে থাকা কাউকে।
আরেকজন হাতে বালটি নিয়ে চুপিচুপি আগে বেরিয়ে আসা মানুষটার দিকে বাড়িয়ে দিতেই সে বেডের দিকে এগিয়ে এসে কিছু একটা ঢেলে দেয় আর পাশের জন ভোঁ দৌড় মারে দরজা খুলে। আমি কিছু বুঝতে না পেরে তাকিয়ে আছি তবে সে হাসছে।
–‘ নোমাইন্না শালা ! তুই রঙ আমার উপর ঢালছোস।’
রুমের লাইট জ্বেলে উঠতেই দেখতে পেলাম বেডের চিপায় আদি ভাইয়া লাল রঙে ভুত হয়ে আছে। নোমান ভাইয়া বালটি হাতে দাঁড়িয়ে। মিম আপু জান্নাত,নীতি আরিফ ভাইয়া আদি ভাইয়ার কথা শুনে দৌড়ে আসতেই আদি ভাইকে দেখে হাসিতে ফেঁটে পরে । আমিও শব্দ করে হেসে উঠতেই উনি মুখে হাত দিয়ে ঢেকে বললেন,
–‘ হুশশ! ‘
.
.
বাড়ির পেছেনে আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে আসলেন উনি। সুন্দর ভাবে একটা মই উপরে উঠে গেছে উপরের দিকে। আমি অবাক চোখে তাকাতেই উনি বললেন,
–‘ বাসর ঘর চেয়েছিলে না ? সেটা উপরে মাই লেডি।’

–‘ কিন্তু ..!’

–‘ কোনো কিন্তু না। তোমার ইচ্ছা ছিলো না ? চিলেকোঠার ঘর,পূর্ণিমা রাতে বাসর করার ! সেই ব্যবস্থা করেছে আপনার প্রেমিক।’

–‘ সব ইচ্ছা একদিনেই পূর্ণ করবেন বুঝি ?’

উনি আমার কথা শুনে আমাকে টেনে নিয়ে বললেন,
–‘ প্রত্যেকটা ইচ্ছে প্রত্যেক দিন পূরণ করবো নতুন রঙে। তবে বাসর যে জীবনে একবার আসে।আর পরের গুলা ভালোবাসা ময় রাত বুঝলে।’
আমি লজ্জায় কুঁকড়ে গিয়ে জবাব দিতে পারলাম না। মই দিয়ে দ্রুত পায়ে উপরে উঠতে গেলে উনি পেছনে থেকে সাপোর্ট দিয়ে বললেন,
–‘ ভয় পেয়ো না ! আমি আছি।’
.
.
চিলেকোঠার দরজা খুলতেই আমার মুখ হা হয়ে যায়। সম্পূর্ণ ঘর জুড়ে বেলী,রজনীগন্ধা,সাদা রঙের বিভিন্ন ফুলের ডেকোরেশনে মোমের আলোয় আলোকিত ঘর। আমার অবাক দৃষ্টি দেখে উনি হাত ধরে টেনে প্যাকেট খুলে সাদা রঙের সুন্দর কাজ করা শাড়ি ধরিয়ে দিয়ে বললেন,
–‘ শুভ্র রাতে অন্য কোনো রঙ নিষিদ্ধ।’
আমি হাসলাম উনার কথা শুনে। শাড়ি হাতে এগিয়ে গেলাম ওয়াশরুমে।
কিছুক্ষণ পরে বেরিয়ে আসতেই দেখি উনি ভেজা গায়ে হাফ প্যান্ট পরে সটান হয়ে ফুলে সজ্জিত বেডে শুয়ে আছেন। প্রশস্ত আর লোমশ বুকে বিন্দু বিন্দু পানি জমে আছে। উনাকে এইভাবে দেখে আমি তাড়াহুড়ো করে আবার ওয়াশরুমে গিয়ে শব্দ করে দরজা দিয়ে জোড়ে শ্বাস নিলাম। এতোক্ষণ দম আটকে ছিলো মনে হচ্ছে।
উনি দরজার শব্দ পেয়ে আওয়াজ করে বললেন,
–‘ তোমার হয়ে গেছে ? ‘
আমি জবাব দিলাম না। বুক ঢিপঢিপ করছে। উনি দরজায় আঘাত করে আবার বললেন,
–‘ কিছু লাগবে ?’
–‘ন..না। আপনি ফ্রেশ হয়েছেন ? ‘
–‘ হ্যাঁ,নিচে গিয়ে। ওরা রুম থেকে চলে গিয়েছে।বের হও।’
আমি আর উত্তর দিলাম না। উনি ব্যতিব্যস্ত কন্ঠে আবার বললেন,
–‘ এখন বের না হলে দরজা ভেঙে ফেলবো কিন্তু।’
বলেই জোরে জোরে আঘাত করলেন। আমি হন্তদন্ত হয়ে খুলে দিয়েই উনার উদাম বুকেই মুখ গুজে দাঁড়িয়ে পরি।
আমার শরীর কাঁপছে। উনি আঁকড়ে ধরে সশব্দে হেসে বললেন,
–‘ এখন লজ্জা করছে না ??’
–‘ না।’
উনি আবার হাসলেন। ঘুরিয়ে কোলে উঠিয়ে নিয়ে বললেন,
–‘ আমার তোমাকে চাই।খুব করে চাই।সম্পূর্ণ নিজের করে।’
আমি উত্তর দিলাম না। কিছু নীরবতা ভালোবাসার সাক্ষী।
চাঁদের স্নিগ্ধ আলো গুলোও উনার স্নিগ্ধতার সাক্ষী সাথে ভালোবাসায় ডুবে যাওয়া এককেটা মূহুর্তের।
চলবে…..

~মন্তব্যে করবেন সকলে।~♥