শুভ্র রঙের প্রেম পর্ব-৩৫+৩৬

0
1567

#শুভ্র_রঙের_প্রেম
#পর্বঃ৩৫

লেখিকা~#রুবাইদা_হৃদি

প্রাচীর ঘেরা মাঠটার মাঝে অবাক চোখে দাঁড়িয়ে সামনে তাকিয়ে দেখে চলেছি৷ স্তব্ধ চোখ জোড়ায় হালকা বিস্ময় আমার! কানের পিঠে অবাধ্য চুল গুলো গুজে সামনে এগিয়ে গেলাম ৷ উনি হাটু মুড়ে বসে পাঁচ বা ছয় বছর বয়সী ছেলেটির হাত ধরে আহ্লাদী কন্ঠে রাগ ভাঙানোর চেষ্টা করছেন ৷ উনি ছেলেটের ব্যান্ডেজ করা হাতটি ধরে বললেন,
–‘ এখনো ব্যথা আছে বাবাই? ‘
ছেলেটি ব্যথাতুর কন্ঠে বলল,
–‘ তোমার ঘাঁ শুকিয়েছে তো? ‘
ছেলেটির কথা শুনে হাত উঁচিয়ে দেখিয়ে বললেন,
–‘ স্ট্রোং ম্যান দের ব্যথা বেশিদিন থাকে বুঝি! আমার ব্যথা তো সেদিন একটা পরীর ছোঁয়ায় দৌড়ে পালিয়েছে৷ ‘
ছেলেটি না বুঝে এক পলক তাকিয়ে কিছু একটা মনে করে উল্লাসিত কন্ঠে বলে উঠলো,
–‘ তোমার শুভ্র পরী! ‘
–‘ হু৷ ‘ উনি আমার দিকে ইশারা করে বললেন৷ ছেলেটি উৎসাহ নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে এক চিলতে হাসলো ৷ উনার সামনে থেকে আমার কাছে এসে বলল,
–‘ বাবাই,উনি তো সত্যি পরী ৷ আমার দেখা সত্যিকারের ৷ ‘
আমি ছেলেটির কথা শুনে অপ্রস্তুত হাসলাম ৷ ওর
মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললাম,
–‘ নাম কী তোমার? ‘
–‘ হাসু ছিলো তবে বাবাই বলেছে আমার নাম এখন থেকে…
ও বলেই প্রশ্নসূচক চোখে তাকালো উনার দিকে৷ উনি মিষ্টি হেসে বললেন,
–‘ মিরাজ৷ ‘
–‘ বাহ! তোমার বাবাই তো সুন্দর নাম দিয়েছে তোমায় ৷ আমাকে চেনো তুমি? ‘
আমার প্রশ্ন শুনে মিরাজ চোখ নামিয়ে কি বলবে ভাবছে ৷ উনি হাসি হাসি মুখ নিয়ে তাকিয়ে বললেন,
–‘ সে জানে তুমি কে! শুধু লজ্জা পাচ্ছে বলতে৷ ‘
উনার কথা শুনে মিরাজ মাথা উঠিয়ে চঞ্চল পায়ে কিছুটা দূরে দৌড়ে গিয়ে বলল,
–‘ তুমি আমার বাবাইয়ে বউ ৷ সাথে আমার বাবাইয়ের ব্যাক্তিগত পরী ৷ ‘
আমি জোরে হেসে উঠলাম ওর কথা শুনে ৷ উনি সতর্ক করে মিরাজের উদ্দেশ্য বললেন,
–‘ আস্তে যাও ব্যথা পাবে ৷ ‘
উনার কথা অগ্রাহ্য করেই মিরাজ একছুটে ভেতরে চলে গেলো ৷ উনি কিছুক্ষণ সেই দিকে তাকিয়ে আমার দিকে তাকালেন ৷ আমি এখনো হেসে চলেছি ৷
এক পাঁ-দু পাঁ করে সামনে এসে দাঁড়াতেই আমি হাসি থামিয়ে তাকিয়ে রইলাম ৷ উনি মাথার চুল পেছনে ঠেকে দিয়ে বললেন,
–‘ সেদিন ব্যথা পেয়েছিলাম বলে দুনিয়া আঁধার করে ফেলেছিলে না? এই সেই ব্যথা পাওয়ার কারণ৷ তবুও দেখো রিস্ক নিয়েল ছেলেটা অনেক ব্যথা পেয়েছে ৷ ‘
নীতির বিয়ের আগের ঘটনা! তার হাত ছিলে গিয়েছিলো ৷ তারমানে মিরাজ সেদিন এক্সিডেন্ট করেছিলো ৷
–‘ ওর বাবা-মা নেই? ‘
–‘ বাবা আছে৷ মা কোথায় ও জানে না৷ মিরপুরের পাশের বস্তিতেই থাকে ৷ এক্সিডেন্ট এর পর খবর দিলে দেখতেও আসে নি ৷ তাই আমি এখানেই রেখেছি ৷ ‘
আমি ছোট করে,’ ওহ ‘ বলে আবার প্রশ্ন করলাম,
–‘ বাবাই কেন ডাকে? ‘
উনি আমাকে ঘুরিয়ে টেনে গাড়ির দিকে নিয়ে যেতে যেতে বললেন,
–‘ আমি ডাকি তাই সেও ডাকে ৷ ‘
.
.
আকাশ মেঘাচ্ছন্ন৷ চারদিকে গুমোট ভাব ৷ থেকে থেকে দমকা বাতাস উঠে আবার মিলিয়ে যাচ্ছে কোলাহলের ভীড়ে ৷ ভারী সাজে বসে আছি আমি ৷ আজ একদম লাল রঙের লেহেঙ্গা পরেছি৷ লাল নাকি বিয়ের রঙ! বিয়ের দিন যেহেতু লাল পরি নি তাই আজ লাল রঙ সাজেস্ট করেছেন উনি ৷ হাত ভর্তি মেহেদী৷ ব্রাইডাল মেকওভার ৷ পাশেই আমাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে বিচ্ছু বাহিনী ৷ মীম আপু এককোণায় চেয়ারে বসে আছে৷
সকালে এনজিও থেকে ফেরার পর থেকেই একের পর এক ঘূর্ণিঝড় বয়ে যাচ্ছে আমার উপর দিয়ে৷ ওখান থেকে ফিরেই, পার্লারের উদ্দেশ্য পাঠিয়েছে আম্মু৷ সেখানে থেকে এখন আবার কমিউনিটি সেন্টারে ৷
কোথায় কোথায় থেকে লতাপাতার মতো আত্মীয় স্বজন জোগাড় করে এনেছে আমার আম্মু আল্লাহ জানেন। এদের কোলাহল আমার খিদের পরিমাণ গণহারে বাড়িয়ে দিচ্ছে ৷ সেই সাথে উনাকে সেই সকাল থেকে না দেখার তৃষ্ণা৷
জান্নাত আমার পাশে বসে রাফিনের সাথে হাসাহাসি করছে৷ আমি মৃদু স্বরে বললাম,
–‘ সে কোথায়? ‘

–‘ সে আবার কে? বল আমার জামাই কোথায়৷ বিয়ে হইছে এখন আবার ঢং কিসের তোর? সবার সামনে চিল্লায় ডাকবি,ওগো তুমি কোথায়! ‘
রাহাত ওদের পেছনে থেকে একপ্রকার চিল্লিয়ে বলল৷ মুরব্বি গুষ্ঠি সব বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে আছে ৷ আমি সবার দিকে তাকিয়ে চোখ ঘুরিয়ে রাগী চোখে তাকালাম৷ ও হে হে করে হেসে মিনমিনে স্বরে বলল,
–‘ আমি দেখতেছি দুলাভাই কোথায়৷ তাও এমন রাক্ষসীর মতো তাকাইস না৷ নজর লাইগা যাইবো৷ ‘

–‘ রিসেপশন শেষ হতে দে, আমার ভদ্রতা ঝেড়ে ফেলে দিবো একদম ৷ ‘
আমার দাঁতে দাঁত চেপে বলা কথায় রাহাত ছুটে চলে গেলো৷ নীতি কিছুটা দূরে আরিফ ভাইয়ার সাথে কি বিষয়ে যেন আলোচনা করছে ৷ আমি ডেকে ওকে বললাম,
–‘ সারাজীবন পরে আছে ভাই, ভাইয়ার সাথে কথা বলার ৷ একটু আমাদের দিকে নজর টজর দে৷ ‘

–‘ শালীসাহেবা আপনার উনি পাশে নেই তাই বুঝি আমাদের প্রেমে ফোড়ন কাটছেন? ‘

আমি জবাব দেওয়ার আগেই গেটের দিকে চোখ পরলো ৷ কালো শেরওয়ানি,বা সাইটে স্টোনের ব্রুজ৷ হাতে আজ সোনালি রঙের ঘড়ি ৷ আলগা বাতাসে সিল্কি কালো চুল গুলো কঁপাল ছুঁয়ে ছুঁয়ে যাচ্ছে ৷ পাশে একটা ছেলের সাথে হাত নাড়িয়ে কথা বলতে বলতে এগিয়ে আসছেন ৷ আমি এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি৷ জান্নাত খোঁচা মেরে ফিসফিস করে বলল,
–‘ আস্ত হাতি ঢুকে যাবে ৷ মুখ বন্ধ করো আপ্পি৷ ‘
আমি জলদি চোখে সরিয়ে আমতা আমতা করতে লাগলাম ৷ অবাধ্য চোখ দুটো তবুও উনাতেই আটকে যাচ্ছে ৷ একদম মাঝ বরাবর দাঁড়িয়ে উনি এখন আব্বু আর মামার সাথে কথা বলছে ৷
কিছুক্ষণ বাদে আদি ভাইয়া আসতেই জান্নাত বলল,
–‘ আদা কিন্তু বাসী আদার মতো না! কিছু সময় ফ্রেশ আদা তবে মাঝে মাঝে বস্তাপঁচা ৷ তাই না হৃদি আপু? ‘
–‘ হ্যাঁ! তবে আমার সে তো সব সময় অতিরিক্ত মাধুর্যতায় ঘেরা৷ ‘
সে আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসতেই দম আটকে এলো আমার ৷ দাঁড়ানো থেকে বসে পরে রাফিন কে বললাম,
–‘ ভাই বাতার কর চারদিকে গরম৷ ‘
–‘ এসি তো চলছে! ‘
–‘ করতে বলেছি করবি৷ আর তা না হলে তোর ভাইয়াকে দূরে রেখে আয় ৷ ‘
জান্নাত আর রাফিন আমার কথা শুনে হেসে গড়াগড়ি খেলো ৷ আমি আবার তাকিয়ে দেখি আমার মামার একমাত্র মেয়ে ঝিনুক উনার দিকে তাকিয়ে আছে ৷ আমার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় জানান দিচ্ছে,
‘ এই মেয়ে আমার অবলা জামাইটার উপর ক্রাশ খেয়ে মরমে মরে যাচ্ছে ৷ ‘
উনার কাছে ঝিনুক এগিয়ে যেতেই সৌজন্যের হাসি হেসে পাশ কাটিয়ে চলে আসে স্টেজের দিকে৷ আমি উনাকে দেখেই মুখ ঘুরিয়ে নিলাম ৷ সে বাকি সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলল,
–‘ রাগ রাগ গন্ধ পাচ্ছি কেন গাইস? ‘
–‘ তোর সামনেই রাগের রোস্ট,পোলাও সব হচ্ছে৷ ‘
মীম আপু ক্লান্ত গলায় বললেন৷ উনি চেয়ারের উপর ঝুঁকে দাঁড়ালেন ৷ সব রাগ ফুরিয়ে এখন অস্বস্তি হচ্ছে ৷ সবাই মিটিমিটি হাসছে ৷ আমি কপট রাগ দেখিয়ে বললাম,
–‘ কি হচ্ছে? উঠে দাঁড়ান৷ ‘
–‘ না! ‘
–‘ থাকুন এইভাবে৷ মানুষ কি ভাবছে বলেন তো? ‘
আমার কথা শুনে উনার ভাবান্তর হলো না৷ উল্টো চোখে মেরে বলল,
–‘ আজ তোমার রেহাই নেই৷ ‘
আমি জবাব দিলাম না৷ কাটকাট হয়ে বসে রইলাম৷ উনি এখনো সেইভাবে দাঁড়িয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন৷ তার দৃষ্টিজোড়ায় হাজার খানিক ভালোবাসার ছটা ৷
একটু পর আদি ভাইয়া প্লেট ভর্তি খাবার নিয়ে এসে সব নামিয়ে হাত দিয়ে মাছি তাড়ানোর মতো করে উনাকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
–‘ ভাই, সারাজীবন দেখতে পাবি ৷ আশেপাশে। মানুষজন আছে একটু কন্ট্রোল কর৷ তোর এই বেহায়াপনার জন্য আমার কঁপালে এই জান্নাতের মতো খিটখিটে মেজাজের বউ জুটবে ৷ ‘
জান্নাত আদি ভাইয়ার কথা রাফিনের হাত টেনে ওর হাত দিয়েই দুম করে একটা কিল বসিয়ে দিলো৷ আদি ভাইয়া বেঁকিয়ে উঠতেই রাফিন একলাফে পেছনে সরে গিয়ে বলল,
–‘ জান্নাত আপুর কাজ৷ আমি নির্দোষ ৷ ‘
আদি ভাইয়া কটমট চোখে তাকাতেই জান্নাত উপেক্ষা করে ওড়না উড়িয়ে চলে যায় ভেংচি
কেটে ৷
আমি অসহায় চোখে আশেপাশে তাকাচ্ছি৷ সবাই নির্লজ্জ উপাধি টা বোধহয় ট্যাগ লাগিয়ে দিয়েছে আমাদের উপর ৷ উনি সামনে থেকে সরে গিয়েও পাশের সোফায় বসে আদি ভাইয়াকে ইশারা করেন খাবার এগিয়ে দিতে ৷ খাবারের থালা দেখে ঝিমিয়ে থাকা খিদে মাথাচারা দিয়ে উঠলো৷ রাগ আর অস্বস্তি ভুলে হাসি হাসি মুখ নিয়ে বললাম,
–‘ আমার জন্য? ‘

–‘ কে বলেছে,তোমার জন্য? কালকের শর্ত ভুলে গেছো? শর্ত মোতাবেক খাইয়ে দেও৷ ‘

–‘ পাগল হয়ে গেছেন? এখানে কি ভাবে! ‘
উনি আমার হাতে থালা ধরিয়ে দিয়ে নিরলস ভাবে বললেন,
–‘ চুমু দিতে বলি নি৷ খাইয়ে দিতে বলেছি! ‘
আমি অসহায় চোখে তাকালাম ৷ প্রায় সবাই আমাদের দিকে’ই তাকিয়ে আছে৷ কি জ্বালা!
আমি থম মেরে বসেই আছি ৷ সে থালা কেড়ে নিয়ে বলল,
–‘ কঁপালে বউয়ের সেবা নেই তোর স্নিগ্ধ ৷ কি আর করবি বল! দেখ আশেপাশে কত রমণী আছে তাদের পটাতে পারিস কিনা ৷ ‘
আমি উনার কথা শুনে ছোঁ মেরে খাবারের থালা নিয়ে কপট রাগ দেখিয়ে বললাম,
–‘ অতিরিক্ত ঢং যে ছেলেরাও করে তা আপনাকে না দেখলে বুঝতে পারতাম না ৷ ‘

–‘ এই ছিলো কঁপালে তোর…. ‘ উনি হা করতেই আমি খাবার উঠিয়ে মুখে পুরে দিয়ে শাসনের সুরে বললাম,

–‘ আর একটা শব্দ উচ্চারণ করবেন না৷ কথায় কথায় ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করার ট্রেনিং কোথা থেকে নিয়েছেন বলুন তো? ‘

–‘ আমার বউয়ের কাছে থেকে৷ ‘

উনার উক্ত কথা ঠান্ডা মাথায় আমাকে অপমান করা৷ কথা শুনে রাগে ফেঁটে পরলেও হাসি মুখ নিয়ে সহ্য করে যাচ্ছি ৷
শুধু রাগ ক্ষাণিক হজম করে বললাম, ‘ সময় আমারও আসবে মিস্টার.! ‘
উনি হেঁসে বললেন,
–‘ জলদি আসতে বলো আমি দু হাত বাড়িয়ে অপেক্ষা করছি৷ ‘
__________________________

ঘড়ির কাঁটায় এখন সকাল ০৯ঃ২৩! বাইরে থেমে থেমে বৃষ্টির আনাগোনা৷ পশ্চিমের জানালা দিয়ে দমকা হাওয়ার সাথে বৃষ্টির ফোঁটা গুলো গায়ে মেখে দিচ্ছে ৷ বেলীফুলের গাছটায় ফোঁটা ফুল গুলোকে ভিজিয়ে আরো সতেজ করে দিচ্ছে রহমতের পানি৷ চুইয়ে চুইয়ে পানি পরছে শিউলি আর কৃষ্ণচূড়ার পাতা বেয়ে ৷ টানা কয়েকদিনের গরমে হাঁপিয়ে উঠা প্রকৃতিকে ভেজা পরশে নাইয়ে দিচ্ছে বৃষ্টির ফোঁটা৷ আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে একদৃষ্টিতে পানির বর্ষণ দেখে চলেছি ৷
বিবাহিত জীবনের আজ পঞ্চম দিন ৷ এক একটা দিন রঙিন সাথে হাজারো স্বপ্নের ফুলছড়ি নিয়ে কেটে যাচ্ছে ৷ আজ বিকেলে মিরপুর যাওয়ার কথা থাকলেও মনে হচ্ছে না এই বৃষ্টি মাথায় করে যাওয়া হবে ৷ ভেবেই মন উদাসীনতায় ভরে উঠলো৷

আমার ভেজা চুল গুলো থেকে টপটপ করে বৃষ্টির মতোই গড়িয়ে পরছে পানি ৷ সেইদিকে আমার খেয়াল নেই কোনো ৷
–‘ চুলে থেকে পানি পরছে সেই খেয়াল কি আছে আপনার? ‘
আমি কেঁপে উঠলাম ৷ উনি একহাতে কোমর জড়িয়ে আরেকহাতে মাথার চুল গুলো তোয়ালে দিয়ে মুছে দিতে দিতে বললেন ৷ আমি ফ্রিজড হয়ে দাঁড়িয়ে আছি ৷ উনি কঁপাল কুঁচকে বললেন,
–‘ কি হয়েছে? ‘
–‘ ক..কই কি হয়েছে! দিন আমি মুছে নিচ্ছি ৷ ‘
আমি ঘুরে নিতে গেলেই উনার বুকের সাথে ধাক্কা খাই ৷ সে আমাকে পাত্তা না দিয়ে মনোযোগ দিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন ৷ চোখের পলক ফেলছেন না একদম ৷ আমার দিকে না তাকিয়ে’ই বললেন,
–‘ মন-প্রাণ উজাড় করে দেখেও দেখেই চলেছো? এতো নির্লজ্জ কবে হলে!’

–‘ দূরে যান তো! নিজে যখন দেখেন আমি কিছু বলি? ‘

উনি জবাব না দিয়ে ঘুরিয়ে তার বুকের সাথে আমার পিঠ ঠেস দিয়ে দাঁড় করালেন ৷ ঘাড়ে আলতো স্পর্শ করে ঘোর লাগা কন্ঠে বললেন,
–‘ বৃষ্টিরা কতো রোম্যান্টিক দেখেছো? একে অপরকে জড়িয়ে কি সুন্দর নেমে পরছে মানুষের প্রেমের বুকে ৷ ‘

–‘ হু! ‘
–‘ সেদিনের আনা সাদা নীল মেশানো পাড়ের শাড়িটা পরো নি কেন? ‘
–‘ পরার কথা ছিলো বুঝি! ‘
উনি আমাকে যেভাবে ঘুরিয়েছিলেন সেইভাবেই ঘুরিয়ে কঁপালে কঁপাল ঠেকিয়ে বললেন,
–‘ সাথে হাত ভর্তি নীল কাঁচের চুড়ি পরে আসো আজ বৃষ্টিস্নাত রাস্তায় হাটবো ৷ ‘
আমার কি হলো কে জানে ৷ হুট করে একটা আবদার করে বললাম,
–‘ শাড়িটা আপনি পরিয়ে দিবেন মিস্টার.হাসব্যান্ড?’
উনি কিছুক্ষণ ভেবে আমাকে ছাড়িয়ে দ্রুত পায়ে চলে গেলেন ৷ শাড়ি হাতে ফিরে এসে মেলে দিয়ে বললেন,
–‘ স্নিগ্ধ ইউ ক্যান ডু ইট! তুমি পারো না এই ওয়ার্ড ডিকশনারিতে নেই৷ ‘
আমি হাসলাম ৷ উনি শাড়ি গুছাতে ব্যস্ত হয়ে হেরে গিয়ে বললেন,
–‘ শাড়ি গুছানোর চেয়ে তোমাকে সামলানো বড্ড সহজ৷ এই শাড়ি তুমি সামলাও আর আমি তোমাকে ৷ ‘
.

বৃষ্টির শব্দ সেই সাথে আমার হৃৎপিন্ডের শব্দ মিলেমিশে যাচ্ছে৷ আমার চিবুক বেয়ে গড়িয়ে পরছে পানি ৷ উনার কি হলো কে জানে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে গালে, মুখে চুমু দিয়ে বললেন,
–‘ আমি সর্বক্ষণ তোমাকে নিয়ে থাকতে চাই ৷ হাজারো বৃষ্টিতে ভিজতে চাই! ‘
–‘ ঠান্ডা লাগার আগে বাড়িতে ফিরতে চাই৷ ‘ আমি উনার সাথে তালে তাল মিলিয়ে বলতেই উনি হাসলেন ৷ চুল বেয়ে উনার চোখ মুখে গড়িয়ে পরছে পানি ৷ চোখের পাপড়ি গুলো ভিজে গেছে ৷ আমি বিড়বিড় করে বললাম,
–‘ আপনি আপনার মতোই স্নিগ্ধতায় ঘেরা স্নিগ্ধ৷ ‘
চলবে…
~

#শুভ্র_রঙের_প্রেম
#পর্বঃ৩৬

লেখিকাঃ#রুবাইদা_হৃদি
মাটি থেকে উঠে আসা ঠান্ডা ভাব সাথে ঘাসে জমে থাকা বৃষ্টির ফোঁটা গুলো অনাবিল শান্তি দিচ্ছে ৷ ঝকঝকে রোদের আলোতে বিন্দু বিন্দু পানি গুলো চিকচিক করে উঠছে৷ জুতো হাতে খালি পায়ে পুরো ক্যাম্পাসের মাঠ জুড়ে আমি ছুটোছুটি করছি ৷ নীতি আর রাহাত ক্রুর চোখে তাকিয়ে আছে ৷ আঁচল ছাড়িয়ে দিয়ে রাহাতের দিকে তাকিয়ে বললাম,
–‘ ফটাফট আমার একটা ছবি তুলে তোর প্রেমের গুরুর কাছে পাঠিয়ে দে তো! ‘
–‘ পারুম না! আমার ঠ্যাকা লাগছে? ‘
–‘ ফারিহার সাথে সম্পর্ক জোড়া লাগানোর জন্য পায়ে ধরলেও আমার আর ঠ্যাকা লাগবে না ৷ ডিরেক্ট মশলা মিশিয়ে তোর সিঙ্গেল লাইফ পার্মানেন্ট করে দিবো৷ ‘
ও বিরস মুখে মোবাইল বের করে ছবি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পরলো৷ আমি নীতিকে টেনে নিয়ে রাহাতকে বললাম ওর ছবি ওর নিরামিষ জামাইয়ের কাছে পাঠাতে ৷
আমার কথা শুনে নীতি ক্ষেপে উঠে বলল,
–‘ পাঠাতে হবে না৷ ও থাকুক ওর কাজ নিয়ে৷ ‘
আমি আর রাহাত সুর টেনে বললাম,
–‘ ওওওওও! ‘
নীতি লজ্জা পেয়ে অন্যদিকে ঘুরে গেলো৷ আমি ধাক্কা দিয়ে বললাম,
–‘ তোর ও এর সাথে বুঝি ঝগড়াঝাটি হয়েছে? তাই এই ক্ষেপা বাঘিনী রুপ! ‘
–‘ সারাদিন অফিস আর রাতে পড়াশোনা ৷ আমার দিকে নজর দেওয়ার একদম টাইম নেই৷ স্নিগ্ধ ভাইয়াকে দেখ কতো কেয়ার করে তোর! ‘
বট গাছের নিচে ইটের শান বাধানো জায়গায় বসে অবাক চোখে তাকিয়ে বললাম,
–‘ হ্যাঁ! এইজন্যই তো গত দুইদিন মহাশয়ের কোনো পাত্তাই নেই ৷ ঢাকা এসেই এনজিও তে চলে গেছে ৷ দিনে একবার ফোন দিয়ে ক্লান্ত গলায় গম্ভীর সুরে বলবে,
হৃদি, তুমি খাবার নিয়ে এতো অলসতা কেন করো? রাফিন কিন্তু টাইম টু টাইম খবর দিচ্ছে আমায়৷ কাজ শেষে ফিরতে দেও তোমার হেয়ালি করা ছুটাবো আমি ৷
গত দুইদিন উক্ত কথা বলেই ফোন কেটে দিয়েছে ৷
আমার কথা শুনে নীতি আর রাহাত হাসিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে ৷ এর মাঝেই মাধবী এসে বিরস মুখে আমাদের পাশে বসতেই রাহাত ছবি গুলো আমাকে দেখাতে দেখাতে ওকে উদ্দেশ্য করে বলল,
–‘ তোর আমের আঁটির মতো মুখ এমন বাকায় রাখছোস কেন? মনে হইতাছে,তোর জামাই কেউ কাইড়া নিয়া গেছে ৷ ‘
রাহাতের কথা শুনে মাধবী কাঁদো কাঁদো মুখে বলল,
–‘ তোর জানিস না? ‘
–‘ কি জানবো?’
–‘ স্নিগ্ধ স্যারের নাকি বিয়ে হয়ে গেছে ৷ আর উনি নাকি আর ভার্সিটিতেও আসবেন না৷ ‘
মাধবীর কথা শুনে নীতি আমার দিকে চোখ মারতেই আমি গম্ভীর চোখে তাকিয়ে হালকা হেসে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
–‘ কি বলিস! উনার বিয়েও হয়ে গেলো৷ ইশ!তুই তো প্রেমে পরার আগেই বড়সড় একটা ধাক্কা খেলি মাধবী৷ ‘
নীতি হাসি আটকিয়ে ওর কাঁধে হাত রেখে বলল,
–‘ উনার বউ নিশ্চয় অনেক সুন্দর হবে তাই না? ‘
মাধবী উৎসাহ নিয়ে বলল,
–‘ তবে আমার ধারেকাছেও যেতে পারবে না ৷ ‘
ওর অতিরিক্ত কনফিডেন্স আমাকে বিরক্ত করে তুলে বরাবর৷ নিজেকে কি ভাবে ও? আমি রেগে কিছু বলার আগে রাহাত বলল,
–‘ হৃদি ও তোর ধারেকাছে যেতে পারবো না? ‘
মাধবী আমার দিকে তাকালো৷ আমি মুখ ঘুরিয়ে নিতেই ও বলল,
–‘ আমি কি ওর কথা বলেছি না’কি? আজ স্নিগ্ধ স্যার এসেছেন দেখলাম ৷ সামির স্যার বলছিলো উনার বউকে নিয়ে এসেছেন ৷ উঁকিঝুঁকি মেরেও দেখতে পেলাম না৷ একটু পরেই দেখতে পাবো সবাই! তখন দেখা যাবে উনার বউ কেমন৷ ‘
মাধবীর কথা শুনে আমি একলাফে নেমে দাঁড়ালাম৷ অবাক হয়ে বললাম,
–‘ কোথায় আছেন উনি? ‘
–‘ মান্নান স্যারের কক্ষে৷ ‘
–‘ দেখেছিস আমাকে জানানোর প্রয়োজন মনে করে নি যে আজ আসবে ৷ ‘ আমি বলেই পাঁ বাড়ালাম৷ রাগ সংযত করার চেষ্টায় আছি৷ একে তো কাজে ব্যাস্ত তার উপর ফোন করেন না আবার আজ আসবেন সেটাও বলেন নি ৷ আমি কিছুদূর যেতেই সামনে তাকিয়ে দেখলাম মান্নান স্যারের সাথে কথা বলতে বলতে এগিয়ে আসছেন৷ আমি উনাকে দেখেই উলটো দিকে ঘুরে নীতিদের কাছে এসে আবারও চুপিসারে পাঁ উঠিয়ে বসে পরি৷ মাধবী আমাকে দেখে বলল,
–‘ স্নিগ্ধ স্যারের বউকে দেখতে যাচ্ছিলি বুঝি? ‘

–‘ প্রতিদিন দেখছি৷ একটু আগেও দেখলাম৷ তুই দেখবি বুঝি? দেখ দেখ৷ ‘

মাধবী আমার কথার ধরণ বুঝতে না পেরে তাকিয়ে আছে৷ আর আমি সামনে থেকে হেটে আসা মানুষটার দিকে ৷
উনি আর মান্নান স্যার আমাদের কাছে এসে দাঁড়াতেই আমি ভদ্রতার খাতিরে মিষ্টি হেসে সালাম দিলাম৷ সালামের জবাব নিলেও তাকাচ্ছেন না আমার দিকে৷ লজ্জা পাওয়ার দরকার আমার আর আমি’ই দিব্যি হেসে হেসে কথা বলছি আর উনাকে দেখো মাথা নীচু করে রেখেছেম । রাগ আঁকাশ ছুঁয়ে যাচ্ছে৷ এর মাঝেই ,মান্নান স্যার আমাদের উদ্দেশ্য করে বললেন,
–‘ মা শা আল্লাহ! দুইজনকে খুব ভালো মানিয়েছে৷ আমার দোয়া সব সময় তোমাদের সাথে থাকবে৷ ‘

–‘ দোয়া রাখবেন৷ ‘
–‘ অবশ্যই! তোমরা ভালো থাকো সব সময়৷ আর স্নিগ্ধ ফোন দিলে অবশ্যই আসবে ভার্সিটি৷ তোমার জন্য এখনো স্টুডেন্টরা রিকুয়েষ্ট করে৷ ‘

–‘ it’s my pleasure.’

উনারা আমাদের সামনেই বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করছেন৷ নীতি আর রাহাত পাশে বসে চুপ করে আছে সাথে আমিও৷ কিন্তু মাধবী বিস্ময়ে হা হয়ে আছে ৷ ওর বিস্ময় আরো বেড়ে গেলো যখন মান্নান স্যার চলে যাওয়ার পর উনি আমার সামনে দাঁড়িয়ে পকেটে হাত গুজে হালকা কেঁশে বললেন,
–‘ কেউ কি আমার সাথে আজ কথা বলবে না, রাহাত? ‘
–‘ আঁকাশে মেঘ জমেছে আজ !আপনার উপর বিদ্যুৎ চমকাবে তাই সাবধান৷ ‘
রাহাতের কথা শুনে ওরা হেসে চলেছে ৷ আমি উপেক্ষা করে বললাম,
–‘ আজ আসবেন জানালেন না কেন? ‘
উনি আমার ব্যাগ থেকে রুমাল বের করে আমার মাথা মুছে দিতে দিতে বললেন,
–‘ জ্বর এখনো যায় নি এর মাঝেই আবার বৃষ্টির পানি মাথায় পর‍তে দিয়েছো কেন? ‘
লজ্জায় মিইয়ে আশেপাশে তাকালাম৷ রাহাত নীতি চোখ বন্ধ করে একসাথে বলল,
–‘ আমরা কিছু দেখছি না৷ ‘
বলেই নীতি মাধবীর চোখের উপর একহাত দিয়ে দাঁত বের করে হেসে ঘুরে বসলো৷ আমি হতবাক ওদের কান্ডে।
উনি রুমাল আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে ওদের উদ্দেশ্য করে বললেন,
–‘ বউকে নিয়ে যাচ্ছি বিচ্ছু বাহিনী৷ পেছন পেছন আসবে না,একদম ৷ ‘
রাহাত চিল্লিয়ে, ‘ ওকে দুলাভাই! ‘ বলতেই আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে এলেন গাড়ির সামনে৷ আমি হাত ছাড়িয়ে অভিমান করে বললাম,
–‘ ফোন করেন নি কেন? ‘
–‘ তখন ফোন করলে আজও কাজ শেষ করে আসতে পারতাম না৷ ‘
আমি গাড়ির দরজা খুলে ভেতরে বসে জোরে লাগিয়ে দিয়ে বললাম,
–‘ সারাদিন আজ আমার ব্যাক্তিগত মানুষটাকে চাই ৷ যার কাছে শুধু আজকের সময় টা আমার জন্য শুধুমাত্র আমার জন্য শুধুমাত্র আমার জন্যই বরাদ্দ থাকবে৷ ‘
উনি মাথা দুলিয়ে হাসলেন৷ আমার পাশের ড্রাইভিং সিটে বসে হাতে হাত রেখে বললেন,
‘ ভেজা পাতার কারুকার্যে,তোমাকে খুজে বেড়াই ক্ষণে ক্ষণে
ভাবলে কি করে? তোমায় ছাড়া আছি আমি ভালো? ‘
আমি উনার বুকে মাথা রেখে চোখ বুজে প্রশান্তির শ্বাস নিলাম৷ এতো কোমল আর আদ্র কেন এই লোকটা?
আমি উনার দিকে তাকিয়ে দেখলাম উনি হাসছেন ৷ আমি মাথা উঁচু করে ছোট একটা পরশ দিয়ে চোখ বন্ধ করে একনাগাড়ে বললাম,
–‘ ভালোবাসি.. ভালোবাসি.. ভালোবাসি৷ ‘
_______________
রোদের মিষ্টি আলোর লুকোচুরি খেলা করছে বারান্দা জুড়ে ৷ ঢালা বর্ষণের মাস! চারদিকে কালো মেঘের আনাগোনা! সেই ফাঁকে দু এক টুকরো রোদের দেখা মিলছে৷ সদ্য ভিজে উঠা কদমের ডালে ডালে ফুল ফুঁটতে আরম্ভ করেছে ৷ হঠাৎ করেই ঝুম বৃষ্টির ঝমঝম আওয়াজে মুখোরিত আবার কখনো বিদ্যুৎ-এর ঝলকানি ৷
দূরে থাকা কদমের গাছটায় থেকে একজোড়া শালিক পাখি কিছুক্ষণ আগে হওয়া বৃষ্টির জন্য ভিজে একদম চুপ চুপে হয়ে একজন আরেক জনের গায়ের সাথে মিশে আছে৷ ভালোবাসা তো প্রত্যেক টা প্রাণীতে বিদ্যমান৷ সেটা পাখি হোক কিংবা মানুষ৷ তবে প্রকাশের ধরণ আলাদা ৷
গত বর্ষায় নবদম্পতির বৃষ্টি ভেজা দিনের কথা মনে হতেই স্নিগ্ধের বুকে মাথা গুজে ভারী নিঃশ্বাস ফেলতেই উনি একহাতে শক্ত করে ঝাপটে ধরে আমায় ৷
আর কয়টা দিন তারপরেই এক বছর হয়ে যাবে এই মানুষটার সাথে আমার পবিত্র সম্পর্কের বন্ধনের নাম ৷
স্নিগ্ধ আমার চুলে মুখ ডুবিয়ে ঘুমু ঘুমু কন্ঠে বলল,
–‘ এতো দ্রুত সকাল কেন হয়? ‘
আমি হাসলাম৷ প্রত্যেকদিন সকালে এই কথা দিয়েই দিন শুরু করেন উনি৷ আবেশে ল্যাপ্টে কঁপাল ছুঁয়ে আছে অবাধ্য চুল৷ প্রতিদিনের মতো আজও চুল গুলো সরিয়ে গাঢ় চুমু দিয়ে মুখে হাসির রেখা টেনে বললেন,
–‘ শুভ্রতায় রাঙা সকাল হোক শুভ্র পরীর ভালোবাসায়৷ শুভ সকাল! ‘
আমি উনাকে জড়িয়ে রেখেই বললাম,
–‘ আজ এনজিও তে যাবেন? ‘
–‘ যদি বলি না৷ ‘
উনার কথা শুনে আমি লাফিয়ে উঠলাম ৷ উনি মাথার নীচে হাত গুজে সন্ধিহান গলায় বললেন,
–‘ সারাদিন রোম্যান্স করার ইচ্ছা আছে বুঝি? ‘
আমি উনার কথা শুনে পাশে থাকা বালিশ ছুড়ে মেরে বললাম,
–‘ ছিঃ! কি সব কথাবার্তা৷ ‘
–‘ তাহলে আর কি! তুমি ভার্সিটি যাও আর আমি এনজিও তে৷ ‘
উনি গম্ভীর মুখে বললেন ৷ আমি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বললাম,
–‘ আচ্ছা৷ ‘
আমি উঠে নামতে গেলেই একটানে আটকে দিলেন আমায় ৷ আমি টাল সামলাতে না পেরে পরে যাই তার উপর ৷ ব্যথা পাওয়ার মতো শব্দ করে বললেন,
–‘ ভারী হয়ে গেছো বেশী৷ ‘
আমি রাগ দেখিয়ে বললাম,
–‘ ধরে রেখেছেন কেন? ছাড়ুন!’
উনি হাসলেন৷ হাতের বাধন আরো শক্ত করে বললেন,
–‘ তোমার স্নিগ্ধ ছোঁয়ায় নিজেকে হারাতে চাই৷ তোমার নরম হাতটি ধরে হাটতে চাই দূর অজানায়৷ হারিয়ে যেতে চাই অজানা সীমাহীন কোনো রাজ্যে! যাবে কি? ‘
আমি আহ্লাদী কন্ঠে বললাম,
–‘ সত্যি? গত কয়েক মাস ঢাকা টু চট্রগ্রাম যেতে যেতে আমি হাঁপিয়ে উঠেছি ৷ ‘
উনি আলতো ভাবে ঠোঁট ছুইয়ে বললেন,
–‘ এক্সাম শেষ হোক৷ ভালো মার্কস পাও ৷ তারপর! ‘
আমি অসহায় চোখে তাকালাম ৷ এই লোকের সব বিষয়ে পড়াশোনা কে কেন টানা লাগে? আমি সিউর, পড়াশোনার হাত-পা থাকলে ছুটে পালাতো উনার থেকে….
চলবে…..