শুভ্র রঙের প্রেম পর্ব-৩৭+৩৮

0
1733

#শুভ্র_রঙের_প্রেম
#পর্বঃ৩৭

লেখিকাঃ#রুবাইদা_হৃদি
রুমের ভেতর আলো নিভানো৷ রাস্তার ধারে থাকা ল্যাম্পপোস্টের আলো নিভু নিভু ভাবে আবছা করে তুলেছে চারিপাশ ৷ বেলীফুল থেকে তীব্র সুগন্ধ ভরে উঠেছে ঘরময় ৷ চোখ-মুখ জ্বলছে আমার৷ অতিরিক্ত কান্না করার জন্যই এই পরিণতি ৷ অস্থিরতা গ্রাস করছে ক্ষণে ক্ষণে৷ কান্নার সুর নেই তবে অভিমান গুলো নিগড়ে পড়ছে৷ দেয়াল ঘড়িতে পৌনে বারোটার ঘন্টা বাজতেই আমি নড়েচড়ে বসলাম ৷ ড্রয়িংরুমে আলো জ্বলছে সেই সাথে হুট হাট হালকা শব্দ ভেসে আসছে৷
দুদিন আগে ভার্সিটির মাঠে তিয়াস আবারও শাড়ির আঁচল ধরেছিলো৷ আমি ঘুরে পর পর দুইটা থাপ্পড় মেরেছিলাম ৷ খুব একটা ঝামেলা না হলেও এতো বড় ঘটনা ঘটবে আমি বুঝতেই পারি নি ৷
.
চারদিকে ভ্যাপসা গরমে হাসফাস অবস্থা৷ খা খা করছে রোদের তীর্যক রশ্মি৷ গরমে ঘেমে উঠা সর্বকুল৷ তিরতির করে একদল বাতাস ছুটে আসলেও মিলিয়ে যাচ্ছে পরিবেশ ঠান্ডা শীতল করার আগেই ৷ নীতি ক্লাসের মাঝেই বিরক্ত কন্ঠে বলে উঠলো,
–‘ চোখেমুখে পানি না দেওয়া পর্যন্ত শান্তি পাবো না৷’

–‘ দিয়ে আয় ! ‘

–‘ আমার সাথে তুই ও আয়৷ ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে সোজা নদীর পাড়ে চলে যাবো! দোস্ত মানা করিস না, প্লীজ৷ ‘
আমি ত্যাক্ত মেজাজে তাকাতেই ও হাত ধরে টেনে বের করে নিয়ে আসলো ৷ আজ রাহাত আসে নি৷ দূরে দেখলাম জান্নাত মেরুন কালারের জামা পরে কারো সাথে ফোনে কথা বলছে ৷ আমি নীতিকে ওয়াশরুমের দিকে পাঠিয়ে দিয়ে জান্নাতের দিকে এগিয়ে যাই৷
–‘ তোমারে বললাম আমারর বিয়া কর‍তে। আর তুমি না’কি অন্যের ট্যাগ লাগায়ছো এক বছর আগেই।’
পেছনে থেকে তিয়াসের কন্ঠের কথা শুনেই আমি ঘুরে তাকিয়ে দেখি ও আমার দিকে তাকিয়ে দাঁত বের করে হাসছে৷ টানা দেড় বছর পর ওকে দেখেই আগের রাগ মাথাচাড়া দিয়ে উঠলেও ঘুরে চলে যেতেই আমার আঁচলে টান দিতেই আমি ঘুরে থাপ্পড় মেরে দিতেই ও হেসে উঠে৷ ওর মতো নির্লজ্জ আর বেহায়া পুরো ভার্সিটিতে আর কেউ নেই ৷ মেয়েদের টিজ করা বিভিন্ন অপকর্মের সাথে লিপ্ত থাকার জন্য গত দেড় বছর ধরে পুলিশ ওকে খুজছে৷ এতোদিন পলাতক ছিলো আজ আবার কোথা থেকে আসলো? ভেবে পাচ্ছি না!
হাত-পা কাঁপছে আমার৷ কঁপাল বেয়ে গড়িয়ে পরছে ঘাম৷ তিয়াস হাসছে ৷ আমি চলে আসতে গেলে ও সামনে দাঁড়িয়ে গালে হাত বুলিয়ে বলল,
–‘ নরম হাতের চড়! মনের উথাল-পাথাল ঢেউ বাড়িয়ে দিয়েছে৷ ‘
–‘ সামনে থেকে সরুন৷ ‘
–‘ আচ্ছা গেলাম সরে৷ তবে চড়ের বদলে ফেরত কি দিবো? চুমু নিবে? ‘
বলেই গালে হাত দিয়ে ঘষে গা জ্বালানো হাসি হাসছে ৷ হাসি থামিয়ে আমার হাত ধরতে আসলেই মান্নান স্যারকে আসতে দেখে চলে যায়৷
সেদিনের ঘটনা নীতিকে বলতেই ও স্নিগ্ধকে জানাতে বলল। কিন্তু আমি না জানিয়ে নিজেই ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করি ৷ তবে আজ ভার্সিটি থেকে ফেরার সময় নীতিকে বিদায় দিয়ে আমি আর জান্নাত চৌ-রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে গাড়ির অপেক্ষায় ছিলাম৷ আর তখন তিয়াস কয়েকজন ছেলের সাথে এসে আমাকে অশ্রাব্য কথাবার্তা বলতে শুরু করে ৷ আশেপাশে মানুষের ভীড় থাকলেও ও তাদের চোখের সামনে থেকেই আমাকে জোর করে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে ৷ আমি ভয় পেয়ে জ্ঞান শূন্য হয়ে পরি৷ শুধু মনে হচ্ছিলো, ওর নোংরা স্পর্শ আমাকে ভেঙে গুড়িয়ে দিচ্ছে৷ জান্নাত ঘাবড়ে গিয়ে আশেপাশের সবাইকে হ্যাল্প করার জন্য এগিয়ে আসতে বললেও কেউ কথা আসে নি ৷ আমার এক হাত মুক্ত পেতেই আমি হিজাবের দুটো পিন মাথা থেকে খুলে তিয়াসের হাতে ঢুকিয়ে দিতেই হাতের বাঁধন আলগা হতেই আমি ওকে জোরে ধাক্কা মেরে ছুটে পিছিয়ে গিয়ে জান্নাতের হাত ধরে ভীড়ের মধ্যে দৌড় দেই ৷
সিএনজি পেতেই মিরপুর এসে পরি ৷
জান্নাত বারবার বলছিলো স্নিগ্ধকে ফোন দেওয়ার কথা কিন্তু আমি হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে শুধু ভাবছিলাম তিয়াস আমার হাতে স্পর্শ করেছে ৷ ঢুকরে বারবার কেঁদে উঠছিলাম৷ জান্নাত আমাকে বাসায় পৌছে দিতেই আমি রুমে গিয়ে দরজা লক করে বসে থাকি ৷ আম্মু,রাফিন,দাদুন সবাই বারবার জিজ্ঞেস করলেও কোনো উত্তর দিই নি ৷ সবাই বাধ্য হয়ে স্নিগ্ধকে আসার জন্য কল দিতেই উনি আসলেও আমি দরজা খুলি নি।
কিছুক্ষণ বাদে, নিজেকে সামলিয়ে দরজা খুলে দিতেই উনি কোনো কথা না বলেই হাত ধরে টেনে বাসার নিচে নিয়েই গাড়িতে বসতে বলেন৷ আম্মু বারবার জিজ্ঞেস করছে,’কি হয়েছে! ‘
উনি ভদ্রতা বজায় রেখে বললেন,
–‘ আমার সাথে ছোট একটা বিষয়ে কথা কাটাকাটি হয়েছে তাই রাগ করে আছে৷ ‘
–‘ এতো রাগ কেন তোর? ‘
আম্মু বলতেই উনি থামিয়ে দিয়ে বললেন,
–‘ বাসায় পৌছাতে অনেক রাত দেরি হয়ে যাবে আম্মু! আমরা বেরিয়ে যাই এখন৷ ফোন দিয়ে ইচ্ছামত বকে দিবেন আপনার মেয়েকে৷ বড্ড জ্বালায়া আমাকে ৷ ‘
অন্য সব দিন হলে আমি তেতে উঠতাম৷ কিন্তু আজ চুপ করে বসে হাত ঘষে যাচ্ছি বারেবারে৷ সবার থেকে উনি বিদায় নিলেও আমি মুখ ফুঁটে কিছু বললাম না ৷ উনি গাড়িতে উঠেই আমার হাত তার কোলের উপর রেখে গম্ভীর ভাবে শাসিয়ে বললেন,
–‘ চুপ করে বসে থাকো! ‘
আমি হাত টান দিতে গেলেই উনি চোখ গরম করে তাকাতেই আমি চুপ করে বসে থাকি৷
.
বাসায় পৌছে উনি ব্লেজার খুলে ছুড়ে ফেলে বললেন,
–‘ সাহসী হওয়া ভালো তবে সব চেপে গিয়ে অতিরিক্ত সাহসীকতা দেখাতে আমি বলি নি৷ ‘
আমি তবুও জবাব দিলাম না৷ উনি রেগে আমার কাঁধে হাত রেখে চিল্লিয়ে বললেন,
–‘ উত্তর দিচ্ছো না কেন? বোবা তুমি? এই মেয়ে এই! কি ভাবো তুমি নিজেকে? ‘
–‘ আ..আমি জানাতাম আপনাকে! ‘ কেঁপে উঠা কন্ঠে বলতেই উনি আমাকে ছেড়ে সেন্টার টেবিলে লাথি মারতেই তীব্র শব্দের আওয়াজে কেঁপে উঠলাম আমি৷ উনি রাগে নিজের ঘাড়ের পেছনের চুল হাত দিয়ে টেনে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
–‘ সব শেষ হওয়ার পর বলতে? তোমার ধার‍ণা আছে,আমি কি পরিমাণে টেনশনে থাকি তোমায় নিয়ে? আর সেই তুমি,গত দুইদিনে ঘটে যাওয়া সব ঘটনা আমাকে জানাও নি৷ ‘

–‘ আমি ভাবি নি তিয়াস আবার এমন করবে৷ ‘

–‘ তুমি তো কিছু ভাবোই না ৷ সব ভাবনা তো আমার৷ কাজের চাপ জানো তুমি? সেই চাপ বাদ দিয়ে আমি ভাবি,কী ভাবে তোমাকে সেভ রাখতে পারবো! আমি মরে যাওয়ার আগে যেন তোমাকে বাঁচিয়ে দিয়ে মরতে পারি৷ আর তুমি এতো বড় বিপদ উপেক্ষা করে আমাকে না জানিয়ে দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে।’

–‘ আর এমন হবে না৷ ‘

উনি আমার হাত টেনে ঝাকিয়ে রাগ মিশ্রিত কন্ঠে বললেন,
–‘ আমার সামনে আসবে না তুমি ৷ কাজ ফেলে ছুটে এসেছি পাগলের মতো। আজ জান্নাত না বললে হয়তো জানতাম’ই না৷ তিয়াসের বিষয় টা আগে জানালে আজকের দিন দেখতে হতো না ৷ প্রত্যেক টা কাজে আমাকে দূরে ইভেন জানানোর প্রয়োজন মনে হয় না তোমার৷ আর আমি’ই পাগল! যে ছুটে ছুটে চলে আসে ৷ ‘
উনি হাত ছেড়ে দিয়েই ধুপধাপ পা ফেলে চলে যেতেই আমি স্তব্ধ হয়ে বসে পড়ি ৷ উপচে আসছে কান্না৷ আমি উঠে উনার কাছে যেতেই উনি মুখ ঘুরিয়ে বললেন,
–‘ দূরে থাকতে বলেছি ৷’
অভিমানে কান্নারা হু হু করে আসছে৷ ছুটে বেডরুমে এসেই হাটু মুড়ে বসে কান্না করে যাচ্ছি৷ উনি টেনশন করবেন ভেবেই তো বলি নি ৷ আর উল্টো আমাকেই রাগ দেখাচ্ছেন৷
আমি সকাল হলেই চলে যাবো ৷ যেখানে উনার আমাকে বোঝানোর দরকার সেই জায়গায় আমার সাথেই রাগারাগি করছেন ৷ বড্ড পর হয়ে গেছেন আপনি!
থাকুন আপনি আপনার কাজ নিয়ে ৷ তিয়সের জন্য কথা শোনাচ্ছেন আমাকে৷ ওই হারামীটার জন্য আপনাকে পেলাম আবার ওর জন্যই আপনি আমাকে দূরে ঠেলে দিচ্ছেন ৷
আমি নানান কিছু ভেবে এখনো মেঝেতে বসে আছি৷ একটু পর দরজার আওয়াজ হলেও আমি মুখ তুলে তাকাই নি ৷ উনি আমাকে পাশ কাটিয়ে কাবার্ড থেকে তোয়ালে নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যেতেই আমি কেঁদে উঠি আবারও ৷ আমার সাথে কথা বলার প্রয়োজন বোধ করছেন না উনি ৷ এই ভেবে অভিমানের পাল্লা ভারী হলো আরো ৷
উনি ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে বললেন,
–‘ সারারাত এখানেই বসে পার করার ইচ্ছা আছে না’কি? ‘
–‘ সারারাত কেন কাল সকাল দুপুর রাত এখানেই থাকবো৷ ‘ আমি ফুঁপিয়ে উঠে জবাব দিলাম৷ উনি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে কিছু একটা ভেবে আমার দিকে এগিয়ে এসে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললেন,
–‘ উঠো! ‘
–‘ দরকার নেই সাহায্যর৷ আপনার কাজ করুন যান৷ আমাকে নিয়ে ভাবতে হবে না আপনার৷’
উনি হাটু মুড়ে বসলেন আমার সামনে ৷ মুখের দিকে তাকিয়ে হাত বাড়াতেই আমি পেছনে সরে যাই৷ উনি কঁপালে ভাজ ফেলে বললেন,
–‘ কান্না থামাও৷ আমি মেরেছি তোমায়? ‘

–‘ না তবে আঘাত করেছেন৷ কথার আঘাত আর সেই সাথে দূরে ঠেলে দিয়েছেন ৷ ‘
নিষ্পলক তাকিয়ে আছেন উনি৷ হঠাৎ করেই আমাকে কোলে উঠিয়ে নিতেই আমি চমকে গলা জড়িয়ে ধরি ৷ একটু আগের কথা মনে হতেই কন্ঠের খাঁদ নামিয়ে বললাম,
–‘ আপনার থেকে দূরে থাকতে বলেছেন৷ ‘
–‘ তো থাকো দূরে৷ ‘
–‘ নামিয়ে দিন৷ ‘
উনি ওয়াশরুমের ভেতর গিয়ে দাঁড়িয়ে বললেন,
–‘ আমার বউকে তো দূরে থাকতে বলি নি৷ ‘
আমি উনার কথার আগামাথা না বুঝে বললাম,
–‘ আমি মানে আপনার বউ ৷ আর আপনার বউ মানে আমি৷’
উনি জবাব না দিয়ে হাসলেন৷ আমাকে স্বাভাবিক রাখার জন্য এইসব বলছেন উনি!
মেঝেতে নামিয়ে দিয়ে আমার চুলের বেণী খুলে দিচ্ছেন যত্ন করে ৷ খুলতে খুলতে বললেন,
–‘ ছোট একটা ঘটনা থেকে বড় ঘটনার সৃষ্টি হয়৷ আর আমি চাই না সেই ঘটনার বিন্দুমাত্র রেশ তোমার জীবনে পরুক৷ ‘
–‘ আমি সব জানাতাম আপনাকে! ‘
–‘ হুশ! বলতে দেউ আমায়৷ ‘ উনি আমার ঠোঁটে আঙুল ছুঁইয়ে বললেন৷ তারপর চুল গুলো খুলে একপাশে সযত্নে রেখে বললেন,
–‘ আমি আমার প্রত্যেকটা নিঃশ্বাস তোমার জন্যই নিচ্ছি ৷ তোমার ছোট একটা আঁচ পরলে আমার বুকে তীব্র কষ্ট হয় ৷ সারাদিন হারানোর ভয় করে৷ কেন করে? ‘
উনি প্রশ্নসূচক চোখে তাকিয়ে বললেন৷ আমি দৃষ্টি নামিয়ে ফেললাম৷ উনি আমার মাথা তার বুকের সাথে চেঁপে ধরে বললেন,
–‘ কারণ আমি তোমাকে চাই৷ নিজের মৃত্যুর শেষ কাটা পর্যন্ত৷ তোমার হাত ধরে দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করতেও একদম কষ্ট হবে না৷ কিন্তু তোমার কিছু হলে সেটা আমার মৃত্যুর থেকেও বহুগুণ কষ্টে পুড়াবে আমায় ৷ ‘
–‘ আর হবে না এমন৷ তবুও আপনি মৃত্যুর কথা বলবেন না৷’
উনি আমার মাথা উঠিয়ে ঠোঁটে গাঢ় চুমু দিলেন ৷ ঝরণার পানিতে কিঁছু মূহুর্তের ভালোলাগা প্রগাঢ় সাক্ষীতে মিশে যাচ্ছে৷ উনি চোখ তুলে তাকিয়ে বললেন,
–‘ আমার মৃত্যুর সাধারণ সত্যিটা কল্পনা করতে পারো না তুমি৷ তাহলে ভাবো আমি কেমনে সহ্য করি তোমার কিছু হলে?’
আমি উনার বুকের বাঁ পাশে মাথা রেখে চোখ বোজে রইলাম ৷ উনি আমার মুখ নামিয়ে কাঁধে চুমু দিয়ে বললেন,
–‘ আমি চাই আমার শুভ্র পরী সর্বক্ষণ আমাতেই বিভোর থাক৷ তার আশেপাশে যেন আমি’ই বিরাজ করি৷ সব বিপদ আমার কাছে আসুক তবুও তোমায় যেন ছুতে না পারে…!
চলবে…

#শুভ্র_রঙের_প্রেম
#পর্বঃ৩৮

লেখিকাঃ#রুবাইদা_হৃদি
মৃদু হাওয়ার তালে প্রশান্তি বয়ে যাচ্ছে ৷ দক্ষিণা বাতাসের দাপট উষ্ণতা ছড়িয়ে দিচ্ছে ৷ দু-একটা জোনাকি পোকা উড়ে বেড়াচ্ছে আশেপাশে ৷ সন্ধ্যার বর্ণিল আলোয় উনার চোখেমুখে স্নিগ্ধতা বিরাজ করছে নির্লিপ্ত ভাবে৷ আমি উনার গালে হাত রাখতেই চোখ খুলে তাকিয়ে শ্লেষাত্মক কন্ঠে বললেন,
–‘ এখনো জেগে আছো কেন? ‘
–‘ ঘুম আসছে না৷ আমি আপনার মাথায় হাত বুলিয়ে দিই ?’
–‘ আমার বুকের উপর মাথা রাখো তো! দেখবে আমি কাল সকালেই সুস্থ হয়ে উঠেছি ৷ ‘ উনি ম্লান হেসে বলতেই আমি হুড়মুড় করে উনার বুকে মাথা গুজে দিই৷ এতোক্ষণ এইটার অপেক্ষায় ছিলাম খুব করে ৷
উনি ক্লান্ত হাতে আমার মাথায় বিলি কেটে দিচ্ছেন ৷ আমি অতি আবেশে চোখ বোজে উনাকে বললাম,
–‘ এতো অসুস্থ শরীর নিয়ে ভার্সিটি তে আনতে যাওয়ার কি দরকার ছিলো বলুন তো? ‘

–‘ দরকার ছিলো৷ তোমাকে একা ছাড়তে ভয় হয় আমার ৷ ‘
কথার পৃষ্ঠে জবাব না দিয়ে হুট করে উঠে দাঁড়ালাম আমি৷ উনি হালকা মাথা উঁচু করে বললেন,
–‘ কোথায় যাচ্ছো? ‘
–‘ জাস্ট ফাইভ মিনিট’স! আমি যাবো আর আসবো৷ ‘
স্নিগ্ধ পেছনে থেকে ডাকলেও আমি না শুনেই কিচেনে চলে এলাম৷ এই বাসায় এতোদিন যাবৎ থেকেও কিচেনে আসি নি! আজ এসে হতভম্ব চোখে তাকিয়ে চারদিকে খুজে খুজে সব বের করে খিচুড়ি রান্না করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি৷ অতিরিক্ত ব্লিডিং হওয়ার দরুণ দূর্বল হয়ে পরেছেন ৷ সেই সাথে কড়া মেডিসিনের ডোজ ৷ আমি কোমড়ে আঁচল গুজে রান্নার কাজে ব্যস্ত হতেই কারো উপস্থিই টের পেয়ে আচমকা ভয় পেয়ে যাই৷ তখুনি স্নিগ্ধ আমার কোমড়ে হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে বললেন,
–‘ গিন্নী সাহেবা কি তার কর্তার জন্য রান্না করছে? ‘

–‘ আপনি উঠে আসতে গেলেন কেন! ‘

–‘ বউগণ যখন রান্না করে জামাই গণের তাদের আশেপাশে থেকে টুকটাক রোম্যান্স না করলে রান্নার স্বাদ নোনতা হয়৷ ‘
উনার আজগুবি কথা শুনে আমি সশব্দে হেসে উঠলাম ৷ উনি আমার ঘাড়ে আলতো চুমু দিতেই আমি কেঁপে উঠে তড়িৎ গতিতে ছুটে দূরে চলে যাই৷ স্নিগ্ধ ভ্রু কুঁচকে বললেন,
–‘ রান্নার স্বাদ নোনতা হলে কি দিয়ে মিষ্টি করবে বল তো? ‘
–‘ ঝাল খিচুড়ি মিষ্টি কেন করতে যাবো?’

স্নিগ্ধ ঘাড় কাত করে বাকা হেসে বললেন,

–‘ সময়ের টা সময়ে বোঝা যাবে ৷ ‘

আমি রান্নায় মনোযোগ দিতেই উনি হঠাৎ করে ঘুরিয়ে আমার ঠোঁটজোড়াতে গভীর ভাবে চুমু খেয়ে বেরিয়ে যেতে যেতে বললেন ,
–‘ এই মিষ্টতার দরকার ছিলো বুঝলে গিন্নী? নোনতা,ঝাল এই মিষ্টতার ধারেকাছেও আসতে পারবে না৷ ‘
আমি হতভম্ব নয়নে তাকিয়ে আছি ৷ একটু আগেও যে মাথাব্যথায় উঠতে পারছিলো না আর এখন দেখো! আমি লজ্জায় কুকড়ে উঠলাম ৷ সেই সাথে হঠাৎ করেই উনার মাথা থেকে রক্তের ধারার কথা মনে হতেই আমি মৃদু চিৎকার করে হাত দিয়ে মুখ ঢেকে ফেলতেই উনি দ্রুত ছুটে এসে আমাকে ওইভাবেই আঁকড়ে ধরেন আর শীতল কন্ঠে বললেন,
–‘ রিলাক্স বউ! আমি তোমার কাছেই আছি৷ লুক! ‘
আমি চোখ তুলে তাকিয়ে উনার মাথা ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে ডুকরে কেঁদে উঠে বললাম,
–‘ আপনার কিছু হয়ে গেলে আমি মারা যেতাম স্নিগ্ধ ৷ একদম মারা যেতাম৷ ‘

–‘ কিছু হয় নি তো বাবা! আমি তোমার সামনেই দুইপায়ে দাঁড়িয়ে আছি,দেখো ৷ ‘

আমি শক্ত করে আঁকড়ে ধরলাম উনায়৷ এই বুঝি ছেড়ে দিলে চলে যাবেন ৷ সেদিনের কথা মনে হতেই উনাকে নিজের সাথে পিষে ফেলতে চাচ্ছিলাম৷ উনি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে শান্ত হতে বলছেন ৷ তবে বারবার আমার সেদিনের কথা মনে হচ্ছে৷
তিয়াসের সেই ঘটনার দুদিন পর আবার আমরা ঢাকা ব্যাক করি ৷ আমি ভেবেছিলাম তিয়াস আত ঝামেলা করবে না ৷ উনি আমাকে ড্রপ করে দিয়ে চলে যেতেই আমি ঢুকতেই তিয়াস হাত ধরে টান দিতেই পিলে চমকে উঠে আমার ৷ আমি বারবার হাত ছাড়তে বললেও ও শুনেই নি ৷ রাহাত দূর থেকে ছুটে এসে ছাড়তে বললে ও রাহাত কে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয় ৷ আশেপাশে গুটিকয়েক স্টুডেন্ট! ক্লাস টাইমের জন্য বেশিরভাগ সবাই ক্লাসে আর এক্সাম হলে ৷ নীতি এসেও ওকে হাত ছাড়তে বললে শরীর দুলিয়ে উল্টাপাল্টা কথা বলা শুরু করে৷ আমি ছুটোছুটি করছি এর মাঝেই অতি পরিচিত কন্ঠের থমথমে আওয়াজ ভেসে আসে,
–‘ ওর হাত ছাড় ৷ ‘

–‘ কে রে তুই? ‘ তিয়াস পাল্টা প্রশ্ন করতেই উনি ওর গালে চড় লাগিয়ে দিয়ে সাথে নাক বরাবর ঘুষি দিয়েও শান্ত হলেন না৷ আমার হাতের বাধন আলগা হতেই আমি উনাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরতেই উনি বললেন,
–‘ এই সেই হারামি? ‘
আমি দু দিকে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিতেই উনি রাহাতকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
–‘ মান্নান স্যারকে ইমিডিয়েটলি ডেকে আনো ৷ তার ভার্সিটি তে মেয়েদের টিজ করা হয় আর সেই খবর উনি জানেন’ই না?’

–‘ মান্নান স্যার নাই দেইখাই তো এই শয়তানের উৎপত্তি৷ ‘

–‘ শা** তোর সাহস কি করে হয় আমার মানুষটার হাত ছোঁয়ার ৷ তোর চৌদ্দ গোষ্ঠীকে এই ভুলের মাশুল দিতে হবে ৷ ‘ উনি তিয়াসের ডান হাত মুচড়ে ধরে বললেন ৷ রাহাতের উদ্দেশ্য আবার বললেন,

–‘ পুলিশকে ফোন দেউ৷ তুই আমার মানুষটার হাত ধরেছিস ওকে টিজ করেছিস ৷ তুই স্বপ্নেও ভাবতে পারবি না এই স্নিগ্ধ তোর কি কর‍তে পারে ৷ ‘

–‘ সিনেমার ডায়ালগ শুনতে শুনতে কান পঁচে গেছে নতুন কিছু বল ৷ ‘ তিয়াস কান চুলকে বলতেই আমি আজও হিজাবের চার পাঁচটা পিন খুলে ওর হাতে জোরে বিধিয়ে দিতেই ও চিৎকার করে উঠে ৷ স্নিগ্ধ আমার কাজ দেখে হাসছেন ৷ রাহাত এতোক্ষণে পুলিশ স্টেশনে ফোন করে দিয়েছে ৷ সাইরেন বাজতেই ও হাত ঝাড়ি মেরে জোরে ধাক্কা মারেন উনায় ৷ নিজের ব্যালেন্স রাখতে না পেরে উনি পড়ে যেতেই মাথা ইটের কোণায় লাগতেই রক্তে সারা চোখ-মুখ ভরে উঠে মূহুর্তেই ৷ আমি এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি ৷ উনি ব্যথায় মৃদু চিৎকার করতেই আমার হুশ ফিরে৷
স্নিগ্ধের রক্তে মাখা মুখ দেখে হাত-পা অসার হয়ে আসে৷ এক মূহুর্তের মাঝেই তাকে হারিয়ে ফেলার ভয় হতেই উনাকে ওইভাবেই জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠি ৷ উনি খুব হাসছিলেন৷ ব্যথা নিয়েই! শুধু বলছিলেন,
–‘ আমি মরে গেলে শেষ বারের মতো এইভাবেই জড়িয়ে ধরো আমায়৷ তোমার পবিত্র স্পর্শ,তোমার শরীরের সুবাস যেন আমার সারা অঙ্গে ল্যাপ্টে থাকে৷ জান্নাতে যখন দেখা হবে তোমার সুবাসে যেন আমি এক মূহুর্তের মধ্যেই চিনতে পারি ৷ ‘
সেই কথা শুলো মনে হতেই আমি উনার পিঠে দুম করে কিল বসিয়ে দিতেই আমাকে ছেড়ে দিয়ে ব্যথাতুর সুরে কিছু বলার আগেই আমি থামিয়ে দিয়ে বললাম,
–‘ মৃত্যুর কথা আমাকে ছেড়ে যাওয়ার কথা আবার বললে একদম খুন করে ফেলবো ৷ ‘

–‘ খুন করলেও তো আমার মৃত্যু হবে৷ ‘ উনি হেসে বলতেই আমি উনার কলার ধরে টেনে মাথা নীচে নামিয়ে বললাম,
–‘ ভালোবাসার খুন করবো ৷ আপনি পুড়বেন, ভস্ম হবেন কিন্তু আমার’রি থাকবেন৷ সব সময় সর্বক্ষণ৷ ‘

_________________________

পাতার ফাঁকে ফাঁকে সোনালি রৌদ্দুর উঠানে গড়াগড়ি খাচ্ছে ৷ একজোড়া বেনে-বৌ পাখি উড়ে এসে কিচমিচ করে ঝগড়া বাধিয়ে পরিবেশ মুখরিত করে তুললো ৷ সদ্য ফোঁটা ছোট কৃষ্ণচূড়া ফুল বাতাসের তালে তালে উড়ে লাল আভায় ভরিয়ে দিচ্ছে ৷ টুপটুপ পানি গড়িয়ে পরলো রাতের বৃষ্টিতে ভিজে থাকা মানিপ্ল্যান্টের পাতা থেকে ৷ থোকা থোকা শুভ্র মেঘের আনাগোনা ব্যস্ত শহরটাকে করে তুললো শুভ্র প্রেমময় ৷ রিক্সায় বসে থাকা আধ পাকা চুলের সুদর্শন পুরুষের মাথা হাত দিয়ে মুছে দিচ্ছে অতিব সুন্দর একজন মহিলা৷ এ যেন নবদম্পতি !এর চেয়ে সুন্দর দৃশ্য দুনিয়ার বোধহয় দুটো নেই ৷ তবুও,সেই দৃশ্য আমার অস্থিরতা কে কমাতে পারলো না ৷ চোখের সামনে সব ঝাপসা লাগছে ৷ মাথা থেকে থেকে চক্কর দিচ্ছে ৷ গা গুলিয়ে বমি বমি পাচ্ছে ৷ আমি গ্রীল ধরে নীচে আস্তে করে বসে ক্লান্ত গলায় হাক ছাড়লাম, ‘ আম্মু! আমাকে রুমে দিয়ে আসো প্লীজ৷ আমি যে হাটার শক্তি পাচ্ছি না ৷ ‘

–‘ কি হয়েছে তোর? এখন আসতে পারবো না ভাজি পুড়ে যাবে ৷ ‘
আমি উদাস চোখে সামনে তাকালাম ৷ আবার সব ঝাপসা৷ আমি হাত দিয়ে চোখ মুছে শুকনো ঢোক গিয়ে বমি আটকানোর ব্যর্থ চেষ্টায় আছি ৷
স্নিগ্ধ এনজিওয়ের কাজে সিলেট গিয়েছে ৷ আজ ফিরবে৷ আমার ফোর্থ ইয়ারের ফাইনাল এক্সাম সামনে তাই ঢাকায় থাকা হচ্ছে বেশি৷ আর উনি বেশিরভাগ সময় বাইরেই থাকেন কাজের সূত্রে ৷ তবে যখন কাজের চাপ থাকেন তখন ৷ রাফিনের আওয়াজ পেতেই আমি বিরস মুখে বললাম,
–‘ আমাকে ধরে রুমে দিয়ে আয় ৷ ‘

–‘ আপু, লেইট হয়ে যাবে ৷ সাড়ে দশটায় এক্সাম আর আমি এখনো বাসায়৷ সর‍্যি, সর‍্যি৷ ‘
রাফিন দ্রুত পা ফেলে চলে যেতেই মুখ ভরে বমি করেও শান্তি মিললো না ৷ দুনিয়া অন্ধকার হয়ে আসলো মূহুর্তেই ৷ স্নিগ্ধের মুখ ভেঁসে উঠলো ৷ আমি কি তবে মারা যাচ্ছি?
আমি মারা গেলে স্নিগ্ধ আবার বিয়ে করবে? এই প্রশ্ন মনে হতেই হাসলাম ৷ উনি থাকলে বলতেন, ‘ হাও চিপ হৃদি ৷ এতো কষ্টের মাঝেও তুমি এইসব চিন্তা করছো৷ আমি শুধু তোমার৷ স্নিগ্ধ হৃদির৷ শুধুমাত্র হৃদির ৷ শুভ্র প্রেমিককে শুভ্র প্রমিকা ছাড়া মানায় বলো? ‘
উনার কথা কানে বাজছে৷ ওইতো উনি দাঁড়িয়ে আছেন ৷ নীল পাড়ের সাদা শাড়ি হাতে……
.
.
কাঁচের স্বচ্ছ জানালা ভেঁদ করে আড়াআড়ি ভাবে একটুকরো রোদের ছিটে পরতেই আমি পিটপিট করে চোখ খুলে তাকিয়ে আশেপাশে চোখ বুলালাম৷ মাথা হালকা লাগছে এখন৷ কিন্তু মুখের ভেতর তেঁতো ভাবটা আছে ৷ হাত টান দিতেই মৃদু ব্যথায় ককিয়ে উঠলাম ৷ পাশ ফিরে দেখলাম স্যালাইন লাগানো টান লাগার ফলে নলে রক্ত উঠে গেছে ৷ আমি অন্যপাশ ফিরতেই দেখি বিধ্বস্ত স্নিগ্ধকে ৷ এলোমেলো চুল গুলো কঁপাল ছুঁয়ে আছে৷ ঘুমন্ত চোখ জোড়া দেবে গেছে একদম ৷ উনার এমন অবস্থা দেখে বুকের ভেতর হু হু করে উঠে ৷ আমি কাঁপা কন্ঠে বললাম,
–‘ আ..আপ…. ‘
উনি চমকে উঠেই ছুটে আসলেন আমার কাছে ৷ সম্পূর্ণ কথা শেষ করার আগেই আমার চোখ-মুখে পাগলের মতো চুমু খেয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলেন আমায় ৷ হাতে ব্যথা অনুভব হলেও মনে শান্তির বাতাস বইছে ৷ কত দিন পর মনে হচ্ছে চেনা মানুষটাকে ফেরত পেয়েছি৷ উনি আবার আমার মুখ উঠিয়ে চুমুতে ভরিয়ে দিয়ে বললেন,
–‘ এতোই সোজা আমাকে ফেলে চলে যাওয়া? এতো অসুস্থ আগে বলো নি কেন আমায়? মহান সাজা হচ্ছে তোমার? একদম মিশিয়ে রাখবো তোমায় আমার সাথে৷ ‘

–‘ হঠাৎ করে কি হলো বুঝতে পারি নি, জানেন? ‘

–‘ আম্মুকে কেন বলো নি? ‘

–‘ কি বলবো? সেদিন থেকে বমি পাচ্ছিলো তবে কাল অতিরিক্ত খারাপ লাগছিলো৷ ‘
আমি মুখ তুলে তাকিয়ে উনার কঁপালের চুল গুলো সরিয়ে দিয়ে হেসে বললাম,

–‘ দেবদাসের মতো অবস্থা কেন আপনার? মনে হচ্ছে,আমি ছ্যাকা দিয়ে চলে গিয়েছি৷ ‘

–‘ হাফ মরে গিয়েছিলাম যখন রাফিন ফোন করে বললো৷ তবে বাচ্চার মামার দেওয়া ছোট একটা খবরে সব ক্লান্তি আর বাচ্চার মাকে আদরে ভরিয়ে তোলার জন্য ছুটে চলে এসেছি ৷ ‘
আমি অবাক হলাম! বাচ্চার মামা? বাচ্চার মা? বাচ্চা কোথায়? কার বাচ্চা? আমার প্রশ্নসূচক চোখের দিকে তাকিয়ে উনি আমার থুতনিতে হাত দিয়ে মাথা উঁচু করে কানের কাছে গিয়ে বললেন,
–‘ একটা ছোট প্রাণের ভাগীদার তুমি সেই সাথে বাবা নামক শব্দটার বন্ধনে আবদ্ধ হতে চলেছি আমি৷ ‘
চলবে…..