শূণ্যতার পূর্ণতা তুমি পর্ব-০৩ এবং বোনাস পর্ব

0
437

#শূণ্যতার_পূর্ণতা_তুমি
#রোকসানা_আক্তার
পর্ব-তৃতীয়

আজ দুপুরের পর বাবা আমাকে কল করেছেন।কল করেই নিজের অবস্থার কথা কিছু না বলে আমার অবস্থার কথা জিজ্ঞেস করেন,

“সুপ্রভা, তুই ভালো আছিস মা ওই বাসাতে?
কোনো সমস্যা হচ্ছে না তো তোর?সবকিছু ঠিকঠাক?বাবাকে বল!”

বাবার এধরনের কথা বলার কারণ আমি বুঝতে পারলাম।গতকাল শাশুড়ী মায়ের ওসব নালিশে হঠাৎ বাবার বাবার এরকম প্রশ্ন।আমি হাসলাম বাবার প্রশ্নে যাতে না বুঝেন কিছু!বললাম,

“দেখলেই তো বাসায় সব কাজ মা করতো।আমাকে কখনো কাজ করতে দিতে না।তাই আর কি কাজকর্মে এখনো অনেক আনাড়ী।যেকোনো কাজে ভুল করে বসি।শ্বশুর বাড়িতো..জানোই একটু ভুল ধরবেই।এই আর কি..আর এমনিতে আলহামদুলিল্লাহ আমি ভালো আছি বাবা।”

বাবা আমার কথা আশ্বস্ত হতে পারলেন কি না বুঝতে পারলাম না।তবে সামনে থাকলে ঠিকই ধরে ফেলতে পারতেন।পরে বললেন,
“আমি বুঝতে পারছি এরা একটু ভুল দেখলেই অনেক ভুল মনে করে।তোর স্বামী তো এমনিতে তোর ভুলত্রুটি ধরে না।না মা?”
“না,বাবা!সে তো আরো ভালো।”

এ বলে নৈঃশব্দ্যে তাচ্ছিল্যকর হাসলাম নিজেই নিজের কাছে।বাবা বলেন,
“ছেলেকে দেখেই বুঝেছিলাম।ছেলে ভালো। ঠান্ডা-শীতল।তোর শাশুড়ী টা মনে হয় খটখটা ধরনের।”

আমি বললাম এবার,
“বাবা একটা কথা বলবো তেমাকে?”
“হ্যাঁ,মা বল…।”

এবার আমি থেমে গেলাম।ভাবছি গতকালকে শাশুড়ী মায়ের ওধরনের অসদাচরণ আচরণের প্রসঙ্গ তুলবো।বাবা তো উনার ওধরনের আচরণে খুব কষ্ট পেয়েছেন!খুবই।জিজ্ঞেস করলেও বলবে না জানি!কখনোই বলবে না!চোখজোড়া টপটপ করে পানি পড়তে থাকলো আমার।বলতে যেয়েও থেমে গেলাম।পরিবর্তে খুক খুক করে কাশতে থাকলাম।মুখটা শক্ত করে চেপে ধরলাম সাথে সাথে!যাতে বাবা আমার কাশি আঁচ না করতে পারে।করতে পারলেই আরো চিন্তায় পড়ে যাবেন!অসুস্থ মানুষ।হাই-প্রেশার।বেশি চাপ নিতে পারেনা।ডাক্তার বলেছেন ৯০ এর উপরে গেলে স্ট্রোক/হৃদরোগের সম্ভাবনা থাকতে পারে!তাই বাবাকে প্রসার দিই না আমরা।আমি কিন্তু বিয়েতে রাজি হতাম না এত তাড়াতাড়ি। সেদিন বাবার মুখের দিকে চেয়েই রাজি হয়েছিলাম।তারপরও বাবা বুঝে ফেললেন,
“সুপ্রভা?তুই কাশতেছিস!তোর অসুখ নাকি রে মা?ঠান্ডা লেগেছে তোর?সুপ্রভা?এই সুপ্রভা?”

ধরা পড়ে গেলাম।তবে ধরাটা ধরতে দিলাম না।দম বন্ধ করে একশ্বাসে জবাব দিলাম বাবাকে,
“বাবা?মুখে মশা ঢুকেছে। পরে তোমাকে কল করতেছি বাবা।”
“আচ্ছা মা,আচ্ছা!”

কল কেঁটে দিয়ে আরো কাশতে থাকলাম।কাশতে কাশতে চোখমুখ লাল হয়ে এলো!সামনে সামনে ড্রেসিং টেবিল ছিল।সেদিকে তাকাতে দেখলাম।এভাবে অনেকক্ষণ যায়।তারপর কাশি কমে এলে হঠাৎ গালে হাত পড়তে হাতটা জ্বলে উঠে।আবার জ্বর এসেছে!সকালের দিকে কিছুটা ভালো ছিলাম।সব কাজ করতে পেরেছি।বাসার সবাই তখন দেখে বুঝলো সুস্থ হয়ে গিয়েছি পুরোপুরি।শাশুড়ী মা আরো বেশি তা মনে করলেন।জ্বরই নাই।রোবট আমি!অবশ্যি উনার কাছে আমি সবসময়ই রোবট!এখনো বাথরুমে আধধোয়া কিছু জামাকাপড় পড়ে আছে।সেগুলো ধৌত করতে হবে।।

——————————————————–
সন্ধার পর কাঁপিয়ে জ্বর উঠে।সুবর্ণা পাগলের মতন হয়ে যায়।মাথায় পানি ঢালতে থাকে।মেয়েটি স্কুল থেকে আসে শেষ বিকেলে।পরিক্ষা চলতেছে।পরিক্ষা শেষ করে প্রাইভেট টিচারের কাছে তিন বিষয়ের পড়া কষিয়ে তারপর বাসায় ফেরে।
এখন আমার মাথায় পানি ঢালতেছে আর ছোট ছোট কন্ঠে মাকে বকতেছে,
“এই মাও না?একটু সুস্থ থাকলেই সে সুস্থ হয়ে যায় নাকি পুরোপুরি?শরীরের ভেতর যে জ্বর থাকে তা বুঝে না মা?রাগ উঠে এখন!জ্বরটা তো হাতে ধরেই আনলো যা একটু সুস্থ হলো!মায়েরও জ্বর আসুক তারপর বুঝবে!”

এরকম বিড়বিড় কন্ঠে আরো কত কি জানি বলে মেয়েটা।আমার ওতটা হুঁশ নেই।জ্বরের তাড়নে কিছুকথা শুনি,আবার কিছুটা অস্পষ্ট। তখন হয়তো আকাশ রুমে ঢোকে।কেননা,সুবর্ণা কিছুটা আওয়াজস্ত কন্ঠে বলে উঠে,

“হ্যাঁ,ভাইয়া।আমি স্কুল থেকে ফিরে মেপে দেখি ১০৩।”

আমার চোখ ছুটে আসে সাথে সাথে।বুঝলাম আকাশকে বলতেছে।আকাশ আমার জ্বরের ব্যাপারে হয়তো কিছু জিজ্ঞেস করেছিল তাই একরম উত্তর সূবর্ণার। তারপর আকাশ গুরুগম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো,
“আচ্ছা পানি দে।”

এমন সময় শাশুড়ী মা “সুবর্ণা,সুবর্ণা” বলতে বলতে এদিকে আসেন।এসে দেখে সুবর্ণা আমার মাথায় পানি ঢালতেছে।উনি যদিও এটা মেনে নিবেন না আমি উনাকে যতটুকু জানি।আসলেই মানলেন না।মেয়ের দিকে কঠিন চোখ মেলে বলেন,
“সে-কি সুবর্ণা,তুই স্কুল থেকে ফিরে এখনো স্কুল ড্রেস খুলিস নি!গাঁয়ে ঘামে লেপে আছে!এসব কি?চলাফেরা নাখাদ্রা কেনো তোর?আমি একদিন বলেছিলাম না নিয়মের মধ্যে থাকতিস!তারপরও কথা শুনিস না আমার!”

সুবর্ণা স্কুল থেকে ফেরার পর খুব অস্থির হয়ে যায়।আমাকে চা বানিয়ে খাওয়ায়।মেডিসিন দেয়।এসব করতে করতে মেয়েটা স্কুল ড্রেস খোলার কথাই ভুলে যায়।সুবর্ণা তার মাকে,
“মা ভাবীর মাথায় ঢালতেছি। একটু পর গিয়ে চেইন্জ করবো।”
“সেই স্কুল থেকে ফেরার পর থেকেই তো দেখতেছি…!এত পানি ঢালা লাগে না।এবার উঠ!”
“মা কিছুক্ষণ আগ থেকে মাত্র ঢালতেছিলাম।”
“ওঠ!”

আমি আস্তে গলায় বললাম,
“যা সুবর্ণা।ভাবীর এখন জ্বর নেই।”
“মিথ্যে বলো না ভাবী!”

আকাশ পাশ থেকে বলে উঠে,
“সুবর্ণা তুই যা।আমি দেখতেছি…!”

সুবর্ণা শাশুড়ী মায়ের সাথে উঠে চলে যায়।আকাশ হয়তো আমার মাথায় পানি ঢালবে ওর হাবভাবে যা মনে হলো।তাই হলো।আমার কাছে এসে ফোমের মোড়াটায় বসে বালতি থেকে মগ ভরে পানি যেই হাতে নিবে ওমনি আমি উঠে গেলাম।পাশে তোয়ালে ছিল।তা হাতে নিয়ে আমি আমার ভেঁজা মাথা মুছতে লাগলাম।আকাশ অবাক হয়ে গেল।বললো,

“সে-কি তুমি পানি দিবে না!তোমার খুব জ্বর!পানি না দিলে জ্বর যাবে না!”

আমি উত্তর করলাম,
“কোনো অনধিকার পুরুষ আমার মাথায় পানি ঢালবে সেটা আমি মেনে নিব কীভাবে ভাবলেন আপনি!আর আপনি নেক্সট বার আমার সাথে কথা বলার চেষ্টা করবেন না!আপনার সাথে আমার কথা বলার একদন্ডও ইচ্ছে নেই।”

আমার কথা শোনার পর আকাশ চুপ করে থাকে!আর আমি বারান্দায় চলে আসি।আর চোখ থেকে টপটপ করে পানি বেয়ে পড়তে থাকি।জানি না কেন কান্না করতেছি!আকাশের জন্যে,নাকি শাশুড়ী মায়ের এখন করে যাওয়া ব্যবহারে।কিছুই জানি না আমি!নিজের কাছে নিজেই প্রশ্ন করতেছি।দাঁড়িয়ে থাকতে পারছিলাম না কেনাজনি আর।বসে পড়লাম নিচে।নিচে ফ্লোর ঠান্ডা ছিল।কেঁপে উঠলাম সাথে সাথে।জ্বর শরীরে প্রচন্ড ফ্লোরে বসে বুঝতে পারলাম।কাঁপুনি,জ্বরের উত্তাপ তাপমাত্রায় আমি যেনো আরো জ্ঞানশূন্য হয়ে যাচ্ছি।শেষবার ফ্লোরে মাথা রাখার আগেই কে যেন আমাকে আলতোভাবে করে ধরে ফেলে।দুই-তিন সেকেন্ডেসের ব্যবধানেই বুঝলাম ভরশূণ্য।মানে কারো বাহুডোরে আছি।আর তার সান্নিধ্যে উষ্ণতায় তাকে আরো জড়িয়ে ধরেছি শীতভাবটা কমে যাওয়ার জন্যে।পরে আর কিছুই খেয়াল নেই।

চলবে……..

#শূণ্যতার_পূর্ণতা_তুমি
#রোকসানা_আক্তার
বোনাস পর্ব

সকালে চোখ মেলে পাশ ফিরে তাকাতেই চোখজোড়া আমার ছানাবড়া!!আকাশ ফোমের মোড়ায় বসে মাথাটা বিছানার উপর ফেলে ঘুমচ্ছে।তারমানে উনি সারারাত আমাকে পাহারা দিয়েছিল!ভাবতে ভাবতে আমার ভেতরটা অজানা একরাশ লজ্জায় ঘিরে ধরে।আমি আলতোভাবে উঠে বসলাম শোয়া থেকে।তারপর নেমে বেলকনিতে এসে দাঁড়ালাম।ভাবতে থাকলাম,
“এটা কি হলো?স্বপ্নে দেখলাম নাকি সত্যি!?”
হাতে আঁচর কাঁটলাম ! নাহ্ নাহ্ মিথ্যে নাতো!আপনাতেই মুখ থেকে কেনজানি একটা হাসি চলে এলো।আর এতদিন রাগ হওয়াটা মুহূর্তে মুছে গেল মন থেকে!

——————————————————–
তিনদিন পর জ্বর ভালো হয়।তারপর আগের মতন সেই কাজে লেগে যাই।আমি ইদানীং আকাশের পছন্দের খাবারগুলো বেশি বানাচ্ছি।যেমন-তার খিচুড়ি খুব প্রিয়!গত শুক্রবারে খিচুড়ি পাকিয়েছি।আবার মাঝে মাঝে রাতে পাটিসাপটা পিঠা বানিয়েও সুবর্ণাকে দিয়ে পাঠাই।পাটিসাপটাও আকাশের খুব প্রিয়।একদিন কি হলো,সেদিন ছিল শুক্রবার।ভাবছি শাড়ি পড়বো।কি রঙ্গের পড়া যায়?কোন রঙ্গটা ভালো হবে?সূবর্ণার রুমে গিয়ে সূবর্ণাকে জিজ্ঞেস করি,

“বলো তো সুবর্ণা?কোন রঙ্গের শাড়ি পড়লে আমাকে ভালো দেখাবে?”
“তোমার কোন কালারের শাড়ি কালেকশনে আছে?আগে ওটা বলো।”
“নীল,গোলাপী,বেগুনি আর খয়েরী।”
“খয়েরী টা কেমন?গাঢ় নাকি হালকা?”
“গাঢ়!”
“এক্সাক্টলি! গাঢ়টা পড়ো ভাবী।”
গাঢ় খয়েরীতে ওর এত উচ্ছ্বসিত হওয়া দেখে জিজ্ঞেস করলাম,
“গাঢ় খয়েরী কেন পড়বো?”
“আরেহ ভাইয়ার তো গাঢ় খয়েরী অনেক পছন্দ!তোমাকে গাঢ় খয়েরী তে ভাইয়া দেখলে যা খুশি হবে!দ্যাখো এটা বলবেই সিউর-আমার জন্যে গাঢ় খয়েরী পড়েছো?আর মহব্বতও বাড়বে একে-অন্যের প্রতি।ঝগড়া হবে না কখনো।”

সুবর্ণার কথা শুনে হাসি আসতে না চাইলেও জোরপূর্বক হাসলাম।সূবর্ণা যেটা বললো সেটা কখনোও হবে না তা আমি জানি।আর আমার ভাবনাই সত্য হলো।আকাশের সামনে গাঢ় খয়েরী পড়ে খুব সেঁজেগুজেও লাভ বিশেষ হয়নি।সে আমার দিকে ফিরেও তাকায়নি।সন্ধার পর থেকে ল্যাপটপ নিয়ে যে বসে তারপর একেবারে ডিনারের সময় হলে উঠে।আর ডিনার শেষ হলে ঘুমতে আসে।আমি উনার পাশেই শুয়েছি।জ্বর হওয়ার পর থেকে এখান বিছানায় ই ঘুমচ্ছি।তাই জায়গা আর পরিবর্তন হয়নি।বাতি অফ।চারপাশে ঘুটঘুটে অন্ধকার।আমার বুকের ভেতরটা ধকধক করছে।কেনজানি ধকধক করছে নিজেও জানি না।আকাশ জেগে আছে।হয়তো চোখ বন্ধ করে আছে।গতকাল রাতে মায়ের সাথে বলা কথাগুলো হঠাৎ মাথাচাড়া দিয়ে উঠে।বাবা যখন কল করে আমার খবর জানতে চাইলেন তখনই মা বাবার থেকে ফোন কেড়ে নিয়ে ফিসফিস কন্ঠস্বরে বলেন,

“শোন?তোর শাশুড়ীর স্বভাব ওতটা ভালো ঠেকছে না।তোমার বাবার থেকে যতটুকু শুনলাম।জামাইয়ের মন জুগিয়ে চলার চেষ্টা করিস।জামাই যা যা পছন্দ করে যেভাবে চায় সেভাবে করিস।জামাইয়ের সামনে সেঁজেগুঁজে থাকিস।জামাইয়ের পাশে ঘনঘন ঘেঁষার চেঁষ্টা করিস।এতে মন নরম হয়।ভালোবাসে স্বামীরা।মা রে..শাশুড়ী না দেখতে পারলেও মানা যায়।কিন্তু স্বামী যদি না দেখতে পারে সেই নারীর এরথেকে কষ্ট আর কিছুই হতে পারে না।”

মায়ের বলা সেই কথাগুলোই আমার ভেতরে হঠাৎ একটা আপত্তিকর ইচ্ছা জাগে।আমি জানি এটা অপরাধ!গুরুতর অপরাধ!তারপরও আমি আকাশের দিকে এগিয়ে গেলাম।আকাশের ডান বাহুটা আমার বামহাতের সাথে স্পর্শিত হয়!আবার বাম পা টা আকাশের ডানপায়ের সাথে স্পর্শিত হয়! সাথে সাথে আমার ভেতরে একটা শিহরণ ছু্ঁয়ে যায়।কেনজানি আকাশকেমখুব কাছে পেতে ইচ্ছে করতেছে!খুব!ঠিক তখনই আকাশ শোয়া থেকে উঠে দাঁড়ায়।সাথে সাথে বাতি জ্বালিয়ে দেয়।কিছুটা শক্ত কন্ঠে বলে উঠে,

“তুমি এটা কি করতেছো?আর কি করতে চাচ্ছো তুমি?কি করতে চাচ্ছো?!”

আমি কাঁপতে থাকি।প্রচন্ড রকমের কাঁপতে থাকি।মুখ দিয়ে কথা আসতে চাচ্ছে না!আকাশ আবার বলে উঠে,
“সেদিন রাত তোমাকে একটু সেবা করেছি বিধায় এভাবে তোমার প্রতি যে মন হয়েছে এটা ভাবাটা তোমার জন্যে বোকামি!সেইদিন ওটা আমার দায়িত্ব ছিল তাই করেছি!তাই বলে আমার কাছে ঘেঁষবা আমি কি তোমাকে সেই অধিকার দিয়েছি!বলেছি তোমাকে আমার স্ত্রী হিসেবে মেনে নিয়েছি।শুনেছো আমার মুখ থেকে এ’কথা!”

শেষ কথাটা আকাশের খুব জোরে গলায় ছিল!আমি আবারো কেঁপে উঠি।আকাশ বলে,

“আমিতো তোমাকে এর আগেই অনেকবার ওয়ার্নিং দিয়েছি তারপরও এসবের মানে কি!কি মানে এসবের!মানে আমার মাথায়ই ধরে না…!আর ওই শাড়ি পড়েছো কারজন্যে?শুনো সুপ্রভা তাহলে তোমাকে বলি,আমার জীবনে দ্বিতীয় আর কোনো নারীর আগমণ হবে না।আমি আগেও বলেছি খুব চাপে পড়ে তোমাকে বিয়ে করেছি।তাই নিজেকে যতটা সম্ভব কনর্জাভেটিভ রাখার চেষ্টা করবে ততই তোমার জন্যে ভালো!তুমি কাগজে-কলমে আমার স্ত্রী থাকবে ঠিকই।মন নয়!

এ বলে আকাশ বিছানা থেকে হাতে একটা বালিশ তুলে নিয়ে ধফধফ পায়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।এবার আমার চোখ থেকে অজস্র চোখের পানি বেয়ে পড়তে থাকে।আকাশ-পাতাল এক করে কাঁদতে ইচ্ছে করতেছে আর।জীবনটাকে আজ সবথেকে ঠুনকো মনে হচ্ছে।আমার জীবনে কি এটাই লিখা ছিল—আমি আকাশের জীবনে দ্বিতীয় কোনো নারী!তাহলে তার জীবনে প্রথম নারী কে!কে সেই নারী!যারজন্যে আমাকে এতটা অবহেলা,লাঞ্ছনা আজ বিয়ের ছয়মাস পরও পেতে হচ্ছে!হে আল্লাহ কেনো করলে জীবনটা একরম!!

——————————————————
সকালের আলো ফুটতে আমি সুবর্ণার রুমে উঁকি দিই বহুবার!ও দরজা খুলবে কখন!দু’ঘন্টা অপেক্ষার পর অবশেষে সুবর্ণাকে পাই!সুবর্ণা সবে তখন ঘুম থেকে উঠেছে।আমাকে ওর দরজার সামনে দেখতে পেয়ে,

” ভাবী?তুমি এখানে?কিছু লাগবে?”

আমি চারপাশে একবার চোখ বুলিয়ে নিয়ে সুবর্ণার রুমের ভেতর ঢুকি!তারপর দরজাটা বন্ধ করে সুবর্ণার হাত ধরে নিয়ে সুবর্ণাকে নিয়ে বিছানার উপর বসি সুবর্ণা বেশ অবাক হয় হঠাৎ আমার এরকম কান্ড দেখে।বলে,

“স্বামী কোনো সমস্যা হয়েছে?”

আমি বার দুয়েক দুইটা শ্বাস ছাড়ি।তারপর নিজেকে ধীরস্থির করি।বলি,
“সুবর্ণা আমাকে একটা সত্যি কথা বলবে?কসম করে বলো!”
“কি কথা ভাবি!”
“নাহ,আগে কসম করো!বলবে?”
“তুমি কাদতেছো কিছু হয়েছে?”
“ওসব পরে আগে বলো!”
“ভাবি তুমি যদি বিষয়টা না বলো,আমি যদি আগে কসম কাঁটি এটা কিন্তু কোরআনের দৃষ্টিতে জায়েজ না।আগে বলো তারপর কি শুনতে চাও বলবো।”
“সুবর্ণা?তোমার ভাইয়ার জীবনে আরো একজন মেয়ে ছিল!কে সে মেয়ে?আমি না কিছু বুঝতেছি না!তুমি বিশ্বাস করো…ও আমাকে কোনোদিন স্ত্রীর অধিকার দেয়নি।আমি তোমাদের সামনে মিথ্যে অভিনয় করেছি এতদিন শুধু!”

বলতে বলতে কেঁদে উঠি।তারপর সুবর্ণার আবার হাত ধরি,
“বলো সুবর্ণা?!”

সুবর্ণা চুপ করে রইলো!
“আমাকে কেন তোমরা সবাই কষ্ট দাও!কেন আমাকে বুঝো না কেউ!”
“ভাবী?তোমাকে বলবো মায়ের যে বারণ আছে!মা আমাকে প্রতিজ্ঞা করিয়েছে তোমাকে কিছু না বলতে!এখন..!একটা কাজ করতে পারো ভাবী..তুমি ভাইয়ার থেকে দ্যাখো কোনোভাবে জানতে পারো কি না!”
“বাহ্ তাহলে তুমিও বলবে না!তুমিও ওদের মতন!”
“ভাবী কি বলতেছো এসব….!”
“থাক আর কাউকে কিছু বলতে হবে না!”

এ বলেই সুবর্ণার রুম থেকে বেরিয়ে এলাম।হেঁটে যেতে শাশুড়ী মা সামনে,
“কী ব্যাপার?তুমি নাস্তা না বানিয়ে এখানে কি করতেছো?বেলা ক’টা বাজে দেখোছো?আমার ছেলে অফিসে যাবে না!?”

আমি শাশুড়ী মায়ের কথার কোনো জবাব দিলাম না!পাশ কেঁটে রুমের দিকে চলে এলাম উনার সামনে থেকে!

চলবে……