শেষটা সুন্দর পর্ব-৩৮

0
597

#শেষটা_সুন্দর
#অজান্তা_অহি (ছদ্মনাম)
#পর্ব___৩৮

নির্ঝর গভীর দৃষ্টি নিয়ে তরীর দিকে তাকালো এবং অবাক হয়ে লক্ষ্য করলো যে তরী ঘুমিয়ে পড়েছে। তার চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেল। বিস্ময়ে ঠোঁটজোড়া আলগা হলো। এরকম একটা পরিবেশে, এত আবেগিক কথোপকথনের মাঝে যে কেউ ঘুমিয়ে পড়তে পারে বিশ্বাস হতে চায় না। ফোঁস করে একটা নিঃশ্বাস ছাড়লো সে!

তরী সত্যি সত্যি ঘুমিয়ে পড়েছে কি না কনফার্ম হওয়ার জন্য দু বার ডাকলো সে। কিন্তু তরী কোনো প্রতিত্তর করলো না। তাকে আঁকড়ে ধরে আরো গভীর ঘুমিয়ে তলিয়ে গেল। হাসি ফুটে উঠলো নির্ঝরের ঠোঁটের কোণে। তরীর মাথার সাথে মাথা ঠেকিয়ে সামনে তাকালো।

___________

ওপাশে কল কেটে গেছে। মায়ের সাথে কথা বলা শেষ হওয়ার পরও তরী কান থেকে ফোন নামাল না। কিছুক্ষণ কানে চেপে রইলো। এই কাজটা সে আগে করতো না। নির্ঝর নামক মানুষটার সাথে পরিচয় ঘটার পর থেকে করে। নির্ঝর যখন বাহিরে থাকে, তার সাথে প্রতিবার কথা বলার পর সে এভাবে ফোন কানে নিয়ে থাকে। কল কেটে যাওয়ার পরো এভাবে কানে ফোন চেপে ধরে রাখতে ভালো লাগে। আজও সেটাই করছে!

নির্ঝরের সাথে পরিচয় হওয়ার পর কত্ত কিছু হয়ে গেল। কত্ত কিছু ঘটে গেল। সে নতুন করে নিজেকে চিনলো। আশপাশের মানুষকে চিনলো। সর্বোপরি ‘ভালোবাসা’ শব্দটির সাথে নতুন করে পরিচিত হলো। একজনকে ভেঙে চূড়ে ভালোবাসলো। হ্যাঁ, সে নির্ঝর নামক মানুষকে ভালোবাসে। খুব ভালোবাসে। নিজেকে ভেঙে চূড়ে, টুকরো টুকরো করে ভালোবাসে। হয়তো নির্ঝরের ভালোবাসার কাছে তার ভালোবাসা কিছুই নয়। তবুও তার যতখানি সাধ্যি, ততটুকু দিয়ে মানুষটাকে ভালোবাসে সে। এই যে নির্ঝর এখন বাসায় নেই। অল্প কিছুক্ষণ হলো বাহিরে গেছে। যাওয়ার আগে তাকে জড়িয়ে ধরেছে। মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়েছে। গালে হাত ছুঁইয়ে ‘খুব তাড়াতাড়ি আসার’ প্রতিশ্রুতি দিয়ে তার পরে গেছে। তবুও ইতোমধ্যে সে মানুষটাকে মিস করা শুরু করে দিয়েছে!

কান থেকে ফোন নামিয়ে বিছানায় বসলো তরী। তার বাবা-মা এক সপ্তাহ ঢাকায় ছিল। তারপর গ্রামে চলে গিয়েছে। রোজ দুই তিনবার তাদের সাথে কথা হয় তার। ফুপির সাথে কথা হয়! সবার সাথেই কথা হয়!

ফোনটা পুনরায় চোখের সামনে ধরে তরী নির্ঝরের ছবির দিকে তাকালো। ফোন সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা না থাকলেও মোটামুটি পারে সে। তার চোখ আটকে গেল ওয়ালপেপারে। ওয়ালপেপারে নির্ঝরের একটা ছবি। ছবিটা নির্ঝরই সেট করে দিয়েছে। মুচকি হাসলো সে। ছবিটার উপর আলতো করে হাত ছুঁইয়ে নির্ঝরকে আবিষ্কারের নেশায় মত্ত হলো।

বিকেল হয়ে গেছে। কলিং বেল বাজতে তরী কিছুটা চমকে উঠলো। এখন আবার কে আসলো? নির্ঝর নয়তো? কিন্তু নির্ঝর বের হয়েছে বেশিক্ষণ হয়নি। সে বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো।

ড্রয়িং রুমে ঢুকে দেখলো নির্ঝর নয়, নিনাদ এসেছে। নিনাদ এতক্ষণ বাসায় ছিল না তার মাত্র মনে পড়লো। এই সময়ে নিনাদের বাহিরে কোচিং থাকে। সে সোফায় বসে টিভি অন করলো। নিনাদ সঙ্গে সঙ্গে কাঁধের ব্যাগ তরীর উপর রাখলো। সোফায় হেলান দিয়ে বসে পড়লো। তরী ব্যাগটা নিজের উপর থেকে সরিয়ে বলল,

‘এত ভারী কেন ব্যাগ? কোন মেয়েকে লুকিয়ে ব্যাগে পুড়ে এনেছ? হুঁ?’

‘হা হা! ভাবী আপনি এ কথা বলতে পারলেন? সত্যি কথা কি ভাবী? আমাকে কোনো মেয়ে পাত্তা দেয় না।’

তরী হেসে ফেলল। বলল,

‘পাত্তা দেওয়ার সময় আসলে ঠিক দিবে। ক্ষুধা লাগেনি? আসো আমি খাবার বেড়ে দিই!’

‘আপনাকে নড়াচড়া করতে হবে না। ভাইয়া যদি জানতে পারে তার বউকে আমি খাটিয়েছি তাহলে আমাকে জ্যান্ত পুঁতে ফেলবে। ভাইয়া নিজেই আপনার খাবার বেড়ে দেয়। আর আপনি আমার খাবার বেড়ে দিবেন!’

‘নিনাদ!’

তরী ধমক দিতে নিনাদ হেসে ফেলল। খুব তাড়াতাড়ি হাসি থামিয়ে বলল,

‘আপনার পায়ের অবস্থা কেমন? হাঁটা চলা করতে বারণ করেছি না?’

‘ভাই, এখন আমি একদম সুস্থ। পা সম্পূর্ণ ঠিক হয়ে গেছে। তোমরা অযথা চিন্তা করো। ফ্রেশ হয়ে আসো তো। খাবার বেড়ে দিচ্ছি। তাড়াতাড়ি আসো!’

‘আসছি!’

তরী উঠলো। ডাইনিং এ গিয়ে খাবার নেড়েচেড়ে দেখলো। তরকারি পুনরায় গরম করে খাবার বাড়তে বাড়তে তার কয়েক মিনিট সময় লাগলো। নিনাদ ততক্ষণে চেয়ারে বসে পড়েছে। তরী তার দিকে প্লেট এগিয়ে দিল। প্লেটে খাবার নিতে নিতে নিনাদ বলল,

‘আপনি খেয়েছেন?’

‘হুঁ!’

‘বাকি সবাই? ভাইয়া কোথায়?’

‘সবার খাওয়া শেষ। তোমার ভাইয়া বাইরে গেছে। কোনো একটা কাজ আছে বোধ হয়।’

‘অহ!’

এক লোকমা খাবার মুখে পুড়লো নিনাদ। তরী এখনো পাশে দাঁড়িয়ে আছে বলে নিনাদ বলল,

‘ভাবী, আপনার দাঁড়িয়ে থাকতে হবে না। গিয়ে টিভি দেখুন। এক দান লুডু খেলতে চাইলে রাজি আছি। খেয়ে আসছি!’

তরী হাসলো। গ্লাসে পানি ঢেলে নিনাদের দিকে এগিয়ে দিল। তারপর পুনরায় সোফায় গিয়ে বসলো। টিভি এখনো চলছে। সে রিমোট হাতে নিয়ে সাউন্ড একটু কমিয়ে দিল। সবাই ঘুমাচ্ছে। তারপর চ্যানেল পাল্টিয়ে নিউজ বক্স দেখা শুরু করলো।

কয়েকদিন হলো টিভির সামনে বসা হয় না তার। বলতে গেলে নির্ঝর দেখতে দেয় না। সে বুঝতে পারে জেরিন হত্যার ব্যাপারে নির্ঝর তাকে আর কিছু জানাতে চায় না। সে কয়েক বার নির্ঝরকে জিগ্যেস করেও ব্যর্থ হয়েছে। নির্ঝর খুব সুন্দর করে ব্যাপারটা এড়িয়ে গেছে। অন্য প্রসঙ্গ টেনে তুলেছে। সে টিভিতে সময় দেখলো।

কিছুক্ষণ পরেই জেরিন হত্যার ইস্যু নিয়ে টিভিতে নিউজ দেখলো। চমকে গেল তরী। নড়েচড়ে বসলো। টিভিতে আশিককে দেখাচ্ছে। আশিক ধরা পড়েছে? এত তাড়াতাড়ি?

আশিকের জঘন্য মুখের দিকে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারলো না সে। ঘৃণায় চোখ সরিয়ে নিল। কান দিয়ে যতটুকু খবর শুনলো তার সারমর্ম এই যে, তিনদিন হলো আশিক ধরা পড়েছে। আলাদতে একবার শুনানি হয়েছে তার। বিচারক আপাতত তাকে সাতদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে।

দ্রুত টিভি বন্ধ করে রুমে ঢুকলো সে। হাত পা কাঁপছে তার। খুশিতে নাকি ভয়ে বুঝতে পারছে না। তবে এতটুকু নিশ্চিত যে সে শান্তি পেয়েছে। আশিক যে একটু হলেও শাস্তি পাবে এতেই খুশি সে। না জানি কতগুলো মেয়ের জীবন নষ্ট করেছে এই নরখাদক!ভয়ানক শাস্তি পেলেও এর সাজা মওকুফ হবে না। ওর একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদন্ড!

ওয়াশরুমে ঢুকলো তরী। সময় নিয়ে চোখে মুখে পানি দিল। বের হয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো। ফোন টা নিয়ে নির্ঝরের ছবির দিকে চেয়ে রইলো কিয়ৎক্ষণ! তারপর মেসেজ অপশনে গিয়ে গুটিগুটি অক্ষরে লিখলো,

‘নির্ঝর সাহেব! শুনছেন? আমি তরী বলছি। ভালোবাসি আপনাকে!’

__________

রুম অন্ধকার! এতটা অন্ধকার যে নিজের হাত পর্যন্ত দেখা যায় না। আশিক ক্লান্ত হয়ে মেঝেতে বসে পড়লো। শীতল মেঝে। শরীর শিউরে উঠলো তার। শুকনো ঢোক গিলে বুঝতে পারলো প্রচুর পানি পিপাসা পেয়েছে। বুকের ভেতর মরুভূমি! সে ক্ষীণ স্বরে দু বার বলল,

‘পানি। পানি!’

কোনো প্রতিত্তর আসলো না। কিছুক্ষণ হলো তাকে চোখ বেঁধে কোথায় যেন আনা হয়েছে। রিমান্ডে বোধ হয়। রিমান্ড শব্দটা মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে ভয় পেয়ে গেল সে। হুট করে চোখ ধাঁধিয়ে রুমে আলো জ্বলে উঠলো। চোখ বন্ধ করে নিল সে। তীব্র আলো চোখের মণিতে লাগছে। বন্ধ চোখে সে রুমে কারো অস্তিত্ব অনুভব করলো। দ্রুত চোখ খুলে সামনে যে মানুষটিকে দেখলো তাতে তার পিলে চমকে উঠলো।

সে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে উচ্চারণ করলো,

‘নির্ঝর? নির্ঝর শাহরিয়ার!’

নির্ঝরের ঠোঁটের কোণে পুরনো সেই হিংস্র হাসিটা ফুটে উঠলো। বাঁকা হাসলো সে। পেছনে থাকা চেয়ার টেনে বসে পড়লো। হাস্যোজ্জ্বল চোখে বলল,

‘চিনতে পেরেছিস তাহলে? আমি তো ভেবেছি ইন্ডিয়ার হাওয়া লেগে সব ভুলে গেছিস!’

আশিক হুড়মুড় করে উঠে দাঁড়ালো। আশপাশে নজর বুলিয়ে ঠাওর করার চেষ্টা করলো সে কোথায় আছে। বদ্ধ একটা রুম নজরে এলো। সাউন্ডপ্রুফ মনে হচ্ছে। তার তো থানার ভেতর থাকার কথা। সেখান থেকে রিমান্ডে নেওয়ার কথা। তাহলে নির্ঝর কোথা থেকে আসলো? নির্ঝর কি তাকে কিডন্যাপ করেছে? সে জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজালো। ভয়ার্ত গলায় বলল,

‘আমি কোথায়?’

‘যেখানে থাকার কথা। হাজতেই আছিস তুই। আমি ভেতরে ঢুকেছি।’

‘কেন?’

‘হাউ ফানি! তুই জানিস না? জামাই আদর করবো তোকে।’

‘দেখুন, তরী তো ঠিক আছে। ওর কোনো ক্ষতি করিনি আমি। তাহলে?’

নির্ঝর গর্জে উঠলো। এগিয়ে গিয়ে ঠাস ঠাস আশিকের গালে থাপ্পড় বসিয়ে দিল। একটু পিছিয়ে এসে বলল,

‘আর কি ক্ষতি করতে চেয়েছিলি তুই? আঠারোটা দিন মেয়েটিকে কি নির্মম কষ্ট দিয়েছিস আর কি ক্ষতি করবি তুই? আশিক, তুই আমার কলিজায় হাত দিয়েছিস। তারপরও যে এতগুলো দিন বাইরের হাওয়া লাগিয়ে ঘুরতে পেরেছিস তোর পরম সৌভাগ্য। তোর জন্য আমি এখন পর্যন্ত তরীর মুখোমুখি হতে পারি না। ওকে দেখলেই তোর কুৎসিত রূপ ভেসে উঠে এই ভেবে যে, যে শয়তানটা আমার রাজ্যের রাণীকে এতটা কষ্ট দিয়েছে তাকে আমি নিজ হাতে একটু শাস্তি দিতে পারেনি। দেখ, আজ তোর কি অবস্থা করি আমি!’

হাসি গায়েব হয়ে গেছে নির্ঝরের। চোখে মুখে এসে ভর করেছে কাঠিন্য। চোখ দুটো জ্বলন্ত ফুলকির ন্যায় জ্বল জ্বল করছে। আচমকা সে চেয়ারটা আশিকের দিকে ছুঁড়ে মারলো। আশিক প্রস্তুত ছিল না বলে শেষ রক্ষা হলো না। চেয়ারের বাড়ি খেয়ে পড়ে গেল। উঠে দাঁড়ানোর সময় পেল না। নির্ঝর ততক্ষণে লোহার রডটা হাতে তুলে নিয়েছে। আশিকের পড়ে যাওয়া অবস্থায় সে রড দিয়ে একের পর এক আঘাত করে গেল।

_________

সদর দরজার সামনে দাঁড়ালো নির্ঝর। সিঁড়ি মাড়িয়ে উঠে হাঁফিয়ে গেছে সে। কিছুক্ষণ জিরিয়ে নিল। তারপর পকেট থেকে ফোনটা বের করে সময় দেখলো। রাত একটা বাজে প্রায়! এত রাত হয়ে গেছে? চোখের ভুল ভেবে আরেক বার পাওয়ার বাটন অন করলো। নাহ ঠিকই আছে! সত্যি সত্যি অনেক রাত হয়ে গেছে। কিন্তু এত রাতে ডোর বেল বাজাবে কি না তা নিয়ে কিঞ্চিৎ চিন্তিত সে। সবাই নিশ্চয়ই ঘুমিয়ে গেছে। সে লক প্যাটার্ন খুলে তরীকে ফোন দেওয়ার কথা চিন্তা করলো।

তরীকে ফোন দেওয়ার আগেই মেসেজের দিকে নজর গেল। বিকেলের দিকে তরী পাঠিয়েছে। এতটা সময় খেয়াল করা হয়নি। মেসেজ পড়ে বিস্মিত হলো সে। এত ক্লান্তির মাঝেও মুখে হাসি ফুটে উঠলো। দ্বিতীয় বার না ভেবে তরীকে ফোন দিল সে। কয়েক সেকেন্ড রিং হতেই তরীর চিন্তিত কন্ঠ ভেসে এলো। নির্ঝর ক্লান্ত স্বরে বলল,

‘ঘুমাওনি এখনো? দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে আছি আমি।’

নির্ঝর কল কাটলো না। কানে ধরেই রইলো। তরীর ধুপধাপ পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে। কিছুক্ষণের মধ্যে দরজা খুলে গেল। অবশেষে নির্ঝর সেই কাঙ্ক্ষিত মুখটা দেখতে পেল। অপলক চেয়ে রইলো সে।

তরী কল কেটে কান থেকে ফোন নামাল। অবাক হয়ে বলল,

‘ভেতরে আসছেন না কেন?’

নির্ঝরের ঘোর কাটে। দ্রুত ভেতরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয়। চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে তার। এতটা আবেগিক সে কবে থেকে হলো? বুকের ভেতর ভাঙচুর হয়ে যাচ্ছে। কেন জানা নেই! এই ভাঙচুর তরীকে বুকে পেলে তবেই থামবে। সে তরীর হাত ধরে নিজের রুমে ঢুকলো। এক টানে তরীকে বিছানায় বসিয়ে দিল। তরী অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো,

‘কি হয়েছে? এমন দেখাচ্ছে কেন আপনাকে?’

নির্ঝর ছোট্ট করে শ্বাস নিল। আস্তে আস্তে তরীর কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো। পা ভাঁজ করে গুটিশুটি হয়ে তরীর পেটে মুখ গুঁজলো। তরীর সর্বাঙ্গ কেঁপে উঠলো। বুকের ভেতর হাতুড়ি পেটার মতো শব্দ হলো। সে ছাড়া ছাড়া ভাবে বলল,

‘কি করছেন?’

নির্ঝর চোখ বন্ধ করে আছে। কিছুক্ষণ পর মাথা সোজা করে তরীর দিকে তাকালো। তরীর কম্পমান হাতের আঙুল নিয়ে নাড়াচাড়া শুরু করলো। তরীর একটা হাত বুকে জড়িয়ে বলল,

‘অনেক টায়ার্ড আমি ডিঙিরানী!’

কেমন ঘোরযুক্ত সে কন্ঠ। তরীর মনের আকাশ কেমন অন্য রকম অনুভূতিতে ছেয়ে যাচ্ছে। সে মন ঘুরাতে আশপাশে তাকাল। ও চোখে চোখ রাখলে সে নিশ্চিত খুন হয়ে যাবে। কিন্তু অবাধ্য চোখজোড়া ঠিক নির্ঝরের চোখে আটকে গেল। কিছুক্ষণ পর সে কম্পমান ডান হাত বাড়িয়ে নির্ঝরের মাথার চুল স্পর্শ করলো। কপাল স্পর্শ করলো। চোখের উপর ছুঁয়ে দিতে নির্ঝর চোখ বন্ধ করলো। তরী থামলো না। নির্ঝরের গাল ছুঁয়ে দিল, আলতো করে নাক ছুঁয়ে দিল। ঠোঁটের উপর আঙুল রাখতে নির্ঝর কেঁপে উঠলো।

(চলবে)