শেষ থেকে শুরু পর্ব-১০ + বোনাস পর্ব

0
203

#শেষ_থেকে_শুরু
কলমে :লাবণ্য ইয়াসমিন
পর্ব:১০

বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে হৈমন্তী। মনটা বিশেষ ভালো নেই। হঠাৎ করেই চিৎকার করে কাঁদতে মন চাইছে। অরিণের জন্য খারাপ লাগছে। মেয়েটা কত খুশী ছিল। ওর খুশীটা এভাবে নষ্ট হলো মানতে কষ্ট হচ্ছে। রবিন ছেলেটার উপরে বেজায় রাগ হচ্ছে। হৈমন্তীর মনে হলো মৃত্যুর পরে তো আর কিছু নেই। এতো ভয় নিয়ে সত্যিই বাঁচা যায়না। ছেলেটার সামনে একবার দাঁড়াতে হবে। বাড়ির সামনে লোকজন কাজকর্ম করছে। গায়ে হলুদের জন্য স্টেজ সাজানো হচ্ছে। আজ সন্ধ্যায় গায়ে হলুদ হবে। রবিনের পরিবার এখন ঢাকায় থাকে। গ্রাম থেকে চলে এসেছে। অরিণ চোখ ফুলিয়ে ফেলেছে কান্নাকাটি করে। রুম থেকে বের হচ্ছে না। হৈমন্তী ওর আশেপাশে থাকার চেষ্টা করছে। তবে আবির বলেছে অরিন কখনও কোনো ভুল সিদ্ধান্ত নিবে না। হৈমন্তীর বিশ্বাস হয়নি। মেয়েদের ইমোশন সম্পর্কে ওর জানা আছে। ভালোবাসার মানুষের এতো বড় বিশ্বাসঘাতকতা কেউ সহজে মানতে পারবে না। পারেও না। হৈমন্তী কথাগুলো ভেবে আরাফাতকে ফোন দিল। দুবারের পর তিনবারের মাথায় ফোন রিসিভ হলো। আরাফাত ঘুম ঘুম কন্ঠে বলল,

> সারারাত কাজ করেছি শেষরাতে ঘুমিয়েছি। ভাইয়ার সুযোগ পেয়ে আমাকে দিয়ে খাটিয়ে নিচ্ছে সরি বোন।

হৈমন্তীর রাগ হলো। আসছি বলে আসলো না।ও ঝাড়ি দিয়ে বলল,

> তোমার কাজকর্ম রাখো। আমি আগে না তোমার কাজ আগে?ভাইয়া জানতো না তুমি আমার সঙ্গে থাকবে তবুও কেনো তোমাকে দিয়ে কাজ করাচ্ছে? শুনো ভাইয়া কোনো বাহানা দিবা না। তুমি জানো এখানে কি হয়েছে। কথাগুলো তোমাকে না বলতে পেরে আমার পেট ফুলছে।

আরাফাত নড়েচড়ে উঠে বসতে বসতে বলল,

> বিয়ে বাড়িতে আনন্দ কর ওখানে আবার কি হচ্ছে?

> তুমি তো পালিয়ে গেলে। যাইহোক শুনো তুমি ডালিয়াকে চিনতে না?

> কোন ডালিয়া?

> আমাদের ডলির কথা বলছি। তুমি দেশ থেকে যাবার পরে খুন হয়েছিল সেই ডলি।

> হুম তো কি হয়েছে?

> অরিণের বিয়ে রবিনের সঙ্গে ঠিক হয়েছে। ওই খারাপ ছেলেটা আরিনকে ফাঁসিয়েছে। ভাইয়া বিয়েটা হবে না হয়তো। মেয়েটা কান্নাকাটি করছে।

> তুই আগে জানতি না? আর রবিনের সাহস হয় কিভাবে বউ বাচ্চা রেখে আরেকটা মেয়ের সঙ্গে এসব করছে। ওর বাবা মা কিভাবে পারছে ছেলেকে সাপোর্ট করতে। অবশ‍্য কাশেম মণ্ডল সব পারে। যেই দেখেছে বড়লোকের সুন্দরী মেয়ে অমনি গলে গেছে।

> ভাইয়া তুমি কিছু করো প্লিজ। আমি আবিরকে বলেছি সবকিছু কিন্তু ওরতো কোনো হেলদোল নেই। আমাকে কিছু বলছে না। হিটলার টাইপ ওকে দিয়ে কাজ হবে না। ভাইয়া ডলির কেসটা আবার রিঅপেন করা যায় না?

> যায় কিন্তু প্রমাণ নেইতো।

> তুমি ভেবোনা আমি ব‍্যবস্থা করবো। তুমি শুধু থানায় কথা বলো। তবে কেসটা যে রিঅপেন হয়েছে কথাটা যেনো মণ্ডল বাড়ির কেউ না জানে। গোপন থাকে সেদিকে একটু খেয়াল রাখবে।

> আচ্ছা দেখছি। মেঝ ভাইয়াকে বললেই সব হয়ে যাবে তুই চিন্তা করিস না। আমি কিছুক্ষণ পরে যাচ্ছি। তুই অরিণকে কান্নাকাটি করতে মানা কর। এভাবে মরা কান্নার কি আছে বুঝলাম না। বিয়ে হয়ে গেছে নাকি। ছয় মাসের প্রেম এমন ভাব করছে যেনো ছয় বছরের সংসার।

আরাফাত তাচ্ছিল্যের সুরে কথাগুলো বলল। হৈমন্তী রেগে গিয়ে বলল,

> তুমি নিজে কি করেছো? এক বছরের প্রেম তারপর সারাজীবনের বনবাস। সন‍্যাসীর মতো আছো। অথচ তোমার প্রাক্তনের ছেলেমেয়ের বিয়ের বয়স হয়ে গেছে। রাখছি।

হৈমন্তী ঝাড়ি দিয়ে ফোন কেটে দিলো। বিড়বিড় করে ভাইকে আচ্ছা করে বকা দিলো। কতবার বলেছে একটা বিয়ে করো কিছুতেই মানতে চাইছে না। হৈমন্তী ফোন হাতে নিয়ে রুমের ভেতরে গিয়ে দেখলো অরিণ ঘুমিয়ে আছে। হৈমন্তী ওকে আর ডাকলো না। নিচে নেমে আসলো। ফারজানা হক সোফায় বসে আছে। হয়তো ফেসিয়াল করবে। পাশে পার্লারের একটা মেয়ে বসে আছে। হৈমন্তীকে দেখে উনি ডাকলেন। হৈমন্তী ফারজানা হকের পাশে বসতে বসতে বলল,

> আন্টি তোমাকে ভীষণ কিউট লাগছে।

ফারজানা হক হৈমন্তীর কথা শুনে শব্দ করে হেসে বলল,

> এখনো ফেসিয়াল হয়নি আর তোমার কিউট মনে হচ্ছে? শোনো এই মেয়েগুলোকে আমার জন্য না তোমাদের জন্য এনেছি। বাড়ির সবগুলো মেয়েছেলেদের ফেসিয়াল হবে। আবিরটা তো এসব পছন্দ করেনা। ভাবছি ওকে ঘুমের ওষুধ দিয়ে কাজটা হাছিল করে ফেলবো।

হৈমন্তীর হাসি পাচ্ছে। ফারজানা হক যে এই কাজটা করতে পারে এটা ওর অবিশ্বাস হচ্ছে না। হৈমন্তী হাসি আটকে বলল,

> আন্টি এসব দরকার নেই। বাড়িতে অনেক কাজ সেগুলো কে করবে? দেখছেন না বাইরে লোকজন নিয়ে কাজ করছে। কমিউনিটি সেন্টারে গেলে কিন্তু এই ঝামেলা হতো না।

> আবিরের বুদ্ধি। ও এখানেই সব করবে। শোনো তুমি সবার আগে ফেসিয়ালটা করে ফেলো। তোমাকে কিন্তু দারুণ লাগতে হবে। তোমার জন্য আমি সুন্দর একটা শাড়ি রেখেছি। তুমি আজ সন্ধ্যায় সেগুলোই পরবা।

ফারজানা হক ওকে কথা বলার সুযোগ না দিয়ে উঠে গেলো। হৈমন্তী নড়াচড়া করে বসলো। ও শাড়ি পড়ে না। সব সময় সাদা নয়তো হালকা রঙের গাউন নয়তো থ্রি পিচ পড়ে। রঙিন পোশাক পছন্দ না। হৈমন্তী গম্ভীর হয়ে বসে আছে। ফেসিয়াল করতে হয়না ওর। কখনও পার্লারের আশেপাশেও যাওয়া হয়নি। নিজের যত্ন নিজেই নিতে পারে ও। হৈমন্তী কথাটা ভেবে পাশের মেয়েটাকে বলল,

> আমি এসব করবো না। আশেপাশে অনেকেই আছে আপনি তাদেরকে দেখুন।

হৈমন্তী আর অপেক্ষা করলো না বাইরে বেরিয়ে আসলো। আবির লোকজনকে দেখিয়ে দিচ্ছে কিভাবে কি করতে হবে। হৈমন্তী বাগানের পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। আবির কাজের ফাঁকে ওর দিকে আঁড় চোখে তাঁকিয়ে ভাবলো এই মেয়েটার মাথায় কি চলছে কে জানে। সারাক্ষণ তো ঘরে বসে থাকে। বাইরে লোকজন আছে এখানে কি করছে। আবির ওদেরকে কাজ বুঝিয়ে দিয়ে দ্রুতগতিতে হৈমন্তীর পাশে এসে দাঁড়িয়ে বলল,

> এখানে কি তোমার?

> আপনি কি করতে চাইছেন বলবেন? রবিণের সঙ্গেই বিয়েটা দিবেন ভাবছেন?

> হুম তোমার কি? ভেতরে যাও আর আম্মুকে বুঝিয়ে বলো আমার খাবারে ঘুমের ওষুধ দেওয়ার পরিকল্পনাটা ভীষণ জঘন্য হয়েছে।

হৈমন্তী চোখ বড় বড় করে বলল,

> আপনি শুনেছেন?

> না শোনার কি আছে। ভেতরে যাও এখানে লোকজন
আছে।

হৈমন্তী চুপচাপ চলে আসতে গিয়ে পেছনে ফিরে বলল,

> আপনাকে একটা প্রস্তাব দেওেয়ার ছিল। যদি অনুমতি দিতেন উপস্থাপন করে পারি।

আবির ভ্রু কুচকে বলল,

> প্রস্তাব তো আমি তোমাকে দিতে চাই আমার আগেই তুমি দিচ্ছ? সুখের দিন বুঝি হঠাৎ করেই আসে। বলে ফেলো মনে যা আছে।

হৈমন্তী মাথা নিচু করে বলল,

> আরাফাত ভাইয়ার সঙ্গে অরিণের বিয়েটা দিলে কেমন হয়। আমার ভাইয়া কিন্তু খুব ভালো। ওকে ভালো রাখবে। ( পাঠক সমাজ,প্রস্তাব দিয়ে ফেলেছি আবির না মানলে কিন্তু লেখিকাকে দোষারোপ করতে পারবেন না।)

হৈমন্তীর কথা শুনে আবির হতাশ হলো। কি শুনতে চেয়েছিল আর কি শুনলো। ও রাগ করে দাঁত চেপে বলল,

> অরিনের জন্য ছেলের অভাব পড়বে না। আবিররের বোন সস্তা না। ওর চিন্তা না করে নিজের চিন্তা করো যাও।

আবির গটগট করে চলে গেলো। হৈমন্তীর মনে হলো আবির ওকে অপমান করলো। ওর ভাইও কি সস্তা নাকি। নেহায়েত অরিনের পাশে একজন মানুষকে এই মূহুর্তে দরকার তাই প্রস্তাবটা দিয়েছে নয়তো কখনও দিতো না। হৈমন্তী রাগে ফুলতে ফুলতে রুমে গিয়ে দরজা ধপাস করে বন্ধ করে দিলো। ফাজিল ছেলে একটা। হৈমন্তী ওর কোনো কথায় আর শুনবে না। যতক্ষণ না ক্ষমা চাইবে হৈমন্তী ওকে ক্ষমা করবে না। অরিণ মন খারাপ করে বসে ছিল। হৈমন্তীকে এমন ফুলতে দেখে ও ভ্র কুচকে বলল,

> তুমি কি রাগ করেছো? কেউ কিছু বলেছে?

> তোমার ভাইয়া আমাকে অপমান করেছে অরু। ওকে আমি কখনও ক্ষমা করবো না। তুমি জানো আমার ছোট ভাইয়াকে ছোট করে কথা বলেছে?

অরিণ অবাক হলো। আবির এরকম কিভাবে করতে পারে বুঝতে পারলো না। ও মন খারাপ করে বলল,

> হয়তো ভাইয়ার মাথা ঠিক নেই। তুমি কিছু মনে করোনা। ভাইয়াকে বলবো তোমার কাছে ক্ষমা চাইতে।

> তুমি ওকে কিছু বলবে না। ও নিজ থেকে ক্ষমা চাইবে। তোমার ভাইয়া ভীষণ খারাপ মানুষ তুমি জানো?

অরিণ মাথা নাড়িয়ে বলল জানে না। হৈমন্তী এক সঙ্গে এতগুলো কথা বল‍ে না। আজ হয়তো একটু বেশিই রাগ করেছে। অরিণ ওষ্ঠে হাসি ফুটিয়ে বলল,

> আচ্ছা তুমি কি বলেছিলে ভাইয়াকে?

হৈমন্তী এবার দমে গেলো। অরিণের সঙ্গে বিষয়টা সেয়ার করলে ও কথাটা কিভাবে নেবে বুঝতে পারছে না। তবুও মিনমিনে কন্ঠে বলল,

> আমার ছোট ভাইয়াকে তোমার কেমন লাগে?

> উনি ভদ্রলোক সদালাপি তবে একটু বেশিই উগ্র টাইপ।

> ভাইয়া স্পষ্ট কথা বল‍তে পছন্দ করে। তুমি দেখেছো আমাকে কতোটা খেয়াল রাখে। আমি চেয়েছিলাম তোমার সঙ্গে যদি ওর…

হৈমন্তী বাকিটা বলতে পারলো না। অরিন ওকে থামিয়ে দিয়ে বলল,

> আমি বুঝেছি তুমি কি বলতে চেয়েছো। তোমার কথা আমি রাখতে পারি যদি তুমি আমার শর্তে রাজি হও। এতে অনেকের ভালো হবে।

হৈমন্তী খুশীতে লাফিয়ে উঠলো। অরিনের মতো মিষ্টি একটা মেয়ে যদি ভাইয়ার বউ হয়ে যায় তাহলে আরাফাত আর উদাসীনভাবে চলাফেরা করবে না। জীবন নিয়ে সিরিয়াস হবে। অবশেষে ভাইয়ার জন্য পাত্রী পাওয়া গেলো। তাছাড়া অরিন ভালো থাকবে কথাটা ভেবে বলল,

> তোমার যেকোন শর্তে রাজি আমি। তুমি শুধু কষ্ট পেওনা ভাইয়া তোমাকে ভালো রাখবে। তুমি এতো সহজে রাজি হবে সত্যিই ভাবিনি। ভীষণ খুশী আমি।

> আমার শর্তটা শুনে তারপর খুশী হও। তুমি যেমন তোমার ভাইয়াকে ভালোবাসো আমিও আমার ভাইয়াকে ভীষণ ভালোবাসি। ভাইয়া তোমাকে পছন্দ করে। শুধু পছন্দ না ভালোবাসে। তুমি যদি ভাইয়াকে বিয়ে করতে রাজি হয়ে যাও আমিও তোমার ভাইয়াকে বিয়ে করবো। তুমি হয়তো আমাকে স্বার্থপর ভাবছো কিন্তু এটা ছাড়া আমার উপায় নেই। ভাইয়া খুব ইমোশনাল।

অরিন আরও কিছু বলতে চাইলো কিন্তু হৈমন্তী সুযোগ দিলো না। উঠে পড়লো। ওর মুখটা থমথমে হয়ে আছে। কিছুক্ষণ আগে যে খুশীর ঝিলিক ছিল সেটা মিলিয়ে গেছে। চোখমুখ কঠিন করে ভ্রু কুচকে বলল,

> তোমার ভাই আর আমার মধ্যে ব‍্যবধান আকাশ পাতালের। আমার পূর্বে দুবার বিয়ে হয়েছে। আমি উনার যোগ্য না। আমি পারবো না ক্ষমা করো।

> ভাইয়া আম্মু সবাই রাজি তাহলে তুমি অমত করছো কেনো? প্লিজ রাজি হয়ে যাও। আচ্ছা তুমি চাও না আমি তোমার ভাইয়ের জীবনে আসি? যদি না চাও তবে আর দ্বিতীয়বার এই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হবে না।

অরিন বাইরে চলে গেলো। ভেবেছিল নিজের যতই কষ্ট হোক ভাইয়ের সুখের টনিক খুজেঁ দিবে। চুপচাপ বসে আছে হৈমন্তী। অরিন চলে যাওয়ার পরে আর ফিরে আসেনি। হাজারো চিন্তা মাথার মধ্যে ঘুরছে। স্মৃতির পাতায় পুরাতন স্মৃতিরা আছড়ে পড়ছে। যেগুলো কাউকে শেয়ার করা হয়নি। ভেবেছিল নিজের কষ্ট গুলোকে আর কারো সামনে আনবেনা। নিজকে নিজের ছোট মনে হচ্ছে। বাঙ্গালী মেয়েদের একবারই বিয়ে হয় অথচ নিজে দুই দুইবার বিয়ের পিড়িতে বসে পড়েছে। নতুন করে শুরু করবে নাকি শেষ হওয়া জীবনের স্মৃতিচারণ করে বেঁচে থাকবে কথাগুলো ভাবতে ভাবতে চোখের পাতা ঝাপসা হয়ে আসলো।
_____________________
ধরাধামে সন্ধ্যা নেমেছে। সন্ধ্যা প্রায় শেষ ভাগ রাতের সুচনা লগ্ন বলা যায়।হৈমন্তী বাসন্তী রঙের লাল পেড়ে শাড়িতে নিজেকে সাজিয়ে নিয়েছে। ফরহাদের বাসা থেকে ফেরার পরে আর কখনও রঙিন পোশাক পরা হয়নি।আজকে ফারজানা হকের জিদের জন্য ওকে পরতে হলো। আঁচল ছেড়ে দিয়ে হিজাব পড়ে নিয়েছে যদিও হৈমন্তীর কাছে জঘন্য লাগছে তবুও কয়েকজন বেশ পছন্দ করলো। হৈমন্তীর একটা আলাদা উদ্দেশ্য আছে যার জন্য এই শাড়িটা গায়ে জড়াতে বেশি ঝামেলা করেনি। ছেলেদের বাসা থেকে গায়ে হলুদের জন্য আসছে। এখান থেকে অনেকেই ছেলেকে হলুদ ছোঁয়াতে যাবে। হৈমন্তী ওদের সঙ্গে যাওয়ার পরিকল্পনা করে ফেলেছে। মুখটা বেঁধে ফেলবে গাড়িতে উঠে। এখানে কাউকে বুঝতে দিলে চলবে না। আবিরের যাওয়ার কথা ছিল কিন্তু রবিনকে দেখলে রেগে যাবে তাই কাজের বাহানা দিয়ে বাইরে চলে গেছে। আরাফাত সকালবেলায় হৈমন্তীর ফোন পেয়ে গ্রামের বাড়িতে ছুটেছে। হয়তো সকালবেলায় হাজির হবে। বিয়ের মাঝে একদিন বাকি আছে। হৈমন্তী কথাগুলো ভেবে হালকা লিপস্টিক দিয়ে ঠোঁট দুখানা রাঙিয়ে নিলো। অরিন ওর পাশে দাঁড়িয়ে আছে। ওর চোখেমুখে কৌতূহল খেলা করছে। এতো বছরে হৈমিকে কখনও এভাবে সাজতে দেখেনি হঠাৎ কি এমন হলো যে এতো কিছু জানার পরেও এমন সাজুগুজু করছে। ও কৌতূহল দমিয়ে রাখতে না পেরে বলল,

> হৈমি তুমি ঠিক আছো? তুমি জানো বিয়েটা হবে না তবুও এসবের মানে কি?

> বিয়ে হবে অরু। তুমি চিন্তা করোনা। বিয়ে হবে আর অপরাধীও শাস্তি পাবে। আসছি আমি।

হৈমন্তী দ্রুতগতিতে বেরিয়ে গেলো। অরিন আবিরকে ফোন করলো কিন্তু ছেলেটার ফোন বন্ধ। হৈমিকে নিয়ে ওর চিন্তা হচ্ছে। মেয়েটা কোনো বিপদে না পড়ে যায়। তাছাড়া ও কি করতে চাইছে কিছুই তো বল‍লো না। শেষমেশ আরাফাতকে ফোন করলো। গ্রামের নেটওয়ার্ক সিস্টেম এমনিতেই খারাপ তারপর আবার ঝড় হয়েছে গতকাল রাতে। খুব কষ্টে লাইন লাগলো কিন্তু কথা হলো না। গড়গড় শব্দ হচ্ছে। অরিন ফোন কেটে টেক্সট পাঠিয়ে দিলো। দ্রুত ওদের বাড়িতে আসতে ।

চলবে

ভুলত্রুটি মার্জনা করবেন।

#শেষ_থেকে_শুরু
কলমে: লাবন্য ইয়াসমিন
বোনাস পর্ব

রবিনদের বাসার সামনে দাঁড়িয়ে আছে হৈমন্তী। চারদিকে অসংখ্য লোকজন হৈচৈ করছে। স্টেজের কিছু ছেলে সাউন্ড বক্সে মৃদু ছন্দে গান বাজাচ্ছে। হৈমন্তী সকলের সঙ্গে ভেতরে ঢুকলো।বেশ আগ্রহ নিয়ে অতিথিদের স্বাগত জানানো হচ্ছে। হৈমন্তী আশেপাশে চোখ বুলিয়ে নিলো। বহুকাল আগে রবিনের বাবাকে দেখেছিল এখন তাঁর চেহারা ঠিক মনে নেই। চেনার মধ্যে শুধু রবিনকে চিনে। ওর সঙ্গে কিছু বখাটে বেড়াতো ওদেরকে মোটামুটি চিনতো। হৈমন্তী বিড়বিড় করতে করতে অপরিচিত একটা মেয়েকে বলল,

> আপু আমি মেয়ে বাড়ির বিশেষ আত্মীয়। রবিন ভাইয়া আমাকে চিনে আমি উনার সঙ্গে একটু দেখা করবো। উনাকে কোথায় পাওয়া যাবে বলতে পারেন?

মেয়েটা কয়েক সেকেন্ড ভেবে ওকে দেখিয়ে দিল রুমটা। হৈমন্তী অপেক্ষা করলো না। একবার মুখে হাত রেখে দেখে নিলো কিছু দেখা যাচ্ছে কিনা। তারপর সিউর হয়ে মেয়েটার দেখানো রুমটাতে চলে গেলো। রবিন রুমে একা থাকতে পছন্দ করে। কিছুক্ষণ পরে বাইরে যেতে হবে কিন্তু আমেরিকার এক গার্লফ্রেন্ডর সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে বাইরে যাওয়া হয়নি। দুজন ভিডিও কলে বাক‍্য আদান প্রদানে ব‍্যস্ত সেই সময় হৈমন্তী ভেতরে প্রবেশ করলো। ও খুব সাবধানে দরজা লাগিয়ে দিয়ে রবিণের পেছনে গিয়ে দাড়ালো। ভিডিও কল চলছে মেয়েটা রবিনকে কিছু বলার আগেই রবিন পেছনে তাঁকিয়ে কিছুটা আবার হয়ে বলল,

> কি চাই এখানে?

হৈমন্তী চোখের পাতা নাড়িয়ে বলল,

> আপনাকে চাই। দিবেন আপনাকে?

রবিন ভ্রু কুচকে ফেলল। মেয়েটাকে ওর চেনা লাগছে না।ভাবলো ফাজলামি করছে তাই কিছুটা রেগে বলল,

> আসতে পারেন আমি বিজি আছি।

হৈমন্তী মুখের নেকাবটা আস্তে করে খুঁলে ফেলল। রবিন ওর মুখের দিকে বিস্মিত হয়ে তাঁকিয়ে আছে। হৈমন্তীকে এতো বছর পরে দেখবে আশাকরেনি। ও কাপা কাপা কন্ঠে বলল

> তুমি?

> আশা করেননি তাই না? বাড়িতে বউ বাচ্চা রেখে আবারও বিয়ে করছেন মেয়ে বাড়ির লোকজন জানে?

রবিন ঢোক গিলে বলল,

> ওকে আমি ডিভোর্স দিয়েছি। আমার কোনো বউ নেই। বাচ্চা ছিল চাচাতো ভাইকে দিয়ে দিয়েছি আর আমি তোমাকে এতোকিছু বলছি কেনো। কে তুমি?
এখুনি আমার বাড়ি থেকে বের হও।

হৈমন্তী ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটিয়ে বলল,

> রাগ করছেন কেনো। আমি কাউকে বলছি নাতো। শুধু জিঞ্জাসা করছি। প্রথমে আমি তারপর ডলি এখন অরিন মাঝখানে কতগুলো মেয়েকে যে আপনার চোখে ধরেছে তাঁর হিসাব নেই। কেনো এমন করেন?

> আমার ব‍্যক্তিগত ব‍্যাপার,তোমাকে কি জন্য বললো আমি? বের হতে বলেছি নয়তো কিন্তু খুব খারাপ হবে।

হৈমন্তী ওকে রাগিয়ে দেবার জন্য বলল,

> অরিনকে আমি সব বলে দিব। আপনি ডলিকে খুন করেছিলেন। আপনি খুনি ঠক আর লম্পট।

রবিনের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো।অরিনকে ওর বেশ পছন্দ। ওকে কিছুতেই হাতছাড়া করা চলবে না।কি করবে ভেবে না পেয়ে হুমকি দিয়ে বসলো,

> ডলির চেহারা মনে আছে? লাশের যেই অবস্থা করেছিলাম না তোকেও তাই করবো। তুই কি ভেবেছিস তোকে ছেড়ে দিবো? চুপচাপ চলে যাবি কিছু করার চেষ্টা করলে খুন করে গুম করে দিবো।

হৈমন্তীর ভয়ে বুক ধুকপুক করছে। তবুও দমে না গিয়ে বলল,

> আমার ধারণা ঠিক ছিল ওকে তুই মেরেছিস। কেনো এমন করলি ওর সঙ্গে। গরিব মেয়েটাকে এভাবে মারতে তোর হাত কাঁপেনি। ওর বাবা এখনো কেঁদে বেড়ায়। তুই কি মানুষ?

রবিন তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল,

> রবিনকে থাপ্পড় দিয়েছিল না প্রতিশোধ নিয়েছি। ওর কলিজা খুব বড় ছিল। ওর সঙ্গে কি কি করেছি তুই ভাবতেও পারবি না। যখন বারবার ক্ষমা চাইছিল আমার কি যে মজা লেগেছিল। এখন হলে ভিডিও করে রাখতাম।।

হৈমন্তী রাগে ঘৃণার ফেঁটে যাচ্ছে। এই ভদ্রবেসি শয়তানের জন্য ডলি আজ পৃথিবীতে নেই। হৈমন্তী চোখের পানি মুছে নিয়ে বেরিয়ে আসতে চাইলো কিন্তু পারলো না রবিন ওর হাত ওরে ফেলল।তারপর মুখটা কঠিন করে বলল,

> তোর ফোনটা বের কর। আমাকে পাগল পেয়েছিস রেকর্ড করে পুলিশে দিবি আমি বুঝতে পারবো না। বের কর।

হৈমন্তী ফোন বের করবে না বলে ব‍্যাগ ধরে দাঁড়িয়ে থাকলো। রবিন হাতে মুঠো শক্ত করে জোরে হৈমন্তীর মুখে থাপ্পর বসিয়ে দিয়ে এক ঝটকায় ব‍্যাগ নিয়ে ফোনটা বের করলো। কোনো রেকর্ড চলছে না দেখে ওকে ফিরিয়ে দিয়ে বলল,

> তুই কিছুই করতে পারবি না। কে বিশ্বাস করবে তোকে? যা পারিস করে নিস।

কথাটা বলে ওকে ধাক্কা দিয়ে দরজার দিকে ফেলে দিলো ঠিক তখনই আবির ভেতরে প্রবেশ করলো। হৈমন্তী ওর গায়ের উপরে পড়তে পড়তে নিজেকে সামনে নিলো কিন্তু শেষরক্ষ হলো না। আবিরের পায়ের কাছে পড়ে গেলো। পা কাটা ছিল সেখানে আঘাত লেগে রক্ত বেরিয়ে গেলো। তাছাড়া দুদিন আগে পানি লেগে ইনফেকশন হয়েছে হৈমন্তী ভেবেছিল ঠিক হয়ে যাবে এতো ঝামেলার মধ্যে সেদিকে খেয়াল ছিল না। হৈমন্তী যন্ত্রণায় চোখ বন্ধ করে ফেলল। ঠোঁট চেপে কান্না আটকানোর চেষ্টা করলো। আবির তাড়াতাড়ি ওকে তুলতে গেলো কিন্তু হৈমন্তী ওর হাত সরিয়ে দিয়ে উঠে দাঁড়ালো। আবির ভ্রু কুচকে রবিনের দিকে তাঁকিয়ে বলল,

> ওকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলেন না?

রবিন কিছু বলার আগেই হৈমন্তী উত্তর করলো,

> উনি আমাকে ধাক্কা দেননি আমি এমনিই পড়ে গেছি। আপনারা কথা বলুন আমি আসছি।

হৈমন্তী আবিরকে অচেনার ভান করে বেরিয়ে গেলো। আবির বিচক্ষণ মানুষ বুঝতে পেরেছে কিছু ঘাপলা আছে। তাই না দাঁড়িয়ে রবিনকে এটা ওটা বুঝিয়ে বাইরে বের হলো। হৈমন্তী বাইরে এসে ভেবেছিল দ্রুত চলে যেতে পারবে কিন্তু হলো না। বহুদিন শাড়ি পরার অভ‍্যাস নেই তখন ছিটকে পড়ে শাড়ির কোনা খুঁলে গেছে। জড়সড় হয়ে হাটতে হচ্ছে। মুখ বাঁধা হয়নি। যদিও এখানে চেনা পরিচিত কেউ নেই তবুও খুব বিরক্ত লাগছে। দুঘর সামনে এগিয়ে আরেক ঝামেলা এসে হাজির। রবিনের বাবা ওকে আটকে দিয়ে বলল,

> এই তোমাকে কেমন চেনা লাগছে। তুমি হৈমন্তী না? খলিল মির্জার ছোট মেয়ে।

হৈমন্তী মনে মনে ভাবলো এবার ষোলো কলা পূর্ণ হলো। আল্লাহ্ রক্ষা করো এই বিপদ থেকে।লোকটা যে বদের হাড্ডি কুটনৈতিক বুদ্ধি প্রখর। হৈমন্তী তাড়াতাড়ি আচল মুকে দিয়ে মুখ ঢেকে বলল,

> কোন খলিল আঙ্কেল?আমি কোনো খলিল টলিলকে চিনি না। আপনাকে ভেতরে ডাকছে।

হৈমন্তী কথাটা বলে তাড়াতাড়ি কেটে পড়লো। রবিনের বাবা ডাকছে পেছনে থেকে কিন্তু হৈমন্তী ভূলেও তাকালো না। ভদ্রলোক তাড়াতাড়ি রবিনকে ডাকতে গেছে। আবির বাইরে এসে হৈমন্তীকে খুঁজতে খুঁজতে রাস্তায় এসে আশেপাশে খোঁজ করলো। তখনই হৈমন্তী এসে হাজির। হৈমন্তী হাপাতে হাপাতে বলল,

> তাড়াতাড়ি গাড়ি আনুন ফিরতে হবে।

> এইটুকু আসতে তোমার এতক্ষণ লাগলো?

> গাড়িতে বসে বলবো। দ্রুত করুন না হলে আমি চলে
যাচ্ছি।

হৈমন্তী হাটতে শুরু করলো। আবির ভেতরে গিয়ে গাড়ি এনে হৈমন্তীকে তুলে নিলো। আবির গাড়ি ছেড়ে কিছুদূরে এসে ওকে জিঞ্জাসা করলো,

>প্রচুর সাহস বেড়েছে একা একা চলে এসেছো। একটা থাপ্পর দিয়ে ছেড়ে দিলো ভেবেছিলাম আরেকটা দিবে। পা থেকে রক্ত বের হচ্ছে। কবে থেকে ইনফেকশন হয়েছে?

হৈমন্তী ছিটে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করলো। আপাতত উত্তর দেবার ইচ্ছে না।পয়ে প্রচণ্ড যন্ত্রণা করছে। ওকি রোবট যে ওর যন্ত্রণা হবে না। তাছাড়া শক্ত থাপ্পর খেয়ে মুখ ব‍াঁকা হওয়ার অবস্থা। মা আর ফরহাদ ছাড়া ওকে কেউ মারেনি। শেষ থাপ্পর ফরহাদ মেরেছিল তারপর এই রবিনের বাচ্চা। পরের হাতে মার খেতে খেতে একদিন না মরেই যায়। কথাটা ভেবে ওর কষ্ট না রাগ হচ্ছে। যে যেমন পাচ্ছে থাপ্পর দিয়ে যাচ্ছে ওকি ফেলনা নাকি। সবগুলো থাপ্পরের জবাব দিবে। আবির ওর নিরবতা দেখে গাড়ি থামিয়ে বলল,

> রবিনের থাপ্পর খেয়ে বোবা হয়ে গেছো? উত্তর দাও।

> পানি খাবো পানি আছে?

আবির বিরক্ত হয়ে ভ্রু কুচকে ওকে পানি এগিয়ে দিলো ঠিক তখনই ফোন বেঁজে উঠলো। আবির ফোন রিসিভ করে কানে ধরলো। ওপাশ থেকে কে কি বলল হৈমন্তী বুঝতে পারলো না। আবিরকে খুব চিন্তিত দেখালো। ঠিক তখনই ওর ফোনটা বেজে উঠলো। হৈমন্তী ফোন চেক করে দেখলো আরাফাত ফোন করেছে। ও তাড়াতাড়ি রিসিভ করে কানে ধরলো। ওপাশ থেকে বলল,

> হৈমিা অরিনকে নিয়ে আমরা সিটি হাসপাতালে আছি। ওয়াশ করছে জানিনা কি হবে খুব চিৎকার চেচামেচি করছে। মেয়েটা কি যে করলো।

হৈমন্তী ভয়ে চুপ হয়ে গেছে। যে ভয়টা পেয়েছিল তাই হয়েছে। একটার পর একটা বিপদ দরজায় এসে কড়া নাড়ছে। মেয়েটা বাঁচবে তো?
________________
আবির দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে হাসপাতালে এসে হাজির হলো। অরিনকে অটিতে নেওয়া হয়েছে। বাইরে ওর বাবা মা আর আরাফাত দাঁড়িয়ে আছে। আবিরের মা কান্নাকাটি করছেন। আবির আসতেই ওর গলা জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করলো। হৈমন্তী জড়সড় হয়ে আরাফাতের পাশে এসে ফিসফিস করে বলল,

> ভাইয়া কিভাবে কি হলো। ও কি করছে?

আরাফাত দাঁতের সঙ্গে দাঁত চেপে বলল,

> মাথা মোটা মেয়েটা হারপিক খেয়েছে বিষের অভাবে। ছি আমার ভাবতেই বমি আসছে। কিছু হবে না। তবে জন্মের মতো মরার সখ মিটে যাবে।

আরাফাতের রাগ হচ্ছে ওর কথা শুনেই বোঝা যাচ্ছে। কিন্তু হৈমন্তীর রাগ হচ্ছে না কষ্ট হচ্ছে। যার জন্য এতোকিছু করছে সেই য‍দি এমন করে। ও ফ্লোরে বসে বড়লো। শাড়িটা ধরে রেখেছিল সেটা এলোমেলো হয়ে গেলো। মুখে পাঁচ আঙুলের ছাপ স্পষ্ট হয়ে আছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই অরিনকে বেডে নেওয়া হলো কিন্তু হৈমন্তী সেখানেই বসে থাকলো। আরাফাত ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলতে চলে গিয়েছিল আসেনি। আবির মাকে সামলে বাইরে আসলো। হৈমন্তীকে এভাবে বসে থাকতে দেখে ওর চোখ দুটো লাল হয়ে গেলো। ওর পাশে গিয়ে ধমক দিয়ে বলল,

> বাড়িতে ফিরবে নাকি এভাবেই বসে থাকবে। পাগল হয়ে যাচ্ছি আর ভালো লাগছে না। মুখে তালা এটেছো খুঁলতে বলছি না।

হৈমন্তী চমকে উঠে দাঁড়াতে গেলো কিন্তু পারলো না পায়ের ব‍্যাথা আরও বেড়েছে। রক্ত জমাট বেঁধে আছে। আবির ওকে থামিয়ে দিয়ে একজনকে ডেকে ওকে পাঠিয়ে দিলো। হৈমন্তীর পায়ে ব‍্যান্ডেজ করানোর জন্য। মেয়েটার মুখের দিকে তাকিয়ে ওর হাতের মুঠো শক্ত হয়ে আসছে। এই থাপ্পড়ের জবাব থাপ্পরে না ফাঁসিতে শোধ করবে।
আরাফাত ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে হৈমন্তীর কাছে গেলো। হৈমন্তী অরিণের পাশে বসে আছে। শাড়ি ঠিক করে নিয়েছে। আরাফাত ওকে পাশে ডেকে নিয়ে ফিসফিস করে বলল,

> তোর মুখে কি হয়েছে? কোথায় গিয়েছিলি?

হৈমন্তী সংক্ষেপে বিস্তারিত বলে হিজাব থেকে একটা ক‍্যামেরা খুলে আরাফাতের হাতে দিয়ে বলল,

> এখানে প্রামাণ আছে ভাইয়াকে দিও। তুমি এখানে কেনো?তুমি না গ্রামে গিয়েছিলে?

> অরিনের টেক্সট পেয়ে ছুটে এসেছি। বাইরে তোকে খুঁজে না পেয়ে ঘরে গিয়ে দেখি ওইটা ফ্লোরে গড়াগড়ি করছে। সব বাইরে গানবাজনা নিয়ে মশগুল। পরে দ্রুত আন্টিকে ডেকে ওকে নিয়ে পেছনের দরজা দিয়ে হাসপাতালে এসেছি। লোকজন জানাজানি হলে সম্মান যাবে সেই ভয়ে আঙ্কেল কাউকে বলেতেও দিলো না। বাড়িতে জানিনা কি অবস্থা। আবির গিয়ে সামলে নিবে। এই রবিনকে না খুন করতে মন চাইছে। হারামির বাচ্চা।

হৈমন্তী চুপচাপ অরিনের কাছে চলে আসলো। মেয়েটা এখনো চোখ বন্ধ করে পড়ে আছে। মুখটা শুকিয়ে আছে। ঠোঁটে রক্ত শুকিয়ে কালো হয়ে আছে। ওকে দেখে হৈমন্তীর নিজের কথাগুলো মনে পড়ছে। স্মৃতি থেকে হারিয়ে যাওয়া বিষাদের দিনগুলো বারবার উঁকি দিচ্ছে। হৈমন্তীর মনে হলো ওর আশেপাশে যারা থাকবে তারাই কষ্ট পাবে। ও এখানে আর থাকবে না। নিখোঁজ হয়ে যাবে।

চলবে

ভুলত্রুটি মার্জনা করবেন।