শেষ_ভালোবাসা
পর্ব : ১৫
লেখা : মেঘপরী
.
অত্র আভা বাসায় ফিরতেই অত্রর মা দৌড়ে অত্রর কাছে এসে হাউমাউ করে কান্না শুরু করে দিলো।
-কোথায় গিয়েছিলি বাবা কাউকে কিছু না বলে? তুই যানিস কতো চিন্তায় ছিলাম আমরা। তোর বাবা তো অসুস্থ প্রায়। আভা তো খাওয়া দাওয়া সব ছেড়েই দিয়েছে।
– মা এই দেখো আমি ঠিক আছি। সরি মা আর এমন করবো না তুমি কান্না থামাও প্লিজ। এই দেখো কান ধরছি।
– থাক অনেক হয়ছে খেয়েছিস কেমন শুকিয়ে গেছে আমার ছেলেটা। আভা মা তোরা টেবিলে গিয়ে বস আমি তোদের খাবার দিচ্ছি ।
-মা আপনিও বসুন আমরা সকলে একসাথে বসে খাই..।
অনেক দিন পর আজ সবাই একসাথে খাবার খেলাম। আজ মনটা অনেক হালকা লাগছে।অবশেষে ভালোবেসে ফেলেছি অত্রকে। কিন্তু অত্রর কি হলো সবার সাথে হেসে হেসে কথা বললেও আমার দিকে ফিরেও তাকাচ্ছে না কেনো? ওকে একবার রুমে চলো তারপর দেখছি..
সবাই দুপুরের খাওয়া দাওয়া শেষ করে যে যার রুমে চলে আসে।
অত্র রুমে আসতেই আভাও অত্রর পিছু পিছু রুমে চলে আসে। রুমে ঢুকেই আভা
পিছন থেকে অত্রর হাত ধরে সামনে ঘুরিয়ে অত্রের কলার ধরে বলে
-এই সমস্যা কি তোমার আমাকে ইগনোর করছো মনে হচ্ছে…?
– দেখি আভা ছাড়ো আমাকে আমি ফ্রেস হতে যাবো।
– না আগে বলো..আমার উপর রেগে আছো?
– আভা সেদিনের ভুলের জন্য সরি। আমার তখন এমন করা উচিত হয় নি। একটু বেশিই অধিকার দেখিয়ে ফেলেছিলাম। আসলে অধিকার শুধু তার উপরই দেখানো যায় যে আপন মনে করে যাই হোক আমার এই ভুলের জন্য তুমি প্লিজ এই বাসা ছেড়ে যেও না। কারন বাবা মা তোমাকে নিজের মেয়ের মতো মনে করে তাই তুমি যদি এভাবে বাসা ছেড়ে চলে যাও তাহলে তারা খুব কষ্ট পাবে আমি যতই খারাপ হই আমার বাবা মা কিন্তু খারাপ নয় তাই অন্তত তাদের কথা ভেবে এখানেই থেকে যাও। আমি কথা দিচ্ছি এখন থেকে আমি আর কখনো তোমাকে বিরক্ত করতে আসবো না। কথাগুলো
বলেই আভাকে সরিয়ে দিয়ে অত্র ওয়াসরুমে চলে গেলো।
অত্রের এমন ব্যবহারে আভা তো আকাশ থেকে পরলো। আভা একটা মুচকি হেসে বললো
– বুঝেছি আমার বরটা আমার উপর অভিমান করেছে। ওকে দোষ যখন আমি করেছি তাহলে অভিমানটাও আমিই ভাঙ্গাবো।
অত্র ফ্রেস হয়ে এসেই সুয়ে পরলো। আভা ফ্রেস হয়ে এসে দেখে অত্র কপালে হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে এটা দেখে আভার মাথায় একটু দুষ্টু বুদ্ধি খেলে গেলো সে গিয়ে টুপ করে অত্রের বুকের উপর সুয়ে পরলো …
– এই কি করছো আমি অত্র তোমার বিছানা না। সরো আমার উপর থেকে।
– কেনো সেদিন তো বলছিলে, আভা এখন আমার বুকে এসে সুয়ে ঘুমিয়ে পরো
– সেদিনের ভুলের জন্য তো আপনার কাছে হাজার বার ক্ষমা চেয়েছি এখন কি আপনার পা ধরে ক্ষমা চাইতে হবে?
– উহু পা ধরে ক্ষমা চাইতে হবে না আপাতত একটু আদর করে দিলেই চলবে ?
– কিইইইইইইইইই
অত্র অবাক হয়ে আভার দিকে তাকিয়ে আছে আর আভা এই ফাঁকে অত্রের ঠোঁটে একটা চুমো দিয়েই দৌড়ে আদ্রিতার রুমে চলে গেলো।
এদিকে অত্রর মাথায় কিছুই ঢুকছে না সে শুধু ভাবছে আভার হলো টা কি সেদিনের ঘটনায় মনসিক আঘাত পয়ে আভা পাগল টাগল হয়ে গেলো নাকি কিসব উল্টো পাল্টা কাজ করছে আবার লজ্জা পেয়ে কোথায় চলে গেলো। এসব ভাবতে ভাবতে অত্র ঘুমিয়ে পরে। আভা আর অত্রের সামনে আসে নি পরের দিন সকালে অফিস যাওয়ার আগেও অত্র আভাকে দেখতে পেলো না,
– কি ব্যাপার কাল রাতে একটা চুমো দিয়ে মেয়েটা কি অদৃশ্য হয়ে গেলো না কি
এসব ভাবতে ভাবতে অত্র অফিসে চলে যায়
অন্যদিকে আভা আদ্রিতার সাহায্য নিয়ে ওদের বাসার ছাদ ঠিক অত্রের মতো করে সাজায়। আজ আভা তার মনের কথা বলবে। অত্রকে সে আর কিছুতেই নিজের থেকে দুরে রাখবে না।
এভাবে সারাদিন কেটে যায়..
রাতে খাওয়ার টেবিলে অত্র আভাকে দেখতে পেলো না। জিগ্যেস করতেই আদ্রিতা বলে ভাবি আগেই খেয়ে নিয়েছে। তারপর আর আর কেউ কোনো কথা বলে নি। খাওয়া শেষ করে যে যার মতো নিজেদের রুমে চলে যায়। যাওয়ার সময় অত্র আদ্রিতাকে ডেকে বলে তোর ভাবিকে যেয়ে বল আমি তার জন্য রুমে অপেক্ষা করছি।
-কেনো বউকে ছারা ভালো লাগছে না নাকি?
– মার খাবি যা বলছি তাই কর গিয়ে।
.
অত্র আভার জন্য অপেক্ষা করছে কিন্তু তার আসার কোনো নাম গন্ধ নেই।
একটু পর আদ্রিতা দৌড়ে এসে বলে
-ভাইয়া ভাবির কি যেনো হয়েছে তুই তারাতারি চল
-কিহ কি বলছিস তুই আভা কোথায় ?
– ভাইয়া ভাবি ছাদে আছে… আর একমিনিট ও না দাড়িয়ে অত্র ছাদে ছুটে যায়….
ছাদে গিয়ে আভাকে দেখে তো অত্র হা হয়ে যায়। এ কাকে দেখছে সে… লাল টুকটুকে শাড়ি পরে ঠোঁটে লাল লিপস্টিক , চোখে হালকা কাজল খোলা চুলে আভাকে একদম পরীর মতো লাগছে। চারিদিকে তাকিয়ে দেখলো সেদিনের মতো খুব সুন্দর করে ছাদটা সাজানো হয়েছে…
অত্রের সামনে এসে আভা বলে….
ভালোবাসি অত্র হ্যা সত্যি ভালোবাসি তোমাকে। তোমাকে ছাড়া এক মূহুর্ত বাচতে পারবো না । তুমি সেদিন আমার থেকে দূরে না গেলে হয়তো কখনোই আমি এটা বুঝতে পারতাম না। বন্ধত্বের মধ্য দিয়ে কখন যে তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি বুঝতেই পারি নি। অত্র আমিও ঐ চাঁদ টার মতো হাজারও অভিমানে তোমার বুকে মুখ লুকাতে চাই তোমার অন্ধকার মনের আকাশটা আলোকিত করতে চাই দেবে কি আমাকে সেই সুযোগ হবে কি আমার শেষ ভালোবাসা?
এবার অত্রও আর আভার উপর অভিমান করে থাকতে পারনো না। একটানে আভাকে নিজের বুকে টেনে নিয়ে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বল্ল সেই সুযোগ তো তোমাকে কবেই দিয়ে দিয়েছি কবেই তো শেষ ভালোবাসা হিসেবে মেনে নিয়েছি আমার পরীটাকে। কিন্তু আজ আমাদের বৈবাহিক সম্পর্কটা পূর্নতা পেলো। শুধু এই জন্মে নয় এর পরে যদি শত জন্মেও থাকে তবে সেখানেও তুমিই হবে আমার শেষ ভালোবাসা!!!!!
এটা বলে অত্র আভাকে পাজা কোলে নিয়ে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ালো আভা লজ্জা মাথা মুখে অত্রর দিকে তাকিয়ে আছে।
– তো আজ তাহলে আমাদের দ্বিতীয় বাসরটা করেই ফেলি কি বলো আভার দিকে তাকিয়ে চোখ মেরে মুচকি হাসি দিয়ে… তবে একটা সমস্যা আছে
– কি সমস্যা?
– রুমে গিয়ে আগে ফুলদানি টা সরিয়ে রাখতে হবে,
– কেনো?
– কারন তোমার ঐ নরম হাতের চড় থাপ্পড় সহ্য করতে পারবো কিন্তু ফুলদানির বারি সহ্য করা impossible ??
– কি বললে তুমি এটা বলেই
আভা অত্রের বুকে কয়টা কিল ঘুষি দিয়েই আবার অত্রের বুকে লজ্জায় মুখ লুকালো
আর এভাবেই শত মান অভিমানের পরে পূর্নতা পেলো তাদের শেষ ভালোবাসা❤❤❤
(সমাপ্ত)