শেহজাদী পর্ব-৩৯

0
790

#শেহজাদী
Part–39
Arishan_Nur (ছদ্মনাম)

পরিষ্কার সাদা মেঘে ছেয়ে আছে আকাশ। ঝকঝকে আকাশটার দিকে তাকালেই মন ভালো হয়ে আছে। ক্ষণে ক্ষণে এক দমকা হাওয়া এসে গায়ে লাগলেই নতুন করে প্রকৃতিকে ভালোবাসতে ইচ্ছা হবে। ইমান তাকিয়ে আছে আকাশের পানে। আকাশটাও আজ কি অদ্ভুত সুন্দর লাগছে তার কাছে। অবশ্য আজ-কাল সে যাই দেখে তাতেই মুগ্ধ হচ্ছে। একটা সময় ছিল যখন সব কিছুতেই তার তিক্ততা এসে ভর করত। ইদানীং আর তা হচ্ছে না। বরং প্রতিদিনই নতুন করে আনন্দ খুঁজে পাচ্ছে। সুখ খুঁজে পাচ্ছে। তাকে এই অনাবিল আনন্দের সাগরে ডুবিয়ে নাকানিচুবানি খাওয়াচ্ছে মিরা। “মিরা” নামটা যেন ইমানের জন্য শুধু নাম নয় বরং বেঁচে থাকার এন্টিলোড। দেখতে দেখতে দু’মাস অতিক্রম হয়ে গেছে৷ সময় এতো দ্রুত কিভাবে চলে যাচ্ছে সে হিসাবই মিলাতে পারছে না। ইমান তার শেহজাদী থেকে দূরে আছে৷ ব্যবসার কাজে একমাস ধরে সে লন্ডনে এসেছে।এই প্রথম দেশের বাইরে এসেছে সে। কাজেই খুবই উত্তেজিত সেই সাথে প্রিয়তমা থেকে দূরে থাকবার বিরহ। তবে এই দূরত্বটাও মধুর। আসলে মিরা সম্পর্কীয় সবকিছুই এতোটা মিষ্টি আর মধুর যা কেবল অনুভব করা যায়। ইমান এতোদিনে এসে নিজেকে অনুভব করছে। প্রকৃতির মাঝে মুগ্ধতা খুঁজে পাচ্ছে।

জীবনটা সুন্দর। পৃথিবীটাও চমৎকার। পৃথিবীর বুকে জন্ম নেওয়া প্রতিটা সৃষ্টিই অপূর্ব। আজ ইমান সকাল সকাল উঠে বারান্দায় দাঁড়িয়ে এসব ছাইপাঁশ ভাবছে। সৌন্দর্য নিয়ে ভাবছে সে। মানুষ কেন সৌন্দর্যের পূজারী সে নিয়েও মস্তিষ্কে চলছে ঘোর গবেষণা।

তখনই রানী সাহেবার ফোন এলো। সে রিসিভ করতেই মিরা খুব মিষ্টি গলায় বলে, গুড মনিং।

ইমান বলে উঠে, আর মর্নিং? গুডের গুষ্টি কিলাই! হুহ।

মিরা হিহি করে হেসে দিলো। সে বলে উঠে, আহারে! আচ্ছা ওইদিকে কি শীত পড়েছে?

ইমান মুখ কালো করে বলে, না। তেমন একটা না।পাতলা সোয়েটার পড়লেই চলে। কি করছিলে তুমি?

— ঝালমুড়ি খাচ্ছি। আপনি খাবেন?

— ঝালমুড়ি খাওয়ার ইচ্ছা নেই। বাকি রইল তোমার কথা, তাহলে হ্যাঁ খাব৷ (ঠোঁট টিপে উত্তর দিল সে।)

— বেয়াদব লোক কোথাকার।

ইমান এবারে হেসে দিয়ে বলে, আর মাত্র পনের দিন। এরপর আমাদের সেই কাক্ষিত দিন!

— আপনি ফিরবেন কবে? আপনাকে দেখতে মন চাচ্ছে।

— শুধু মন চাচ্ছে? এদিকে তো আমার তোমাকে দেখার জন্য ছটফট করার মতো অবস্থা। আমার মন, হৃদয়, মস্তিষ্ক, কিডনি, ফুসফুস, লিভার, আর যা যা আছে সব তোমাকে কাছে চাচ্ছে৷

— পাগল আপনি।

— তোমার জন্য।

–ইশশ!

ইমান বলে, এইতো আগামী বুধবার ফ্লাইট। আমি বাংলাদেশ এয়ারপোর্ট থেকেই তোমার কাছে যাব।

— আপনি কাজে মনোযোগ দিন৷

— মনোযোগ আসবে কিভাবে? সারাদিন খালি তোমার কথা মনে পড়ে। বাবা কি জন্য যে দেশের বাইরে এমন এক মুহূর্তে আমাকে পাঠিয়ে দিল? বাবার মাথায় কোন আক্কেল নাই। ভাই আমার বিয়ে! বাসরের প্লানিং, প্রস্তুতি আছে। কখন করব এতোকিছু? মিটিং সামলাব না বাসর করার প্রিপারেশন নিব?

— চুপ করুন তো। আপনার খালি দুষ্ট কথা।

— দুষ্ট কথা না, মনের কথা।

— রাখি তাহলে? আপনি নাস্তা সেরে মিটিংয়ে যান আর পারলে একটু ঘুরে বেড়ান।

— এখনি কেটে দিবে? আরেকটু কথা বলি?

— আচ্ছা। বলুন। শুনি আপনার কথা৷

ইমান ফোন কানে নিয়ে লন্ডনের এক সুউচ্চ বিল্ডিংয়ের বারান্দায় দাঁড়িয়ে থেকে বলে, আজকে সৌন্দর্য নিয়ে ভাবছিলাম।

— সৌন্দর্য?

— হ্যাঁ। বিউটিনেস! আসলে মিরা, আমরা সবাই সৌন্দর্যের পূজারী। সৌন্দর্য আছে জন্য জগৎ এতো চমৎকার! এই তোমাকে ভালোবাসি এর সঙ্গেও সৌন্দর্য একটা সুক্ষ্ম ভূমিকা রাখে।

মিরা অপর প্রান্ত থেকে বলে, মানে?

— মানে তোমার সুশ্রী মুখমণ্ডলের প্রেমে পড়েছি। তোমার টানা টানা চোখের মায়ায় ডুবেছি। তোমার গোলাপ পাপড়ির মতো ঠোঁটের উষ্ণতায় মরিয়া হচ্ছি। নাক ফুলিয়ে নাকের ডগা লাল হলে সেখানে চুমু বসাতে মন চায় মাধুর্য্যতার জন্য! আমার কাছে সৌন্দর্য মানে তুমি, তুমি এবং তুমি গো! ল্লা

মিরা উত্তর দেয় না। আরো কিছুক্ষণ কথা বলে ফোন কেটে দেয়। তখনই ইমানের খেয়াল হলো, সে আসলে মিরার সৌন্দর্য কে ভালোবাসে না। সৌন্দর্যকে ভালোবাসলে নিশ্চয়ই ব্রাশ করা অবস্থাতে তার মিরাকে দেখতে ভালো লাগত না? একথা আর মিরাকে জানানো হলো না।

★★★

ইরা রেস্টুরেন্টে বসে আছে৷ প্রচন্ড বিরক্ত সে। এতো বিরক্ত এর লাগে কোনদিন লাগেনি। সাদের সঙ্গে দেখা করার কথা আছে আজ। সেই সুবাদেই এই রেস্টুরেন্টে আসা। এক ঘন্টা ধরে অপেক্ষায় আছে তবুও জনাবের দেখা নেই৷ মেয়ে হয়েও তাকে অপেক্ষা করতে হচ্ছে।এর চেয়ে বড় অপমান আর কি হতে পারে? ইরা টেবিলে একটা বারি মেরে ওয়েটারকে ডাক দিলো।

ওয়েটার আসতেই সে একগাদা খাবার ওর্ডার দিয়ে ফোন বের করলো। সাদের নাম্বার ওয়েটিং এ দেখাচ্ছে। আরো মেজাক বিগড়ে যাচ্ছে তার।ইরার মেজাজ ১৮০ ডিগ্রি এংকেলে বিগড়ে দিয়ে সাদ আরো বিশ মিনিট লেইটে আসলো। তাও একা নয়। তাদের কোম্পানির কোন এক ক্লাইন্টকে সাথে নিয়ে আসলো৷

সাদকে দেখেই ইরার রাগ পড়ে গেল। তার পরনে নেভি ব্লু রঙের শার্ট, ইন করা।কালো দামী একটা সু পড়ে আছে। ফর্মাল লুকে হ্যান্ডসাম লাগছে খুব। ছেলেটার হাসি হাসি মুখ দেখতে বড় ভালো লাগে!

সাদ ভেতরে ঢুকে মেয়েটাকে নিয়ে। দুইজনের মুখেই হাসি ঝুলানো। সাদকে ওই মেয়েটার সঙ্গে হাসতে দেখে ইরার রাগ আবার আগমন করলো। ভ্রু কুচকে, মুখ শক্ত করে তাকিয়ে রইল সে।

সাদ তার টেবিলের দিকে এসেই হড়বড় করে বলে, সর‍্যি দোস্ত। দেরি হয়ে গেলো। তুমি তো জানোই ভাইয়া দেশে নাই। সব আমাকে সামলাতে হচ্ছে৷

ইরা দাঁত কটমট করে আস্তে বলে, খুব কাজের হয়ে গেছেন তিনি!

সাদ চেয়ার টেনে মেয়েটাকে বসার আহ্বান জানায়, তা দেখে ইরার চোখ কপালে। কই এই দুইমাসে তারা সাতবার রেস্টুরেন্টে এলো। একবারও তো তাকে এভাবে বসার জন্য চেয়ার টেনে দেয়নি!

মেয়েটা বসতেই সাদ পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য মুখ খুললো, ও হলো ইরা। আমার বেস্টফ্রেন্ড। আর ইরা, ও হচ্ছে প্রিয়া আমাদের ক্লাইন্ট। আজকে একসঙ্গে মিটিং এটেন্ড করেছি আমরা। হুট করে প্রিয়ার গাড়ি স্টাস্ট নিচ্ছে না জন্য ওকে ড্রপ করে দেওয়ার দায়িত্ব নিয়েছি৷

ইরা জোরপূর্বক হেসে বলে, আপনি তো খুব দায়িত্বশীল!

সাদ মুখে হাসি টেনে বলে, তা আর বলতে,,,, ওর্ডার দেই খাবার?

— আমি আমারটা দিয়েছি। তোমরা তোমাদের গুলো দেও।

সাদ মেন্যু দেখতে ধরলে প্রিয়া বলে উঠে, আমি জাস্ট একটা ক্যাপেচুনা নিব৷

সাদ মেন্যুটা রেখে দিয়ে বলে, ওকে তাইলে দুটো ক্যাপেচুনা। ডান?

ইরা আরেকদফা থ না হয়ে পারলো না। যে ছেলে বাসাতেই কফি খায় না, সে আজকে কফি খাবে, তাও দুপুরবেলা। দুপুরবেলা কোন পাগল কফি খায়? ওই মেয়ে কফি খাবে জন্য তাকেও কফি খেতে হবে? গাধামির একটা লিমিট থাকা উচিৎ। গাধার বাচ্চা সাদ ! ইরার ভেতরে ভেতরে রাগ শুধু বেড়েই যাচ্ছে।

সে নিজেকে সামলে নিয়ে বলে, দুপুরে কফি খাবে?

সাদ বলে উঠে, প্যারা নাই। কফি খেলে এনার্জি বাড়বে।

— কফি খেলে এনার্জি বাড়ে?

সাদ এই প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে বলে, তোমার ভার্সিটির ক্লাস কেমন চলছে? এবার তো লাস্ট সেমিস্টার। লাস্ট সেমিস্টারে অনেক প্যারা।

ইরা বলে, জানি।

এরপর তিনজনই চুপ। সাদ শুধু থেকে থেকে ইরার দিকে তাকাচ্ছে। ইরা মাথা নিচু করে ফোন চালানোতে ব্যস্ত থাকার অভিনয় করছে।

খাবার আসতেই ইরার অস্বস্তি বাড়লো। সে একাই ফ্রাইড রাইস খাবে। সাদ আর মেয়েটা শুধু কফি খাবে। ব্যাপারটা খুবই অস্বস্তিকর।

ইরা খাবার প্লেটে চামচ ঘুরাচ্ছে কিন্তু খাচ্ছে না। সে ঈগল চোখে সাদের দিকে তাকিয়ে আছে। ওদিকে সাদ ব্যস্ত প্রিয়ার সঙ্গে গল্প করায়। একবারও ঠিকঠাক ভাবে তার সঙ্গে কথা বলছে না। ইরা নিজ থেকে চেষ্টাও চালিয়েছে কথা বলার কিন্তু সাদ তাকে ইগনোর করছে। এতে ইরা কষ্ট পায়।সাদের সেদিকে খেয়াল নেই। সে ব্যস্ত।

ইরার খুব করে বলতে ইচ্ছা করছে, যদি প্রিয়ার সঙ্গেই গল্প করার ইচ্ছা থাকে,তাহলে তার সঙ্গে দেখা করার ডেট ফিক্সড করলো কেন?

সে আগ বাড়িয়ে বলে, তোমরা হলুদে কোন কালারের ড্রেস পড়বে?

সাদ সংক্ষেপে জবাব দেয়, নীল।

— আমরা হলুদ পড়ব। আপু আর ভাইয়া হিন্দি রোমান্টিক গানে কিন্তু নাচছে হলুদে। তুমি ডান্স করবে না?

— না।

এইটুকু বলেই সে প্রিয়াকে বলে উঠে, কালকের প্রজেক্টের জন্য নাকি গাজিপুর যেতে হবে। তুমি রওনা দিবা কয়টায়? একসাথে যেতাম।

ইরার রাগ উঠে আবারো। সাদ আর প্রিয়া তাকে একদম ইগনোরজোনে ফেলে দিয়েছে। ওদের দেখে মনে হচ্ছে কফি ডেটে এসেছে।

এবারে আর নিজেকে সামলাতে পারলো না সে। কাঁচের প্লেটে চামচটা বেশ শব্দ করে রাখে, এতেও সাদ একবারের জন্যও তার দিকে তাকালো না। ইরার নিজের চুল টেনে ছিঁড়তে মন চাচ্ছে। কান্না পেয়ে গেল তার। অগত্যা সে উঠে দাঁড়ালো এবং ব্যাগ কাঁধে নিয়ে বলে, গেলাম আমি।

সাদ কথা বলা থামিয়ে দিয়ে বলে, সেকি? খাওয়া শেষ হইনি তো?

— ক্ষুধা নেই৷

— তাহলে ওর্ডার করলে কেন?

— ইচ্ছা।

— আচ্ছা তাহলে আবার দেখা হবে। আল্লাহ হাফেজ। টাটা বাই বাই।

সাদ হাত নাড়িয়ে তাকে বিদায় জানালো। তা দেখে, ইরার মনে তখন আগুন জ্বলছে। সে হনহনিয়ে হাঁটা ধরলো। রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে যেতেই যেন সাদ হাঁফ ছেড়ে বাঁচে।

প্রিয়া বলে উঠে, তোমার গার্লফ্রেন্ড কিন্তু সেই রাগছে। ওহ মাই গড! সি ওয়াস ড্যাম জেলাস।

সাদ ভ্রু নাচিয়ে বলে, সত্যি জেলাস ছিল?

— তো? আমার তো ভয় করছিল এই বুঝি আমার উপর ঝাপিয়ে পড়ে হামলা করে।

সাদ হোহো করে হেসে বলে, থ্যাংকস প্রিয়াপু। ইউ আর ব্রাঞ্চ অফ লাভ। তোমার জন্য আজকে আমার সন্দেহ দূর হলো। ও কি সত্যি আমাকে পছন্দ করে? কি মনে হয় তোমার? দেখে কি মনে হচ্ছে?

প্রিয়া বলে, শুধু পছন্দ? সি লাভস ইউ। আই স্ লাভ ফর ইউ অন হার বিউটিফুল আইস।

সাদ মুচকি হাসলো। প্রচন্ড ভালোলাগা বয়ে যাচ্ছে শরীর বেয়ে। দুই মাসের প্রচেষ্টা কি তবে সফল হতে চলেছে?

ইরা বাসায় ফিরে সঙ্গে সঙ্গে বাবার রুমে গিয়ে বললো, আব্বু তোমার সাথে কথা আছে?

জয়নুল সাহেব তখন মাত্র গোডাউন থেকে ফিরে দুপুরে খেয়ে হালকা রেস্ট নিচ্ছেন। মেয়েকে এতো অস্থির হয়ে কথা বলতে দেখে সে ভড়কে গেলেও তা প্রকাশ না করে বলে, বলো মা কি বলতে চাও? জামাকাপড় কিছু লাগবে? টাকা লাগবে?

— না।

— তাহলে?

— আব্বু গত দু’মাস আগে যেই প্রস্তাব এসেছিল আমার জন্য। আমি সেই বিয়েতে রাজী। তুমি ছেলেপক্ষের সঙ্গে কথা বলো। আমি বেশি দেরি করব না। আপুর বিয়ের পর পর,,,,,

— হুট করে এমন।সিদ্ধান্ত নিলে যে? তখন তো রাজী ছিলে না?

— তখন আর এখনের মধ্যে ঢের পার্থক্য আছে।

— বেশ তাই হবে। কথা বলব আমি?

— হ্যাঁ।

— আচ্ছা।

ইরা নিজের রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে ফোনের গ্যালারি থেকে সাদ আর তার সব ছবি ডিলিট করে দিলো। ব্যাটা প্রিয়াকে নিয়েই থাক। ইরা একদমই সাদকে তার বিয়েতে ঢুকতে দিবে না। নো মিনস নো। ইরার কান্না পাচ্ছে প্রচন্ড। কেউ তাকে আপন ভাবে না। কেউ তাকে বিশেষ কেউ ভাবে না। এ কয়েকদিনে সে ভেবেছিল সাদ বুঝি তার জীবনের বিশেষ,গুরুত্বপূর্ণ একজন কিন্তু এই ধারণা আজ ভুল প্রমাণিত হলো। সাদের কাছে সে মোটেও গুরুত্বপূর্ণ কেউ নয়। ইরার চোখ ফেটে নোনাপানি দলা পাকিয়ে আসছে। ইমানকে ভুলে যেতে সাদ তাকে সাহায্য করেছে। একটা সুন্দর বন্ডিং আছে তাদের মধ্যে। সাদ শুধু জানে না কে ছিল ইরার মনের মানুষ, বাকি সব জানে। ইমানকে ভুলে যেতে পরোক্ষভাবে সাহায্যও করেছে সে। ইরা লাইট অফ করে কান্না করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

ওদিকে জয়নুল সাহেব ইরার কথা অনুযায়ী ইমান আর সাদের বাবাকে কল করে প্রস্তাব রাখে আবারো। উনি পরে জানাবেন বলে কল কেটে দিলো। জয়নুল সাহেব কিছুটা বিভ্রান্তিতে রইলেন। দুই মেয়েকে এক বাড়িতে পাঠাবেন? কিন্তু ইরা তো রাজী হয়ে গেছে। ওদিকে মিরাও তো ইমান ছাড়া কাউকে বিয়ে করবে না। উনি মহান করুণাময় সৃষ্টিকর্তার উপর বাকিটা ছেড়ে দিয়ে অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হতে লাগলেন।

সাদ যখন গাড়িতে উঠলো তখনই তার বাবা জহির সাহেব ফোন দিয়ে তাকে সব জানিয়ে প্রশ্ন করে, তুমি কি বিয়েতে রাজী?

সাদ উত্তেজিত হয়ে বলে, রাজী মানে? এক পায়ে খাড়া আছি৷

জহির সাহেব বিরক্তি নিয়ে বলে, আমার দুই ছেলে ওই বাড়ির মেয়ের মধ্যে যে কি খুঁজে পেলো,যে একেবারে দেউলিয়া বনে গেল৷

বাবার খোঁটাতেও সাদ হাসলো। এতোটাই খুশি সে। ইশ! ইরাবতী খুব শীঘ্রই তার হবে। ইরা নিশ্চয়ই ভীষণ চেতে আছে। সে কল লাগালো ইরার নাম্বারে। দুইবার কল কেটে গিয়ে তৃতীয়বার ধরলো ইরা। থমথমে গলায় বলে, হ্যালো?

— হ্যালো-ফ্যালো রাখো তো! তোমার নাকি বিয়ে ঠিক হয়েছে? কথা কতখানি সত্য?

— একশ ভাগ।

— ওএমজি! এম সো হ্যাপি! কংগো! কংগো দোস!

ইরার রাগ আরো বেড়ে গেল। মাথাব্যথা করতে লাগলো। সাদ তার বিয়েতে খুশি?

সাদ বলে উঠে, আমি কিন্তু গেট ধরব। দশ হাজার টাকা লুটে নিব তোমার জামাইয়ের কাছ থেকে। কাচ্চি চাই। আমার জন্য দুইটা রোস্ট, দুইটা কাবাব।

ইরা দাঁতে দাঁত চেপে ধরে বলে, আমার বিয়েতে তুমি ইনভাইটেড না।

— আয়হায় কেন? তোমার বিয়েতে একটা রোস্ট বেশি কিনতে হবে জন্য দাওয়াতই দিবা না? আচ্ছা যাও কাচ্চি খাব না শুধু,,,,

— আই হেইট ইউ সাদ।

সাদ গাড়ি চালানো থামিয়ে দিয়ে, মুচকি হাসলো। এই প্রথম কোন প্রমিক বুঝি আই হেইট ইউ শুনে খুশি হয়েছে! কারণ সে ইরার বলা “আই হেইট ইউ” এর মধ্যে ভালোবাসা খুঁজে পাচ্ছে। ভালোবাসা কেবল ভালোবাসিতে সীমাবদ্ধ নয়। বরং কখন ফিরবে, খেলে কিনা, আসছো না কেন,ঘেমে গেছো তো, পানি খাবে, নিজের খেয়াল রেখো, ঘুমুতে যাও এমন ছোট ছোট বাক্যের মধ্যেও লুকিয়ে আছে হাজারো ভালোবাসা। ভালোবাসার রুপ অনেক। একেক জনের কাছে ভালোবাসার রুপ একেক রকম।

সে ফোন কানে চেপে বলে, দোস্ত তুমি তো বিয়া হওয়ার আগেই পতিভক্তি শুরু করে দিলা। বাপ রে! তোমার মতো সব মেয়ে যদি পতিভক্ত হতো, দুনিয়া এক হাজার যুগ আগাই যাইত।

— মানে?

— মানে হলো এই যে আই হেইট ইউ বইলা আমাদের বন্ধুত্ব খতম করার ধান্দা করিলা এতে লাভ কার বালিকা?

ইরা রাগী কণ্ঠে বলে, কার?

— তোমার জামাইবাবুর। ব্যাটার টাকা বাঁচবে। আমি না গেলে আমার জন্য খাবার কেনা লাগবে না। কমিউনিটি সেন্টারে মাথাপিছু খাবার খরচ সাতশ থেকে আটশ,,,,,

ইরা আর তাকে কথা বলতে না দিয়ে ফোন কেটে দিয়ে ফোনটা আছাড় মারে। অসহ্য একটা ছেলে। অসহ্য! অসহ্য!

সাদ একা একাই হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। সামনের দিনগুলো বুঝি খুব সুখময় হবে। সে চোখ বন্ধ করে দেখছে বিয়ের পর ইরা সবসময়ই শাড়ি পড়ে বাসায় ঘুরঘুর করবে আর সে যখন-তখন তাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে ঘাড়ে চুমু খাবে এতে মহারানী দারুণ রেগে যাবে। আহা কি সুন্দর হবে সেই সব মুহূর্ত গুলো! কবে আসবে সে দিন? সাদের সে আর অপেক্ষা হচ্ছে না?

চলবে।