শ্রাবণ দিনের প্রেম পর্ব-০৯

0
148

#শ্রাবণ_দিনের_প্রেম
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -৯
আলিশা, ঈশানের রুমে এসে বলে, হৃদির বাসা কোথায়?
‘চিটাগং
‘ওর নাম্বারটা দে তো?
‘তোকে কেন দেবো!
‘কারণ এখন এই মূহুর্তে তুই আমার সাথে পালাবি!
‘মাথা ঠিক আছে তোর! কোন দুঃখে পালাবো।
‘কারন বিয়েটা আমি করছি না।
‘তাহলে শাফিন ভাইয়ের সাথে পালা।
‘তোর সাথে পালাবো। চল তাড়াতাড়ি রেডি হ।
‘রিলাক্স ডক্টর আহিয়ান আনান অভ্র থাকতে আমি কেন! আমি এক্ষুণি জিজুকে কল করো বলছি তোকে নিয়ে যেতে।
‘ওকে বিয়ে করার চেয়ে তোকে বিয়ে করা ভালো তাই আমি তোকেই বিয়ে করব।
‘বইন আমার ভালো পাগলামি বন্ধ কর। বিয়ে আমি ভেঙে দেবো।
‘কথা দে!
‘কথা দিচ্ছি।
✨সুহানা ছাদের দোলনায় বসে আছে, এতোক্ষণ হুমুও সাথে ছিলো, কিছুক্ষণ আগেই চলে গেলো।বেবি পিংক কালারের থ্রিপিস পড়া। চুল গুলো ছাড়া ওড়নাটা বেয়ে নিচে ঝুলছে। হালকা বাতাস পা,দিয়ে দোলনা নাড়াচ্ছে, মৃদু গলায় গান ধরলো,

না রাখা কিছু কথা
সময়েরই ঝড়া পাতা
দিয়ে যায় শুধু ব্যাথা এ বুকে
থেমে যাওয়া সেই গানে, জমে থাকা অভিমানে
বৃষ্টি থামে না দু-চোখে।
ও মন কাঁদরে কাঁদেরে কাঁদেরে
স্মৃতি ভোলে না
আয়না মন ভাঙ্গা আয়না
যায় না স্মৃতি ভোলা যায় না
সয় না এই ব্যাথা যে প্রাণে সয়না।
যত চাই ভুলে যেতে
মন চায় ব্যথা পেতে
তাই বুঝি মন তাকে বলে না।
নিভে যাওয়া আলো ছাঁয়া
ছিলো যদি মিছে মায়া
বৃষ্টি কেন তা বলে না!

গান শেষ করার আগেই কেউ একজন বলে উঠলো,মনে হচ্ছে খুব বড়সড় ছ্যাকা খেয়েছিস।
‘হঠাৎ মানফের কন্ঠ শুনে থেমে গেলো, সুহানা।
অন্যদিকে তাকিয়ে বলে, সবার ভাগ্যে ছ্যাকা থাকে না। কিছু মানুষ জনম একা। এদেরকে ছ্যাকা দেয়ার জন্য ও কেউ আসে না।
‘খুব কড়া কথা বললি তো! আমার ব্লক কফির চেয়েও বেশ কড়া। তা কে সে সৌভাগ্য বান?
‘তুমি!
‘কিহহহহ বললি আবার বল!
‘তোমাকে কেন বলবো,জানোনা ভালোবাসা হলো একান্ত গোপন বিষয়। সেখানে কাউকে জায়গা দিতে নেই।
‘তা পড়ালেখা করেছিস নাকি ভালোবাসার উপর পিএইচডি করেছিস?
‘সেটা তোমাকে কেন বলবো!তোমার জেনে কাজ নেই। তোমার হবু বউদের চিন্তা করো।
‘এখনো একটা করতে পারলাম না। আর তুই বহু বচন বানিয়ে দিলি।
‘তুমি কেন আসছো? যাও নিজে যাও।
‘ওই যে ছোট বেলায় তুই স্কুলের অনুষ্ঠানে একটা গান গেয়েছিলি মনে আছে, যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলো। তবে একলা চল একলা চলরে।
‘তো এটার সাথে তোমার ছাদে আসার কি কানেকশন!
তুই এতো মধুর সুরে ডাকলি তাই তোকে একলা চলতে না দিয়ে আমি এসেই পড়লাম।
‘আমি একলা চলা শিখে গেছি তাই আপনাকে আমার প্রয়োজন নেই। বলেই দোলনা থেকে উঠে দাঁড়ালো। নিচে পরে থাকা ওড়নাটা ঠিক ভাবে গায়ে জড়িয়ে খোলা চুলগুলো হাত খোঁপা করে নিলো।
‘মেয়েদের খোলা এলোমেলো চুলে কিন্তু মোহনীয় লাগে!
‘ছিহহহহ মানাফ ভাই, আপনার এতো অধঃপতন কবে ঘটলে?
‘কি বলতে চাইছিস?
‘এক মেয়েকে বিয়ে করবেন আর আরেক মেয়ের সাথে ফ্লার্ট করবেন?
‘সত্যি কথা বললেও ফ্লার্ট!
‘আসলে পুরুষ মানুষের গোড়ার দোষ, মেয়ে দেখলেই ফ্লার্ট করা শুরু।কথা শেষ করেই লম্বা লম্বা পা ফেলে নিচে চলে আসলো।
মানাফ বোকার মত তাকিয়ে থেকে একা একাই বলে, যাহহহ বাবা প্রশংসা করাও দোষ!

✨সকালের ঝলমলে রোদ জানারার সাদা পর্দা ভেদ করে চোখে পড়তেই ঘুম ভাঙলো আলিশার। তাড়াতাড়ি উঠে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে পরলো ক্লাসের উদ্দেশ্যে।
একটু তাড়াতাড়ি এসে পড়ায় মনযোগ দিলো। ক্লাস শুরু হতে এখনো দেড় ঘন্টা সময় বাকি৷ পড়তে পড়তে অনুভব হলো খিদে পেয়েছে। কিন্তু পড়া ছেড়ে এখন ওঠা যাবে না। তাহলে মনযোগ বিচ্ছিন্ন হবে। পড়ছিল এমন সময় খেয়াল করলো, ওর চোখের সামনে একটা বাটার বন। দ্রুত সেটা নিয়ে খাওয়া শুরু করে দিলো৷ এক বাইট নিয়ে বলে, সুইটু কফি কোথায়?
‘অভ্রর ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠলো কতদিন পর সেই পরিচিত ডাক। সেই মধু মাখা কথা। অভ্র কফির মগটা সামনে বাড়িয়ে দিলো৷
‘আলিশা কফি মগ নিয়ে চুমুক দিয়ে বলে,ওয়াও তুমি বানিয়েছো! বরাবরের মতই ইম্মি।
‘অভ্র মৃদু হেসে বলে,হ্যা এরজন্যই তো বলেছি বিয়ের পর মর্নিং কফি আমি বানাব।
‘অভ্রের কথা কানে যেতেই হুশ ফিরলো আলিশার৷ কফি মগ রেখে দিয়ে বলে, তুমি, না মানে আপনি!
‘অভ্র আলিশার পাশে বসলো, আলিশার হাত দু’টো নিজের হাতে আবদ্ধ করে বলে,আমি ভুল করেছি সেটা মানছি! আমি জেদ করেছি, ঝগড়া করেছি, বাজে ব্যবহার করেছি। কিন্তু সব শেষ যখন বুঝতে পারলাম এসবের শেষে তুমি নেই, তুমি দূরে সরে যাচ্ছ!হারিয়ে যাচ্ছ।বিশ্বাস কর আমি সেদিন স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। আমি গভীর ভাবে অনুধাবন করতে পেরেছিলাম,এসবের শেষে আমার তোমাকে চাই। কি থাকলো কি থাকলো না। জানিনা।ঝগড়া হকো যা হোক সব কিছুর পরে আমার তোমাকেই চাই৷ সেই মূহুর্ত থেকে আমি পাল্টে গেছি,আমাে রেইনবো কে ছাড়া আমার চলবে না। আমি বুঝে গেছি৷ প্লিজ গিভ মি, ওয়ান মোর চান্স।
‘আলিশা বাকরুদ্ধ, যে মানুষটা সামান্য সরি বলতে চাইতো না। সে আজ নিজে এতোটা অনুতপ্ত হচ্ছে। তার চোখের পানি দেখে বোঝা যাচ্ছে তার বলা প্রতিটি কথা সত্য। তার হৃদয়ের ব্যাকুলতা স্পষ্ট ফুটে উঠেছে তার মুখশ্রীতে। মনে, মনে আলিশা বলছে,আমি তো এই অভ্রকেই দেখতে চেয়েছিলাম।নিজের অজান্তেই আলিশার চোখের কোন ভিজে উঠলো৷ চোখের পানি গড়িয়ে পরার আগেই অভ্র নিজ হাতে সেটুকু মুছে দিলো।
‘তুমি কাঁদবে না আমার সামনে, কাঁদলে তোমাকে একদম টুপ করে খেয়ো ফেলতে ইচ্ছে করে। এতো কিউট আর ইনোসেন্ট লাগছে তোমাকে!
‘আলিশা উঠে, একটু ঠিক হয়ে, বলে আপনি কি ভেবেছেন এতো তাড়াতাড়ি আপনাকে ক্ষমা করবো!
‘তাহলে আর কত ঘুরাবে বলো, আমি যুগ যুগ ঘুরতে রাজি৷ তবুও শেষ পর্যন্ত আমার তোমাকেই চাই৷
‘আলিশা কিছু বলবে তার আগেই, একজন বলে, উঠলো,হায় মিস নাগা মরিচ৷
‘হুমায়ারা একবার অভ্রের দিকে তাকালো আরেকবার আলিশার দিকে। তারপর মুখ টিপে হাসতে লাগলো৷
‘আলিশা রেগে বলে,আপনার সাহস তো কম না। এখানেও চলে এসেছেন!
‘এখন এখানে আর সেখানে কি? তুমি যেখানে আমিও সেখানে। অভ্রের দিকে তাকিয়ে বলে, কি বলেন ভাই।
হুমায়রা বলে, ভাইয়া ওনার নাম ডাক্তার আহিয়ান আনান অভ্র। আমাদের সিনিয়র।
মানাফ হাত বাড়িয়ে বলে হায়।
অভ্র হাত মিলিয়ে বলে আপনাকে তো চিনলাম না!
‘আমি মিসেস নাগা মরিচ। নাহহ মিসেস আলিশার উডবি।
আর হুমুর ভাই।
অভ্র বললো আমার একটু কাজ আছে পরে কথা হবে। বলেই চলে গেলো৷
‘আলিশা বলল,আপনি কোন লেভেলের বেহায়া। হ্যা আমি বলছি আপনাকে বিয়ে করবো না তারপরেও বেহায়ার মত পিছু পরে আছেন।
‘আছি তো! আর রেগে গেলে দারুণ লাগে তোমাকে। আমি তো বলেছি কোন পছন্দের মানুষ থাকলে বলো, তাহলে ভেবে দেখবো। কিন্তু এমনি এমনি এতো সুন্দরী, রূপবতী, গুণবতী মেয়েকে হাত ছাড়া কেন করবো!
‘আপনার ফালতু কথা শোনার মত সময় আমার নেই। এই হুমু ক্লাসে যাবি তো তাড়াতাড়ি চল৷
‘কত দূরে যাবে আমি ঠিক তোমাকে আমার বউ করবোই,করবো।
‘এটা সত্যি তোর ভাই! বিশ্বাস হয় না। এতো চিপ।
‘আমার নিজেরও হয়না। আমার ভাইটা তোর প্রেমে নাহয় কোন এক্সিডেন্টে মাথা গেছে। তাই এমন ছ্যাছড়া হয়ে দেশে ফিরেছে।
#চলবে