সঞ্চারিণী
আফনান লারা
২১.
ওসব পরে দেখে নিবে ঠিক করে শাওন শুরু করলো নালিশ দেওয়া।মেধা পাকনামি বেশি করে, সাহস দেখাতে যায় বেশি,সবসময় চোট পেয়ে বসে থাকে,কথা শোনেনা,বাচ্চামো করে।আর কিছু সে বাদ রাখলোনা,এক নিমিষে সব রকমের বিচার সে দিয়ে দিলো।যেন মেধা তার পাকা ধানে মই বসিয়েছিলো।
শাওনের মুখে নিজের মেয়ের নামে এত নালিশ শুনার পরেও তিনি চমকালেন না।
গম্ভীর গলায় বললেন,’এটা তো আমরাও দেখে আসছি সেই কবে থেকে।তবে এতশত কিছুর মাঝে মেধার একটা ভালো দিক হলো শুট করতে পারে যখন তখন।কোনো টাইমিং নেই।
অন্যকে বাঁচাতে গিয়ে নিজের বিপদ ডেকে আনে সে।এই দু’টো ব্যাপারে কনফার্ম থেকো।এখন চলো মেধা,আমার সঙ্গে যাবে তুমি।তোমাকে নিতেই আসলাম।’
মেধা বুঝতে পেরেছে শাওন কেন এক দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।সে যে মিথ্যে বলে ধরা খেয়েছে তা নিজেই টের পেয়ে গেলো।শাওনের সামনে দিয়ে বাবার হাতে ধরে ঐ জায়গা থেকে কেটে পড়লো কোনোমতে।শাওন মেধার বিষয়টা ভাবতে ভাবতে গাড়ীতে উঠেই রশ্নিকে পাশে দেখতে পেলো।ও সারাদিনে কেন আসেনি সেটা জিজ্ঞেস না করে বলা শুরু করেছে মেধার ব্যাপারে হাজারটা কথা।বিষয়টা রশ্নির কাছে বেমানান লাগলো।পুরোটা সময় শাওন মেধাকে নিয়ে কথা বলে গেলো অনর্গল।রশ্নি ভাবলো হয়ত কাজের চাপ অনেক বেশি।কাজ নিয়ে কথা বলতেই পারে।এ আর এমন কি।তাছাড়া যতটা দূরত্ব তার আর শাওনের মাঝে সৃষ্টি হবে ততই তো ভালো।
শাওন বাসায় এসে ডিনারটা সারার সময় পেলোনা
সোফাতেই ঘুমিয়ে পড়েছে।
আর মেধা আজ বাবা মায়ের মাঝখানে ঘুমোতে এসেছে।মন চাইছে তাদের সঙ্গে চলে যেতে।কিন্তু তা সম্ভব হলো না।
সকাল সকাল তারা চলে গেলেন মেধাকে একা করে।মেধা দরজা লাগিয়ে ঘুমোতে এসে দেখলো আটটা বেজে এসেছে।আর ঘুমানো যাবেনা।তৈরি হয়ে রেদোয়ানের বাসার দিকে ছুটতে হবে।গিয়াস স্যার শাওন স্যারকে ঘুম থেকে তুলে আনার দায়িত্ব দেওয়ার আগেই আগেভাগে গিয়ে রেদোয়ানের বাসায় উপস্থিত হতে হবে।তাহলে আর কিছু বলতে পারবেননা।
এরকম ভালো মানের বুদ্ধি মাথায় ঠেসে মেধা রেডি হয়ে চললো রেদোয়ানের বাসার দিকে।এক ঘন্টার ভেতরে পৌঁছেও গেলো।এসে দেখলো শাওন আগে থেকেই সেখানে এসে গেছে।মনে হলো প্ল্যান কাজে আসলোনা।শুধু শুধু এত ছুটতে হলো।জ্যামে পড়ে পায়ে হেঁটেও অর্ধেক পথ আসতে হয়েছিল,তারপর ভাগ্যক্রমে সিএনজি পেয়েছিল।
প্ল্যান ফ্লপ হয়েছে বলে মন খারাপ করে মেধা সোফায় এসে বসলো।আজকে সবাই সেই মিসিং ফুলদানিটা খুঁজছে।এত বড় বাড়ি যে, রুম একটার খুঁটিনাটি বের করতে গোটা একদিন লেগে যায়।
সবাই গেলো ফুলদানি খুঁজতে রেদোয়ানের বাসার বাহিরের সাইডটায়।
মেধাও যেতে চাইলো।কিন্তু তার সামনে দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছে শাওন।মেধার মনে ছিলনা কালকে রাতের ঘটনা।কপাল কুঁচকে হাত নাড়িয়ে ইশারা ইঙ্গিতে জানতে চাইলো কি এমন হয়েছে।শাওন মেধার সেই প্লাস্টার সমেত হাত চেপে ধরে বললো,’সিঁড়ি থেকে পড়ে হাতে ব্যাথা পেয়েছিলে তাইনা?’
-“দেখুন।সোজাসুজি ও উত্তর দিতে পারি আমি।এভাবে টর্চার করার কি আছে?’
-“সোজা আঙ্গুলে ঘি ওঠেনা কি করবো! ‘
-“হাত ছাড়ুন তাহলে বলবো আমি।নাহয় বলছিনা সরি’
শাওন মেধার হাত ছেড়ে দিয়ে বললো,’আচ্ছা বলো’
মেধা মূহুর্ত শেষ হবার অপেক্ষায় রইলোনা।উধাও হয়ে গেলো।শাওনের মনে হলো চোখে ধুলো দিয়েছে সে।রুমে সে ছাড়া আর কেউ নেই আপাতত।এত জলদি উধাও হয়ে গিয়ে বোকা বানালো মেয়েটা।এভাবে আর কত লুকিয়ে বেড়াবে।একদিন তো ধরা পড়তেই হবে।
—–
শাওনের নির্দেশে রেদোয়ানের বাড়িটা বাদ দিয়ে সম্পূর্ন জায়গাটাতে খনন শুরু হলো।যে যেভাবে পারছে মাটি খুঁড়ে যাচ্ছে।হয় ফুলদানি খুঁজে পাবে,নাহয় লাশ পাবে আর নয়ত খড়কুটো।যাই হোক খালি হাতে ফেরা যাবে না।শাওন ও হাত লাগিয়েছে।বারতি লোক এনেও এক দু জনের শর্ট পড়ে যায়।যার কারণে শাওন নিজেই কোদাল হাতে নিয়েছে।কোনো আশ্চর্যজনক কিছু ঘটলোনা।কিছুই পেলোনা তারা।ভেবেছিল ফুলদানিটা হয়ত এখানেই পাবে।তার মানে দাঁড়ায় খুনি সঙ্গে করে নিয়ে গেছে ফুলদানিটা।এত বড় ফুলদানি কি করে নিতে পারলো?একটা কাকপক্ষী ও দেখলোনা?
ভাবলাম রেদোয়ান হয়ত একটা ফুলদানিকে ইচ্ছে করেই মাটির তলায় লুকিয়ে রেখেছে।কিন্তু নাহ।তীর অন্য জায়গায় গিয়ে আটকেছে।ফুলদানি তাহলে খুনির বাসায় অবস্থান করছে এখন।
মিলন ছুটতে ছুটতে এসে থামলো শাওনের সামনে।শাওনের সারা শরীরের কাদা মাখো মাখো হয়ে আছে।গার্ডের হাত থেকে টিস্যুর বক্সটা নিয়ে মাটির উপর এসে বসলো সে।মুছতে মুছতে বললো,’ওমন হাঁপাচ্ছো কেন?খুনি তোমাকে ধাওয়া করলো নাকি?’
-“না স্যার।খারাপ খবর আছে’
-“আবার কে মরলো?রেদোয়ানের গুষ্টিতে আর কে আছে মরার?’
-“ওটাই তো সমস্যা। রেদোয়ানের ফুফাতো ভাই যেটা আছে রকি!সে হসপিটাল থেকে পালিয়েছে’
শাওন বক্সটা রেখে সামনে তাকিয়ে থেকে বললো,’জানতাম ওর মধ্যে গণ্ডগোল আছে।দুজনকে লাগিয়ে রেখেছিলাম ওর খবর বের করতে।তারা কি ঘুমোচ্ছিল?কই পালিয়েছে জানো?হসপিটালে খবর নিয়েছো?’
-‘নিয়েছি।সে এতক্ষণে বিদেশ পৌঁছে গেছে।তবে কোন দেশে গেছে তা জানতে পারলাম না।বিদেশে গেছে জানলাম কারণ একজন নার্স জানালো রকিকে সে ফোনে বিদেশ যাবার কথা বলতে শুনেছে’
-‘কোন দেশ সেটা বের করতে রকির বাসায় যেতে হবে আমাদের।এই খুনের পেছনে পাক্কা ওর হাত আছে।নাহলে আমি সব জিজ্ঞেস করে আসার পরপরই সে পালাবে কেন?ডায়রিয়া রোগী না সে?তার মানে সব নাটক ছিল।নাটক বাহির করছি আমি।আজকেই আমরা ওর বাসায় যাব।সবাইকে বলো ফ্রেশ হয়ে নিতে।’
—–
গিয়াস স্যার এসে দেখলেন নিতু আর নুহাশ ফিসফিস করে কি বলছে আর হাসছে শুধু।তিনি আরেকটু কাছে এসে বুঝতে পারলেন বিষয়টা।
নুহাশ বলছে রকিকে খুঁজতে বিদেশ যেতে হতে পারে।আর নিতু বললো সে বিদেশ গিয়ে শপিং করবে।খুশিতে তারা শেঅ হয়ে যাচ্ছে
গিয়াস স্যার হালকা কাশি দিতেই দুজনে সরে দাঁড়ালো।তিনি সবাইকে লক্ষ করে বললেন,’এটা ঠিক যে রকিকে দেশে পাওয়া না গেলে আমাদের কিছু অফিসার বিদেশ যাবে তাকে খুঁজতে।তবে কারা যাবে সেটা আমি ঠিক করবো।আগে থেকে আনন্দিত হয়ে লাভ মেই।’
নিতুর মনটাই খারাপ হয়ে গেলো।তার চেয়ে সামিয়া,সাজিদ ভালো অফিসার তা সে জানে।ধরেই নিলো তারাই যাচ্ছে।শাওন তো যাবেই।বাদ পড়বে সে।
তাই মন খারাপ করে দূরে একটা চেয়ার টেনে বসলো নিতু।
শাওন তার কোট পরতে পরতে এসে বললো রকির বাসায় যাবে।সে,সাজিদ আর নুহাশ।বাকিরা রেদোয়ানের বাসায় কাজ চালু রাখবে।গিয়াস স্যার বলতে চাইলেন মেধাকেও সাথে নিতে।কিন্তু তার আগেই শাওন বেরিয়ে গেলো।স্যার মনে মনে ঠিক করলেন বিদেশ গেলে মেধা শাওনের সঙ্গে অবশ্যই যাবে।এটা ফাইনাল।
মেধা হাঁপ ছেড়ে বাঁচলো কারণ স্যার ওকে যেতে বলেননি শাওনের সঙ্গে।তা নাহলে রকির বাসায় গিয়ে ওকে একা পেয়ে গলা চেপে ধরতো শাওন।
শাওনের থেকে যত দূরে থাকা যায় ততই মঙ্গল।
সাভারে এসে রকির বাসা খুঁজতে অনেকটা সময় লেগে গেছে।
কারণ একই জায়গায় ২৪জন রকির বসবাস।শেষ বাসাটা অবশেষে আসল রকির বাসা হলো।ইয়া বড় তালা ঝুলানো সেখানে।
বিশ তলার একটা দালানের বারো তম তলায় তার ফ্ল্যাট।দেখে মনে হয় রেদোয়ান রকিকেও টাকা দিয়ে শূন্যের উপরে রাখতো।লোক লাগিয়ে তালা ভাঙানো হলো।তাতেও কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে বৈকি!
লোকাল তালা ভাঙ্গানোর লোক দিয়ে চেষ্টা চালিয়ে শুরুতেই সফল হলোনা তারা।তাই অফিসিয়াল লোক আনিয়ে তালাটা অবশেষে ভাঙ্গতে পারলো।হয়ত মাছ বাজার আরও সুন্দর,শুটকির বাজারের গন্ধ আরও ভালো,সমুদ্র সৈকত আরও সুন্দর।
এমন নিকৃষ্ট পরিবেশ দেখে ওসব ভালো লাগছে আর কি!!!
মাছ বাজারের মতন করে রেখেছে পুরো ফ্ল্যাট,কল ছেড়ে রেখেছে বলে ফ্ল্যাট এখন ভাসমান অবস্থায়।কিসের বাজে দূর্গন্ধে শুটকির গন্ধ ভালো বলে বোধগম্য হচ্ছে।শাওন নাকে হাত দিয়ে বললো,’আজ আমাদের অফিসারদের মধ্যে কোনো মেয়ে আসলে নির্ঘাত বমি করে দিতো।পারফিউম স্প্রে করো জলদি নাহলে দম আটকে মারা যাবো।বারান্দার গ্লাস খোলো।’
সাজিদ আর মিলন ছুটে গিয়ে তাই করলো।শাওন একটা রুম দেখতে পেলো যেটাতে স্টিকার দিয়ে লেখা’DANGER Zone’
তার মানে ¸ঐ ছাগলের রুম এটা।দরজা খুলে ভেতরে ঢুকার আগেই মদের বোতল কতগুলো গড়িয়ে গড়িয়ে পায়ের কাছে এসে ঠেকলো তার।ভেতরে তো কেউ নেই।তাহলে এরা গড়িয়ে এদিকে এলো কি করে?
শাওন এদিক ওদিক তাকিয়ে পেছনে তাকাতেই দেখলো দরজার সাথে সুতো বাঁধানো।সেই সুতো গিয়ে বিয়ারের শেলফে গিয়ে আটকেছে।কেউ দরজা খুললে বিয়ার গিয়ে তার সামনে পড়বে গড়িয়ে গড়িয়ে।আহা কত বুদ্ধি ছাগলটার।মানে সে এত বড় অলস!বাসায় ফিরে শেলফ থেকে বিয়ার নেওয়ার শক্তি তার নেই।অটোমেটিক বিয়ারের বোতল গড়িয়ে আসবে তার কাছে।ওয়াও নাইস!!এটা তো শুধু ছাগল না!রামছাগল! ‘
হাসতে হাসতে শাওন বিছানার তোষক উপরে উঠিয়ে ফেললো।
জন্মবিরতিকরণ পিল পেলো এক পাতা।আরও কত কি পেলো।ছেলের বাসায় এগুলো কি করে?তারমানে মেয়েও থাকতো এখানে।
সাজিদ রান্নাঘরে মুসুর ডালের বোয়ামের ভেতরে একটা ছুরি লুকানো পেয়ে সেটা দেখাতে আসলো শাওনকে।শাওন তোষক টেনে দিয়ে ওর দিকে তাকালো।ছুরিটাকে সাইড করে রাখতে বলে রকির আলমারি খুললো এবার।
চলবে♥
সঞ্চারিণী
আফনান লারা
২২.
আলমারিতে আহামরি কিছু পাওয়া না গেলেও একটা ছবি হাতে আসলো যেটা কিনা শাওনের এতদূর আসা সফল করেছে।আর ছবিটা হচ্ছে একটা মেয়ের।তাও কার??এ্যামিলির।এখানে এসে দারুণ একটা প্রমাণ হাতে আসবে তা ভাবনার বাহিরে ছিল সবার।এ্যামিলির সঙ্গে রকির কানেকশান থাকতে পারে এই চিন্তাটা কেউ ভুলেও মাথায় আনেনি।
এ্যামিলির ছবিখানা পেয়ে আর বুঝতে বাদ রইলো না যে রকি এখন মালদ্বীপে অবস্থান করছে।এক টানে দুটো ধাঁধা সলভ্ হয়ে গেলো।
এ্যামিলি আর রকি একসাথে নিখোঁজ।এ্যামিলির বাসস্থান মালদ্বীপ। রকি পালিয়ে গেছে বিদেশে।তার মানে দুজনে এখন মালদ্বীপে।পরীক্ষণের জন্য হলেও মালদ্বীপে খোঁজ নেওয়া যেতে পারে।তাছাড়া মালদ্বীপে একটা মানুষকে খুঁজতে বেশি সময় লাগবেনা।ছোট পরিসর।
রকির বাসা থেকে বেরিয়ে সবাই অফিসে ফিরেছে।আজকে মিটিং বসেছে বিদেশ যাওয়া নিয়ে।এই নিয়ে শাওনকে কিছুই বলতে দিলেন না গিয়াস স্যার।সবাইকে সামনে বসিয়ে নিজেই বকবক করা শুরু করে দিয়েছেন।
-‘শোনো সবাই,বিদেশে তোমরা ট্যুরে যাচ্ছো না। যাচ্ছো দুজনকে খুঁজতে।হয়ত সামনে তিন/ চারটে গলি পড়ে গেলো আর তোমাদের আলাদা ভাবে একেক গলিতে যেতে হলো।তাই এক দুজনকে পাঠাচ্ছিনা।তাছাড়া মালদ্বীপে না পাওয়া গেলে তোমাদের ওখান থেকে অন্য দেশে যেতে হবে।তাই আমি শাওন,নিতু,নুহাশ,সামিয়া,সাজিদ এবং মেধাকে পাঠাচ্ছি।প্রয়োজন হলে আরও পাঠাবো।কিন্তু তোমরা খালি হাতে ফিরতে পারবেনা।রকি আর এ্যামিলি রেদোয়ানের কেসটার শেষ সীমানায় পৌঁছে দিতে পারে আমাদের।এমন ও হতে পারে তারাই খুনি’
শাওন উঠে চলে গেলো তার কেবিনে।মেধা দেয়ালের সঙ্গে ঠাস ঠাস করে মাথায় বাড়ি দিচ্ছে।কত বার করে চেয়েছিলো স্যার যেন তাকে যেতে না বলে।কিন্তু ঘুরে ফিরে তার উপরই দায়িত্ব এসে পড়ে।বিদেশে গিয়ে শাওন ওকে একা পেয়ে কাঁচা চিবিয়ে খাবে নির্ঘাত।
গিয়াস স্যার শাওনের কেবিনের দিকে গেছেন ওকে মন খারাপ করে যেতে দেখে।
-‘আসবো?’
শাওন টেবিলের উপর থেকে মাথা তুলে বললো,’আরে স্যার জিজ্ঞেস করা লাগে নাকি?’
-‘তোমার শরীর খারাপ?ওভাবে চলে এলে।কিছু বলার নেই তোমার আমার বক্তব্য শুনে?চা খাবে?’
কথাটা বলে গিয়াস স্যার চা আনতে বললেন একজন কর্মচারীকে ডেকে।এরপর শাওনের সামনের চেয়ারটায় বসে মুচকি হেসে চেয়ে রইলেন ওর দিকে।তারপরও সে কিছু বলছেনা দেখে তিনি বললেন,’মেধাকে যেতে বলেছি বলে আমার উপর অসন্তুষ্ট? ‘
-” ও ঝামেলা ক্রিয়েট করা ছাড়া আর কিছুই পারেনা।ওকে নিয়ে গেলে দেখা গেলো সব কাজ ফেলে ওর সেফটি নিয়ে দৌড়াতে হবে আমাদের’
-‘শোনো,মেধাকে আমি নিজের চোখে লড়তে দেখেছি।চোখ বেঁধে নিয়োগ দিই নাই।আমাকে ভরসা করোনা?’
-‘তা তো করি।কিন্তু প্রথমদিন থেকে দেখছি…’
-‘ব্যস।ভুলে যেওনা সেদিন মেধা একা লড়ে তোমাদের বাঁচিয়েছিলো।আমি আর কিছু শুনতে চাইনা।বুঝলাম মাথা ধরায় সব কিছুতে মেজাজ খিটখিটে হয়ে আসছে তোমার।গরম গরম চা খাও দেখবে ভালো লাগবে”
চা খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে স্যার চলে গেছেন।শাওনের মন চাইছে নিজের যাওয়াটাই ক্যানসেল করে দিতে।কিন্তু তা হয়না।তাকে যেতেই হবে।
আজকে রাত বারোটার ফ্লাইটে তারা মালদ্বীপের উদ্দেশ্যে রওনা হবে।সবাইকে বাসায় ফিরে পাসপোর্ট আর নিজের প্রয়োজনীয় জিনিস ক্যারি করে আনার নির্দেশ দিলেন গিয়াস স্যার।
মেধা একা একা বাসায় ফিরে ব্যাগে জামাকাপড় পুরতে পুরতে বাবাকে ফোন করলো। তারা পটুয়াখালী পৌঁছে গেছেন।কোয়াটারে আছেন আপাতত।
বাবা মাকে মালদ্বীপ যাওয়ার কথা বলায় তারা বললেন টিমের সাথে থাকতে।একা কোথাও না যেতে।এই চাকরিতে দেশ বিদেশ ঘুরতে হয় তাদের জানা আছে।তাই তেমন একটা চমকালেন না তারা।
মেধা আচ্ছা আচ্ছা বলে ফোন রেখে জামাকাপড় সব ব্যাগে নিয়ে ভাবলো ক্লিপটা সঙ্গে নেবে কিনা।যদি নেয় বিপদ হতে পারে।আর যদি রেখে যায় তাও বিপদ।কিন্তু কি করলে বেস্ট হবে?
——-
রাত দশটার সময় সবাই এয়ারপোর্টে এসে হাজির হয়েছে।
মেধা এখনও আসছেনা।অবশ্য শাওন ও আসেনি।সবাই ওদের দুজনেরই অপেক্ষা করছে এখন।
—–
শাওনকে আসতে দেখে সামিয়া আর নিতু ইয়া বড় হা করে তাকিয়ে থাকলো।অফিসের পোশাক পরা তাও চোখে সানগ্লাস পরায় নতুনত্ব এসেছে তার মাঝে। তাছাড়া আলাদা রকমভাবে ওকে ভাল্লাগলো আজকে।
নিতু হেসে বললো,’স্যার রুপের রহস্য কি?’
-“নাইট ক্রিম দিছি। ফ্লাইটে আমার স্কিনে র্যাশ দেখা দেয়”
-“ক্রিমটার নাম বলা যাবে স্যার?’
-‘ফর ম্যান’
নিতু জিভে কামড় দিয়ে সরে দাঁড়ালো।শাওন মেধাকে দেখতে না পেয়ে রেগে মেগে কিছু বলতে যাবার আগেই সাজিদের হা করে তাকানো দেখে পেছনে তাকালো সে।
ব্লু জিন্স,ব্লু শার্ট আর চোখে সানগ্লাস দিয়ে মেধা আসছে এদিকে।হাতে ট্রলি ব্যাগ।এতদিন মিলন মেধাকে দুচোখে দেখতে পারতো না আর আজ সেও দিওয়ানা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে মেধার এমন বদল দেখে।শাওন কপাল কুঁচকে বললো,’আমরা ট্যুরে যাচ্ছিনা।ইনভেস্টিগেশনের জন্য যাচ্ছি মিস মেধা।আপনি কি তা ভুলে গেছেন?’
মেধা ট্রলি ব্যাগটাকে দাঁড় করিয়ে হাতে ঝোলানো কালো অফিসের কোটটা গায়ে দিয়ে বললো,’না ভুলিনি’
——
বিমানে উঠার পর শাওন কারচুপি করে তার পাশের সিটটায় নুহাশকে এনে বসিয়েছিলো যাতে কোনো ভাবে মেধা না বসে।কিন্তু নুহাশ নিতুর সঙ্গে বসার জন্য শেষ হয়ে যাচ্ছে।নিতু বসেছে মেধার সাথে।মেধা আই মাস্ক লাগিয়ে ঘুমাচ্ছে।নিতু ওকে চিমটি মেরে জাগিয়ে তুললো ।মেধা ওর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে।নিতু বললো শাওনকে ম্যানেজ করতে যাতে নুহাশকে ওর সাথে বসতে দেয়।
-‘অসম্ভব। নুহাশ এখানে এসে বসা মানে আমি গিয়ে শ্যাওলা স্যারের সাথে বসা।তার সাথে বসলে আমার জার্নির বারোটা বাজবে।আমি এই রিস্ক নিবোনা’
—–
-‘শাওন ধরো আমি আজ মারা যাবো।আমার শেষ ইচ্ছে তুমি পূরণ করার সুযোগ পেলে পূরণ করবে?’
শাওন চিপস খেতে খেতে বললো,’যদি হয় সিট বদলের তবে আমি পারবোনা এই মহৎ কাজটা করতে’
-‘প্লিজ!!’
-‘নো’
নিতু আর নুহাশ বেশ বুঝতে পেরেছে শাওন,মেধা তাদের সিট বদল করতে একমত নাহ।কি করে প্ল্যান সাকসেস করা যায় তাই ভাবছে নুহাশ।শেষে একটা বুদ্ধি মাথায় আসতেই নিতুকে অপেক্ষা করে ইশারা করলো।নিতু মাথা তুলে তাকিয়ে হাত দিয়ে বললো কি হয়েছে।নুহাশ ওয়াশরুমের দিকে ইশারা করলো।নিতু বুঝতে পেরে উঠে সেদিকে গেছে।নুহাশ শাওনকে ডাকলো ওর সাথে ওয়াশরুমে নেওয়ার জন্য।শাওন চিপস খেতে খেতে জায়গা ছেড়ে উঠলো।দুজনে একটুদূর আসতেই নুহাশ নিতুর হাত ধরে ছুটে শাওনের সিটে বসিয়ে তার পাশে বসে গেলো।শাওন ও দৌড় লাগিয়েছিলো কিন্তু ততক্ষনে সিট বুকড্।শাওন কোমড়ে হাত দিয়ে বললো,’এটা চিটিং’
-‘তুমি তো প্রেম করো না।এসব বোঝাতে যাবার সময় নাই আমার।এখন গিয়ে খালি সিটে বসো’
শাওন বাধ্য হয়ে মেধার পাশে বসলো চুপচাপ।
মেধা মাস্ক খোলেনি বলে জানলোনা কে বসেছে ওর পাশে।হাতটা বাড়িয়ে শাওনের বাম হাতকে শক্ত করে ধরে দাঁত কেলিয়ে বললো,’নিতু আপু তোমার পারফিউমটা জোস।মন চায় কামড়ে খেয়ে ফেলি’
শাওন চোখ কপালে তুলে মেধার হাতটা ধরলো সরাবে বলে, সঙ্গে সঙ্গে মেধা নিজেই সরে গেলো।চোখ থেকে মাস্ক সরিয়ে বললো,”নিতু আপু কউ।আপনি কখন এলেন?’
-‘এতক্ষণ টের পাওনি।আর হুট করে টের পেয়ে গেলে?’
-“লোহার মত হাত আর কার হতে পারে।সেটা বুঝতে পেরেই সরে বসলাম।যান আপনার সিটে।’
-“ওরা দখল করেছে’
মেধা আরেকটু সরে বসে মাস্কটা ডিস্কে রেখে দিলো।সজাগ থাকতে হবে।শাওন কি রেখে কি করে বসে বোঝা দায়।এমন ও হতে পারে সাইড ব্যাগটা সার্চ করা শুরু করে দিবে।তাই সাইড ব্যাগটাকে বুকের সাথে চেপে ধরে মেধা রোবটের মতন বসে থাকলো।
শাওন তার হাতের চিপসটা খেয়েই যাচ্ছে মেধাকে দেখিয়ে দেখিয়ে।
মেধা হাত বাড়িয়ে একটা নিতে যেতেই শাওন প্যাকেটটা সরিয়ে বললো,’ আমাকে তোমার এত বিশ্বাস হয়?যদি এই চিপসে কিছু মিশিয়ে দিয়ে থাকি?’
মেধা ঢোক গিলে জানালা দিয়ে বাহিরের দিকে তাকিয়ে ঘুরে বসলো।শাওন মুচকি হেসে নুহাশের দিকে তাকিয়ে দেখলো ওরা একজন আরেকজনকে চিপস খাওয়াচ্ছে।তা দেখে রশ্নির কথা মাথায় এসেছে।তাই সে এদিক ওদিক তাকিয়ে ওকে খুঁজতে লাগলো।মেধা ভেংচি মেরে বললো,’আপনার ভূতুড়ে প্রেমিকা ফ্লাইট মিস করেছে হয়ত।পরের ফ্লাইটে চলে আসবে চিন্তা করিয়েন না।আর নয়ত উড়ে উড়ে একাই আসতে পারবে।এত ভাবতে হবেনা আপনাকে’
চলবে♥