সঞ্চারিণী
আফনান লারা
৪৫.
মেধা চলে যাবার পর শাওনের মন চাইলো বারান্দায় যেতে।তখনই তৃনা আপুর বলা কথাগুলো মাথায় চলে আসলো।
-‘আচ্ছা রশ্নি কি সত্যি কষ্ট পাবেনা?নাকি তৃনা আপু আমাকে ওর থেকে সরাতে এমনটা বললো,কোনটা সত্য?’
বারান্দার গ্লাসে হাত রেখে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর শাওনের মনে পড়ে গেলো মেধা কাছে না থাকলে রশ্নিকে তার দেখতে পাবার কথা।তাহলে কি এখন রশ্নি বারান্দায় নেই?
এসব ভেবে ভেবে গ্লাসটা সরিয়ে বারান্দায় পা রাখলো শাওন।কিন্তু রশ্নি নেই।
পিঠে কারোর হাতের নরম স্পর্শ পেয়ে শাওন হেসে দিয়ে বলতে গেলো রশ্নি এসেছো?
কিন্তু রশ্নির জায়গায় মেধাকে দেখলো সে।তারপরেও মুখ থেকে তার সেই হাসিটা গেলোনা তার।মনে হলো সে অবাক হয়নি মেধাকে দেখে।
মেধা চায়ের কাপটা রেলিংয়ের উপর রেখে বললো,’তৃনা আপু আগে থেকেই বানিয়ে রেখেছিল’
কথাটা বলে মেধা রেলিংয়ে উঠে বসে চায়ের কাপ নিলো চুমুক দিবে বলে।শাওন ব্রু কুঁচকে মেধার পিঠের পেছন দিয়ে হাত নিয়ে রেলিংয়ে রেখে হেলান দিয়ে দাঁড়ালো।মেধা চায়ে চুমুক দিতে গিয়ে মুচকি হাসলো ।শাওন ওর মুখের দিকে তাকিয়ে বললো,’আর কখনও যেন এখানে তোমায় এভাবে বসতে না দেখি’
-‘কেন?বাঁচাতে আসবেন না?’
-‘আমি সবসময় তোমার পাশে থাকবোনা।নিজের উষ্কখুষ্ক চুল গুলোকে আঁচড়ে একটু মানুষ করো।তুমি না বাড়ির বউ?বাড়ির বউরা এমন থাকে?’
-‘আপনি আঁচড়ে দেবেন?শুনেছি রশ্নির চুল খুব সুন্দর করে বেনি করে দিতেন।অবশ্য তার সাথে কি করতেন সেসব হয়ত আশা করা ঠিক না তাও বলছি।না চাইলে থাক।আমি এই উষ্কখুষ্ক চুল নিয়ে আরও এক সপ্তাহ কাটিয়ে দিতে পারবো’
শাওন ঘুরে দাঁড়িয়ে দালানের নিচে তাকিয়ে বললো,’আগে গায়ের থ্রি পিসটা বদলে একটা শাড়ী পরে নাও।তোমাকে শাড়ীতে তেমন দেখা হয়না।আর আজ রেদোয়ানের কেসের জন্য তোমায় যেতে হবেনা।আমি গিয়ে ঘুরে আসবো’
-‘তাহলে শাড়ী পরে কাকে দেখাবো?’
শাওন মেধার হাত ধরে টেনে রেলিং থেকে নামিয়ে নিয়ে বললো,’আমাকে দেখানোর জন্য।’
—–
শাওন চলে গেছে।মেধার ঠোঁটের কোণায় হাসি ভাসছে অনবরত।শাওনের হলো টা কি?জাদু নেমে গেছে নাকি??রশ্নির কথা কি আর মনে পড়েনা তার??
‘আজকে তাহলে আগুন ধরিয়ে দেবো মিঃশ্যাওলার মনে।আমাকে তো এখনও চেনেনা।’
—-
শাওন আরিফাকে পড়তে বসিয়ে বাদাম খেতে খেতে নিজের রুমে ঢুকে আয়নার সামনে এসে নিজের চুলগুলোকে নাড়িয়ে বললো,’মেধা চিরুনি আনো।তোমার চুল ঠিক করে দেবো’
মেধার কোনো সাড়া না পেয়ে শাওন চিরুনি খুঁজে পেছনে তাকালো।মেধা চুলে ক্লিপ লাগাচ্ছে বিছানার কোণায় বসে।শাওন হা করে তাকিয়ে ওর সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।লাল টুকটুকে জর্জেটের শাড়ী পরে বসে চুলগুলোকে ঠিক করে এখন ক্লিপ লাগাচ্ছে সে।
শাওনকে দেখে উঠে দাঁড়িয়ে বললো,’দেখুন সব নিজে নিজে করে ফেললাম।কেমন লাগছে বলুন এবার’
-‘বেশ ভালো।এবার গিয়ে তৃনা আপুকে নাস্তা বানাতে হেল্প করো যাও’
মেধা মুখটা ফ্যাকাসে করে বললো,’আর আপনি বারান্দায় যাবেন নাকি?’
-“নাহ।আমি একটু হাঁটতে যাব’
কথাটা শুনে মেধা খুশি হয়ে চলে গেলো তৃনার কাছে।শাওন জ্যাকেট হাতে নিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে পড়লো জরুরি একটা কাজ শেষ করবে বলে।রকির বাসার সামনে কয়েকটা সুন্দর ফুলের দোকান দেখেছিল কাল।ওটা থেকে ফুল কিনবে মেধার জন্য।লাল শাড়ীর সাথে যদি পরনে ফুলের অংশবিশেষ থাকে তাহলে সেটা অনেক মানায়।
বলতে গেলে জোড়ায় জোড়ায় তৈরি।
মোট কথা শাড়ীর সাথে ফুলের নাম জুড়ে দেওয়া মানে সৌন্দর্য্যটাকে একসাথে জুড়ে দেওয়া।
——
-“জানো মেধা!!শাওন তোমায় অনেক অনেক ভালো রাখবে।’
-‘জানিনা কি হবে।তবে আমি উনার সব আবদার পূরণ করবো।মানে আমিও ভালো রাখার চেষ্টা করবো উনাকে।তার হুটহাট মন খারাপ থাকার অভ্যাসটা তাড়িয়ে ছাড়বো।’
তৃনা মেধার হাত ধরে বললো,’রশ্নিকে হারানোর পর অনেক খারাপ গেছে ওর দিনগুলো।এরপর রশ্নির ভ্রম তাকে অনেকটা সুস্থ করে তুললেও শরীরের দিক দিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছিল শাওন।এমনকি এখনও অসুস্থ। তুমি হয়ত জানোনা।সে ঠিকমত খাওয়া -দাওয়া করেনা।কেমন যেন হয়ে গেছে।
ওকে একটু গুছিয়ে নিবে দেখবে শাওনকে তোমার সব চেয়ে আদর্শবান স্বামী মনে হবে।আমি যতদূর জানি শাওন তোমার প্রাপ্য অধিকারটা দিতে নাকচ করবেনা।শুধু সময়ের দরকার।সে আসলে রশ্নির জগৎ থেকে বেরিয়ে আসতে যাচ্ছে।তাই তাকে একা থাকতে দিও।নিজেই নিজেকে ঠিক করে নেবে।শাওন অনেক স্ট্রং।’
-‘জানি।।তবে আমার মনে হয় আমি পাশে থাকলে উনি এসব আরও সহজে ভুলে যেতে পারবেন’
——
হাতে ফুল ঘুরাতে ঘুরাতে শাওন রকির বাসাটা একবার দেখে নিলো।দেখে মনে হয় আর এই বাসাতে রকি পা রাখবেনা।সে জানত এই বাসায় রকি স্থায়ী না।
-‘ঐ দামড়াটাকে কোন কোণায় গেলে মুঠোর বন্দী করতে পারবো?
মাথা কাজ করেনা।জীবনে কোনো কেসে এত হয়রানিতে পড়তে হয়নি।
মেধার কারণে কেনো একশান নিতেও ভয় হচ্ছে।আমি চাইনা আমি বাদে আর কেউ জানুক রেদোয়ানকে মেধা মেরেছিল।
রকি তো জানে।ওকে ধরতে হবে।তবে সে প্রুভ করতে পারবেনা রেদোয়ানকে মেধাই মেরেছিল।তার পরেও রকিকে ধরতে হবে।শত্রু বাহিরে থাকলে যত বিপদ সব এগিয়ে আসবে।’
ফোন বাজছে।মেধার কল।শাওন রিসিভ করে মুচকি হেসে দুষ্টুমি করে বললো’পরে কথা বলছি।রশ্নি সামনে’
মেধার রাগ বেড়ে শেষ প্রান্তে চলে গেছে।বাসা থেকে বেরিয়ে ছুটলো শাওনকে খুঁজবে বলে।
শাওন পকেটে হাত ঢুকিয়ে সেও রাস্তায় নেমে পড়েছে।মেধা যে রেগেমেগে এদিকেই আসবে তা সে জানতো।
মেধা ছুটতে ছুটতে অনেকদূর এসে শাওনের দেখা পেলো।ওর কাছে এসে চেঁচিয়ে রাগ ঝাড়তে যেতেই শাওন ওর হাতের কুনুই ধরে ঘুরিয়ে দাঁড় করিয়ে চুলে ফুল লাগিয়ে দিলো।
মেধার রাগ গায়েব।চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে সে।শাওনের হাসি পাচ্ছে তাও হাসিটাকে থামিয়ে একটু দূরে সরে বললো,’এত রাগ কিসের জানতে পারি?’
মেধা শাওনের দিকে ফিরে ফু্লে হাত দিয়ে বললো,’আমাকে রাগাতে ভাল লাগে আপনার?’
-“অন্নেককককক’
-‘তো কথা হয়েছে রশ্নির সাথে??কি কি প্রেম হলো আজ?’
শাওন বাসার দিকে হাঁটা ধরেছে মেধার কথার উত্তর না দিয়ে।
মেধা সাথে সাথে আসতে আসতে বললো,’সত্যি কি রশ্নি এসেছিল?বলেছিল কিছু?’
-‘সে আর আসবেনা’
-‘কেন?’
-“কারণ আমি আর তাকে নিয়ে ভাববোনা’
শাওনের কথা আর তৃনা আপুর কথা মিলে গেলো।তারপরেও মাথায় ঢুকছেনা শাওন এত জলদি বদলে যেতে আসলেই কি পারবে?
এটা ভেবে মনে ভয় জাগে।আবার ভালোলাগা।ফুলগুলোকে হাত দিয়ে ছুঁতেই ভালোলাগা জেগে উঠলো।
শাওন সব ভুল যেতে চাইলেও রশ্নি কি ভুলতে পারবে??
মেধা সামনে পেছনে রশ্নিকে খোঁজার চেষ্টা করলো।শাওন মাথা ঘুরিয়ে বললো,’আমি মন থেকে মুছে ফেললে তোমার মনে থাকার কথা না’
-‘কেন কেন?আপনার আর আমার মন তো এক না’
-‘এক নাকি আলাদা সেটা তো রশ্নিকে দেখবে নাকি দেখবেনা সেটার উপর নির্ভর করে।আমার অনুপস্থিতিতে যদি তুমি রশ্নিকে দেখে থাকো তাহলে ধরে নেবো আমার আর তোমার মন এক না।আর যদি না দেখো তাহলে তো বুঝবেই…..’
চলবে♥
সঞ্চারিণী
আফনান লারা
৪৬.
গিয়াস স্যার প্রচণ্ড রেগে আছেন পুরো টিমের উপর।তিনি নিজের উপরও রাগ দেখাচ্ছেন এই ভেবে যে আসলেই রেদোয়ানের কেসটা এরকম অদ্ভুত কেন।চাইলেই সব সলভ হচ্ছেনা কেন।
কেসের কিছু বের হলোনা এর মাঝে দুটো লাশই গায়েব??
খুনি আসলেই কি করতে চাইছে?
এরকম খুনি বাপের জন্মে দেখেননি তিনি।দু তিনবার টেবিলে ঘুষি মেরে কপালে হাত দিয়ে চেয়ার টেনে বসলেন তিনি।
শাওন এবার উঠে দাঁড়ালো কিছু বলবে বলে কিন্তু তার আগেই গিয়াস স্যার ওর দিকে তাকিয়ে বললেন,’শাওন??তুমি তো এমন ছিলে না।আমি মুখ থেকে কথা বের করার আগেই তুমি খুনির নাম বলে ফেলতে আর এই কেসে তোমার মুখ থেকে কোনো কথাই বের হচ্ছেনা?আর কত মাস্টারপ্ল্যান করলে আমরা রকিকে পেয়ে যাব?’
-‘স্যার ঢাকাশহর তো ছোট না।আই থিংক আমাদের টিমের মেম্বার বাড়াতে হবে।এত কম মানুষ দিয়ে পুরো টাউন সার্চ করা অসাধ্যের মতন হয়ে আসছে’
-‘এমনিতেও টিমে অনেক মানুষ।তোমার টিম করতে ভুল হয়েছে।সবাই একা একা সার্চ মিশনে বের হবে।দুজন করে টিম করা যাবেনা।তাছাড়া বললেই তো আর টিম মেম্বার নিয়োগ দেওয়া যায়না।হাজারটা ট্রেনিং করিয়ে তারপর দেওয়া যায়।আমাদের কাছে এখন ওসবের টাইম আছে বলো?’
শাওন চুপ করে বসে আছে।হঠাৎ করে সেখানে মেধা এসে হাজির।শাওনের মন রাখতে শাড়ী বদলে অফিসের পোশাকে চলে এসেছে।শাওনের পাশে বসে গিয়াস স্যারের দিকে ঘুরে বললো,”রকি লাশ গুলোকে নিশ্চয় তার সাথে নিয়ে হাঁটছেনা??মর্গেই তো রেখেছে।নাহলে তে দূ্র্গন্ধে থাকা যাবেনা।আমাদের উচিত মর্গে মর্গে চেক করা।এমনও হতে পারে মর্গের জিনিসপাতি কিনে সে যেখানে থাকছে ওখানেই রাখছে।
আমাদের খুঁজে বের করতে হবে হসপিটাল ছাড়া আর কারা মর্গের জিনিসপাতি কিনতে দোকানে পাড়ি জমিয়েছিল।এতে করে রকিকে খুঁজতে বেশি সময় লাগবেনা আমাদের’
গিয়াস স্যার উঠে দাঁড়িয়ে বললেন,’সে যাই বলো! এটাও সহজ মনে হচ্ছেনা।তাও বসে থাকার চেয়ে এটা করে দেখা ভালো।’
মিটিং শেষে স্যার চলে যাবার পরেই শাওন মেধার হাত টেনে ধরে বললো,’তোমাকে না বলেছিলাম আজ কাজে এসো না।আমি আসছি তো।তোমার আসার কি দরকার ছিল?’
-“রকিকে আমি ভালো করে চিনি।আপনি চেনেননা।তাছাড়া আমিও তো এই অফিসের একজন।আমাকে তো আসতেই হতো।এখন কাজে লেগে পড়ুন।আলাদা হয়ে কাজে যেতে হবে’
শাওন মেধার হাত ছাড়লোনা।টেনে বাহিরে নিয়ে এসে বললো,’সবাই আলাদা গেলেও তোমায় আলাদা যেতে দেবো না।আমি তোমার সঙ্গেই যাব।’
সবার চোখ এড়িয়ে দুজনে আশেপাশের হসপিটালে এসে পৌঁছালো।মর্গের জিনিসপাতির এক ভাগ যায় বিভিন্ন ফরেনসিক ল্যাবে।তো সেখানে সাজিদ গেছে খবরাখবর আনতে।বাকি যে সোর্চ আছে ওসব খুঁটিয়ে দেখতে নেমেছে টিমের বাদ বাকি সদস্যরা।
সারাদিন খাটাখাটনি করে শেষে মিলন খবর বের করতে পেরেছে আর তা হলো ফার্মগেটের দিকে একটা ছোটখাটো হসপিটালের থেকে মর্গের জিনিসপাতি ক্রয় করা হয়েছে কদিন হলো।বেশিদিন হয়নি।আর সন্দেহজনক বিষয় হলো এটা ফরেনসিক ল্যাবের জন্য না,পার্সোনাল ইউজের জন্য কেনা হয়েছিল।
তাদের কাছে ডিটেইলস আছে যার কাছে তারা সেল করেছিল তার।
এবং দেখে জানতে পারলো কোথাকার কোন মিঃজলিল।
তার সম্পূর্ণ ঠিকানাও দেওয়া।
মিলন গিয়ে দেখলো এক বিজ্ঞানীর বাসা সেটা।তাই সে ফিরে চলে এসেছিল।বিজ্ঞানীর ছবি টিমের বাকিদের পাঠিয়ে সে অফিসে ফিরে এসেছে।মেধা ফোন চেক করে বিজ্ঞানীর ছবিটা দেখে রেখে দেওয়ার পর কি ভেবে আবারও দেখতে নিলো।দাঁড়ি না থাকলে সেম রকির মতন দেখতে লাগতো।
শাওন ওর হাত থেকে ফোন নিয়ে নিজেও দেখার চেষ্টা করে চোখ বড় করে ফেললো।সবাইকে এলার্ট করে দিলো ঐ বাসার উপর নজর রাখতে।আজকে রকিকে ধরতেই হবে।
এটা রকিই বিজ্ঞানীর বেশে।এমন সাজ দিয়েছে যে একেবারে চেনাই গেলোনা।
মিলন সব জিজ্ঞাসা করে এতক্ষণ সময় ধরে রকির সামনে থেকেও ওকে চিনতে পারলোনা।
রকির বাসার চারদিকে ঘেরো করে ফেলা হয়েছে অল্প সময়ের ব্যবধানে।
শাওন আর মেধা ও এসে গেছে।কোনো শোরগোল না করে কলিংবেলে চাপ দিয়েছে শাওন।ঐ বিজ্ঞানীর কাজের লোক এসে দরজা খুলে জিজ্ঞেস করলো কি চাই।
শাওন পকেটে হাত ঢুকিয়ে বললো,’শুনলাম এই বাসায় একজন বিজ্ঞানী আছেন।তার সাথে একটু দেখা করতে চাই”
-‘উনি বাসায় নেই।একটা কাজে বাহিরে গেছেন”
শাওন গান ওর কপালে চেপে ধরে বললো,’চুপ চাপ ভেতরে চলো।সাউন্ড করবেনা’
বিজ্ঞানী উপরের তলা থেকে জিজ্ঞেস করলো কে এসেছে।শাওন গান তাক করে ধরেছিল বলে ছেলেটা নিচু স্বরে বললো,’ মেহমান এসেছে।আপনাকে চাইছে’
বিজ্ঞানী সাজে রকি নিচে নামলো।শাওনকে দেখে মনের ভেতর ভয় কাজ করলেও সে বুঝতে দিলোনা।বুক ফুলিয়ে শাওনের সামনে এসে দাঁড়ালো সে।কণ্ঠটাকে বয়স্ক করে বললো,’কে তুমি বালক?’
শাওন মুচকি হেসে কাম অন গাইস বলতেই সবাই বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসে হাজির হলো।রকি বুঝে গেছে সে ধরা পড়েছে আজ।
ঢোক গিলে পালানোর পথ খুঁজতে লাগলো সে।মেধা এগিয়ে এসে ওর নকল দাঁড়ি টান দিয়ে ছাড়িয়ে ফেলেছে।
রকি তাচ্ছিল্য করে হেসে বললো,’তোমার সত্যিটা সবাইকে জানিয়ে দেবো নাকি এখন আমাকে যেতে দেবে?’
শাওন রকির গলা টিপে ধরে ওকে সোফার সাথে চেপে ধরে বললো,’তোমার কথার কোনো প্রমাণ আছে নাকি মিঃ রকি ওরপে আশার খুনী!!?’
-‘প্রমাণ আছে কিন্তু হাতে আসা বাকি।তার মানে তুমিও জানো???ও হো, তুমি তো জানবেই।তুমি হলে খুনীর হাসবেন্ড।ভয় করেনা তোমার?রাতে একসাথে ঘুমাও কি করে?’
শাওন রকির গলায় চাপ দিয়ে বললো,’ভয় কেন করবে?আমি তো আর নারী নির্যাতন করে বেড়াইনা
বরং বউরে খুব যত্ন করি।তাহলে সে হঠাৎ আমায় খুন করতে আসবে কেন?’
রকির গা জ্বলে উঠলো।মেধা চুপ করে তাকিয়ে আছে।সাজিদ আর মিলন ছুটে এসে বললো,’এরে কি করবেন স্যার?’
শাওন গলা ছেড়ে দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বললো,”রিমান্ড রিমান্ড এন্ড রিমান্ড। পুরো ঘটনা তার মুখ থেকে বের করতে হবে আমাদের।ও হলো পুঁটি মাছ।অনেক কষ্টে ধরেছি তাকে।আর জীবনে হাত ছাড়া করা যাবেনা।তিলে তিলে মেরে যত কথা আছে সব বের করতে হবে।এ্যামিলিকে কিন্তু সে মেরেছে।রেদোয়ানকেও মেরেছে কিনা সন্দেহ’
রকি অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।মেধা শাওনের কোটের একটু অংশ খাঁমচে ধরে রেখেছে।মনে সংশয় জাগলো এই ভেবে যে সে তো খুনী। একদিন তাকেও ধরা পড়তেই হবে।তা ভেবে শাওনের কোটটা ছেড়ে দূরে চলে আসলো সে।বাসার বাহিরে।
হাত কাঁপছে।শরীর খারাপ করছে তার।শাওন রকিকে সাজিদের কাছে হস্তান্তর করে মেধার পিছি পিছু চলে আসলো।
মেধার হাত ধরে নিজের দিকে ফিরিয়ে বললো,’তুমি ঠিক আছো?’
-‘জানিনা কেমন যেন লাগছে।আচ্ছা আমার তো জেল হবে তাইনা?’
শাওন মেধাকে টেনে তাদের গাড়ীর সামনে এনে দরজা খুলে ভেতরে বসতে বলে বললো,’আমি ছাড়া কেউ জানবেনা এ কথা।।আর রকি এখন বলতে গেলে কেউ বিশ্বাস করবেনা ওর কথা।হেসে উড়িয়ে দেবে’
মেধা শাওনের হাত ধরে রেখেছে।ওদিকে রকি দূর থেকে ওদের দুজনকে দেখছে।মেধাকে এক রাতের জন্য নিজের করে পাবার ইচ্ছা তাকে ভেতর ভেতরে খেয়ে যাচ্ছে।
মেধাকে পাওয়া যে কত কঠিন তা প্রথমবার ঠকেই টের পাওয়া গেছে।মালদ্বীপে ওকে কিডন্যাপ করার পর মোক্ষম সুযোগ হাতে থাকলেও মিঃ A এর জন্য সব গেলো।
ওর কারণে সুযোগ পেয়েও ব্যবহার করা হয়ে উঠলোনা।আর এখন চোখের সামনে সব দেখতে হচ্ছে।এতদিন মেধাকে শুধু হুমকি দিচ্ছিল রকি।কারণ সে,এ্যামিলি রেদোয়ান মিলে আশাকে যে টর্চার করছিল তার পাকাপোক্ত প্রমাণ ছিল মেধার হাতে।তাই এত কাছে থেকেও মেধাকে ছোঁয়ার দুঃসাহস করা গেলোনা।আর এখন চেয়েও তা হচ্ছেনা।মেধাকে কাবু করাও এত সহজ না।তবে মেধার চাহনি তাকে পাবার ইচ্ছা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে
-‘যত যাই হোক না কেন মেধাকে একদিনের জন্য হলেও নিজের করে নিতে হবে।আমাকে সে চেনে না।
আর মিঃ A তো আছেই।আমাকে ঠিক এখান থেকে বের করিয়ে নেবে।’
——
রকির বিরুদ্ধে যে প্রমাণ ছিল সেটা শাওনের হাতে দিয়ে দিলো মেধা।শাওন মিডিয়ার সামনে দেখাবে বলে ঠিক করেছে।এদিকে রকির মুখ দিয়ে লাশ সম্পর্কে কোনো কথা বের হচ্ছেনা।তার বাসায় আশার লাশ পাওয়া গেলেও রেদোয়ানের লাশ পাওয়া গেলোনা।আর সে ভুলেও রেদোয়ানের লাশের ব্যাপারে কোনো কৈফিয়ত দিচ্ছেনা।
শাওন রেডি হচ্ছে রিমান্ড নিতে যাবে বলে।মেধা দূর থেকে দেখছে শাওন কি করে।
এক নাগাড়ে কয়েকটা ঘুষি মারায় রকির হাল খারাপ হয়ে গেছো।মেধা শক্ত চোখে তাকিয়ে রইলো।আশাকে তারা যে অত্যাচার করত তার কাছে এটা কিছু না।ঠিক সেরকম করে যদি অত্যাচার করত তাহলে প্রতিশোধ নেওয়া হয়ে যেতো।
শাওন রকির থুঁতনি টিপে ধরে মুখ তুলে বললো,’আশাকে যেমন করে টর্চার করতে সেরকম করবো নাকি?হাতুড়ি দিয়ে মারবো?’
চলবে♥