সবটা অন্যরকম পর্ব-১৩

0
3613

সবটা অন্যরকম♥
#পর্ব_১৩
Writer-Afnan Lara
.
আহনাফের সৌভাগ্য আজকের জন্য ছুটিতে গেছে,,বারে ঢুকতে না ঢুকতেই একেবারে মিশকার সামনে পড়লো সে
মিশকা রাগী লুক নিয়ে আহনাফের দিকে চেয়ে আছে
আহনাফ ওকে ইগনর করে রিসিপশানের দিকে এগোতেই মিশকা ওর হাত ধরে ফেললো তারপর বললো”আমার থেকে এরকম পালাও কেন??তুমি জানো আমার বাপি চাইলে তোমায় আজ আমার করে দিতে পারবে?”
.
না পারবে না,আমি কার হবো না হবো সেটা সম্পূর্ন আমার মতের উপর নির্ভর করে,,
.
আমার থেকে এভাবে পালিয়ে কোনো লাভ নেই,,চলো আমার সাথে আজকের রাত ইঞ্জয় করবে
.
আহনাফ মিশকার হাত ছাড়িয়ে এক ধমক দিয়ে বললো”এনাফ ইজ এনাফ,,কে তুমি?তোমাকে নাফি এত সময় কেন দিবে??হু দ্যা হেল আর ইউ??তোমার পিছনে ছেলেদের লাইন লেগে থাকে তো আমি কি করবো?
আমার পিছনে মেয়েদের মেলা বসে,,তোমার বাপের টাকা আছে আর আমার আছে ফুল অফ এ্যাটিটিউড,,আর সেই অহংকারের জেরে আমি তোমায় রিজেক্ট করছি
এভাবে আমার আগে পিছে মৌমাছির মতন ভনভন করবা না
আমার তোমায় পছন্দ নাহ,একটুও না,,ভালোবাসা তো দূরের কথা
.
মিশকা রেগে মেগে ফোন বের করে তার বাবাকে ফোন করলো
আহনাফ চুপচাপ নিজের সিটে এসে বসে হাত ভাঁজ করে ঘড়ির কাঁটার দিকে তাকিয়ে আছে,,দশ মিনিট হলেই বস এসে বলবেন মিশকার পক্ষ নিয়ে কথা
কেন আমি তাকে ইগনর করছি ইত্যাদি!ইত্যাদি!
.
ঠিক দশ মিনিট হতেই বস এসে হাজির আহনাফের সামনে
আহনাফ কাগজে কিসব লিখছিলো,,বস আসায় মাথা তুলে তাকালো সে,,তার জানা আছে বস এখন কি বলবে
.
বস মুখ ফুটে কিছু বলার আগেই দেখলাম মিশকা এসে হাজির,কোমড়ে হাত দিয়ে অনবরত ঢুলছে সে,মুখে হাসি
কি করেছে খোদা জানে,,তবে যদি আজ চাকরিটা যায় তো যাক,তাও এই মেয়েটার গলায় ঝুলবো না আমি
.
শুনো নাফি!! আজকে তোমার ছুটি,,গিয়ে মিশকা ম্যাডামের সাথে লংড্রাইভে ঘুরে আসো,, কেমন?
.
না আমার ছুটি চাই না
.
বস আহনাফের কথা যেন শুনলেনই না,নাহিদকে ডাক দিয়ে ঘাঁড় ধরে বসিয়ে দিলেন আহনাফকে সরিয়ে তারপর চলেও গেলেন
আহনাফ ও কম না,সে আরেকটা চেয়ার এনে নাহিদের পাশে বসে গেলো
মিশকা আহনাফের হাত মুঠো করে ধরে বললো”অনেক হয়েছে,চলো”
.
না
.
তোমার ডিউটি ছুটি পাস হয়ে গেছে,তাহলে কিসের চিন্তা?
.
আমার ছুটি চাইনা,আপা আমারে মাফ করেন প্লিস
.
কে শোনে কার কথা!!! মিশকা এবার আহনাফকে নিতে পারছে না দেখে উঠে আহনাফের সামনের টেবিলটায় বসে পড়লো পা ভাঁজ করে
.
আহনাফ চশমা চোখে দিয়ে বারের কাগজপত্র নিয়ে আরেকদিকে ঘুরে বসেছে
মিশকা হাত বাড়িয়ে আহনাফের জ্যাকেটের উপর আঁকিবুকি করছে
নাহিদ এক দৃষ্টিতে মিশকাকে দেখছে,,কালো রঙের সিকুয়েন্স ড্রেসে কি সুন্দর লাগছে ওকে
আহনাফ মনে হয় রাগে ফেটেই যাবে এবার,, তার মেজাজ প্রচণ্ড রকম ভাবে গরম হচ্ছে,, রাগকে কন্ট্রোল না করলে বার এ বারুদ ঝরবে
ঠাস করে টেবিলে কাগজপত্র রেখে আহনাফ বেরিয়ে গেলো
মিশকা তো সেই লেভেলের খুশি,সে ভাবলো আহনাফ বেরিয়ে যাওয়া মানে নিশ্চয় লং ড্রাইভে যেতে রাজি হয়ে গেছে
সেও ছুটলো সেদিকে
আহনাফ বাইকে বসে পিছনে চেয়ে দেখলো মিশকা দৌড়ে আসতে আসতে বলছে”বাইক?ওকে নট ব্যাড ফর লং ড্রাইভ”
.
আহনাফ স্পীড বাড়িয়ে দিয়ে যেতে যেতে বললো”আমার বাইক তোমার জন্য না”
.
মিশকাকে পিছনে ফেলে বেশ দূরে এসে আহনাফ মনের আনন্দে ইয়াহু বলে উঠলো,,এই মিশকার বেকুবিতে আজ তার ছুটি হয়ে গেলো,এবার তার যে কাজটা করার ছিলো সেটা সে করবে এখন,আর তা হলো পরিবারের সবার জন্য পহেলা বৈশাখের শপিং করবে সে,,খুশিতে আটখানা হয়ে আহনাফ শপিংমলে চলে গেছে,তখন সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত আটটা বাজে
মিশকা ভেবে পাচ্ছে না সে কি করবে,,নাফি কিছুতেই ওর হতে চাচ্ছে না,এত কিছুর পরেও ইগনর করছে
সে পারবে নাফির চাকরিটা খেতে কিন্তু চাকরিটা খেলে নাফি ওর সাথে এক ওয়ার্ড কথাও বলবে না অর্থাৎ ওর উইক পয়েন্ট থাকবে না,তাহলে কি করে ওকে কাছে পাওয়া যাবে?

দিবা বই নিয়ে গড়গড় করে পড়ছিলো এতক্ষণ
হঠাৎ শুনতে পেলো খালামণি মৌসুমী নাম ধরে কি যেন বললো
তার মানে নিশ্চয় উনি মায়ের সাথে কথা বলছেন?
এক ছুটে দিবা খালামণির রুমের দরজার কাছে ঘেঁষলো
সত্যিই তাই,,মা ফোন করেছে
.
হুম রে দিবা ভালো আছে,তবে মাঝে মাঝে মনমরা থাকে,আর যাই হোক ওর মা তো তুই,একটিবার কথা বলতে পারিস না??
.
দিবা তখনই ভিতরে ঢুকে গিয়ে বললো”আমাকে একটু দাও না,আমি কথা বলবো”
.
ঠিক সেসময়ে মা লাইন কেটে দিলেন,খালামণি মুখটা ফ্যাকাসে করে বললেন”তোর মা লাইন কেটে দিছে”
.
দিবা চুপচাপ আবার চলে গেলো,খালামণির রুম থেকে বেরিয়ে নিজের রুমে যাওয়ার সময় শুনতে পেলো কলিংবেলের আওয়াজ
তাই রুমে না গিয়ে গেলো দরজা খুলতে
দরজা খুলতেই দেখলো আহনাফ ব্যাগ কতগুলো নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ওপারে
দিবা কোনো কথা না বলে চলে গেলো নিজের রুমে
আহনাফের সেদিকে খবর নাই,সে শপিং করে এনেছে,হুইহুল্লড় শুরু করে দিয়েছে তাই
আরিফ এক ছুটে এসে হাজির
মা ও আসলেন,বাবা বাসার কাছের চায়ের দোকানে গেছেন
তাদের জানা আছে এরকম অকেশান আসলেই আহনাফ কিছু না কিছু কিনে আনে
আরিফের হাতে পাঞ্জাবি ধরিয়ে দিতেই আরিফ আজ হঠাৎ কেঁদে ফেললো
আরিফের কান্না শুনে দিবা দরজার কিনারায় এসে দাঁড়ালো,,আরিফ কেঁদেই যাচ্ছে,তার কাঁদার কারণ হলো সে চাকরি করে বাবা মাকে খাওয়াতে পারে না আর তার ভাইয়া একা হাতে সব দিক সামলাচ্ছে,দিন শেষে আবার জামাকাপড় ও কিনে আনে
আহনাফ আরিফের ঘাড়ে আলতো করে হাত রেখে বললো”তুই চাকরি পেয়ে ডবল কিনে দিবি,ঠিক আছে?”
.
আরিফ চোখ মুছে বললো”ঠিক আছে”
.
মা ও নিজের চোখের পানি ধরে রাখতে পারলেন না,কারোর কান্না দেখলে তিনি ও ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কেঁদে দেন,আর এখানে তো তার নিজের ছেলে কাঁদছে
.
আহনাফ এবার মায়ের হাতে একটা শাড়ীর প্যাকেট ধরিয়ে দিয়ে বললো”এবার তুমি কেঁদো না আবার,এত সেন্টি খাওয়ার মুড নাই আমার,চা খাওয়ার মুড,,কবে এসময়ে বাসায় ছিলাম বলোতো?
কথাটা বলে আহনাফ দিবার দিকে তাকালো,দিবা পর্দা মুঠো করে ধরে ওদের দেখছিলো
আহনাফ বললো”দাঁড়িয়ে দেখো কি??যাও চা বানিয়ে আনো,চিনি এক চামচ দিবা,বেশি দিবা না,ঠিক আছে দিবা?”
.
দিবা মুখ বাঁকিয়ে চলে গেলো রান্নাঘরে,মা আহনাফকে একটা খোঁচা দিয়ে ফিসফিস করে বললেন”কিরে?দিবার জন্য কিছু আনিস নাই নাকি?এটা কিন্তু ঠিক করিস নি,,ও আমাদের পরিবারের সদস্য,অন্তত খালাতো বোন হিসেবেও তো আনতে পারতি”
.
জানি,এনেছিও,,চা আনুক,তারপর দেবো
.
দেখি আমাকে দেখা,,কি এনেছিস
.
আহনাফ পার্পল কালারের প্যাকেটটা মায়ের হাতে ধরিয়ে দিলো তারপর বললো”ওকে দিয়েই খুলাইও,তোমার ছেলে তো আমি,খারাপ কিছু আনি নাই,আমার পছন্দ জোস”
.
সেটা জানি,কিন্তু তুই তো মাইয়াটার সাথে সারাদিন ধমক দিয়েই কথা বলস তাই ভাবলাম শয়তানি করে কি না কি এনেছিস,তা এ ছোট ব্যাগটায় ওটা কি?
.
আহনাফ ছোট ব্যাগটা হাতে নিয়ে মুচকি হেসে দিবার রুমপর দরজার নিচে তাকালো,মিনি লুকিয়ে ওদের দেখছিলো
মা মিনির দিকে চেয়ে হেসে বললেন”ওর জন্য ও এনেছিস নাকি?”
.
একটা লাল রঙের বেল্ট এনেছি,ওর মাথায় বেঁধে দিলে একদম মেয়ে বিড়ালের মতন লাগবে,হাহা
.
তুই না!!দিবা জানলে রাগ করবে,ছেলে বেড়ালকে কেউ এসব পড়ায়?
.
আরে দেখো খুব সুন্দর লাগবে,তাছাড়া ওর জন্য ক্যাটফুড ও এনেছি
.
আরিফ আহনাফের পাশে বসে ইয়া বড় হা করে বললো”তুমি না মিনিকে দেখতে পারো না?ওর পশমে তোমার এলার্জি??তাহলে এতসব কেন?”
.
বিড়াল হলো পবিত্র প্রাণী,,আমার এলার্জি বলে দেখতে পারি না আর মিনি একটু চিপকু টাইপের,তবে দিবার সাথে সাথে সেও আমাদের বাসার একজন সদস্য হয়ে গেছে,তার ও তো গিফট প্রাপ্য
.
তা ঠিক,মিনি এদিকে আয় তো ভাই আমার
.
মিনি এসে হাজির,,মাথা তুলে তার জন্য আনা গিফটার রঙিন মোড়ক দেখছে সে

দিবা চা ঢালার সময় টের পেলো তার পায়ের কাছে নরম নরম স্পর্শ,তার মানে নিশ্চয় মিনি এসেছে
মুচকি হেসে দিবা নিচে তাকাতেই দেখলো মিনির মাথায় লাল বেল্ট
দিবার চোখ কপালে,মিনিকে মেয়ে সাজ দিলো কে??
.
সোফার রুম থেকে হো হো করে হাসির আওয়াজ ভেসে আসছে
দিবা তো রেগে মেগে চায়ের ট্রে নিয়ে এসে বললো”আমার মিনিকে সং সাজালো কে?”
.
খালামণি চায়ের কাপ হাতে নিয়ে বললেন”আরে না কিসের সং,কি সুন্দর লাগছে ওরে,তাই তো তোরে দেখাতে গেলো রান্নাঘরে”
.
দিবা আবার মিনির দিকে তাকালো,মিনি স্টাইল করে হাঁটছে,তার মনে হয় এটা অনেক পছন্দ হয়েছে
.
দিবা চায়ের কাপটা আহনাফের দিকে বাড়িয়ে ধরলো,আহনাফ ও দিবার জন্য আনা প্যাকেটটা বাড়িয়ে ধরে বললো”আনতাম না তোমার জন্য,মা অনেক রিকুয়েস্ট করায় আনছি”
.
দিবা প্যাকেটটা হাতে নিতেই খালামণি আগ্রহ নিয়ে বললেন এখন খুলতে,দিবা তাই করলো
একটা লাল সাদা রঙের থ্রি পিস,,সবই ঠিকঠাক তবে ওড়না দেখে দিবার মাথা হ্যাং হয়ে গেছে
মোটা কাপড়ের ওড়না এবং ইয়া বড়
খালামণি ওড়নাটা ধরে আহনাফের দিকে তাকিয়ে বললেন”হ্যাঁ রে আহনাফ,এটা কি কিনলি দিবার জন্য?এগুলো তো বয়স্ক রা পড়ে,যেমন আমি পড়ি এই টাইপ ওড়না,,দিবার মতন জোয়ান মেয়েকে তুই এটা কি কিনে দিলি?”
.
যা করেছি ইচ্ছে করে করেছি এবং ঠিক করেছি,কারণ দিবার পর্দা করায় ঘাটতি আছে,ওর ওড়না গুলো দেখলে আমার গা জ্বালা করে,,
এই টাইপ ওড়না পরলে ওর পর্দা করা ভালো হবে সাথে সুন্দর ও লাগবে
.
দিবা ব্রু কু্ঁচকে ওড়নাটা নিয়ে মেললো,যেন এক কিলোমিটার হবে ওড়নাটা,,আহনাফ দাঁত কেলিয়ে বললো”তাতে যদি চাচি জেঠির মতন লাগে তো লাগুক,,তাও ভালো তাই না মা?”
.
কচু!!এগুলো কেউ জোয়ান মেয়েদের দেয়?আর দিবা তো এসব ওড়না পরে না
.
পরে না তো পরবে,,আমার বাসায় থাকতে হলে যথাযথ পর্দা করতে হবে
.
দিবা ওড়নাটা সোফায় রেখে দিয়ে বললো”আমি আপনার বউ না,,নিজের বউকে এরকম পর্দায় রাখিয়েন,,আমি যেমন আছি তেমনই থাকবো”
.
আহনাফ যেন কথাটা শুনলোই না,চা খেয়ে উঠে চলে গেলো নিজের রুমে
খালামণি দিবার পিঠে হাত দিয়ে বললেন”থাক মা,কি আর করবি,,আমার ছেলেটা এমনই,,এই ওড়নাটা মোটা হলেও অনেক সুন্দর,,তোকে বেশ লাগবে,আর নয়ত রেখে দিস,,আমি তোকে একটা জর্জেটের লাল ওড়না কিনে দেবো”
.
আহনাফ রুমে ফেরত এসে বাসার জামা হাতে নিয়ে গেলো ফ্রেশ হতে
সবার জন্য কেনা হলেও তার জন্য কেনা হয়নি,,পকেটে টাকা আছে এক হাজার,,ওগুলো যাতায়াত খরচ,বাইকের তেলের খরচ,,এ মাসের বেতন এক তারিখে পেলেও সব বিল,ঔষুধ,মাসকাবারি কিনতেই শেষ,নিজের জন্য এ এক হাজার টাকার পাঞ্জাবি কিনলে বাইক নিয়ে যাওয়া তো দূরে থাক রিকশা নেওয়ার ও সুযোগ পাবো না
বাকিদের বুঝতে দেওয়া যাবে না,,কাল সকাল সকাল অফিসের কথা বলে বেরিয়ে পড়বো,মা যদি জিজ্ঞেস করে তাহলে বলবো চাকরির থেকে সময় পাই না আমার আবার কিসের শপিং,কিসের বৈশাখ,,
.
আমার জন্য তো কিনতে পারতাম কিন্তু দিবার জন্য কেনায় আর পকেটে টাকা রইলো না
এ মাসে খরচ একটু বেশি হয়ে গেলো,,দিবার বই খাতা,,জামা কাপড়,আমি চাই না এগুলো দিবার কানে যাক কিংবা মায়ের কানে,,গিফট দিয়ে খুশি করিয়ে এসব বিষাদ কথা শুনিয়ে আবার মন খারাপ করার মতন লোক আহনাফ না,বরং সত্যটাকে খুব সুন্দর করে গুছিয়ে রাখতে জানি আমি,কাল সকালে উঠে তাই করবো
চলবে♥