সবটা অন্যরকম পর্ব-১৭

0
4841

সবটা অন্যরকম♥
#পর্ব_১৭
Writer-Afnan Lara
.
খুলনা আর ঢাকার মাঝে আকাশপাতাল তফাৎ,,দিবা বাসে বসে বারবার চোখ ঘুরিয়ে ঢাকার শহরটা ভালোমতন দেখছে,,মতিঝিল দিয়ে যাচ্ছিলো বাসটা,,খালামণি দিবার এমন আগ্রহ দেখে বললেন একদিন ওকে নিয়ে ঘুরতে বের হবেন,,মিনি দিবার কোলে থেকে কিছু দেখছে না বলে দিবা ওকে উঁচু করে ধরে রেখেছে,, এখন সেও দেখছে জানালা দিয়ে
দিবার গায়ে সেই জামাটা যেটা আহনাফ ওকে কিনে দিয়েছিলো,,খালামণি বোরকা পরেছেন,,তার ননদের বাসায় গিয়ে খুলে ফেলবেন,,খালামণি দিবার সাথে বসেছে আর আরিফ বাবার সাথে সামনের সিটে,,আহনাফ বাসায় এখনও,,সন্ধ্যায় তার অফিসে যাবে সে

ফুফুর বাসায় পৌঁছাতে এক ঘন্টাই লাগলো বরাবর,,এদিকটা আহনাফদের কলোনির মতন না একটু সাদামাটা টাইপের দালান সব,,বহুতল না,,সব চারতলা পাঁচতলার,,দিবা চারিদিকটা দেখে দেখে হাঁটছে,জায়গা সব তার কাছে নতুন,,
খালু কমলা আর আপেল দুই কেজি করে কিনেছেন কাছের একটা দোকান থেকে,,সামনের গলিটা ক্রস করলেই নাকি ফুফুর বাসা,,তিনতলার একটা বাসা,,তারা থাকেন একেবারে তিন তলায়,,তিন তলায় উঠে খালামণি হাঁপিয়ে গেলেন,লিফট নেই দালানটায়,,তিন তলার বিল্ডিং এ আবার কিসের দালান বিষয়টা হাস্যকর হতো!
.
কলিংবেলে চাপ দেওয়ার দশ সেকেন্ডের মাঝেই এসে দরজা খুললো মণিতা,,মণিতা হলো আদনানের ছোট বোন,,তবে বেশি ছোট না,,আরিফের বয়সী
.
মণিতা সালাম দিয়ে হাসিমাখা মুখে বললো”ঠিক সময়ে এসেছো,মাত্র চা বসিয়েছি আমি”
.
সালাম নিয়ে খালামণি আর খালু ভিতরে গেলেন,,আরিফের পরে দিবা পা রাখলো বাসার ভেতর,,কোলে তার মিনি
তাদের দুজনের দিকে বাসার সবাই চেয়ে রইলো,,সোফাতে বসে ছিলেন দিদুন আর ফুফু,,ওপাশে মণিতা দাঁড়িয়ে ছিলো,কেউই দিবাকে চিনলো না
দিবা সালাম দিয়ে চুপ করে থাকলো,,তারা সালাম নিয়েই খালামণির দিকে তাকালেন,খালামণি বোরকা খুলতে খুলতে সোফায় বসে মণিতার দিকে তাকিয়ে বললেন”মণি মা চা খাওয়ানোর আগে ঠাণ্ডা পানি খাওয়া,গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে,যা জ্যাম ছিলো!!”
.
মণিতা মাথা নাড়িয়ে চলে গেলো ফ্রিজের কাছে,,আরিফ দিবার হাত ধরে সোফায় বসিয়ে দিয়ে নিজেও ওর পাশে বসলো
দিদুন আর ফুফু খালামণির দিকে তাকিয়ে আছেন উত্তরের আশায়
খালামণি পানি খেয়ে হেসে বললেন”ও হলো দিবা,,আমার ছোট বোন মৌসুমীর বড় মেয়ে”
.
দিদুন ব্রু কুঁচকে বললেন”ইতি না??বড় মেয়ে মানে কি?,তোমার ছোট বোনের তো জানতাম একটাই মেয়ে”
.
না আরেকটাও আছে,,দিবা
.
কি বলো!!তাহলে এতদিন জানলাম না কেন
আমরা তো জানি একটা মেয়ে আর একটা ছেলে,ইভান যে কিনা জসিমের আগের ঘরের,,আর এই ঘরের একটা মেয়ে ইতি,তাহলে দিবা আসলো কই থেকে?
.
খালামণির গলা আবারও শুকিয়ে গেছে,,ঢোক গিলে কিছুক্ষণ চুপ করে রইলেন তিনি,,আরেক গ্লাস পানি চাওয়া যাবে না,চাইলেই সন্দেহ করবে
.
কি হলো মৌ ভাবী??কিছু বলছো না যে,আমার ও তো একই প্রশ্ন,,আমরা তো সবাই জানি মৌসুমীর একটাই মেয়ে আর সে হলো ইতি
.
আহনাফের বাবা এতক্ষণ চুপ করে ছিলেন,,আহনাফের মাকে এভাবে পেরেশান হতে দেখে এবার তিনি মুখ খুললেন,,এরা সেই আপন মানুষ যাদের থেকে সত্যিটা লুকানো যাবে না,,তাই বলে দেওয়াই শ্রেয় মনে করলেন
.
মা দিবা হলো মৌসুমীর আর সাদাতের মেয়ে,,সাদাত হলো মৌসুমীর প্রাক্তন,যে কিনা ওকে ধোকা দিয়ে বিয়েটা করেনি শেষে
এরপর ওর জসিমের সাথে বিয়ে হয়,তবে দিবা সাদাতেরই মেয়ে,ওর রক্ত
.
দিদুন মুখে শাড়ীর আঁচল চেপে ধরলেন,,তারপর আদনানের মায়ের দিকে তাকালেন,,সবাই চুপ!!
এরপর দিদুন বললেন”এবার বুঝলাম,,তো এতদিন ওর পরিচয় ঢেকে ছিলো কেন?আর আজ কেন প্রকাশ হলো?”
.
খালু কিছু বলার আগেই দিবা বললো”কারণ আমার আর ওখানে থাকা ঠিক হতো না,,আমার কারণে আমার বোনের বিয়ে ভেঙ্গে যাচ্ছিলো একের পর এক,,তাছাড়া আমার পরিচয় হিসেবে মা সবাইকে কি বলতো?আমার বাবা তো জসিম আব্বু নাহ,,আমার চেহারা তো তার মতন না,আমার চেহারা তো আমার বাবার মতন
আমার তো ঐ পরিবারে থাকাই উচিত ছিলো না তাও তো ছিলাম এতটাদিন,,কিন্তু এরপর থাকা অনুচিত ছিলো বলেই আমি এখন খালামণির বাসায় চলে এসেছি,,”
.
কথাটা বলে দিবা মুখটা নিচু করে ফেললো
দিদুন দিবার দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে ছিলেন তারপর নিজের জায়গা থেকে উঠে এসে দিবার পাশে বসলেন উনি
ওর মাথায় হাত রেখে বললেন”এমন ও বুঝি কারোর দূর্ভাগ্য হয় জানতাম না,,নিয়তি কতটা কঠিন হতে পারে তার জলজ্যান্ত প্রমাণ তুমি নিজেই,,তবে ওসব ভেবে মন খারাপ করো না,,আল্লাহ কাউকেই খালি হাতে ফিরিয়ে দেন না,হয়ত তেমার সৌভাগ্য এখানেই লিখা আছে,সারাজীবন একটা মানুষ কষ্ট পায় না,দেখবা তোমার জীবনেও আলো আসবে,ধৈয্য ধরো”
.
দিবা দিদুনকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো,অনেক চেষ্টা করেও আজ কান্নাকে কাবু করতে পারেনি সে,,বুকে দমিয়ে রাখা এতদিনের কষ্ট আজ বেরিয়ে আসলো তার ভেতর থেকে,এত আঘাত আজ বৃষ্টির মতন ঝরে পড়ছে ওর দুচোখ বেয়ে
হাসিখুশিতে মাখা ড্রয়িংরুমটা নিস্তব্ধতায় ভরে গেছে এখন,,দিবার কান্নায় মণিতা দূরে দাঁড়িয়ে কেঁদে ফেলেছে,এতদিন তার নিজের জীবন নিয়ে কত অভিযোগ ছিলো আর আজ নিজেকে দিবার জায়গায় দাঁড় করিয়ে ওর মনে হচ্ছে ওর জীবনটাই ভালো,,অন্তত দিবার মতন না,দিবার মতন হলে কি করে সে সামলাতো??এত কঠিন জীবন হয়ত সে ম্যানেজ করতে না পেরে মরেই যেতো
.
আদনান নিজের রুমে ফোন টিপছিলো শুয়ে শুয়ে,কান্নার আওয়াজ পেয়ে রুম থেকে বের হতেই দেখলো দিবাকে,,দিবার ভেজা চোখ দেখে ওর মুখের কথাই হাওয়া হয়ে গেছে,দিবা চোখ খুলে আবারও বন্ধ করে ফেলছে,কান্নাকে আটকানোর সব চেষ্টা করেও আজ সে ব্যর্থ হচ্ছে বারবার,,দিদুন ওর পিঠে হাত বুলিয়ে ওকে থামতে বলছেন শুধু,শেষে খালামণি এসে দিবাকে সামলালেন,,দিবা নিজেকে ঠিক করে বললো”আমি আসতেছি,”
.
আসতেছি বলেই সে বাসা থেকে বেরিয়ে কয়েকটা সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামলো,একটু দূরে,যেখানে চোখমুখ মুছে নিজেকে সে আগলাতে পারবে
মিনি ও পিছু পিছু চলে এসেছে,,দিবা কান্না করলে সে দিবার ওড়না মুখে পুরে বসে থাকে,এখনও তাই,দিবার ওড়না মুখে পুরে সে চুপ করে দিবার কান্না দেখছে
দিবা সিঁড়িতে বসে আছে এখন,,ওড়না দিয়ে মুখটা মুছতে মুছতে সে বললো”মিনি আমি পারলাম না নিজের চোখের পানি আটকাতে,,কি দরকার ছিল কাঁদার,দেখলি এখন সবাই কি ভাবছে,,শুধু কেঁদে সবাইকে কষ্ট কেন দিলাম বল,আমি তো কান্না থামাতে জানি তাহলে কেন আজ থামাতে পারলাম না
আর তুই ওড়না মুখে পুরে আছিস কেন,তোর ও কি কান্না থামিয়ে রেখেছিস?
.
চা রেডি চা রেডি,যে দেরি করবে সে চা পাবে ঠিক কিন্তু ঠাণ্ডা পাবে!!!
গরম চা পেতে হলে এখনই আসতে হবে!!
.
বাসার ভেতর থেকে আদনানের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে,মিনি এমন চেঁচামেচি শুনে ছুটে গেলো দেখতে,সবার হাতে হাতে চা,,আদনান নিজের চায়ের কাপটা নিয়ে দরজার দিকে তাকিয়ে আছে দিবার অপেক্ষায়,মিনি চা দেখে আবারও ফেরত চলে এলো দিবার কাছে,চা কি জিনিস সে খেয়ে দেখে নাই তবে একবার ঠাণ্ডা চায়ের কাপ থেকে গন্ধ সুঁকে ছিলো,,কেমন একটা টেস্ট আন্দাজ করে আর মুখে দেয়নি সে
দিবা চোখ মুছে উঠে আসলো,,বাসায় ঢুকতেই মণিতা ওর হাতে চায়ের কাপ আর দুটো বিসকুট ধরিয়ে দিয়ে নিজের রুমের দিকে নিয়ে গেলো
.
আসো আমরা গল্প করি,,কিসে পড়ো তুমি আপু?
.
অনার্স প্রথম বর্ষ
.
ও,,আমি অনার্স ফাইনাল দেবো,,আরিফের সাথে
.
অনার্স ফাইনাল??খালামণি যে বললো আপনি আরিফ ভাইয়ার বয়সী,,
.
ঠিকই তো বলেছে,,আমি আর আরিফ তো সেম এইজ,,এক মাসের তফাৎ খালি
.
তাহলে আহনাফ ভাইয়া..
.
আহনাফ ভাইয়া তো মাস্টার্স পড়তেছে,কেন জানো না তুমি?
.
দিবার মনে পড়লো মিসেস রহমান ও এমন একটা কিছু বলেছিলো,তার মানে লোকটা এত বড়!বিয়ে করে না ক্যান তাইলে?
.
কি ভাবো?আমার আদনান ভাইয়া কিন্তু মাস্টার্স পাশ করে এখন জব করছে,তবে তাদের বয়সের তফাৎ তেমন একটা না
চা কেমন হলো সেটা বলো আগে,আর এটা তোমার বিড়াল বুঝি!কি কিউট,গায়ে সোনালী রঙের ছোপ ছোপ দাগ,এমন বিড়াল আমার খুব পছন্দ,,বয়স কি কম নাকি?এত গলুগলু লাগছে,নাম কি ওর?
.
মিনি
.
বাহ!মিনি,,বিসকুট খাবে?
.
মিনি পুতুলের মতন বসে আছে দিবার পাশে,মণিতার কথার এক ওয়ার্ড ও সে বুঝছে না,মণিতা বিসকুট একটা মিনির সামনে রাখলো
দিবা বললো এই বিসকিট মিনি খাবে না,কারণ বিসকিটে চিনির ছিঁটা দেওয়া ছিলো,চিনি হলো মিনির শত্রু
মিনি একটু সরে বসলো তাই,,মণিতা বললো “তাহলে মাংসের হাঁড় বাড়িয়ে দেবো ওকে ডিনারে”
.
দিবা মাথা নাড়িয়ে দেখলো ওপাশে সাত -আট বছর বয়সী হবে এমন একটা ছেলে পর্দার আড়ালে থেকে ওদের দিকেই চেয়ে আছে
দিবার তাকানো দেখে মণিতাও তাকালো তারপর হেসে বললো”ও হচ্ছে আনাফ,,আমার ছোট ভাই,,আনাফ এদিকে আয়”
.
না আসবো না
.
কেন আসবি না,আয় কইতাছি!
.
ঐ বিড়াল যদি আমাকে কামড় দেয়?
.
দিবা মিনির মাথায় হাত বুলিয়ে বললো”না ও কামড়ায় না”
.
না আমাকে ঠিক কামড়াবে,আমি যাব না ওখানে
.
মিনি বুঝেছে আনাফ ওকে ভয় পাচ্ছে,আহনাফ যেহেতু এখানে নেই সেহেতু আপাতত একে জ্বালানো যাক,এই ভেবে মিনি বিছানা থেকে লাফ দিয়ে নামলো নিচে
আনাফ সেটা দেখে চেঁচিয়ে দৌড়ে পালালো,মিনির খুব মজা লাগছে,তাই সেও পিছু পিছু গেলো
আনাফ ভয়ে কাঁদতে কাঁদতে নাকের পানি চোখের পানি এক করে ফেলেছে,মিনি মজা পেয়ে ওকে পুরো বাসায় দৌড়ানি দিচ্ছে
আনাফ একবার সোফায় একবার বিছানায় উঠে বানরের মতন লাফাচ্ছে,মিনি দাঁত বের করে ওকে সব জায়গায় দৌড়ানি দিতেছে অনবরত,থামাথামি নাই
শেষে দিবা ছুটে এসে মিনিকে কোলে তুলে নিলো
আনাফ হাঁপাতে হাঁপাতে ফ্লোরে বসে পড়েছে
দিবা হালকা হেসে বললো”ও আসলে যখন জানে কেউ ওকে ভয় পাচ্ছে তখন তাকে ভয় দেখাতে ওর ভাল্লাগে”
.
আরিফ হাসতে হাসতে বললো”সব চাইতে বেশি ভয় দেখায় আহনাফ ভাইয়াকে
সারাদিন আহনাফ ভাইয়ার পিছনে লেগে থাকে ও”
.
আদনান চায়ের কাপ টেবিলে রেখে এগিয়ে এসে বললো”আহনাফের তো এলার্জি না?”
.
সেটাই তো,সেই কারণেই ভাইয়া দূরে দূরে থাকে,কিন্তু মিনিও কম না,সেও পিছু ছাড়ে না
.
তাহলে তো তোদের বাসা এখন গরম থাকে সারাক্ষণ, মিনি আর ও মিলে সারাদিন বাসা মাতিয়ে রাখে
.
ওর নাম দিবা,পরিচিত হয়েছো?
.
হুম,,আদনান হুম বলে দিবার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে নিজের রুমে চলে গেলো
দিবা মিনিকে বকতে বকতে খালামণির পাশে এসে বসেছে

আহনাফ গালে হাত দিয়ে বারের রিসিপশানে বসে আছে,নাহিদ মুখে হাত দিয়ে ওর সামনে এসে বললো”কিরে??আজ তোর কি হয়েছে?কালো পোশাক কই তোর??আজ দেখি বাঙালী লুক নিয়ে বারে আসছোস!”
.
এখান থেকে সোজা ফুফুর বাসায় যাব তাই পোশাক বদলাইনি
.
মিশকা আজ তোরে দেখে কাইত হয়ে যাবে সিউর,ঐদিন অনেক চেঁচামেচি করছে তুই চলে যাওয়ায়
.
আজ আবার আসবে নাকি?
.
নির্ঘাত এসে গেছেও,তোর প্রেমে পড়েছে এবার এই বার হবে তার ডেইলি রুটিন
.
জীবনটা বেদনার,প্লিস তুই লাইন মার না ওর সাথে,আমাকে বাঁচা
.
আমি চাই ও আমার প্রেমে পড়ুক কিন্তু কি করবো বল সে তো তোর থেকে চোখ ফেরায় না
.
নাহিদ কথা শেষ করতে না করতেই দেখলো মিশকা এসে হাজির
জর্জেটের লাল টুকটুকে শাড়ী পরেছে সে,চুল খোলা,শাড়ীটা এই বুঝি পড়ে যাবে,হাতা কাটা ব্লাউজ,,শাড়ীটা পরার স্টাইল দেখে যে কেউ বলবে না পরলেই হতো,,এদিকেই আসছে সে,নাহিদ ওর এমন লুক দেখে দাঁড়ানো থেকে পড়েই যাচ্ছিলো কোনোমতে নিজেকে সামলে বললো”নাফি রে সামনে দেখ”
.
আহনাফ সামনে তাকাতেই মিশকা দেখে বললো”আস্তাগফেরুল্লাহ”
চলবে♥