সবটা অন্যরকম পর্ব-২৩+২৪

0
4102

সবটা অন্যরকম♥
#পর্ব_২৩
Writer-Afnan Lara
.
কিরে আহনাফ,,আজ আসতে এত দেরি করলি?
.
আদনানের সাথে মনুর বিয়ের সব এরেঞ্জমেন্টে হেল্প করছিলাম তাই দেরি হলো,এখন জলদি জলদি ভাত দাও,খেয়ে একটু ঘুমিয়ে আবার অফিস যাব আমি
.
আমি টেবিলে আনছি,তুই গোসল করতে যা
.
আহনাফ গায়ের জ্যাকেটটা খুলে বিছানার উপর রেখে গেলো গোসল করতে
দিবা সবেমাত্র গোসল সেরে বেরিয়েছে,গায়ের আকাশী রঙের জামাটা পাল্টে একটা কমলা রঙের থ্রি পিস পরেছে সে এখন,এই জামাটা তিন বছর আগে মা ওকে কাটা পিস কিনে দিয়েছিলো তারপর টেইলার দিয়ে সেলাই করে সে পরা শুরু করলো,,তিনবছরেও জামাটা কত ভালো,,জামাটা পরলে আরাম লাগে,এই গরমে জামাটা বেস্ট তা বলা চলে
চুলগুলো থেকে ভেজা গামছা সরিয়ে দিবা বারান্দায় এসে দাঁড়ালো,,চুল গুলোতে হাত বুলিয়ে নিজের আনা ফুলগাছ গুলোর দিকে আনমনে চেয়ে রইলো দিবা
তারপর কি মনে করে চুল দিয়ে গাছগুলোতে পানির ছিঁটা দিয়ে নিজেই হেসে ফেললো
গলায় গানের সুর এসে গেলো,,গুনগুন করে একটা গান গাইতে শুরু করলো সে হঠাৎ করে
.
আমি কি দেখেছি হায়
একলা পথে দাঁড়িয়ে
সে ছিল দূরে দূরে তাকিয়ে
আহারে, আহারে
কোথায় পাবো তাহারে
যে ছিল মনেরও গহীন কোণে

আকাশে, বাতাসে বসন্ত সুবাসে
কোকিলের কুহু ডাকে তারি ছোঁয়া
অলিতে, গলিতে ঘরেতে বাহিরে
যেথা যাই ডাকে মোরে তারি ছায়া….
.
গামছা দিয়ে চুলে এক ঝাড়া দিতেই দিবা খেয়াল করলো হালকা আওয়াজ আসলো পাশ থেকে
চুলগুলোকে পিঠের উপর দিয়ে দিবা পাশে তাকালো
সেখানে আহনাফ দাঁড়িয়ে চোখ মুছতে মুছতে বললো”গান গাইতেছিলা ভালো কথা এমন করে চুল ঝাড়লে কেন?আমার চোখ গেলো”
.
আমি কি জানি আপনি দর্শক হয়ে আমার গান শুনছিলেন এতক্ষণ
.
দিবা মুখ বাঁকিয়ে একটা গাঁদা ফুল ছিঁড়ে কানে গুজে চলে গেলো
আহনাফ ফুলগাছগুলোকে একবার দেখে নিজেও গেলো খাবার খেতে,দিবা এপারে চেয়ার টেনে বাসে নিজের খাবার সাবাড় করে যাচ্ছে,আহনাফ ওর বরাবর ঐ পাশে বসে প্লেটটা নিজের দিকে টেনে দিবার দিকে তাকালো আবারও
দিবার জামার সাথে গাঁদা ফুলটা বেশ মানিয়েছে
ওর ভেজা চুল বেয়ে পানি পড়ছে টেবিল ক্লথের উপর,,চুল লম্বা তবে যেগুলো ছোট ওগুলো থেকে পানি টপটপ করে পড়ে টেবিলে এসে জমছে কারণ দিবা টেবিলের সাথে লেগে বসেছে
আহনাফ মুগ্ধ হয়ে চুল থেকে পানি পড়ার দৃশ্যটা দেখছিলো
হঠাৎ মা ডালের বাটি ওদের দুজনের সামনে রাখতেই ও চোখটা সরিয়ে নিলো
মা বললো তার ঘুম আসছে অনেক, ওরা যেন যা যা লাগে তা নিয়ে নিয়ে খায় এটা বলে মা চলে গেলেন
আহনাফ খাবার মুখে দিয়ে আবারও দিবার দিকে তাকালো
দিবা ভেজা চুলগুলোকে বারবার কানপর পিছনে দিচ্ছে আর বারবার সেগুলো মুখের সামনে চলে আসছে
আহনাফ খেতেই পারছে না আজ,,হুট করে এক ধমক দিয়ে দিলো সে দিবাকে
দিবা চমকে বললো”কি হলো?”
.
চুল নিয়ে এমন করো কেন??জানো না আমার বুকের ভেতর ধুক করে ওঠে
.
দিবা বোকার মতন এক মিনিট তাকিয়ে রইলো তারপর বরবটি এক পিস মুখে পুরে বললো”আপনার কাঁধে হাত রাখলে আপনার বুকের ভেতর ধুক করে উঠে এতদিন সেটা জানতাম আবার এখন আমার ভেজা চুল দেখে আপনার বুকের ভেতর ধুক করে ওঠে?আর কিছু বাকি আছে?”
.
চুল বাঁধো বলছি
.
ভেজা চুল বাঁধলে আমার মাথা ব্যাথা করে,চুল ছাড়াই ভালো,আপনাকে কে বলে তাকাতে?
নিজের খাওয়াতে মন দিন না
.
আমার সামনে বসে এভাবে হাত দিয়ে চুল নড়াচড়া করলে আমার সমস্যা হয়
.
দিবার মনে পড়লো আহনাফের ডিলের কথা,সে প্লেটটা নিয়ে উঠে নিজের রুমে চলে আসলো একেবারে,,তারপর বুকে হাত দিয়ে বললো”খুব বাঁচা বেঁচেছি, উনার ডিলের কথা মনে নেই”
.
আহনাফ খাবারটা শেষ করে হাতের পিঠ দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে নিজের রুমে আসলো,,তারপর নিজের ভার্সিটির ব্যাগটা বিছানা থেকে সরিয়ে টেবিলে রাখতে গিয়ে কানে আসলো খসখস আওয়াজ
তাই আওয়াজটার সন্ধান পেতে ব্যাগে হাত ঢুকাতেই একটা ডেইরি মিল্ক পেলো সে,মনে পড়লো আদনান দিবার জন্য কিনে দিয়েছে,আনাফের জন্য চকলেট কিনার সময় দিবার জন্য ও নিয়েছে সে
দিবাকে আনাফের মতই ছোট মনে হয় ওর
.
আহনাফ চকলেটটা এপিঠ ওপিঠ করে দেখে এগিয়ে গেলো দিবার রুমের দিকে
দিবা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ঘুরে ঘুরে পিঠ দেখার চেষ্টা করছে যে কোথায় ছিঁড়েছে,নিচু হয়ে ফ্লোর থেকে চুড়ি নিতে গিয়ে ক্যাত করে শব্দ হলো
মনে হয় জামা ছিঁড়েছে কিন্তু কোন দিক দিয়ে ছিঁড়েছে সেটাই বুঝা যাচ্ছে না
.
আসবো?
.
আহনাফের কথা শুনে দিবা আয়নার সাথে লেগে দাঁড়িয়ে পড়লো পিঠ ঢেকে
.
এরকম ভূত দেখর মতন এক্সপ্রেশন দিচ্ছো কেন?আমি জাস্ট এই চকলেটটা দিতে এলাম যেটা আদনান তোমার জন্য পাঠিয়েছে,নাও ধরো
.
আআআআআপনি ওটা বিছানায় রেখে যান
.
কেন?আর তুমি ওমন করে দাঁড়িয়ে আছো কেন?
.
না মানে কিছু না,আপনি যান
.
মিনি বিছানায় বসে ছিলো,, দুপ করে ফ্লোরে নেমে সে দিবার কাছে ছুটে গেলো,,দিবা ওর দিকে তাকিয়ে ভাবছে না জানি কোনো কান্ড ঘটায়,,কিছুতেই সরা যাবে না এখান থেকে,,
ছেঁড়া জায়গাটা যদি দেখে ফেলে উনি,লজ্জাজনক হবে ব্যাপারটা
.
আহনাফ ভ্রু কুঁচকে চকলেটটা বিছানায় রাখলো তারপর মিনির দিকে তাকিয়ে যেতে যেতে বললো”কাঁধের তিলটা দেখাতে পিঠ ঢেকে রেখেছিলে?”
.
দিবা চোখ বড় করে কাঁধের দিকে তাকালো,জামা পিঠে নয় বরং এই জায়গা দিয়েই ছিঁড়ে ছিলো
দিবা ওড়না সেদিকে টেনে মুখে হাত দিয়ে ফেললো,আহনাফ মুচকি হেসে চলে যাচ্ছে
মিনি এক পা এক পা করে সেদিকে গেলো,অনেকদিন হলো আহনাফকে ডিস্টার্ব করা হয় না
.
দিবা কপালে দুম করে চড় মেরে বললো”দিবা তুই এত উজবুক কেন রে??জামা ছিঁড়েছে তোর কাঁধ থেকে আর তুই কিনা তখন থেকে পিঠ ঢেকে যাচ্ছিলি,ইস আমার মান সম্মান আর রইলো না,এখন উনি ভাববে আমি ইচ্ছে করে সমসময় এমন করি,আসলেই এখন থেকে ওড়না পেঁচিয়েই পরতে হবে যা দেখলাম,এভাবে এক পাশে রাখলে উনিও রেগে যান আর আজ তো একেবারে লিমিট ক্রস ইজ্জতের ফালুদা হয়ে গেলো আমার”
.
আহনাফ বিছানায় এসে লম্বা হয়ে শুয়ে পড়েছে,,শুয়ে শুয়ে বারান্দার পর্দাটার দিকে তাকিয়ে রইলো সে
বাতাসে বার বার নড়ছে পর্দাটা,,দেখতে দেখতে ও খেয়াল করলো পর্দাটার কিনারা দিয়ে ফুলে আছে,,মনে হচ্ছে পর্দার নিচে কিছু একটা আছে
বিছানা থেকে নেমে আহনাফ পর্দাটা সরালো,মিনি লুকানোর অনেক চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়ে গেলো
ভেবেছিলে পর্দার পেছনে লুকালে আহনাফ ওকে দেখবে না খুঁজেও পাবে না
কিন্তু কি করে আহনাফ টের পেয়ে গেলো
.
আহনাফ কোমড়ে হাত দিয়ে বললো”নিজেকে চালাক মনে করো তুমি??তোমার ঐ মোটকা গলু গলু দেহ নিয়ে তুমি পর্দার পিছনে লুকাবা আর পর্দা ওমনি মিহিন হয়ে থাকবে?
আমি তো ভাবলাম পর্দার নিচে না জানি বাঘ না ভাল্লুক,এখন দেখি আমাদের বাসার সেই আজাইরা বিড়ালটা
ধরে বারান্দা দিয়ে ফালাই দিবো আর একদিন আমার রুমে আসলে,হাইচ্ছু!!দিবা!!ওরে নিয়ে যাও!
.
দিবা জামা পাল্টাচ্ছিলো,,তাই আহনাফের ডাকে আসলো না সে
.
আহনাফ যখন দেখলো দিবা আসছে না তখন সে মিনিকে বললো”যাও আমার রুম থেকে বের হও,কথা কানে যায় না??
নাকি তোমার বইনের কথাই বুঝো খালি,আমার কথা বুঝো না?”
.
মিনি বোকার মতন বসে আছে পর্দার পাশে
আহনাফ রুম থেকে বেরিয়ে দিবার রুমে যেতে গিয়ে দেখলো দরজা লক করা ভেতর থেকে
আজব তো! দরজা লক করলো ক্যান,,দিবা দরজা খুলো
.
আমি চেঞ্জ করছি,কি দরকার?
.
তোমার ঐ আজাইরা বিড়াল ছাড়া তোমার থেকে আমার আবার কি দরকার হবে?
ও আবার আমার রুমে এসে জুটেছে,ওরে নিয়ে যাও,আমি ঘুমাবো এখন
.
দিবা জামাটা চেঞ্জ করে ওড়না পরে বের হলো রুম থেকে,আহনাফ চলে গেলো ওকে দেখে
দিবা আহনাফের পিছু পিছু গেলো ওর রুমে,,দুজনে রুমে এসে অবাক,মিনি নেই সেখানে
.
একি গেলো কই
.
হয়ত রুম থেকে বেরিয়ে গেছে
.
হাইচ্ছু!!না না ও যায়নি,,ও এখানেই আছে,হাইচ্ছু!
.
দিবা চুল বাঁধতে বাঁধতে এদিক ওদিক খুঁজতে লাগলো মিনিকে
আহনাফ নাক মুছে খাটের তলায় চেক করতে গিয়ে ওর চোখ গেলো আলমারির দিকে,,আলমারির উপর মিনির লেজ ঝুলছে
.
ইয়া আল্লাহ!!!
দিবা তোমার ঐ বিড়াল এত উঁচুতে উঠেছে কি করে?
.
দিবা ও তাকালো উপরে তারপর দাঁত কেলিয়ে বললো”টেবিলে উে সেটা থেকে আলমারিতে উঠে মিনি,ওর এটা পুরান অভ্যাস
.
তো??জলদি করে ওকে নামাও,আমার হাঁচি থামছি না
.
দিবা চেয়ার টপনে আলমারির কাছ নিয়ে চেয়ারে উঠে আলমারির উপরে হাত দিতেই মিনি এক লাফে টেবিলে নেমে গিয়ে আরেক লাফে আহনাফের গায়ে উঠে গেলো
আহনাফ চেঁচিয়ে দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছে সাথে সাথে
মিনি ওর গলায় বসে আছে ভালো বিড়ালের মতন
.
আহনাফ নাকে হাত দিয়প বললো”সরাও ওরে,আমার দম আটকে আসছে”
.
দিবা চেয়ার থেকে নেমে ছুটে এসে মিনিকে আহনাফের গলা থেকে উঠিয়ে আনলো,,আহনাফ চোখের সামনে দিবার ওড়না পেয়ে সেটা নাকে চেপে ধরে বললো”সরাও ওরে,, আমার শ্বাস নিশ্বাস বন্ধ হয়ে গেছে”
.
দিবা মিনিকে নিয়ে চলে গেলো,আহনাফ দিবার ওড়নাটা নাকে ধরে চুপ করে আছে,,নাকের ভেতরটা জ্বলছে,এই বিড়ালটা আমাকে এত পছন্দ কেন করে বুঝি না একেবারে মুখের উপর এসে পড়লো,,হাইচ্ছু!
আচ্ছা এই কাপড়টা থেকে এত মিষ্টি ঘ্রান আসছে কিসের ঘ্রান এটা??
আহনাফ চোখ খুলে যখন টের পেলো এটা দিবার ওড়না সাথে সাথে ছুঁড়ে মারলো,,পেরেশানিতে হাতে কি নিয়েছিল সেটাই টের পেলো না ও,,
এরপর টিসু বক্স থেকে টিসু নিয়ে সেটা নাকে চেপে শুয়ে পড়লো সে,,একটু ঘুমিয়ে ডিউটিতে যেতে হবে,,বাঁচলাম আজ ভার্সিটিতে মিশকাকে দেখিনি,তার মানে আমার বলা কথাটা বিশ্বাস করেছে,,আর যেন আমার চোখের সামনে না আসে,এরকম বিপদই যেন আর না আসে

তোর আর কাজ নেই?ঠিক এই কারণেই উনি তোকে আজাইরা বিড়াল বলে,,
আমি আছি,আরিফ ভাইয়া আছে তার পরেও উনার কাছে গিয়ে কি করস তুই?
জানস না উনি তোকে পছন্দ করে না?আর কখনও যাবি না,আজ তোর কারণে উনার শ্বাসকষ্ট হচ্ছিলো,,
.
দিবা মিনির মাথায় হাত বুলিয়ে ওকে বারান্দায় ছেড়ে দিয়ে আলমারি থেকে আরেকটা ওড়না নিয়ে পরলো,,আলমারি খুঁজে ওড়না বের করতে গিয়ে আজ তাদের ফ্যামিলি ফটো পেলো দিবা
সেখানে তাদের লাল সোফায় বসা মা,ইতি,ইভান আর বাবা বসে আছে,,দিবা কিনারায় দাঁড়িয়ে আছে,এই ছবিটা দিবা আসার আগে নিয়ে এসেছিলো,,মায়ের কথা খুব মনে পড়ে,একটিবার কি কথা বলতে পারে না আমার সাথে?দেখি একবার কল দিয়ে
.
দিবা চুপিচুপি খালামনির রুমে আসলো,খালামণি আর খালু ঘুমাচ্ছেন
দিবা টেবিলের উপর থেকে ফোনটা নিয়ে বাহিরে আসলো,,মায়ের নাম্বারটা খুঁজে ফোন করলো সে,,তার ফোন থেকে তো কল যায় না তাই এত কষ্ট করা
তখন বিকেল চারটা বাজে,,মা এসময়ে বিকালের নাস্তা বানানো শুরু করে,,ফোন অনেকক্ষণ রিং হওয়ার পর মা রিসিভ করলো
দিবা বুকে হাত দিয়ে চুপ করে আছে,মা হ্যালো বলে বললেন”কিগো মৌ আপু,কথা বলছো না কেন?কিসের জন্য ফোন দিলে?দিবা ঠিক আছে তো?”
.
মাহহহ!
.
মা আর একটা কথাও বললেন না,দিবার মুখ থেকে মা শুনে কেটে দিলেন লাইন,,মুখে হাত দিয়ে কান্নাটা চেপে ছুটে গেলেন রান্নাঘরের দিকে
দিবা ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে,,চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে ফোনের স্ক্রিনে পড়তে লাগলো
মা ওখানে কাঁদছেন আর এখানে দিবা
মা চেয়েও কথা বলতে পারলেন না আজ,,কথা বললেই যে মায়াটা বেড়ে যাবে,দিবাকে শক্ত রাখতে আমার নিজেকে শক্ত করতে হলো,,মাফ করে দিস আমায় দিবা,তোর মা তোকে অনেক আঘাত করে
হয়ত আমার আঘাতের চেয়ে তোর আঘাত বেশি না তবে তোর কাছে এটাই হয়ত অনেক বড় আঘাত,,মা হিসেবে আমি তোকে সেসব দিতে পারলাম না যা তোর প্রাপ্য
আমার যেমন ফুটা কপাল ছিল এখন তোর ও তেমন,,
চলবে♥

সবটা অন্যরকম♥
#পর্ব_২৪
Writer-Afnan Lara
.
দিবা কাঁদতে কাঁদতে ফোন টেবিলের উপর রেখে দিয়ে আবারও চলে আসলো নিজের রুমে,,আসার পথে ধাক্কা খেয়ে গেলো আহনাফের সাথে
আহনাফ রেডি হয়ে ডিউটিতে যচ্ছিলো তখন
দিবাকে কাঁদতে দেখলো সে,দিবা কেনোদিকে না তাকিয়েই নিজের রুমে চলে গেছে
.
এই মেয়েটা একবার হাসিখুশি থাকে,একবার শয়তানি মুড নিয়ে থাকে,একবার ঝগড়া মুড নিয়ে থাকে,আবার কেয়ার মুড এট লাস্টে সেন্টিমেন্টাল মুড,,একটা মানুষের এতগুলো মুড থাকে বোঝা দায়
.
আহনাফ চলে গেলো আর থাকলো না ওখানে,,দিবার কান্নার কারণ ওর ফ্যামিলি ছাড়া যে আর কেউ না ওর খুব ভালোমতন জানা আছে
যাই হোক আজ ডিউটিটা মনে হয় ভালোভাবে শেষ করা যাবে কারণ আজ মিশকা জ্বালাতে আসবে না
এই ভেবে খুশি খুশি বাইক চালিয়ে আহনাফ বারের সামনে এসে থামলো,,মুখে মাস্ক আর চোখে সানগ্লাসটা দিয়ে বারের ভেতর ঢুকে গেলো সে,,রিসিপশান খালি,নাহিদ আসেনি এখনও মনে হয়
আহনাফ সেখানে বসে কাগজে এটেন্ডেন্স সই করে কাগজটা সরিয়ে রাখলো,,বারের ওয়েটার প্রিতম ডাকছে আহনাফকে
কাস্টমার নেই বলে আহনাফ উঠে গেলো সেদিকে,,গোল টুলে বসে বললো”কিরে.কি খবর?”
.
বিয়ার খাইবা?
.
বস জানলে বিপদ আছে রে
.
জানবে না,এটার অর্ধেক কাল এক স্যার খাইছিলো গ্লাসে ঢালি,,বাকিটা তো আর লাগবে না,উনি বাকিটার বিল দিয়ে চলে গেছে,আমি এটা লুকাই রাখছি
.
আরেহ বাহ,,দে চল খাই,নাহিদ একবার জোর করে খাওয়াইছিলো তারপর থকে খেতে মন চায় তাও মনকে বুঝাই যে এটা খাওয়া ভালো না বাট এটার টেস্ট ভুলতে পারি না আমি
.
নাও ধরো খাও
.
আহনাফ এক গ্লাস খেয়ে মুখটা হাতের এপিঠ দিয়ে মুছে নিলো,কাশি শুরু হয়ে গেছে,,চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষন চুপ থাকলো সে,,গলার উপর কারোর হাতের স্পর্শ পেয়ে চোখ খুলে তাকালো আহনাফ
মিশকা দাঁড়িয়ে আছে পাশে
মিশকাকে দেখে আহনাফ টুল থেকে উঠে দূরে সরে গেলো
.
মিশকা সেই টুলে বসে পায়ের উপর পা তুলে বাকি যে বোতলটা আছে তার ছিপি খুললো
.
আহনাফ চলে যাওয়া ধরতেই মিশকা ওর জ্যাকেট টেনে ধরে ওকে আটকালো তারপর বললো”কি বলেছিলে যেন??তোমরা পরিবারকে না জানিয়ে লুকিয়ে চুরিয়ে এঙ্গেজমেন্ট করেছো?
বাট আমি যে খবর নিয়ে দেখলাম তোমার জীবনে কোনো মেয়েই নাই,তাহলে এঙ্গেজমেন্টটা কার সাথে করলা?আর তোমার হাতটা দেখি,আংটি কই??”
.
আহনাফ জ্যাকেট ছাড়িয়ে চলে গেলো রিসিপশানে,,মদের নেশাতে গোল গোল ঘুরাচ্ছে ওরে
এর ভিতরে মিশকা এসেছে দিন খারাপ করতে
মিশকা বিয়ারের বোতলটা নিয়ে পিছু পিছু চলে আসলো,,আগের মতন আহনাফের সামনের টেবিলটার উপর বসেছে সে
বিয়ার এক চুমুক নিয়ে সে বললো”কি হলো??উত্তর দিলে না”
.
প্রয়োজন মনে করি না,,আমার লাইফে যে আছে তাকে আমি দুনিয়ার মানুষ থেকে লুকিয়ে রাখবো নাকি সাজিয়ে দেখাবো সেটা একান্তই আমার ব্যাপার,আর হ্যাঁ ওরে আমি অজানায় রেখেছি,আপনি কখনও ওর নাগাল পাবেন না,আংটি খুলে রেখেছি কারণ আমি আগেও বলেছি পরিবারকে বিষয়টা জানাইনি আমি
.
কাম অন!!আমি তোমাকে ট্রাস্ট করি তার মানে এই না যে আমি তোমার এই সিলি স্টোরি ও বিশ্বাস করবো?
বাদ দাও এই টপিক,তুমি কলিজা কাটি বললেও আমি মানবো না য তোনার লাইফে আমি ছাড়া অন্য কেউ আছে
.
আমার লাইফে আপনি নাই,এখন সরুন এখান থেকে আদারওয়াইজ আই উইল থ্রো ইউ আউট
.
ফেলে দিবে??ফেলো,,তোমার টাচ টা আমার প্রয়োজন
.
আহনাফ সিটে বসে হেলান দিয়ে প্রিতমকে ডাক দিলো
“প্রিতম এই ম্যাডামকে সুন্দর করে কোলে তুলে ফ্লোরে ফেলে দাও”
.
প্রিতম মুচকি হেসে মিশকাকে ধরতে গেলো
.
আমাকে টাচ করবা না,,যে সে এসে আমায় টাচ করতে পারে না,, আমাকে টাচ করলে শুধু নাফি টাচ করবে,দূরে থাকো
.
আহনাফ মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে,
“এই মেয়েটা কবে আমার জীবন থেকে যাবে উফ!”
.
মিশকা টেবিল থেকে নেমে দূরে টুল একটা নিয়ে এদিকেই ফিরে বসলো,,আহনাফ চুপচাপ ফোন দেখছে,আজকে কাস্টমার কম,,বোরিং সময় কাটছে,নাহিদ ও আসছে না,আর সামনে এই মেয়েটা বসে বেকুবের মতন তাকিয়ে আছে
আহনাফ ফোনের গ্যালারি ঘাটতে গিয়ে নিজেই টাসকি খেয়ে গেলো
মিনির ছবি,,ছবি তোলার ধরন দেখে মনে হচ্ছে ছবিটা মিনি নিজে তুলেছে
ফোনের উপর দাঁড়িয়ে সে নড়াচড়া করছিলো আর ছবিটা ক্লিক হয়ে গেলো সেসময়ে,,ওর পেট ছাড়া আর কিছুই দেখা যাচ্ছে না,আহনাফ ফিক করে হেসে দিলো মিনির এমন কাজে
ওর ফোন লক করা থাকে সবসময় তবে লকে নোটিফিকেশন বারে ক্যামেরা এপসটা থাকে যার কারণে মিনির হাত পা ওখানে লেগেছে আর ছবিটা তুলে গেছে
এই বিড়ালটা আস্ত একটা বদের হাড্ডি
.
প্রিতম আরেকটা গ্লাস এনে আহনাফের সামনে রেখে দিয়ে বললো”নাও বাকি গ্লাস আমি খাচ্ছি”
.
আহনাফ মানা করতে গিয়েও করলো না,,ফ্রিতে পেয়ে কে না করবে
তাই মুচকি হেসে মাস্ক খুলে এই গ্লাসের মদটুকু ও সে সাবাড় করে নিলো

দিবা,, আরিফ ডিনার করতে আসো,,
.
দিবা মিনিকে নিয়ে আসলো ডাইনিংয়ে,এতক্ষণ ওড়ছিলো সে,,আরিফ তো আরিশার সাথে চ্যাট করছিলো,সেও এলো,,খালু আজ তাড়াতাড়ি খেয়ে বেরিয়ে গেছেন আদনানের বাবা মানিকের সাথে,,মণিতার বিয়ের কার্ড ছাপাতে হবে,,ফিরতে রাত হবে তার,,
মানিকের অফিস ছিলো বলে এসময়ে কার্ড ছাপাতে বের হতে হলো
সবাই ডিনারটা সেরে নিলো,,দিবা নিজের রুমে আসতে নিতেই খালামণি ডেকে বললেন উনি পাশের বাসায় যাচ্ছেন,ঐ বাসার মেয়েরা এসেছে বেড়াতে তাই উনি দেখতে যাচ্ছেন,অনেকদিন ওদের দেখা হয় না
এদিকে আরিফ ও লুকিয়ে চুরিয়ে ছাদে চলে গেছে আরিশার সাথে প্রাণখুলে কথা বলবে বলে
এবার বাসায় দিবা সম্পূর্ন একা,অবশ্য মিনিও আছে কিন্তু তাতে কি?
মিনি মশাই তো এখন ঘুমাচ্ছেন যার কারণে দিবা এখন এসেছে আহনাফের রুমে,,সকালে আহনাফের বারান্দা থেকে দূরের একটা বারান্দা দেখতে পেয়েছিলো সে যেখানে অনেক সুন্দর করে টব ঝুলানো ছিলো,,ভালো করে সিস্টেমটা দেখে নিবে সে যাতে করে সেও এমন করে সাজাতে পারে
বারান্দা অন্ধকার বলে দিবা ভালোমতন দেখলোই না
ধুর!
দিবা মন খারাপ করে হেঁটে চলে যাচ্ছিলো হঠাৎ ওর গায়ের সাথে লেগে আহনাফের টেবিলের উপর থেকে একটা ব্যাগ পড়ে গেলো
ব্যাগের চেইন খোলা ছিলো বলে ভেতর থেকে কাগজপত্র সব বেরিয়ে এলোমেলো হয়ে গেছে
দিবা ফ্লোরে বসে কাগজ সব এক এক করে হাতে নিতে থাকলো,,সব একসাথ করে একটা কাগজের দিকে সে মন দিয়ে তাকালো
সেখানে লিখা আছে
Customer Number 1-Mr.Rishad
Customer Number 2-Mr.Momen
এমন করে সব লিখা ছিলো,,এটা কিসের লিস্ট সেটাই দিবার মাথায় ঢুকছে না,,তাই কাগজ সবগুলো এক এক করে বের করে সে খুঁজতে থাকলো অন্য কিছু তথ্য
পরে সে জানতে পারলো এটা একটা বারের লিস্ট
কারণ একটা ককাগজে কালো করে প্রিন্ট করা ছিলো বারের নাম
দিবার আগে থেকেই সন্দেহ হয়েছিলো আহনাফের সাথে বারের কিছু একটা সম্বন্ধ আছে আজ সেই সন্দেহ আরও কড়া হলো
কিন্তু সব কেমন ঝাপসা মনে হয়,,ঠিক বুঝতে পারি না উনার সাথে বারের কি সম্পর্ক,উনাকে দেখে তো বারে যাওয়া পাবলিক মনে হয় না কোনো দিক দিয়েই
তাহলে বারবার উনার সাথে এই বার নামটা জড়ায় কি জন্য
রহস্যের গন্ধ পাচ্ছি, এই রহস্যটা সলভ্ করতে হবে আমায়,,কিন্তু কি করে??
.
দিবা ভাবতে ভাবতে কাগজগুলো ব্যাগে ভরে টেবিলে রাখলো ব্যাগটা
তারপর পিছনে তাকাতেই ভয়ে ওর গলাটা শুকিয়ে গেলো একদম,,আহনাফ দাঁড়িয়ে আছে ওর একদম সামনে
দিবা ভয়ে দেয়ালের সাথ লেগে দাঁড়িয়ে পড়েছে
.
আহনাফ চোখ ডলে তার হাতের ব্যাগটা বিছানার উপর রেখে এগিয়ে আসলো
দিবার ভয়ে গলা শুকিয়ে গেছে,সে ভাবছে সে তো মেইন দরজা লক করেছিলো আরিফ ভাইয়া বের হবার পরে তাহলে আহনাফ ভেতরে আসলো কি করে
তার ভাবনায় ছেদ ঘটিয়ে আহনাফ তার হাতের চাবিটা টেবিলের উপর রাখলো
তার কাছে বাসার এক্সট্রা চাবি থাকে সবসময়
দিবা ঢোক গিলে সরতে নিতেই আহনাফ তার বাম হাত দিবার পাশের দেয়ালে রাখলো
.
দিবা ভয়ে মূর্তির মতন দাঁড়িয়ে আছে,কি দিয়ে কি শুরু করবে সেটাই বুঝছে না সে,কি বাহানা দেবে এখন??
কাগজ দেখছিলাম সেটা দেখে ফেলেনি তো?
আহনাফ দিবার থুতনিটা ধরে বললো”তুমি দিবা না??আমার রুমে কি করো তুমি?রাতের কয়টা বাজে সে খেয়াল আছে তোমার?”
.
(উনি এমন করে কথা বলছেন কেন?)
.
কি হলো?উত্তর দেও না কেন?
.
না মানে আসলে মিনি….
.
ওহ!তোমার ঐ আজাইরা বিড়াল বুঝি আবার আমার রুমে এসেছে?হাহ!!ও এরকম ক্যান,সবসময় আমার রুমেই থাকে
.
আহনাফ হাসতে হাসতে দিবাকে চেপে ধরে বললো”কি ভাবো?আমাকে নেশায় ধরছে,হুমম???ধরে নাই,আমাকে নেশা ধরে নাই,জাস্ট দু গ্লাসে নেশা আমাকে ধরতে পারে না বুঝলে??নাকি ধরেছে?
তুমি বলতো ধরেছে কিনা?
.
এই লোকটা কি পাগল হয়ে গেলো,এমন করছে কেন?
.
আহনাফ দিবার হাত ছেড়ে দিয়ে গায়ের জ্যাকেটের চেইন খুলতে খুলতে বিছানায় ধপ করে বসে পড়লো,,তারপর মাথার চুলগুলোতে হাত ঢুকিয়ে টানতে টানতে বললো”এক কাপ চা বানিয়ে আনো,কড়া লিকারের,মাথা ধরছে আমার”
.
দিবা প্রাণ নিয়ে কোনো মতে পালিয়ে চলে আসলো,,যে ভাবে পাকড়াও করেছিলো মনে হয় এই বুঝি খুন করে ফেলে আমায়,রাত বারোটা বেজে গেছে,খালামণি আসছে না কেন,আরিফ ভাইয়াও আসার নাম নিচ্ছে না,আর কতক্ষণ এই লোকটার সাথে একা বাসায় থাকবো
.
আহনাফ বিছানায় শুয়ে পড়েছে ফ্রেশ না হয়েই,,দিবা চা বানিয়ে এসে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছে,,আহনাফকে ডাকবে নাকি ডাকবে না তা ভাবছে সে
পরেই ওর মাথায় আসলো আহনাফের সাথে বারের কি সম্পর্ক সেটা বের করার এটা মোক্ষম সুযোগ,একে হাতছাড়া করা বোকামি হবে
দিবা চায়ের কাপটা টপবিলে রেখে পা টিপে টিপে আহননাফের কাছে এসে বসলো,তারপর ওর জ্যাকেটের পকেটে হাত ঢুকালো আইডিকার্ডটা বের করবে বলে
আইডিকার্ডটা হাতের সাথে লাগতেই দিবা এক টান দিলো বের করার জন্য ঠিক সেসময়ে আহনাফের হাত এসে আটকালো ওর হাতটাকে
দিবার তো ভয়ে মনে হয় হার্ট এ্যাটাক করে এখন মরেই যাবে
আহনাফ দিবাকে টান দিয়ে বিছানার সাথে চেপে ধরে বললো”এত শখ আমার ব্যাপারে ইনফরমেশন বের করার?”
.
না মানে,,ইয়ে না মানে!
.
চুপ!!একদম চুপ!!তুমি কি ভাবছো আমাকে নেশায় ধরছে??হুম ধরছিলো বাট বেশি সময়ের জন্য না,,কি বলছিলে যেন??মিনির জন্য আমার রুমে এসেছো??মিনি যদি আসত তাহলে আমার একবার হলেও হাঁচি আসত বাট আমার কোনো হাঁচি আসেনি তার মানে তুমি মিথ্যা বলছো ,তুমি আমার রুমে আসছো জাস্ট আমার ব্যাপারে ইনফরমেশন বের করতে
.
না এটা সত্যি না
.
এটাই সত্যি,বলো কেন জানতে চাও এসব?কি লাভ তোমার
.
দিবা হাত ছাড়াতে ছাড়াতে বললো”আমার কোনো লাভ নাই,আমি তো পাশের বাসার বারান্দা দেখতে আসছিলাম”
.
ওহ তাই?তাহলে এখন আমার আইডিকার্ড নিতে ছিলে কেন তাও চোরের মতন,বলো
.
হাত ছাড়ুন বলছি,, নাহলে…
.
নাহলে কি?
.
আমি খালামণিকে বলে দিব আপনি মদ খেয়ে আসছেন আজকে
.
আহনাফ দিবার হাত ছেড়ে দিয়ে উঠে বসলো,,, দিবা ও উঠে হাতের কব্জি ডলতে ডলতে দূরে গিয়ে দাঁড়ালো তারপর বললো”চা ঠাণ্ডা হচ্ছে খেয়ে নিন”
চলবে♥