সবটা অন্যরকম♥
#পর্ব_২৫
Writer-Afnan Lara
.
আম্মুকে যদি বলছো যে আমি মদ খেয়েছিলাম তাহলে তোমার হাড্ডি গুড়ো করে সেরেলাক বানিয়ে মিনিকে খাওয়াবো
.
দিবা মুখের কাছের চুল গুলোকে কানের কাছে গুঁজে দিয়ে চলে গেলো চুপচাপ
আহনাফ চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে আরেক হাতে আইডিকার্ডটা ধরলো
দিবা যদি এ ব্যাপারে জেনে যায় তাহলে মহাবিপদ,,হয়ত মাকে জানাবে না বাট সে আমাকে ব্ল্যাকমেইল করতে পারে,,তার সাথে ঠিক করে কথা বলতে বলবে,এটা করতে বলবে ওটা করতে বলবে,,
বাট আজকের পর থেকে দিবা জানবেও না কোনোদিন,,কারণ এই চাকরিটা আমি ছেড়ে দেবো
মিশকা এভাবে ডিস্টার্ব করলে আমার পক্ষে বারে ডিউটি করা অসম্ভব হয়ে উঠবে
.
দিবা নিজের রুমে ফেরত চলে এসে ভাবলো”আইডিকার্ডে কি এমন আছে যে উনি এত রিয়েক্ট করেন?আমাকে আইডিকার্ডটা একবার দেখতেই হবে”
.
আহনাফ বিছানায় বসে বসে পায়ের জুতাটার ফিতা খুলছে
.
আসবো?
.
মা তুমি,এখন?ঘুমাওনি?
.
পাশের বাসায় গেছিলাম,তোর রুমে আলো জ্বলছিলো বলে এলাম,,ফ্রেশ হসনি এখনও?
.
না এখন ফ্রেশ হবো,,কেন,,কিছু দরকার নাকি?
.
আসলে কদিন বাদেই তো মণিতার বিয়ের অনুষ্ঠান শুরু হবে,,দিবার ভালো জামা নেই পরার,,তোর কাছে টাকা আছে??ওরে দুটো ড্রেস কিনে দেওয়ার?
.
উমমম!!ছিলো,,অগ্রিম নিয়ে নেবো,সমস্যা নাই
.
ভালো দেখে কিনে দিস ওকে,ওর পছন্দে,,তোর পছন্দে কিনিস না যেন,,ওর যেটা ভাল্লাগবে শুধু সেটাই কিনে দিবি,,আমার হাতে টাকা নেই,,তোর বাবার চাকরি নেই,তোকে বলতেও খারাপ লাগে,এক হাতে গোটা সংসার সামলাচ্ছিস,আরিফ টাও চাকরি খুঁজে পায় না,এভাবে একজন একা এত ভার কি করে সামলাবে,এবার দিবার আলাদা খরচ যোগ হলো
.
মা তুমি টেনসন নিও না তো,আমি সব সামলাতে পারবো,যাও ঘুমাও গিয়ে,আমি খাবার খেয়ে শুয়ে পড়বো
.
মা চলে যাওয়ার পর আহনাফ পকেটে হাত ঢুকিয়ে মানিব্যাগ বের করলো,পাঁচশ টাকা আছে সেখানে,এ মাসের এখনও কটা দিন বাকি,,পরের মাসের শুরুতেই বেতন পেয়ে যাব তাহলে আর অগ্রিম নিব না,বেতন পেয়েই ওকে জামা কিনে দিব,বিয়ে তো তার পরেই
.
দিবা ঘুমিয়ে পড়েছে,,আহনাফ নিজে নিজে খেয়ে সেও ঘুমিয়ে পড়লো,,দুজনের আর দেখা হলো না
পরেরদিন আবার সকাল বেলায় দিবা উঠে হাজির রান্নাঘরে নাস্তা বানাবে বলে,আজ সে ঠিক করেছে ভার্সিটিতে যাবে না,পরে ভাবলো আহনাফ রিকশাভাড়া দিলে তার থেকে বাঁচিয়ে একটা টব কিনা যাবে প্লাস্টিকের,,
হুম সেটাই করবো তাহলে
.
আমি মিস ক্যালকাটা চাই না দিতে টিপস,এখনও তো কেউ জানে না আমার….
.
এই মেয়ে!
.
দিব চমকে পিছন ফিরে তাকালো,আহনাফ জগিংয়ের যাবার জন্য রেডি হয়েছে,,হলুদ রঙের টিশার্ট,তার উপর দিয়ে ব্লু একটা জ্যাকেট পরেছে
আজ কি সূর্য উঠেছে??লোকটা কালো রঙ ছেড়ে নীল ধরলো,,শরীর ঠিক আছে তো?
.
আহনাফ ভ্রু কুঁচকে বললো”আমার জ্যাকেটটা ধুয়ে দিছি আর বাকি যে আরেকটা কালো জ্যাকেট আছে ওটা আয়রন করে রেখে দিছি ভার্সিটিতে যাবার সময় পরবো বলে,তাই আপাতত ব্লু পরেছি,এভাবে তাকিয়ে আমায় মনে করিয়ে দিতে হবে না,,আজ আমার সাথে ভার্সিটিতে যাবা তুমি
.
কেন?আমাকে না বললেন দূরে দূরে থাকতে?ভাড়া দিলেই হয়,আমি একাই যেতে পারবো
.
দরকার নাই,আমার কাছে যে টাকা আছে সেটা অন্য কাজে লাগবে,,শুধু শুধু টাকা খরচ করার দরকার নাই বাইক থাকতে,পিছনের সিট তো খালি পড়েই থাকে
.
কথা শেষ করে আহনাফ পিছনে ঘুরে তাকালো,,মিনি আছে কিনা দেখার জন্য তারপর দরজা খুলে আবারও তাকালো নাহ মিনি নেই,হাঁপ ছেড়ে বেঁচে আহনাফ সামনে তাকাতেই দেখলো মিনি ভালো বিড়ালের মতন সিঁড়িতে বসে ওর দিকেই তাকিয়ে আছে
আহনাফ নিজের কপালে ঠুস করে বাড়ি দিয়ে বললো”এতদিন মেয়েরা পাগল ছিলো আমার জন্য আর এবার বিড়াল পাগল হচ্ছে”
.
আহনাফ সাইড কাটিয়ে হেঁটে চললো এবার,মিনি একা পা দু পা করে আসছে,বেশি জোরে আসছে না আবার যদি আহনাফ কথা শুনায়
আহনাফ জোরে জোরে হাঁটছে যেন মিনি ওকে না দেখতে পায়
জগিং করতে করতে এক সময়ে হাঁপিয়ে গেলো সে তাই একটু থেমে একটা সিটে এসে বসলো,,এখান থেকে মায়ের রুমের বারান্দা দেখা যায় অনেক উপরে
মা বারান্দায় বাবার তোয়ালেটা শুকাতে দিয়ে আহনাফকে দেখে মুচকি হেসে চলে গেলেন,আহনাফ জিরোতে জিরোতে দেখলো মিনি নেই কোথাও,চিন্তা হলো মিনির জন্য কারণ মিনি ওর সাথেই বেরিয়েছিল
আহনাফ উঠে গিয়ে সেদিকে ছুটে গেলো,, পথে পেলো না মিনিকে,এবার চিন্তাটা আরও বেশি হচ্ছে,ভাবতে ভাবতে আহনাফ হাঁচি দিয়ে পিছনে তাকিয়ে দেখলো মিনি ওর পিছনেই ছিলো,মিনি আহনাফের সাথে সাথে নিজেকে খুঁজছিলো আর আহনাফ ভাবলো মিনির কি না কি হয়েছে ওকে দেখছি না কেন কিন্তু মিনি যে ওর পিছনেই ছিল তা ও জানলো না,মিনি ও সাউন্ড না করে পিছু পিছু আসলো
আহনাফ ব্রু কুঁচকে বাসার দিকপ হাঁটা ধরে বললো”আমাকে ভয় দেখিয়ে ভালো লাগলো তোমার??আমি তো ভাবলাম তোমাকে কেউ কিডন্যাপ করেছে তাই ছুটে এলাম বাঁচাতে আর এসে দেখি তোমার এই কান্ড
♣
কোথাই ভাবলাম ভাড়ার টাকা জমিয়ে টব কিনবো তা আর হলো না ধুর ধুর!
.
কিরে ধুর ধুর করছিস কেন?কি লস হলো তোর?
.
না খালামণি,কিছু না,,বসো তো,নাস্তা রেডি এবার শুধু খাবে,খালু আর আরিফ ভাইয়াকে ডাকো,,
.
দিবা কোমড় থেকে ওড়না খুলে গায়ে জড়িয়ে এক এক করে নাস্তার প্লেট টেবিলে রাখছে,আহনাফ বাসায় ঢুকেছে সবে,সাথে মিনিও আছে
রান্নাঘরে থেকে দিবা ওদের একসাথে দেখে মুচকি হাসলো
মা আহনাফকে দেখে দাঁড়াতে বললেন
.
কি মা?
.
শোন,, এদিকে আয় বস,,দিবাকে যে জামা কিনে দিতে বলেছিলাম তোকে?? কিনতে হবে না আর
.
আহনাফ কপালের ঘাম মুছতে মুছতে চেয়ার টেনে বসে বললো”কেন?”
.
কাল তোর বাবা মানিক ভাইয়ার সাথে কার্ড ছাপাতে গেছিলো না??তো ফেরার পথে উনি বললোন মণিতার শ্বশুর বাড়ি থেকে ওর জন্য অনেক শাড়ী আর জামা পাঠিয়েছে অগ্রিম,,তোর ফুফু চায় দিবার জন্য কিছু পাঠাতে,আসলে মেয়েটা অসহায় শুনার পর থেকে উনি বেকুল হয়ে গেছেন ওর মুখে হাসি ফোটাতে,তো জামা শাড়ী আদনান দিয়ে যাবে আজ বিকালে,আদনানের অফিস তো এখানেই,যাওয়ার পথে দিয়ে যাবে বললো
.
ওহহ,,
.
দিবা ও এসে চেয়ার টেনে বসলো,,বাবা এসে বসতেই বললেন”মানিক আর আদনান পাগল প্রায়,এত এত কাজ সব একা দুজনে সামলাচ্ছে,,আদনানের চাচা হলো একজন তার হলো তিনটা মেয়ে,,হেল্পিং হ্যান্ড হিসেবে কেউ নাই,,ওর ফুফু ও একজন তার হলো একটা মাত্র ছেলে,তাও সে তার অফিসে গিয়ে বাসায় ফেরে রাত দশটায়,আদনানের উপর তাই বেশি প্রেসার পড়ছে”
.
হুম বাবা,,কি আর করবো,আমাদের বাসা দূরে তা নাহলে সব কাজ আমরাই করে দিতে পারতাম
.
মা আরিফের দিকে তাকিয়ে বললেন”আরিফ তুই এক কাজ কর,কদিনের জন্য তোর ফুফুর বাসায় চলে যা তাহলে আদনানকে এভাবে ছুটতে হবে না,আহনাফ তো যেতে পারবে না ওর ডিউটির জন্য”
.
ঠিক আছে মা,,আজকে আদনান ভাইয়ার সাথে যাব একসাথে
.
তাহলে তো ভালো হয়,ভালো বুদ্ধি দিলে তুমি,,
.
আহনাফ উঠে চলে গেলো রেডি হতে ভার্সিটি যাবে বলে
দিবাও জলদি তৈরি হতে গেলো
সে রেডি হয়ে বের হতেই দেখলো আহনাফ ওর আগেই চলে গেছে তাই দিবা ছুটে গেলো বাসার নিচে
নিচে নামতেই আহনাফ ওর হাতে আগের মতন পঞ্চাশ টাকার নোট ধরিয়ে দিয়ে বললো রিকশা নিয়ে যেতে
.
সেকি!!আপনি না বললেন আপনার কাছে ভাড়া নাই,যা আছে অন্য কাজে লাগাবেন,বাইকে যাওয়াই ভালো,তাহলে?
.
হুম,বাট যেই কাজে টাকাটা লাগতো সেই কাজ হয়ে গেছে সো আর লাগবে না,তাই এখন এই কাজে ব্যয় করছি,তোমার সাথে একাাথে বসে যাওয়ার মুড নাই আমার
.
দিবা রোডটার দিকে এক নজর তাকালো,সাথে সাথে সেদিনের ঐ ছেলেটার কথা মনে পড়লো ওর
আহনাফ বাইক স্টার্ট দিচ্ছে
.
একটু দাঁড়ান না
.
কি আবার?
.
ঐ যে ঐ ছেলেটা আছে না?
.
কোন ছেলেটা?
.
ইমরান না কি যেন নাম
.
কি করেছে ও?আবার ডিস্টার্ব করেছে?
.
হুম,যাওয়ার সময় ডিস্টার্ব করে,আমাকে প্লিস বাইকেই দিয়ে আসুন,এই যে আমি ওড়না পেঁচিয়ে ঠিকঠাক করে পরেছি
.
আহনাফ সামনের দিকে মুখ করে বললো”রিকশা নিয়ে আসো,বাই”
.
চলে গেলো সে,দিবা অসহায়ের মতন তাকিয়ে ওর চলে যাওয়া দেখছে
লোকটা এত স্বার্থপর!!আমাকে এভাবে একা রেখে চলে গেলো?
কি হতো আমায় বাইকে উঠালে?আজ আবার ঐ ছেলেটা ডিস্টার্ব করতে আসলে কি করবো আমি
.
দিবা ঢোক গিলে হাঁটা শুরু করলো,আগের মতন এখনও কোনো রিকশা পাচ্ছে না সে,,যেটার ভয় পাচ্ছিলো দিবা সেটাই হলো ঐ ছেলেটা আজও এসে হাজির
.
ঐ গোলাপি কই যাও,আজ তোমাকে আমি লিফট দিয়েই ছাড়বো
.
দিবা চোখ মুখ খিঁচিয়ে হাত মুঠো করে হাঁটার গতি বাড়িয়ে দিয়েছে,,
ছেলেটা বাইকের স্পীড আরেকটু বাড়িয়ে দিবার সামনে এসে ওর পথ আটকালো,
দিবা বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে আছে
ইমরান থুতনিতে হাত বুলাতে বুলাতে বললো”আমার বাইক কি তোমার পছন্দ না?”
.
আমার তোরে পছন্দ না!
.
আহনাফের কথা শুনে ইমরান পিছনে তাকালো,আহনাফ তার বাইকে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে
ইমরান জলদি করে তার বাইক স্টার্ট করতে যেতেই আহনাফ ওর পিছনের সিটে এসে বসলো ওর গলা চেপে ধরে তারপর বললো”চল আজ লং ড্রাইভে যাই,,শীতলক্ষা নাকি বুড়িগঙ্গা,কোনটাতে গেলে তোরে ভালো চুবাইতে পারবো তুই ডিসাইড কর তো”
.
ইমরান ঢোক গিলে চুপ করে আছে
দিবা মুচকি হেসে তাকিয়ে আহনাফকে দেখছে শুধু
আহনাফ ইমরানের গলা আরও জোরে চেপে ধরে ফিসফিস করে বললো”সেদিনের ওয়ার্নিং এ ভয় লাগে নাই??দু চার ঘা দিতে হবে তাহলে??”
.
সরি ভাইয়া,আর এমন করবো না আমি
দিবা আপু!!মাফ করে দিন আমাকে,
.
আহনাফ গলা ছেড়ে দিয়ে বাইক থেকে নেমে দেখলো দিবা খুশিতে আটখানা তা দেখে দুষ্টুমি করে আহনাফ বললো”এরে দেখে তোর আপু মনে হয়?এরে তো খালার মতন লাগে,ডাকলে খালা ডাকবি,তাহলে একদম পারফেক্ট হবে,বুঝলা ইমরান?
.
ইমরান বাইক নিয়ে পালিয়েছে ততক্ষণে
দিবা আহনাফের সামনে এস বললো”আমাকে খালার মতন লাগে?”
.
হুম,,দিবা খালা,,আমার মৌসুমী খালামণির মেয়ে দিবা খালা
.
একদম খালা ডাকবেন না,আপনাকে তো চাচা জেঠার মতন লাগে
.
আমাকে কেমন লাগে সেটা তো আসতে যাইতে মেয়েদের চাহনি দেখেই বুঝা যায়
.
হু,,চলুন যাই আমার দেরি হচ্ছে ক্লাসে
.
জ্বী না,তোমার পথের কাঁটা রিমোভ করছি আর কোনো পথের কাঁটা নাই,সো! তুমি রিকশাতেই যাবা
তোমায় আমি বাইকে বসাবো না
ঐ মামা যাবেন,??
.
আহনাফ রিকশা থামিয়ে বললো”নাও উঠো”
.
দিবা রেগে মেগে উঠেও গেলো কারণ তাছাড়া উপায় নাই,এমনিতেও দেরি হচ্ছে
আহনাফ দিবাকে উঠিয়ে দিয়ে নিজের বাইক নিয়ে ভার্সিটিতে আসলো,,তখনই জিসান ছুটে এসে বললো মিশকা নাকি ওকে খুঁজে যাচ্ছে
আহনাফ জিসানের হাত ধরে বললো”ভাই প্লিস আমারে বাঁচা,,তুই যা করার কর তাও এর থেকে আমারে বাঁচা প্লিস”
.
ওকে আমি দেখছি,কিন্তু তুই তো বলছিলি মিশকাকে কিসব বুঝিয়ে ম্যাটার ক্লোজ করছস তাহলে এখন আবার সে পাগল হচ্ছে কেন?
.
আমার বানানো কাহিনী বিশ্বাস করলো না,কি করবো?
.
তুই আমার উপর ছেড়ে দে,দেখিস এবার বিশ্বাস করবেই করবে
চলবে♥
সবটা অন্যরকম♥
#পর্ব_২৬
Writer-Afnan Lara
.
আহা আজকের দিনটা কি সুন্দর,,হুট করে মনটা উড়ু উড়ু করছে যেন
অবশ্য এর পেছনে অন্য একটা কারণ আছে আর সেটা হলো আজ সাদাত স্যার আসেননি
সাদাত স্যারকে প্রথমে ভাল্লাগলেও পরে যখন আমাকে বের করে দিলো ক্লাস থেকে ঠিক তখন থেকে আর ভালো লাগে না উনাকে,কি দরকার ছিলো আমায় বের করার হুহহ!! আর কোনোদিন কথা বলবো না
.
এক প্রকার হাসিখুশি ফিলিংস নিয়ে দিবা একটা সিট বেছে সেখানে গিয়ে বসলো,,তার সাথে বসেছে আরও তিনজন মেয়ে
সিট ফুল,,এ মেয়েগুলোকে সে চেনে,তবে তেমন কথা হয়নি,,ওরা ওদের কথা নিয়ে ব্যস্ত
তবে কথাশুনে যা বুঝা গেলো সেটা হলো সাদাত স্যারের শরীর খারাপ এবং তারা মিলে স্যারকে দেখতে যাওয়ার প্ল্যান করছে কারণ স্যারের ফ্যামিলি বলতে এখানে কেউ নেই
শুধু তারা নয় বরং আরও কিছু স্টুডেন্ট যাবে যেমন অন্য ইয়ারের ও,,
খালি হাতে না গিয়ে চাঁদা তুলে টাকা নিয়ে সেটা দিয়ে ফল ঔষুধ এসব কিনে তারপর স্যারকে ছুটির পর দেখতে যাবে সবাই
তো চাঁদা তোলার দায়িত্ব পড়লো সব চাইতে বেশি প্রশ্ন করা সেই মেয়েটার উপর,কি যেন নাম ওর সেটাই ভুলে গেলাম,না জানি আমাকে এসে জিজ্ঞেস করে নিজের নাম কি
মেয়েটা চাঁদার বক্স নিয়ে সবার থেকে টাকা তুলতে তুলতে এদিকেই আসছে
দিবা ঢোক গিলে এদিক ওদিক তাকালো,,কাকে জিজ্ঞেস করবে এই মেয়েটার নাম,, উফ কি বিপদ,,কাঁচা চিবাবে যদি জানতে পারে আমি ওর নামটাই ভুলে গেছি
.
দিবা,,যা পারো দাও
.
দিবা তার টবের জন্য বাঁচিয়ে রাখা বিশ টাকার নোটটা দিয়ে দিলো মেয়েটাকে,,মেয়েটা চশমা ঠিক করে বললো”চাঁদাকে ইংরেজীতে কি বলে জানো?”
.
Levy
.
মেয়েটা চশমা আবারও ঠিক করে বললো” কাছাকাছি শব্দ বলতে বলি নাই”
.
দিবা মনে মনে ভাবছে এটা বলছি তাই অনেক,মেয়েটা আর কিছু না বলে চলে গিয়ে ক্যাপ্টেনের হাতে বক্সটা দিলো,,সে টাকা গুলো গুনে বেরিয়ে গেলো আরেক ইয়ারের ক্যাপ্টেন কে দিবে বলে
.
ওদিকে আহনাফদের ক্লাস থেকেও চাঁদা তুলছে, সাদাত স্যার আসলেই অনেক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন এবং তার সেবা করার জন্য তার পরিবারের কেউ নেই,,কথাটা সবাই জানে বলে নিজ ইচ্ছাতে সবাই এই সিদ্ধান্ত নিলো
সবাই যাবে না,অল্প কজন যাবে,,যাদের ইচ্ছা তারা যাবে শুধু
দিবা ভাবছে যাবে নাকি যাবে না,,পরে ঠিক করলো যাবে,,যেহেতু স্যার একা তাকে দেখাশুনা করার কেউ নাই তাহলে সবার সাথে গিয়ে একবার দেখে আসা উচিত,যতোই হোক স্যার তো
.
ওদিকে মিশকা আহনাফকে ঠিক খুঁজে বের করেছে
আহনাফ তখন চাঁদা তুলছিলো
মিশকা ওকে টেনে ক্যামপাসের কিনারায় নিয়ে আনলো
.
কি সমস্যা আপনার?
.
সমস্যা তো তোমার।তুমি আমাকে ইগনর কেন করছো?আমি সবটা জানি তারপরেও এত কেন??আমাকে রাগাইও না।আমি কিন্তু বাপিকে বলে তোমাকে চিরজীবনের জন্য আমার করে নেবো
.
জাস্ট শাট আপ!আপনাকে বলছি না আমার এঙ্গেজমেন্ট হয়ে গেছে??লুকিয়ে এঙ্গেজমেন্ট করেছি তার মানে এই না যে ওটা ফেক!
আমার অনেক বন্ধুবান্ধবকে স্বাক্ষী রেখে সেটা সম্পূর্ন হয়েছে
ইফ ইউ আর নট সিউর এবাউট দিস টপিক দ্যান ইউ ক্যান আস্ক মাই ফ্রেন্ডস
.
আল্লাহ!
কি ইংরেজি বলে রে!! আর কি বললো?এঙ্গেজমেন্ট হয়ে গেছে?খালামণি যদি জানে তাহলে কেল্লা পথে
.
দিবা একটা পিলারের পিছনে লুকিয়ে কথা শুনছে আহনাফ আর মিশকার
মিশকা যখন আহনাফকে টেনে এদিকে নিয়ে আসছিলো দিবা দেখেছিল
চুপিচুপি সেও এসে হাজির বিষয়টা বুঝার জন্য
.
আমি বিশ্বাস করি না তোমার কথা যতক্ষন না তুমি আমাকে তোমার উডবির সাথে মিট করাচ্ছো ঠিক ততক্ষণ আমি এসব কিছুই মানবো না
.
দিবা নড়েচড়ে দাঁড়ালো, পিলারটাকে খপ করে ধরে কানটা এগিয়প ধরলো আহনাফ কি বলে তা শুনার জন্য কিন্তু সে পড়লো আরেক বিপদে
পিলারে সাদা রঙ করা হয়েছে ঠিক দশমিনিট আগে আর দিবা সেটাকে ভালে করে ঝাপটে ধরে আছে এখন
কেমন যেন নতুন রঙের গন্ধ এসে নাকের কাছে ভনভন করতে লাগলো
দিবা হাতটা পিলার থেকে টানতে গিয়ে নিজেই টাসকি খেয়ে গেলো হাতে আঠার মতন রঙ লেগে আছে দেখে
সে ইয়াক করতে করতে ছুটে গেলো ওয়াসরুমের দিকে
.
আহনাফের বউরে দেখার শখ নাই আমার,আগে এই বস্তু উঠাতে হবে তা নাহলে আজীবন আমার এত সুন্দর হাতে এই বিচ্ছিরি রঙ লেগে থাকবে,ধুর!একটু কান পেতে কিছু শুনতে গেলেই সবসময় আমার সাথে এমন হয়
.
কই মিট করাও তোমার উড বির সাথে
.
আমি বাধ্য নই
.
আহনাফ চলে গেলো ওখান থেকে,মিশকা রাগে ফুঁসছে,,ফোন হাতে নিলো বাবাকে কল করবে বলে
তার আগেই জিসান এসে ওর সামনে দাঁড়ালো
.
তুমি নাফির ফ্রেন্ড না?
.
(অ্যাহ!নাফি কে আবার??ভুল ঠিকানায় আসলাম না তো?
হয়ত আহনাফকে আদর করে নাফি ডাকে)
হুম আমি ওর ফ্রেন্ড,,আপনাকে কিছু বলার ছিলো
.
আমার ও বলার আছে,তুমি কি জানো নাফির এঙ্গেজমেন্ট হয়ে গেছে?
.
হুম,এটা সত্যি
.
তাহলে ওর উডবিকেও নিশ্চয় চিনো?
.
হুম চিনি
.
দিবা হাত ধুয়ে ওড়নাটা দিয়ে হাত মুছতে মুছতে আবারও সেই পিলারের কাছে ছুটে আসছে বাকি কথা কান পেতে শুনবে বলে
জিসানের চোখ পড়লো দিবার উপর,,সে মুচকি হেসে বললো”আপনার পিছনে তাকান,নাফির উড বিকে দেখতে পাবেন”
.
মিশকা পিছনে তাকিয়ে দিবাকে দেখলো,দিবা হাত মুছা শেষ করে যখনই দেখলো মিশকা ওর দিকেই তাকিয়ে আছে
দিবা ভাবলো ও যে কথা শুনতে এসেছে হয়ত তা নিয়ে সন্দেহ করছে এই ভেবে দিবা আবার ছুটে গেলো
.
মিশকা দাঁতে দাঁত চেপে বললো”সাজানো গুছানো জিনিস রেখে এরকম সাদামাটা পছন্দ করতে গেলো?”
.
আপনি হয়ত জানেন না যে নাফির সাদামাটা জিনিস খুব পছন্দ হয়,যাই হোক ভালো থাকবেন,আর একটা কথা বলি ওদের এভাবে থাকতে দিন,আপনি ওকে এত ডিস্টার্ব করে ওর আর দিবার মাঝে ঝামেলা ক্রিয়েট করছেন
.
ওহ!ওর নাম দিবা?? আই সি!
.
জিসান চলে গেলো আহনাফকে বলতে যে সে ঝামেলা শেষ দিয়েছে
দিবা নিজের ক্লাসে এসে গাপটি মেরে বসে আছে,এত বড় সিক্রেট জেনে গেলো সে আজ আহনাফের বিরুদ্ধে
নেক্সট টাইম এই টপিক নিয়ে আহনাফকে ব্ল্যাকমেইল করা যাবে
আমাকে আর উঠতে বসতে কথা শুনাবে না হুহ!
এবার আহনাফ চান্দু,কোথায় যাইবা তুমি বালক!
♣
ছুটি হয়ে গেছে,যে যার মতন বাসায় ফিরছে,আর যারা সাদাত স্যারের বাসায় যাবে তারা রেডি,যেসব ইয়ারের স্টুডেন্টরা টাকা দিয়েছিলো এবং যারা যাবে তা মিলিয়ে পঁচিশজন হলো,,দিবা তার সিটের তিনটা মেয়ের সাথে যাচ্ছে সাদাত স্যারের বাসায়,মেয়ে তিনটা রিকসায় বসে পড়ে বললো”দিবা তুমি আরেকজনের সাথে এসো,আমাদের তো রিকশায় জায়গা নাই”
.
দিবা মন খারাপ করে ফেললো কারণ ওর কাছে যে পনেরো টাকা আছে সেটা দিয়ে ও বাসায় ফিরবে তাহলে সেটা এখন শেষ করলে পরে কি থেকে কি করবে
ভাবতে ভাবতে দিবার নজরে আসলো আহনাফ,,আহনাফ তার বাইকে জিসান আর পিয়াসকে উঠিয়েছে,তার মানে নির্ঘাত সাদাত স্যারের বাসায় যাবে
কিন্তু স্যার তো অনার্সের স্টুডেন্ট দের লেকচারার,তাহলে উনি মাস্টার্সে পড়ুয়া স্টুডেন্ট হয়েও দেখতে যাচ্ছেন কেন?
.
দিবা এগিয়ে এসে আহনাফের বাইকের সামনে দাঁড়িয়ে বললো”আমিও যাব”
.
আহনাফ জিসান আর পিয়াসের সাথে একটু হেসে নিয়ে বললো”কোথায় যাবে?”
.
দিবা দাঁত কেলিয়ে বললো”কোথায় আবার,,সাদাত স্যারের বাসায়,যেখানে আপনি যাচ্ছেন”
.
আর ইউ ক্রেজি??তুমি এখন সোজা বাসায় যাবা,এত স্বেচ্ছাসেবক হতে হবে না তোমায়
.
দিবা কোমড়ে হাত দিয়ে বললো”একটা নতুন বিশ টাকার নোট দিয়েছি চাঁদাতে,আমি না গেলে হয়?”
.
তো যাও,ধরে রাখছি আমি?
.
আমার কাছে টাকা নাই,স্যারের বাসা চিনি না,তাছাড়া আর কার সাথে যাব কাউকেই তো পাচ্ছি না
.
মিশকা আসছে তেড়ে,জিসান আর পিয়াস ওকে দেখে ফটাফট বাউক থেকে নেমে দাঁড়িয়ে পড়েছে,,জিসান বললো”হুম দিবা তুমি আহনাফের সাথেই যাও,আমরা দুজন আমার বাইকে যাব,আমার বাইক ওখানে পার্ক করা আছে$
.
দিবা হাসি দিয়ে আহনাফের পিছনে বসে গেলো,আহনাফ কিছু বলার সুযোগ পেলো না এদিকে দেরি হয়ে যাচ্ছে,সবাই মিলে একসাথে স্যারের বাসায় ঢুকবে কথা ছিলো
আর তার ভিতরে দিবা আহনাফের কানের কাছে ফিসফিস করে বললো”আপনার জীবনের একটা সত্য কথা আজ আমি জেনে গেছি,সুতরাং সেটা খালামণির কাছে ফাঁস করাতে না চাইলে চুপচাপ চলুন তো”
.
আহনাফ পিছনে ঘাড় ঘুরিয়ে বললো”কিসের সত্য?”
.
আহনাফের ভয় লাগলো এই ভেবে যে দিবা ওর বারে জব করা নিয়ে জেনে গেছে কিনা,দিবা আহনাফের কাঁধে আলতো করে হাত রেখে বললো”সেটা নাহয় পথেই বলবো,এখন চলুন,স্যারের বাসা থেকে আবার বাড়ি ফিরতে হবে”
.
হুম
.
আহনাফ বাইক স্টার্ট দিলো,,মেইন যে লিডার সে চাঁদা দিয়ে ফল কিনে সোজা বাসায় আসবে,,আর ঔষুধ এসব কিনবে স্যারের কথার উপর নির্ভর কর,এমন ও হতে পারে যে স্যার ঔষুধ কিনে ফেলেছেন
♣
হুম,বলো কি জানলা
.
দিবা একটু ভাব নিয়ে চুলগুলোকে কানের পিছনে দিয়ে আশেপাশের দৃশ্য দেখায় মন দিয়েছে
আহনাফের বলা কথায় কোনো পাত্তাই দিলো না সে
আহনাফ বাইকের স্পীড বাড়িয়ে দিতেই দিবা ভয়ে ওকে ঝাপটে ধরে বললো”বলছি,, বলছি,,আস্তে চালান”
.
আহনাফ তাচ্ছিল্য করে হালকা হাসলো তারপর স্পীড কমালো
দিবা ভ্রু কুঁচকে কথা শুরু করেছে এবার
“শুনলাম আপনার নাকি এঙ্গেজমেন্ট হয়ে গেছে?তাও লুকিয়ে চুরিয়ে?”
।
আহনাফ বাইক থামিয়ে ফেললো সাথে সাথে,তারপর আবারও বাইক স্টার্ট দিতে দিতে বললো”এসব ফালতু কথা কে বলে তোমায়?”
.
কে বলবে?পুরো ক্লাস বলছে,,জনতার ক্রাশ এঙ্গেজমেন্ট করে ফেলেছে তাও লুকিয়ে
.
এটা মিথ্যা কথা
.
শুনলাম কথাটা নাকি আপনি নিজেই বলেছেন ঐ সোনালী চুল আলা মেয়েটাকে
.
আহনাফ ঘাঁড় বাঁকিয়ে দিবার মুখটা এক নজর চেয়ে নিয়ে আবারও সামনে তাকিয়ে বললো”সব শুনছো নাকি সব নিজেই দেখছো”
.
বলতে পারেন নিজের চোখেই দেখলাম এবং কানেও শুনলাম
.
রাস্তা পুরোটা ফাঁকা,,আহনাফ জিভ দিয়ে নিচের ঠোঁটটা ভিজিয়ে হাতিরঝিলের উপর দিয়ে যাওয়ার সময় একটু এদিক ওদিক তাকাচ্ছে
আর দিবা ওর প্রশ্নের জবাবের আশায় ওকে দেখছে শুধু
.
আহনাফ বাইকের ফ্রন্ট মিররে তাকিয়ে বললো”আমাকে না দেখে হাতিরঝিল দেখো,তোমাদের খুলনায় এসব আছে?”
.
দিবা আহনাফের কথায় তাকালো সাইডের দিকে,,সত্যি অনেক সুন্দর,,তারপর নিচু স্বরে বললো”খুলনায় থাকলেও কি,আমি কখনও ঘুরতে যেতাম না,আমাকে নেওয়া হতো না,আচ্ছা এসব বাদ,আমার প্রশ্নের কিন্তু জবাব দিলেন না”
.
এগুলো গুজব,গুজবে কান দিও না
.
খালামণিকে জানিয়ে দেবো তার অগোচরে তার বড় ছেলে ঠিক কি করে,তখন বুঝবেন
.
বলো,,কি প্রমাণ আছে তোমার কাছে?মা তোমার কথা শুনে দাঁত কেলিয়ে বলবে”দিবা তুই আমার ছেলেকে এখনও চিনস নাই,ও এরকম না,,ওর পছন্দের মেয়ে ও নিজেই খু্ঁজে পাচ্ছে না আবার লুকিয়ে চুরিয়ে এঙ্গেজমেন্ট করবে?এটা নেহাত একটা কৌতুক হতে পারে”
.
ওহ!
.
দিবা মাথা চুলকালো,,ওর মাথায় ঢুকছে না তাহলে আহনাফ ঐ সোনালী চুল আলা মেয়েটাকে এত জোর দিয়ে বলছিল কেন যে ওর এঙ্গেজমেন্ট হয়ে গেছে?
.
আহনাফ টপিক চেঞ্জ করতে বললো”সাদাত স্যার আমার ফেভারিট স্যার,,উনি আমাকে বকতো বেশি আর ভালোবাসতো ও বেশি,,অনার্স শেষ করার পরেও উনার সাথে আমার সম্পর্ক শেষ হয়নি,তাই আজ উনাকে দেখতে যাচ্ছি আমি
চলবে♥