সবটা অন্যরকম পর্ব-৩১+৩২

0
3866

সবটা অন্যরকম♥
#পর্ব_৩১
Writer-Afnan Lara
.
রাত দশটায় আহনাফের রুমটাকে কেমন একটা ভূতুড়ে পরিবেশ বানিয়ে রেখেছে মিনি,খালামণি তার রুমে,,খালু গেছেন বাসার নিচে আড্ডা জমাতে
এই মিনিটা এসময়ে এটা কি করে ফেললো,,মূর্তির মতন দাঁড়িয়ে থাকা ছাড়া আর কিছু করতে পারবো কিনা ভেবে পাচ্ছি না,সামনে পাইলে ধরে আছাড় একটা মারতাম ওরে
নিজের কপালে একটা চড় মেরে দিবা ওড়না কোমড়ে পেঁচিয়ে শুরু করলো সবগুলো জামাকাপড় ফ্লোর থেকে তোলার কাজ
কত কত জামা লোকটার,অথচ সব কালো কালো,
কালো জ্যাকেট,কালো টিশার্ট,হাতে গোনা কয়েকটা মাল্টিকালার,একটা মানুষ কালো প্রেমী হলে বুঝি সব কিছু কালো রঙের কিনে রাখে?উফ!
একটা একটা করে ঝাড়তে হবে এখন,একটুখানি বালি পেলেও আমাকে সন্দেহ করবে লোকটা,এই মিনিকে নিয়ে হয়েছে যত জুটঝামেলা,আমার কাজ বাড়াতে দাও সেটা পারবে,ওরে আমার রুমে আটকে আসাই ভালো ছিলো
শার্ট দেখি শেষই হচ্ছে না,কতক্ষণে আলমারি গুছাবো আর কতক্ষণে উনার চাকরির রহস্য বের করবো
.
মিনিট দশেক পর বাসার মেইন দরজা খুলে ঢুকলো আহনাফ,,ডাইনিং রুমে আলো জ্বলছে তার মানে কেউ এখনও ঘুমায়নি মনে হয়,বাবাকে দেখলাম চায়ের দোকানে,যাক একসাথে আজ ডিনার করা যাবে
.
এসব কথা ভাবতে ভাবতে নিজের রুমের দিকে যাচ্ছে আহনাফ,দিবা সব গুছিয়ে লাস্ট একটা টিশার্ট নিয়ে ঝাড়ছে,ওটাই গোছানো বাকি
আহনাফ দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকতেই দেখলো দিবা ওদিকে ফিরে কি যেন নাড়ছে
তার মানে নিশ্চয় আবারও গোয়েন্দা গিরি করতে এসেছে,,দিবা!!????
.
আহনাফের গলা শুনে দিবার নিজের গলাই শুকিয়ে গেছে,ভয়ে পিছনে তাকাচ্ছে না সে,এসময়ে আসবে জানতামই না
এদিকে আহনাফ নিজেকে তার ড্রেসিং টেবিলের মিররে দেখে চমকে আরেকদিকে ফিরে গেলো
কি সর্বনাশ! আমি দেখি বারের শার্টটা খুললাম না
.
আস্তে করে হাতের ব্যাগটা বিছানার উপর ছু্ড়ে আহনাফ গায়ের জ্যাকেটটা খুলে ফেললো তারপর গায়ের শার্টটা খুলছে এখন,ভেতরে আরেকটা টিশার্ট আছে অবশ্য
.
দিবা দোয়াদরুদ পড়তে পড়তে পিছনে তাকালো,তার মুখের সামনে আহনাফের টিশার্টটা ধরে রেখে মুখ লুকিয়ে রেখেছে
.
অসহায়ের মতন কি আর করবে ভেবে না পেয়ে আস্তে করে বললো” সরি,আসলে আমি না মিনিকে খুঁজতে এসেছিলাম”
কথাটা বলে চোখ খুললো দিবা,ওমা আহনাফ দেখি দরজার দিকে ফিরে গায়ের শার্ট খুলছে,,আমাকে ধমক দিয়ে জামাচেঞ্জ করছেন কেন উনি?আমার কথা কি ভুলে গেছে?আচ্ছা ভুলে গেলেই ভালো,আমি বরং এই সুযোগে পালাই
দিবা টিশার্টটা ফেলে সাইড করে পালাতেই যাচ্ছিলো আহনাফ একহাতে টিশার্টটা খুলতে খুলতে আরেক হাতে দিবার হাতটা ধরে ফেললো ঠিকসময়ে
দিবা বুঝেছে আজ তার কপালে মাইর আছে আর নয়ত ইয়া বড় বড় ধমক সাথে মিনিও ধোলায় খাবে
.
যাচ্ছো কোথায়??রাত বিরাতে আমার রুমে এসে থাকছো,বিষয়টা তো আমাকেই খতিয়ে দেখতে হবে তাই না??তোমাকে ঐদিন কি বলছিলাম?আমার রুমে নেক্সট টাইম আসবে না,তাহলে আজ কি করছিলে?তাও ঐ সময়ে যেসময়ে আমার অফিস থেকে আসার সময়ই না
.
ইয়ে আসলে মিনিকে পাচ্ছিলাম না তো,ভাবলাম ও তো আপনাকে পছন্দ করে নিশ্চয় আপনার রুমে এসেছে
.
আচ্ছা ও আমার রুমে এসেছে?তাহলে আমার টিশার্ট হাতে নিয়ে তুমি মিনিকে খুঁজছিলে কেন?
.
না ওটা তো আসলে মিনি….
.
মিনি?
.
নাহহ,ওটা আলমারি থেকে পড়ে গেছিলো নিচে,আমি সেটা তুলে রাখতে চেয়েছিলাম
.
আমার আলমারি খুলতে হাতের কঠোর শক্তি প্রয়োগ করতে হয়,আর আমার সেই আলমারি থেকে কিনা টিশার্ট পড়ে ছিলো?কেউ দরজা না খুললে তো আর এমনি এমনি ভেতরের জিনিস ফ্লোরে পড়ে না
.
দিবা অসহায়ের মতন একটা লুক নিয়ে আহনাফের দিকে তাকিয়ে কাঁদো কাঁদো স্বরে বললো”হাত ছেড়ে দিন,আর কখনও আসব না”
.
ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল আমার মধ্যে এফেক্ট করে না
.
দিবা হাতটা নড়াচড়া করতে করতে ভাবছে ভেগে খালামণির কাছে ছুটে যাবে নাকি অন্য কিছু করবে
কিন্তু কথা হলো আমি যদি খালামনির কাছে যাই উনিও যাবেন,তখন উনি খালামণিকে বলবেন আমি তার রুমে কারণে অকারণে যাই,ইস তখন তো খালামনি খারাপ ভাববে আমায়
.
আহনাফ হাতে এক টান দিয়ে বললো”কি এত ভাবো?আমার রুমে আসছো কেন খোলসা করে বললে হাত ছেড়ে দেবো”
.
দিবা জানে সত্যিটা বললে আহনাফ ওর তেরোটা বাজিয়ে দেবে,তাহলে কি বলবো?
.
আহনাফ দিবার হাত ধরে টেনে নিয়ে বিছানায় জোর করে বসিয়ে দিলো তারপর নিজের আলমারিটা খুলে দেখলো সব ঠিক আছে গুছানো
আর উপরে থাকা ব্যাগটাও ঠিক আছে
দিবা বারবার দরজার দিকে তাকাচ্ছে,পালাবো?যদি পালাতে না দেয়,আচ্ছা পালিয়ে দেখি
.
আহনাফ বাসায় পরার শার্টটা খুঁজতে খুঁজতে বললো”আমি কি চাকরি করি সেটা জেনে তোমার কি লাভ,তোমার ঠিকমত খরচ জোগাচ্ছি,তোমার মিনির খরচ দিচ্ছি,তোমার সব চাহিদা পূরন করছি আর কি চাই তোমার?”
.
দিবা এক ছুটে পালিয়ে গেছে ততক্ষণে
আহনাফ সেটা টের পেয়ে শার্টটা নিয়ে ওদিক ফিরে তাকিয়ে কোমড়ে হাত দিলো তারপর বললো”পালিয়ে যাবে কোথায়?”
.
পর্দার আড়াল থেকে খচখচ আওয়াজ আসছে সেই কখন থেকে,,আহনাফ সেদিকে খেয়াল না করে গায়ের টিশার্টটা পাল্টে নিলো তারপর বিছানায় এসে বসতেই খেয়াল করলো পর্দার আড়ালের শব্দটা
এগিয়ে এসে পর্দাটা সরাতেই সে দেখলো মিনি চোরের মতন বসে আছে ওখানে,পর্দা সরাতেই সে এক দৌড়ে পালিয়ে গেলো
“চৌদ্দ গুষ্টি নিয়ে আমার রুমে করছিলো কি এই মেয়েটা?”
.
ভাবতে ভাবতে আহনাফ বিছানায় লম্বা হয়ে শুয়ে পড়ে আলমারির উপরের ব্যাগটার দিকে চেয়ে রইলো
ওটার ভেতরে লুকিয়ে রাখা ছবিগুলো দেখেনি তো আবার?দেখিতো চেক করে,,আমার হিসেব মতে ওখানে ষোলোটা ছবি আছে

হুমমমমম,এই ছবির মাস্ক পরা ছেলেটা রহস্য সৃষ্টি করছিলো,আমার এখন এর সাথে আহনাফের মিল বের করতে হবে
আচ্ছা এমন নয়ত যে এই লোকটাই উনি?না না,, উনি কেন হবে?? এই লোকটার হাতে ইয়া বড় ট্যাটু আঁকা আর আহনাফ ভাইয়ার হাতে তো সেরকম কোনো ট্যাটু দেখলাম না আমি,তাছাড়া খালামণি বলেছিল উনি ব্যাংকে জব করেন
তাহলে কেন বার নামটা উনার সাথে এভাবে জড়িয়ে আছে??
.
মা,ও মা,খেতে দাও
.
কথাটা শুনে দিবা ওড়না নিয়ে ছুটে গেলো খাবার দেবে বলে,রুম থেকে বের হতেই দেখলো আহনাফ দাঁত কেলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ঠিক ওর সামনে,দিবার আর বুঝতে বাকি নেই যে আহনাফ ওকে বোকা বানিয়ে রুম থেকে বের করেছে
ঢোক গিলে দিবা হাতের ছবিটা লুকিয়ে ফেললো
.
আহনাফ ব্রু নাচিয়ে বললো”তা দিবা,আমাকে আমার রুমে থাকা ছবিটা ফেরত দিবা?”
.
দিবা জোর করে হাসার চেষ্টা করলো,হাসতে হাসতে দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে বললো”সত্যি আমার কাছে কোনো ছবি- টবি নেই”.
.
আহনাফ নিজের হাতটা দিবার মুখের সামনে ঘুরাতে ঘুরাতে বললো”সোজা আঙ্গুলে ঘি না উঠলে কি করতে হয় জানো?”
.
আঙ্গুল ব্যাঁকাতে হয়
.
কারেক্ট!!তাহলে তুমি কি চাও তোমার হাতের হাড্ডির জায়গা নড়িয়ে দিই মোচড় দিয়ে?
.
দিবা ভ্রু কুঁচকে বললো”সত্যি এমন করবেন?”
.
আহনাফ দুম করে দিবার পাশে দেয়ালের উপর হাত রেখে একটু ঝুঁকে বললো”ভবিষ্যতে আমার কপালে একটা বউ আছে বলেই তোমার দিকে এত সময় নষ্ট করতে চাচ্ছি না,চুপচাপ আমার ছবি আমায় ফেরত দাও নয়ত ঐ যে হাড্ডি সেটাকে জায়গা থেকে নাড়িয়ে দেবো”
.
দিবা চোখটা বড় করলো তারপর বললো”খালামণি!”
.
আহনাফ দেয়াল থেকে হাত উঠিয়ে চমকে পিছন ফিরে তাকালো দিবা সাথে সাথে নিজের রুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে ফেললো ভেতর থেকে,বড় বড় করে শ্বাস নিতে নিতে বিছানায় এসে দপ করে বসে পড়েছে সে
আহনাফ দেয়ালে একটা বাড়ি দিয়ে সোফায় গিয়ে বসলো
এই মেয়েটা এত চালু!!আর মা বলে ও নাকি ভাজা মাছ উল্টে খেতে জানে না
ওকে ফাইন!আহনাফ ও কম না,ছবিটা ওর কাছে থাকলে আমার মহাবিপদ,ছবিটা যে করেই হোক আবার আগের জায়গায় নিয়ে আসতে হবে আমায়,তবে এই মেয়েটা মনে হয় না সোজাসুজি দেবে আমায়
জোর করেও নিতে পারলাম না,অন্য কোনো ছেলে হলে গলা টিপে আদায় করে নিতো কিন্তু আমি কি করবো,আমার তো ওরে ছুঁতে গেলেও আমার ফিউচার ওয়াইফের কথা মাথায় আসে,তাই আর ছুঁতে পারি না,কিন্তু ছবিটা নিতে হলে কিছু একটা করতে হবে আমায়,এবং সেটা আজকেই
.
কিরে আহনাফ,এত জলদি আসলি??
.
আহনাফ মায়ের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো”হুম মা,আজ বারে…
.
বারে?
.
নাহ মানে আমার ব্যাংকে রঙ করা হচ্ছে তাই ছুটি
.
ওহ,এসময়ে কিসের রঙ করায়,কাল করালে তো কাল ছুটি পেতি
.
হুম
.
মা আহনাফের পাশে বসে বললেন”তোকে তো এসময়ে পাই না কখনও,আজ পেলাম,খুব গল্প করবো তোর সাথে,আরিফটাও নেই,ওকে ছাড়া মনটা কেমন কেমন করছে
.
আমি আছি না?
.
কথাটা বলে আহনাফ মায়ের কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো সোফায়
.
মা ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন”পরশুদিন তো মণিতার মেহেদি অনুষ্ঠান।তুই তো ভার্সিটি মিস দিবি না।অবশ্য দেওয়ার দরকারও নেই,অনুষ্ঠান তো রাতে হবে।
সন্ধ্যা থেকে।আমরা বিকালেই চলে যাব বরং।ঐবারের মতন কাজ করিস।আমি আর তোর বাবা একসাথে বাসে করে চলে যাব,আর তুই দিবা বাইকে আসিস।
বারতি খরচ তাহলে হবে না,আরিফ তো ওখানেই আছে
.
আহনাফ মাথা তুলে বললো”তোমার পা টা দাও ধরে মিনতি করি আমারে ঐ বিলাই আর দিবার ভার দিও না,দেখলে তো কি হয়েছিলো ঐবার”
.
২০০টাকা কি তোর কাছে কম লাগে?
আমার ছেলের উপার্জন করা একটা টাকাও আমার কাছে অনেক কিছু।দিবার যদি তোর সাথে যেতে সমস্যা হতো তাহলে হয়ত আমি কষ্ট করে হলেও দুইশ টাকা জমাইতাম,কিন্তু ওর তো সমস্যা হয়না,সমস্যা শুধু তোরই হয়
একটু মানিয়ে নিলে কি হয়?ভাব না মেয়েটা অসহায়,,তার বাবার পরিচয় ছাড়া,মায়ের পরিচয় ছাড়া সে আমাদের এখানে থাকছে,কথাটা বললাম কারণ নিজের মা ও কে দেখতে পারে না,স্বার্থপর হয়ে গেছে ইভান আর ইতির জন্য।
আমাদের উচিত ওর মন ভালো করার সবটা করা,আর তুই আছিস সারাক্ষণ ওকে বকাবকি, ওর বিড়ালকে বকাবকি নিয়ে,মেয়েটার মন খারাপ হয় না?
.
তুমি ওর হয়ে তদারকি করতেছো?আমি কিছু না?
.
মা আহনাফের কপালে চুমু খেয়ে বললেন”তুই তো আমার গোটা কলিজা,কিন্তু এখন দিবাও তো আমাদের পরিবারের একজন,ওকে তো সেভাবেই ট্রিট করতে হবে তাই না?”
.
ওকে বলবা আমার পার্সোনাল লাইফে যাতে ইন্টারফেয়ার না করে,আমার এসব পছন্দ না,তুমি জানো? ও বিশ্বাস করে না আমি কিসের জব করি
.
মা মুচকি হেসে বললেন”বাচ্চা মেয়ে,বাসায় থেকে কি আর করবে,তোদের দেখে মনে হয় কত কাল ধরে এরকম খুনসুটি করিস,অথচ দিবা এই বাড়িতে এসেছে এখনও এক মাস হলো না”
.
সেধে সেধে ও আর ওর ঐ আজাইরা বিড়াল আমার পিছনে লেগে থাকে,ডিউটিতে গিয়েও শান্তি নাই,আর এখানেও..
.
ডিউটিতে শান্তি নাই কেন রে?
.
ওহ কিছু না,খাবার রেডি করো,খেয়ে এক ঘুম দেবো
.
মা উঠে গেলেন খাবার টেবিলে আনতে,বাবা এসেছে মাত্র,আহনাফকে দেখে ওর পাশে এসে বসলেন উনি,দিবা দরজাটা একটু ফাঁক করে বাহিরে তাকালো,বাহিরে মুখটা বের করতেই দেখলো আহনাফ পায়ের উপর পা তুলে ওর দিকে এমন করে তাকিয়ে আছে যেন বাঘ আর হরিণ একে অপরকে দেখছে
আহনাফ বাঘ আর দিবা হরিণ
আহনাফ চোখ দিয়ে ইশারা করলো এদিকে আসতে,মুখ দিয়ে কিছু বললো না কারণ পাশেই বাবা বসে আছে,আর রান্নাঘরে মা
দিবা ভয়ে আবারও দরজা লাগিয়ে ফেললো,এই ছবিটা তাহলে দিয়ে দিতে হবে,নাহলে এই লোকটা আমাকে রুম থেকেই বের হতে দিবে না
চলবে♥

সবটা অন্যরকম♥
#পর্ব_৩২
Writer-Afnan Lara
.
মা টেবিলে খাবারের প্লেট রেডি করতে করতে দিবার রুমের দিকে একবার তাকালেন।
রুমটা দেখি বন্ধ করে রেখেছে। কিন্তু দিবা তো এরকম না। ওর তো রুমের দরজা সবসময় খোলা থাকে। শরীর খারাপ নাকি?
মা টেবিল ছেড়ে এগিয়ে গিয়ে দিবার রুমের দরজায় কয়েকবার নক করে বললেন”কিরে?খাবি না?দিবা,কি হয়েছে তোর?”
.
দিবা আস্তে করে বললো”খিধে নেই। পরে খেয়ে নেবো।তোমরা খেয়ে নাও”
.
ওমা সেকি কথা। পেট ব্যাথা করছে?গ্যাস্ট্রিকের ঔষধ খাবি আয়,আর এরকমভাবে দরজা বন্ধ করে রেখেছিস কেন?দরজা খোল
.
না না।আমি ঠিক আছি।তোমরা খেয়ে নাও যাও
.
মা আর কি করবেন চলে আসলেন টেবিলের কাছে।
দূর থেকে আহনাফ সবটা খেয়াল করছিলো।
সে বুঝেছে দিবা এখন ওর ভয়েই বের হচ্ছে নাহ।কিন্তু একবার না একবার তো বের হবেই।তখন দেখা যাবে
মুচকি হেসে আহনাফ চেয়ার টেনে বসলো। মা আর বাবাও বসলেন।শুধু আসলো না দিবা। ওদিকে তার খিধায় পেটে ঘোড়া -গাড়ি সব দৌড় লাগাচ্ছে। মিনিও না খেয়ে আছে
ওর প্রতি মায়া লাগায় দিবা দরজা ফাঁক করে ওকে রুম থেকে বের হতে দিলো
মিনি এই সুযোগে খালামণির কাছে এসে বসেছে।
খালামণি ওকে দেখতে পেয়ে দিবা যেরকম করে খাবার দেয় সেরকম করে খাবার দিলো ওকে। ওর খাবারের বাটি সবসময় টেবিলের নিচে থাকে তাই খোঁজাখুঁজির ঝামেলা নেই
সেটাতে খাবার দেওয়ার পর সেও খুব মজা করে এখন খাচ্ছে। আর দিবা অপরাধীর মতন বসে আছে তার বিছানায়। সবাই চলে যাওয়ার পর লুকিয়ে চুরিয়ে সে যাবে খাবার খেতে।ঐ লোকটা তো মনে হয় খাবার খেয়েই ঘুমোতে যাবেন তখন বলছিলেন উনি অনেক টায়ার্ড। আমি শুনেছি
হুম তাহলে আমি বরং অপেক্ষা করি কিছুক্ষন। ভাবনা-চিন্তা বন্ধ করে দিবা বারান্দার কিনারায় এসে দাঁড়ালো। ফুলের গন্ধে মনে হলো বারান্দাটা এবার বুঝি পরিপূর্ণ হয়েছে। কিন্তু আরও ফুল প্রয়োজন। টাকা হলেই আরও কয়েকটা আনাবো।আমার এই বরান্দাতা অনেক বড়!সাজাবো ও অনেক কিছু দিয়ে
আচ্ছা বারান্দা বিলাসের কথা পরে ভাবা হবে এখন আমি দেখি উনি উনার রুমের লাইট অফ করলেন কিনা
যদি অফ করেন তো আমি বুঝবো উনি ঘুমাতে গেছেন
বেশ তাহলে এটার অপেক্ষাই করি
বেশ কিছুক্ষণ ধরে অপেক্ষা করার পর দিবা দেখলো আহনাফ তার রুমের আলো নিভিয়েছে
ব্যস তার মানে উনি ঘুমোতে গেলেন,এই সুযোগটা আমাকে কাজে লাগাতে হবে
দিবা পা টিপে টিপে দরজার কাছে এসে দাঁড়ালো,আলতো করে ছিটকিনিটা ধরে নিচে নামালো সে
দরজাটা ফাঁক করে বাহিরে ডাইনিং রুমের গন্ধটা নাকে ঢোকালো সে
হুম!!গন্ধ বলে দিচ্ছে যে সবাই যে যার রুমপ এবং ঘুমে
তো দিবা কাজে লেগে পড়ো।
ছবিটা কোমড়ে গুঁজে খাবার খেয়ে আবার নিজের রুমে ফেরত আসতে হবে আমায়
উনাকে ছবিটা ফেরত দিব কি দিব না সেটা কাল দেখা যাবে আপাতত আমার এই পাহাড় সমেত খিধার অবসান ঘটাই আগে তারপর বাকিটা দেখা যাবে
.
পা টিপে টিপে ডাইনিংয়ের কাছে এসে চেয়ার আলতো করে টেনে বসলো দিবা
তার জন্য রাখা খাবারটা ঢেকে রেখেছে খালামণি
এখন চুপচাপ সেটা সাবাড় করে ফেলতে হবে
এক লোকমা মুখে দিয়ে খুব ভয় লাগলো ওর আর তাই দিবা লোকমাটা না গিলেই পাশে ফিরে তাকালো
.
নাহ! ভয় টা তাহলে শুধু শুধুই ছিলো। কারণ উনার রুমের তো দরজা বন্ধ
আমিও না!লোকটাকপ এত কেন ভয় পাচ্ছি। আমাকে তো আর কাঁচা গিলবে না
.
হুমম,কাঁচা কেন গিলবো?বরং তা না করে লবণ মরিচ দিয়ে কাঁচা গিলতে হেব্বি টেস্ট লাগবে
.
কথাটা কোনদিক থেকে আসলো?নাকি আমার মনের ভুল ধারণা। হ্যাঁ সেটাই হয়তবা। উনার রুমের তো দরজাই বন্ধ
ইস আমি একটা বেকুব। লাইট জ্বালালে কি এমন অশুদ্ধ হয়ে যেতো। এখন অন্ধকারে মনে হচ্ছে চারপাশে আমার অশরীরী চার পাঁচটা
.
আমি সমেত ছয়টা
.
কে বললো?
.
দিবার গলা শুকিয়ে কাঠ!চেয়ার থেকে উঠে পিছিয়ে গেলো সে। অন্ধকারে কিছুই দেখছে না। তবে গলাটা শুনে মনে হলো এটা আহনাফ। কখন কোন সময়ে এসে আমার পিছনে দাঁড়ালেন উনি। মজা করার জায়গায় আর সময় পান না
দিবা এক দৌড় দে এখন পরেরটা পরে ভাবিস
.
দিবা দিলো এক দৌড় কিন্তু আফসোস তাতে কোনো লাভ হলো না কারণ হাতটা ঠিকসময়ে ধরে ফেলেছে আহনাফ
ধরেছে তো ধরেছে ঠিক ওমন করেই সে তার জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে আর দিবা সে তো ঘুরতে ঘুরতে ফ্লোরে শুয়েও পড়েছে তাও হাত ছাড়াতে পারলো না
আহনাফ স্বাভাবিক গলায় বললো”হাত ধরা ছাড়া বেশি কিছু করলাম না আর
করার অধিকার নাই। তাছাড়া তোমার স্বামীর পক্ষ থেকে “না ” আর আমার ওয়াইফের পক্ষ থেকেও “না”
এত “না ” এর মাঝে কি করে তোমায় ছুঁই বলো?
তার চেয়ে বরং আমাকে আমার ছবি ফেরত দাও আমি ভালো মানুষের মতন তোমার হাতটা ছেড়ে দেবো”
.
কথাটা বলে আহনাফ হাই তুললো তারপর দিবার হাতে এক ঝাঁকুনি দিয়ে বললো”ভয়ের চোটে জ্ঞান হারিয়েছো?না হারালে ছবিটা দিয়ে দাও। আমার প্রচুর ঘুম পাচ্ছে।কাল কত কত কাজ
তোমাকে শপিং করিয়ে দেওয়া। ডিউটি। ভার্সিটি
সব সব একসাথে সো এটাইমে মশকরা করবা না একটুও
আর তোমার তো মনে হয় খাওয়াও হয়নি। চুপচাপ ছবিটা দিয়ে খেয়ে নাও আর তোমার ঐ আজাইরা বিড়ালটাকে আমার রুম থেকে বের করিয়ে নিয়ে নিজের রুমে যাও।সে সুযোগ পেয়ে এখন আবার আমার রুমে ঢুকেছে”
.
দিবা অসহায় এতিমের মতন বসে অন্ধকারে উপরে তাকিয়ে আহনাফের দিকে চেয়ে আছে।আহনাফ ঠিক কোথায় সেটা দেখছে না সে
খালামণির রুম থেকে আবছা আলো আসছে তবে ঐটুকুন আলোতে দিবা ভালো করে কিছু দেখতে পায় না
আহনাফ আর কিছু বলছে না তার মানে সে আর কিছু বলবেও না। তার ছবিটা চাই এবং সে কোনোমতেই সেটা দিবার কাছে আর বেশি থাকতে দেবে না
দিবা আর কি করবে? পড়েছে এক বিপদে। দরজার মুখ পর্যন্ত এসেও সে রুমে ঢোকার শক্তি পাচ্ছে না কারণ আহনাফের শক্তি তার চেয়েও দিগুন বেশি
চুপচাপ কোমড়ে গুজে রাখা ছবিটা বের করলো সে বাম হাত দিয়ে তারপর সেটা উপরে তুলে বললো”নিন!”
.
আহনাফ দিবার হাত থেকে ছবিটা নিয়ে নিলো তারপর সেটা এপিঠ ওপিঠ করে দেখে দিবার হাত ছেড়ে দিয়ে চুপচাপ হেঁটে চলে গেলো নিজের রুমে
আর দিবা এমন করে বসে আছে ফ্লোরের উপর যেন তার গয়না- গাটি,টাকা পয়সা সব খোয়া গেছে
মিনিট পাঁচেক শোক পালন করার পর দিবা নিচ থেকে উঠে মিনিকে ডাক দিলো কয়েকবার কারণ এরপর আবারও আহনাফের রুমে যাওয়ার মনমানসিকতা ওর নাই
মিনিকে কয়েকবার ডাকার পর সে চলে এসেছে রুম থেকে
আহনাফের রুমের টেবিলটার নিচে বসে ঘুমাচ্ছিলো সে
এই দিবাটাও না!বুঝতেই চায় না যে আহনাফকে মিনির অনেক পছন্দ। সে চায় সারাক্ষণ আহনাফের রুমে ঘুমাতে,খেলতে আরও কত কি
.
দিবা নিজের খাবারের প্লেটটা নিয়ে রুমে এসে কোনোমতে সব খাবার শেষ করে চুপচাপ হাত ধুয়ে শুয়েও পড়েছে
.
এরকরম জোর করে মানুষ?কি হতো ছবিটা আমার কাছে থাকলে?তার মানে নির্ঘাত কিছু একটা আছে তা নাহলে একটা ছবি নিয়ে এত রিয়েক্ট করার কোনো মানেই হয় না
কি যেন নাম ছিলে বার টার?হুমম মনে করার চেষ্টা করছি
হোয়াইটলকস্ বার!মনে পড়েছে।
কাল এই বারের সব খবরা-খবর আমি বের করবো মিঃআহনাফ

পরেরদিন সকালটা ছিল একটু অন্যরকম তবে হয়তবা দিবার কাছে সবটা অন্যরকমই ছিলো
চোখ খুললো সে বুলবুলি পাখির কিচিরমিচির আওয়াজে
বিষয়টা বুঝতে এক মিনিট দুই সেকেন্ড সময় লেগেছে তার
হুট করে এত সকাল বেলায় পাখির ডাকাডাকি তাও খুব কাছ থেকে শোনা যাচ্ছিলো
চট করে শোয়া থেকে উঠে পড়লো দিবা
ঘাঁড় ঘুরিয়ে বারান্দার দিকে তাকালো সে সবার আগে
বারান্দা থেকেই আওয়াজটা আসছে বৈকি
ফ্লোরে পা রেখে জুতোজোড়া না পরেই খালি পায়ে হেঁটে গেলো সে সেদিকে
এসে দেখলো এলাহি কান্ড।
একজোড়া বুলবুলি দম্পতি এসেছেন দিবার বারান্দায়।সাথে আবার তাদের ছোট্ট ছানাকে নিয়ে
বারান্দাটা লম্বাতে অনেকটা হওয়ায় একদম শেষের দিকে তারা তিনজন
বাবুকে গাঁদা ফুলগাছটার ভেতরের একটা ঢালে বসিয়ে তারা দুজন গ্রিলে বসে এদিক ওদিক চেয়ে খাবারের সন্ধান করছে
দিবা মুগ্ধ হয়ে দেখছে
বাচ্চাটা চুপ করে এদিক ওদিক দেখছে। মাঝে মাঝে মাথা ঘুরিয়ে নিজপর পাখনার নিচে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে চুলকাচ্ছে
কি সুন্দর তাই না?
না!!এত সুন্দর দেখার কপাল দিবার হইলো নাহ। ওপাশে থাকা লোকটার ধমকে বুলবুলি ও চেঁচামেচি বন্ধ করপ দিয়েছে
কিন্তু কথা হলো ধমক দেওয়ার কি আছে?
খোলা চুল ছিল বলে মুখের সামনে অনেক চুল এসে পড়েছিল দিবার। সেগুলো কানের কাছে গুজে দিবা পিছনে তাকালো
আহনাফ কোমড়ে হাত দিয়ে তাকিয়ে আছে এদিকে
দিবা কপাল কুঁচকে বললো”কি সমস্যা? সকাল সকাল ধমক দিয়ে শুরু করলেন। আমার সাথে কি মিষ্টি করে কথা বলা যায় না?”
.
না যায় না। কটা বাজে খবর আছে তোমার?
.
হু!সকাল পাঁচটা চার বাজে
.
সকাল না ভোর।নামাজ তো পড়োনি মনে হচ্ছে। আগে গিয়ে নামাজ পড়ো যাও! তারপর বাকিটা বলছি
.
কথা শেষ করেই আহনাফ বারান্দা থেকে চলে গেছে
দিবা ভাবলো তুমুল ঝগড়া করবে কিন্তু নামাজ শুনে আর ঝগড়া করলো না। আসলে ঠিকই বলেছে লোকটা। আমি এখনও নামাজ পড়িনি। জলদি করপ নামাজ পড়তে হবে
.
দিবা তাই চলে গেলো রুমের ভেতর
.
নামাজ শেষ করে দিবা জায়নামাজটা আলমারি তে রেখে রুম থেকে বের হলো। আহনাফ তখন জগিংয়ের জন্য যাচ্ছিলো। দিবা বের হয়েছে দেখে বললো”সকালে কোরআন শরীফ পড়ার অভ্যাস তৈরি করো।”
.
দিবা বললো”কোরআন শরীফ খালামণি পড়ছে। তার পড়া হয়ে গেলে আমি পড়বো”
.
আহনাফ তখন দরজা খুলেছিল। দিবার কথা শুনে দিবার তাকিয়ে সে বললো”আমার রুমে কোরআন শরীফ আছে।সেটা নিয়ে পড়ো”
.
দিবা মাথা নাড়িয়ে গেলো আনতে
.
এদিকে আহনাফ পায়ের আশেপাশে, সামনে পিছনে তাকিয়ে দেখলো কোথাও মিনি নাই
যাক ভালোই হয়েছে। নাহলে এই বিড়ালটা আমার জগিংয়ে ব্যাঘাত ঘটাতো
অবশ্য থাকলেও এক রকম ভালো লাগে। মনে হয় জগিংয়ের সময়টা জলদি শেষ হয়
.
যেমন ভাবা তেমন কাজ
প্রতিদিনকার মতন দরজা আটকানোর পর যেইনা আহনাফ সিঁড়িতে পা রেখেছে তখনি দেখলো মিনি তৃতীয় সিড়িতে বসে ওকেই দেখছে
.
আহনাফ মুখে হাসি ফুটিয়ে বললো”চলেন যাই।আপনাকেই মিস করছিলাম”
.
বাহ! মিনি আগে লুকিয়ে চুরিয়ে আহনাফের পিছু পিছু আসতো আর এখন কি সুন্দর সে আহনাফের পাশে হেঁটে যাচ্ছে
আসলেই ছেলেটা ভালো। ওর মন চায় জড়িয়ে ধরতে
কিন্তু ধরলেই তো “হা হা হাইচ্ছু” করবে,বকাবকি করবে তাই ধরছে না
বুঝি এসব ভেবেই মিনি আহনাফকে ধরছে না,তবে কি ভাবছেন মিনি এত ভালো বিড়াল?মোটেই না
তার মাথায় যে দুষ্টু বুদ্ধি কিড়বিড় করছে সেটা সে সুযোগ পেলেই আহনাফের গলা জড়িয়ে ধরবে
.
দিবা সব কাজ সেরে এবার নাস্তা বানাতে রান্নাঘরে ঢুকেছে
খালামণি বললেন আহনাফের জন্য সেমাই বানাবেন
ওর নাকি অনেক পছন্দ
সেমাইয়ের কথা শুনে দিবা মুখ বাঁকালো কারণ ওর একদমই পছন্দ না এই সেমাই। নুডুলস হলে আরেক কথা
যাই হোক খালামণি এই চুলায় সেমাই বানাচ্ছেন আর এপাশের চুলায় দিবা রুটির সাথে খাওয়ার জন্য ভাজি বানাচ্ছে
.
বুঝলি দিবা!মণিতার বিয়েতে তো কিছু একটা দিতেই হবে।তোর খালুর একটামাত্র বোন আবার তার একমাত্র মেয়ে বলে কথা
.
দিবা ভাজিতে হলুদের গুড়ো ছিঁটিয়প দিয়ে কপাল কুঁচকে বললো”কি দিবে ঠিক করেছো?”
.
খালামণি মজা করে বললেন”আদনানের বউ হিসেবে তোরে দিয়ে দিব নাকি কি বলিস?”
.
দিবা হাত থেকে চামচটাই ফেলে দিলো কথাটা শুনে
খালামণি হাসতে হাসতে এক পাশে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে বললেন”বোকা মেয়ে!!খালামনি হিসেবে কি মজাও করতে পারি না?সিরিয়াস হচ্ছিস কেন?”
.
ফ্লোর থেকে চামচটা তুলে ভেসিনের কাছে গিয়ে সেটা ধুতে ধুতে দিবা বললো”আসলে বিয়ের কথাটা শুনলেই ভয় করে আমার। আমি এখন পড়াশুনা ছাড়া এসব ভাবছি না”
চলবে♥