সবটা অন্যরকম পর্ব-৩৩+৩৪

0
3872

সবটা অন্যরকম♥
#পর্ব_৩৩
Writer-Afnan Lara
.
দিবা মূর্তির মতন বসে সেই কখন থেকে নাস্তা করছে।তার নাস্তা শেষ হওয়ার নামই নিচ্ছে না
এদিকে তার সাথে বাসার সবার খাওয়া হয়ে গেছে অথচ সে এখনও ধীরে সুস্থে রুটি ছিঁড়ছে তার ভেতর ভাজি ভরছে তারপর মুখে দিচ্ছে
তার এরকম হয়ে যাওয়ার কারণ হলো বিয়ের কথাটা
-খালামণি মজা করে বলেছে ঠিক তবে আমার যে ভয় লাগলো। যদি সত্যি এমনটা হয়ে যায়?
না না কিছুতেই হতে পারে না
.
-তোমার কি আজ ছুটির দিন?ভার্সিটিতে যেতে হবে না?এরকম সংয়ের মতন বসে বসে খেয়েই যাচ্ছো খেয়েই যাচ্ছো।
.
-ওহ হ্যাঁ।উঠছি!পাঁচমিনিট
.
দিবা তার প্লেটটা নিয়ে চলে গেলো রান্নাঘরের দিকে।
আহনাফ ততক্ষণে রেডি হয়ে বাসার সামনে বাইক নিয়ে বসে বসে পা নাড়ছে আর বারবার ঘড়ি চেক করছে
-দিবা এরকম দেরি তো করে না তবে আজ কি হলো ওর?
.
এসেছি!
.
আহনাফ ঘাঁড় ঘুরিয়ে তাকালো পাশে।
দিবা আজ আরেকটা সাদা রঙের জামা পরেছে
-এই মেয়েটা কেন সাদা জামা পরে?ও জানে না ওকে সাদা জামায় কেমন লাগে।অন্যরকম লাগে।মানে অতিরিক্ত ভাল্লাগে
ধুর কিসব ভাবছি!
হ্যাঁ,তা এত লেট কেন করলে?জলদি বসো।আজকে কয়েকটা ক্লাস করেই আমরা শপিংয়ে যাব
.
-ঠিক আছে
.
-ইভান কল করেছিলো
.
-কি বললো?

-বললো ইতির নাকি বিয়ে ঠিক হয়েছে,ছেলে প্রবাসী।সব ঠিকঠাক কিন্তু ওরা নাকি যৌতুক বেশি চেয়ে ফেলেছে।জসিম আঙ্কেল তাই অনেক বেশি টেনসনে আছেন সাথে ইভান ও
.
-যৌতুক নেওয়া পরিবারের সাথে সম্পর্ক না জোড়া লাগানোই ভালো
.
-ঠিক।কিন্তু ইতি নাকি ঐ ছেলেকে খুব পছন্দ করে ফেলেছে, বিয়ে করলে ওরেই করবে।তাছাড়া ওদের ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড ভালো।জসিম আঙ্কেলের ও অনক পছন্দ হয়েছে
.
-কি জানি।আমি কিছু বললেই যে দোষ হয়ে যাবে তাই কিছু বলছি না।
.
-আমরা কিন্তু আবাই ইতির বিয়েতে যাব
.
আমার যাওয়া তো মানা
.
আহনাফ আর কিছু বললো না।দিবাও না
দুজনে চুপ করে থাকলো।চুপ থাকতে থাকতেই ভার্সিটির গেটটা এসে পড়েছে
দিবা বাইক থেকে নেমে চলে গোলো সোজা আর দাঁড়ালো না
ক্লাসে ঢোকার সময় দেখলো সাদাত স্যার মিজান স্যারের সাথপ হেসে হেসে কথা বলছেন।
– তার মানে স্যারের শরীর ভালো হয়ে গেছে
.
দিবা এগিয়ে এসে বললো”স্যার আসসালামু আলাইকুম,কেমন আছেন?”
.
-ওয়ালাইকুম আসসালাম
এখন ভালো আছি,তোমার কি খবর?সামনে কিন্তু নবীন বরণ অনুষ্ঠান।মা বাবাকে নিয়ে আসিও।তোমার মা বাবাকে দেখার ইচ্ছা আছে আমার
.
দিবা মুখটা ফ্যাকাসে করে ফেললো তারপর ভাবলো বুঝতে দেওয়া যাবে না
মূহুর্তেই মুখে হাসি ফুটিয়ে সে বললো”আমি তো খুলনায় থাকি,এখানে খালামণির বাসায় থেকে পড়াশুনা করি।আমি বরং খালামণিকেই নিয়ে আসব।আজ আসি তবে”
.
দিবা চলে গেলো নিঃশব্দে
সাদাত স্যার চশমাটা চোখের সামনে ঠিক করে বসিয়ে ভাবলেন”খুলনায় যে আমার সেই প্রিয় মানুষটার স্বামীর বাড়ি।দিবা তাহলে খুলনার মেয়ে।আচ্ছা ও কি মৌসুমীকে চেনে?
ধুর!আমিও না বোকা!মৌসুমীকে চিনবে কি করে।খুলনা কতবড় শহর!

-কিরে আহনাফ মিশকা তোর পিছু ছেড়েছে?মনমরা হয়ে বসে আছিস কেন?
.
-না রে।বিয়ে না হওয়া অবদি এ মেয়েটা আমাকে জ্বালাবে।ঠিক এসময়ে আমি কেমনে আমার কল্পনার রাণীকে খুঁজে পাই বলতো?
.
-একটা কথা বল!তোর আশেপাশে এমন কাউকেই কি তোর নজর পড়ে না যার সাথে তোর কল্পনার সেই রাণীর মিল পাস?
.
-আশেপাশে বলতে কি বুঝাস?আমার কি দুই তিনটা মেয়ে ফ্রেন্ড আছে যে তাদের উপর এক্সপেরিমেন্ট করবো?
.
-আরেহ সেটা না!বললাম দিবার কথা
.
-তোর মাথায় কি পোকামাকড় আছে?আমার খেয়েদেয়ে কাজ নাই আমি ঐ দিবার সাথে আমার কল্পনার রাণীর মিল খুঁজে বের করবো
.
-খু্ঁজে দেখ না।দেখবি মিল পেয়ে গেছিস
.
– তুই যাবি নাকি ধাক্কাইয়া তোরে বিদায় করতাম
.
-হইছে! ভালো কথার তো ভাত নাই সেই প্রমান পাইলাম।ওকে বাই
.
যা তুই

লাইব্রেরি রুমে বসে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের একটা চ্যাপ্টার মনযোগ দিয়ে পড়ছেন সাদাত স্যার
তবে এত মনযোগে হঠাৎ ব্যাঘাত ঘটালো একটা ফোন কল
কলটা মায়ের ছিল তবে কল কেটে যাওয়ার পর ফোনের ওয়ালপেপারটা জ্বলে উঠায় সাদাতের পড়ার থেকে মন উঠে গেলো
ওয়ালপেপারে সেভ করে রাখা তারই ছবি।তবে তার গায়ের শার্টটা মৌসুমীর দেওয়া
এই ছবিটা পুরোনো।স্মৃতি হিসেবে এই শার্টটাই ছিলো শুধু
সাদাত সেটাকেই পরে একদিন ছবি তুলেছিলো ভার্সিটির একটা অনুষ্ঠানে
ইচ্ছে করেই সে ওয়ালপেপারে এই ছবিটা সেভ করে রেখেছে যাতে করে তাকালেই মৌসুমীর কথা মনে পড়ে যায়
আচ্ছা দিবা যদি মৌসুমীকে চিনে?চিনলেও তো চিনতে পারে
আমার কেন যেন মনে হয় দিবা মৌসুমীকে চিনে
একবার কি জিজ্ঞেস করবো?
.
দিবা রেশমীর সাথে কথা বলতে বলতে করিডোরে পা রাখতেই দেখলো সাদাত স্যার ক্লাস থেকে বেরিয়ে ওকে ডাকছে
.
দিবা তাই রেশমীর সাথে কথা বাদ দিয়ে স্যারের সামনে এসে দাঁড়ালো।
.
দিবা, ইফ ইউ ডোন্ট মাইন্ড আমি কি তোমায় কিছু প্রশ্ন করতে পারি?পার্সোনাল?
.
হ্যাঁ অবশ্যই স্যার
.
(নাহ!হুট করে মৌসুমীর কথা জিজ্ঞেস করলে দিবা অন্যকিছু ভাববে।ঠিক হবে না এটা জিজ্ঞেস করা।কথা কাটাতে হবে)
তোমার বাবার নাম কি?
.
দিবা চুপ করপ সাদাত স্যারের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো।তারপর ঢোক গিলে গলা ভিজিয়ে বললো”কেন স্যার?”
.
জানার ইচ্ছে হলো।তোমার বলতে মন না চাইলে বলো না
.
দিবা চোখ নামিয়ে ফ্লোরের দিকে চেয়ে রইলো তারপর আবার মুখটা তুলে বললো”আমার বাবা নেই”
.
কথা না বাড়িয়ে ছুটে চলে গেলো দিবা।কাউকে বাবার নাম বলতে তার ঘৃনা হয়।খারাপ লাগে।বুক ফেটে কান্না আসে।
.
সাদাত স্যার ঠাঁই দাঁড়িয়ে রইলেন।এসেছেন কি জিজ্ঞেস করতে আর জিজ্ঞেস করলেন কি।
দিবা ব্যাগটা ক্লাস থেকে নিয়ে বেরিয়ে গেলো।
ক্যামপাসে ঘুরে একটা খোলামেলা জায়গায় চুপ করে বসে থাকলো সে
আজ সাদাত স্যার জিজ্ঞেস করেছে কাল আরও অনেকে করবে
-কি বলবো?আমার বাবা জসিম?যে আদৌ আমার বাবা নন।নাকি বলবো সাদাত যে কিনা মানতেউ পারলো না আমার মাকে আর আমাকে
সুতরাং আমার বাবা নেই।হ্যাঁ এটাই বলবো সবাইকে
আমার বাবা নেই
.
দিবা চোখের পানি মুছে সামনে তাকাতেই দেখলো মিশকা দাঁড়িয়ে আছে
মিশকাকে চিনতে দিবার বেশি সময় লাগেনি।সোনালী রঙের চুল দেখেই মনে পড়ে যাওয়ার কথা
দিবা কিছু না বলেই শুধু চেয়ে আছে
.
-মিশকা চুলে হাত দিয়ে ঘুরাতে ঘুরাতে বললো”নাফির সাথে ঝগড়া হয়েছে বুঝি?”
.
-কে নাফি?
.
-নাফি তোমায় বলেছে আমাকে দেখলে সব কিছু না জানার ভান করতে?
.
-আজব তো!কোথাকার নাফি?আমি কোনো নাফিকে চিনি না
.
-দেখো!মিশকার সাথে মশকরা করবা না।তুমি নাফিকে চেনো নাকি চেনো না তা খুব ভালো করপ জানা আছে আমার।দেখি! হাত দেখাও তোমার
.

-কেন দেখাবো?
.
-তোমার হাতের আঙ্গুলে থাকা নাফির দেওয়া আংটিটা আমার চাই।ওটার উপর অধিকার শুধু আমার।সুতরাং নিজের ভালো চাইলে এখন সেটা আমায় দিয়ে দাও।নাহলে জোর করে নেওয়ার ক্ষমতা আমার আছে
.

দিবা নাক মুছে উঠে দাঁড়িয়ে নিজের দশটা আঙ্গুলে চোখ বুলিয়ে নিলো।আংটির ছিঁটেফোটাও নাই। তো আমি এই মেয়েটাকে কই থেকে আংটি দেবো

কি হলো কথা কানে যায় না তোমার?
.
এই দেখুন আমার হাত।কোথাও রিং দেখতে পাচ্ছেন?কোথা থেকে দেব আমি?
.
নিশ্চয় লুকিয়ে রেখেছো।আমার নাফির রিং আমাকে দাও বলছি
.
কোথাকার নাফি।আমি কোনো নাফিকে চিনি না
.
জিসান দিবার পাশে দাঁড়িয়ে বললো”আরেহ দিবা!!আহনাফকে তো চিনো”
.
জিসান ফিসফিস করে বলায় মিশকা শুনতে পারলো না।পরিস্থিতি সামাল দিতে ছুটে আসলো সে।দিবা ওর থেকে কথাটা শুনে এর আগামাথা কিছুই বুঝলো না
-নাফি আর আহনাফ কি এক নাকি।আর এই নাফিটা কে আবার!মাথায় ঢুকছে না কিছু।আবার রিং পাবো কই
.
জিসান নিজের আঙুলের আংটিটা বের করে দিবার হাতে ধরিয়ে দিলো লুকিয়ে তারপর চোখ মেরে দিয়ে বললো”এই তো রিং পেয়েছে দিবা।দাও দাও
মিশকাকে দিয়ে দাও”
.
দিবা মিশকাকে রিংটা দিয়ে আবারও জিসানের দিকে তাকিয়ে বললো”এসব কি?খোলসা করে বলুন তো”
.
মিশকা রিংটাকে চুমু দিয়ে পাগলের মতন ছুটে চলে গেলো
.
জিসান!!!হারামি!তুই আমারে ধোকা দিছস।আই উইল কিল ইউ!!!!
.
কলি দূর থেকে হিতের বিপরীত টা বুঝেছে
জিসানের পিঠে দুম করে কিল বসিয়ে কলার টেনে ধরে বললো”তুই পরকীয়া করস!!আমাকে চিট করে মরেও শান্তি পাবি না তুই মনে রাখিস”
.
দিবা এক পাশে দাঁড়িয়ে ফাইটিং দেখছে
আহা কি মারামারি। শুধু একজনকেই মেরে যাচ্ছে।আরেক পক্ষ মার খেতে খেতে শেষ
দিবার মন চাচ্ছে বলতে”ওয়ান!!!টু!!!এন্ড থ্রি।প্রথমপক্ষ বিজয়ী।ইয়ে!!!!”
.
-না ওসব বলা যাবে না।জিসান ভাইয়া মনে হয় আজ আমাকে বিপদ থেকে বাঁচিয়েছেন তবে আগে বুঝতে হবে কিরকম বিপদ।আমার হাতে আংটি ছিলো না কিন্তু ঐ মিশকা আপু আংটি আংটি বলে মাথা খাচ্ছিলো আবার আহনাফ ভাইয়াকে নাফি বলছিলো
তাহলে আহনাফের সাথে নাফির কি সম্পর্ক
.
দিবা তুমি যাও।আমি ওরে বুঝাচ্ছি
.
এই তুই কোথাও যাবি না।তোরা দুটোই মিলে আংটিবদল করেছিস তাই না?
.
এসব কি বলেন আপু।আমি তো জিসান ভাইয়াকে কয়েকদিন হলো চিনলাম
.
ওহ হো হো।কয়েকদিনেই আংটি বদল হয়ে গেলো তাই না?
.
ব্যস সবাই চুপ।।জিসান?তোকে কে বললো এত প্যাঁচাল লাগাইতে?
শুনো কলি!জিসানের সাথে দিবার কিছু নাই।আর আংটিটা ও দিবাকে আর আমাকে বাঁচাতেই দিয়েছে।আশা করি তোমার আর কিছু জানার নাই।সুতরাং থামো।কুল ডাউন!
.

কলি ব্রু কুঁচকে জিসানের দিকে চেয়ে রইলো
আহনাফ দিবার দিকে তাকাতেই দেখলো দিবা সন্দেহজনক লুক নিয়ে ওর দিকেই চেয়ে আছে
.
-দিবা তোমাকে পরে বুঝাচ্ছি।চলো এখন
.
-আগে বলুন ঐ নাফিটা কে আবার?
.
নাফি হলাম আমি।হ্যাপি?এবার চলো।এখানে থাকা আর ঠিক হবে না
.
আহনাফ দিবার হাত ধরে ছুটলো ভার্সিটির বাহিরের দিকে
.
দেখুন!যতক্ষন না বলবেন আংটির সাথে আমার আপনার কি সম্পর্ক ততক্ষণ আমি যাব না
.
আহনাফ নিজের ব্যাগটা দিবার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো”ফাইন!চলো আমর সাথে।তোমাকে বলছি আসল ঘটনা কি”
.
আহনাফ হাঁটা শুরু করলো।দিবাও চললো সাথে সাথে
বাইকের কাছে আসতেই আহনাফ ওকে বললো বাইকে উঠে বসতে
দিবা তাই করলো
আহনাফ দোকানের কাছে গিয়ে দু কাপ চায়ের কথা বলা একটা টুল নিয়ে দিবার সামনে বরাবার বসলো
.
দিবা পুরো ঘটনাটা জানার জন্য উদগ্রিব হয়ে আছে
.
তো শুনো!ঐ মেয়েটা আমাকে পছন্দ করে।আমি করি না
কিছুতেই ওর পিছু ছাড়াতে পারছিলাম না যার কারণে আমার ডেইলি দিন খারাপের চেয়ে খারাপ হওয়া শুরু করলো
আমি ওর পিছু ছাড়াতে মিথ্যে বললাম যে আমার একটা মেয়ের সাথে এঙ্গেজমেন্ট হয়ে গেছে
তারপরেও সে কথাটা বিশ্বাস করলো না
তো বাধ্য হয়ে একদিন জিসানকে বললাম ওর থেকে আমাকে বাঁচাতে
কিন্তু!জিসান কি করলো!!সে মিশকার সামনে বিপদে পড়ে বলে দিলো তোমার সাথে আমার এঙ্গেজমেন্ট হয়ে গেছে
চলবে♥

সবটা অন্যরকম♥
#পর্ব_৩৪
Writer-Afnan Lara
.
-আপনার বন্ধু কি দুনিয়াতে আমি ছাড়া আর কোনো মেয়ে পেলো না আপনার বাগদত্তা বানানোর জন্য?
.
-মিশকা রিয়েলে আমার উড বি কে দেখতে চেয়েছিলো বলেই এমনটা করতে হলো
.
-বুঝলাম।এখন চলুন শপিংয়ে যাই।আমার আবার জামা পছন্দ করতে ঢের সময় লেগে যায়।বিকাল পাঁচটাও বেজে যেতে পারে
.
-ফান করলে?যদি ফান করে থাকো তাহলে ঠিক আছে আর যদি সত্যি হয়ে থাকে তাহলে আমি শপিংয়ে যাচ্ছি না।আমার হাতে ওতো সময় নেই।বিশ মিনিটের ভেতরে গায়ে হলুদে পরার জন্য একটা শাড়ী,বিয়ে আর বৌভাতে পরার জন্য দুটো জামা আর মেহেদিতে মানে কালকে পরার জন্য একটা জামা কিনে নেবে।
সেখানে এক মিনিট দেরি হলে তোমাকে ওখানে ফেলে আমি বাসায় ফিরে আসব
.
-এমন কেন আপনি?একটু তো সময় দেবেন।পছন্দ করতে সময় লাগে কারণ শুরুতেই ভুলভাল জিনিস কিনে ঠকতে চাই না।তাছাড়া দামাদামি বলেও তো কিছু আছে নাকি?
.
-ওসব নিয়ে তোমায় ভাবতে হবে না।আমার বাজেট ভালো তোমায় নিয়ে।সুতরাং টাকার কথা ভেবো না
আর একটা কথা,কাস্টমার তিন হাজার বললে তুমি তোমার দাম পাঁচশ বলে বসে থাকবা এরকম যদি করো তো তোমাকে আমি ফেলে দেবো সাত তলা বিল্ডিং থেকে
.
-আরেহ না।টেনসন নিয়েন না।দাম বরং তিনশ চাইবো
.
তুমি!!
ওকে আর সময় নষ্ট করতে চাচ্ছি না।চা খেয়ে নাও সোজা বসুন্ধরায় যাব
.
না।নিউমার্কেটে যাব।বসুন্ধরাতে সব জিনিসের কড়া দাম জানা আছে আমার।ইভান ভাইয়া বলেছিল নিউমার্কেটে কম দামে ভালো জিনিস পাওয়া যাবে
.
নাহ।কম দাম হলে কি?সেটা বেশি দিন টিকবে না।ভালো জিনিসের দাম একটু বেশিই হয়
.
দিবা আর কিছু বললো না।
চা শেষ করে দুজনে এবার বসুন্ধরাতে এসেছে
শাড়ীর দোকানে বসে দিবা পছন্দ করতে চেয়েও পারছে না।
এমনিতে অনেক সময় লাগায় সে আর আজ বিশ মিনিটের কথা শুনে জলদি করবে না কি করবে সেটা ভাবতে ভাবতেই দশমিনিট শেষ করে ফেলেছে সে
.
আহনাফ দূরে বসে বসে ফোন টিপছিলো।দিবার এরকম এদিক ওদিক তাকানো দেখে তার আর বুঝতে বাকি নেই যে দিবা এখন পর্যন্ত কিছুই পছন্দ করে উঠতে পারেনি
তার মানে তাকেই কিছু একটা করতে হবে
তাই সে এগিয়ে এসে ফটাফট একটা শাড়ী দিবার দিকে বাড়িয়ে ধরে বললো”এটা ভালো”
তারপর জামার কর্নারের দিকে গিয়ে তিনটা জামা হাতে নিয়ে বললো”এগুলো ও ভালো”
.
দিবা চোখ বড় করে চেয়ে আছে
.
-কি হলো পছন্দ হয়নি?
.
-আপনার পছন্দ করা গুলো এতক্ষণ আমার নজরেই পড়েনি।বেশ দেখতে
.
-ব্যস হয়ে গেলো।নিন এগুলো প্যাক করে দিন
.
দোকানদার প্যাক করে দিতেই আহনাফ দিবার হাতে ব্যাগ গুলো ধরিয়ে দিয়ে বললো হাঁটা শুরু করতে। সে বিল পে করে আসছে
দিবা বললো সে দেখবে কত বিল হয়েছে।আহনাফ আর কি করবে ওকে দেখিয়েই বিলটা দিলো
পাঁচহাজার ছয়শ টাকা!!
দিবা চোখ কপালে তুলে বললো”এত??”
.
-তো?কি হয়েছে,তোমাকে বললাম না টাকার ব্যাপার নিয়ে ভাববে না।যাও হাঁটো।
.
দিবা হাঁটা ধরেছে আহনাফের কথা মতন।তার বেশ ভালোমতন মনে আছে কয়েকবছর আগে ইভান সবাইকে ঈদের শপিংয়ে নিয়ে গেছিলো।দিবাকেও নিয়েছিলো
ইতিকে ভালো দামের জামা কিনে দিলেও দিবাকে একদম কম দামি একটা জামা কিনে দিয়েছিলো সে
দিবাকে বোন বলে মানতে না পারাটাই বুঝি এর কারণ
কম দামি জামা পরতে পরতে দিবার অভ্যাস হয়ে গেছে
আর আজ এত দামি জামা পেয়ে তার অন্যরকম লাগছে
তাও একসাথে তিনটে জামা আবার শাড়ী ও
সব যেন স্বপ্নের মতন
এবার আহনাফের বাইকের উপর বসে দিবা মিটমিট করে হাসছে।নতুন জামা পেলে তার অনেক ভাল্লাগে আর আজ তো একসাথে এত!
.
আহনাফ বিল পে করে এসে দেখলো দিবা মুচকি মুচকি হেসেই যাচ্ছে
বুঝতে পারলো হাসির কারন তাও কিছু বললো না সে
নিজে নিজেই কিঞ্চিত হেসে বাইকে উঠে বসেছে এবার
দিবা একটু নড়ে বসে ওর কাঁধে হাত রাখলো
.
-কাল তো আমার সাথে একেবারে মণুদের বাসায় যাবে তাই না?
.
-হুম
.
-তোমার ঐ মিনিকে কি করবে তাহলে?
.
-খালামণি তো বললো উনি সাথে করে নিয়ে যাবে।মিনিকে তো একা রেখে যাওয়া রিস্কি
.
-হ্যাঁ।ভালো হয়েছে মা নিয়ে যাবে তা নাহলে আমাকে হাঁচির উপর হাঁচি দিয়ে যেতে হতো পুরো রাস্তায়
.
দিবার হঠাৎ একটা কথা মনে পড়ে হাসি পেয়ে গেলো
কোনো মতে মুখটা চেপে হাসি থামালেও আহনাফ ঠিক বুঝতে পেরে গেলো
ঘাঁড় ঘুরিয়ে বললো”হাসছো কেন?”
.
-না আসলে ঐদিন মিনি আপনার বিছানায় গিয়ে ঘুমিয়ে ছিলো তারপর আপনি জড়িয়ে ধরেছিলেন
.
-জঘন্য অতীত ছিল
.
-হাহাহাহাহাহা!!
.
-হাসি থামাও।একদম তোমার মত হয়েছে ঐ বিড়ালটা
.
বাসায় আসতে আরও সময় লেগে গেলো
একেবারে এখন বিকেল চারটা বাজে।আহনাফ সেই আগের মতই ব্যস্ত হয়ে পড়েছে খাবার খেয়ে ডিউটির দিকে ছোটার জন্য।তাড়াহুড়ো করে রেডি হয়ে নিলো সে
-আজ অনেক কাজ।কারণ কাল বারে অনুষ্ঠান আছে মিঃজহিরের
মণিতার মেহেদিতে অল্প কিছু সময় থেকে আবার ডিউটিতে চলে আসতে হবে আমায়

দিবা তার জামাগুলো খালামণিকে দেখিয়ে আলমারিতে তুলে রাখলো।ঠিক করে রেখেছে সবুজ রঙের জামাটা কাল মেহেদি অনুষ্ঠানে পরে যাবে সে
.
-হ্যালো আদনান,কিরে এসময়ে ফোন করলি?আমি এখন অফিসে যাচ্ছি
.
-আরে ভাই আমি আর আরিফ মিলে মহাবিপদে পড়েছি।এত কাজ একা সামলানো যায়?তুই প্লিস আয়
.
-ইম্পসিবল!এমনিতেই আমি মনুর বিয়ের জন্য ছুটি নেবো
আজ আবার ছুটি নিলে বস আমাকে মনুর বিয়ের দিনই ছুটি দেবে না।আমি পারবো না মাফ কর।আর আরিফ ওখানে কি করে?নিশ্চয় ফোন ঘাটঘাটি করছে।ওরে ধোলায় দিয়ে কাজে লাগা।ব্যাটা অনেক কাজের শুধু একটু আইলসা এই আর কি।কিন্তু মাইর দিলে ওর শরীরে জোশ আসে।ধুুরুম করে মাইর দিয়ে দে দেখবি আজকেই বিয়ের জন্য স্টেজ বানাই ফেলতে পারবে
.
-ধুরু মিয়া!তোরে কইলাম তুই আয় আর তুই আমাকে উদাহরণ দিচ্ছিস।যা তোরে বিয়ের দিন লেগ পিস দেবো না।বাই
.
-দিস না।বাই
.
আহনাফ চলে গেছে মাকে অফিসের কথা বলে
এদিকে দিবা ভাবছে আজ আবার আহনাফের রুমটা চেক করবে নাকি করবে না
পরে ভাবলো
-না থাক।কি দরকার জেনে।হয়ত সত্যি উনি ব্যাংকে চাকরি করেন
এত কিছু খোঁজ নিয়ে তো আমার কিছু লাভ হবে না
হ্যাঁ আগে জানতে চেয়েছিলাম কারণ ব্ল্যাকমেইল করবো বলে কিন্তু এখন মনে হচ্ছে লোকটা ওতোটাও খারাপ না।আমাকে কত কি কিনে দিলো তাহলে শুধু শুধু তাকে বিরক্ত করা কিংবা তার কথা অমান্য করা একদমই মন্দ হবে
কি বলিস মিনি?
.
-মিঁয়াও
.
-তোর নখে মেহেদি লাগিয়ে দেবো।অরগানিক।লাগাবি?
.
-মিঁয়াও
.
-না থাক।তোকে ওসব লাগাবো না।তুই তো এমনেই সুন্দর।একটা বউ খুঁজলেই তো পারিস।তোর এখন বিয়ের বয়স হয়েছে।তোর উচিত বউ বাচ্চা নিয়ে সংসার পাতার, সেটা আমার কাছে থেকেই।তোকে কখনও দূরে যেতে দেবো না বুঝলি?

আহনাফ আজ রিসিপশানে না বসে কন্ট্রোল রুমে এসে বসেছে।নাহিদকে বলেছে রিসিপশানে বসতে আর মিশকা আসলে বলতে যে আজ নাফি আসেনি
.
ঠিক যেমন ভাবা তেমন কাজ।বিকাল শেষ হতে না হতেই মিশকা এসে হাজির বারে।
রিসিপশানে নাফিকে না দেখে সে পেরেশান হয়ে নাহিদের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো ওর কথা
নাহিদ তো মিশকাকে দেখে তোতলানো শুরু করে দিয়েছে।তার মুখ দিয়ে মিথ্যা কথাই বের হচ্ছে না
তাও ঢোক গিলে আতঙ্কিত হয়ে সে বলেই দিলো আজ নাফি আসেনি
মিশকা গেলো চটে।মাথার চুলগুলোর ভিতর হাত ঢুকিয়ে টানতে টানতে একটা চেয়ার টেনে বসলো সে।রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে তার
নাহিদ আস্তে করে উঠে গিয়ে এক গ্লাস জুস এনে এগিয়ে ধরে বললো”নো এলকোহল,অনলি পিউর জুস।খেয়ে দেখেন ম্যাম”
.
মিশকা জুসের গ্লাসটা নিয়ে নাহিদের দিকে তাকিয়ে রইলো নাহিদ নিজের জায়গায় ফেরত এসে কাজের ফাঁকে ফাঁকে ওকে দেখছে
.
-তুমি আমাকে পছন্দ করো?
.

-না আসলে…
.
-আই নো।বাট কি করবো।আমি লাইক করি ওরে আর তুমি লাইক করো আমাকে।আমার আসলে কি করা উচিত সেটাই বুঝছি না
.
-” যাকে তুমি ভালোবাসো তাকে বিয়ে করোনা
যে তোমাকে ভালোবাসে তাকে বিয়ে করো”
.
মিশকা হাসলো তারপর বললো”যাকে ভালোবাসিনা সে আমাকে বাসলে আমি কি করবো?শুধু তার ভালোবাসা দিয়ে তো আর হবে না।আমার নিজের ও তো মন আছে নাকি?”
.
-সে মন দিয়ে কি লাভ হলো ম্যাম।নাফি তো আপনাকে লাইক করে না
এখন সেই ক্ষেত্রে আপনার কথাটা আমি কপিপেস্ট করে দিতে পারি।যেখানপ নাফি আপনাকে লাইক করে সেখানে আপনি কেন শুধু শুধু ওকে ভালোবেসে পড়ে আছেন
.
-হুম।ভাববার বিষয়।

-এই মেয়েটা কখন যাবে?কন্ট্রোল রুমের কাজ তো শেষ।এবার আমায় রিসিপশানে গিয়ে বসতে হবে
কিন্তু এখন যাওয়া যাবে না।গেলেই পড়বো মাইনকাচিপায়
.
-চলো নাহিদ, আমাকে নিয়ে লং ড্রাইভে যাবে।নাও ধরো আমার কারের চাবি।লেটস্ গো
.
মিশকা বেরিয়ে গেলো বার থেকে।
নাহিদ চাবিটা নিয়ে রোবটের মতন দাঁড়িয়ে আছে
আহনাফ পা টিপে টিপে ওর সামনে এসে বললো”এ তো সোনায় সোহাগা!! জলদি যা”
.
-বিশ্বাস হচ্ছে না আমার।একটা চিমটি কাটবি?
.
-নে দিলাম চিমটি, যা দেরি করিস না।
.
নাহিদ ছুটে গেলো।আহনাফ খুশি হলো এই ভেবে যে মিশকা নাহিদকে সুযোগ দিয়েছে।এবার এতে করে যদি তাকে ভোলে

দিবাকে মণিতা ফোন করে বললো কাল জলদি আসতে,মেহেদি লাগাতে সময় লাগবে বলে দিবাকে আগেই আসতে বললো সে
দিবা বললো সে আহনাফের সাথে আসবে,একা আসা কোনো মতেই সম্ভব না
মণিতা আর কি বলবে তাতেই রাজি হলো।আসলে তাকে দিয়ে ফোন করিয়েছিলো আদনান
কিন্তু তাও কাজ হলো না।দিবাও আসবে না,আহনাফ ও না
আসলে একেবারে রাত করেই আসবে ওরা
আর কি লাভ হলো।
.
খালামণি মায়ের সাথে কথা বলছে ভিডিও কলে
তা বুঝতে পেরে দিবা ছুটে গেলো।খালামণিকে ইশারা করলো যাতে ওর এই রুমে আসার কথা না বলে
দিবা দূর থেকে মাকে দেখছে।গায়ে হালকা হলুদ রঙের শাড়ী পরে মা বিছানায় বসে বসে খালামণির সাথে কথা বলছেন
মা একটা সময়ে জিজ্ঞেস করলেন-দিবা কেমন আছে
.
খালামণি ফোনটা দিবার দিকে ধরে বললো”দেখো তোমার মেয়েকে।ভালো ভালো খাইয়ে মোটা করে ফেলেছি”
.
-মা দিবাকে দেখে চমকে উঠলেন।এভাবে দিবার কথা জিজ্ঞেস করেই সাথেসাথে ওকে দেখতে পাবেন তা একদমই ভাবেননি তিনি
তাও দশ সেকেন্ড ওকে দেখে নিয়ে লাইনটা কেটে দিলেন
দিবা খুশি হলো মা ওকে দেখেছে।খুশি হয়ে ছুটে চলে গেলে নিজের রুমের দিকে
-মাকে দেখেছি এর চেয়ে খুশির আর কি হতে পারে
হয়ত আমি আরও বেশি খুশি হতাম নিজের চোখে নিজের বাবাকে দেখতে পেলে।আচ্ছা তিনি কি অন্য একজনকে বিয়ে করে সন্তানাদি নিয়ে এখন সুখে আছেন?
তিনি কি জানেন তার একটি মেয়ে আছে?হয়ত জানেন না।জানলেও বা কি।উনি কি সেধে খবর নিতে আসবেন?
নাহ!ভুল ভাবছি।হয়ত জানলে তার বুকে ধাক্কা লাগবে কিন্তু তার সংসার ভেঙ্গে যাওয়ার ভয়ে হয়তবা বুকের ভেতরই চেপে রাখবেন
আই উইস জীবনে একটিবার তার দেখা যদি আমি পেতাম
চলবে♥