সবটা অন্যরকম♥
#পর্ব_৩৫
Writer-Afnan Lara
.
-মা তোমার কি মনে হয় না আমাদের একবার খুলনায় যাওয়া উচিত?
.
-কেন যাবি সেটা তো জানি তাই জিজ্ঞেস করছি না। কিন্তু এখন গিয়ে কি হবে?মৌসুমী তার সংসার নিয়ে সব ভুলে এখন নিশ্চয় ভালো আছে।তাহলে কেন প্রতিদিন এক কথা বলিস তুই।মৌসুমীর ফুটফুটে বাচ্চা গুলো ও এখন বড় হয়ে গেছে। ওদের দেখে তোর আরও খারাপ লাগবে তাছাড়া ওর বাসা কোথায় সেটা তুই জানবি কি করে?
জানলেও বা কি!মৌসুমীর সাথে আমরা যেটা করেছি তোর কি মনে হয় জীবনে তোর মুখ দেখতে চাইবে?
.
-হুম।কি করবো।মনকে বোঝাতে পারি না যে
.
মা চোখের চশমাটা নিয়ে সাদা কাপড়ের টুকরো দিয়ে মুছতে মুছতে বললেন”সব তো আমার দোষেই। আমি যদি সেদিন মেনে নিতাম, আমার ছেলের জীবনটা এভাবে নষ্ট হতো না তাহলে।এই আঘাত আমি সইতে পারি না আর।বারবার তোর ফ্যাকাসে মুখটা দেখলে আমার সেসব মনে এসে যায়
কেন আমি সেদিন তোকে বাধ্য করেছিলাম মৌসুমীকে বাসা থেকে বের করে দেওয়ার জন্য।যদি হাসিমুখে মেনে নিতাম তাহলে হয়ত আজ নাতিপুতি নিয়ে আমার বেশ ভালো দিন কাটত।
.
-মৌসুমীর বড় বোন মৌয়ের কথা মনে আছে তোমার?উনার শ্বশুর বাড়ি তো ঢাকায়।যদি একদিন তার দেখা পেতাম তাহলে তার থেকে মৌসুমীর কথা শুনতে পারতাম।মনটাকে সান্ত্বনা দিতে পারতাম তাহলে।
আফসোস জীবনের সব কিছু হারিয়ে আমি এখন নিঃস্ব
♣
মিঃ জহির ফোন করে জানালেন কাল যেন কোনো কিছুতে কমতি না থাকে।আর কেকের অর্ডারটা যেন বার থেকেই দেওয়া হয়
সব দায়িত্ব বারের কর্মচারীদের উপর ফেলে তিনি নিশ্চিন্তে ওয়াইফকে নিয়ে কক্সবাজার গেছেন একদিনের ছুটিতে
সে কারণে আহনাফ আজ অনেক ব্যস্ত।নিহাদ ও আসছে না।এদিকে প্রিতম আর বাকিরাও কাজে লেগে আছে
আরেকটা হেল্পিং হ্যান্ড হলে বেশ হতো
আহনাফ নিজের কাজ ফেলে কন্ট্রোল রুম থেকে টুটুলকে আনিয়ে রিসিপশানে বসিয়ে রেখে গেলো কেক অর্ডার দিতে
ব্যাকারিতে গিয়ে কেক অর্ডার করে চলে যাওয়ার সময় ওর নজর পড়লো ছোট একটা কেকের উপর।
ছোট সাইজের কেক।এক পাউন্ড হবে
আজ বসুন্ধরাতে দিবা খাবারের দোকানগুলোতে কেক দেখছিলো বারবার।লাল- হলুদ কেক দেখে বারবার ওসবের দিকে তাকাচ্ছিলো সে
পছন্দ নাহলে কেউ এতবার তাকায় না তা জানা আছে ওর
আর তাই এই কেকটা সে প্যাকেট করে নিয়ে নিলো
দিবাকে দিলে হয়ত সে অন্য কিছু ভাবতে পারে তাই ভেবে আহনাফ মাকে দিবে আগে সেটা ঠিক করলো
.
কেকটা সমেত আবারও বারে ফিরে এসে এক পাশে কেকের প্যাকেট রেখে কাজে মন দিলো সে
ওদিকে দিবা তার বাগানে ঝাড়ু দিচ্ছে লাইট মেরে মেরে
কারণ মিনি সবে মাত্র একটা টবে উঠতে গিয়ে টবের গাছ সমেত ফ্লোরে কাইত হয়ে পড়ে গিয়েছিলো
টবটা পাতলা ছিলো, মাটিও কম ছিল সেখানে যার কারণে মিনি সহ পড়ে তুলকালাম করপ ফেলেছে
মাটি আর মাটি এখন
অন্ধকারে ফোনের লাইট দিয়ে টবটার সব মাটি একসাথ করে আবার সেগুলো টবে তুলে নিল দিবা
♣
-স্যার আজকের সব কাজ ডান।আর কিছু আছে?
.
বস নিজের ব্যাগটা হাতে নিয়ে বললেন”নাহ।আজকের জন্য সব কাজ শেষ।তুমি আজ আসো তাহলে।এমনিতেও আজ অনেক কাজ হয়ে গেছে।অন্য কেউ হলে কাল ছুটি ঘোষণা করতো কিন্তু যেহেতু কালই অনুষ্ঠান তাই আর কিছু করার নেই আমার”
.
-ইটস্ ওকে স্যার।পরশুদিন আমি ছুটি নেবো এমনিতেও।আমার ছোট বোনের বিয়ে।
.
-সেটা ডান।ওসব নিয়ে ভেবো না।সাবধানে যেও
.
আহনাফ বার থেকে বেরিয়ে বাইকে বসে কেকটার প্যাকপট ঝুলিয়ে বললো”মিনি তো কেক খাবে না।ওর জন্য কিছু নিলে ভালো হতো।মিনির যেন কি পছন্দ?দুধ,তাহলে দুধের প্যাকেট একটা কিনে নিয়ে যাব”
♣
-আজ যদি তুই আহনাফ ভাইয়ার রুমে গেছিস তো তোরে খুব মারবো।বুঝলি?
.
মিনি দিবার কথা না শুনার ভান করে বসেই আছে।দিবা মিনিকে ধমকিয়ে টিভি দেখায় মন দিলো আবার
তার প্রিয় একটা সিরিয়াল চলছে।খালামণি রান্নাঘরে তরকারি গরম করছেন।কলিংবেল বেজে উঠতেই দিবা টিভিটা অফ করে গেলো দরজা খুলতে
আহনাফ এসেছে।হাতের ব্যাগটা চেয়েও দিবাকে সে দিতে পারলো না।সোজা গিয়ে মাকে ডেকে টেবিলের উপর রেখে চলে গেলো সে
দিবা উঁকি দিয়ে প্যাকেটটা দেখছে
মা রান্নাঘর থেকে এসে বললেন”কেক?আমি তো কেক খেতে পারি না আমার সুগার আছে।হঠাৎ আনলি কেন?”
.
-খেতে মন চাইলো তাই আনলাম।তোমরা খাও।বাকি যেটা থাকবে সেটা আমি খাব
.
-আমি আর কি খাব
তোর বাবা আর দিবাই খাবে।আমি তো খাই না
.
-ঠিক আছে
.
দিবা তো কেকের কথা শুনে খুব খুশি হলো।কারণ আজ তার কেক খাওয়ার ইচ্ছে হয়েছিলো।এতগুলো জামা কিনে দিয়েছে বলে আর মুক ফুটে আহনাফকে বলেনি সে
খালামণি দিবাকে খেতে ইশারা করে চলে গেলেন নিজের কাজে
দিবা ছুটে এসে প্যাকেটটা খুলে ছুরি এনে এক পিস কেটে বসে পড়লো খাওয়ার জন্য
মিনি ড্যাবড্যাব করে দেখছে।মিনির জন্য মায়া হলো অনেক
পরে প্যাকেট হাতিয়ে একটা দুধের প্যাকেট পেলো দিবা
আহনাফ টিশার্ট পাল্টাতে পাল্টাতে বললো”ওটা মিনির”
.
ব্যস হয়ে গেলো।খুশির আর খুশি
দিবা নিজের খাওয়া বাদ দিয়ে প্যাকেট থেকে দুধটা ঢেলে দিলো মিনির বাটিতে
প্যাকেটজাত দুধ গুলো এমনি এমনি খাওয়া যায়
মিনি তো দুধ পেয়ে এক ছুটে এসে পড়লো খাবে বলে খুলনায় দিবা চুরি করে মিনিকে খাওয়াতো।ইতি আর ইভানের জন্য ডেইলি দুধের ব্যবস্থা করতেন জসিম।আর দিবার জন্য শুধু শুক্রবার
কারণ হাফ লিটারে ইভান আর ইতির হয়ে যেতো।দিবা খেলে আবার এক লিটার নিতে গিয়ে ঝামেলা পোহাতে হবে এই ভয়ে তিনি শুধু হাফ লিটারই নিতেন
দিবা যে টুকু পেতো সেটা মিনিকে খাওয়াতো চুরি করে।সপ্তাহে একদিন।পুরোটাই মিনিকে খাওয়াতো সে
মিনির প্রিয় বলে কথা
.
আহনাফ খুশি হলো মিনির খাওয়া দেখে।এতটা ভালোবাসে জানলে আরও এক প্যাকেট আনতো সে
মিনি চেটে পুটে পুরো বাটির দুধ শেষ করে এবার হাত বাড়িয়ে হাত চাটছে
.
দিবার কেক খাওয়া শেষ।বাকিটা ফ্রিজে রেখে সে গেলো খালামণিকে কাজে হেল্প করবে বলে
আহনাফ নিজের বই নিয়ে একটু বিছানায় গিয়ে বসেছে
মিনি লুকিয়ে ওর রুমের দরজার কাছে এসে বসে আছে।আহনাফকে দেখছে সে।
আহনাফ বইয়ের পৃষ্ঠা উল্টাতে গিয়ে দেখতে পেলো মিনিকে তাও খেয়াল না করার ভান করে পড়া শুরু করলো শব্দ করে
মিনি বুঝলো আহনাফ ওকে দেখতে পায়নি তাই পা টিপে টিপে ও আরেকটু এগিয়ে আসলো
আহনাফের সাথে সাথে হাঁচি এসে পড়েছে
হাঁচির আওয়াজ পেয়ে মিনি ভয়ে এক ছুটে পালিয়ে গেছে রুম থেকে
আহনাফ হাসতে হাসতে শেষ হয়ে যাচ্ছে।আসলে হাঁচির আওয়াজটা জোরেই হয়েছিলো।মিনির ভয় পাবারই কথা
♣
পরেরদিন সকাল হতে না হতেই মা মণিতাদের বাসায় যাবে বলে জিনিসপাতি ঠিক করছেন।একপবারেই যাবেন সেখানে তাই জামাকাপড় সব ব্যাগে ভরছেন এক এক করে
দিবাও গুছিয়ে নিয়েছে সব
শুধু আজকেই ভার্সিটিতে যাবে এরপর একেবারে মণিতার বিয়ে শেষ হলে ভার্সিটিতে যাবে তারা
মেহেদিতে পরার জামাটা পরে নিয়েছে সে।আহনাফ আজ অনেক সকালে জগিংয়ে গেছে বলে উঠার পর থেকে দিবা ওকে দেখেনি এদিকে মিনি ও নেই
প্রতিদিন আহনাফের সাথে পার্কে যাওয়া ওর অভ্যাস হয়ে গেছে
ওড়নাটাকে আজ মাথায় দিয়ে পরেছে সে।যেমনটা আহনাফ পছন্দ করে ঠিক সেরকম
আহনাফের বাইক ছাড়া আর কোনো উপায় নাই তাই আজ আর কাঁধে ওড়না নেওয়ার সাহস পেলো না দিবা
আহনাফ মিনিকে নিয়ে সবে ঢুকছে বাসায়।হাঁপিয়ে গেছে সে
আজ পার্কটাতে না গিয়ে আরও দূরে গেছিলো।সাথে মিনিও ছিলো
মিনির সাথে মজা করতে করতে কখন সে রাস্তা শেষ হয়ে গেলো বুঝতেই পারলো না
বাসায় ঢুকে নিজের তোয়ালেটা রুম থেকে এনে সোফায় এসে বসেছে সে
দিবা এক গ্লাস শরবত এগিয়ে ধরলো ওর দিকে
চমকে গিয়ে আহনাফ দিবার দিকে তাকালো কারণ এসময়ে দিবা রান্নাঘরে নাস্তা বানানোয় ব্যস্ত থাকার কথা আর সে কিনা শরবত নিয়ে হাজির।বিষয়টা ভাববার!
.
-ওভাবে কি দেখছেন।নাস্তা বানানো জলদি হয়ে গেছে বলে শরবতটা বানিয়ে ফেললাম আজ।মনে হয় বেশি হাঁটা হয়ে গেছে তাই না?
.
আহনাফ বলতে চাইছিল আজ সূর্য ঠিক কোন দিক থেকে উঠেছে কিন্তু পরে মাকে আসতে দেখে আর কিছু বললো না
চুপচাপ শরবতটা নিলো দিবার হাত থেকে
শরবত এক ঢোক গিলে এবার সে দিবার দিকে পুরোপুরি ভাবে তাকালো।ঘাড়ো সবুজ রঙের জামাটায় বেশ বানিয়েছে দিবাকে।তার সাথে মাথায় ঘোমটা দেওয়া যেমনটা আহনাফ আজ পর্যন্ত চেয়ে এসেছিলো
দিবা ঠিক তেমন করেই পরিপাটি হয়ে হাস্যজ্জ্বল চেহারা নিয়ে ওর সামনে এসে দাঁড়িয়েছে
অথচ এতদিন ধরে আহনাফ দিবাকে সঠিক পদ্ধতিতে ওড়না পরাতে গিয়ে কত কাঠখড় নাই পোড়ালো বাপরে বাপ
.
মা এগিয়ে এসে বললেন ফুফু নাকি বলেছে সকাল সকাল যেতে।তাই তারা এখনই রওনা হবেন মিনিকে নিয়ে
আহনাফ সেটাতেই রাজি হয়ে গেলো
দিবা মিনির মাথায় হাত বুলিয়ে বললো”আনাফকে জ্বালাবি না।খালামণির সাথে সাথে থাকবি ঠিক আছে?বাচ্চা কাচ্চা দেখলে ওদের সামনে যাবি না।বাচ্চারা দুষ্টুমির ছলে তোকে আঘাত করতে পারে।বুঝলি?আমি জলদি এসে যাব। কিন্তু ততক্ষণ তুই খালামনির কাছ থেকে নড়বি না একদম
ঠিক আছে?খালামণি তোকে ঠিকসময়ে খাবার দেবে খাওয়ার জন্য।”
.
আহনাফ গেছে রেডি হতে।আজ রেডি হয়েই একেবারে বের হবে।মা বলেছে আহনাফ আর দিবার ব্যাগ নিয়ে তারা যাবেন ওরা যেন ব্যাগ হিঁচড়ে ভার্সিটিতে না যায়
.
আহনাফ একটা সাদা রঙের পাঞ্জাবি পড়লো আজ।পুরোনো এটা।সবুজ রঙের নেই বলেই এটা পরেছে সে
হাতে ঘড়িটা পরে চুলগুলোকে এলিয়ে দিয়ে রুম থেকে বের হলো সে। পরক্ষনেই মনে পড়লো বারে যাওয়ার আইডিকার্ডটা নেওয়া হয়নি
ছুটে এসে আইডিকার্ডটা পকেটে পুরে তারপর সে দিবাকে ডাকলো আসতে
দিবা মিনিকে আরও কিছু বুঝিয়ে শুনিয়ে আহনাফের সাথে বেরিয়ে গেলো
আহনাফকে এর আগেও সাদা পাঞ্জাবিতে সে দেখেছিলো বলে তেমন একটা অবাক হলো না
তবে আহনাফকে বেশ ভালোই লাগছে তারপরেও সেটা দিবা মুখে বলবে না।আহনাফ যদি ব্যাঁকা কথা বলে বসে
অবশ্য বলাটা এত জরুরি ও না
নিশ্চুপ হয় দুজনে ভার্সিটিতে পা রাখলো।দিবা তার ক্লাসের দিকে গেছে আর আহনাফ তার ক্লাসে
প্রথমে দুজনকে একসাথে এমন সাজে দেখে সবাই ধরেই নিয়েছে ওরা আজ কোথাও যাবে।
দিবা ক্লাসে বসে ভাবছে মিনির কথা।এভাবে এত সময়ের জন্য সে মিনিকে কখনও একা ছাড়েনি।চিন্তা হয় অনেক
.
-ভাই তোর জন্য সুখবর।আজ মিশকা আসেনি।
.
-বাহ!এটার চেয়ে ভালো কিছু আর হতেই পারে না
মনটাই ভালো করে দিলি জিসান
.
-সেই খুশিতে ট্রিট দে
.
-চল তোদের চা খাওয়াবো
.
-তোর ফোন রিসিভ কর।বাজছে সেই কখন থেকে।সাইলেন্ট করে রেখেছিস কেন?
.
-আরেহ আমি তো খেয়ালই করিনি
ওয়েট এ মিনিট!
.
আহনাফ দূরে গিয়ে রিসিভ করলো।বসের ফোন ছিল
বস বললেন জলদি আসতে।নাহিদ একা সামলাতে পারছে না।মিঃ জহির এসে এখনও এটা ওটা পাল্টাতে বলছেন
চলবে♥
সবটা অন্যরকম♥
#পর্ব_৩৬
Writer-Afnan Lara
.
-পড়লাম ঝামেলায়।এবার দিবাকে কি করবো?
.
ভাবতে ভাবতে আহনাফ পকেটে হাত দিয়ে দুইশ টাকা বের করলো তারপর জিসানের পাশে গিয়ে বসে পড়লো চায়ের অর্ডার দিয়ে
দিবাকে টাকাগুলো দিয়ে বলবে একা একা চলে যেতে।
-বেশি দূর না।আর রাস্তা তেমন অনিরাপদ ও না।মেইন রোড দিয়েই বাসটা যাবে।
কি আর করবো? আমি পড়েছি বিপদে।বসকে না করাও যায় না এদিকে দিবাকে এসব জানানো ও যাবে না
.
পিয়াস দিবাকে ডেকে ক্লাস থেকে নিয়ে আনলো আহনাফের কাছে
.
-আমাকে ডেকেছিলেন?
.
-হুম।আসলে আমার অফিসে একটা ইম্পরট্যান্ট কাজ পড়ে গেছে।রাত ছাড়া ছুটি পাব না।তুমি এক কাজ করো, এই নাও টাকাগুলো।বাস ধরে ফুফুর বাসায় চলে যেও
ঠিকানা জানা আছে তো তোমার?
.
-দিবা টাকাটা হাতে নিয়ে দাঁত কেলিয়ে বললো”কেন জানা থাকবে না
অবশ্যই জানা আছে
.
-তাহলে আমি আসি।সাবধানে যেও
.
আহনাফ চিন্তা করেও দেখলো না দিবা কেন হাসিমুখে রাজি হয়ে গেলো হঠাৎ
তার এমন হাসির কারণ হলো সে এখন আহনাফকে ফলো করে ওর কাজের মূল পর্যন্ত পৌঁছাবে
দিবা তাই নিজের ব্যাগটা নিয়ে ছুটতে ছুটতে গেলো আহনাফের পিছু পিছু
আহনাফ ভার্সিটির বাহিরে এসে বাইকে বসে সেটা স্টার্ট করছিলো। দিবা সেসময়ে একটা সিএনজি ধরলো।বললো বাইকটাকে ফলো করতে
ব্যস হয়ে গেলো।সিএনজি ড্রাইভার আহনাফের বাইককে ফলো করতে করতে “হোয়াইটলকস্ “বারে এসে হাজির
.
দিবা একটু দূরেই নামলো। আহনাফ ভেতরে চলে যাওয়ার পর সে সামনে এসে দাঁড়ালো বার টার
-হুম!নামটা তো সেম যেরকম আমি উনার রুমের ছবিটাতে দেখেছিলাম।তাহলে এখানে চাকরি করেন উনি।তবে চাকরি নাকি অন্য কিছু করে সেটা নিয়ে তো এখনও মনে সন্দেহ জাগছে আমার
ভেতরে যাওয়া তো যাবে না।এসব বারে কত খারাপ খারাপ লোকেরা আসে জানা আছে আমার।কিন্তু ভিতরে না গেলেও তো কিছুই বুঝবো না
.
-কেন বুঝবে না?আমি আছি না?আমি তোমায় অক্ষরে অক্ষরে বুঝিয়ে দেবো
.
ইমরানের গলা শুনে দিবা ভয়ে দূরে সরে দাঁড়ালো
ইমরান পকেটে হাত ঢুকিয়ে এগিয়ে এসে বললো”ভাবতেই পারিনি এখানে সাজানো গোছানো থালা পেয়ে যাব
বাই দ্যা ওয়ে!আজ এই বারে আমার চাচার এ্যানিভার্সারি পালন হবে।চলো তুমি সহ ইঞ্জয় করবে”
.
কথাটা বলেই ইমরান দিবার হাত মুঠো করে ধরে ফেললো
.
-ছাড়ুন!আমি যাব না ওখানে
.
-তোমাকে তো যেতেই হবে।বাঘের গুহার সামনে এসে বলো ভেতরে যাবা না, আর বাঘ তোমায় যেতে দেবে?
তোমায় তো আজ যেতেই হবে
.
ইমরান দিবার হাত চেপে ধরে টেনে হিঁচড়ে ভেতরে নিয়ে গেলো
রিসিপশানে আজ আহনাফের জায়গায় নাহিদ বসেছে
আহনাফ গেছে মিঃ জহিরের সাথে কথা বলতে।উনার কি লাগে না লাগে তা উনি আহনাফকে বলতে পছন্দ করেন
.
-ছাড়ুন আমার হাত।ভালো হচ্ছে না কিন্তু
.
-নাহিদ ব্রো।আমার আর আমার জিএফের হাতে সিল মেরে দাও দেখি
.
-জোরজবরদস্তি করে আনছেন নাকি?
.
-আরে ওসব কিছু না।বারে ওর এলার্জি তো।আজ জোর করেই নিয়ে এলাম।জলদি সিল মেরে দাও
.
নাহিদ ইমরানের হাতে সিল মেরে দিবার হাতটা ধরতে যেতেই নাফি এসে বসলো চেয়ার টেনে।চোখে চশমা আর মুখে মাস্ক দিয়ে
দিবার হাতটা ধরে সে নিজেই সিল মারলো
দিবার চোখে পানি ছলছল করছে।সে একবার একদিকে তাকিয়ে আহনাফকে খুঁজে যাচ্ছে শুধু
আহনাফ থাকলে ওকে নিশ্চয় বাঁচাবে
.
ইমরান দিবাকে টেনে নিয়ে গেলো ওদিকে
.
-কিরে নাফি?ওদিকে কি দেখিস তুই?মেয়েটাকে চিনিস নাকি?
আমার মনে হয় ঐ ছেলেটা জোরজবরদস্তি করে এনেছে মেয়েটাকে।কিছু করবি?মেয়েটার হেল্প করা উচিত আমাদের
.
আহনাফ মাস্কটা একটু খুলে বললো”একদম নেশা ধরে যায় এরকম টাইপের ওয়াইন এনে খাওয়াই দে ছেলেটাকে আর মেয়েটার দিক আমি সামলাচ্ছি”
.
-ভাই সেটার কিন্তু দাম বেশি
.
-মিঃ জহিরের গেস্ট বলে কথা।খরচা উনি উঠাবেন।তুই তোর কাজ কর
.
নাহিদকে সব বুঝিয়ে আহনাফ উঠে চলে গেলো দিবার কাছে
দিবাকে বারে ঢুকতে দেখে প্রথমে ওর বিশ্বাসই হচ্ছিলো না
কারণ সে তো ওকে মণিতাদের বাসায় যেতে বলে এসেছিল
এখানে আসলো কি করে।চিনলোই বা কি করে
এখন কি করে ওকে বাঁচাবে সেটা ভাবতে গিয়েই ওর মাথায় আসলো এখানে সিনক্রিয়েট করলে সব ফাঁস হয়ে যাবে
তাছাড়া ইমরান ওকে এখানে দেখলে খবরটা পুরো ভার্সিটি করবে
সব সাইডে রেখে মাথায় রাখতে হবে যে দিবা আছে।দিবার ক্ষতি যাতে করতে না পারে সেদিকেও নজর রাখতে হবে তাকে
এতসব ভেবে আগে মুখ ঢেকে নিলো সে
ইমরান বারবার দিবার চুলে হাত দিচ্ছে।আরেক হাত দিয়ে দিবার হাত শক্ত করে ধরে রেখেছে
দিবা কাঁচুমাচু করতে করতে আহনাফকে খুঁজছে পুরো বারটায়
এত মানুষের ভীড়ে কোথাও আহনাফকে সে দেখছে না
যতবার চোখ ঘুরিয়েছে ঠিক ততবার ঐ মাস্ক আর কালো চশমা পরা লোকটাকে দেখেছে সে
আহনাফ ছাড়া যে আর কাউকেই আপন মনে হচ্ছে না
-কি দরকার ছিল এত তদন্ত করার।এখন পড়লাম নিজে বিপদে
অবশ্য আমি কি জানতাম এই ছেলেটা এখানেও এসে হাজির হবে
.
-কাকে খু্ঁজো দিবা মণি??তোমার আহনাফ ভাইয়া এখানে নাই
থাকার কথাও না।তাহলে তোমায় আজ কে বাঁচাবে আমার হাত থেকে?
.
নাফি ওয়াইনের গ্লাসটা শব্দ করে ইমরানের সামনে রেখে চলে গেলো
ইমরান এক নিমিষে পুরোটা খেয়ে বললো”ওয়ান মোর”
.
দিবার অসহ্য লাগছে এরকম পরিবেশে বসে থাকতে।আহনাফকে তো দেখলো ভেতরে ঢুকতে তাহলে ও গেলো কোথায়?
কোথায় বলার সাথে সাথে সম্পূর্ণ বারের ইলেক্ট্রিসিটি অফ হয়ে গেছে
অন্ধকারে ইমরান দিবার হাত ছেড়ে দিয়ে ফোন বের করছে আলো জ্বালাবে বলে ঠিক সেই মূহুর্তে আহনাফ দিবাকে গায়েব করে ফেললো
বারের উপরের তলায় কন্ট্রোল রুম। ওখানে নিয়ে আসলো সে দিবাকে
দিবার মুখে চেপে ধরায় ও চিৎকার করতে পারলো না
ওকে চেয়ারে বসিয়ে ওর সামনে বরাবর বসলো আহনাফ
দিবা চিৎকার করতে গেলো কিন্তু আহনাফকে দেখে আর সাউন্ড করলো না
কারণ ততক্ষণে আহনাফ চশমা আর মাস্ক খুলে ফেলেছে
.
চুলগুলোকে হাত দিয়ে ঠিক করে আহনাফ বললো”কি দরকার ছিলো যেচে বিপদ ডেকে আনার??আমার চাকরির খবর জানা এত জরুরি যে তুমি ইমরানের মতন একটা ছেলের সাথে বারে এসেছো?”
.
-না আমি উনার সাথে আসিনি।উনি আমাকে জোর করে এনেছেন।আমি তো শুধু আপনাকে ওখানে দেখে চলেই যাচ্ছিলাম
.
-দেখা হয়েছে তোমার??শান্তি হয়েছে?নাকি আরও বাকি?
.
দিবা মুখটা নিচু করে ফেললো
আহনাফ চশমা আর মাস্কটা আবারও পরে বললো”বারে আজ অনেক কাজ।আমি যাচ্ছি কাজে।এখান থেকে এক চুল ও নড়বা না।আমি যাওয়ার সময় তোমাকে নিয়ে যাব
এখানে চেয়ার আছে,টিভি আছে।বসে বসে টিভি দেখো।
.
কথা শেষ করে আহনাফ চলে গেলো হনহনিয়ে
দিবার কান্না পাচ্ছে। এসেছিলো কি করতে আর করতে হলো কি।
.
-কি ব্যাপার!দিবা গেলো কই।হেই দিবা।মাই ডার্লিং।কই তুমি?
.
আহনাফ রিসিপশানে এসে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে
দিবা কন্ট্রোল রুমে থেকে আহনাফকে দেখতে পাচ্ছে
কত বিজি সে এখন
এক হাতে কাস্টমারের হাতে সিল মারছে আরেক হাতে কম্পিউটারে টাইপ করছে
-তাহলে ম্যানেজারের কাজ করেন উনি এখানে।কিন্তু খালামণি আর বাকিদের মিথ্যে বলছেন কেন?উনারা সত্যিটা জানলে কি হতো?আমাকেও তো জানতে দেননি
আমি তো নিজে থেকেই এতদূর আসলাম।আর এখানে উনাকে সবাই নাফি নাফি বলে ডাকছিলো শুনলাম।আহনাফ বাদ দিয়ে নাফি?ঐ মিশকা আপু ও তো উনাকে নাফি বলে ডাকছিলেন
সব মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে আমার।সময় পেলে উনার থেকে আমি সব কিছুর উত্তর জেনে নেবো
.
দিবা আবার চেয়ারে বসে আহনাফের কথা মতন কার্টুন দেখায় মন দিলো
বিকাল গড়িয়ে এখন সন্ধ্যা ছয়টা বাজে।আহনাফ শ্বাস নেওয়ার ও সময় পাচ্ছে না
এদিকে দিবা বসতে বসতে চেয়ারেই ঘুমিয়ে পড়েছে
এত কাজের ভেতর মা,বাবা সাথে আদনান মিলে ফোন করেই যাচ্ছে করেই যাচ্ছে।কারণ হলো আহনাফ কেন এখনও দিবাকে নিয়ে আসছে না
আহনাফ বার থেকে বেরিয়ে সবার কল রিসিভ করে বললো তার অফিসে জরুরি কাজ পড়ায় সে দিবাকে নিয়ে সোজা অফিসে এসেছে।কোনো মতে সবাইকে সবটা বুঝিয়ে সে গেলো দিবার কাছে
দিবা চেয়ারে পা তুলে সেটাকে ভাঁজ করে চোখ দুটো বুজে গভীর ঘুম ঘুমাচ্ছে
আহনাফ ওকে ডাকতে এসে দেখলো মহারানী আরামসে ঘুমায়
আহনাফ জাগালো না ওকে
-জাগালেই বলবে খিধে পেয়েছে।কারণ সকালে নাস্তার পর দুজনের একজনেও কিছু খাইনি আমরা।আমার তো সয়ে যাবে কিন্তু ওর সইতে নাও পারে
.
গ্রাউন্ড ফ্লোরে আসার পর মিঃ জহির একটা প্লেট নিয়ে আহনাফের হাতে ধরিয়ে বললেন”থ্যাংকস এ লট!আমার এই দিনটা এত সুন্দর করে তোলার জন্য।এটা তোমার।পেট পুরে খাও”
.
আহনাফ প্লেটটা নিয়ে দিবার কাছে গেলো।ততক্ষণে দিবা উঠে পায়চারি করছিলো খিধায়
আহনাফ এগিয়ে এসে ওর হাতে প্লেটটা দিয়ে বললো”নাও এটা খেয়ে নাও
এখানে দুইপিস কেক, ফ্রাইড রাইস,চিকেন মাসালা আছে।এগুলো খেলে তোমার পেট ভরে যাবে”
.
-আপনিও তো কিছু খাননি।আমি কেক খাচ্ছি আপনি বরং রাইস আর চিকেনটা খেয়ে নিন
.
-তোমাকে যেটা দিছি ওটা খাও।আমার কথা ভাবতে হবে না
আমি এখানে কাজ করি।চাইলেই বাবা মায়ের জন্যও নিয়ে যেতে পারবো
.
প্লেটটা টেবিলে রেখে আহনাফ চলে গেলো আর দেরি না করে
দিবা ছুটে এসে টেবিলের কাছে চেয়ার টেনে বসে পড়লো খাওয়ার জন্য
পেট পুরে খেয়ে সে এবার শান্তিতে আবারও কার্টুন দেখছে
-উনার কাজ কখন শেষ হবে আর কখন আমরা মণিতা আপুদের বাসায় যাব
মেহেদির অনুষ্ঠান তো মনে হয় শুরু হয়ে গেছে এতক্ষণে
.
এক এক করে সব গেস্ট চলে যাচ্ছে।ইমরানকে টেনে হিঁচড়ে নাহিদ ওর চাচার গাড়ীতে তুলে দিয়েছে
আহনাফ সবার শেষে এখন খেতে বসেছে
নাহিদ ওর পাশে বসে বললো”ঐ মেয়েটা কে ছিল রে?”
.
-আমার খালাতো বোন
.
-শুরুতেই ওকে ছেলেটার থেকে ছুটাতে পারতি।শুধু শুধু কারেন্টের লাইন অফ করতে গেলি কেন?
.
-প্রথমত, আমার পরিচয় গোপন রেখে আমি এখানে জব করি
দ্বিতীয়ত, ইমরান আমার ক্লাসমেট।আমাকে বারে দেখলে সে এই খবর সারা দুনিয়া করতো।
তৃতীয়ত,দিবাকে ওর থেকে ছাড়াতে হলে মাইরধর করতে হতো এতে করে সিনক্রিয়েট হতো এরপর মিঃজহির পুরো বারটাকে মাথায় তুলতেন কারণ ইমরান তার ভাইয়ের ছেলে
.
-ওরে সাবানা!!এত দিক দেখার বুদ্ধি কই পাস তুই?
.
-মাথা থেকে।ওসব বাদ দিয়ে বল তোর আর মিশকার কি খবর?
মন গলেছে?
.
-ঠিক বুঝতে পারিনি।তবে শুধু হাসছিলো লংড্রাইভে যাওয়ার পর থেকে।আমিও হাসলাম
কিন্তু কিছুই বুঝলাম না আর
.
-বুঝবি বুঝবি।”লারকি হাসি তো পাসি”
.
-সেটাও হতে পারে।দোয়া করিও ভাই আমার
.
আহনাফ খাওয়া শেষ করে দিবাকে ডেকে পাঠালো।দিবা টিভি অফ কর একছুটে নিচে চলে এসেছে যেন এতক্ষণ এই ডাকের অপেক্ষাই করছিল সে
পুরো বার ফাঁকা।অল্প কজন আছে মাত্র
আহনাফ প্লেট রেখে হাত ধুতে গেছে
দিবা ওর অপেক্ষা করছে রিসিপশানে বসে
ও হাতটা ধুয়ে মুখ মুছতে মুছতে এসে বললো”চলো যাই।এমনিতেও লেট হয়ে গেছে।জলদি যেতে হবে”
.
দিবা ওর সাথে সাথে বাইকের দিকে গেলো
আহনাফ বাইকে বসে স্টার্ট দিতেই দিবা ওর কাঁধে হাত রেখে বললো”একটা কথা জানতে পারি?”
.
-হুম
.
-এসবের কথা খালামণি কিংবা অন্য কেউ জানে না কেন?
.
-জানে না কারণ আমি চাই না তাদের জানাতে
.
-কিন্তু কেন?
.
-তারা জানলে আমাকে এই চাকরিটা করতে দেবে না
আমি অন্য চাকরি নিতে পারি তাও নিব না কারণ ওসবে এই চাকরির মতন বেতন পাওয়া যাবে না
এতবড় একটা সংসার সামলাতে প্রচুর টাকার প্রয়োজন হয়।দশ -পনেরো হাজারে এসবের ধার চুকে না
তাছাড়া আমি খারাপ কাজ করছি না
রিসিপশানে বসা একটা ভালো পদ।কোনো কাজই ছোট হয় না
চলবে♥