সবটা অন্যরকম♥
#পর্ব_৪৯
Writer-Afnan Lara
.
-“কিন্তু আমি তো পাত্তা দিচ্ছি।দেখি উঠুন।খাবারটা খাওয়া হলে ঔষুধ খেয়ে নেবেন”
.
-“লাগবে না।আমি ঠিক আছি”
.
-“এত জেদ ধরলে আমি কিন্তু এখনই বাবার বাসায় চলে যাব বলে দিচ্ছি”
–
আহনাফ কপাল কুঁচকে বললো”যাও।এখনই যাও।তোমার যদি দেরি না সয় তো যাও।আমি কি বাধা দিচ্ছি?আমি বাধা দেওয়ার কে?”
.
-“ঠিক আছে।চলে যাচ্ছি”
.
দিবা রুম থেকে বেরিয়ে দুষ্টুমি করে মেইন দরজাটা খুললো আওয়াজ করিয়ে তারপর আবারও লাগালো।এরপর লুকিয়ে পড়লো সোফার কিণারায় এসে
আহনাফ রুম থেকে বেরিয়ে দরজা পর্যন্ত এসে দরজা খুলে এদিক ওদিক তাকালো।
-“দিবা কি সত্যি চলে গেছে নাকি?
কি করি এখন।দিবা??দিবা!!!”
.
-“আমি এখানে”
.
আহনাফ পেছনে তাকিয়ে দেখলো দিবা হাসতে হাসতে লুটোপুটি খাচ্ছে
আহনাফ ধরা খেয়ে মুখটা নিচু করে রুমের দিকে যাওয়া ধরতেই দিবা ওর সামনে দাঁড়িয়ে পথ আটকালো।হাত দিয়ে ওর গলা জড়িয়ে ধরে বললো”আমি খুব শীঘ্রই আপনার হবো।ততদিন অপেক্ষা করা যায়না?”
.
-“আমি কি বলেছি যে অপেক্ষা করতে পারবো না?আমার কষ্ট হচ্ছে তোমার আর মিনির চলে যাওয়ার কথা ভেবে”
.
-“রোজ ভার্সিটিতে এসে দেখা হবে আমাদের।দরকার হলে শুক্রবারেও ভার্সিটিতে আসবো।ঠিক আছে?”
.
-“ঘুমাবো।খাব না”
.
দিবা রাগী লুক নিয়ে বললো”তাহলে কিন্তু সত্যি সত্যি চলে যাব এখন”
.
আহনাফ দিবার হাত ধরে রুমের দিকে যেতে যেতে বললো”আচ্ছা তুমি খাইয়ে দাও।”
.
দিবা হাত ধুয়ে এসে আহনাফের পাশে বসলো খাবার খাইয়ে দেবে বলে।
মিনি কোথা থেকে এসে হাজির।আহনাফ ওকে কাছে নিয়ে এসে বললো”এরে বেশি মিস করবো”
.
মিনি যে অভিমান করেছিল সে কথা ভুলে গেছে আহনাফের ছোঁয়া পেয়ে।আদুরে হয়ে সে গুটিয়ে আহনাফের কোলের ভেতর শুয়ে পড়লো
দিবা চুপচাপ আহনাফকে খাবারটা খাইয়ে দিয়ে ঔষুধ খু্ঁজে আনলো।সেটাও খাইয়ে দেওয়ার পর মিনিকে কোলে নিলো চলে যাবে বলে।আহনাফ ওর হাতটা ধরে বললো”একটু বসো”
.
দিবা তাই মিনিকে নিচে ছেড়ে দিয়ে আহনাফের পাশে বসলো।আহনাফ শুয়ে আছে।দিবা আহনাফের চুলে হাত বুলাচ্ছে চুপচাপ
আহনাফ কখন যে ঘুমিয়ে পড়লো দিবা টেরই পেলো না।দিবার চোখে ঘুম নেই।নিজের চোখের সামনে আহনাফ আর মিনিকে ঘুমোতে দেখছে সে।এত সুন্দর দৃশ্য দেখার সময় কি কারোর চোখ জুড়ে ঘুম আসে?
তার পরেও রাত ১টার দিকে দিবার চোখ ও বন্ধ হয়ে আসলো।আহনাফের পাশেই গুটিশুটি দিয়ে শুয়ে পড়লো সে।
রাত আড়াইটা বাজতেই আহনাফ হঠাৎ জেগে গেছে।দিবাকে পাশে দেখতে পেয়ে মনে শান্তি পেলো ঠিক কিন্তু এটা ঠিক না,কেউ দেখে ফেললে অন্য কিছু ভাববে তা ভেবে দিবাকে সে ঘুম থেকে জাগিয়ে তুললো
দিবা ঘুম ঘুম চোখে শুধু বললো”পানি খাবেন?পিপাসা লাগছে?”
.
-“নাহ।যাও নিজের রুমে গিয়ে ঘুমাও।এখানে থাকাটা ঠিক না”
.
দিবা আহনাফের কথা মতন উঠে চলে গেলো।মিনিকে নিলো না
মিনি ওখানেই ঘুমাচ্ছে আরামসে
.
পরেরদিন সকালে দিবার আগে আহনাফ উঠে পড়েছে দিবার উঠতে দেরি কারণ সে কাল রাতে ঠিকমত ঘুমাতে পারেনি।আহনাফ জগিংয়ে যাওয়ার সময় দিবার রুমের দিকে একবার তাকালো।বাতাসে পর্দা সরে যেতেই এক ঝলক দিবাকে দেখলো সে
বালিশের উপর হাত ভাঁজ করে রেখে তাতে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে সে।মা উঠেছে সবে।দিবা নাস্তা বানাচ্ছে কিনা দেখতে এসে দেখলেন দিবা নেই রান্নাঘরে।আহনাফ বাসা থেকে যেতে যেতে বললো”আসার সময় হোটেল থেকে নাস্তা কিনে আনবো।কাউকে বানাতে হবে না”
.
মিনি লেজ নাড়িয়ে নাড়িয়ে আহনাফের সাথে চললো।দিবা ঘুম থেকে উঠেছে সাড়ে আটটার দিকে।এত দেরি হয়েছে দেখে ছুটে গেলো সে রান্নাঘরের দিকে।তার ছুটে আসা দেখে খালামণি বললেন”টেনসন করিস না।আহনাফ বলেছে আসার সময় নিয়ে আসবে”
.
-“ওহ।ঠিক আছে”
.
দিবা গেলো ফ্রেশ হতে।ঘন্টা খানেক পর আহনাফ মিনিকে সাথে করে আবার ফেরত আসলো।দিবা ডাইনিং টেবিলে প্লেট সাজাচ্ছিলো।দুজনের চোখাচোখি হলো কিন্তু একজনেও হাসলো না।দুজনের মুখেই কষ্টের ছাপ।কিছুক্ষণ পরেই দিবা এই বাসা ছেড়ে চলে যাবে তা ভেবেই তাদের কারোর মুখেই হাসি নেই।আহনাফ নাস্তার ব্যাগটা টেবিলে দিবার সামনে রেখে চলে গেছে নিজের রুমে
দিবা খাবার প্লেটে রেখে খালামণিকে ডাক দিলো।কলিংবেল বাজছে।এসময়ে কে আসতে পারে তাই ভাবছে দিবা।তার হাতে ঝোল লেগে থাকায় আহনাফের রুমের দিকে তাকালো সে।আহনাফ বিছানায় বসে এদিকেই চেয়ে ছিল।দিবার ইশারাতে উঠে আসলো দরজা খুলবে বলে
দরজাটা খুলতেই দেখলে সাদাত স্যার দাঁড়িয়ে আছেন।দিবাকে নিতে এসেছেন।আহনাফের মনটা আরও খারাপ হয়ে গেলো।ভেবেছিল দিবাকে নিজের সাথে করে ভার্সিটিতে নিয়ে যাবে।ঘুরবে তারপর বিকালে ওকে বাসায় দিয়ে আসবে কিন্তু স্যার দেখি সকাল সকাল চলে এসেছেন
খালামণি সাদাত স্যারকে দেখে হেসে বললেন”সাদাত আসো নাস্তা করবে আমাদের সাথে”
.
সাদাত স্যার মুচকি হেসে চেয়ার টেনে বসে বললেন”নিজের মেয়েকে বাসায় নিয়ে যাব বলে আর দেরি সহ্য হচ্ছিলোনা।কাল রাতে আমার ভাইয়েরা তাদের পরিবার নিয়ে এসেছে দিবাকে দেখবে বলে তাই জলদি চলে এলাম”
.
আহনাফ সোফায় বসে বলপয়েন্ট ঘুরাচ্ছে হাতের তালুতে রেখে।দিবা তার বাবার সামনে প্লেটটা এগিয়ে দিয়ে আহনাফের প্লেটটা নিয়ে ওর সামনে রাখলো তারপর নিজের প্লেটটা নিয়ে ওর পাশে এসে বসলো।খালামণি আর খালু স্যারের সাথে বসেছেন।স্যার তার ভাইদের কথা বলছেন উনাদের সাথে
দিবা পরোটা মুখে দিয়ে আহনাফের দিকে তাকালো।আহনাফ খাচ্ছে না
দিবার রাগ হলো আহনাফের এমন বিহেভ দেখে।কষ্ট পেলে মানুষ খাবারের সাথে কেন রাগ করে?
রেগে রেগে সে পরোটা নিয়ে আহনাফের মুখ টিপে ধরে মুখে পুরে দিয়ে বললো”রাগ আমারও আছে”
.
খাওয়া শেষ হতেই বাবা দাঁড়িয়ে রইলেন যাবেন বলে।দিবা ব্যাগটা নিয়ে বের হলো রুম থেকে।আহনাফ তার রুম থেকে বের হচ্ছে না বরং দরজা আটকে রেখেছে।দিবা খালামণিকে বলে বাবার সাথে চলে গেলো
বাসায় আসতেই দেখলো মানুষ আর মানুষ
সব সাদাতের আত্নীয় -স্বজন। সবাই এক হয়ে আছে বাসায়।দিবাকে দেখতে এসেছেন।দিবা ব্যাগটা রেখে মিনিকে বুকে ধরে বললো”আমার রুমটা দেখিয়ে দিন।”
.
-“আগে সবার সাথে আলাপ করো।কথা বলো।”
.
-“আমার ভালো লাগছে না”
.
-“কোণার রুমটা তোমার।যাও রেস্ট নাও”
.
দিবা ব্যাগ নিয়ে চলে গেলো রুমের দিকে।দরজা লাগিয়ে মন খারাপ করে জানালার পাশে এসে বসলো।মিনি চুপ করে বসে আছে ফ্লোরের উপর
রুমটাতে বিছানা,টেবিল, আলমারি, ওয়ারড্রব সব কিছুতে ভরপুর।খুলনায় তার রুমে একটা বিছানা আর টেবিল ছিল শুধু।আর এখানে এত কিছু
আহনাফদের বাসায় ও সব ঠিকই ছিল।মন বসছে না কিছুতেই।মন বলছে ছুটে চলে যাই উনার কাছে।
সারা দিন ধরে মেহমানে পুরো বাড়ি ভর্তি ছিল।দিবা আহনাফের মতন রাগ করে কিছুই খায়নি।বাবা খাবার দিয়ে গেলেও সে খাবারটা ছুঁয়েও দেখেনি।মা যদি একবার ফোন করে বলতো”তোর এরকম টানাটানিতে থাকতে হবে না।চলে আয় খালামনণির বাসায়”
.
সন্ধ্যা হয়ে গেছে।দিবা জানালার পাশ থেকে এসে রুমের লাইট জ্বালালো।মেহমান এখনও আছে।কথা শুনা যায়।দিবা দরজা খুলে উঁকি দিয়ে বুঝলো বাবার রুম থেকে আওয়াজ আসছে। সবাই মনে হয় ওখানে
দিবা আস্তে করে দরজা খুলে বাসা থেকে বের হলো। সোজা বাগানে আসলো সে
এখানে অন্তত নিরিবিলি মনে হচ্ছে।মিনি ফুলগাছ কতগুলো দেখে কোনটা রেখে কোনটার ঢালে উঠবে তাই ভাবছে।দিবা ফুলগাছগুলোয় হাত বুলিয়ে একটা আমগাছের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়ালো।মিনি একটা বিদেশী ফুল গাছের ডালে ঝুলে আছে।ঝুলতে ভালোই লাগছে।
হঠাৎ পাশ থেকে হাঁচির আওয়াজ আসতেই দিবা চমকে সেদিকে তাকালো।কালো জ্যাকেট পরা একজনকে দেখতে পেলো সে।আরেকদিকে ফিরে চোরের মতন একবার একদিকে তাকাচ্ছে লোকটা
দিবা এগিয়ে আসতে আসতে বুঝতে পারলো ওটা আহনাফ।কাঁধে হাত রাখতেই আহনাফ চমকে তাকালো দিবার দিকে
.
-“আমার সাথে মিট করতে এসে এত ভয়?”
.
দিবার কথার উত্তর না দিয়ে আহনাফ ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।মিনি ধুরুম করে গাছটা থেকে নিচে পড়ে গেছে আহনাফের কথা শুনে।তারপর ছুটে আসলো এদিকে
দিবা ফিসফিস করে বললো”বাবা দেখে ফেলবে”
.
আহনাফ দিবাকে টেনে গাছের পেছনে নিয়ে আসলো।দিবা নিজেকে ছাড়িয়ে বললো”চব্বিশ ঘন্টাও পূর্ন হয়নি”
.
-“তো?আর থাকা পসিবল হচ্ছিলো না বলেই চলে এলাম।
কিছু খাওনি মনে হয়।এরকম দূর্বল রোগীর মতন হয়ে গেছো কেন?”
.
-“আমি কি আপনার মতন যে রাগ করে খাওয়া অফ দিব?”
.
-“তোমার কথা বিশ্বাস করতে পারলাম না।চলো কিছু খাবে”
.
-“কোথায়?”
.
-“আমি যেখানে নিয়ে যাব সেখানে।”
.
-“কিন্তু বাবা?”
.
আহনাফ মুচকি হেসে দিবার হাত ধরে ওর বাসার দিকে নিয়ে যাচ্ছে
দিবা ভয়ে ভয়ে বললো”বাবা দেখলে খুব খারাপ হয়ে যেতে পারে”
.
আহনাফ ওর কথার উত্তর না দিয়ে ওকে নিয়ে সাদাত স্যারের সামনে এসে দাঁড়ালো
.
-“আহনাফ?তুমি?”
.
কথাটা বলে স্যার আহনাফের হাতের দিকে তাকালেন।কারণ ও দিবার হাত মুঠো করে ধরে রেখেছে
.
-“কি ব্যাপার?দিবা?”
.
-“স্যার আমি ওকে নিয়ে একটু ঘুরতে যেতে চাই।এক ঘন্টায় চলে আসবো”
.
-“এখন?”
.
-“হ্যাঁ”
.
-“এত রাতে যাওয়া ঠিক হবে না।তোমরা বরং কাল যেও”
.
আহনাফ দিবাকে টেনে ধরে বললো”আপনার মেয়ে সকালে নাস্তার পর আর এক গ্লাস পানিও খায়নি।তারে খাওয়াইতে নিয়ে যাচ্ছি।আপনি বললে একেবারে কাল সকালে খাবে সে।ওকে ফাইন আমি তাহলে চলে যাই”
.
-“দাঁড়াও।দিবা?তুমি খাওনি?”
.
দিবা মাথা নিচু করে বললো”নাহ।ভালো লাগে না আমার”
.
-“আহনাফের সাথে যেতে চাও?”
.
দিবা মুচকি হেসে বললো”হুম”
.
-“ঠিক আছে যাও।সাবধানে যেও”
.
আহনাফ বাইকে বসতে বসতে বললো”আমার ফুটফুটে আজাইরা বেড়ালটাকেও সাথে নাও”
.
দিবা হেসে বললো”সামনে তাকিয়ে দেখেন”
.
-“ওমা মিনি আগে থেকেই বাইকের সামনে বসে আছে দেখছি।”
.
দিবা বাইকে বসে আহনাফের সামনে দিয়ে হাত নিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরলো।তারপর সবসময়কার মতন ওর পিঠের উপর মাথাটা রাখলো সে
সাদাত স্যার বাগানে থেকে দেখছেন ওদের।আহনাফ যে দিবাকে পছন্দ করে আর দিবাও যে ওকে পছন্দ করে তা তিনি বেশ বুঝতে পেরেছেন।কিছুক্ষণ আগেই তার একজন ফ্রেন্ড তার ছেলের সাথে দিবার বিয়ের কথা বললেন।সাদাত চেয়েছিলেন দিবার মত নিয়ে তারপর হ্যাঁ জানাবেন কিন্তু এখন মনে হয় দিবাকে কিছু জিজ্ঞেস করার দরকার নেই
সকালে ওদের সোফায় বসে নাস্তা খাওয়ার দৃশ্য ও তিনি দেখেছিলেন।এত যত্ন করে কেউ জাস্ট সম্পর্কে আত্নীয় কাউকে খাবার খাওয়ায় না
বিষয়টা যে একটু এগিয়ে আছে তা দেখলেই বোঝা যায়।আহনাফকে স্যার অনেক আগ থেকেই পছন্দ করতেন।এই পছন্দ করার ভিত্তি যে তার নিজের মেয়ের পালায় এসে পড়বে তা কখনওই ভাবেননি।মেয়েকে কখনও ভালো
কিছু দিতে পারেননি ভাগ্যের দোষে।কিন্তু এই বেলায় তিনি তার মেয়েকে সেরাটাই দিবেন যেনো তার মেয়ে এই ছুঁতোতে অন্তত তাকে বাবা হিসেবে স্বীকার করে নিতে পারে
চলবে♥
সবটা অন্যরকম♥
#পর্ব_৫০
Writer-Afnan Lara
.
-সাদাত স্যার আমায় পছন্দ করেন এটা তো তোমায় আগেও বলেছিলাম।বিয়েতে অমত করবে না দেখো
.
-যখন জানতে পারবে আপনি বারে চাকরি করেন তখন দেখিয়েন কি করে উনি।যদিও আমি তার কথা শুনবো ন। তাও বলছি
.
-এই সময় চাকরি খুঁজতে গেলে তো অনেক সময় লেগে যাবে আমার।তাও চেষ্টা চালু রাখতে হবে যে করেই হোক।তোমায় আমি হারাতে চাই না
.
-এসব চিন্তা বাদ দিন।বাবা সবে আমাকপ পেয়েছেন এখনই বিয়ের কথা ভাববেন না।তা আমরা কোথায় যাচ্ছি?
.
-বাসায়
.
-কেন?
.
-মা তোমাকে ছাড়া থাকতে পারে না।কান্নাকাটি শুরু করে দিছে।তাই মাকে দেখে নিবে আর খাবারও খেয়ে নিবে
.
-আচ্ছা।
.
আহনাফ যে পথ দিয়ে যাওয়ার সে পথ দিয়ে না গিয়ে অন্য পথ দিয়ে যচ্ছে যাতে আলাদা একটু সময় পাওয়া যায়
বাসায় আসার পর থেকে আহনাফ এক চিন্তায় ডুব দিয়েছে আর তা হলো তার চাকরির কারণ। যদি সে দিবাকে হারিয়ে ফেলে তাহলে দোষটা তার নিজের হবে সম্পূর্ণ
দিবা খালামণির সাথে কথা বলতে বলতে আহনাফকে লক্ষ করছে।খালামণি একটা সময়ে উঠে চলে গেলেন খাবার রেডি করতে
দিবা সে সুযোগে আহনাফের কাছে এসে বসলো।হাতে হাত রেখে বললো”চাকরি এখন পেতেই হবে তা নিয়ে ঝামেলা মাথায় নেওয়ার দরকার নাই।বাবা যদি রাজি না ও হোন ইটস্ ওকে।বিয়ে করলে আপনাকেই করবো।তাও মনটা এমন খারাপ করে রাখবেন না”
আহনাফ মাথা তুলে বললো”সব কিছু এত সোজা না দিবা।ভালোবাসা এই একটা সময়ে এসে থমকে যায় পরিবারের চাপে পড়ে।তখন আমরা কি রেখে কি করবো ভেবে পাই না।এটা খুবই কঠোর একটা পরিস্থিতি হয়ে দাঁড়ায় আমাদের সামনে।একদিকে পরিবার আর আরেকদিকে ভালোবাসার মানুষটি”
.
দিবা আহনাফের কাঁধে মাথা রেখে বললো”চলুন দূরে কোথাও চলে যাই”
.
কথাটা শুনে আহনাফ দিবাকে নাড়া দিয়ে বললো”যদি আমিও তোমার বাবার মতন করি যেমনটা উনি তোমার মায়ের সাথে করেছিলেন?”
.
দিবা হেসে বললো”আমার হবু শাশুড়ি বিয়েতে রাজি সুতরাং তার ছেলে চেয়েও আমাকে ঠকাতে পারবে না।আসুন খাবেন আমাদের সাথে।খালামণি ডাকছে”
.
দিবা উঠে চলে গেলো সেদিকে।আহনাফ নিজের ফোনটা পকেট থেকে বের করে কল করলো জিসানকে।সে কোনো চাকরি খুঁজতে দিতে পারবে কিনা তা জানার জন্যই কলটা করা
জিসান বেশ অনেকগুলো চাকরির সন্ধান দিলো কিন্তু ওগুলোর বেতন অনেক কম যা দিয়ে সংসার সামলানো বেশ কঠিন হয়ে যাবে
তা ভেবে রাগ করে আহনাফ ফোনটা ফেলে উঠে চলে আসলো ডাইনিং রুমে
খাওয়া শেষ করে দুজনে একসাথেই বের হয়েছে বাসা থেকে
দিবা মিনিকে বুকে ধরে সিঁড়ি দিয়ে আস্তে আস্তে নামছে
এক পাশে আলো আছে তো আরেক পাশে নেই
আহনাফ দিবার মুখের দিকে চেয়ে হাঁটতে গিয়ে হোচট খেয়ে গেলো।দিবা এক হাতে ওকে ধরে বললো”সাবধানে”
.
আহনাফের চোখে অন্যরকম একটা নেশা খুঁজে পেলো সে।
আহনাফ এগিয়ে এসে হাতটা দেয়ালের উপর রাখলো
মিনি চোখ বড় করে তার জ্যাকেটের চেইনটা দেখছে ড্যাবড্যাব করে।
চেইনটা ঝিকমিক করছে বলে তার চোখ ওদিকেই গেছে সবার আগে
দিবা চুপ করে আছে।আহনাফ একটু ঝুঁকে বললো”বিশ্বাস করো!ভালো একটা চাকরি পেলে আমি তোমায় আজই বউ করে আনতাম।তোমাকে নিজের করে পাবার ইচ্ছা আমায় যন্ত্রণা দেয়।কেন পারছিনা বলো?তোমাকে ছুঁতে গেলে আমার অনেক কিছু ভাবতে হয়।হয়ত তুমি ভাববে তোমার মায়ের মতন তুমিও ঠকতে পারো
এসব ভেবে আমি তোমার কাছে এসেও তোমায় ছোঁয়ার শক্তিটুকু হারিয়ে ফেলি।কষ্ট হয় দিবা!!”
.
কথাটা বলে আহনাফ দিবার ঘাঁড়ে মাথা ঠেকালো।দিবা ফিসফিস করে বললো”আমি যদি এখন আপনাকে ছুঁই তাহলে কি সেটা আপনাকে ঠকানো হবে?”
আহনাফ দিবার কান টেনে ধরে বললো”আই এম সিরিয়াস।মজা করবে না”
.
-“আরেহ আমিও সিরিয়াস।জাস্ট কিস একটা করলে আপনি কি ঠকবেন?যদি না ঠকেন তাহলে করবো”
.
-“তুমি নিজে ঠকবা”
.
-“কেন?কেন?”
.
-কারণ আমায় একবার নেশায় ফেললে তোমার আর নিস্তার নাই”
.
-“মিঁয়াওওওওওওও”
.
আহনাফ চমকে দূরে সরে বললো”ওর কি হলো আবার?”
.
-“যে হারে আমায় চেপে ধরেছিলেন মিনি কিন্তু আমার কোলে ছিল।বেচারা চাপ খেয়ে ভয় পেয়েছে”
.
-“আমাদের বাসর ঘরে এরে ঢুকতে দিবা না।সব গণ্ডগোল করে ফেলবে তা নাহলে।এক কাজ করো ওরে একটা বউ এনে দাও তাহলে আর সেদিন আমাদের ডিস্টার্ব করতে আসবে না”
.
-হইছে।পরেরটা পরে।এখন চলুন দেরি হয়ে যাচ্ছে”
.
আহনাফ নিজের মাথার চুলগুলো ঠিক করে হাঁটা ধরলো
দিবাকে একেবারে ওর বাসার গেটের সামনে এনে নামিয়ে দিল সে
দিবা হাত দিয়ে টাটা দিলো ওকে
আহনাফ মুখ ফুলিয়ে বললো”থাক।আর কাঁটা গায়ে নুনের ছিঁটি দিতে হবে না আপনাকে”
.
দিবা মুখটা এগিয়ে এনে আহনাফের গালে ঠোঁটজোড়া লাগিয়ে সাথে সাথে পিছিয়ে গেলো
আহনাফ গালে হাত দিয়ে তাকিয়ে আছে বোকার মতন
দিবা ওর এমন লুক দেখে দাঁত কেলিয়ে বললো”কই?কি করবেন এখন?বললেন না নিস্তার হবে না”
আহনাফ বাইক থেকে নেমে দিবার হাতের কব্জি ধরে টান দিয়ে বললো”তোমার বাপের সামনে থেকে তোমায় তুলে নিয়ে যাওয়ার সাহস আমি রাখি”
.
-“ছাড়ুন। জানি আপনার সাহস আছে।আর প্রুভ দিতে হবে না। বাই”
.
দিবা ছুটে চলে গেলো বাসার ভেতর।আহনাফ মুচকি হেসে গালে হাত বুলিয়ে সেও চলে গেলো।দিবা বাসায় ঢুকতেই বাবাকে দেখতে পেলো ।তিনি সোফায় বসে কাগজপত্র ঠিক করছিলেন।দিবা সোজা তার রুমে চলে যাওয়া ধরতেই বাবা বললেন”দিবা তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে।বসো এখানে”
.
দিবা মিনিকে নিয়ে বাবার সামনে বরাবর সোফাটায় বসলো।বাবা হাত থেকে কাগজ রেখে বললেন”আহনাফ কি চাকরি করে জানো?”
.
দিবা ঢোক গিলে অনেক ভেবে বললো”জানি না”
.
-“আমি মৌ আপার সাথে কথা বলেছিলাম দশ মিনিট আগে।উনি বললেন আহনাফ একটা ব্যাংকে চাকরি করে।যা বেতন পায় তাতে সংসার ভালোই চলে।”
.
দিবা চুপ করে মিনির গায়ে হাত বুলাচ্ছে
বাবা হালকা কেশে বললেন”ওকে পছন্দ করো তুমি?”
.
দিবা মাথা তুলে বললো”বিয়ে করতে চাই উনাকে”
.
বাবা মুচকি হেসে টেবিলের উপর থেকে চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে বললেন”মিনির কথা জিজ্ঞেস করেছিলাম।আহনাফের কথা নয়”
.
দিবা বোকার মতন বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে উঠে এক দৌড়ে নিজের রুমে চলে গেলো
বাবা মিটমিট করে হাসতে হাসতে ফোন বের করে দিবার মাকে কল করলেন
.
-“হ্যালো!কি সমস্যা? আমার মেয়ে তোমার কাছে গিয়ে থাকছে তাহলে আবার ফোন দাও কেন আমায়?”
.
-“একটা জরুরি কথা বলতে ফোন করেছি”
.
-“কি??দিবা ঠিক আছে তো?”
.
-“হুম ঠিক আছে।একটা কথা বলো আগে!! আহনাফকে তোমার কেমন লাগে?”
.
-“আহনাফ? ও তো ভালো ছেলে।কেন বলোতো?”
.
-“দিবা ওকে ভালোবাসে”
.
-“আর ও?”
.
-“ও নিজেও ভালোবাসে দিবাকে”
.
-বাই।আমি মৌ আপার সাথে কথা বলে দেখছি।শাশুড়ি রাজি না থাকলে এই টপিক সম্পূর্ন বাদ যাবে।আমি চাই না আমার মেয়ের ও একই পরিণতি হোক যেমনটা আমার হয়েছে
.
-“কি বুঝাতে চাও তুমি?দিবার কথা জানলে আমি মায়ের বিপক্ষে গিয়ে হলেও তোমায় নিজের থেকে দূর হতে দিতাম না”
.
-“আমাকে ইউজ করে ফেলে দিয়ে আবার আমার গর্ভের সন্তানের কথা শুনে আপন করে নিতেন?এত ডাহা মিথ্যা কথা না বললেও পারেন।আজীবন তো মিথ্যাই বলে গেলেন।”
.
-আমি মিথ্যা বলি না।তোমাকে যে ভালোবাসি সেটার প্রমাণ হলো আমি আজ পর্যন্ত বিয়ে করিনি।তুমি তো করছো
.
-আমি কি ইচ্ছে করে করছি?বাবা জোর করে বিয়ে দিয়েছেন।আমার যে ইচ্ছের বিরুদ্ধে বিয়েটা হয়েছে তার প্রমাণ হলো আমি আজ পর্যন্ত বাবা মায়ের সাথে কথা বলিনি ঐদিন ফোন দিছে তাও আমি তাদের কথার জবাবে কিছু বলি নাই।হু /হা /না তে জবাব দিসি।তোমাকে বলে কি লাভ।তোমার চোখে তো তুমি ঠিক আর আমি ভুল
.
-এসব নিয়ে ঝগড়া করতে চাচ্ছি না আমি।তোমার দোষ কম না
দিবার কথা না জানিয়ে ভুল করছো তুমি
আমার জায়গায় অন্য কেউ হলে দিবার বিয়ের প্রসঙ্গেও জড়াতো না তোমাকে।তুমি ওর মা বলে আর আমি একজন ভালো বাবা বলে এখন জানালাম তোমায়।নাহলে তোমার সাথে কথা বলতেও আমার রাগ হয়।আমার মেয়ের পরিচয় তুমি এত বছর গোপন রেখেছো আমার থেকে।আজীবন রাখতা যদি আমি নিজে দিবাকে খুঁজে না পেতাম
মেয়েকে এমন ভুল বুঝিয়েছো যে ও এখন আমায় সহ্য করতে পারে না।বাবা মেয়ের যে সম্পর্ক হয় সেটাও নাই আমাদের মাঝে।
.
-থাকার কথাও না।আমার তো মন চাচ্ছে দিবাকে বলতে যে তোর বাবারে মরিচের গুড়ো দিয়ে শরবত বানায় খাওয়াই দে পারলে
.
-তোমার সাথে কথা বলাই বেকার।বাই
.
-তার পরেও তো সেধে সেধে আমায় ফোন করো তুমি নিজে।আমি তো করি না।তুমি বেহায়া লোক তাই কল করো অলওয়েজ
.
-জাস্ট আমার মেয়ের জন্য বেহায়া হচ্ছি তা নাহলে তোমার নাম্বার ব্লক লিস্টে ফেলতাম আমি
.
-ভালো কথা মনে করিয়ে দিছো।আমি এখন তোমার নাম্বার ব্লক লিস্টে ফেলবো।বাই
.
-আমার কিন্তু রবি সিম আরেকটা আছে।বাই
——
দিবা রুমে এসে ফোন খুঁজে আহনাফকে কল করেছে।আহনাফ বাইক থামিয়ে রিসিভ করে বললো”কি হয়েছে?”
.
-বাবাকে ভুলে বলে দিছি আপনাকে বিয়ে করতে চাই
.
-ইউরেকা!!তারপর?
.
-তারপর আমি ছুটে রুম৯ চলে এসেছি
.
-আরে আগে বলো সাদাত স্যারের মুখ গম্ভীর ছিল নাকি হাসছিল?
.
-হাসছিল মুচকি মুচকি
.
-আলহামদুলিল্লাহ্।যাই শেরওয়ানি অর্ডার দিয়ে আসি
.
-ধুর!মজা করবেন না।এখনও কিছুই ঠিক হয় নাই।
.
-ওগো আমার প্রেয়সী!!
তুমি আমার মনটা ভালো করে দিলা।বলো কি চাও তুমি
.
-আমি চাই আপনি চুপচাপ বাসায় গিয়ে ঘুমান।রাত অনেক হয়েছে।বাই
.
দিবা লাইনটা কেটে দিয়ে বিছানায় বসে দরজার ফাঁক দিয়ে উঁকি দিলো একবার।বাবাকে দেখা যায় না।বাবা তার রুমে চলে গেছে মনে হয়
মিনি দিবার ড্রেসিং টেবিলে উঠে আয়নার সামনে বসে নিজেকে দেখছে মনোযোগ দিয়ে
দিবা বিছানায় লম্বা হয়ে শুয়ে চোখ বন্ধ করে ভাবলো”সব এত জলদি ঠিক হওয়া মানে বিপদের লক্ষণ।আমি চাই না এত জলদি হোক
ধীরে সুস্থে হোক তাই চাই তাও যেন সব ঠিকঠাক মতন হয়।কোনো বাধা বিপত্তি যেন না আসে।আমি চাই বাবা মা দুজনেই আমার বিয়ে নিয়ে খুশি থাকবেন।দুজনে একত্রে আমার বিয়ে দাঁড়িয়ে থেকে দেখবেন।আচ্ছা মা তো আসবে না জানি
ভিডিও কলে তো থাকবে তাই অনেক।কত খুশির দিন হবে সেটা
ভাবতেই আমার আনন্দে নাচতে মন চাইছে।
মিনি লিপস্টিকের বক্স নিয়ে ধুরুম করে নিচে পড়ে গেছে।দিবা চোখ মেলে বললো”কেয়ামতের সময় তোর দুষ্টুমি করা লাগবে?এগুলো কে গুছাবে এখন?এমনি এমনি তোকে আজাইরা বলে না উনি।তুই আসলেই আজাইরা একটা।
যা নিজের বউ নিজে খোঁজ।আমার এত সময় নাই।
না থাক!!! পরে জঙ্গল থেকে জংলি একটারে ধরে আনি বিয়ে করতে চাইবে পরে তার চেঁচামেচি আমায় শুনতে হবে।
আমি তোর জন্য ভালো দেখে কিউট দেখে মিষ্টি একটা বউ আনবো।
চলবে♥